হারাতে_চাই_না_তোমায় #পর্ব-০৫,৬

0
819

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-০৫,৬
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা


রাফসান আরুকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।আরু গিয়ে বাসার কলিং বেল বাজাতে ওদের বাসার কাজের মেয়ে মিনু এসে দরজা খুলে দিলো আরু ভিতরে গিয়ে দেখে লিভিং রুমে ওর মা’র সাথে বসে আছে ওদের পাশের বাসার মহিলা।আরু ওনাকে দেখে সালাম দিলো মহিলাও বিনিময়ে হাসি দিলো।আরু উপরে পা বাড়াতেই ওর মা ওকে জিজ্ঞেস করলো,

আদিরা আহমেদঃ আরু মা তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?

আরুঃ কিছু হয় নি আম্মু।বাহিরে গরম তো তাই হয়তো এমন দেখাচ্ছে।চিন্তা করো না শাওয়ার নিলে ঠিক হয়ে যাবো।

আদিরা আহমেদঃ চিন্তা করবো না? দেখা যাচ্ছে কেমন তোকে।কতো বার বলেছি গাড়ি নিয়ে যা কিন্তু আমার কথা শুনলি না এই গরমের মধ্যে রিকশা দিয়ে চলাফেরা করিস।

আরুঃ উপ আম্মু ঠিক হয়ে যাবো বললাম তো।

আদিরা আহমেদঃ কী ঠিক হবে।সব হয়েছে তোর বাপের জন্য।মেয়ে কে সব কিছু তে আস্কারা দিয়ে দিয়ে আজ এই অবস্থা।আবার মেয়ের কিছু হলে তখন আমাকে বলবে।আজ আসুক তোর বাপ।

আরুঃ উফ আম্মু…..আমি উপরে গেলাম।
আরু সিঁড়ির দিকে দু পা বাড়াতেই ওই মহিলা বলে উঠলেন,

মহিলাঃ ভাবি মেয়েকে এমন আস্কারা দিবেন না।পরে কিছু হয়ে গেলে আপনাদের নাক কান কাটা যাবে।আজকালকার ছেলে মেয়েদের এমন ছেড়ে দিতে নেই।

আদিরা আহমেদঃ না ভাবি আমাদের মেয়ে এইরকম না।নিজের মেয়ে বলে বলছি না।

মহিলাঃ কিছু না থাকলেই ভালো।তবুও বলে রাখলাম কারণ এই বয়সটাই তো ভুল করার।তাই বলছি এভাবে ছেড়ে দিবেন না।মেয়ের পিছনে খোজ লাগান।

আদিরা আহমেদঃ না ভাবি আরু ওই রকম না কোথাও কিছু হলে বাসায় এসে আমাকে,ওর বাবাকে বা ওর ভাইকে সব বলে দেয়।

মহিলাঃ এই কথা গুলো বললাম কী আর সাধে ভাবি এমন ঘটনা হয়েছে বলেই বলছি।

আদিরা আহমেদঃ কী হয়েছে?

মহিলাঃ আর বলবেন না ভাবি আমার ননদের ভাইয়ের মেয়ে আরুর বয়সি।যেমন ভদ, শান্ত তেমন সুন্দরীও বটে।ওই মেয়েকেও ওর বাবা মা এমন ছেড়ে দিতো কারণ তারা জানতেন মেয়ে কলেজ,কোচিং,বন্ধুদের সাথে আড্ডা,বাসা এর বাইরে তো মেয়ে কোথাও যান না।তাই ওর বাবা মা মানে আমার ননদের ভাই ভাবি মেয়ের দিকে তেমন গুরুত্ব দিতো না।কিন্তু কে জানতো বলুন এই ভদ্র মেয়ে এমন কোনো কাজ করবে আর এই কাজের জন্য বাপ মায়ের মুখে চুন কালি পড়বে। জানেন কী হয়েছেলি?
আরুর মা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।তারপর মহিলা বললেন,
মহিলাঃ ওই মেয়ের সাথে কোন ছেলের জানি সম্পর্ক ছিল।একদম ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আরকী।মেয়েকে দেখেও বুঝা যেতো না এই মেয়ে যে কারো সাথে সম্পর্কে জড়াতে পারি।এতো দিন ছিলো ওদের সম্পর্ক তা জানি না কিন্তু পরে এক সময় ওই ছেলে নাকি বিদেশ চলে গেছে।বিদেশ গিয়ে না কী ওই মেয়েকে আর পাওা দিতো না এ নিয়ে মেয়ে মন মরা থাকতো সারাদিন।এর মাঝেই একদিন খরব পেলো মেয়ে প্রেগনেন্ট।পরে ওই ছেলেকে তা জানাতেই সেই ছেলে নাকী সব অস্বীকার করে।এখন পারার মানুষ ওই মেয়ের জন্য বাপ মা কে ছিঃ ছিঃ করে।কী একটা অবস্থা বলুন।
আরুর মা এসব শুনে চিন্তায় পরে গেলেন।তার মেয়ে কী এমন কাজ করতে পারে?আবার ভাবলেন না আরু এমন কাজ করবে না কিন্তু মেয়েও তো আজ দুদিন জাবত কেমন মন মরা হয়ে থাকে।মেয়েরা তো মা’য়ের কাছ থেকে কিছু লুকায় না।কী হয়েছে মেয়ের তা উনি জিজ্ঞেস করবেন।তাই ভেবে রাখলেন।
(আসলে আমাদের মা জাতি এমনই কোথও কিছু শুনলে তা নিয়ে চিন্তায় পরে যায় এই ভেবে যে আমার সন্তানরা ঠিক আছে তো।সন্তানের কিছু হলে সবার আগে মায়ের মন জানান দেয়।সন্তান কোনো বিপদে পরলে আগে মায়ের মন কু ডাকে।পৃথিবীতে মা’য়েদের ভালোবাসাই নিশার্থ এই ভালোবাসায় কোন খাদ নেই।যাদের মা নেই সে বুঝে পৃথিবীতে মা কী জিনিস।আবর অনেকে মা থেকেও মা’কে রাস্তায় ফেলে রাখে।যাক পৃথিবীর সব বাবা মা কে আল্লাহ সুস্থ রাখুক,হেফাজতে রাখুক।আমিন।)
মহিলা আরো কিছুক্ষন কথা বলে চলে যায়।
আরু এতোক্ষন উপরে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনছিলো।ওনার এসব কথা শেষ হতেই আরু রুমে এসে পড়লো।
আজ একেতো আয়ানের সাথে দেখা হওয়া,আয়ানের ব্যাবহার তারউপর ওই মহিলার এইসব কথায় ওর মার কান ভারি করা।রাগে,দুঃখে আরু ওয়াশরুমে চলে গেলো।গিয়ে শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে পরলো।আর চোখের পানি ফেলতে লাগলো।শাওয়ারের পানির সাথে ওর চোখের পানি মিশে যাচ্ছে।ওর এই কষ্ট কাউকে দেখাতে চায় না।নিজের কষ্ট একান্তই নিজের। একসময় কাদতে কাদতে বসে পরে আর ভিজতে থাকে।মহিলা যাওয়ার পর আরুর মা কিচেনে গিয়েছিল।কিচেন থেকে বেড়িয়ে আরুর রুমে এসে দেখৈ আরু রুমে নেই ওয়াশরুম থেকে শাওয়ারের আওয়াজ আসছে তাই ওর মা ওকে তারাতাড়ি বেড়িয়ে আসতে বললেন।আরু আসছি বলে দিলে ওনি চলে গেলেন নিজের রুমে শাওয়ার নিতে আর নাময পড়তে।আরু প্রায় আরো অনেকক্ষন ভিজার পর উঠে দাড়ালো কিছু দাড়ানোর শক্তি পাচ্ছে না তাও কষ্ট করে চেঞ্জ করে বিছানায় এসে বসলো।তখনই আরুর ফোনটা বেজে উঠলো।ফোন হাতে নিয়ে দেখে তন্নির কল।আরু বাসায় এসেছে কী না তা জানতে কল করেছে।তন্নির ফোন কাটার পর মারুর কল আসলল ও একি কারণে কল করেছিলো।আরু একেক সময় ভাবে ভাগ্য করে ২ টা বেস্ট ফ্রেন্ড পেয়েছে।ওদের সাথে কথা শেষ হওয়ার পর আরুর শরীর কেমন জেনো নিস্তেজ হয়ে আসতে লাগলো।মাথাটাও কেমন ব্যাথা করছে।আসলে সারাদিন কান্নার পর আবার এতোক্ষন মাথায় পানি পরার কারনে এই অবস্থা।তাই ও চুলের পানি গুলো না শুকিয়ে এভাবে শুয়ে পরলো।কখন ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো বুঝতে পারলো না যখন চোক খুললো তখন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ৮ টা।ও অবাক হয়ে গেলো এতোক্ষন ও ঘুমালো অথচ ওর মা একবারো ডাকলো না।এসব কথা ভেবে পাশে তাকিয়ে দেখে……

চলবে…

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্বঃ৬
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা

আরু অবাক হয়ে গেলো ও এতোক্ষন ঘুমালো অথচ ওর মা একবারো ডাকলো না।এসব ভেবে ও পাশে তাকিয়ে দেখে ওর বাবা বসে আছে ওর মাথার কাছে।কপালে ভিজা কিছু অনুভব করতেই হাত দিয়ে দেখে ওর কাপলে জলপট্টি দেওয়া।ওর কি হয়েছে তাই ভাবছে।আরুকে চোখ খুলতে দেখে আরুর বাবা বলে উঠলেন,
আশরাফ আহমেদঃ মা এখন কেমন লাগছে?শরীর বেশি খারাপ লাগছে?আমি কিন্তু তোমার উপর খুব রেগে আছি।আমি একটু ব্যস্ততার কারণে তোমার খেয়াল রাখতে পারলাম না বলে জ্বর বাধিয়ে ফেলবে।

আরু শোয়া থেকে উঠতে জেতেই শরীর ব্যাথার কারণে ‘আহ’ করে উঠলো।ও ভাবছে জ্বর হলো কখন ওর।পরে কিছু ভাবতেই মনে পরলো হয়তো এই কারণে দুপুরে শরীর এমন লাগছিলো আর অঙ্গান হয়ে গিয়েছিলো।তখনই ওর বাবা রাগী চোখে তাকালেন।আরু মুচকি হেসে বললো,

আরুঃ আমি একদম ঠিক আছি বাবা।আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না।আর তুমি আমার উপর রেগে আছো তা আমি বিশ্বাসই করি না।কারণ আমি জানি তুমি আমাকে কতোটা ভালোবাসো।(একটা কিউট হাসি দিয়ে)

আশরাফ আহমেদঃ যতো যাই করো আর তেল মাখো আমি এবার সত্যি রেগে আছি।(কিছুটা রেগে)

আরুঃ সরি বাবা।এমন হবে আমি বুঝতে পারি নি।

আশরাফ আহমেদঃ হুম।…..আর কোনো অনিয়ম যেন না হয়।আর তোমার মায়ের কাছ থেকে আমি সব কথা শুনেছি।

আরুঃ কি শুনেছো বাবা?(কিছুটা ভয় পেয়ে)

আশরাফ আহমেদঃ তুমি এখন থেকে রোজ গাড়ি দিয়ে কলেজ যাওয়া আসা করবে।রিকশা করে চলাফেরা তোমার বন্ধ।

আরুঃ(আরু একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো)বাবা আমার গাড়ি তে দম বন্ধ হয়ে আসে।আমি কী করবো।

আশরাফ আহমেদঃ এটাই আমার শেষ কথা।

আরুঃ কিন্তু বাবা……
আরুকে আর বলতে না দিয়ে উনি বললেন,
আশরাফ আহমেদঃ কোনো কিন্তু নয়।…আচ্ছা আরু মা বাবাকে একটা সত্যি কথা বলবে?
আরু ওর বাবার দিকে তাকিয়ে থাকলো মানে হল বলো।

আশরাফ আহমেদঃ তুমি কী কিছু নিয়ে চিন্তিত?মানে পড়াশোনা,পরিবার,স্কুল,বন্ধু এমন কিছু বা রাস্তায় কেউ কিছু তোমাকে বলেছে যা নিয়ে চিন্তিত থাকো।সত্যিটা বলবে কিন্তু বাবাকে।
আরু কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো ওর বাবার দিকে।ও ভাবছে,বাবা হটাৎ এমন কথা বলছে কেনো।কিছু কী জেনে গেছে নাকী আন্দাজ করে কিছু বলছে।চেহারা দেখেও তো কিছু বুঝা যাচ্ছে না।আবার ভাবলো,না নার্ভাস হওয়া যাবে না হলেই সন্দেহ করবে।নরমাল ভাবে দেখি কতটুকু যায়।আরু নিজেকে প্রস্তুত করে বললো,

আরুঃ না বাবা তেমন কিছু না।আর হলেও তোমাদেরই তো সবার আগে বলবো তাই না।কিন্তু হটাৎ এই কথা কেন বাবা?

আশরাফ আহমেদঃ ডাক্তার বললো তুমি বেশিক্ষন পানিতে ভিজার আর অতিরিক্ত চিন্তার কারণে তোমার জ্বর হয়েছে।পানিতে ভিজার কারন তো জানলাম কিন্তু চিন্তার কারণ কী?

আরুঃ না বাবা তেমন কিছু না।তোমারা শুধু শুধু চিন্তা করছো।আমি আবার কি নিয়ে চিন্তা করবো।
আরুর বাবা ওর দিকে একটু ভ্রু কুচকে তাকাতেই আরু বললো,
আরুঃ আমি সত্যি বলছি বাবা বিশ্বাস করো।(ঠোঁট উল্টিয়ে)
আরুর বাবা এবার মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে হেসে দিলেন।আরুও যেন হাফ ছেড়ে বাচলো।আরু আবার বললো,
আরুঃ মা আর ভাইয়া কোথায়?

আশরাফ আহমেদঃ তোমার মা তোমার জন্য চুপ আনতে গেছে আর অনিম তোমার জন্য মেডিসিন আনতে গেছে।
আরু আর ওর বাবা আরো কিছু কথা বলতেই ওর মা রুমে আসলো হাতে চুপ এর বাটি নিয়ে বিছানার কাছে আসতে আসতে বললেন,
আদিরা আহমেদঃ অনেক হাসাহাসি হয়েছে বাবা মেয়ের এবার উঠো খেয়ে নাও,সেই সকালে নাস্তা করেছো।তাড়াতাড়ি উঠো।
আরু ওর বাবার দিকে তাকিয়ে ইশারায় বললো,,আম্মু খেপেছে কিছু করে আমাকে বাঁচাও🥺আরুর বাবাও ইশারায় বললেন,,আমি পারবো না এইবার তোমার বিপদ তুমি সামলাও।আরু ওর বাবার থেকে হ্যা বোধক সারা না পেয়ে এবার ওর মায়ের দিকে তাকালো আর ববলো,
আরুঃ মা ও মা…তাকাও না। ও…আম্মু….।মাম্মি তাকাও না।………আমি কিন্তু এখন কান্না করবো🥺….।
আদিরা আহমেদঃ হয়েছে আর ইমোশনাল ব্লাকমেল করতে হবে না।কিন্তু সেই দিন শেষে কোনো একটা অঘটন ঘটিয়ে আমার কথাতেই সবাই এসে পরো।আমার কথা তো তোমরা কেউ পাওা দাও না অবশ্য তা দেবে কেনো তোমারা তো ভাবো আমি তোমাদের খারাপ চাই।এখনই করে নাও যখন আমি থাকবো না তখন বুঝবে।

আরুঃ আম্মু এভাবে বলো না প্লিজ।তুমি তো আমার ভালো মা,সুইট মা।আর কে বলেছে তুমি আমাদের খারাপের চাও।কোনো মা’ই তার সন্তানদের খারাপ চায় না।
আরুর মা কিছু বললো না চুপ করে থাকলেন।আরু আবার বললো,
আরুঃ আর রেগে থেকো না প্লিজ।আমি আর এরকম করবো না প্রমিজ।তুমি না আমার ভালে মা😚…আমি না অসুস্থ তুমি তাও আমরা উপর রেগে থাকবে তুমি জানো না অসুস্থ মানুষদের বকা দিতে নেই(ইনোসেন্ট ফেইস করে)(অনিমকে রুমে ঢুকতে দেখে বললো,)
আমার উপর যতো রাগ আছে সব ভাইয়ার উপর ছাড়ো আমি কাল সুস্থ হয়ে ওর থেকে নিয়ে নিবো😁

অনিমঃ কী বললি তুই?দোষ করবি তুই আর তোর বকা শুনবো আমি।দাড়া তোকে দেখাচ্ছি মজা।(আরুর কান টেনে)
আরুঃ এই ভাইয়া নায়য়য়য়…….আয়য়য়য়য় ছাড় লাগছে আমার।এ্যা এ্যা…..আম্মু..বাবা কিছু বলো তোমাদের ছেলেকে।

আদিরা আহমেদঃ আহ অনিম ছার ওকে এমনিতেই অসুস্থ মেয়েটা

অনিমঃ উহহহহ😒 অসুস্থ না সব ঢং করছে ও।
আরু অনিমের চুল টেনে ধরতেই অনিম বললো,
অনিম এই ছাড় আমাকে শাঁকচুন্নি।
আশরাফ আহমেদঃ অনেক হয়েছে এবার আরুকে খাওয়াও ওর মেডিসিনের টাইম হয়েছে।
আরু আর কথা না বলে খেতে শুরু করলো।প্রথমে খেতে ইচ্ছা করছিলো না কিন্তু পরে ওর মার চোখ রাঙ্গানি দেখে খেয়ে নিলো ওর বাবাও ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো আর ওর ভাই বিছানার অন্য পাশে বসে আছে।আরুর খাওয়া শেষ হতেই ওকে রেস্ট করতে বলে সবাই চলে যায় নিচে ডিনার করতে।আরু কর করবে ভাবছে।সেই দুপুর থেকে ঘুমিয়েছে এখন তো ঘুমও আসবে না আর জ্বরও পুরাপুরি ছাড়ে নি তাই শরীর ব্যাথার জন্য উঠতেও পারবে না।একটু বেলকনিতে গিয়ে বসা যেতো।কিন্তু কিছু করার নেই এভাবেই শুয়ে থাকতে হবে।হটাৎ আয়ানের কথা মনে পরতেই মনটা বিষাদে ছেয়ে গেলো।আরু ভাবছে,আয়ান তো ওর অসুস্থতার কথা শুনতে পারে না ওকে যদি এখন বলে তাহলে আয়ান এখন কেমন রিয়েক্ট করবে।এটা ভেবেই আয়ানকে কল করতে যেতেই কিছু একটা ভেবে কল কেটে দিলো।কারণ আয়ান একদিন বলেছিলো,’আরু তুমি জানো তোমার চোখের পানি আর তোমার অসুস্থতা আমার সবচেয়ে বড় দূর্বলতা।তোমার এই দুটি জিনিস আমি একদম সয্য করতে পারি না’।কিন্তু কই আজ তো ওর সামনে আমি কান্না করলাম কিন্তু ওর তো তেমন কিছুই হলো না।তাখন যেহেতু কিছু হয় নি তাহলে এখনও হয়তো কিছুই হবে না।তুমি কতোটা বদলে গেছো আয়ান।আরু এইসব কথা ভাবছে আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।প্রায়অনেক্ষন পর নিজেকে কিছুটা শান্ত করে চোখের পানি মুছে নিলো।কারণ এখন বাসায় সবাই আছে যে কোনো সময় যে কেউ আসতে পারে আর কেউ দেখলেই হাজার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।এবার আরু মোবাইলে একটা গান ছেড়ে শুয়ে পরলো।ওর জ্বরের মেডিসিনের সাথে ঘুমের মেডিসিনও ছিলো তাই ঘুমও চোখে ধরা দিলো।প্রায় অনেকক্ষন পর কপালে কারো ঠোঁটের ছোঁয়া পেলো কিন্তু ঘুমের কারনে চোখ খুলতে পারছে না তবুও জোর করে একটু চোখ খুলে অবয়ব দেখে বুঝলো ওর ভাই।(হ্যা অনিম এসেছিলো বোনটা কি করে আর কোনো কিছু লাগবে কী না তা দেখতে এসেছিলো।আসলে ভাই বোনের সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি মধুর সম্পর্ক।বড় ভাই হচ্ছে বাবার পরের স্থান,একটা ভরসার হাত।বোনের কোনো বিপদে ভাই সব সময় ঢাল হয়ে দাড়ায়।[আমারও বড় ভাই আছে আমারাও সারাদিন এমন ঝগড়া করি কিন্তু দিনশেষে যদি একবার ভাইয়ার সাথে দেখা না হয় তখন মন খারাপের পরিমানটা এতো বেড়ে যায় যা বলার মতো না।ভাইয়ার ক্ষেএেও একই অবস্থা।আমার সব আবদার,ইচ্ছা সব আমার ভাইয়ার কাছে🥰])
অনিম আরুর ফোনের গান অফ করে দিয়ে চলে গেলো ডিনার করে আরুর মা রুমে এসে দেখে আরুর বাবা ফাইল নিয়ে কীসব করছে।আদিরা আহমেদ এবার তার স্বামীকে বললেন,
আদিরা আহমেদঃ সারাদিন এইসব কাজই করো যাও ছেলে মেয়ে গুলো কোথায় কী করে তা খবর রাখো।
আশরাফ আহমেদঃ কেনো কী করেছে তোমার ছেলে মেয়েরা?
আদিরা আহমেদঃ ছেলে মেয়ে শুধু আমার তোমার না?
আশরাফ আহমেদঃ আরে কী মুশকিল তা কখন বললাম আমি।…..আচ্ছা কী হয়েছে বলো?
আরুর মা এবার দুপুরের মহিলার কথা আর নিজের চিন্তা ভবনার কথা গুলো বললেন আরুর বাবাকে।সব শুনে আরুর বাবা রেগে বললেন,
আশরাফ আহমেদঃ এসব মহিলার যেনো আমার বসায় আর না আসে আর তুমি ওই ফালতু মহিলার জন্য আমার মেয়েকে সন্দেহ করছো।আর কী নিয়ে করছো দেখলেই তো ওর চেহারা এই অবস্থা দেখলে পরে ওর শরীরে জ্বর এলো।হয়তো শরীর খারাপ লেগেছে তুমি চিন্তা করবে বলে কিছু বলে নি।এসব চিন্তা বাদ দাও ঘুমিয়ে পর।যাই মেয়েটাকে একবার দেখে আসি।
আরুর বাবা আরুর রুমে এসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে গায়ে ভালো করে চাদর টেনে দিয়ে চলে গেলেন ঘুমাতে।

পরদিন সকাল ১০ টা,,,,,
ফোনের তুমুল শদ্বে আরুর ঘুম ভেঙে গেলো।ফোনের দিকে না তাকিয়ে রিসিভ করলো আর তখনই ফোনের ওপাশ থেকে কারো রাগী গলা শুনা গেলো,
ওই শয়তানের নানি কই তুই একজন তো খালার বাসায় যায় নি মনে হয় মঙ্গল গ্রহে গেছে দুনিয়ার সব ভুলে গেছে আর তুই কোন গ্রহে গিয়ে মরেছিস?(মারু)
আরুঃ দোস্ত আস্তে বল আর কী হয়েছে ধীরে বল
মারুঃ আস্তে বল মানে কী কয়টা বাজে খেয়াল আছে?কলেজে কী আসবি না?
আরু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১০ টা বাজে তাই আস্তে উঠে বসলো আর মারুকে বললো,
আরুঃ দোস্ত আমি আজকে আসবো না আমার জ্বর এসেছে তাই আম্মু ও আসতে দেবে না।
মারুঃ সেকি কী বলিস কীভাবে কী হলো কাল দুপুরে তো ঠিক ছিলি।
আরু এবার সব খুলে বললো আয়ানের ব্যাপার ছাড়া।
মারুঃ ওহহ যাক তুই রেস্ট কর।তুইও আসবি না তনুও আসবে আমি কী করবো একা।
আরুঃ তুই আজ তানিয়াদের সাথে থাক
মারুঃ দূর……।আমিও এখন ম্যামের থেকে ছুটি নিয়ে বসায় চলে যাবো।
আরুঃ ক্লাস করবি না
মারুঃ না।তোরা নেই তাই ভালে লাগছে না।
আরুঃ ঠিক আছে তোর যা ইচ্ছা।
মারুঃ আচ্ছা সাবধানে থাকিস পরে কথা হবে
মারু কল কাটার পর আরু বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে নিচে গেলো।গিয়ে দেখে ওর মা কিচেনে আর মিনু ওর মাকে সাহায্য করছে।আরু গিয়ে নাস্তা খেতে লাগলো তখন ওর মা বললো,
আদিরা আহমেদঃ আরু শরীর এখন কেমন লাগছে?
আরুঃ ঠিক আছি আম্মু।ভাইয়া আর বাবা কোথায়?
আদিরা আহমেদঃ ওরা অফিসে চলে গেছে
আরুঃ ওহ
আরু আর কিছু না বলে খেয়ে উপরে ওর রুমে চলে গেলো।এখন কী করবে ভাবছে পড়তে এখন ইচ্ছে করছে না অনেক ভাবার পর ওর আর্ট খাতা নিয়ে আর্ট করতে বসলো।অবসরে আরু এই কাজটা করে[আর্ট করা আমার নিজের অবসরের একমাত্র বন্ধু ]
আর এদিকে মারু ছুটি নিয়ে ভাবছে বাসায় যাবে কী না কিছু ভবার পর কাউকে কল করলো।কয়েকবার রিং বাজার পর ওপাশ থেকে কল ধরলো।মারু বললো,
মারুঃ কোথায় তুমি?বিজি নাকী ফ্রি আছো?
ওপাশ থেকেঃ…………………..
মারুঃ আরে আজ কেউ আসে নি আর আসবেও না কিন্তু আমি জানতাম না এখন কলেজে এসে জানলাম তাই ওদের ছাড়া ভালো লগছে না বলে ছুটি নিয়েছি এখন কোথায় আছো বলো আমি আসছি এসে বলছি।
ওপাশ থেকেঃ…………….
মারু আচ্ছা আসছি।

এই মারুর আশিক টা আবার কে?🤔কেউ বলতে পারবেন?

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here