হারাতে_চাই_না_তোমায় #পর্ব-,২১২২

0
847

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-,২১২২
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা

২১
আরুর প্লেন ল্যান্ড করেছে ১০ মিনিট হলো।এয়ারপোর্ট এর বাইরে এসে দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু যার আসার কথা ছিল সে এখনো আসেনি তাই আরু দাঁড়িয়ে আছে।আরু এদিক ওদিক তাকাতে দেখে সে চলে এসেছে।আরু কে দেখে খুশি হয়ে সামনে এগিয়ে জড়িয়ে ধরল ইউ আর ওকে দেখে খুশিতে জড়িয়ে ধরল।আজ অনেকদিন পর তাদের দেখা হলো।এবার আরও বলল,
আরুঃ ইশু কেমন আছিস।(আর ওর মামাতো বোন ঈশিকা।আরুয়ার ঈশিকা সমবয়সী।ঈশিকা এবার মেডিকেলে প্রথম বর্ষের ছাত্রী।)
ইশুঃ আমি ভালো।তুই কেমন আছিস বল।
আরুঃ আমিও ভালো আর ভালো না থাকলে কি এখানে চলে আসতাম।
ইশুঃ হুম তা ঠিক বলেছিস।তা কতো দিনের জন্য আসলি এবার?
আরুঃ 😒🤨
ইশুঃ মজা করলাম😁।চল বাসায় চল।বাবা তোর জন্য ওয়েট করছে।
আরুঃ হুম চল।

আরিশা আর ইশিকা চলে যায় বাসার উদ্দেশ্যে।আরু বাসায় এসে ওর মামা মামির সাথে কুশল বিনিময় করে রুমে চলে গেলো।রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো।আরু ফ্রেশ হওয়ার পর ভাবলো বাবা মা’র কাছে একটা কল করবে আবার ভাবলো এখন তো বাংলাদেশে রাত নিশ্চয়ই সবাই ঘুমাচ্ছে।থাক ওই দেশে সকাল হলে তারপর কল দেওয়া যাবে।এই ভেবে আরু লাঞ্চ করতে চলে গেল।অরুরা গল্প করছে আর খাচ্ছে।ওদের খাওয়া যখন শেষের দিকে তখন ওর মা কল করলো আরুর মামার ফোনে।ওর মা জানতে চাইল আরো এখনো গিয়ে পৌঁছেছে কি না।আরুর মামা ও জানালো আরু ঠিকঠাকমতো এসে পৌঁছেছে।আরু মা আর ওর সাথে কথা বলতে চাইলে ও জানালো রুমে গিয়ে কথা বলবে।আরু তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া করে রুমে এসে ওর মার সাথে কথা বলল।আরু জানালো,ও ঠিকঠাক মত এসেছে,কোন সমস্যা হয়নি আসতে আর ওর মা যেন বেশি চিন্তা না করে ও এখানে ঠিক থাকবে এই আশ্বাস দিল আর ওর মা’কে।আরু ওর মার সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিল।বাংলাদেশ এখন প্রায় মাঝ রাত।তাই আরু বেশি কথা না বলে ওর মা’কে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে বলল।আরুও ঘুমিয়ে পড়ল প্রায় ২০(সব সময় মিলিয়ে)ঘন্টার মত জার্নি করে ও এখন অনেক ক্লান্ত।আরুর এখন একটা লম্বা ঘুমের দরকার।ইশিকা আরুকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে ওর ক্লাসে চলে গেলো।

in Bangladesh
রাত তিনটা
আয়ান ব্যালকনিতে বসে আছে।ওর হাতে আর ওর দেওয়া সেই শোপিসটা।আজ আরুর কথা অনেক মনে পড়ছে আয়ানের।আয়ানের কেমন যেন অস্থির লাগছে।মনে হচ্ছে আরু ওর থেকে অনেক দূরে চলে গেছে।এই অস্থিরতা আয়ান কি দিয়ে কমাবে তা ও নিজেও জানেনা।তাই এই মাঝরাতে আরুর দেওয়া শোপিস টা হাতে নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে এবং এই নির্জন রাত টা উপভোগ করছে।কিছুক্ষণ পর ওর একাকীত্ব সময় কাটানোর জন্য সাথে নিয়ে আসলো একটা সিগারেট গিটার।গিটারের টুংটাং আওয়াজ করে চোখ বন্ধ করে আর ওর হাসি মুখটা কল্পনা করার চেষ্টা করছে।কিছুক্ষণ পর গিটার বন্ধ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগারেট টানতে লাগলো।

in America
রাত দশটা
আরুর মাএ ঘুম ভাঙলো।আরুর ঘুম ভেঙে মনে হচ্ছে অনেক রাত হয়ে গেছে তারপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত দশটা বেজে গেছে।আরু লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে।ও এতোক্ষন ঘুমালো অথচ ওর মা ওকে একবারো ডাকলো না কেনো।বিছানা থেকে নামতেই দেখলো অন্য একটা রুমে ও আছে।কিন্তু ও অন্য কোথায় এলো তাই ভাবছে।প্রথমে বুঝতে না পরলেও পরে বুঝতে পেরেছে ও এখন বাংলাদেশে নেই,ওর মা বাবার কাছে নেই,নিজের রুমে নেই।এসব ভেবেই ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো।চোখের কোণায়ও পানি এসে পড়েছে।কিন্তু চোখের পানি না ফেলে নিজেকে শক্ত করে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখে ইশিকা ওর রুমে বসে আছে।আরু ইশিকাকে দেখে বললো,
আরুঃ কী তুই কখন এলি?
ইশুঃ বাসায় এসেছি সেই সন্ধ্যা বেলা।ভাবলাম আড্ডা দেবো কিন্তু এসে দেখি মেডাম পরে পরে ঘুমাচ্ছে।
আরুঃ তো আমাকে ডাকে দিতি।
ইশুঃ অনেক জার্নি করে এসেছিস তাই ভাবলাম তোর রেস্ট দরকার তাই আর ডিস্টার্ব করি নি।
আরুঃ আচ্ছা ইশু এখানে আমি স্টাডি শুরু করবো ভাবছি।তাই কী কী প্রয়োজন আর কবে কী লাগবে একটু বলতো।
ইশুঃ আরে মাএ এসেছিস।এই খানের সব কিছুর সাথে আগে খাপ খাইয়ে নে তারপর ভাবা যাবে।
আরুঃ হুম।তাও একটু তাড়াতাড়ি চাইছি আমি।
ইশুঃ সে দেখা যাবে এখন ডিনার করতে চল।তুই উঠেছিস কিনা মা দেখতে বললো।
আরুঃ হুম চল।

আরুরা ডিনার করতে চলে গেলো।ডিনার করে এসে কিছুক্ষন কথা বলে শুতে চলে গেলো।ইশিকা কিছুক্ষনের মাঝেই ঘুমিয়ে পরে।কিন্তু আরুর চোখে ঘুম নেই।দুপুর থেকে ঘুমিয়েছে তাই এখন চোখে ঘুম নেই।আরু উঠে বেলকনিতে চলে গেলো।আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।হটাৎ ওর ফোন বেজে উঠলো।তাকিয়ে দেখে তন্নি আর মারিয়া ভিডিও কল দিয়েছে।আরু রিসিভ করে কথা বললো,
মারিয়াঃ কী রে গিয়ে কী আমাদের ভুলে গেলি।
আরুঃ আরে না ভুলবো কেনো।কেমন আছিস বল।
তন্নিঃ আমরা ভালো।তুই কেমন আছিস?ঠিকঠাক মতো পৌছেছিস?
আরুঃ হুম আমি ঠিক আছি।আর ভালো মতো এসে পৌঁছেছি।
তন্নিঃ কখন গিয়েছিস?
আরুঃ এখানকার সময় দুপুর ১ টা।আর বাংলাদেশ সময় রাত ৩ টা।তাই তখন তোদের কল করে নি
মারিয়াঃ ওহ।

ওরা আরো কিছুক্ষন কথা বলে কল কেটে দিলো।আরু কল কেটে কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে ও চলে গেলো ঘুমাতে।

চলবে……

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-২২
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা

৪ মাস পর
এই কয়েক মাসে বদলে গেছে অনেক কিছু।মারিয়া আর রাফসানের সম্পর্ক দুই পরিবার মেনে নিয়েছে।যদিও কিছু ঝামেলা হয়েছিলো কিন্তু পরে সবটা মেনে নিয়েছে।কারণ রাপসানদের নিজস্ব বিজনেস আছে,,রাফসানও ভালো ছেলে,লেখাপড়া করছে তাই আর মারিয়ার পরিবার অমত করতে পারে নি।কিন্তু শর্ত আছে,রাফসান পড়াশোনা শেষ করে বিজনেসে জয়েন করবে তারা বিয়ের কথা আলোচনা করবে।এই খবর শুনে সবাই খুশি।আরুও ওখান থেকে অনেক খুশি।

তন্নি আর অনিমের সম্পর্কে কোনো ফল হয় নি।আরু চলে যাওয়াতে অনিম আর বাবা মা’র মনের অবস্থা এখনো ভালো না।নিজেদের আদরের মেয়ে দূরে যাওয়াতে তারা একটু ভেঙে পরছে।অনিমও আরু যাওয়াতে মন খারাপ।বাসায় ফিরে কেমন একা একা লাগে।আগে আরু বাসায় থাকলে কোনো কারন ছাড়া দুই ভাই বোন ঝগড়া করতো এখন তো তাও করতে পারে না।এসবে মনে খারাপ করে অনিমও তন্নির বিষয়টা একটু সাইডে রেখেছে।কিন্তু মন থেকে দূরে যেতে দেয় নি।
তন্নি আর মারিয়া একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে এডমিশন নিয়েছে।তন্নির পাবলিক ভার্সিটিতে চাঞ্চ পেয়েছিলো কিন্তু মারিয়া অল্প একটুর জন্য পায়নি।দুজন দুই ভার্সিটিতে একা থাকবে এটা ওরা মেনে নিতে পারে নি।তাই তন্নি আর মারিয়া মিলে একটা পাবলিক ভার্সিটি ভর্তি হয়েছে।

মারিয়া আর তন্নি শপিংমলে এসেছিলো কিছু দরকারি কেনাকাটা করতে।শপিং করে বের হওয়ার সময় তন্নির সাথে একজনের ধাক্কা লাগলো।তন্নি পরে যেতে নিলেই ওই লোকটা তন্নির হাত পেচিয়ে ধরে।যাতে তন্নি পরে না যায়।তন্নিও ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে আছে।মারিয়াও তন্নির পরে যাওয়া দেখে ‘তনু’ বলে হালকা চিৎকার করলো।কিছুক্ষন সময় যাওয়ার পর যখন তন্নি দেখলো ও পরে যায় নি তখন আস্তে চোখ খুললো।লোকটাও তন্নির দিকে অবাক তাকিয়ে আছে।তন্নি চোখ খুলে দেখল ওর সামনে ওর পরিচিত একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে।তন্নি তাকে দেখে খুশিতে একহাত জড়িয়ে ধরল।সেই ব্যক্তি ও তন্নিকে দেখে খুশি হলো।তন্নি হাসিমুখে বলল,
তন্নিঃ শাকিল ভাইয়া তুমি? এখানে?ঢাকা ফিরেছো কবে?ফুফা ফুফি কোথায়?(শাকিল সম্পর্কে তন্নির ফুফাতো ভাই।পেশায় একজন উকিল।শাকিলরা চিটাগং থাকে।তন্নির বড় কোনো ভাই নেই তাই শাকিলকে ও বড় ভাই মানে।আর শাকিলেরও কোনো বোন নেই সেই হিসেবে তন্নিকে নিজের বোনের মতো স্নেহ করে।তন্নির সব আবদার ভাই হিসেবে শাকিল পূরন করে।তন্নি শাকিল একে অপরের সাথে অনেকটা ফ্রী)
শাকিলঃ আরে আস্তে আস্তে প্রশ্ন কর।হুম আমি।১ সপ্তাহ হলে দেশে এসেছি।আর আব্বু আম্মুও চিটাগং।
তন্নিঃ ১ সপ্তাহ ঢাকা আর তুমি এখনো আমাদের বাসায় আসলে না কেনো?আর তুমি থাকছো কোথায়?
শাকিলঃ আসলে একটা কেসের কারণে ঢাকা এসেছি।আমি আছি আমার এক ফ্রেন্ডের বাসায়।আর তোদের বাসায় যায়নি কারণ কাজটা ফ্রন্ডের বাসা থেকে কাছেই।তবে আজ কালের ভিতরে যাবো ভেবেছিলাম।কিন্তু দেখ তোর সাথেই দেখা হয়ে গেলো।
তন্নিঃ হু মিথ্যুক😏
শাকিলঃ সত্যি বলছি।আমি কালকেই যাবো তোদের বাসায়।…..উম।না কাল না আজই যাবো।হ্যাপি?
তন্নিঃ😶😏😤
শাকিলঃ আচ্ছা চল তোকে আইসক্রিম খাওয়াবো।তাহলে তো রাগ কমবে।
তন্নিঃ চলো😊(খুশি হয়ে)
শাকিলঃ পাগলি একটা।চল।

মারিয়া এতোক্ষন হাবলার মতো ওদের দিকে তাকিয়ে ছিলো।তন্নিরা আগাতে যাবে তখনই তন্নি মারিয়াকে এমন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওর কাঁধে হালকা চাপড় দিয়ে তন্নি বললো,
তন্নিঃ ওই এমন খাম্বার মতো দাড়িয়ে আছিস কেন?
মারিয়াঃ তোদের দেখে।
তন্নিঃ কেনো আমরা কী এলিয়েন নাকী?আমাদের আগে কখনো দেখিস নি?
মারিয়াঃ এমন হটাৎ উইড়া আইসা ধাক্কা দিয়ে তোর সামনে জায়গা জুইড়া খারাইছে।তাও আবার তোর ভাই এলিয়েন দেখমু না তো কী দেখমু।
তন্নিঃ তোর দেখা হইছে এবার চল😬
মারিয়াঃ 😏

শাকিল ওদের কতা শুনে হাসতে লাগলো।মারিয়া তন্নি আর শাকিল একটু এগাতেই শাকিলের ফোন বেজে উঠলো।ফোন রিসিভ করে শুনে ওকে এখনি যেতে হবে।শাকিল ‘আসছি’ বলে কল কেটে দিলো।শাকিল তন্নির সামনে গিয়ে বললো,
শাকিলঃ সরি বোন আমাকে এখনি যেতে হবে।রাগ করিস না।রাতে আমি শিউর আসবো এবং তোর জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসবো।প্রমিস।

তন্নিও হাসি মুখে শাকিলকে বিদায় দিলো।শাকিল যেতেই তন্নি আর মারিয়া হাঁটা দিলো সামনের দিকে।এতোক্ষন৷ সবটাই দেখছিলো অনিম দূর থেকে।তন্নিকে অন্য ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে অনিম রাগে ফুঁসছে।শাকিল যেতেই অনিম পা বাড়ালো তন্নিদের দিকে।
তন্নিরা কয়েকপা আগাতেই হটাৎ ওদের সামনে অনিম এসে দাঁড়ালো।অনিমকে এতো দিন পর দেখে তন্নির মনে আনন্দের স্রোত বইতে লাগলো।কিছু সময় অনিমকে পর্যবেক্ষন করার পর ওর চোখের দিকে তাকলো।সেই চোখে ছিলো তন্নিকে ধ্বংস করার জন্য আগুন।অনিমকে দেখে কিছুটা ভয় পেলো।মনে হচ্ছে রেগে আছে কিন্তু কী কারন তা জানা নেই।ওদের ভাবনার মাঝে মারিয়া বললো,
মারিয়াঃ আরে ভাইয়া ভালো আছেন?
অনিমঃ হুম ভালো।তোমরা?
মারিয়াঃ আমরাও ভালো আছি।
অনিমঃ এখানে কী করছো তোমরা?
মারিয়াঃ ভাইয়া একটু শফিংয়ে এসেছিলাম।
অনিমঃ ওহহ।তা কে কে এসেছো?
মারিয়াঃ আমি আর তনু।কিন্তু কেনো ভাইয়া?
অনিমঃ সত্যি তো?

এবার তন্নির রাগ উঠে গেলো।এতো জিজ্ঞেস করার কী আছে।মনে হচ্ছে গোয়েন্দা এসেছে আর আমরা আসামি তাই জিজ্ঞাসাবাদ করছে।মারিয়া উওর দিবে তার আগেই তন্নি ত্যাড়া ভাবে বললো,
তন্নিঃ আমাদের আর মারু দের এলাকার অনেকে এসেছে।দেখবেন?
অনিমঃ মানে?
তন্নিঃ মানে তো আপনি ভালো জানেন।
অনিমঃ আমি যা জিজ্ঞেস করেছি তা সোজা উওর দাও।😡
তন্নিঃ আমি আর মারু এসেছি।তা তো দেখতেই পাচ্ছেন।(কিছুটা ভয় পেয়ে)
অনিমঃ সত্যি আর কেউ আসেনি?
তন্নিঃ না।
অনিমঃ একটু আগে ছেলেটা কে ছিলো?😡

তন্নির এবারও রাগ হলো।মনে মনে রেগে বলতে লাগলো,’আমার পাশে কে ছিলো তা তুই যেনে কী করবি।আমার প্রতি এতো তোর কিসের অধিকার।ভালো তো বাসিস না তাহলে এতো অধিকার কিসের।ওই দিনও একবার এতো কিছু বলেছিস।সব কিছু মনে আছে আমার।কিছু ভুলিনি।বলবো না তোকে কে ছিলো’।
তন্নিঃ তা যেনে আপনি কী করবেন?
অনিমঃ ছেলেটা কে ছিলো?বলো?নাহলে কিন্তু….
তন্নিঃ বলবো না।কী করবেন আপনি?
অনিমঃ বলতে বলেছি আমি?
তন্নিঃ আমার হবু জামাই ছিলো।শুনেছেন? এবার খু…..

‘ঠাস’ একটা আওয়াজে হতেই চারদিক সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।মারিয়াও অবাকের উপর স্কয়ার, হোল-স্কোয়ার,কিউব হয়ে তাকিয়ে আছে অনিম আর তন্নির দিকে।(জী অনিম তন্নির গালে একটা দিয়েছে)
কী হলো এটা কিছুই বুঝতে পারছে না।তন্নিও হটাৎ এমন আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিলো না।যখন হুস ফিরলো কী হয়েছে তখনই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো।মাথা তুলে অনিমের দিকে তাকিয়ে দেখে অনিম রেগে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।তন্নিকে কাঁদতে দেখে অনিমের রাগ যেনো আরো বেড়ে গেলো।অনিম দাঁতেদাঁত চেপে বললো,
অনিমঃ খুব সাহস বেড়েছে না?অন্য ছেলের হাত জড়িয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে কথা বলা,আমি জিজ্ঞেস করাতে ত্যাড়া উওর দেওয়া,আবার অন্য ছেলেকে নিজের হবু স্বামী বলা।খুব পাখা গজিয়েছে না?
তন্নিঃ……(নিচের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছে)
অনিমঃ কথা বলছিস না কেনো?একটু ছাড় দিয়েছি বলে ডানা গজিয়েছে।এই ডানা কাটতে না আমার দু মিনিট সময় লাগবে না।বুঝেছিস?
তন্নিঃ (চুপ)………..
অনিমঃ তুই শুধু আমার খাঁচায় ডানা মেলবি।আর কারো না।এটা কল্পনা করাও তোর জন্য বিপদ।এটা মাথায় ঢুকিয়ে নিস।
তন্নিঃ…………..
অনিমঃ কথা বলছিস না কেন এখন?(চিৎকার করে)

অনিমের চিৎকারে তন্নি সহ সবাই ভয় পেয়ে গেলো।তন্নি অনিমের কথার উওরে মাথা ‘হ্যা’ বলে বুঝালো ও বুঝেছে।তন্নিকে মাথা নাড়তে দেখে অনিম রেগে হনহন করে চলে গেলো।কিছু দূর গিয়ে আবার তন্নির কাছে ফিরে এসে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
অনিমঃ নিজের মুক্ত ডানা কেটে অনিমের খাঁচায় বন্দী হওয়ার জন্য রেডি হ।একন থেকে দিন গুনতে থাক।

এই বলে অনিম চলে গেলো।অনিম যাওয়ার পর তন্নি মাথা তুলে চারদিক তাকিয়ে দেখলো মানুষ ওর দিকে তাকিয়ে আছে।মারিয়া তন্নির কাছে এসে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তন্নি দৌড়ে চলে গেলো।মারিয়াও তন্নিট পিছনে গেলো
তন্নি রাগে,দুঃখে,অভিমানে ওখান থেকে চলে এসেছে।তন্নি ইচ্ছে করছে নিজেকে শেষ করে দিতে।কি করে পারলো অনিম ওকে সবার সামনক চড় মারতে।একবারে হাত কাপলো না।আর কী দোষ করছে ও?কোনো এভাবে ওকে অনিম সবার সামনে মারলো।এটা ভেবে তন্নি আরো কাঁদছে।
বাসায় এসে শাওয়ারের নিচে অনেকক্ষন দাড়িয়ে চোখের পানি ফেলে নিজেকে শক্ত করে বেড়িয়ে আসে।আর মনে মনে ভাবছে অনিমের কথা আর ভাববে না।কিন্তু যতোই এই কথা মনে মনে ভাবে পরক্ষনেই আবার ভাবে কীভাবে অনিমকে ভুলবে ও।

১ সপ্তাহ পর,
মারিয়া আর তন্নি ভার্সিটি থেকে বের হয়েছে।তন্নি কেমন যেনো মন মরা হয়ে থাকে ওই দিনের পর।মারিয়া তন্নিকে অনেক বার জিজ্ঞেস করেছে কেনো সেদিন অনিম এমন করলো কিন্তু তন্নি তেমন কিছু বললো না।শুধু বলেছে জানি না।মারিয়াও আর জিজ্ঞেস করে নি।তন্নিকে এমন দেখে মারিয়া স্বান্তনা দিয়ে বললো সব ভুলে যেতে।তন্নিও আর কিছু বলে নি।তন্নিরা বাসায় চলে গেলো।
তন্নি বাসায় গিয়ে শুনে ওকে আজ দেখতে আসবে।কিন্তু কে বা কারা দেখতে আসবে তা কিছু জানে না।আর তন্নিরও কেমন যেনো জানতে ইচ্ছে করছিলো না কে আসবে।তন্নি কিছু না বলে ওর রুমে চলে গেলো।তন্নি ভাবছে যদি অনিম ওকে বুঝতো ওর ভালোবাসা বুঝতো তাহলে এই বিয়ে ও ভেঙে দিতো।কিন্তু এখন তা করবে না।কারণ তন্নি জানে অনিমের মনে ওর কোনো জায়গা নেই।তাই ও চুপ চাপ সবটা মেনে নিলো।

তন্নির তাইলো বিয়া হইয়া যাইবো।কিন্তু কার লগে🤔

এই নিয়ে আজ চার-দিন আয়ান দেখলো তন্নি আর মারিয়া একা।ওদের আশেপাশে কোথাও আরু নেই।প্রথম-দ্বিতীয় দিন ভেবেছিলো হয়তো ও আসে নি।পরে এমন কিছু ভেবেছিলো কিন্তু আজও যখন দেখলো তখনও আরুকে দেখলো না।আয়ান প্রথমে ভেবেছে কোনো কারনো হয়তো আজো আসে নি কিন্তু এখন ওকে ভাবাচ্ছে এতো দিন হয়ে গেলো কিন্তু একবারো আয়ান ওকে দেখলো না।কোনো ভাবেই আরুর দেখা আয়ান পেলো না কেনো?আরুর কী কোনো সমস্যা না কী অন্য কোনো কারণ আছে?সব ঠিক আছে তো?কিন্তু সব যদি ঠিক থাকে তাহলে আরুকে দেখছে না কেনো।এসব ভেবেই আয়ান রাত পার করছে।

চলবো…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here