হারাতে_চাই_না_তোমায় #পর্বঃ০৩,৪

0
908

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্বঃ০৩,৪
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা


সকালে তন্নি ঘুম থেকে উঠে দেখে আরু ওর পাশে নাই।হটাৎ করে পশে আরু কে না পেয়ে তন্নি লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠলো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে মাএ ৮ টা বাজে এতো সকালে আরু কোথায় যেতে পারে।তন্নি বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুম,বেলকনি চেক করলো কিন্তু না কোথাও আরু নেই।রুমে এসে বেড সাইড টেবিল থেকে মোবাইল হাতে নিতে দেখে আরুর মোবাইল বালিশের পাশে পরে আছে।তন্নি মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো।ওর এখন নিজেকে আচ্ছা মতো গালাগাল দিতে ইচ্ছে করছে ওর ঘুমটা আরেকটু হালকা হলে কী হতো তাহলেই তো আরু কখন ওর পাশ থেকে উঠে গেল তা বুঝতে পারতো।অনেক্ষন পর ওর একটা জায়গার কথা মাথায় আসলো তাই তাড়াতাড়ি উঠে সেদিকে পা বাড়ালো।

ছাদের দোলনায় বসে এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আরু।সকাল ৬ টায় ওর ঘুম ভেঙে গেলো পাশে তন্নি কে দেখে আরু ভাবলো ও এখানে কেনো?পরে কালকের ঘটনা ওর মাথায় আসলো।আর মনে পরতেই মনটা বিষিয়ে গেলো।একবার ওর মোবাইলটা চেক করলো কোনো কল বা মেসেজ এসেছে কী না।কিন্ত না আরুকে নিরাস করে দিয়ে মোবাইলে কোনো কল বা মেসেজ কিছু পেলো না।তাই ও উঠে ফ্রেশ হয়ে ছাদের দিকে চলে আসলো।আর তখন থেকে এখানে বসে এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে কী থেকে কী হয়ে গেলো।এমনটা কী হওয়ার কথা ছিলো ওর সাথে?একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে ভাবলো হয়তো হওয়ার ছিলো যদি না হওয়ার থাকতো তাহলে তো সব ঠিক থাকতো।আচ্ছা আয়ানের মনে কী ও সত্যি ও ছিলো না কী না?না কী ও শুধু প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এমন করেছে।আরু আরো ভাবছে,আচ্ছা আমাকে কষ্ট দিয়ে কী আয়ান ভালো আছে?ওর কী আমার কথা একটুও মনক পরে না।আরু আবার নিজের মনেই বললো,দূর ও ভালোই আছে আমাকে কষ্ট দেওয়াই তো ছিলো ওর আসল উদ্দেশ্য ওর কোনো কষ্ট হচ্ছে না আর মনেও পরছে না।পরলে তো অবশ্যই একবার একটা কল দিয়ে জিজ্ঞাস করতো কিন্তু কই তা তো ও করলো না।আসলে এখনে দোষটা কার ওর ভাগ্যের না কী আয়ানের।অবশ্যই ওর ভাগ্যের দোষ তা না হলে কী ওর সাথে এমন হতো।নিজেকে কতো ভাগ্যবতী মনে হতো আয়ান ওর লাইফ থেকে এক বার জাওয়ার পর আবার ফিরে এসেছে।কার এমন ফিরে আসে।কিন্তু ওর এসেছিল।কতো আশা ছিলো এক সাথে সারা জীবন একে-অপরের পাশে থাকবে।কিন্তু তা আর হলো কই।এইসব ভাবতে ভাবতে কখন তন্নি ওর পাশে এসে বসলো তা টেরই ফেল না।তন্নিও ওর মনের অবস্থা বুঝতে পেরেছে।কিন্তু বুঝতে পারলেও কিছু করার নেই ভাগ্য তে যা আছে তা মেনে নিতে হবে।তন্নি এবার আরুকে ঠিক করতে ওর কাধে হাত রাখলো আরু চমকে উঠলো আর নিজেকে সামলে নিলো এবার তন্নি বলতে লাগলো,
তন্নিঃ কখন উঠেছিস?আর আমাকে ডাকলি না কেন?
আরুঃ তুই ঘুমাচ্ছিলি তাই আর ডিস্টার্ব করি নি।এমনিতেই কালকে থেকে আমার জন্য কতো কী করছিস।
তন্নিঃ একটা থাপ্পড় খাবি এখন এগুলো কেমন কথা তোর এই সময় তোর পাশে থাকবো না তুই এটা ভাবলি কী করে।
আরুঃ না তবুও।আচ্ছা তনু একটা কথা বলতো?
আমার সাথে কেন এমন হলো?আমি তো আমার সবটা দিয়ে ওকে ভালোবেসেছি তাহলে ও কেন এমন করলো।আমার ভাগ্য তে কী ও নেই?
তন্নিঃ আরু এভাবে বলিস না।তোর কোনো দোষ নেই না তোর ভাগ্যের।আসলে কী বলতো তুই আয়ান ভাইয়াকে ডির্জাভ করিস না এর থেকেও ভালো তুই কাউকে ডির্জাভ করিস।
আরুঃ কিন্তু আমিতো ওর থেকে বেটার কিছু চাই না আমার তো ওকে চাই।
তন্নিঃ দেখ আরু যা হয়েছে ভুলে যা।জানিস তো আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে।তুই আয়ান ভাইয়াকে ভুলার চেষ্টা কর জানি এতটা সহজ না কিন্তু তাও আমি বলবো চেষ্টা কর।
আরুঃ আচ্ছা তনু ও তো বললো ১ বছর আগের আমার সেই ভুলের জন্য ও আমার থেকে প্রতিশোধ নিলো।তখন যদি এইরকম না করতাম তাহলে কী আজ সবটা ঠিক থাকতো?
তন্নিঃ ওই ঘটনার জন্য নিজেকে একদম দায়ী করবি না।তখন পরিস্থিতি যেমন ছিলো তুই তেমন ভাবে চলছিস।তখন আমাদের বয়স কতো ছিলো বলতো।তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী ওই রকম ব্যবহার মানায়।কিন্তু আয়ান ভাইয়া তো তখনো সবটা বুঝতো এখনোও সবটা বুঝে তাহলে কেন এই রকম করলো।ওনার মতো মানুষের সাথে এই প্রতিশোধ শদ্বটা যায় না।
আরু কিছু বললো না চুপ করে রইলো।তাই তন্নি আবার বললো,
যা হয়েছে ভুলে যা সামনে তোর অনেক দূর আগাতে হবে এভাবে ভেঙে পরলে চলবে না।এবার উঠ নিচে চল আন্টি এখন খোঁজ করবে আর তাছাড়া আংঙ্কেল অনিম ভাইয়া বাসায় আছে।
তন্নি অনিমের নাম নিতেই কালকের কথা টা মনে পড়লো।আর মনে পরতেই ওর মনটা খারাপ হয়ে গেলো।তবুও নিজের মন খরাপ সাইডে রেখে দেলনা থেকে উঠে দাঁড়ালো।আরু এখনো বসে আছে তা দেখে বললো,
তন্নিঃ ওই উঠ কলেজের সময় হয়ে আসছে পরে লেট হয়ে যাবে।
আরুঃ আমি যাবো না তোরা যা।
তন্নিঃ কেনো যাবি না কেনো? বাসায় সারাদিন কী করবি আন্ডা পরবি😬
আরুঃ ভালো লাগছে না।আর গেলেই যদি ওর সামনে পরি তখন হয়তো নিজেকে সামলাতে পারবো না।
তন্নিঃ সামলাতে পারবি না মানে কী।সামলাতে হবে তোকে।ওকে দেখিয়ে দিতে হবে তুই দুর্বল নয়।ওদের সামনে নিজের দুর্বলতা দেখালে ওরা এটার সুযোগ নিয়ে আরো তোকে আঘাত কারার রাস্তা পেয়ে যাবে।
আরুঃ পাক তাও আমি যবো না।
তন্নিঃ তুই কী চাস আমি আন্টিকে সবটা বলে দেই?
আরু ওর দিকে তাকিয়ে আছে।তাই ও আবার বললো,
তন্নিঃ আমি তোর ভালোর জন্য বলছি।আর বাহিরে বের হলে দেখবি মনটা ভালো লাগবে।প্লিজ চল….।
আরুঃ কিন্তু……..
তন্নি চোখ পাকিয়ে তাকাতেই আরু বললো,
আরুঃ চল।

তন্নি মুচকি হেসে আরুকে নিয়ে নিচে এসে আরুর রমে এসে পরলো।তারপর দুজনে কলেজ যাওয়ার তৈরি হয়ে একেবারে নিচে নামলো।নিচে নেমে দেখে আরুর মা টেবিলে নাস্তা আনছে।আর কেউ এখনো টেবিলে আসে নি।আরুর মা ওদের দেখে একটা হাসি দিলেন তারপর বললেন,,
বাব্বা আজ সূর্য কোন দিকে উঠলো আমার মেয়ে আজ নিজে থেকে ঘুম উঠলো।ওহ আজ তো অবশ্য তন্নি ছিলো পাশে তাই তো?
আরুঃ আম্মু 🥺
আদিরা আহমেদঃ আচ্ছা আচ্ছা।এখন শরীর কেমন আমার মায়ের? মাথা ব্যাথা আছে আর?
তন্নিঃ আন্টি আমি ছিলাম ওর পাশে এক চুটকিতে ওর ব্যাথা তাড়িয়ে দিয়েছি।
বলেই তন্নি হাসতে লাগলো আর আরুর মা ও আরু শুধু মুচকি হাসলো।ওদের হাসার মাঝেই আরুর বাবা এলো।এসেই বললেন,
আশরাফ আহমেদঃ কি নিয়ে এতো হাসাহাসি হচ্ছে? আর আমার মায়ের মাথা ব্যাথা কমেছে?
আরুঃ হ্যা বাবা কমেছে এখন একদম ঠিক আছি আমি।
বলেই হেসে দিলো।ওদের কথার মাঝেই অনিম সিড়ি দিয়ে নামছে।তন্নির সেদিকে চোখ যেতেই চোখ আটকে গেলো।অনিম আজ নীল শার্ট,কালো পেন্ট,পায়ে কালো লোফার,হাতে কালো ঘড়ি,চুল গুলো জেল দিয়ে আটকানো।একদম হিরো দের মতে লাগছে আর সেদিকেই তন্নি তাকিয়ে আছে।অনিম টেবিলের কাছে আসতেই দেখে তন্নি ওর দিকে তাকিয়ে আছে তাই ও একটা কাশ দিলো আর সাথে সাথেই তন্নির হুস ফিরলো আর কাল রাতের কথা গুলো মনে আসলো তাই তাড়াতাড়ি ও চোখ নামিয়ে ফেললি।আর অনিমও মুখ টিপে হাসছে।অনিম এসে চেয়ারে বসে আরু কে জিজ্ঞেস করলো,
অনিমঃ আরু তোর শরীর ঠিক আছে এখন?
আরুঃ হুম ভাইয়া আমি একদম ঠিক আছি।
অনিমঃ ঠিক থাকলেই ভালো তারপরও তুই এি সপ্তাহে আমার সাথে একবার ডাক্তারের কাছে যাবি।
আরু ও মাথা নাড়লো।তখন আরুর বাবা বললো,
আশরাফ আহমেদঃ হুম অনিম তুই ওকে নিয়ে যাস আমি ব্যস্ত তা না হলে আমিই নিয়ে যেতাম।
অনিমঃ হুম বাবা সমস্যা নেই আমি নিয়ে যাবো ওকে।
আশরাফ আহমেদঃআজ তো তুই অফিস আসবি না?
অনিমঃ না বাবা আজ একটা ইম্পরট্যান্ট ক্লাস আছে

তারপর আর কেউ কোনো কথা বললো না সবাই চুপচাপ নাস্তা করতে লাগলো।নাস্তা শেষ আরু তন্নি আর অনিম বেড়িয়ে গেলো।রাস্তায় এসে আরুদের রিকশায় উঠিয়ে দিলো আর তন্নির দিকে একবার তাকালো।তন্নিও আড়চোখে তাকিয়ে ছিলো অনিম তাকাতেই চোখাচোখি হতে তন্নি চোখ নামিয়ে ফেললো।আর অনিমও হাসতে লাগলো।ওদের রিকশা চলে যেতেই অনিম বাইক নিয়ে ওর ভাির্সটি তে চলে গেলো।

কলেজের সামনে রিকশা থামতেই ওরা ভাড়া দিয়ে নেম গেলো।সারা রাস্তা ওরা চুপ ছিলো।কলেজে ঢুকে আরু একবার চারপাশে তাকালো তাকিয়ে ওরা বাদাম গাছের নিছে গিয়ে বসলো।তন্নি এবার মারিয়াকে কল করলো,
তন্নিঃ ওই চুন্নি কই তুই?আমারা সেই কখন থেকে কলেজে এসে বসে আছি।
মারুঃ ইয়ার তোরা কলেজে আসবি আমাকে আগে বললি না কেন
তন্নিঃ ফাজিল মাইয়া কালকে না বললাম আজ কলেজ যাবো।আর তুই বলছিস তোকে আগে জানালাম না।
মারুঃ সরি দোস্ত ভুলে গেছি।আমি ২০ মিনিটে মাঝে আসছি।
তন্নি কল কেটে দিয়ে আরুর সাথে টুকটাক কথা বলতে ওদের ক্লাসের কয়েকজন এসে ওদের সাথে কথা বলতে লাগলো এর মাঝেই মরু এসে পরলো।ও এসেই আরুকে বললো,
মরুঃ জানু কেমন আছিস
আরুঃ আমার কী খারাপ থাকার কথা ছিলো?
মরুঃ আরে আমি ওইভবে বলতে চাই নি।আচ্ছা বাদ দে চল ক্লাসে যাই।

ওরা সবাই মিলে ক্লাসের চলে গেলো।সবাই ঠিকঠাক মতোই ক্লাস করলো।টানা ৩ ঘন্টা ক্লাস করার পর আরু,তন্নি আর মারু ক্লাস থেকে বেরিয়ে কেন্টিনের উদ্দেশ্যে যেতে লাগলো।কেন্টিনে গিয়ে কফি অর্ডার পর ওদের টেবিলে একজন এসে বসলো।আর তাকে দেখেই ওদের মেজাজ গরম হয়ে গেলো।

চলবে….

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-০৪
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা

কেন্টিনে গিয়ে কফি অর্ডার করার পর ওদের টেবিলে একজন এসে বসলো।আর তাকে দেখেই ওদের মেজাজ গরম হয়ে গেলো।

সোহানঃ কী ব্যাপার আরু ডার্লিং কেমন আছো?
তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?শরীর খারাপ?

আরুঃ না ভাইয়া শরীর একদম ঠিক আছে আর আমিও ভালো আছি।(জোর করে হাসার চেষ্টা করে)

সোহানঃ এই ভাইয়া বলেই কথা বলার মুড নষ্ট করে দাও তুমি☹️

আরুঃ আপনি আমার সিনিয়র।আর সিনিয়রকে তো তুই করে বলা যায় না।

সোহানঃ তুই বলতে না পারো।তুমি করে তো বলতে পারো।

আরুঃ আসলে ভাইয়া আমি আমার কাছের মানুষ ছাড়া কাউকে তুমি করে বলি না আর অযথা আমার সাথে কেউ কথা বলে তাও সয্য করতে পারি না।

সোহানঃ আমি তোমার কাছের মানুষ না?

আরুঃ জ্বী না।এবার আপনি আসতে পারেন।আর আপনার যদি এখানে বসার ইচ্ছে থাকে তাহলে বসে থাকুন আমরা যাই।(বলেই ওরা টেবিল ছেড়ে উঠতে যাচ্ছিলো)

সোহানঃ আরে আরে তোমাদের উঠতে হবে না আমি চেলে যাচ্ছি।

বলেই সোহান টেবিল ছেড়ে উঠে চলে গেলো।আর আরুরাও হাফ ছেড়ে বাচলো।সোহান যেতেই মারু একটা গালি দিয়ে বললো,
মারুঃ এ এতো বেহায়া কেন?আরু এতো কথা বলে তারপরও এই ছেলের সেই আগ বাড়িয়ে কথা বলতে আসে।আমার তো মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে ওকে এক কিক মেরে উগান্ডা পাঠাইয়া দিয়।শালা***

তন্নিঃ তোর পায়ে এতো শক্তি🙀
ভাবা যায়?

মরুঃ হু কী মনে হয় তোর যদি সুযোগ থাকতো দেখতি আমি মেসির থেকে ভালো খেলা খেলে দেখাতে পারতাম।তখন সবাই আমার নাম সারাদিন জপ করতো।

তন্নিঃ হু সেই জন্য তো কিছুদিন আগে পারার ছেলেরা ফুটবল খেলার সময় সেই ফুটবল তেমার পায়ে লেগে তোমার পা ফুলে গিয়েছিল😅।

মারুঃ এমন হয় মাঝে মাঝে 😏

ওদের ঝগড়ার মাঝে কফি চলে আসলো।সবার মাঝে এখন নিরবতা চলছে কেউ কোনো কথা বলছে না।আজ ওদের ঝগড়ার মাঝে আরু একটা কথাও বললো না।আসলে প্রতিদিন আরু আর মারু মিলে যতো উদ্ভট কথা বলতে থাকে কিন্তু আজ কারো মন ভালো নেই বলে সবাই চুপচাপ।ওরা চুপচাপ কফি খেতে থাকুক এইখনে সোহানের পরিচয় দিয়ে নেই।
(সোহান আরুর ১ ইয়ার বড় সোহান এইবার Inter 2nd yr এ।আরুদের স্কুল ক্লাস ৬ থেকে HSC পর্যন্ত।সেই হিসেবে আজ ২ বছর যাবত সোহান আরুর পিছনে পরে আছে।সোহান না কী আরুকে ভালোবাসে।কিন্তু আরু বারবার এটা সেটা বলে সোহানকে ফিরিয়ে দেয়।কিন্তু সোহান আরুর পিছনে যেন আঠার মতো লেগে আছে)

কেন্টিন থেকে বেড়িয়ে ওরা আর একটা ক্লাস করে ছুটি হয়ে যায়।গেটের কাছে যেতে যেতে তন্নি বললো,

তন্নিঃ আরু আমি ভাবছি আজও আমি তোর সাথে….
তন্নিকে আর বলতে না দিয়ে আরু বললো,
আরুঃ দরকার নেই যাওয়ার আমি থাকতে পারবো একা।
তন্নিঃ কিন্তু..
আরুঃ কোনো কিন্তু না যা তোরা।
তন্নিঃ তোরা যা মানে তুই যাবি না?
আরুঃ হুম যাবো কিন্তু পায়ে হেটে।
তন্নিঃ তুই পাগল হয়ে গেছিস এতোটা রাস্তা তুই হেটে যাবি।
আরুঃ হুম যাবো।এবার তোরা যা।

তন্নি কিছু বলতে যাবে তার আগেই তন্নি মোবাইল বেজে উঠলো।তন্নির মা কল করেছে।কল করে বললো আজ একটু তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে ওর খালামনির বাসায় যাবে।তন্নি আরুকে বলতেই আরু বললো,
আরুঃ দেখলি আন্টি তাড়াতাড়ি যেতে বললো তুই যা আমাকে নিয়ে চিন্তা করিস না।আর মারু তো আছে আমার সাথে।

তন্নিঃ হুম মারু তো ১০ মিনিট থাকবে তারপর তো তুই একা।আচ্ছা তুই বাসায় গিয়ে সাথে সাথে আমাকে কল করে জানাবি।ঠিক আছে?

আরুঃ ওকে মেরি মা।সব করবো।এবার তুই যা তোর দেরি হয়ে যাচ্ছে।

তন্নি ওদের থেকে বিদায় নিয়ে একটা রিকশা ডেকে ও চলে গেলো।তন্নি যেতেই আরু আর মারু হাঁটা ধরলো বাসার উদ্দেশ্যে।(আসলে আরু আর তন্নির বাসা কাছাকাছি মাএ ৫/৬ মিনিটের পথ।কিন্তু মারু বাসা ওদের বাসা থেকে দূরে কিন্তু কলেজ থেকে মাএ ১০ মিনিট) ওরা হাটছে আর কথা বলছে।এক সময় মরুর বাসা এসে পরলো।মরু অনেক করে আরুকে বললো ওর বাসায় যেতে কিন্তু আরু রাজি হলো না।তাই মারু বাধ্য হয়ে আরুকে একা ছেড়ে দিলো আর বললো বাসায় গিয়েই যেনো ওকে একটা কল করে।আরু ঠিক আছে বলে ওর বাসায় উদ্দেশ্যে হাঁটা গেলো।কিছু দূর যেতেই একটা পার্ক পরলো।পার্কটা দেখে আরুর বুকটা ছেৎ করে উঠলো।কতো ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এই পার্কে বসে ওরা গল্প করেছিলো।কিন্তু আজ……
কী ভেবে যেনো আরু পার্কে ঢুকে গিয়ে একটা বেঞ্চে বসলো।পার্কের সাইড দিয়ে যাওয়ার সময় একজন দেখলো আরু পার্কে ঢুকছে তাই আরুকে দেখে সেই ব্যাক্তি পকেট থেকে মোবাইল বের করে কাকে যনো কল করলো এবং কিছু একটা বললো।তার ১০ মিনিট পর ওই ব্যাক্তিটি আসলো এবং সেই ব্যাক্তি ওরা সহ ২ জন এক সাথে মিলে পার্কে ঢুকলো এবং আরুকে খুজতে লাগলো আর এক সময় পেয়ে গেলো।আরু এক ধ্যানে পুকুরের পানির দিকে তাকিয়ে আছে। আরুকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ১ম ব্যাক্তিটির একটু খারাপ লাগলো সেও আরুর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিলো।একদিনে আরুর চেহারার কী হাল হয়েছে তাই দেখছে।হটাৎ সেই ব্যাক্তির কাঁধে কেউ হাত রাখলে তার হুস ফিরে আর একটা হাসি দিলো।
(কী ভাবছেন মানুষ গুলো কে তাই তো?তারা হলো,১ম ব্যাক্তি যে আরুকে পার্কে ঢুকতে দেখেছে সে হলো আয়ান।আর আয়ান যাকে কল করলো সে হলো রিয়া)

রিয়াঃ কী ভাবছো আয়ান?আমরা কী জন্য এখানে এসেছি?ছিঃ জায়গা টা কী নোংরা।(বলেই মুখ ছিটকালো)
আয়ানঃ আব আসলে….ওই দিকে দেখো..(আরুর দিকে ইশারা করে)

রিয়াঃ ওহহ জান আগে বলবে তো।চলো…
আয়ানঃ হুম।

ওরা আরু থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে দাড়ালো।বেশি দূরেও না বেশি কাছেও না।এবার ওরা বলতে শুরু করলো,

রিয়াঃ জান আজ কতো দিন পর আমরা এখনে আসলাম তাই না বলো?

আয়ানঃ হম ঠিক বলেছো এখানে আসলেই মনটা ভালো হয়ে যায়।
ওদের কথার মাঝেই আরুর ধ্যান ভাঙ্গে এবং পাশে তাকিয়ে দেখে রিয়া আয়ানের হাত জরিয়ে ধরে বসে আছে।তা দেখে আরুর চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো।ওরা আবার বলতে থাকলো,

রিয়াঃ এখানের পরিবেশ তো ভালো কিন্তু আশেপাশের মানুষ গুলোর জন্য মনে হচ্ছে এখনেও শান্তি মতো পরিবেশ উপভোগ করতে পারবো না।

আায়ানঃ কী করবে বলো কিছুতো করার নেই।সব জায়গা বাদ দিয়ে এখানে আসলাম এখানে এসেও দেখি….
আরু আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।(আসলে ভালোবাসার মানুষটার সামনে আমরা যতোই শক্ত থাকার চেষ্টা করি কিন্তু সেই দিন শেষে তার সামনে আসলে শক্ত আবরণ টা খলসে পরে।)আরু ওদের সামনে এসে আয়ানকে দেখে বললো,

আরুঃ কেমন আছো আয়ান?
আরুকে সামনে থেকে দেখে আয়ানের বুক টাও ছেৎ করে উঠলো।কিন্তু তাও নিজেকে সামলে নিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিয়া বললো,

রিয়াঃ কী বেয়াদব মেয়ে।আয়ান তোমার বড় আর তুমি ওকে নাম ধরে ডাকছো।বাবা কী শিক্ষা দেয় নি বড়দের কীভাবে সন্মান করতে হয়?
আরু কথা গুলো শুনে চোখ বন্ধ করে হজম করে গেলো কিছু বললো না।ও একি ভাবে আয়ানের দিকে প্রশ্নবোধক চাহুনি দিয়ে তাকিয়ে আছে।

আয়ানঃ ভালো আছি আর কেমন আছি তা তো দেখতেই পাচ্ছো আবার জিজ্ঞেস করছো কেন?(বলেই আয়ান রিয়াকে হালকা ভাবে এক হাত দিয়ে জরিয়ে ধরলো)

আরুঃ আমাকে জিজ্ঞেস করলে না আমি কেমন আছি?……ওহ অবশ্য তা জিজ্ঞেস করবে কী করতে তুমি তো খুব ভালো করেই জানো আমি কেমন আছি বা থাকতে পারি।তুমি তো এমনটাই চাও 😊

আায়ানঃ হুম বুঝতেই তো পারছো সব।…..আর এখন খুব খারাপ লাগছে তাই না?আমারও এমন খারাপ লেগেছিল ১ বছর আগে যখন তুমি প্রিন্সিপল স্যারের সামনে……………যাক সেব কথা বাদ দাও।এখন তুমি তোমার রাস্তায় আর আমি আমার আমার।ইজ ইট ক্লিয়ার?
আরু কিছু না বলে শুধু চুপ করে আছে আর চোখের পানি ফেলছে।আয়ান আর সেখানে দাড়ালো না রিয়া কে নিয়ে সেখান থেকে চলে আসলো কারণ আরুর সামনে আর একটু থাকলে নিজকে সামলাতে পারতো না।এই মেয়ের চোখের পানিই তো আয়ানের আসল দূর্ভলতা তাই তারাতাড়ি সেখান থেকে কেটে পরলো।ওরা যাওয়ার পর আরু সেখানে ধপ করে বসে কান্না করতে লাগলো।ওরা পার্ক থেকে বের হওয়ার সময় আয়ানের বেস্ট ফ্রেন্ড রাফসানের সাথে দেখা হলো।রাফসান আয়ানের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকতেই আয়ান রাফসানকে কিছু একটা ইশারা করেই মাথা নিচু করে বাইক নিয়ে চলে গেলো রিয়াকে একা ফেলে।রিয়া পিছন থেকে অনেক ডাকলো কিন্তু আয়ান শুনলো না।রিয়াও রেগে একটা উবার নিয়ে চলে গেলো।

(এবার আসি নায়কের পরিচয়,,,আয়ান রহমান।বয়স ২০।এইবার honours 2nd yr।৫.৮” লম্বা গায়ের রং ফর্সা।গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি কালো সিল্কি চুল গুলো কিছুটা কপাল ঢেকে থাকে।বয়স ২০ বছর হলেও দেখতে একদম হিরোদের মতো।বাবা আতিক রহমাম একজন সফল বিজনেসম্যান এবং মা আফিয়া রহমান একজন গৃহিণী।আয়নরা এক ভাই এক বোন।বোন আয়ানা বিয়ে হয়ে গেছে সে তার স্বামী সহ লন্ডন থাকে।
আয়ান আরু থেকে ৩ বছরের বড়।)(আয়ান আরুর রিলেশনশিপ প্রথম ২ বছর ছিলো তারপর ব্রকআপ হয় কিন্তু ৬ মাস পর আবার ওরা এক হয় তারপর ৬/৭ মাস মতো ছিলো এবং এই কাহিনী তে আবার ব্রেকআপ হলো।আর এই সব মিলিয়ে ওদের রিলেশনশিপ ৩ বছরের।এবার দেখা যাক আর ওদের মিল হয় কি না।
কী কারণে ওদের এতো ব্রেকআপ তা সামনে জানতে পারবেন।আর রিয়া হলো আয়ানের বাবার বন্ধুর মেয়ে।বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে।মেয়ে যা চায় বাবা তাই সামনে হাজির করে তেমনি রিয়া একবার আয়ানকে দেখে আয়ানের মোহে পরে যায়।আয়ানকে প্রপোজও করে কিন্তু আয়ান তা রিজেক্ট করে।পরে রিয়া খোজ নিয়ে জানতে পারে আরুর সাথে আয়ানের রিলেশন।কিন্তু তাও রিয়া আয়ানের পিছন ছাড়ে না।রিয়াও আয়ানের সাথে একি ক্লাসে পড়াশুনা করে।রিয়ার ভার্সিটি আলাদা ছিলো কিন্তু ট্রানস্পার নিয়ে আয়ানের ভার্সিটি চলে আসে।…আশা করি রিয়ার ব্যাপার সবাই বুঝেছেন)

ওরা যেতে রাফসান পার্কে ঢুকে দেখে আরু নিচে বসে কান্না করছে।এবার রাফসান বুঝলো আসল কাহিনী।রাফসান আস্তে আস্তে গিয়ে আরুর পাশে বসলো।পাশে কারো উপস্তিতি টের পেয়ে তাকিয়ে দেখল রাফসান।আরুর তাড়াতাড়ি নিজের চোখের পানি মুছার চেষ্টা করলো তা দেখে রাফসান বললো,

রাফসানঃ যার সামনে শক্ত থাকার কথা তার চোখের পানি ফেললে আর আমার সামনে চোখের পানি না ফেলার কথা উল্টো আমাকে দেখে মুছে ফেললে।এটা কী ঠিক?

আরুঃ আমি কাদছি না ভাইয়া আসলে বাতাসে চোখে কী যেনো ঢুকলো তাই

রাফসানঃ আমাকে বোকা বানাচ্ছো?

আরুঃ আপনাকে বোকা বানাবো কেনো ভাইয়া?কার জন্য চোখের পানি ফেলবো যে চায় আমি কাদি।কার জন্য কষ্ট পাবো যে আমাকে বেশি করে কষ্ট দেয়।আমি কাদবো না আর তা না হলে আমাকে ওরা আরো বেশি আঘাত করতে পারবে

রাফসানঃ এই তো এতোক্ষনে বুঝেছ।আমার আর কিছু বুঝানো লাগবে না।

কিছুক্ষন চুপ থাকার পর রাফসান বললো,
রাফসানঃ চলো বাসায় যওয়া যাক অনেকটা সময় হয়ে গেছে তোমার বাসায় হয়তো সবাই টেনশন করবে।

আরুঃ হুম চলুন

রাফসান আরুকে নিয়ে চলে আসে ওর বাইকে করে।আরু প্রথমে না করেছিলো কিন্তু রাফসান ভাইয়লর দোহায় দিয়ে নিয়ে আসে কারন এই সময় আরুকে একা পাঠানো ঠিক হবে না।ওরা বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here