#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-১৫,১৬
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা
১৫
৭ দিন পর,
আরুরা আজ কলেজ এসেছে আজ ওদের রেজাল্ট দিবে তাই সবাই এসেছে।এই কয়দিনে তেমন কিছু পরিবর্তন হয়নি।আগে যেমন ছিলো এখনো তেমনই আছে।আয়ান এই কয়দিন আরুর সাথে দেখা হয়নি কারণ আরুদের কলেজ বন্ধ তাই ও বাসা থেকে বের হয়নি।আয়ান ১/২ দিন রাফসানের থেকে খোঁজ নিয়েছিলো।আরুর মনেও এই কয়দিন অনেক অভিমান জমেছে আয়ান একটা বারের জন্যও ওর কোনো খোজ নিলো না।ও বেঁচে আছে কি না তাও জানতে চাইলো না।কিন্তু আরু যে আয়ানকে ছাড়া অনেক কষ্টে দিন পার করছে তা কি আয়ানের খবর আছে?হয়তো নেই থাকলে তো এমন করতো না।
এইদিকে তন্নি আর অনিমের কোনো উন্নতি হয়নি।ওরা আগে যেমন ছিলো তেমনই আছে।শুধু নিজেদের মনের ভিতর নিজেদের ভাবনাগুলো জমিয়ে রেখেছে।অনিমের সামনে মাস্টার্স পরীক্ষা তাই পড়াশোনা নিয়ে একটু ব্যস্ত তরউপর তন্নিকে নিজের করে পেতে হলে নিজের পায়ে ঠিকঠাক মতো দাড়াতে হবে।তন্নির বাবার সামনে নিজেকে প্রতিষ্টিত করতে হবে।যাতে তন্নিকে ওর হাতে তুলে দিতে কোনো দ্বিধা না থাকে।অপরদিকে,তন্নি মনে মনে গুমরে মরছে অনিম ওইদিনের পর আর কোনো যোগাযোগ করে নি।ওইদিন সরি মেসেজ দিয়ে আর কোনো কথা নেই।তন্নিও অবশ্য আরু দের বাসায় যায় নি।
রাফসান আর মারিয়াও ওদের দুষ্ট মিষ্টি ভালোবাসা নিয়ে দিন পার করছে।
কলেজে এসে সবাই হাসি,ঠাট্টা,দুষ্টামি করে চলেছে।ক্লাসের বেল বাজতেই সবাই ক্লাস চলে গেলো।এখন সবার মনের মাঝে ধুকপুক করছে কারণ রেজাল্টে কী আসে।অবশেষে ওদের অপেক্ষার অবসান ঘটলো।ওরা সবাই ভালো রেজাল্ট করেছে।এবং স্যাররা এটাও জানিয়ে দিলেন কয়েকদিন পর থেকে ওদের কোসিং ক্লাস শুরু হবে।সবাই যেনো প্রতিদিন ক্লাসে উপস্থিত থাকে।সবাই হাসি খুশি কলেজ থেকে বের হলো।মারিয়া বললো,
মারিয়াঃ চল সবাই ফুচকা খাই।অনেকদিন খাই না।
তন্নিঃ হুম চল।এবং আমাদের আজকে ট্রিট দিবে মারিয়া।
মারিয়াঃ উহু আইছে😏।আমি কেন ট্রিট দিতে যামু সয়তান ছেমড়ি😒
তন্নিঃ ওমা বলিস কি🤭।তুই পরীক্ষায় পাশ করলি আর তুই খাওয়াবি না আমাদের?
মারিয়াঃ আমি একা পাশ করেছি নাকী তোরাও করেছিস।শুধু শুধু আমার আমার উপর সব চাপিয়ে দিয়ে আমার টাকা গুলো মারার ধান্দা 😤
আরুঃ এইতো বুঝেছিস বোন আমার।এবার চল আমাদের ফুচকা খাওয়াবি😄
মারিয়াঃ তেরা সব রাক্ষসীরা গেলে আমার আর এক টাকাও বাঁচবে না😫
তন্নিঃ এতে কিপটা কেন তুই ফকিন্নি।আমার থেকে কিছু শিখতে পারিস না।আমার মতো উদার মনের হ।আমি যেমন সবাইকে কোনো কারণ ছাড়া,সাহায্য,করি কোনো কারণ ছাড়া যে যা চায় তাই খাওয়াই🥱
তন্নির কথা শুনে মারিয়া আর আরু চোখ বড় বড় করে তাকাতেই তন্নি মিন মিন গলায় বললো,
তন্নিঃ ইয়ে…বলেছি আর কি।এভাবে তাকানোর কী আছে😤
আরুঃ কিছু না চল নাহলে রাস্তার বালু খেয়ে পেট ভড়াতে হবে।
মারিয়াঃ আরে সমস্যা কী বালু খাওয়া তো ভালো।বালুতে ভিটামিন আছে।যা খেলে মানুষের থেকে এভাবে জোর করে কিছু খাওয়া যায় না।
আরুঃ তুই আমাদের খাওয়ার খোটা দিচ্ছিস মারু😳😓।
মারিয়াঃ আরে আমি তা কখন বললাম😵।আচ্ছা যা তোদের যা মন চায় খা আমি কিছু বলবো না🙁
আরু ও তন্নিঃ ওক্কে😅😅।
ওরা চলে গেলো ফুচকা খেতে।ফুচকার টাকা দিয়ে ওরা বাহিরে এসে দাঁড়ালো।ওরা যাওয়ার জন্য রিকশা খুজচ্ছে।কিন্তু কোনো রিকশা পাচ্ছে না।অনেকক্ষন হওয়ার পর কোনো রিকশা বা সিএনজি কিছু পেলো না।তাই ওরা বিরক্ত হয়ে সামনে হাঁটতে যাবে এমন সময় আরুর চোখ গেলো রাস্তার অপর পাশে।একটা বাচ্চা বল নিয়ে খেলছে।খেলতে খেলতে বলটা রাস্তার মাঝে এসে পরলো।তাই বাচ্চাটা বল নিতে রাস্তায় এসে পরলো।কিন্তু বিপদ ঘটলো যখন একরা গাড়ি বেগতিক হয়ে বাচ্চাটার দিকে ছুটে আসছে।গাড়ি আসতে দেখে আরু সব ভুলে ওইদিক দৌড় মারলো।নিজের জীবনের মায়া করলো না।আরু দৌড়ে বাচ্চাটাকে পাঁজা কোলা করে উঠিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো।কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।গাড়িটা আরুকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো। যার ফলে আরু রাস্তায় ছিটকে পরে।বাচ্চা ততোটা ব্যথা পায়নি কারণ আরু বাচ্চাটাকে আঁকড়ে ধরেছিলো।আরু রাস্তায় পড়তেই একটা চিৎকারে তন্নি আর মারিয়া পিছনে ফিরে যা দেখে আরু রাস্তায় পরে আছে।কিছুক্ষনের মধ্যেই ওখানে মানুষ ভিড়ে যায়।মারিয়া আর তন্নি দৌড়ে ওইদিক যায়।মানুষের ভিড় ঠেলে ভিতরে ঢুকে দেখে আরু রাস্তায় উপর শুয়ে আছে।আর বাচ্চার মা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আদর করছে।বাচ্চাটা পায়ে ব্যথা পেয়েছে।তাই কান্না করছে।তন্নি আর মারিয়া আরুকে ঠিক করে দেখে ওর কপাল কেটে রক্ত পড়ছে।আরুকে এভাবে দেখে ওরা ভয় পেয়ে গেলো।কিন্তু ভয়কে সাইডে রেখে সাহস জুগিয়ে আরুকে ডাকতে লাগলো কিন্তু আরু রেসপন্স করছে না।তা দেখে ওরা আরো ভয় পেয়ে গেলো।
তন্নিঃ আরু চোখ খোল।…এই আরু চোখ খোল না।দেখ তোর কিছু হয় নি।একবার চোখ খোল না।(কান্না করে দিলো)
মারিয়াঃ আরু তাকা আমাদের দিকে….আপনার দাড়িয়ে কি দেখছেন একটু পানি দিন না।
মারিয়ার কথা শুনে রাস্তার একজন মানুষ একটা পানির বোতল এগিয়ে দিলো।মারিয়া পানি নিয়ে আরুর মুখে ছিটিয়ে দিলো।কিন্তু আরু চোখ খুলছে না।তাই আবার দিলো কিন্তু এবারেও আরু চোখ খুলে না।৪ বারের সময় আরু জ্ঞান ফিরলো কিন্তু চোখ খুলতে পারছে না।তাই মারিয়া বললো,
মারিয়াঃ কেউ একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে দিন প্লিজ।ওকে হসপিটালে নিতে হবে।
মারিয়ার কথা শুনে একজন গেলো গাড়ি আনতে।এমন সময় ওই রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলো রাজ।কিন্তু রাস্তায় এমন ভিড় দেখে গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে নামতে যাচ্ছিলো ওই সময় একটা লোক এসে বললো,
লোকঃ বাব একটা উপকার করুন।পাশে একটা মেয়ে এক্সিডেন্ট হয়েছ ওকে একটু হাসপাতালে নিতে হবে।আপনার গাড়িতে করে নিয়ে যান।না হলে মেয়েটা বাঁচবে না।
রাজ লোকটার কথা শুনে বিরক্ত নিয়ে চলে যাচ্ছিলো কিন্তু আবার কি মনে করে ভিড় ঠেলে ভিতরে গিয়ে দেখে আরু রাস্তায় পরে আছে।রাজের আরুকে এভাবে দেখল যতটা খারাপ লেগেছে ততোটাই ভালো লেগেছে।রাজ আরুকে এভাবে দেখতেই লোকটা মারিয়াকে বললো,
লোকঃ মা ওকে এই লোকের গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যাও।আমি ওনাকে এই এক্সিডেন্টের কথা বলতেই উনি গাড়ি থামিয়ে এসেছ।তোমরা ওকে নিয়ে যাও।
লোকটার কথা শুনে মারিয়া আর তন্নি কোনো দিকে না তাকিয়ে ওকে তুলতে চেষ্টা করছিলো কিন্তু পারছে না।তাই রাজ এগিয়ে এসে আরুকে কোলে তুলে নিলো।আরুকে কোলে করে নিয়ে রাজ গাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।আর মুখে একটা হাসি।তবে হাসিটা কী আরুর ভালোর জন্য নাকী খারাপের জন্য তা বুঝা যাচ্ছে না।তন্নি আগে গাড়িতে ঢুকলো তারপর তন্নির কোলে আরুর মাথা দিয়ে দিলো।আর মারিয় ঢুকে আরুর পায়ের কাছে বসলো।ওদের গাড়িতে ঢুকিয়ে রাজ বললো,
রাজঃ তোমরা বসো।আমি একটু অফিসে ফোন করে আসছি।
তন্নি আর মারিয়া মাথা নেড়ে হ্যা বললে রাজ একটু সাইডে চলে গেলো।গিয়ে কারে সাথে কথা বলতে লগলে।আর এদিকে তন্নি মারিয়াকে বললো,
তন্নিঃ মারু অনিম ভাইয়া আর আন্টিকে বলে দে।আর বল হসপিটালের আসতে বল
মারিয়াঃ আচ্ছা
মারিয়া কল দিলো আরুর মা’র কাছে।সব শুনে আরুর মা কাঁদতে কাঁদতে হসপিটালের দিকে রওনা দিলো।রাজও ফোনে কথা বলে হসপিটাল নিয়ে গেলে।হসপিটালের সামনে গাড়ি থামতেই রাজ আরুকে কোলে তুলে নিলো।কোলে নিয়ে হসপিটালের ভিতর যেতে লাগলো আর মুখে সেই আগের মতোই হাসি।আরুকে ভিতরে নিলে ডাক্তার ওকে দেখে ব্যান্ডেজ করে দিলো।কপালে আর পায়ে চোট পেয়েছে।ওই সব জায়গায় ঔষধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো।বেশি রক্ত ক্ষয় হওয়ার কারণে আর শরীর দুর্বল থাকায় একটা সেলাইন লাগিয়ে দিলো আর সাথে একটা ঘুমের ঔষধ।আরুকে ডাক্তার দেখে যাওয়ার পর অনিম আর ওর মা এলো।এসেই আরুর দিকে চলে গেলো।আরুকে দেখে অনিম উঠতেই তন্নির সাথে চোখাচোখি হলো।তন্নি তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে নিয়ে অন্য দিকে চলে গেলো।অনিম ওদের সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো,
অনিমঃ আরুর এই অবস্থা কী করে হলো?
মারিয়া একে একে সবটা খুলে বললো।আর এটাও বললো ওকে কে হসপিটালে আনলো।আর বললো যে আরুকে এনেছে সে বাহিরে আছে।অনিম মারিয়ার শুনে বাহিরে গিয়ে দেখলো রাজ দাড়িয়ে আছে।রাজকে দেখে অনিম অবাক হলো।আর রাজও অন্য দিকে ফিরে ছিলো পিছনে আওয়াজ হতেই ও সেখানে তাকিয়ে অনিমকে দেখে রাজও অবাক হয়েছে।অনিম রাজের সামনে এসে বলে,
অনিমঃ রাজ তুই এখানে?
রাজঃ এসেছি একটা দরকারে।কিন্তু তুই এখানে?
অনিমঃ আসলে আমার বোনের এক্সিডেন্ট হয়েছে তাই ওকে নিয়ে আসা।
রাজঃ ওহ। কোথায় তোর বোন?
অনিমঃ এই তো এই কেবিনে।(আরুর কেবিন দেখিয়ে)
রাজঃ মানে রাস্তায় যে মেয়েটা পরে ছিলো সে তের বোন?
অনিমঃ রাস্তায় পরে ছিলো মানে?….(কিছু একটা ভেবে)তার মানে তুই আরুকে নিয়ে এসেছিস?
রাজঃ আরু তোর বোন😳
অনিমঃ হ্যা।কিন্তু তুই আরুকে কিভাবে চিনিস?
রাজঃ আব…ওই রাস্তায় আসতে আসতে ওর বান্ধবীদের থেকে জেনেছিলাম।
অনিমঃ ওহ আচ্ছা তাই বল।তবে তোকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না।আজ তুই না থাকলে আমাদের আরুর যে কি হতো।
রাজঃ আরে এ আর এমন কি।এসব ছাড় তারপর তোর কি অবস্থা বল।অনেকদিন পর দেখা হলো।
অনিমঃ এইতে যাচ্ছে।তোর কী অবস্তা?
রাজঃ এই তো চলছে।
তারপর দুজন কথা বলতে লাগলো।
(এদিকে রাজের পরিচয় দেই।রাজ আর অনিম সমবয়সী।ওরা আগে একি স্কুলে একি কলেজে পরেছে।কিন্তু ভার্সিটি উঠে ওরা আলাদা হয়ে যায়।অনিম অন্য জায়গায় রাজ অন্য জায়গায়।এর মাঝে কেু কারো সাথে যোগাযোগ ছিলো না।অনিম রাজের সাথে ততোটা মিশতো না।কারণ রাজ কলেজ লাইফ থেকে প্লে বয় টাইপ ছেলে।জামা কাপড়ের মতো মেয়ে চেঞ্জ করতো।মদ,সিগারেট সব ধরনের নেশা রাজ করতো।আর এগুলো অনিম সয্য করতে পারে নি।তাই ও আলাদা থাকতো।কিন্তু রাজের আরো একটা পরিচয় আছে।যা ক্রমশ্য প্রকাশ্য 😛)
অনিম রাজকে নিয়ে ওর মা’র সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।রাজ কিছু ক্ষন থেকে চলে গেলো।এদিকে অনিম অনেক বার তন্নির সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু তন্নি বারবার মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে।তাই অনিম আর চেষ্টা করেনি ওকে ছেড়ে দিলো।
বিকালের দিকে আরুর জ্ঞান ফরলো ওর সাথে কী কী হয়েছে সব খুলে বললো।সন্ধ্যায় আরুকে নিয়ে চলে গেলো বাসায় এবং ডাক্তার বললো ৭ দিন বেড রেস্ট দিলো।তন্নি আর মারিয়া চলে ওদের বাসায়।
চলবে……
#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-১৬
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা
৫ দিন পর,
আরু এখন অনেকটা সুস্থ।কপালের চোটটা মোটামুটি ঠিক কিন্তু পায়েরটা এখনো ঠিক মতো সেরে উঠেনি।এখনো খুরিয়ে হাঁটতে হয়।পড়াশোনা,খাওয়া সব ওর বিছানায়।এই কয়দিন বিছানায় থাকতে থাকতে ও বোর হয়ে গেছে।ডাক্তার বলেছে বেডরেস্ট থাকতে তাই ওর বাসার সবাই ওকে বিছানা থেকে নামতে দেয় না।এই কয়দিন তন্নি আর মারিয়া এসে ওর সাথে সময় কাটিয়ে গিয়েছে।কিন্তু সারাদিন কী এমন ভালো লাগে তাই এখন বহু কষ্টে হেঁটে বেলকনিতে গেলো।বাহিরে মোটামুটি এখন শীতের প্রভাব পরছে।পড়ালেখা,ডিনার শেষ হয়েছে কিছুক্ষন আগে।ঘুমও চোখে ধরা দেয় না।
রাত এখন ১১ টা।আজ আকাশে চাঁদ নেই।আকাশ জুড়ে শুধু তাঁরার মেলা।আরু কুয়াশা ঘেরা সেই চাঁদহীন আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে এই পাঁচ দিনে আয়ান একটা বারো ওর কোনো খবর নিলো না।আরু জানে মারিয়া যেহেতু রাফসানকে বলেছে রাফসান নিশ্চয়ই আয়ানকে একবার হলেও বলেছে।কিন্তু আয়ান জানার পরও কোনো খবর নিলো না।ইচ্ছে করেই নিলো না নাকী আয়ানের জীবনে আরুর এখন আর কোনো মূল্য নেই তাই খবর নেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না।আরু আবার ভাবছে, না আয়ানের কানে এই খবর যায় নি রাফসান হয়তো আয়ানকে কিছু বলে নি।কোনটা সত্যি বলে ভেবে নেবে।আরু কিছু ভাবতে পারছে না।মাথা ব্যথা করছে অনেক।এক্সিডেন্টের পর থেকে বেশিক্ষন কিছু বিষয় নিয়ে ভাবলে সাথে সাথে মাথা ব্যাথা উঠে যায়।এখনো সেই অবস্থা।তাই আরু এসব ভাবনা রেখে শুতে চলে গেলো।
এদিকে রাত ১১.৩০ টা
আয়ান মাএ বাসায় এসেছে।ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে রুমে আসলো।এতো তাড়াতাড়ি ঘুম আসবে না।কী করা যায় তাই ভাবছে।কিছুক্ষন পর গিটার নিয়ে বেলকনিতে চলে গেলো।আকাশের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিলো।তারপর গিটার নিয়ে চোখ বন্ধ করে টুংটাং আওয়াজ তুললো।চোখ বন্ধ করে ভাবছে এই কয়দিন আরুর কোনো খবর পেলো না।রাফসানের থেকে অনেক বার ইনিয়েবিনিয়ে জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করেছে কিন্তু রাফসান কিছু বলে নি শুধু বলেছে বাসায় ঠিকঠাক মতোই আছে।কিন্তু আয়ানের কেমন যেনো সন্দেহ হলো রাফসান সত্যি বলছে নাকী মিথ্যা।কিন্তু আবার ভাবছে কোনো কারণ ছাড়া রাফসান কেনো মিথ্যা বলবে।হয়তো আরু ভালোই আছে।আমিই শুধু শুধু টেনশন করছি।অনেকক্ষন পর আয়ানের ফোনে একটা কল আসলো।আননোন নাম্বার দেখে আয়ানের ভ্রু কুচকে এলো এতো রাতে কে কল করলো ওকে।ওই দু’দিনও আননোন নাম্বার থেকে কল এসে আরুর নামে অনেক কথা বলেছে যদিও সেগুলোর সত্যতা যাচাই করে নি একবারো।এসব ভাবতেই কল কেটে গেলো।কিছু সময় পর আবার কল আসলো এবার আয়ান রিসিভ করলো।ওপাশ থেকে বললো,
লোকঃ কী মি.রোমিও কেমন চলছে দিনকাল?তোমার জুলিয়েটের কি খাবর?
আয়ানঃ কী বলতে কল করেছেন তা বলুন আর নয়তো ফোন রাখুন।
লোকঃ বাহ!একবার কথাতেই চিনে ফেললে। আরে এতো তাড়া কিসের?আস্তে আস্তে সব বলবো।হাহা
আয়ানঃ বলুন।
লোকঃ তা শুনলাম তোমার জুলিয়েট নাকি অন্য কারে প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।আর তোমাকে পাওাই দিচ্ছে না।এটা কী সত্যি?
আয়ানঃ মানে কী বলতে চাইছেন আপনি?
লোকঃ আরে তুমি তো দেখছি কিছুই জানোনা।কোনো খবরই রাখো না।এটা কিন্তু আমি তোমার থেকে আশা করিনি।তুমি লুকিয়ে লুকিয়ে ওকে দেখতে পারো আর এসব খবর রাখো না।
আয়ানঃ কী বলতে চাইছেন সোজাসুজি বলুন।
লোকঃ কীভাবে যে তোমাকে বলি।এখন এসব শুনলে হয়তো তুমি মন খারাপ করবে।থাক তুমি নিজেই জেনে নিও।
আয়ানঃ আপনি কী বলবেন না কী😬
লোকঃ আচ্ছা তুমি যখন এতো করে বলছো তখন বলি।কিন্তু তুমি কিন্তু মন খারাপ করবে না আগেই বলে দিলাম।
আয়ানঃ………
লোকঃ তা শুনলাম তোমার জুলিয়েট নতুন প্রেমে পরেছে।অনেক গভীর প্রেম যাকে বলে আরকী।আবার শুনলাম ওইদিন নাকী কোলে করে রাস্তা পার করে দিয়েছে।কী কাহিনী বলো।রাস্তায় সবার সামনে এরকম কোলে চড়া কী মানায়?মানুষ কী ভাববে বলো।
আয়ানঃ আপনি এসব কার কাছে শুনেছেন?
লোকঃ আমি যার কাছেই শুনি।কিন্তু এটাতো একদম সত্যি।তুমি চাইলে আমি প্রমানও দিতে পারি।
আয়ানঃ কী প্রমান আছে আপনার কাছে?
লোকঃ আমি দিতে পারি কিন্তু তুমি দেখলে তো তোমার খারাপ লাগবে।
আয়ানঃ না লাগবে না।আপনি দিন
লোকঃ সে না হয় দিলাম।কিন্তু আমার তোমার জন্য অনেক খারাপ লাগছে।আরুকে তুমি এতো ভালোবাসালে এখনে বাসো আর ও তোমার ভালোবাসার এই মূল্য দিলো।আমার তো ভাবতেই কেমন লাগছে আর এসব কিছুতো তোমার সাথে ঘটছে।সো স্যাড(ব্যঙ্গ করে)
আয়ানঃ আপনি আর কিছু বলবেন?
লোকঃ আমি বুঝতে পারছি তেমার মনের অবস্থা।কিন্তু কী করবে বলো এসব মেয়েরা এমনই।আমি আসলে ওইদিন ভুল বলেছিলাম।ওর রূপ দিয়ে মনে হয় ও তোমায় বস করেছে।এখন বুঝতে পারছি আমি।ভাই ওইদিনের কথা গুলোর জন্য সরি।
আয়ানঃ আপনার কাছে কী আদোও কোনো প্রমান আছে নাকী….
লোকঃ আরে আস্তে।আমি বুঝেছি তুমি এখন কথা বলার অবস্থায় নেই।কী আর করার?আমি তাহলে কিছু ছবি দিচ্ছি তুমি দেখো।….ও হে এগুলো দেখে আবার মন খারাপ করো না।বায়।
বলেই লোকটা কল কেটে দিলো।লোকটা কল কেটে অট্টহাসিতে ফেটে পরলো।এই হাসিতে যে কারো সর্বনাশ লুকিয়ে আছে তা লোকটা খুবই ভালো জানে।লোকটা কিছু ছবি সামনে ধরে বলতে লাগলো,
লোকঃ আপাতত এইটুকু ডোজই থাক।আয়ান বাবু তুমি যে এতো বোকা তা আগে জানতাম না।তুমি একবারো আমার কথা গুলো অবিশ্বাস করলে না।তবে ভালোই হলো আমার কাজ কিছুটা হলেও এগিয়েছে।
বলেই আবার হাসতে লাগলো।আয়ানের ফোনে কিছু ছবি পাঠিয়ে দিলো……এবার মুখে হিংসাতা এনে বললো,
লোকঃ এতো মাএ শুরু।তোমাদের জন্য আরো অনেক কিছু অপেক্ষা করছে।তোমাদের মাঝে এতো ভালোবাসা আমি দুমড়ে মুচড়ে সব শেষ করে দিবো।আর যদি তা না পারি তাহলে আমার নাম………………
এদিকে আয়ানের ফোনে কিছু ছবি এলো।যা দেখে ওর চোখ মুখ রেগে লাল হয়ে আছে।রেগে ও গিটারের তার গুলো একটানে ছিড়ে ফেললো।এতে হাত কেটে রক্ত পরছে কিন্তু তাতে ওর কিছু যায় আসে না।আয়ান শুধু ভাবছে,,,,কী করে পারলো আরু এটা করতে।আমার ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই ওর কাছে।আরু তো সব সময় বলতো ও আয়ানকে ছাড়া বাঁচবে না।তাহলে এখন এসব কি করে পারলো।এসব ভাবতে আয়ানের বুক চিন চিন করছে।………..প্রায় কিছুক্ষন পর চোখ মুখ শক্ত করে ভাবছে,,,,ওর কাছে সম্ভব।ওর কাছে সব সম্ভব।..ওহহ আচ্ছা তাহলে এই কয়দিন এই কারণে আরুর কোনো খবর নেই।বাহ!আরু অনেক উন্নতি হয়েছে তো।নিশ্চয়ই তুমি এখন অন্য কাউকে সময় দিতে ব্যস্ত।আচ্ছা এজন্যই রাফসানও তোমার কোনে খবর দিতে পারলো।বাহ! আরু ভালোই আছো তাহলে।
রাগের বসে কথা গুলো বললেও চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি পরছে।আয়ানের কিছু ভালো লাগছে না।সব কিছু জালিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।আয়ান রুমে গিয়ে সিগারেটের পেকেট এনে সিগারেট জালালো।এখন এটাই পারবে ওর মনের জ্বালা মিটাতে।সারারাত আয়নের আর ঘুম আসলো না।শেষ রাতের দিকে একটু ঘুমিয়ে পরেছিলো।
৭দিন পর,
আজ থেকে আরু কলেজে যাবে।আরু এখন পুরাপুরি সুস্থ।ওদের কোচিং ক্লাস শুরু হয়েছে আরো কয়েকদিন আগে থেকে কিন্তু আরু যেতে পারেনি।তন্নি আর মারিয়া গিয়েছে আর ওদের থেকে নোট নিয়ে পরেছে।এই কয়দিন কিছুই পরিবর্তন হয় নি।আয়ান একটা বরো ওর খবর নেয় নি।আরু এসব ভেবে দিন দিন কেমন যেনো দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে ওর হৃদয়।অনেক চেষ্টা করেছিলো আয়ানের সাথে দেখা করার বা কথা বলার কিন্তু পারেনি।এমন ভাবেই চলছে আরুর দিন।
এদিকে,
আয়ান ওইদিনের পর কেমন যেনো রগচটা হয়ে গেছে।আগে ওর রাগটা বাহিরে ততোটা দেখাতো না কিন্তু এখন যেনো রাগটা নাকের ডগায়।ওর চেহারায় কেমন যেনো একটা হিংসাতা চাপ দেখা যায়।সাহস করে ওর সাথে কেউ কথা বলতে আসে না।কিন্তু আগে থেকে একটু চুপচাপ হয়ে গেছে।ওই দিনের ওই ব্যাপার কারো সাথে শেয়ার করে নি।কাউকে কিছু জানতেও দেয় নি বা এর সত্যতাও যাচাই করে নি।(যদি করতো হয়তো কোনো ফল পেতো।আসলে আমারা মাঝে মাঝে নিজের চোখ বা নিজের কানে যা শুনি তার ভিতরেও অনেক ভুল থাকে।)আয়ান এসব ব্যাপার নিয়ে আরুকেও কোনো জিজ্ঞাসা বাদ করে নি।আয়ান আরুকে নিজের মতো ছেড়ে দিয়েছে।আরু যেখানে ভালো থাকবো ওই খানেই থাকুক।আয়ান নাহয় দূর থেকে ভালোবাসবে আর ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করবে আরুকে।(যাকে একবার মন দেওয়া হয় তাকে কী চাইলেই কী ভুলে যাওয়া যায়?)
দুপুর ১ টা,
আরুরা কলেজ থেকে বের হয়েছে।এখন বাসায় যাওয়ার পালা।কিন্তু আরু ভাবছে একবার আয়ানের কাছে যাবে।তন্নি আর মারিয়াকে এই বিষয়টা সকাল থেকে বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু পারে নি।ভয় করছে ওরা যদি বাঁধা দেয়।কিন্তু আরুও যে আয়ানকে ছাড়া ভালো নেই আয়ানের সাথে যে একবার কথা বলা দরকার।আরু কী করবে।কী ভাবে ওদের বলবে তা ভাবছে।তন্নি আর মারিয়া নিজেদের মতো কথা বলছে।আরুর এসব ভাবনার মাঝেই ওর পাশ কেটে একটা গাড়ি এসে দাঁড়ালো।আরু,তন্নি,মারিয়া এমন হটাৎ গাড়ি আসায় ভয় পেয়েছে।মারিয়া জেদের বসে কিছু বলতে যাবে তখনই গাড়ি থেকে কেউ বেরিয়ে আসলো।তাকে দেখেই মারিয়া আর তন্নি চুপ হয়ে গেলো।তন্নি হাসি মুখে কিছু বলতে যাবে তখনই আরু তেতে গিয়ে বললো,
আরুঃ ওই মিঞা চোখ নাই?চোখ কেথায় রেখে গাড়ি চালান।নাকি গাড়ি ঠিক মতো চালাতে পারেন না।😤
তন্নিঃ আরু কি বলছিস তুই?
আরুঃ কেন শুনতে পাচ্ছিস না কি বলছি?আর এই যে মি. গাড়ি ঠিক মতো চালাতে না পারলে এতো বড় গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন কেনো।আপনার জন্য আজ আমার মতো একটা বাচ্চা মেয়ে এক্সিডেন্ট হতো🥺
তন্নিঃ আরু চুপ কর।তুই জানিস তুই কাকে কি বলছিস?
আরুঃ কেনো কে উনি?কোনো সেলিব্রেটি কেউ নাকী?
তন্নিঃ আগে না।উনি হলেন রাজ ভাইয়া।অনিম ভাইয়ার বন্ধু।আর ওইদিন তোকে নিজের গাড়ি দিয়ে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া মানুষ।
আরুঃ ওহহ এ আর এমন……. 😳কী বলছিস সত্যি?(আসলে আরুকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর তন্নি আর মারিয়া যখন আরুর সাথে দেখা করতে ওর বাসায় গিয়েছিল তখন ওরা সব আরু বলেছে।কিন্তু রাজকে আরু দেখেনি তাই চিনতে নি)
তন্নিঃ আরে গাধি হ।তোরে মিথ্যা কইতে যামু কেন?
আরু এবার রাজের দিকে অপরাধী চোখ করে তাকিয়ে মিন মিন গলায় বললো,
আরুঃ সরি ভাইয়া।🙁আমি আপনাকে চিনতে পারিনি।প্লিজ কিছু মনে করবেন না।
রাজঃ (হেসে)আরে না না কিছু মনে করি নি।বাচ্চা মানুষ এমন ভুল করতেই পারে।
আরুঃ আমি বাচ্চা না😤
রাজঃ আচ্ছা তুমি বাচ্চা না।এবার হ্যাপি?
আরুঃ অনেক😊(মারিয়া আর তন্নিও হাসছে)
রাজঃ তা তোমারা হেঁটে কোথায় যাচ্ছো?
আরুঃ আর বলবেন না।এই সময় টায় কোনো রিকশা বা সিএনজি পাওয়া যায় না সহজে।কিন্তু এক জায়গায় দাঁড়িয়েও থাকা যায় না তাই হাঁটছি।হাঁটতে হাঁটতে যদি পেয়ে যাই।
রাজঃ তা আর কতোক্ষন এভাবে হাঁটবে? কিছু পাবেও না মনে হয়।(হাতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে)
আরুঃ হুম🙁
রাজঃ আচ্ছা তোমারা কিছু মনে না করলে একটা অফার করতে পারি।
আরুঃ কী অফার?
রাজঃ আমার হাতে এখন কোনো কাজ নেই তোমরা চাইলে আমি তোমাদের বাসায় ড্রপ করে দিতে পারি।…..ডোন্ট ওয়রি বিশ্বাস করতে পারো অনিমের বন্ধু হিসাবে।
আরু,তন্নি,মারিয়া একে অপরের দিকে তাকিয়ে ইশারায় বললো,এখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই সুযোগ যখন পেয়েছি হাত ছাড়া কেনো করবো।তাই আরু বললো,
আরুঃ আচ্ছা সমস্যা নেই আমারা যাবো।চলুন(হাসি মুখে)
তারপর ওরা গাড়িতে উঠলো।আরু বসলো সামনে আর তন্নি আর মারিয়া পেছনে।ওরা বসতেই রাজ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।
আর এতোক্ষন এগুলো সব আয়ান দেখছিলো।(আয়ানের একটা কল এসেছিলো ওকে এক জায়গায় যেতে হবে সেখানেই যাচ্ছিলো কিন্তু হটাৎ রাস্তায় আরুকে কারো সাথে কথা বলতে দেখে পেলে।আর তখনি বাইকটা দাড় করায়)আরু যখন হেসে কথা বলা শুরু করেছিলো তখনই আয়ান এখানে এসেছিলো।তখন থেকেই দূর থেকে দাঁড়িয়ে সব দেখছিলো।আয়ানের রাগে চোক মুখ লাল হয়ে আছে।এই মুহূর্তে যাকে সামনে পাবে তাকেই যেনো ও খুন করে ফেলবে।আয়ান আরো কিছুক্ষন এখানে থেকে বাইক নিয়ে চলে গেলো।
এখন কী আবারও ভুল আয়ান আরুকে?কী আসতে চলেছে ওদের জীবনে?
চলবে…..