#বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ৩৪+৩৫

0
421

#বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ৩৪+৩৫
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৩৪
.
স্বাভাবিকভাবেই সকাল বেলা ঘুম ভাঙলো আদ্রিয়ানের। ভোরবেলা রিকের সাথে কথা বলে এসে আবারও ছোট্ট একটা একটা ঘুম দিয়েছিলো ও। চোখ কচলে সোফায় বসে সোজা তাকালো বেডে শুয়ে থাকা অনিমার দিকে। মুচকি হেসে উঠে গিয়ে অনিমার সামনে গিয়ে হাটু ভেঙ্গে বসলো এরপর ওর মুখের ওপর পরে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে ওর গালের তিলটাতে আলতো হাতে ছুয়ে দিলো, অনিমা ঘুমের মধ্যেই হালকা কেঁপে উঠল, আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে উঠে ওয়াসরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসে অনিমার দিকে তাকিয়ে দেখে অনিমা হালকা ভ্রু কুচকে একটু নড়াচড়া করছে। আদ্রিয়ান পেছন ঘুরে দেখলো সকালের মৃদু রোদের আলো সম্পূর্ণ গিয়ে পরছে অনিমার মুখের ওপর, যার কারণে ওর ঘুমের একটু ডিস্টার্ব হচ্ছে, বারবার নিজের ভ্রু কুচকে সেই বিরক্তি প্রকাশ করছে অনিমা। আদ্রিয়ান হালকা হেসে একটু দূরে সরে অনিমার মুখের বরাবর দাড়ালো। মুখের ওপর ছায়া পরায় অনিমার ঘুমের ডিস্টার্ব হলো না কিন্তু একটুপর এমনিতেই ওর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আস্তে আস্তে চোখ খুলে ওর চোখ সোজা আদ্রিয়ানের দিকেই গেলো। আদ্রিয়ান মুচকি হাসলো অনিমার দিকে তাকিয়ে। অনিমা উঠে বসে একটা হাই তুলে ভালোভাবে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে, একটা চিকন স্লিভস এর ব্লু পাতলা গেঞ্জি আর কালো টাওজার পরে আছে, হালকা ভেজা এলোমেলো চুলগুলো মাথার সাথে কপাল ভর্তি হয়ে ছড়িয়ে আছে, সুঠাম দেহে হালকা ভেজা ভেজা ভাব এখোনো আছে। আজ আবার নতুন করে ক্রাশ খেলো আদ্রিয়ানের ওপর । আর তার সাথে নিজের ওপরেই নিজে বিরক্ত হলো। এই এক ছেলের ওপর কতোবার ক্রাশ খাবে ও? ছেলে মানুষদের এতো সুন্দর হতে হয়? কিন্তু আদ্রিয়ানের চেহারার সাথে রিকের চেহারার বেশ খানিকটা মিল খুজে পায় অনিমা, কিন্ত সেটাকে বকওয়াস ভাবনা ভেবে উড়িয়ে দেয়। কিন্তু আজ যেনো মিলটা একটু বেশিই লক্ষ্য করছে অনিমা। নিজের দিকে একবার তাকিয়ে দেখলো যে লাল একটা শার্ট পরা, শার্টের সাইজ দেখেই বুঝলো এটা আদ্রিয়ানের। তারপরেই অনিমার কালকের রাতের কথা মনে পরলো। আদ্রিয়ান অনিমার সামনে বসে মুচকি হেসে বলল,

— ” গুড মর্নিং।”

অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

— ” মর্নিং।”

আদ্রিয়ান অনিমাকে একবার স্কান করে বলল,

— ” কী ব্যাপার? আমিতো ভেবেছিলাম তুমি ঘুম থেকে উঠেই একশোটা প্রশ্ন করবে। আমি এরকম কেনো করলাম? কে চেঞ্জ করিয়েছে? আমি উল্টোপাল্টা কিছু করেছি কী না? এক্সেক্ট্রা,এক্সেক্ট্রা।”

অনিমা খাটে হেলান দিয়ে হেসে বলল,

— ” আমি কখনো ইউসলেস প্রশ্ন করি না।”

আদ্রিয়ান মুখে হাসি রেখেই বলল,

— ” এগুলো ইউসলেস প্রশ্ন?”

অনিমা হাত ভাজ করে বলল,

— ” অফকোর্স। আপনি এরকম কেনো করেছেন সেটা আমি কালকে আপনার প্রতিটা কথাতেই বুঝেছি। আর পোশাক বদলানোর কথা যদি বলেন তো বাড়িতে এতো মেয়ে মেড সার্ভেন্ট থাকতে আপনি করবেন না সেটা আমি জানি । আর উল্টোপাল্টা করার কথা জিজ্ঞেস করে জোকস মারার শখ আমার নেই।”

আদ্রিয়ান অনিমার কথায় হেসে দিয়ে বলল,

— ” আরে ওয়াহ। সো ট্যালেন্টেড।”

অনিমা মেকি হেসে বলল,

— ” ছোটবেলা থেকেই। বাই দা ওয়ে আমার পোশাক কী এনেছেন নাকি আপনার এই শার্টস পরেই থাকতে হবে?”

অাদ্রিয়ান এবার দুষ্টু হেসে অনিমার দিকে অনেকটা ঝুকে বলল,

— ” চেঞ্জিং এর কী দরকার? তোমাকে এভাবেই খুব সুন্দর লাগছে। ইউ নো..!”

অনিমা হালকা গলা ঝেড়ে দূরে সরে গেলো আদ্রিয়ানের থেকে। তারপর কপালের চুলগুলো সরিয়ে নিয়ে ইতস্তত গলায় বলল,

— ” এনেছেন কী না সেটা বলুন?”

আদ্রিয়ান নিচের ঠোঁট কামড়ে একটু হাসলো, অনিমাকে লজ্জা পেতে দেখতে ওর অদ্ভূত রকম ভালোলাগে। তাই ইচ্ছে করেই মাঝে মাঝে লজ্জা দেয় ওকে। অনিমা আদ্রিয়ানকে অভাবে হাসতে দেখে আরো লজ্জায় পরে গেলো। মাথা নিচু করে হাত কচলাতে শুরু করলো। আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল,

— ” কাবার্ডে সব আছে যেটা ইচ্ছে পরে নাও।”

অনিমা কিছু না বলে উঠে দাড়ালো তাও চাদর গায়ে জরিয়ে। তারপর কাবার্ড খুলে দেখলো সব রকমের পোশাকই আছে। টি-শার্ট, টপস, কুর্তি সব। অনিমা একটু অবাক হলো এতোকিছুর কী দরকার ছিলো? তবুও কিছু না বলে একটা শর্ট কুর্তি আর টাওজার নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো। আদ্রিয়ান অনিমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা সস্হির নিশ্বাস ফেললো। অনিমা যে এখন ওর সাথে স্বাভাবিক আচরণ করছে এটাই অনেক। ঘন্টাখানেক পর অনিমা বেরিয়ে এলো ওয়াসরুম থেকে। আদ্রিয়ান সোফায় বসে ফোন টিপছিলো দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে আবারও তাকালো অনিমার দিকে। আজকে ওকে সেই প্রথম দিনের মতোই স্নিগ্ধ লাগছে। সেদিন মোমের আবছা আলোতে দেখেছে আর আজ দেখছে ভোরের নরম উজ্জ্বল আলোতে।অনিমার চুল দিয়ে ফোটা ফোটা পানি পরছে। অনিমা টাওয়েল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে আসলো, আদ্রিয়ান মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে, একেই শাওয়ার নেওয়ায় এতো ফ্রেশ লাগছে তরওপর শার্ট কলারের পাতলা সাদা কুর্তি ওর সিদ্ধতা আরো বারিয়ে দিচ্ছে, কুর্তির সামনের দুটো বোতাম খুলে গলার দিকটা হালকা সরিয়ে রেখেছে, রোদের আলো চুলে পরায় চুলগুলো সোনালী আভা ধারণ করেছে। চুল থেকে টাওয়েল সরিয়ে সামনে থেকে সব চুলগুলো পেছনের দিকে ছুড়ে দিতেই অনিমার চুল থেকে পানির ছিটাগুলো সোজা আদ্রিয়ানের মুখে গিয়ে পরল যেটা অনিমা খেয়াল করেনি কিন্তু আদ্রিয়ান চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে সেই অনুভূতি। অনিমা আলতো হাতে চুলগলো ঝেড়ে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান উঠে দাড়িয়ে অনিমার কাছে গেলো, অনিমা চুল ঝাড়ায় ব্যাস্ত তাই খেয়াল করছে না। আদ্রিয়ান অনিমার চুলে হাত দিতেই অনিমা কেঁপে উঠলো, পেছনে ঘুরতে চাইলেই আদ্রিয়ান শক্ত গলায় বলল,

— ” নড়বেনা একদম চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো।”

অাদ্রিয়ানের এমন শক্ত কন্ঠ শুনে আনিমা স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। আদ্রিয়ান বেশ অনেকখানি চুল হাতে নিয়ে সেই চুলে নিজের নিজের নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিতে লাগল। অনিমা তো পুরো জমে আছে, নড়বে যে সেই শক্তিও যেনো নেই ওর মধ্যে কুর্তি খামছে ধরে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান চোখ বন্ধ করে নিজের মনমতো চুলের ঘ্রাণ নিয়ে অনিমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

— ” তোমার ভাগ্য ভালো যে আমাদের বিয়ে হয়নি। যেই চোখ ধাধানো রুপ নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছো, যদি আমাদের বিয়ে হতো তো আজ তোমার কপালে ভীষণ দুঃখ ছিলো।”

আদ্রিয়ানের কথা শুনে অনিমার বন্ধ চোখজোড়া সাথে সাথে খুলে গেলো চোখ বড় বড় হয়ে গেলো ওর। বুকের ভেতরে ধকধক শব্দটা যেনো ও বাইরে থেকেও শুনতে পাচ্ছে। এই ছেলে সবসময় ওর হার্টবিট বারিয়ে দিয়ে যায়। অনিমার অবস্হাটা বুঝতে পেরে আদ্রিয়ান হেসে বলল,

— ” নিচে চলো ব্রেকফাস্ট করবো।”

আদ্রিয়ান যেতে নিলেই অনিমা বলল,

— ” শুনুন?”

আদ্রিয়ান ঘুরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। অনিমা নিচের দিকে তাকিয়ে ইতস্তত করে বলল,

— ” আমার ল্যাপটপটা আনার দরকার ছিলো।”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” ওয়াড্রপ এর ফার্স্ট ড্রয়ারে আছে।”

এটুকু বলে চলে গেলো আদ্রিয়ান। অনিমা একটু অবাক হলো যে কীভাবে আর কখন আনলো কিন্তু কিছু বললোনা আদ্রিয়ান পেছন পেছন চলে গেলো নিচে।

_____________________

খাটে হালকা হেলান দিয়ে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে রিক। কিচ্ছু ভালোলাগছে না ওর। সকালে আদ্রিয়ানের সাথে কথা বলার পর থেকেই মনটা অস্হির হয়ে আছে ওর।

আসলে সকালে সবে পার্টি শেষ করে রিক বেরোবে তখনি আদ্রিয়ানের ফোন এলো। কলটা আদ্রিয়ান ঐ বাংলো থেকে বেড়িয়ে বেশ অনেক দূরের একটা গ্রাউন্ডে গিয়ে, ওর কমন সিমটা ইনসার্ট করে তারপর করেছে । রিক স্ক্রিনে আদ্রিয়ানের নাম্বারটা দেখে বেশ অবাক হলো। কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে রিক ফোনটা রিসিভ করে বলল,

— ” আজ নিজেই ফোন করলে আমাকে? হার মেনে নিলে নাকি?”

আদ্রিয়ান বাঁকা হেসে বলল,

— ” হার বা জিত এখনো অনেক দূরের প্রশ্ন। তার আগে আপনি এটা বলুন যে অনিকে পেলেন?”

রিক দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— “মজা নিচ্ছো?”

আদ্রিয়ান এবার একটু শব্দ করে হেসেই বলল,

— ” মজা? মজা কেনো করবো? আসলে কী জানেন তো আপনার জন্যে করুনা হয় আমার। সত্যিই বলছি।”

আদ্রিয়ানের কথায় রিক ভ্রু কুচকে বলল,

— ” কী বলতে চাইছো?”

আদ্রিয়ান এবার সিরিয়াস হয়ে বলল,

— ” আচ্ছা একটা কথা বলুনতো জীবণে কোন সিদ্ধান্তটা আপনি নিজে থেকে নিয়েছেন? এইযে রাজনীতি করেন সেটাতে কী আদোও আপনার কোনো ইন্টারেস্ট আছে? আপনার বাবার সব কাজে আপনি তাকে সাহায্য করলেও সেগুলোকে মন থেকে সত্যিই কী সাপোর্ট করেন।”

রিক খানিক চমকে উঠলো, ওর নিজের মনেও অনেকবার এই প্রশ্নগুলো উঠতে চাইলেও ও ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে। কিন্তু আদ্রিয়ান এসব কেনো বলছে। রিক কে চুপ থাকতে থেকে আদ্রিয়ান বলল,

— ” কী হলো চুপ করে আছেন কেনো?”

রিক ইতস্তত গলায় বলল,

— ” অ্ আমি যা করি নিজের ইচ্ছেতেই করি আর সজ্ঞানেই করি। আপনার এডভাইস এর কোনো প্রয়োজন নেই আমার।”

আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” আমি এডভাইস দেই নি। কিন্তু আমি কী বলতে চাইছি সেটা আপনি ততোক্ষণ বুঝতে পারবেন না যতোক্ষণ না বুঝতে চাইবেন।”

রিক আর কিছু না শুনেই ফোনটা কেটে দিলো। আর হনহন করে বেড়িয়ে এলো ওখান থেকে। আর তারপরেই বাড়ি ফিরে ঐসব কথা বলে রুমে চলে এসছে। অস্হিরতা কিছুতেই কমছেনা। কিছক্ষণ পর কবির শেখ এসে ওর পাশে বসে বললেন,

— ” কী ভাবছো বাবাই?”

নিজের মামার গলার আওয়াজ পেয়ে চোখ খুলে তাকালো রিক। তারপর উঠে বসে বলল,

— ” ভালো লাগছেনা কিছু। অস্হির লাগছে।”

কবির শেখ একটু অবাক হলেন। রিক এরকম ভাবে কথা বলছে? উনি অবাক হয়েই বললেন,

— ” কিছু কী হয়েছে?”

রিক অস্হির এক শ্বাস নিয়ে বলল,

— ” কিছুনা মামা একটু একা ছেড়ে দাও।”

কবির শেখ রিকের কাধে হাত রেখে বলল,

— ” দেখো বাবাই। জগৎ টাই এখন আমাদের না চাইতেও খারাপ হতে হয়। ওনেক সময় অনেক কিছু পেতে আমাদের একটু খারাপ হতেই হয়।”

রিক কবির শেখ এর দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” সবকিছু পাওয়া কী খুব জরুরি মামা?”

কবির শেখ একটু ভ্রু কুচকালেন। তারপর কিছু একটা ভেবে নিজেকে স্বাভাবিক করে হেসে বললেন,

— ” অনিমাকে ছাড়তে পারবে?”

রিক কবির শেখ এর দিকে তীক্ষ্ম চোখে তাকালো অর্থাৎ কখনো না। কবির শেখ হেসে বলল,

— ” ঠিক সেভাবেই আমাদের জীবনে এমন অনেক কিছু থাকে যা আমরা ছাড়তে পারিনা। সেটা পেতে আমাদের খারাপ হতেই হয় তাইনা?”

রিক মাথা নেড়ে উঠে ওয়াসরুমে চলে গেলো আর কবির শেখ বাঁকা হাসলেন। উনি জানেন অনিমাই রিকের একমাত্র দুর্বলতা আর সেটাকে কাজে লাগিয়েই উনি ওনার খেলাটা খেলে যাচ্ছেন। কবির শেখ হেসে নিজের মনেই বললেন,

— ” দাবা খেলায় খুব পটু আমি। আমার একেকটা অ্যাটাক সবাইকে কাঁপিয়ে রেখে দেয়। ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন আমি। আমাকে এই খেলায় হারানোর মতো দাবাড়ু এখোনো বাংলাদেশে জন্মায়নি।”

_____________________

এদিকে অরুমিতা দিন একেবারেই বাজে কাটছে। একে অনিমার টেনশন। আর দুই হলো আশিস আগের মতো ফোন করে আর জ্বালায়না ওকে। আগে ফোন করলে বিরক্ত হতো এখন করেনা বলে বিরক্ত হচ্ছে সত্যিই খুব অদ্ভুত। কিন্তু ওর এখন আর এসব সহ্য হচ্ছে না। এই কয়েকদিনে ও বেশ বুঝে গেছে ও আশিসের প্রতি যথেষ্ট দূর্বল, দূর্বল কী ভালোও বেসে ফেলেছে । অথচ এই ছেলে ভাব নিয়ে বসে আছে, তাই বিরক্ত হয়ে কল করেই ফেলল আশিস কে। বিছানায় হেলান দিয়ে গেম খেলছিলো আশিস ফোন বেজে উঠতেই স্ক্রিনে অরুমিতার নাম্বারটা দেখে বেশ অবাক হলো ও। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর মুখে হাসি ফুটে উঠল ওর। ও জানতো এটাই হবে। গলা ঝেড়ে একটু সিরিয়াস করে ফোনটা রিসিভ করে বলল,

— ” হ্যালো।”

অরুমিতা কিছু না বলে চুপ করে আছে। ওকে চুপ করে থাকতে দেখে আশিস বলল,

— ” কী হলো ফোন করে চুপ করে আছেন কেনো? আমিতো ডিসটার্ব করি আপনাকে। তো হঠাৎ করে আমাকে মনে করার কারণ?”

অরুমিতা নিচু কন্ঠে বলল,

— ” আই এম সরি।”

আশিস ভ্রু কুচকে বলল,

— ” সরি ফর হোয়াট?”

অরুমিতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজেকে সামলে বলল,

— ” সেদিনের ব্যবহারের জন্যে। আসলে একটু আপসেট ছিলাম তাই..”

আশিস অরুমিতাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

— ” ইটস ওকে। আর কিছু?”

অরুমিতা এবারেও নিচু গলায় বলল,

— ” আপনার কিছু বলার নেই?”

অাশিস মুচকি হাসলো তারপর বলল,

— ” আর কী বলার থাকবে?”

অরুমিতা গোমড়া মুখ করে বলল,

— ” কিচ্ছু বলার নেই?”

আশিস এবার একটা নিশ্বাস নিয়ে হেসে বলল,

— ” আই লাভ ইউ।”

অরুমিতা কিছু না বলে ফোনটা কেটে হেসে দিলো। কেমন এক অদ্ভূত অনুভূতি হচ্ছে ওর যেটা এর আগে ওর কখনোই হয়নি। একেই হয়তো ভালোবাসার অনুভূতি বলে। আশিস ও হাসলো কারণ আগে যখন এই কথাটা বলতো তখন একশ কথা শুনিয়ে দিতো অরুমিতা তবে আজ কিছু না বলে কেটে দেওয়াটাই অনেককিছু বলে দিয়েছে ওকে।

_____________________

রাতে খাটে পা ঝুলিয়ে বসে আছে অনিমা আর আদ্রিয়ান সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। কিন্তু এই মুহুর্তে অনিমার মাথায় একটা কথাই ঘুরছে সেটা হলো আদ্রিয়ান আর রিকের চেহারার মিল। খুব বেশি মিল নেই তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশ মিল আছে। যেটা এতোদিন ওর মাথায় না আসলেও আজকে সকালে আদ্রিয়ানকে অতো গভীরভাবে দেখার পর হঠাৎ করেই মাথায় এলো। কেনো তা নিজেও জানেনা। কিছুক্ষণ পর অনিমা আদ্রিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল,

— ” একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?”

আদ্রিয়ান ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই বলল,

— “একশটা করো জানপাখি।”

অনিমার একটু রাগ হলো কথায় কথায় জানপাখি ডাকার কী আছে? আদ্রিয়ান কী বোঝেনা এই নামটা শুনলে অনিমার বুকের মধ্যে গিয়ে ধাক্কা লাগে। তবুও ও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা আপনি দেখতে কার মতো হয়েছেন?”

এটা শুনে আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— “এটা কেমন প্রশ্ন হলো? আমি দেখতে আমার মতোই হয়েছি।”

অনিমা একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” না মানে আপনার ফ্যামিলিতে আপনার সাথে কার চেহারার মিল আছে?”

আদ্রিয়ান অবাক হয়ে বলল,

— ” হঠাৎ এই প্রশ্ন?”

— ” বলুন না?”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

— ” আমার মায়ের সাথে। ওনার আর আমার চেহারা বেশ মিল। এমন মনে হয় উনি এই চেহারার ফিমেল ভার্সেন আর আমি মেল।”

বলেই হেসে দিলো ও সাথে অনিমাও হেসে দিলো। আর মনে মনে ভাবলো অযথাই ভাবছিলো ও। একজনের সাথে অন্যএকজন মানুষের চেহারা মিল থাকতেই পারে আর ওদের দুজনের তো এক্কেবারেই সামান্য মিল। অনিমা হেসে বলল,

— ” তারমানে আপনার মা অনেক সুন্দরী দেখতে।”

আদ্রিয়ান ও মুচকি হেসে বলল,

— ” হ্যাঁ তাইতো ড্যাড মমের প্রেমে পরেছিলো।”

অনিমা অবাক হয়ে বলল,

— ” লাভ ম্যারেজ?”

— ” হ্যাঁ। এবার শুয়ে পরো অনেক রাত হয়েছে।”

বলে আদ্রিয়ান আবার ল্যাপটপে চোখ দিলো আর অনিমাও শুয়ে পরল। কিছুক্ষণ ল্যাপটপ ঘাটাঘাটির পর মিস্টার রঞ্জিত এর একটা টিম ফটো ভেসে উঠলো স্ক্রিনে, ওনার পাশে কবির শেখ ও আছেন। কবির শেখ এর ছবির দিকে তাকিয়ে ছবিটা জুম করে নিয়ে আদ্রিয়ান বাঁকা হাসলো আর ভাবলো এতো বড় দাবাড়ু হয়েও দাবা খেলার ‘ট্রাক্সলার কাউন্টার অ্যাটাক’ টা সম্পর্কে জানেনা উনি? যেখানে ব্লাকের রুফ, নাইফ, বিষপ সব হোয়াইট ক্যাপচার করে ফেলে। হোয়াইট ভাবে সে জিতে যাচ্ছে কিন্তু ও জানেইনা যে ও ক্যাপচার করতে পারছে কারণ ব্লাক ওকে ক্যাপচার করতে দিচ্ছে। এখানেই তো আসর খেলা। জিতছি জিতছি ভেবেও শেষে গিয়ে হোয়াইট এর কপালে জোটে চেকমেট। ভেবে নিজের মনেই হাসলো আদ্রিয়ান।

#পর্ব: ৩৫
.
বর্ষাঋতুর বেশ চমৎকার একটা ব্যাপার হলো সারারাত বর্ষণ হলে পরের সকালটা বেশ সুন্দর হয়। চারপাশে রোদের উজ্জ্বল মৃদু আলো ঝকঝক করে, গাছপালার সবুজ ভাব আরো বৃদ্ধি পায়, ভেজা,সিগ্ধ মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরী হয়। । শহুরে অঞ্চলে সবুজ প্রকৃতির তেমন সাক্ষাৎ না পাওয়া গেলেও আদ্রিয়ানের এই বাড়ির ব্যালকনি দিয়ে খুব সুন্দর একটা পরিবেশ চোখে পরে। দূরে একটা মাঠ, সবুজ গাছপালা, একটা বিল খুব চৎকার একটা পরিবেশ। সকালে ঘুম থেকে উঠে আদ্রিয়ানকে দেখতে পায় নি অনিমা। কোথায় গেছে জানেনা ও। তাই ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আশেপাশের সৌন্দর্য দেখছে ও
। চোখ বন্ধ করে সকালের এই ফ্রেশ হাওয়া উপভোগ করছে। হঠাৎ পেছন থেকে কারো শব্দ পেয়ে অনিমা পেছন ঘুরে দেখলো আদ্রিয়ান দুহাতে দুটো কফির মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অাদ্রিয়ান অনিমার দিকে কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে বলল,

— ” গুড মর্নিং।”

অনিমা কফির মগটা হাতে নিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” মর্নিং। কোথায় গিয়েছিলেন আপনি?”

আদ্রিয়ান রেলিং এ হেলান দিয়ে কফিতে চুমুক দিয়ে বলল,

— ” গার্ডেন এরিয়ার ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করছিলাম একটু। ওখান থেকে এসে জুস খেয়ে একটু রেস্ট করে কফি খেতে ইচ্ছে করলো ভাবলাম তোমার জন্যেও নিয়ে আসি।”

অনিমা কিছু বললোনা। কিছুক্ষণ দুজনেই নিরবে কফি খেতে লাগল। কিছুক্ষণ পর অনিমা বলল,

— ” আচ্ছা আমার তো অফিস যেতে হবে নাকি?”

আদ্রিয়ান কফির মগের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” তোমার বসের সাথে কথা বলে রেখেছি আমি। উনি মেডিকেল গ্রাউন্ডে ছুটি দেখিয়ে দেবেন।”

অনিমা অবাক হয়ে বলল,

— ” কিন্তু কেনো?”

আদ্রিয়ান ঘুরে রেলিং এ ভর দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলল,

— ” তুমিতো জানো তোমার এখন একা বাইরে বেরোনোটা কতোটা আনসেফ। তবুও এসব বলছো? ”

অনিমা নিচু কন্ঠে বলল,

— ” রিস্ক তো আপনারো আছে!”

আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

— ” ওরা আমার কিছু করতে পারবেনা।”

অনিমা ভ্রু কুচকে বলল,

— ” আপনি এতোটা সিউর কীকরে?”

আদ্রিয়ান মগটা ওখানকার টুলের ওপর রেখে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” ভরসা নেই আমার ওপর?”

অনিমা একটা শ্বাস নিয়ে মগটা রেখে বলল,

— ” আপনার ওপর থাকলেও ওদের ওপর নেই। একদমি নেই, দে ক্যান ডু এনিথিং।”

আদ্রিয়ান অনিমার দুই বাহু ধরে বলল,

— ” কিচ্ছু হবেনা আমার একটু ভরসা রাখো আমার ওপর। আই প্রমিস আমার কিছুই হবে না। বাট এই বাড়ি থেকে আমার পার্মিশন ছাড়া বেড়োবেনা । ওকেহ?”

অনিমা মাথা নাড়ল। আদ্রিয়ান হেসে অনিমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরল। আর অনিমাও আদ্রিয়ানের পিঠে আলতো করে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে আদ্রিয়ানের হার্টবিট শুনতে লাগল।

____________________

কাল রাত থেকে রিক ওর মামার বলা কথাগুলোই ভেবেছে। কবির শেখ ঠিকি বলেছেন অনিমাকে পেতে হলে ওকে খারাপ তো হতেই হবে। ও অনিমাকে হারাতে পারবেনা। অনিমাকে পেতে ওকে যা করতে হয় ও করবে। যতো খারাপ হতে হয় হবে। কিছুক্ষণ ভাবনাচিন্তা করে ও পাশ থেকে ফোন তুলে ওর লোকদের ফোন করলো। ফোন রিসিভ করতেই বলল,

— ” আজ আদ্রিয়ান আবরার জুহায়েরকে কিডন্যাপ করে আমাদের ঐ সিকরেট গোডাউনে নিয়ে আয়।”

ওপাশ থেকে লোকটা বলল,

— ” ভাই মেরে দেবো?”

— ” আরে না। যা বলছি শোন।”

এরপর রিক লোকটাকে বুঝিয়ে দিলো কীভাবে কী করতে হবে। তারপর ফোনটা কেটে দিয়ে বলল,

— ” আদ্রিয়ান আবরার এবার তো তোমাকে অনিকে আমায় দিতেই হবে।”

_____________________

একটা রিয়ালিটি শো তে গেস্ট হয়ে গেছিলো আদ্রিয়ান । শো এর শুটিং কম্প্লিট করে সবে বেড়োতে যাবে তখনি বাইরে তাকিয়ে ও কিছু একটা ভাবলো। তারপর ওর গার্ড দের দিকে তাকিয়ে ওদের চলে যেতে বলল। ওর গার্ড রা একটু অবাক হলেও কিছু না বলে চলে গেলো। আদ্রিয়ান বাঁকা হেসে বেড়িয়ে গিয়ে ওর গাড়ির দরজা খুলতে নিলেই ওর পাশে একটা গাড়ি এসে থামলো আর সেই গাড়ি থেকে কিছু কালো পোশাক আর মাস্ক পরা লোক এসে ওকে ঘিরে ধরল চারপাশ দিয়ে। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকালো ওদের দিকে, সকলের হাতেই গান। আদ্রিয়ান সবাইকে একবার স্ক্যান করে বলল,

— ” কী চাই? অটোগ্রাফ নাকি সেলফি?”

আদ্রিয়ানের প্রশ্ন শুনে ওরা সবাই হাসলো। তারপর আদ্রিয়ানের মাথায় গান তাক করে বলল,

— ” আপনার জান।”

আদ্রিয়ান হালকা পিছিয়ে গানটার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” সরি ভাই। সেটা আমার হাতে নেই ওপর ওয়ালার হাতে, ওনার কাছে চেয়ে নিন দিলেও দিতে পারেন।”

আদ্রিয়ানের এর দিকে গান তাক করে থাকা লোকটা শক্ত কন্ঠে বলল,

— ” বেশি কথা না বলে গাড়িতে ওঠুন।”

আদ্রিয়ান এবার মুচকি হেসে বলল,

— ” আরে ভাই আমার কাছে গাড়ি আছে তো আর গাড়িতে পেট্রোল যথেষ্ট পরিমাণ আছে। তবুও লিফট দিতে চাওয়ার জন্যে থ্যাংকস।”

পাশের লোকটা এবার হুংকার দিয়ে বলল,

— ” ওই। মজা করছো আমাদের সাথে? ভালোয় ভালোয় গাড়িতে ওঠো নইলে এখানেই শুট করে দেবো।”

আদ্রিয়ান সেই লোকটার দিকে তাকিয়ে গলা ঝেড়ে বলল,

— ” আরে উঠছি উঠছি এতো রেগে যাচ্ছেন কেনো? আর এই গান টা তো নামান আগে, লাগেতো।”

লোকটা আদ্রিয়ান এর মাথায় গান ঠেকিয়ে বলল,

— ” চলো ওঠো।”

আদ্রিয়ান চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসল। সাথে সাথে লোকগুলোও গাড়িতে উঠে বসল। আদ্রিয়ানের দুপাশে দুজন। পেছনে তিনজন আর ফন্ট সিট আর ড্রাইভিং সিটে দুজন। আশেপাশের বেশ অনেকেই দেখলো আদ্রিয়ানের কিডন্যাপ হতে। গাড়ি স্টার্ট করতেই পাশের দুটো লোক আদ্রিয়ানের হাত বাঁধতে শুরু করলেই আদ্রিয়ান হকচকিয়ে বলল,

— ” আরে করছেন টা কী? আমাকে দেখে আপনাদের মেয়ে মনে হচ্ছে নাকি যে গাড়িতে তুলে হাত পা বেধে রেপ করবেন? বাই এনি চান্স আপনারা গে নয় তো? বাট এতোগুলো গে একসাথে? ট্রান্সজেন্ডারদের মতো গে রাও আজকাল এক জায়গায় থাকতে শুরু করেছে নাকি?”

ফন্ট সিটে বসা লোকটা আদ্রিয়ানের দিকে আবারও গান তাক করে বলল,

— ” খুব মজা পাচ্ছেন মনে হচ্ছে? কপাল বরাবর গুলি চালিয়ে দিলে পানি চাওয়ার সময়টাও পাবেন না।”

আদ্রিয়ান লোকটার দিকে তাকিয়ে হতাশাজনক একটা চাহনি দিয়ে বলল,

— ” কথায় কথায় এমনভাবে বন্দুক তাক করেন যে দেখে মনে হয় অলেম্পিক চ্যাম্পিয়ন।”

লোকগুলো কিছু না বলে আদ্রিয়ানের হাত বেধে দিলো। আদ্রিয়ান কিছু না বলে চুপ করে রইলো। এরপর একটা লোক বলল,

— ” আমিতো ভেবেছিলাম এর সাথে গার্ড থাকবে। কিন্তু এ তো পুরো একাই এসছে।”

অন্য একজন বলল,

— “ভালোই হয়েছে আমাদের আর কষ্ট করে মারাপিট খুনখারাপি করতে হলোনা।”

অনেকটা পথ যাবার পর হঠাৎ আদ্রিয়ানের চোখ বাধতে গেলেই আদ্রিয়ান বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” আরে ভাই আবার চোখ কেনো?”

ফ্রন্ট সিটের লোকটা চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই আদ্রিয়ান বিরক্তি নিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা ঠিকাছে বাধুন, বাধুন।”

লোকগুলো ওর চোখ বেধে দিয়ে একটা গোলিতে ঢুকলো। সেখানকার এক গোডাউনের সামনে গাড়ি থামলো। লোকগুলো আদ্রিয়ানকে গাড়ি থেকে নামিয়ে ভেতরে নিয়ে গেলো। তারপর একটা চেয়ারে বসিয়ে হাত দুটো পেছন দিকে বেধে চোখ খুলে দিলো। চোখ খুলে দিতেই আদ্রিয়ান চোখ ঝাপটে বলল,

— ” বাপরে আরেকটু হলেই অন্ধ হয়ে যেতাম।”

তারপর চারপাশে তাকিয়ে বলল,

— ” বাই দা ওয়ে কোথায় আছি আমি?”

ওদের মধ্যে একটা লোক অাদ্রিয়ানের কাছে এসে বলল,

— ” ভাবী কোথায়?”

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,

— ” ভাবী? সেটা কোন জায়গা? পৃথিবীর ভেতরে নাকি বাইরে?”

লোকটা রাগী কন্ঠে বলল,

— ” আমি জায়গা বলিনি। অনিমা ভাবীর কথা বলছি।”

আদ্রিয়ান মাথা নেড়ে বলল,

— ” ওহ আচ্ছা। বাট আমি আপনাদের কোন কালের ভাই বলুনতো? না মানে আমার জানা মতে আমার বাবার একটাই ছেলে আর সেটা আমি।”

লোকটা বুঝতে না পেরে বলল,

— ” কী সব পাকাচ্ছো?”

আদ্রিয়ান চিন্তিত ফেস করে বলল,

— ” না মানে অনি তো আমার বউ। তো ও যদি আপনাদের ভাবী হয়, লজিক্যালি আমি ভাই তাইনা?”

আদ্রিয়ানের এসব ইয়ারকি ওদের একটুও ভালো লাগছে না তাই ওদের মধ্যে আরেকজন রাগে গজগজ করে বলল,

— ” দেখো খুব বেশিই বাড়াবাড়ি করছো কিন্তু তুমি। রিক স্যার আসছেন আর উনার মাথা সবসময় গরম থাকে। খুব ভয়ংকর কিন্তু উনি। তাই নিজের ভালো চাইলে উনি আসার আগেই বলে দাও নইলে…”

— ” নইলে?”

লোকটা সোজা আদ্রিয়ানের মাথায় বন্দুক তাক করে বলল,

— ” সোজা ওপরে যেতে হবে।”

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” এই কথায় কথায় এভাবেই বন্দুক তাক করার কী আছে হ্যাঁ? যদি হার্ট ফেইল টেইল করে মরে যাই তার দায় কী আপনি নেবেন?”

লোকগুলো হেসে দিলো আদ্রিয়ান কথায় তারপর গান সরিয়ে বলল,

— ” এই কলিজা নিয়ে রিক ভাই এর সাথে লড়তে এসছো। আমরা ওনার কথায় কাজ করি তাতেই এই বন্দুক আমাদের কাছে খেলনা। এবার রিক ভাই কী ভেবে দেখো?”

আদ্রিয়ান এক ভ্রু উঁচু করে বলল,

— ” বন্দুক আপনাদের কাছে খেলনা?”

লোকটা বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” ওই এতো কথা না বলে তাড়াতাড়ি বলো ভাবী কোথায় আছে?”

আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে ভাবার ভান করে তারপর বলল,

— ” কোথায় যেনো রেখেছিলাম, ভূলে গেছি।”

লোকটা আর নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলোনা আদ্রিয়ানের পায়ের কাছে একট শুট করে ফেলল। আদ্রিয়ান চমকে গেলো। লোকটা বলল,

— ” এবার বল নয়তো পরের শুটে গুলিটা তোর শরীরের ভেতর দিয়ে যাবে।”

আদ্রিয়ান অবাক হয়ে বলল,

— ” ও.এম.এ.. এটাকে শুট করা বলে?”

লোকটা শক্ত কন্ঠে বলল,

— ” তো তোর কী অন্যকিছু মনে হচ্ছে?”

আদ্রিয়ান হেসে হুট করেই পেছন থেকে হাত সামনে এনে পাশের লোকটার কাছ থেকে একঝটকায় বন্দুকটা নিয়ে নিলো আর সোজা সামনের লোকটার পায়ে শুট করলো। লোকটা চিৎকার করে পা ধরে বসে পরলো। সবাই শকড হয়ে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ান বাঁকা হেসে উঠে ঐ লোকটার পাশে গিয়ে বসে বলল,

— ” একে বলে শুট করা। বন্দুক থেকে গুলি চললে কারো রক্তই যদি না বেড়োয় তাহলে ব্যাপারটা পানসে লাগে।”

পাশে থেকে একটা লোক আদ্রিয়ানের দিকে তেড়ে আসতে নিলে লোকটার দিকে না তাকিয়েই তার বাহুতে শুট করলো আদ্রিয়ান। লোকটার বন্দুক হাত ছিটকে ওপরে উঠে গেলো আদ্রিয়ান সেটা ক্যাচ করে সামনে বসা লোকটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

— ” আর একে বলে টার্গেট।”

এটুকু বলে উঠে দাড়াতেই অন্য একটা লোক আদ্রিয়ানকে শুট করতে গেলে আদ্রিয়ান লোকটার হাতে শুট করলো। সবাই অবাকের ওপর অবাক হচ্ছে কারণ আদ্রিয়ান এমনভাবে গুলি চালাচ্ছে দেখে মনে হচ্ছে ও যেনো একজন ট্রেইনড শুটার। এবার দুপাশ থেকে দুটো লোক ওকে শুট করার জন্যে বন্দুক তাক করতেই আদ্রিয়ান দু হাত দিয়ে দুপাশের দুজনকে একসাথেই শুট করল একজনের হাটুতে আরেকজনের হাতের কবজিতে। আরেকজন লোক বন্দুক তাক করতেই আদ্রিয়ান তাকালো লোকটার দিকে। সেটা দেখেই লোকটা হকচকিয়ে বলল,

— ” ভাই! ভাই! ভাই!প্লিজ শুট করবেন না আমি তো এমনিই বন্দুক তুলেছি বিশ্বাস করুন। আমাকে মারবেন না। প্লিজ।”

কিন্তু আদ্রিয়ান শুট করে দিলো। আর লোকটা চোখ বন্ধ করে জোরে চিৎকার দিলো কিন্তু কিছুক্ষণ পরেও কোনো ব্যাথা অনুভব না করে আস্তে আস্তে তাকিয়ে দেখলো আদ্রিয়ান ওর হাতে নয় বরং বন্দুকে শুট করেছিলো। যার ফলে বন্দুকটা ওর হাত থেকে পরে গেছে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে প্রথম যাকে শুট করেছিলো তার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” একে বলে বন্দুক নিয়ে খেলা। কী ভাবছিস হাত তো বেঁধে রেখেছিলি আমার, তাহলে হাত খুললো কীকরে তাইতো? আরে গাধা। আই এম আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের। তাবু গেরো, পাল গেরো, বড়শী গেরো, ফিশার ম্যানস গেরো এরকম আরো অনেক গেরো বাঁধতেও জানি, একঝটকায় খুলতেও জানি। আর তুই তোর ঐ মোটা মাথা দিয়ে আমায় আটকে রাখবি?”

লোকটা পা চেপে ধরেই হুংকার দিয়ে বলল,

— “ওই।”

আদ্রিয়ান এবার এমন জোরে ‘ওই’ বলে একটা ধমক দিলো যে উপস্হিত সবাই কেঁপে উঠলো। সাথে সামনের ব্যাক্তিটিও। আদ্রিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— ” বনের হায়নার হুংকারে শুধু হাতে গোনা কয়েকটা পশু পিছিয়ে যায়। আর সিংহের গর্জনে পুরো বন কেঁপে ওঠে।”

এরপর আদ্রিয়ান সবাইকে ইশারা করে একজায়গায় বসতে বলল। ইতিমধ্যে আদ্রিয়ানের যেই রুপ ওরা দেখেছে তার পর পাল্টা কিছু বলার সাহস আর নেই ওদের মধ্যে। তাই সবাই নিজের আঘাত স্হানগুলো চেপে ধরে কোনোমতে একজায়গায় এসে বসল। আদ্রিয়ান উঠে দাড়িয়ে হাতের গানটা ঘোরাতে ঘোরাতে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কী ভেবেছিলি? শান্ত, হাসিখুশি, নরম স্বভাবের একজন রকস্টারকে তুলে নিয়ে আসবি, গান তাক করে ভয় দেখাবি? আর সে ভয় পেয়ে সুরসুর করে সব বলে দেবে? লাইক সিরিয়াসলি?”

সবাই হতভম্বের মতো তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান হেসে বলল,

— ” যদিও তোদের কোনো দোষ নেই। আসলে আমার সাথে বরুণ ধাওয়ান এর ‘ম্যা তেরা হিরো’ ফিল্মের ঐ ডায়লগটার খুব মিল আছে। সবাই আমাকে শান্ত,নম্র,ভদ্র, মজার একটা মানুষ মনে করে। করবেই তো। ম্যা দিখতা হু সুইট লিটল সোয়ামি টাইপ কা না? কিন্তু এটা ভেবেই সবাই ভুলটা করে ফেলে ঠিক তোদের মতো। কারণ এটা খুব কম লোকেই জানে যে এক্চুয়ালি ম্যা হু বহত বারে হারামী টাইপ কা।”

লাস্ট লাইনটা বলার সময় আদ্রিয়ানের মুখে এক অদ্ভুত হিংস্রতা দেখা গেলো যেটা দেখে ওরা সকলেই একটা শুকনো ঢোক গিলল।

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here