#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-১৩,১৪
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা
১৩
মাঝে একদিন আরু কলেজে যায় নি।আয়ানের এমন ব্যবহার ও নিতে পারে নি তাই নিজেকে একটু সামলিয়ে নিতে একদিন একাকিত্বকে সঙ্গী বানালো।আরুর মা অবশ্য এতে অনেক প্রশ্ন করেছিলো কেনো কলেজ যায়নি,মন খারাপ কেনো? কিন্তু আরুর বিভিন্ন বাহানায়
কাটিয়ে নিতে পেরেছে।আর মার যাতে সন্দেহ না হয় তাই একটা বই হাতে নিয়ে বসে।আরুর মা’ও তেমন কিছু বলে নি।আর এমনিতেও আরুর এইস-এস-সি পরীক্ষা সামনে আর কিছুদিন বাকি
এদিকে আয়ান আজো সবার চোখ এড়িয়ে এসেছিলো আরুকে এক নজর দেখবে বলে।কিন্তু ফলাফল শূন্য।কালকে আরুকে এভাবে কথাগুলো শুনানোর পর নিজের ভিতরে একটা অপরাধ বোধ কাজ করছিলো।আবার পরক্ষনে আরুর ১ বছর আগের করা ব্যবহার,আর ওই দুই দিনের লোকটার কথায় আবারও আরুর প্রতি ঘৃণা এসেছিলো।কিন্তু তাও সব সাইডে ফেলে আরুকে এক নজর দেখতে এসেছে।এসে দেখে মারিয়া আর তন্নি কিন্তু আরুকে পায় না।আশেপাশে তাকালো কিন্তু না।পরে ভাবলো,’হয়তো কালকের আমার ব্যবহার মেনে নিতে পারে নি তাই হয়তো মন খারাপ করে বসায় বসে আছে’।
আয়ান চলে আসলো ওইদিক থেকে।কিন্তু কেউ একজন যে ওদের ওপর সর্বক্ষন ফলো করছে তা সবার ধারনার বাহিরে।আয়ান চলে যাওয়ার পর আয়ানকে ফলো করা লোকটি এক ব্যাক্তিকে কল করলো।কল রিসিভ হওয়ার পর এপাশের লোকটি বললো,
সালামঃ বস আয়ান আজ আবারও আরুর কলেজের সামনে এসে লুকিয়ে ছিলো।(ফলো করা লোকটির নাম)
ওপাশঃ আরু আজ কলেজে এসেছিলো?
সালামঃ না বস।আরু আসে নি তবে ওর বন্ধুরা এসেছিলো।
ওপাশঃ আরুর বন্ধুদের সাথে কথা বলেছিলো?
সালামঃ না বস।
ওপাশের লোকটি আর কোনো কথা না বলে খট করে লাইনটা কেটে দিলো।সালামের কথা শুনার পর ফোনের ওপাশে থাকা ব্যাক্তিটি দেওয়ালে জোরে একটা পাঞ্চ মারলো এবং রেগে বলতে শুরু করলো,
লোকটিঃ এতো কিছু করার পরও কেনো এই আরু আর আয়ানকে আলাদা করতে পারছি না।কেনো কেনো??(আরেকটা পাঞ্চ মেরে)আরুকে যে আনার পেতেই হবে।আমি যদি আরুকে না পাই তাহলে সব ধংস করে দেবো।আরুর কাছ থেকে আয়ানকে আলদা না করলে………আয়ানকে পাবে না।না না এটা আমি হতে দিবো না।আরুকে আমার চাই।যেভাবেই হোক।না এভাবে হবে না অন্য গুটি সাজাতে হবে।কী করা য়ায়??
পায়চারি করতে করতে ভাবছেঅনেক্ষন ভাবার পর কিছু একটা মাথায় আসতেই একটা সয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
লেকটিঃ এবার আমার পাতানো জালে তোমাদের পরতে হবে আয়ান বাবু এবং আরু ডার্লিং।আমিও দেখি কী করে তোমাদের এতো ভালোবাসা থাকে।সামনে তোমাদের সাথে যা ঘটবে তার জন্য বি রেডি আয়ান এবং আরু।হা হা হা।
বলেই আবারও হাসতে লাগলো।
সারাদিন এভাবেই চলে গেলো।সারাদিন আয়ানের মন ভালো ছিলো না।আয়ানের মনে কোথাও একটা অপরাধ বোধ কাজ করছে।আরুকে একবার দেখতে অনেক ইচ্ছা করছে।একবার ভাবলো আরুর বাসার সামনে যাবে।আবার ভাবলো কেু যদি দেখে ফেলে।এমন দোটানার মাঝে একটা সময় ঠিক করলো ও যাবে।যেই ভাবা সেই কাজ।চলে গেলো আরুর বাসার সামনে।গিয়ে আরুর বেলকনির দিকে তাকিয়ে আছে।আয়ানের মন বলছে আরু একবার বেলকনিতে আসবে।প্রায় অনেকক্ষন পর আয়ানের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আরু বেলকনিতে আসলো।আরুকে দেখে আয়ানের বুকের ব পাশে চিন চিন ব্যাথা হলো।ল্যাম্পপোস্টের আলোতে স্পষ্ট বুঝা গেলো আরু কাদছে।চোখের পানি গুলো চিক চিক করছে।আয়ানের অনেক খারাপ লাগছে তাই আর দাঁড়িয়ে না থেকে চলে গেলো।আয়ান বাইক আরুর বাসার একটু দূরে রেখেছিলো।লুকিয়ে বাইকের কাছে এসে বাইক স্টার্ট দিয়ে গেলো।বাইকের আওয়াজ শুনে আরু ওইদিকে তাকালো।ওর মন বলছে আয়ান এসেছে তাই চারদিকে ভালো করে তাকালো।কিন্তু না কেউ নেই।পরে ভাবলো আয়ান কোনো আসবে।ওর তো এখানে আসার কথা না।এসব ভেবে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে ঘুমাতে চলে গেলো।আয়ানও বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে গেলো।
————————-
৭দিন পর,
এই ৭ দিনে তেমন কোনো কিছু পরিবর্তন হয় নি।ওই লোকটিও আরু আয়ানের কোনো ক্ষতি করে নি।আরুও আর আয়ানের কাছে যায়নি।আরু একটু সময় নিয়েছিলো।আয়ানের ওর উপর রাগটা একটু কমার পর আবার আরু আয়ানের কাছে যাবে বলে ঠিক করে।এই ৭দিনে আয়ান ২/১ বার লুকিয়ে এসে আরুকে দেখে গেছে।রাফসান আর মারিয়াও ভালোই আছে।এর মাঝে আয়ানের ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়।আয়ান এখন পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত।আরু ভেবেছিলো দু-এক দিনের ভিতরে আয়ানের কাছে যাবে কিন্তু যখন মারিয়ার থেকে শুনলো রাফসানদের পরীক্ষা শুরু তাই আয়ানের সাথে দেখা করার ইচ্ছা দমিয়ে রাখলো।কাল থেকে আয়ানের পরীক্ষা আরু ভাবছে এর আগে প্রতিবার আরু এবং আয়ান যারই পরীক্ষা হোক রাতে ওরা একজন আরেকজনকে উইশ করে।তাই আরু সব ভুলে আয়ানকে কল করলো অনেক আশা নিয়ে।কিন্তু আরুর সব ভাবনা,ইচ্ছা জলে ফেলে দিয়ে আরু বুঝলো আরুর নাম্বার আয়ান ব্লক করে রেখেছে।এটা দেখে আরুর চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো।মন খারাপ নিয়ে শুতে চলে গেলো।
আজ থেকে আয়ানের পরীক্ষা শুরু।আয়ান ভেবেছিলো আরু একবার ওকে কল করে উইশ করবে কিন্তু না আরু কোনো কল করেনি।পরে নিজের মনে ভেবে বললো,’ও কি করে আমাকে কল করবে ওর নাম্বারই তো ব্লক করে রেখেছি’।
এভাবেই দুজন দুই জায়গায় একে অন্যের অপেক্ষায় আর অভিমান নিয়ে পরে আছে।
দেখতে দেখতে আয়ানের সব গুলো পরীক্ষা শেষ।আয়ান এতো দিন আরুকে একবারো দেখতে পারে নি।পড়া নিয়ে খুব বিজি ছিলো।আজ পরীক্ষা শেষ তাই ভাবলে কাল একবার আরুকে দেখে আসবে।
এদিকে আয়ানের পরীক্ষার মাঝেই আরু শুনলো ওর টেস্ট পরীক্ষা শুরু কয়েকদিন পর।ভেবেছিলো আয়ানের পরীক্ষা শেষ হলে সবটা ঠিক করে নিবে কিন্তু এখন নিজের পড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে।এমনিতেই অনেক গাফিলতি হয়েছে পড়া নিয়ে আর করতে চায় না।বাবা মা’ও আশায় আছে ভালো রেজাল্টের।তাই এখন আরুর সমস্ত ফোকাস পড়াশোনায়।
পরদিন আয়ান সকালে বের হয়ে গেলো আরুকে দেখবে বলে।আরুর কলেজ ছুটির সময় আবারো লুকিয়ে রইলো কিন্তু আরুদের কোনো পাওা নেই।শুধু আরু কেনো ওদের ক্লাসের কারোরই না।কিছুক্ষন পর খোঁজ নিয়ে জানতে পারে দু দিন পর ওদের পরীক্ষা তাই এই দু-দিন বাসায় পরার সুযোগ দিলো।আয়ানও দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেলো
এদিকে অনিম এসেছিলো তন্নিদের বসার এখানে একটা কাজে।কাজ সেরে যখন চলে যাবে তখন তন্নিদের বাসার দিকে।মনে মনে ভাবে,কতো দিন দেখি না ওকে।আবার দুদিন পর পরীক্ষা একটু কথা বলতে পারলে ভালো লাগতো।এসব ভেবেই আনমনে হসলো।হটাৎ তন্নির রুমের বেলকনিতে নজর যায়।এতোক্ষন হাসি মাখা মুখটা হটাৎ বদলে গেলো।পুরো মুখ লাল হয়ে আছে রাগে।দেখলো তন্নি ফোনে কারো সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।আবার যখন দেখলো গায়ে ওড়নাটা ঠিক মতো দেওয়া নেই।একেতো হেসে হেসে কারো সাথে কথা বলা তারউপর এভাবে বেলকনিতে আসা।যদি অনিমের জায়গায় অন্য কেউ থাকতো তখন এভাবে ওকে দেখতো।এটা ভেবেই অনিমের মাথায় রক্ত উঠে গেলো।এই মূহুর্তে তন্নিকে পেলে জেন্ত মাটিতে পুতে ফেলতো।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো তেমন কেউ নেই।তাই একটু শান্ত হলো কিন্তু পুরোপুরি না।হটাৎ মাথায় আসলো কার সাথে এমন হেসে হেসে কথা বলছে।কোনো ছেলে না কী?ছেলের কথা আসতেই রাগটা আবার বেরে গেলো।পকেটে থেকে ফোন বের করে তন্নিকে কল করলো।আর অনিমও একটু আড়ালো দাঁড়ালো।তন্নি কথার মাঝে দেখলো একটা আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে।তন্নি চিনতে পারলো না নাম্বারটা কার।(আসলে হয়েছি কী,তন্নির কাছে অনিমের যেই নাম্বার তা দিয়ে অনিম কল দেয়নি।দিয়েছে অন্য একটা দিয়ে।যা অনিম যানতো না ওর এি নাম্বার তন্নির কাছে নেই।)অপরিচিত নাম্বার দেখে তন্নি রিসিভ করলো না।আবারো হেসে কথা বলছে।ফোন রিসিভ হচ্ছে না দেখে অনিমের রাগ দরদর করে বাড়ছে।তাই আবার কল করলো।তন্নি এবারো দেখলো অপরিচিত নাম্বার।তাই আগতো কল উপেক্ষা করে কতা বলায় মন দিলো।কিন্তু এদিকে একজন যে তন্নিকে কি করতে ইচ্ছা করছে নিজেও জানে না।অনিম আবার কল করলো।এবারেও তন্নি ধরলো না।এরকম প্রায় ৪/৫ হলো।অনিম আর কল করলো না।নিচে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো তন্নির কাহিনী।তন্নির কথা শেষ হলো প্রায় আরো ৭/৮ মিনিট পর।এবার অনিম আবার কল করলো।তন্নি ভাবলো হয়তো পরিচিত কেউ তা না হলে এতো বার কল করবে কেন।তন্নি এবার ফোন রিসিভ করলো।রিসিভ করে সালাম দিতেই ওপাশ থেকে কেউ বাজখাঁই গলায় বললো,
অনিমঃ এতোক্ষন কী নিজের জামাইয়ের সাথে কতা বলছিলি যে এতো কল দিলাম রিসিভ করিস নি?
তন্নি ফোনটা সামনে এনে দেখলো নাম্বার অপরিচিত কিন্তু কন্ঠ পরিচিত।তন্নিকে চুপ থাকতে দেখে অনিম আবার বললো,
অনিমঃ কথা বলছিস না কেনো?এতোক্ষন তো হেসে কথা বলেছিস এতো কথা যে থামতেই চাচ্চিলি না।এখন কী মুখের সব বুলি শেষ?
তন্নি এবার চিনতে পারলে কন্ঠের মালিক কে হতে পারে।আর চিনেই একটা ঢোক গিললো।কী বলবে ভেবেই গলা শুকিয়ে আসছে তবুুও সাহস সঞ্চার করে বললো,
তন্নিঃ ভাইয়া আপনি?আসলে নাম্বারটা সেভ করা ছিলো না তাই চিনতে পারি নি।সরি।
অনিমঃ সরি মাই ফুট।কার সাথে কথা বলছিলি?কী মনে করেছিস আমি কিছু বুঝি না।সবটা বুঝেছি আমি।তোরা মেয়েরা মনে হয় এমনি।ছেলেদের মন নিয়ে খেলতে খুব ভালোবাসিস।
তন্নি অনিমের কথা শুনে কেদে দিলো।প্রিয় মানুষটার মুখ থেকে এমন কথা কেউ সয্য করতে পারে নি।তন্নিও পারে নি।আর এদিকে অনিম রাগের মাথায় কী বলছে নিজেও জানে না।তারউপর তন্নির চোখের পানি দেখে আরো রেগে গেলো।তন্নি এবার কান্না কন্ঠে বললো,
তন্নিঃ কী বলছেন আপনি এসব?আমি কিছু বুঝতে পারছি না।আর আমি কার মন নিয়ে খেলেছি?
অনিমঃ কিছু বুঝিস না তাইতো?কিন্তু তুই না বুজলেও আমি সব বুঝেছি।তোরা মেয়েরা কেমন।এমনি দেখলে তো মনে হয় ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানিস না।আরেকটা কথ নিজের শরীর মানুষকে দেখানোর এতো ইচ্ছা থাকলে যেখানে গেলে শরীর দেখলে মানুষ খুশি হয় সেখানে গিয়ে দেখা।বুঝেছিস তো কোন জায়গার কথা বলেছি?
এটা শুনেই তন্নির কান দিয়ে গরম ধোয়া বের হলো।কী বলছে অনিম এসব?তাড়াতাড়ি নিজের দিকে তাকালো আর তাকিয়েই দেখলো শরীরে ওড়না ঠিক জায়গায় নেই।তাড়াতাড়ি ওড়না ঠিক করে নিলো।অনিম এবার বললো,
অনিমঃ দেখানো শেষ?এতো তাড়াতাড়ি ঢেকে ফেললি কেনো?তোদের মতে মেয়েদের চিনা হয়ে গেছে আমার ছিঃ ছিঃ
বলেই কল কেটে দিলো।সাইড থেকে বেড়িয়ে তন্নির সামনে দিয়ে হেঁটে চলে আসলো।একবারো উপরে তাকালো না।তন্নি কল কাটার পর চোখের পানি ফেলতে লাগলো আর তখন নিচে তাকিয়ে দেখলো অনিম চলে যাচ্ছে।এবার তন্নি বুঝলো কীভাবে অনিম ওকে দেখলো আর এই কথা গুলো বললো।অনিমের কথা গুলো মনে আসতেই তন্নি দৌড়ে রুমে ঢুকে গেলো।অনিম কীভাবে পারলো ওকে এমন নোংরা কথা গুলো বলতে একবারো মুখল বাদলো না।তন্নির কান্না আজ বাধ মানতে চাইছে না।তন্নি কাদছে আর মনে মনে বলছে,’যদিও জানি এভাবে আমার বেলকনিতে যাওয়া ঠিক হয়নি তাই বলে এভাবে বলবে?ভালো ভাবেও তো বলা যেতো।আর আমি কার মন নিয়ে খেলেছি।’কিছুক্ষন পর আবার ভাবলো,’ভালোবাসি বলেই সব সময় আপনার এতো অবহেলো অপমান সয্য করি।তাহলে কী আমার ভালোবাসাটা অন্যায়?……না আমি আর আপনাকে নিয়ে ভাববো না বর না আপনার অবহেলা অপমান সয্য করবো’।
কিছু একটা ভেবে ফোনটা হাতে নিয়ে একটা কাজ সেড়ে ফোনটা বন্ধ করে রাখলো।আবারো কান্নায় ভেঙে পরলো।
এদিকে অনিম রেগে হেঁটে চলেছে।রাগটা কিছুতেই কমাতে পারছে না।বাসার কাছাকাছি আসতেই ফোনটা বেজে উঠলো।হাতে নিয়ে দেখে তন্নির মেসেজ।তা দেখে মেজাজ আরো গরম হয়ে গেলো।ফোনটা পকেটে রেখে দিলো কিন্তু কিছু একটা ভেবে ফোনটা বের করে মেসেজটা দেখে অবাক হয়ে গেলো।আর রাগ সাথে সাথে পানি হয়ে গেলো।নিজেই নিজেকে ইচ্ছা মতো গালাগাল দিচ্ছে।কি করে পারলাম এমন একটা কাজ করতে।কী করে এমন নোংরা কথা গুলো আমি আমার প্রেয়সীকে বলতে পারলাম।আমার এসব কথা মনে হয় মেয়েটা সয্য করতে পারে নি।এখন কীভাবে ক্ষমা চাইবো আমিনওর কাছে আর ও আমাকে কী করে ক্ষমা করবে।
এসব ভেবেই তন্নিকে কল করলো কিন্তু ফোন বন্ধ।ফোন বন্ধ পেয়ে অনিমের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিল।সাথে সাথে আরো অনেকবার কল করলো কিন্তু একবারও তন্নি ধরল না।ধরবে কি করে ফোন তো বন্ধ।অনিম এবার রাগে দুঃখে পাশের দেয়ালে সাজরে কয়েকটা পাঞ্চ মারলো।একসময় হাতটা পুরো থেতলে গেল।তারপরও রাগ কমছে না। প্রায় অনেক সময় পর বাসায় ফিরে আসলো।বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নিল আর ভাবতে থাকলো কি করে তন্নীর কাছে ক্ষমা চাওয়া যায়।আজ ঘুম চোখে ধরা দেবে না।কালকে কিছু একটা করতেই হবে এবং কি করতে হবে তা ভাবতে লাগলো সারারাত এভাবে পার হয়ে গেল অনিমের
পরদিন…
চলবে….
#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-১৪
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা
পরদিন তাড়াহুড়া করে অনিম রেডি হয়ে নিছে নামলো।আজ থেকে আরুদের পরীক্ষা শুরু।কাল তন্নির সাথে যেই ব্যবহার করছে তার পর আজ কীভাবে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াবে তাই ভাবছে।নিজের অপরাধ বোধে কাল ঠিক মতো ঘুমাতে পারে নি।কিন্তু যে করেই হোক তার প্রেয়সীর কাছে ক্ষমা চাইতেই হবে।তাই ভাবলো আজ আরুর সাথে ওর কলেজে এগিয়ে দিতে আর সেই বাহানায় তন্নির সাথে দেখা করে যেভাবেই হোক কথা বলা।আসলে হয়েছে কী,তন্নি কাল কথা বলছিলো ওর একটা কাজিনের সাথে যদিও সে মেয়ে।অনেক দিন পর কথা হয়েছে তাই এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিল।তখনই নেটওয়ার্কে সমস্যা করছিলো তাই রুমে যেভাবে ছিলো ওইভাবেই বেলকনিতে চলে আসে।কিন্তু ও জানতো ওর জন্য এমন কিছু অপেক্ষা করবে।তো অনিম চলে যাওয়ার পর যখন বুঝলো কী কারণে অনিম এমন কথা বলেছে এবং শুধু শুধু অকারণে এতো গুলো কথা শুনার মূল কারণ মানে,যার সাথে কথা বলছিলো তার নাম্বার,নাম,ঠিকানা সব দিয়ে দিয়েছিলো মেসেজে।তারপরই ফোন বন্ধ করে রাখে।অনিম সারা রাত তন্নিকে কল করেছিলো কিন্তু প্রতিবারই কথা শুনেছিল আপনার নাম কাঙ্খিত নাম্বারে এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।আজ সকালেও অনেক বার দিয়েছিলো।কিন্তু ফলাফল শূন্য।অনিমকে নিচে সোফায় বসে কিছু একটা ভাবতে দেখে আরুর মা এগিয়ে এসে দেখে চোখগুলো কেমন লাল হয়ে আছে।কিছুটা চিন্তিত কন্ঠে বলে,
আদিরা আহমেদঃ বাবু কী হয়েছে তোর?তোর চোখগুলো এমন লাল কেন?
মা’য়ের কথায় অনিম চমকে উঠে।তারপর নিজেকে সামলিয়ে বলে,
অনিমঃ না মা তেমন কিছু না।রাতে ঘুম হয় নি তাই হয়তো চোখ গুলো এমন লাল হয়ে আছে।
আদিরা আহমেদঃ তো রাতে ঘুম হয়নি এখন ঘুমা।আর অফিসে যাওয়া লাগবে না আমি তোর বাবাকে বলে দিবো।আর ভার্সিটিতে কোনো জরুরী দরকার না থাকলে যাওয়া লাগবে না।
অনিমঃ না মা কোথাও যাবো না আজ।ভাবছি আরুর সাথে একবার ওর কলেজে যাবো।আজ ওর পরীক্ষা।
আদিরা আহমেদঃ সে না হয় বুঝলাম কিন্তু যার পরীক্ষায় কোথায়।তার তো এখন পর্যন্ত কোনো পাত্তাই পেলাম না।
অনিমঃ কেনো আরু রুমে নেই?
আদিরা আহমেদঃ আরে তা আছে কিন্তু এখন পর্যন্ত নিচেই নামলো না।
বলতেই বলতেই দেখে আরু নিচে নেমে আসছে।এসেই চিল্লিয়ে ওর মাকে বলছে,
আরুঃ মা ব্রেকফাস্ট দাও তাড়াতাড়ি।দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আদিরা আহমেদঃ ওই এলেন এতক্ষণ খবর ছিল না এখন এসে তাড়াহুড়ো করছে।বসো দিচ্ছি।অনিম তুইও বসে পর আরুর সাথে যাবিতো।
আরুঃ মা ভাইয়া আমার সাথে কোথায় যাবে?(ভ্রুকুচকে)
অনিমঃ ভাবছি তোকে এগিয়ে দিতে যাবো।কেনো তোর কী কোনো সমস্যা?(সন্দিহান চোখে)
আরুঃ আরে না ভাইয়া সমস্যার কি আছে।আর গেলে ভালোও হবে।মনে হয় আজ একা যেতে হবে আমায়?
আদিরা আহমেদঃ কেনো?একা যাবি কেন তুমি কোথায়?
আরুঃ আর বলো না কাল রাত থেকে ওই ফকিন্নিকে কে কল করছি কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে বারবার।
আদিরা আহমেদঃ সে কী কিছু হলো না কী আবার?
আরুঃ সেটা তো আমিও বুঝতে পারছি না মা।
আদিরা আহমেদঃ তুই একবার ওর মা’র ফোনে কল করে দেখ।ভাবির নাম্বার আছে না তোর কাছে?
আদিরা আহমেদঃ হুম ঠিক বলছো।এটা তো ভেবে দেখি নি।আমি এক্ষনি কল করছি।
বলেই তন্নির মা’র ফোনে কল করলো।রিং বাজছে।এদিকে অনিম এতোক্ষন মা’র আর আরুর কথা শুনছিল।কয়েকবারে রিং বাজতেই তন্নির মা ফোন রিসিভ করলো।আরু সালাম দিয়ে বললো,
আরুঃ আন্টি তন্নি কোথায়?কাল থেকে ওকে ফোনে পাচ্ছি না।
তন্নির মাঃ তনু তো আমার পাশেই আছে।আর ওর ফোন কোথায়?…দাড়া ওকে জিজ্ঞেস করছি।…….এই তনু আরু নাকি কাল থেকে তোকে কল করছে ফোন কোথায় তোর?
তন্নিঃ আব…মা ওই পরীক্ষা বলে কাল থেকে ফোন বন্ধ করে রেখেছি।কই দাও আমি আরুর সাথে কথা বলছি।
তন্নি ওর মা’র থেকে ফোন নিলো।তন্নি এতোক্ষন ওর মার সাথে যা বলেছে সবটাই শুনেছে আরু। এদিকে অনিম অধির আগ্রহে বসে আছে তন্নির কথা শুনার জন্য।আরুর ফোন স্পিকারে দিয়ে ও খাওয়া শুরু করলো।তাই ওদের কথা শুনতে বেশি বেগ পেতে হচ্ছে না।তন্নি এবার বললো,
তন্নিঃ হুম আরু বল।
আরুঃ ওই ফকিন্নি ফোন কই তোর?
তন্নিঃ বেচে দিয়েছি।হটাৎ আমার ফোনের পিছনে পরলি কেন?
আরুঃ আরে বলিস কি।এটাতো সুখবর।তা বিক্রি করে কতো পেলি?যাই পাস অর্ধেকটা আমাকে দিয়ে দিস।
তন্নিঃ এতো শখ কেন?কী কারনে কল করেছিস সেটা বল।
আরুঃ কী কারণ মানে?কখন কলেজ যাবি।প্রিপারেশন কেমন তাও জানলাম না।
তন্নিঃ প্রিপারেশন ভালো।আর চলে আয় এখনি বের হবো।
আরুঃ আচ্ছা তুই নিচে নাম আমি আর ভাইয়া আসছি
কথাটা শুনেই তন্নির মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে উঠলে।এমনিই কাল থেকে মন,মেজাজ খারাপ।আর যার জন্য খারাপ তাকেই নাকি এখন দেখতে হবে।আর অনিম ভাবছে এখন বোমটা কী ভাবে পাটবে।কিন্তু অনিমকে অবাক করে দিয়ে তন্নি ঠান্ডা কন্ঠে বললো,
তন্নিঃ শোন না আরু তোকে আমি এটা বলতে যাচ্ছিলাম।বাবাও আজ আমার সাথে যাবে বলেছে(ডাহা মিছা কথা😑)তাই বলছি কি তুই না হয় অনিম ভাইয়ার(দাতেদাত চেপে)সাথে চলে যায় আর আমি বাবার সাথে কলেজে গিয়ে তো দেখা হবেই।
আরুঃ তাহলে চল সবাই একসাথে যাই।
তন্নিঃ আরে তা কেমন দেখায়।যা বল্লাম তাই কর।বায়
আরুকে বর কিছু বলতে না দিয়ে কল কেটে দিলো তন্নি।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো মা শুনেছে কি না।যখন দেখলে শুনে নি তখন হাফ ছেড়ে বাচলো।তারপর ব্রেকফাস্ট করে বেড়িয়ে পরলো।তন্নি জানে অনিম কালকের জন্য হয়তো ওকে সরি বলতে আসবে তাই এই ব্যবস্থা করে আটকিয়ে দিলো।ও অনিমের সাথে দেখা করতে চায় না।কালকের কথা গুলো অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছে।এদিকে অনিম জানতো এমন কিছু একটা হবে।এখন আর আরুর সাথে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই কিন্তু কথা যখন দিয়েছে এখনতো যেতেই হবে।ওরাও ব্রেকফাস্ট করে বেড়িয়ে পরলো কলেজের উদ্দেশ্যে।
এদিকে আরুও একবুক অভিমান নিয়ে চলেছে।ও ভেবেছিলো আয়ান ওর পরীক্ষার আগে এক বার হলেও কল করবে কিন্তু একবারো করলো নাহ।এই মন খারাপ নিয়ে আরু পরীক্ষা দিতে গেলো।
অনিম আরুকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে ভেবেছিলো একবার হলেও তন্নিকে দেখবে কিন্তু দেখা পেলো না।তাই মন খারাপ নিয়ে চলে আসলো।
আয়ান আজও এসেছে আরুর পরীক্ষা কেমন হয়েছে তা জানতে যদিও কথা বলতে পারবে না কিন্তু বরুর মুখের হাব-ভাব দেখলে হয়তো বুঝতে পারবে আর এমনিতেও আরুকে অনেক দিন দেখেনি তাই বজ এসেছে।আরুরা পরীক্ষা শেষ হয়ে কলেজ থেকে বের হওয়ার পর আয়ান আরুকে দেখলো।আজ এতো দিন পর আরুকে দেখে চোখর তৃষ্ণা মিটাচ্ছে।কিন্তু পরীক্ষা কেমন হয়েছে তা বুঝতে পেরেছে না।আরুা চলে যাওয়ার পর আয়ানও চলে আসলো আর ভাবতে থকলো।পরক্ষনেই মাথায় আসলো রাফসানের কথা।
এভাবেই দেখতে দেখতে আরুর সব গুলো পরীক্ষা শেষ। এই কয়দিন আয়ান আরুর পরীক্ষার সব খবর জেনেছে রাফসানের থেকে।নিজেও কয়েকবার দেখে এসেছে কি লুকিয়ে।
অপরদিকে অনিম হাজার চেষ্টা করেও তন্নির সাথে কথা বলতে পারে নি।অনেক বার ফোনে ট্রাই করেছে কিন্তু প্রতিবারই ফোন বন্ধ।আর অনিমও ওতো একটা জোর দেয় নি কারণ ও জানতো পরীক্ষা চলছে। তাই অনিম আজ একটা মেসেজ দিয়ে রেখেছিলো যদি কখনো ফোন অন করে তখন না হয় দেখবে।
তন্নিদের আজ পরীক্ষা শেষ।ও ইচ্ছে করেই এই কয়দিন ফোন অন করে নি।এই ফোনের জন্য ওইদিন এতো খারাপ কতা শুনতে হয়েছে।তাই ফোন হাতে নেয় নি।আর ও জানতে অনিম ওকে একবার হলেও কল করবে তাই সেটা ভেবেও অন করে নি।তবে আরেকটা কারনও আছে তা হলে পরীক্ষা।এমনিই পড়ার চাপ ছিলে।আজ যেহেতু পরীক্ষা শেষ তাই ভাবলো আজ ফোন হাতে নিবে।যেই ভাবা সেই কাজ।ফোন অন করার কিছু সময় পর দেখলো অনিমের নাম্বার থেকে কয়েক’শ কল এসেছে।তন্নি অবাক ও ভেবেছিলো কল আসবে কিন্তু এতো এতো ভাবতে পারে নি।ওর ভাবনার মাঝেই একটা মেসেজ টোন বেজে উঠলো।মেসেজে গিয়ে দেখে অনিমের মেসেজ।বিকালে দিয়েছিলো।আর এখন রাত প্রায় ১১ টা।তন্নি মেসেজটা অন করে দেখলো লিখা আছে,
আ’ম সরি।ওইদিন আমার এভাবে রিয়েক্ট করা উচিত হয়নি।আসলে একটা সমস্যার কারণে মাথা গরম ছিলো।তারউপর তোকে ওইভাবে দেখে।আমি জানি আমার এভাবে কথা গুলে বলা উচিত হয়নি।অন্য ভাবেও বলতে পারতাম।বিশ্বাস কর ভিতরে ভিতরে আমি কুঁকড়ে উঠছি নিজের অপরাধের জন্য।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিস।এগেইন সরি।
অনিম
অনিম চেয়েছিলো আজই তন্নিকে মনের কথা বলবে।কিন্তু পরে ভাবলো ওর এইস-এস-সি পরীক্ষা শেষ হোক তারপর অনিমের ভালোবাসার সাথে পরিচয় করাবে।
তন্নি মেসেজ পরে মনের কোথাও একটা ভালো লাগা কাজ করছে।ও ভেবেছিলো অনিম ওকে ভালোবেসে তাই এমন করলে অনিমের মনের কথা বলে দিবে।কিন্তু এখানে তো অনিম ক্ষমা চাইলো।আবারও মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
দেখা যাক সামনে কী হয় ওদের জীবনে।
চলবে…..