হারাতে_চাই_না_তোমায় #পর্বঃ০২

0
1015

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্বঃ০২
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা

রাত প্রায় ১১ টা ছাদের কার্নিশে দাড়িয়ে আছে তন্নি।রাতের খাবার খেয়ে সবাই সবার রুমে ঘুমাচ্ছে।আর তন্নি দুপুর থেকে হওয়া ঘটনা গুলো ভাবতে লাগলো।দুপুরে আরুর মোবাইলে কল এসেছিলো রিয়ার।আর রিয়া হলো আয়ানের এখনকার প্রেমিকা।যদিও প্রেমিকা না কী অন্য কিছু তা শুধু আয়ান জানে।রিয়ার কল রিসিভ করার পর রিয়া বললো,
রিয়াঃ কী আরু ম্যাডাম কী খবর কী করো এখন?নিশ্চই কেদে কেটে বালিশ ভজাচ্ছো তাই না?কী করবে বলো তুমি ১ বছর আগে আয়ানের সাথে যা করেছো তার তুলনায় তো এটা কিছুই না তাইনা আয়ান বেবি।বলেই ফোনের ওপাশ থেকে আয়ান আর রিয়ার হাসির শব্দ আসছে।তন্নি এবার চুপ না থেকে বললো,
তন্নিঃ ইউ নো রিয়া আরুর চোখের পানি এতটাও সস্তা নয় যে ওই ফালতু একটা ছেলের জন্য ওর মূল্যবান চোখের পানি নষ্ট করবে।ফোন স্পিকারে দেওয়া ছিলো তাই আয়ান ও সব শুনলো।আয়ান রেগে দাঁতে দাঁত চপে বললো,
আয়ানঃ মাইন্ড ইউর লেঙ্গুয়েজ তন্নি ভুলে যেওনা আমি তোমার বয়সে বড়।
তন্নিঃ ওহ তাই নাকী ভইয়া আমি ভুলে গেছিলাম আপনি আমার বড়।আসলে কী বলুন তো আপনার আজকের ব্যবহারের পর আপনার সাথে ভাষা ঠিক করে কথা বলতে আমার রুচি তে বাঁধে
আয়ান কপট রাগ নিয়ে বললো,
আয়ানঃ আমি জানি এগুলা তেমার কথা না আরু তোমাকে পাশ থেকে এসব শিখিয়ে দিচ্ছে তাই না?ওর সাহস থকলে ওর এই সব কথা আমার সাথে বলতে বলো
তন্নিঃ আপনার কী ধরনা ও এখন কেদে চোখের পানি দিয়ে নদী সমুদ্র বানিয়ে ফেলবে।তা যদি ভেবে থাকেন তাকলে ভুল ও একদম ঠিক আছে আর ও এখন ঘুমাচ্ছে।আর আপনার মন যে এতো নিচু তা আগে জানতাম না।আর কোনো দিন আপনি বা আপনার সো কল্ড গ্রার্লফ্রেন্ড ওকে ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করবেন না।আর যদি তা হয় তাহলে আমি ওর হয়ে কোনে স্টেপ নিতে বাধ্য হবো।আশা করি আপনার মস্তিষ্কে কথা গুলো পৌঁছে গেছে।
বলেই খট করে তন্নি লাইটা কেটে দিলো।আয়ানের এবার প্রচুর রাগ হলো ওর মুখের ওপর কেউ আজ ওকে এতো গুলো কথা শুনালো।আর আরুকে ও কষ্ট দেওয়ার জন্য আজ এমন করলো আর মেয়ে না কী পরে পরে ঘুমাচ্ছে।এই মেয়ের তো এখন কান্না করা উচিত।আয়ান ভেবেছিলো আরু এখন কান্না করছে তাই রিয়াকে সাথে নিয়ে ও আরুর কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিবে।তা আর হলো কই।এই সব ভেবেই আয়ানের রাগ বারছে।তাই রিয়ার পাশ থেকে উঠে হন হন করে হেটে বাইক চালিয়ে চলে গেলো।আর রিয়া হা করে তাকিয়ে আছে।আর অন্য দিকে তন্নি লাইন কেটে কল লিস্ট থেকে রিয়ার নাম্বার ডিলিট করে দিলো।কিছুক্ষন চুপ করে দাড়িয়ে থাকার পর রুম থেকে আরুর চিৎকারের শব্দ আসছে আরু ঘুমের মাঝে কী যেন বিরবির করছিলো তারপর হটাৎ আয়ান বলে লাপ দিয়ে উঠে।তন্নি বেলকনিতে থেকে আরুর চিৎকার শুনে রুমে এসে দেখে আরু কেমন যেন করছে।আরু শুধু একটা কথাই বলছে,’আয়ান আমাকে ছেড়ে যেওনা আমি তোমাকে ছেড়া থাকতে পারবো না’।আরুর এই অবস্থা দেখে তন্নির বুক ফেটে যাচ্ছিলো সেই ছোট বেলা থেকে একে অপরের সুখে দুখে পাশে থেকেছে আর আজ আরুর এই অবস্তায় ও কিছু করতে পারছে না।যদি ওর হাতে কোনো সুযোগ থাকতো তাহলে আয়ান আরুর সামনে এনে দাড় করাতো।কিন্তু ওর কিছু করার নেই।আরুকে শান্ত করতে তন্নি বললো,
তন্নিঃ আরু আমার দিকে তাকা।তাকা আমর দিকে এখানে কেউ নেই।তুই এখন বাসায় তোর রুমে শুয়ে আছিস।আয়ান ভাইয়া এখানে নেই।ভালো করে দেখ।
আরু তন্নির কথা শুনে চারদিক তাকিয়ে দেখল তন্নি ঠিক বলেছে তারপর নিজেকে একটু সামলিয়ে তন্নির বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কাদতে লাগলো আর বললো,
আরুঃ তনু ও কেনো আমার সাথে এমন করলো আমি যদি ওর মনে না থাকি তাহলে ও আমাকে বলে দিতো আমি ওর লাইফে ফিরে যাওয়া তো দূর ওর চোখের সামনেও যেতাম না।ও প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমার সাথে এমন করলো।ওর মনে আমার জন্য একটুও জায়গায় ছিলে না কেনো দিন?
এগুলো বলছে আর আরু কান্না করছে।আরুর কান্না দেখে তন্নির চোখ দিয়ে দুই ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো।
প্রায় অনেক ক্ষন কান্না করার পর আরুকে এখন শান্ত করা দরকার তাই তন্নি বললো,
তন্নিঃ আরু উঠ অনেক হয়েছে।চোখে মুখে পানি দিয়ে আয়।তোকে এইভাবে দেখলে সবার সন্দেহ জাগবে।আর একটু পর অনিম ভাইয়া আর আংঙ্কেল চলে আসবে তোকে এই অবস্থায় দেখলে কী হবে ভাবতে পারছিস।
আরুও কিছুক্ষন পর নিজেকে শান্ত করলো।সন্ধ্যা ভর ওরা আরুর রুমেই ছিলো।রাতে খাবারের সময় সবার সাথে দেখা হলো।আরুর বাবা আরুকে দেখে বললো,
আশরাফ আহমেদঃ আমার আরু মার কী হয়েছে?এমন লাগছে কেন চেহারা?আরুর মার দিকে তাকিয়ে বললো,
তুমি আমার মেয়েকে না খইয়ে রেখেছো?
আরুর মা বললো,
তোমার মেয়েকে তুমি বুঝাও তোমার আদরের মেয়ে খায় কিছু। পাখির খাওয়ার মতো ওর খওয়া।আর তারউপর আজকে সারাদিন মাইগ্রেনের সমস্যা ছিলো তাই তো কলেজ থেকে তাড়াতাড়ি চলে আসলো।
আরুর এখন বললো,
অনিমঃ সেকী আরু তোর এই সমস্যা আবার হয়েছে।তোকে আমি কতোবার বলেছি ডাক্তারের কাছে যাই তখন তো বলতি এখন আর এই সমস্যা নেই তাহলে আজ কী হলো।অনেক টা রেগে বললো অনিম।
আরুঃ আসলে ভাইয়া আজকে হটাৎ অনেক দিন পর হলো।এতদিন ছিলো না।
এ নিয়ে আর কেউ কথা বাড়ালো না সবাই চুপচাপ খেতে লাগলো।অন্য দিন আরুর মা আরুকে এভাবে বলার পর ও পুরা বাসায় মাথায় তুলতো ন্যাক্যা কান্না করে কিন্তু আজ চুপ ছিলো তাই সবাই ভাবলো আরুর শরীরটা আসলেই খারাপ।আর এই দিকে তন্নি খাওয়ার ফাকে ফাকে অনিমকে দেখছে।আজ অনেক দিন পর অনিমের সাথে ওর দেখা হলো।খাওয়ার পর্ব শেষ করে সবাই সবার রুমে চলে গেলে।তন্নি আর আরু রুমে আশার পর তন্নি আরুকে একটা ঘুমের ঔষধ দিয়ে ওকে খেতে বললো।কারন তন্নি জানে আজ আরুর ঘুম হবে না আর যদিও ঘুমায় তাহলে হয়তো উল্টা পাল্টা স্বপ্ন দেখবে।তাই ভালে ঘুম জাতে হয় তাই এই ব্যাবস্তা
আর ভালো ঘুম হলে ওর মনটাও কালকে একটু ফ্রেশ হবে।আরু ঘুমিয়ে যাওয়ার পর তন্নির ঘুম আসছিলে না তাই ও একা একাই ছাদে চেলে গেলো।আজ আকাশে অর্ধ চাঁদ উঠেছে সেই চাদের দিকে তাকিয়ে এই কথা গুলো ভাবছিলো।তখনই পিছন থেকে গম্ভীর একটা কন্ঠ ভেসে আসলো।
অনিমঃ এতো রাতে তুই এখানে কী করছিস?বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতে এসেছিস?নাকী অন্য কিছু।
ভ্রু কুচকে অনিম জিজ্ঞাস করলো তন্নিকে।তন্নি কিছু বলছে না এই মানুষটার সামনে থাকলে ওর কথা মনে হয় বন্ধ হয়ে যায়।তারপরও তন্নি মাথা নিচু করে বললো,
তন্নিঃ আসলে ভাইয়া ঘুম আসছিলো না তাই এখানে এসেছিলাম।চলে যাচ্ছি আমি।
অনিমঃ ঠিক আছে।আরু কোথায়?
তন্নিঃ ও ঘুমাচ্ছে।
অনিমঃ ওহ।আচ্ছা যা তুইও গিয়ে ঘুমিয়ে পর বেশি রাত জাগা ভালো না বাচ্চা মানুষের।
তন্নির বলতে ইচ্ছা করছিলো,কোন দিক দিয়া আমারে বাচ্চা মনে হয়।ফাজিল বেটা।তোর চোখ বাচ্চা হু😒
আর ওর চেহারার দেখে অনিম মুখ টিপে হাসছে তন্নির এই চেহারাটা দেখে।বাহিরের ল্যাম্পফোস্টের আলো তন্নির মুখে পরে ওর উজ্জ্বল শ্যাম বর্নের চেহারাটা আরো বেশি মায়াবী লাগছিলো।আর তা দেখছিলো অনিম।যদিও অনিম উল্টো দিকে ফিরে ছিলো বলে ওর চেহারা দেখা যাচ্ছে না।তন্নি আর কোনো কথা না বলে নিচে যেতে থাকলো।আর তখন তন্নিকে আর একটু জালানোর জন্য অনিম পকেট ফোন বের করে বলতে থাকলো
অনিমঃ আরে জান বলো সরি এতোক্ষন অপেক্ষা করানের জন্য।……..আরে না না তেমন সমস্যা না এমনি।
তন্নি আর শুনতে ইচ্ছা করলো না দুফোটা পানি গড়িয়ে পরলো।আর দৌড়িয়ে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে কিছুক্ষন কান্না করার পর রুমপ এসে আরুর পাশে শুয়ে পরলো।আস্তে আস্তে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।আর ও ঘুমিয়ে যাওয়ার পর অনিম আরুর রুমে এসে আরুর পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কপালে একটা চুমু খেয়ে উঠে আসলো।এবার চোখ গেলো ওর শ্যামবতীর দিকে চোখের কোণে পানি জমে আছে।অনিম মুচকি হেসে ওর হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে চলে আসলো।যদিও তন্নির কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দিতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু ও কোনো হালাল সম্পর্কে না যাওয়ার আগে ওর প্রেয়সীকে স্পর্শ করবে না।তারপর ওর রুমে এসে ও ঘুমিয়ে পরলো।
সকালে…

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here