#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-১১,১২
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা
১১
দুপুর ১.৩০
আরু কলেজ ছুটি হয়েছে ওর উদ্দেশ্য এখন আয়ানের কাছে যাওয়া ওর সাথে কথা বলা।কলেজ ছুটি হওয়ার পর মারিয়া আর তন্নিকে কে অনেক কষ্টে বিভিন্ন কথা বলে বুঝিয়ে ওদের বাসায় পাঠিয়ে দেয়।কারণ ওরা জানতে পারলে আরুকে জেতে দেবে না।কিন্তু আরু যে আয়ানের সাথে কথা না বলে থাকতে পারবে না।আরু আয়ানকে কল দেওয়ার অনেক চেষ্টা করেছিলো কিন্তু আয়ান আরুর নাম্বার ব্লাকলিস্টি ফেলে রেখেছে তাই ওর সাথে ফোনেও কথা বলা যাচ্ছে না।আরু আজকে আয়ানের পছন্দ মতো চোখে কাজল দিয়েছে।এসব ভাবতে ভাবতে আরু আয়ানের ভার্সিটির সামনে এসে পরেছে।কিন্তু এখন আয়ানকে কোথায় পাবে এটাই ভাবছে।আশেপাশে তাকালো যদি আয়ানকে বা ওট কোনো বন্ধুদের পায়।কিন্তু না কাউকে পেলো না।তাই আরু কিছুটা সংশয় নিয়ে ভার্সিটির ভিতরে ঢুকলো।ভিতরে গিয়ে দেখে আশেপাশে কতো মানুষ এর ভিতরে কোথায় আয়ানকে খুজবে।আরু চারদিক তাকাচ্ছে।তখনই আয়ানের একটা বন্ধু তুষার আরুকে দেখে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো।তুষারকে দেখে আরুর মুখে হাসি ফুটলো।আরু হাসি মুখে বললো
,
আরুঃ আসসালামু ওয়ালাইকুম ভাইয়া।ভালো আছেন?
তুষারঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম।হুম আমি ভালো আছি।তুমি ভালো আছো?আর লেখাপড়া কেমন চলছে।আর কয়েকদিন পর তো পরীক্ষা।
আরুঃ জী ভাইয়া আমি ভালো আছি।আর পড়াশোনা চলছে ভালোই।দোয়া করবেন ভাইয়া পরীক্ষা যেনো ভালে মতো দিতে পারি।
তুষারঃ অবশ্যই দোয়া করবো।তা তুমি হটাৎ এখানে?
আরুঃ আসলে ভাইয়া আয়ানের সাথে একটু দরকার ছিলো।(মিনমিনে গলায়)
তুষারঃ ওহ।।আচ্ছা তোমাদের মাঝে কী কিছু হয়েছে?আয়নকে কেমন যেনো দেকলাম সবার সাথে রেগে রেগে কথা বলছে।
আরুঃ না তো ভাইয়া আমাদের মাঝে কিছুই হয়নি।এমনকি আজ ১ সপ্তাহ আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই।
তুষারঃ বলো কী।কোনো সমস্যা না কী?
আরু ভাবলো এমন ভাবে যেহেতু জিজ্ঞেস করছে তাহলে মনে হয় আয়ান কিছু বলে নি।আমি কী বলবো আমাদের মাঝে কী হয়েছিলো।…….না থাক আয়ান যেহেতু বলে নি আমি না বলাটাই ভালো হবে।এবার আরু বললো,
আরুঃ না ভাইয়া তেমন কোনো সমস্যা না।আচ্ছা ভাইয়া আয়ান কোথায়?
তুষারঃ ও কেন্টিনে আছে।যাও ওইখানে।
আরুঃ ভাইয়া আপনিও চলুন।আমার কেমন জানি লাগছে।আসলে অপরিচিত জায়গা তো।
তুষারঃ আচ্ছা চলো।
আরুকে নিয়ে তুষার চলে গেলো আয়ানের কাছে।আরু কেন্টিনে গিয়ে দেখে আয়ান,রাফসান আরো দুইটা ছেলে কোনার একটা টেবিলে বসে আছে।সবাই কথা বলছে কিন্তু আয়ান চুপচাপ বসে আছে আর চেহারা কেমন যেনো দেখাচ্ছে।আয়ান ভার্সিটি আসার পর রাফসান অনেক বার জিজ্ঞেস করছিলো কিন্তু আয়ান কিছু বলে নি শেষে রাফসানকে একটা ধমক দিয়ে বসিয়ে রেখেছে।আয়ানের ধকম শুনার পর রাফসান ও আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি।আরু আয়ানদের টেবিলের কাছাকাছি আসতেই রাফসান আরুকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলো।আয়ান একটু সাইড হয়ে উল্টো দিকে ফিরে ছিলো বলে আরুকে দেখেনি।হটাৎ আরুকে এখানে দেখে যতটা না অবাক হয়েছে তার চেয়ে বেশি আয়ানের এমনি মন মেজাজ ভালো না এখন আরু কিছু বললে যদি সবার সামনে আরুকে অপমান করে।মেয়েটা সয্য করতে পারবে না রাফসান আরুর পাশে তাকিয়ে দেখলো মারিয়া বা তন্নি কেউ আসে নি ওর সাথে।এখনতো রাফসানের ভয় হচ্ছে।তাও নিজের ভয়,ভাবনা সাইডে রেখে রাফসান বললো,
রাফসানঃ আরে শালিকা তুমি এখানে।
রাফসানের শালিকা ডাক শুনে আয়াম পিছনে তাকিয়ে দেখে আরুকে।আরুকে এতোদিন পর সামনা সামনি দেখে আয়ানের চোখ যেন থেমে গেছে।ভালোবাসার মানুষের থেকে দূরে থাকার মতো কষ্ট হয়তো নেই।আরুও আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।দুজনের চোখেই একে অপরের জন্য ভালোবাসা দেখছে,দূরে থাকার কষ্ট বুঝছে।দুজনের ইচ্ছা করছে সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করতে তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?কিন্তু পাড়ছে।যেন অদৃশ্য এক দেয়াল ওদের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে।আরুকে এখানে আসতে দেখে রিয়ার কানে এই খবর পৌঁছে গেছে।ওরা যখন একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছিলো তখন রিয়া আসে কিন্তু ওদের যেনো কোন খবর নেই।চোখ দিয়েই একজন আরেকজনের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে।ওদের এমন দেখে রাফসান একটু গলা খাঁকারি দিলো।এবার ওদের হুস আসে।দুজনেই চোখ সরিয়ে নেয়।আয়ান অন্য দিকে ফিরে গেলো।এবার রাফসান বললো,
রাফসানঃ কি ব্যাপার আরু তুমি বললে না হটাৎ এখানে কেন তাও আবার একা?
আরুঃ আসলে ভাইয়া একটু দরকার ছিলো।(নিচের দিকে তাকিয়ে ছোট গলায় বললো)
রাফসানঃ কী এমন দরকার যে তোমাকে এখানে একা আসতে হলো।আর তোমার দরকার তো আমাদের সাথে তাহলে একটা কল করতে আমরা চলে যেতাম।
আরুঃ সরি ভাইয়া।আসলে দরকার ছিলো……..আয়ানের সাথে।
এতোক্ষন আয়ান সব কথা শুনছিলো।আরু যখন বললো ওর সাথে দরকার তখন আরুর দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো।আয়ান আরুর সামনে এসে বললো,
আয়ানঃ আমার সাথে কী দরকার?
আরুঃ…………
আয়ানঃ কী হলো?বলছো না কেনো?
আরুঃ…………
আয়ানঃ বোবা নাকী?কিছু বলার না থাকলে এখানে এসে ডিস্টার্ব করার মানে কী
আরু কিছু বললো না।আসলে ও বলতে চাইছে কিন্তু বলতে পারছে না কেমন যেনো কথা গুলো গলায় আটকে আছে।আর রাফসান যেই ভয়টা পাচ্ছিলো সেটাই যেনো হচ্ছে।এরপর কী হবে সেঠাই ভাবছে।আরু এবার নিজেকে প্রস্তুত করে আয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
আরুঃ সরি।..সব কিছুর জন্য সরি।আমার জন্য ১ বছর আগে তোমাকে অনেক কিছু সয্য করতে হয়েছে।তার জন্য সরি।….(চোখের পানি ছেড়ে) আমি তোমাকে ভালোবাসি আয়ান।প্লিজ আমার সাথে এমন করো না।ফিরো এসো আমার লাইফে।ভিষণ ভালোবাসি আমি তোমায়।আমি তোমাকে #হারাতে_চাই_না। তোমার আমাকে যা শাস্তি দেওয়ার দাও কিন্তু তোমার থেকে দূরে সড়িয়ে আমাকে শাস্তি দিও না প্লিজ।
বলেই কাদতে লাগলো।ওর কান্না দেখে সবার খারাপ লাগলো।এমনকি আয়ানেরও।আয়ানও ওর চোখের পানি দেখে সব ভুলে ওকে কাছে টেনে নিতে চাইছে।আয়ন আরুকে কিছু বলতে যাবে তখনই কাল রাতের কথা গুলো মনে পড়লে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।হাত মুঠো করে দাতে দাঁত চেপে আরুকে বললো,
আয়ানঃ তোমার বলা শেষ নাকী আরো আছে?যদি শেষ হয়ে থাকে তাহলে এখান থেকে যেতে পারো।তোমার এসব ন্যাকা কান্নায় অনেক গলেছি আর না।
আরু আয়নের এমন কথা শুনে যেনো অবাক হয়ে গেলো।ওর কান্না এখন ন্যাকা মনে হচ্ছে।এতোটাই বিরক্ত হয়ল গেলো আয়ানের কাছে ও।আরু বললো,
আরুঃ এসব কি বলছো তুমি।…আমি সরি বলছি তো।বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ভালোবাসি।আর রাগ করে থেকো না প্লিজ।
আয়ানঃ ওয়েট হোয়াট।কি বললে?ভালোবাসো আমাকে,আর তোমাকে বিশ্বাস(বলেই হাসতে লাগলো)আমি তোমাকে ভালোবাসি না।ভালোবাসা বিশ্বাস আরো ১ বছর আগে তুমি নিজের হাতে শেষ করে দিয়েছো।এতোদিন তোমার সাথে যা ছিলো সব অভিনয়।
বলেই আবার হাসতে লাগলো।আরুর কাছে আয়ানের এই হাসিটা যেনো মনে হলো ওকে ব্যাঙ্গ করা হলো।আয়ানের এমন কথা আর হাসি দেখে রিয়া সহ আরো কয়েকজন ছেলে মেয়ে হেসে দিলো।শুধু রাফসান আর তুষার বাদে।আরু এবার বললো,
আরুঃ কী…কী বলছো তুমি এসব।আমি সরি বলেছি তো।প্লিজ মাপ করে দাও।আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আয়ানঃ ভালোবাসা মাি ফুট….।
আরুঃ এমন করছো কেন তুমি?আমি জানি তুমিও আমাকে ভালোবাসো তাহলে কেন এমন করছো?
আরুর এই কথা শুনে আয়ান রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আরুকে বললো,
আয়ানঃ আয়ান রহমান কাউকে ভালোবাসে না।আর তোমার মতো মেয়েকে একেবারেই না।আমি শুধু প্রতিশোদ নিয়েছি।১ বছর আগে যেই যন্ত্রণা আমি পেয়েছি তাই তোমাকে ফিরত দিতে আমিও তোমার সাথে ভালোবাসার নাটক করেছি।এবার তুমিও বুঝবে কাউকে ধোকা দিলে কেমন লাগে।
বলেই আরুকে ধাক্কা মেরে চলে যায়।আর এদিকে আরুর মনটা যেনো টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।আয়ানের প্রতি বিশ্বাস সব যেনো আস্তে আস্তে ভেঙে গেলো।আরুর যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না আয়ান ওর সাথে এতো বড় গেইম খেললো।আয়ানকে তো নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করেছিলো।কিন্তু এখন সব শেষ।আরুকে এভাবে দেখল রিয়া ওর কাছে এসে বললো,
রিয়াঃ একদম ঠিক হয়েছে।যার যা প্রাপ্য সেটা পেয়েছে।আসছে আয়ানের সাথে প্রেম করতে, ভালোবাসি বলতে।তোমার চেয়ে হাজারগুন সুন্দরী মেয়েরা আয়ানের সাথে রিলেশন করার জন্য পাগল আর সেখানক তুমি এসেছো ওকে ভালোবাসি বলতে।….এই শুনো আর যেনো কোনোদিন তোমাকে আমার আয়ানের আশেপাশে মা দেখি।যতোসব থার্ড ক্লাস মেয়ে।
রিয়ার কথা শুনে অনেকে হাসতে লাগলো।তারপর রিয়ার চলে গেলো।আরুর কষ্ট দেকে ওইখানের অনেকে হাসছে আর অনেকে আরুর কান্না দেখে কষ্ট পাচ্ছে।রাফসান চলে গিয়েছে অনেক আগে কি হবে তার আন্দাজ করেই।তাই ফোন হাতে নিয়ে ছুটলো মারিয়ার বাসার উদ্দেশ্যে আর তুষার আয়ানের পিছনে যদি জীদের বসে কিছু করল ফেলে তাই।হটাৎ বৃষ্টি শুরু হলে।সবাই ছুটাছুটি করছে।শুধু এক জায়গায় মূর্তির মতো দাড়িয়ে আছে আরু।আজ প্রকৃতিও আরুর সাথে কাদছে।
রাতে……
চলবে…..।
#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-১২
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা
রাত ১টা আরু দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায় আকাশে আজ খুব সুন্দর চাঁদ উঠেছে।আরু এক ধ্যানে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে আর অঝর ধারায় অশ্রু পড়ছে চোখ দিয়ে।আরুর এতো সুন্দর টানা টানা চোখর দিকে তাকালে কেউ ভাববে কোনো রঙ্গীন পানিতে ডুবে আছে চোখ দুটি।আরু আয়নকে অনেক মিস করছে।কিছুদিন আগেও ওদের মাঝে সব ঠিক ছিলো।একে অপরের সাথে কথা বলা,ভালোবাসা আদান প্রদান করা।কিন্তু এখন?কিছুদিনের ব্যাবধানে সব শেষ হয়ে গেলো।কেনো আয়ান ওকে ছেড়ে এভাবে চলে গেলো।ওইদিনের কথা গুলো থেকে আজকের কথা গুলো ওকে বেশি আঘাত করছে।আয়ান কী করে পারলো ওকে এভাবে কথা শুনাতে।ওর একবারো খারাপ লাগে নি ওকে এভাবে সবার সামনে অপমান করতে।নাকী আয়ানের সব কথা সত্যি আয়ান আরুকে কোনো দিন ভালোবাসে নী?সবটা ওকে কষ্ট দেওয়ার জন্য ভালোবাসার অভিনয় করে গেছে?হটাৎ কিছুটা মেঘ এসে চাঁদ টাকে ঢেকে ফেলেছে।হয়তো চাঁদ টাও আরুর চোখের পানি দেখে মুখ লুকালো।হটাৎ আরুর ফোনে একটা মেসেজ আসলো।ফোন হাতে নিয়ে দেখে তন্নি মেসেজ করেছে।মেসেজ লিখা ছিলো,’অনেক রাত হয়েছে কান্নাকাটি না করে ভদ্র মেয়ের মতো ঘুমাতে চলে গেলে ভালো হয় না হয় কাল আন্টি এমন চেহারা দেখলে কিছু বুঝে ফেলবে তখন হাজার প্রশ্ন করবে।আর কাল কলেজে আসার দরকার নেই।বায়।’।
তন্নির মেসেজ দেকে আরু হেসে ফেললো।দুপুরে এতো রাগারাগির পর এখন আবার মেসেজ দিয়েছে।আরু আর কিছু না ভেবে শুতে চলে গেলো।যদিও ঘুম আসবে না তাও শুতে গেলো।
ফ্লাশব্যাক..
দুপুরে আরু বৃষ্টিতে ভিজার কিছু সময় পর মারিয়া আসে।ওকে রাফসান কল করে আসতে বলেছিলো।মারিয়া রাফসানের মুখে সবটা শুনে আকাশ থেকে পড়লো।ওর ভবনা কী করে পারলো আয়ান এরকম সবার সামনে আরুকে অপমান করতে।মারিয়া যতোটা অবাক হয়েছে তার চেয়েও বেশি রাগ উঠছে আয়ানের উপর।ইচ্ছে করছে আয়ানকে ড্রেনের পানিতে চুবিয়ে মারতে।কী করে আয়ানের সাহস হলো আরুকে অপৃান করার।মারু আয়ানদের ভার্সিটি এসে দেখে আরু এক ধ্যানে নিচের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে।তাই তাড়াতাড়ি আরুর কাছে এসে ওকে নিয়ে বাসায় চলে গেলো।যেতে যেতে তন্নিকে কল করলো যেনো আরুর বাসার সামনে এসে দাঁড়ায়।আরুর বাসার সামনে আসতে আরুকে নিয়ে বাসার ভিতর প্রবশ করলো।আরুর মার নানা রকম প্রশ্ন আর বকা-ঝকা শুনে তন্নি আর মারিয়া আরুরকে নিয়ে ওর রুমে গেলো।তাড়াতাড়ি আরুকে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলো।আরু ওয়াশরুম থেকে বের হতেই তন্নি আরুকে এক’থাপ্পড়’
মারলো।আরু তন্নির দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে।মারিয়াও তন্নির কাছের গিয়ে বললো,
মারিয়াঃ কি করছিস।ওকে মারলি কেনো
তন্নিঃ তো কী করবো বল?ওর কী কোনো মান সম্মান নেই।সেইদিন এমন ভাবে আয়ান ভাইয়া ওকে বললো তারপরও কি করে ও আজ আবার আয়ানের সামনে গেলো।আর গেলো তো আমাদের একবারো বললো না।আমরা কী ওর এতোটাই পর যে আমাদের বলা যায় না।(কিছুক্ষন চুপ করে আবার বললো),
আরে আমাদের একবার বললে আমরা ওকে থামিয়ে দিতাম?না।অন্য কোনো উপায় বের করতাম।কিন্তু তা না নিজে একা চলে গেছে।
মারিয়াঃ আচ্ছা যা হয়েছে হয়ে গেছে বাদ দে এবার।ওর অবস্থা দেখ।এভাবে চললে আংঙ্কেল আন্টি সন্দেহ করবে আর পড়াশোনার ক্ষতি হবে।আর কয়েকদিন পর তো আমাদের এক্সাম।ওকে বুঝতে হবে।
তন্নিঃ ভেবলছিলাম ও সব ভুলে গেছে নতুন করে বাঁচতে শিখেছে।তাই এতো হাসিখুশি কিন্তু ওর মনে যে এতো কিছু চলছে তা কে জানতো।…আসলে আমার মনে হয় ও আমাদের আপন ভাবে না।যাক তুই যেহেতু আমাদের আপন মনে করিস না তাহলে তো আমদের দরকার নেই।মারু চল।
আরু মাথা তুলে তাকিয়ে তন্নি আর মারিয়ার দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে রাইলো।মারিয়া কী বলবে বুঝতে পারছে না।আরু কিছু বলতে যাবে তখনই তন্নি ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
তন্নিঃ থাক কিছু বলতে হবে না তোকে এই কয় দিন যখন কিছু বলিস নি এখনো বলতে হবে না।এই মারু তুই যাবি?(মারিয়া কিছু বলছে না দেখে তন্নি বললো),
তন্নিঃ তোর যেতে হবে না তুই থাক আমি যাচ্ছি।
বলেই তন্নি মারিয়াকে রেখে চলে গেলো।আর আরু মারিয়ার দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে রইলো।মারিয়া চোখের ইশারায় বোঝালো ও ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করিস না।তন্নি নিচে যেতেই দেখলো অনিম সোফায় বসে আছে।আর ফোন কানে নিয়ে হেসে কথা বলছে।তন্নির এমনি মাথা গরম তারওপর অনিম এমন হেসে ফোনে কথা বলা।নিশ্চয় গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে।তন্নি কটমট করতে করতে অনিমের সামনে দিয়ে চলে যেতে নিতেই আরুর মা পিছন থেকে তন্নিকে ডাক দিলো।অনিম ওর মার ডাক শুনে পাশে তাকিয়ে দেখে তন্নি দাঁড়িয়ে আছে।ফোনে কাউকে পরে কথা বলছি বলে কেটে দিলো।আরুর মা বললো,
আদিরা আহমেদঃ কী রে তনু চলে যাচ্ছিস যে আর মারু কোথায়?
তন্নি নিজের রাগ দমিয়ে রেখে হাসি মুখে বললো,
তন্নিঃ হ্যা আন্টি চলে যাচ্ছি।আর মারু উপরে আছে ও একটু পরে যাবে।আমার একটু কাজ আছে তাই যেতে হবে।
আদিরা আহমেদঃ খেয়ে যা-কিছু
তন্নিঃ না আন্টি পরে এক সময় আজ আসি।ভালো থেকো।
আদিরা আহমেদঃ আচ্ছা সাবধানে যাস।
তন্নিঃ আচ্ছা আন্টি।
বলেি তন্নি হাটা দিলো বাহিরের দিকে।অনিম এতোক্ষন দাঁড়িয়ে দেখছিলে সব।ওর মনে হলো তন্নি কোনো কারণে রেগে আছে।কিন্তু কী কারণে?তন্নি বের হওয়ার পর অনিমও ওর মাকে বলে বের হয়ে গেলো।ছেলের এভাবে বের হওয়া দেখে আদিরা আহমেদ ভ্রু কুচকে এলো।তারপর কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে চলে গেলো।তন্নি আরুদের বাসার থেকে বেড়িয়ে অল্প কিছুটা হাঁটতেই হটাৎ মনে হলো ওর পিছে কেউ আসছল তাই পিছনে ফিরে দেখলো অনিমকে।অনিমকে ওর পিছনে এভাবে দেখে ঘাবড়েও গেলো আবার অবাকও হলো।ঘাবড়ে গেলো কারণ কেউ দেখলে অন্য কিছু যদি মনে করে।এখানের সবাই ওদের চেনে যদি মানুষ উল্টাপাল্টা কিছু বাবার কানে লাগায় সেই ভয় পাচ্ছে।আর অবাক হয়েছে অনিম কেন ওর পিছু পিছু আসছে।আবার ভাবলো ‘হয়তো কোনো দরকার তাই এইদিকে যাচ্ছে ওর তো গার্লফ্রেন্ড আছে শুধু শুধু কেনো আমার পিছনে আসবে’ এসব ভেবেই আবার সামনে তাকিয়ে হাঁটতে লাগলো।অনিম ভেবেছিলো ওকে দেখে তন্নি দাঁড়াবে কিন্তু না।তাই অনিম তাড়াতাড়ি হেঁটে তন্নির পাশাপাশি এসে হাঁটতে লাগলো।অনিমকে তন্নির পাশে দেখে তন্নি সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেলো।তন্নিকে দাড়াতে দেখে অনিম ভ্রু কুচকে বললো,
অনিমঃ কী হলো দাড়ালি কেনো।তোর না কী কাজ আছে তাড়াতাড়ি যেতে হবে তাহলে এখন দাড়িয়ে আছিস কেনো।
তন্নিঃ আপনি এখানে কি করছেন?(আমতা আমতা করে)
অনিমঃ কেনো এটা কী তোর একার রাস্তা যে তুই যেতে পারবি আর কেউ যেতে পারবে না🤨
তন্নিঃ আরে না আমি তা বলি নি।আসলে বলতে চাইছি এইখান দিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?
অনিমঃ তোদের বাসার ওই খানে একটা কাজ আছে তাই ভাবলাম তোর সাথে যাই।আর তাছাড়া বাচ্চা মেয়েদের এভাবে রাস্তায় ছেড়ে দিতে পারি না।
তন্নিঃ কী বললেন?আমি বাচ্চা?(কোমরে হাত দিয়ে)
অনিমঃ কেনো তোর কোনো সন্দেহ আছে?
তন্নিঃ অবশ্যই।আমি এখন ১৭+।কয়েক দিন পর HSC পরীক্ষা দেবো।হু😏
অনিমঃ আচ্ছা?বলছিস বড় হয়ে গেছিস?
তন্নিঃ হুম😒
অনিমঃ তাহলে তো বিয়ে দিয়ে দেওয়া যায়।বড় যেহেতু হয়েছিস তাহলে আর বসিয়ে রেখে কী কাজ।আজই আমি আংঙ্কেলের কাছে প্রস্তাব পাঠাই কি বলিস?
তন্নিঃ হু আপনার পাঠানো লাগবে না।এমনিতেই বাবা দেখছে পরীক্ষার পর হয়তো দিয়ে দেবে☹️(সরল মনে সব বলে দিলো)
তন্নির কথা শুনে অনিম রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।হাত মুঠো করাতে হাতের রগ গুলো ফুলে উঠেছে।রাগে চোখ লাল হয়ে আছে।তন্নি অনিমের দিকে তাকিয়ে ভয় পেলো।ও কী কিছু ভুল-ভাল বলে ফেলেছে নাকী?অনিম তন্নির দিকে তাকিয়ে বললো,
অনিমঃ তোকে যদি কেউ দেখতে বা বিয়ে করতে আসে
তাকে কিন্তু লাশ হয়ে ফিরতে হবে বলে দিলাম।আর তোর বাপ কেও বলে দিবি যদি তোর জন্য কোনো ছেলে দেখে তাহলে খুব বেশি খারাপ হয়ে যাবে।
তন্নিঃ কেনো কেনো?কী করবেন আপনি?(বোকার মতো)
অনিমঃ কী করবো না করবো তা আমার ব্যাপার।তুই শুধু এই কথাটা তোর বাপের মাথায় আর তোর মাথায় ঢুকিয়ে নিস।মাইন্ড ইট।
বলেই অনিম সামনে আগিয়ে গেলো।আর তন্নি ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলো অনিম দুপা সামনে আগিয়েছিলো আবার ফিছিয়ে এসে বললো,
অনিমঃ এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?আর ১ সেকেন্ডও যদি আমি তোকে এখানে দেখি তাহলে তোর কপালে শনি আছে।
তন্নি কিছু বলতে যাবে তখনই অনিমের চোখ রাঙ্গানীতে চুপ হয়ে গেলো ভয়ে।তারপর আর কোনো কথা না বলে তাড়াতাড়ি করে হেঁটে চলে গেলো।বাঘের সামনে থেকে।তন্নি ভাবছে ‘বাবা গো চোখ গুলি কী ভয়ংকর দেখতে ছিলো’।তন্নি যেতেই অনিম ওর দিকে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বললো,’আমার প্রেয়োসীকে আমি কারো হতো দেবো না।দরকার পড়লে সবার থেকে লুকিয়ে রাখবো তারপরও ওকে কেউকে নিতে দিবে না।কিন্তু সবার আগে আমার প্রেয়সীকে বড় হতে হবে।এখনো যে পিচ্চি রয়ে গেছে’।এসব ভেবে অন্য দিকে চলে গেলো।
এদিকে মারিয়াও কিছুক্ষন থেকে চলে গেলো।মারিয়া রাফসানকে কল করেছিলো ও এসে নিয়ে যাবে।রাফসান মারিয়াকে নিয়ে যাওয়ার সময় মারিয়া বললো,
মারিয়াঃ আচ্ছা আয়ান ভাইয়া কোনো এমন করলো ওর সাথে?
রাফসানঃ কিছু বুঝতে পারছি না।হটাৎ ওর কী হলো।
মারিয়াঃ যানো আরু আজ অনেক কষ্টে পেয়েছে।ওর চেহারার দিকে তাকানে যাচ্ছিলো না।
রাফসানঃ সেটা তো স্বাভাবিক হবেই।….(মনে মনে ভাবলে আজকে আবার আয়ানের সাথে কথা বলতে হবে)
মারিয়াকে রাফসান বাসায় পৌঁছে দিয়ে চলে গেলো।
রাত ১০ টা আয়ান একটা পর্কের বেঞ্চে বসে আছে।ওর মনের উপর দিয়ে কী যাচ্ছে নিজেও জানে না।আরুর চোখের পানি দেখে মনে হয় আরুর কথা সত্যি কিন্তু কালকের ওই লোকের কথা শুনে মনে হয় আরু ওকে আবার ঠকাচ্ছে।কার কথা বিশ্বাস করবে ও?আরুর কথাও চিন্তা হচ্ছে এই মেয়ে যা অভিমানি আয়ানের কথা শুনার পর যদি নিজের সাথে ভুলভাল কিছু করে বসে।এটা ভাবতেই আয়ান আঁতকে উঠলো।ফোন বের করলো আরুকে কল দেওয়ার জন্য।কিন্তু তার আগেই রাফসান কল করলো এবং জিজ্ঞেস করলো কোথায় আছে।আয়ান ঠিকানা দিয়ে চুপচাপ বসে রইলো আরুকে আর কল দিলো না।ওযে আরুর নাম্বার ব্লক করে দিয়েছে তা ভুলে গেছে।কিছুক্ষনের মধ্যে রাফসান এসে পারলো।ও এসে আয়ানের পাশে বসে বললো,
রাফসানঃ কী রে এখানে কী করছিস একা একা?
আয়ানঃ এমনি ভালো লাগছে না।
রাফসানঃ কেনো ভালো লাগছে না কেনো?আজ তো তোর ভালো থাকার দিন।
আয়ানঃ মানে?কী বলতে চাইছিস?
রাফসানঃ আরুর চোখের পানি তো তোর সুখের কারণ।আর আজ তো ওকে কাঁদিয়েছিস।তাহলে তোর ভালো লাগচে না কেনো?
আয়ানঃ খোঁচা মেরে কথা বলা বন্ধ কর।
রাফসানঃ তুই এমন কাজ করতে পারবি আর আমি বললে দোষ?
আয়ান কিছু বললো না।আয়ানকে কিছু না বলতে দেখে রাফসান বললো,
রাফসানঃ কী হয়েছে?আজকে সকাল থেকে দেখছি কেমন যেনো দেখাচ্ছে?কী হয়েছে বল?
আয়ানঃ কিছু হয় নি।আমার আবার কী হবে?
রাফসানঃ তুই নিজেই ভালো করে জানিস কী হয়েছে তাই কোনো ভণিতা না করে বল?
আয়ান কিছুক্ষন চুপ থেকে কাল দিনের ঘটনা ও রাতের ওই লোকের কথা গুলো সব বললো।সবটা শুনে রাফসান বললো,
রাফসানঃ চোখের দেখা সবসময় সত্যি হয় না।আামাদের নিজের চোখেও আমারা মাঝে মাঝে ভুল দেখি।তাই বলবো এটা নিয়ে মাথা গরম করিস না।আর ওই লোকের কথায় তুই তোর ভালোবাসা ছেড়ে দিবি?আর ভালোবাসার অবিশ্বাস করছিস?
আয়ানঃ আমি নিজের চোখে দেখেছি আরুকে আর সোহানকে তাহলে ভুল কীভাবে?আর আমি আরুকে অবিশ্বাস করতে চাইছি না।কিন্তু সব কিছু ওর বিরুদ্ধে।
রাফসানঃ একটা সম্পর্ক তে সবচেয়ে জরুরি হলো বিশ্বাস আর সেটাই তোর মাঝে নেই।তবে কাল দুপুরে কাহিনীটার আসল ঘটনা তোর সামনে তুলতে পারি যদি তুই বিশ্বাস করিস।
আয়ান ভ্রু কুচকে রাফসানের দিকে তাকিয়ে আছে।রাফসান এবার ফোন বের করে মারিয়ার নাম্বারে কল করলো।মারিয়া কল রিসিভ করার পর রাপসান কিছু কতা বললো তারপর বললো,
রাফসানঃ আচ্ছা মারু একটা সত্যি কথা বলবে?
মারিয়াঃ হুম বলবো বলো?আর তুমি এভাবে বলছো কেনো?
রাফসানঃ কালকে দুপুরে তোমারা যখন রেস্টুরেন্টেের পাশের মাঠে ছিলে তখন কি হয়েছিলো?প্রথম থেকে সবটা বলবে।
মারিয়াঃ কেনো বলতো?কিছু কী হয়েছে?
রাফসানঃ আহা বলো না?
তারপর মারিয়া কালকের সব ঘটনা একে একে বললো।ফোন স্পিকারে থাকায় আয়ানও সবটা শুনলো
সবটা শুনে চিন্তায় পরে গেলো কার কথা বিশ্বাস করবে।তারপর রাফসান মারিয়াকে এটা সেটা বলে রেখে দিলো।রাফসান এবার আয়ানের দিকে তাকি বললো,
রাফসানঃ সবটা তোর সামনে তুলে ধরলাম এবার বিশ্বাস অবিশ্বাস তোর ব্যাপার।
রাফসান কিছু সময় চুপ থেকে বললো,
রাফসানঃ আচ্ছা ওি নাম্বার থেকে আর কল এসেছিলো?
আয়ানঃ না
রাফসানঃ আচ্ছা তুই একবার দিয়ে দেখতো এখন।
আয়ান সাথে সাথে সেই নাম্বারে কল করলো কিন্তু ওই নাম্বারটা বন্ধ পেলো।রাফসান বললো,
রাফসানঃ খুব পাক্কা খেলোয়ার।তোদের একসাথে থাকতে দিবে না ওই লোক।একে ধরতে হলে বহু কাঠখড় পোহাতে হবে।কিন্তু..
আয়ানঃ কিন্তু?
রাফসানঃ ভয় হচ্ছে ভাই এসবের মাঝে যেন তুই আরুকে না হারিয়ে ফেলিস।
আয়ান রাফসানের দিকে তাকিয়ে রইলো।ওর অসহায় ভাবে তাকানো দেখে রাফসান বললো,
রাফসানঃ আরে ভয় পাস না কিছু হবে না।
তারপর দুই বন্ধু কিছুক্ষণ কথা বলে যে যার বাসায় চলে গেল।আয়ান বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো।আয়ানের আজ খুব ভালো ঘুম হবে।কারণ আরুর কালকের ঘটনায় কোনো দোষ ছিলো না।আয়ান আরুর একটা ছবি দেকতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়লো।
চলবে…..