#ফ্ল্যাট_নাম্বার_নয়_ছয়পর্বঃ ২৯

0
457

#ফ্ল্যাট_নাম্বার_নয়_ছয়পর্বঃ ২৯
#Lamyea_Chowdhury

মৌন বাসায় ফিরল সন্ধ্যামাখা রাতে। বাসায় ফিরে দেখলো আদুরীর চোখ মুখ ফোলা। মৌন ধরে নিলো তৈমুরের সাথে কোনো কারণে রাগ করে আদুরীর এই অবস্হা হয়তো। মাসে এক দুইবার এমন হয়। এটা অস্বাভাবিক কিছু না বরং যে মাসে তৈমুর আর আদুরীর ঝগড়া হয়না সে মাসে সে আর শায়েরী দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। অন্য সময় হলে সে এখন আদুরীর মন ভালো করার চেষ্টায় নিজেকে নিয়োজিত করত। কিন্তু আজ আর ইচ্ছে করছে না।

মৌন বিছানায় শরীর ছেড়ে দিলো। দৃষ্টি সিলিং ফ্যান এর দিকে নিবদ্ধ। এভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই মৌন আচমকা আদুরীকে ডাকল। আদুরী স্টাডি টেবিলে মাথা গুঁজে ছিল। সোজা হয়ে বসে মৃদুস্বরে বলল, “হুম।”
মৌন সাথে সাথেই কোনো কথা বলল না। সে সময় নিয়ে ধীরে সুস্হে উঠে বসল। তারপর বলতে শুরু করল, “বড় ধরনের একটা ভুল হয়ে গেছে।”
আদুরী ভেজা গলায় বলল, “কি?”
“তোরা যাকে সায়াহ্ন ভাইয়া ভেবেছিলি উনি অন্য আরেকজন।”
আদুরী হকচকিয়ে বলল, “বলিস কি?”
মৌন মাথা নেড়ে বলল, “হ্যাঁ, শায়েরীও বলল যে, রেস্টুরেন্ট এর সেই ছেলেটাও সায়াহ্ন ভাইয়া না।”
আদুরী উপর নীচ মাথা নেড়ে বলল, “আমিও তো বলি এত সুন্দর ছেলেটাকে তুই কেমন করে না করেছিলি?”
“কথা সেটা না, কথা হলো সায়াহ্ন ভাইয়া খুব ক্ষেপে গেছে।”
আদুরী মুখ থেকে বিরক্তির শব্দ বের করে বলল, “কেন?”
“কারণ আমি তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছি।”
আদুরী ভ্রু কুঁচকে ফেলল।মৌন আবারো নিস্তরঙ্গ গলায় বলল, “কথা সেটাও না।”
আদুরী বিরক্ত হয়ে বলল, “কথা কোনটা তবে?”
“কথা হলো চাচ্চু বারবার ফোন করছে কিন্তু আমি ভয়ে ধরতে পারছি না।”
“ধরে দেখ কি বলে। পরে আবার দুশ্চিন্তা করবেন।”
মৌন অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল, “ভাইয়া আবার চাচ্চুর কাছে বিচার দেয়নি তো?”
“কি জানি!”
মৌন খানিক ভেবে বলল, “আচ্ছা কল ধরেই দেখি।”
আদুরী বলল, “আগে তোর কাজিনকে কল দে। উনাকে বল মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে।”
“সে ফোন ধরলে তো?”
আদুরী এবার ভীষণ ভীষণ বিরক্ত হলো। কাটা কাটা গলায় বলল, “এই ছেলেকে একদমই বিয়ে করবি না। এর অহঙ্কার বেশি।”
মৌন অবাক হয়ে বলল, “কিসের অহঙ্কার?”
“চরিত্রের অহঙ্কার। পৃথিবীতে কোনে পুরুষই সাধু পুরুষ না। কিন্তু, উনি নিজেকে সাধু পুরুষ ভাবছেন।”
মৌন কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর মিনমিন করে বলল, “উনি সাধু পুরুষ’ই।”
“তাহলে এই সাধু পুরুষকে বিয়ে করতে তোর এত সমস্যা কেন?”
“সাধু পুরুষদের প্রতি মেয়েদের আগ্রহ থাকে না। লাড্ডু লাড্ডু ছেলেগুলোকে তারা মন দিতে নারাজ। সাধু পুরুষদের দেখলে শ্রদ্ধায় মনের অজান্তেই ভাইয়া ডাক বের হয়ে যায়। মেয়েরা পছন্দ করে বদের হাড্ডিগুলোকে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা কি জানিস?”
আদুরী ভারি আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইল, “কি?”
মৌন সবজান্তাদের মতন বলল, “আমাদের সমস্যা হলো আমরা ভালো ছেলে দেখলে ভাইয়া বানিয়ে ফেলি। এরপর আবার নিজেরাই বলি পৃথিবীর সব প্রেমিকগুলো খারাপ।”
আদুরী হঠাৎ বলল, “আমাদের মাঝে তুই সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমতী। কথাটা কি তুই জানিস?”
মৌন নিঃশব্দে হাসল। আদুরীই আবার প্রশ্ন করল, “এখন কি করবি?”
মৌন সেকথার কোনে জবাব না দিয়ে নিজের মত করে বলল, “বুদ্ধিমতীদের যন্ত্রণা বেশি। বোকা মানুষ ভালো। আর সব বুদ্ধি সব জায়গায় কাজে লাগে না। কিছু কিছু জায়গায় না ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কিন্তু, কিছু না ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া আমার ধাঁতে নেই।”
“কি ভেবে বিয়েটা মানতে পারছিস না বলতো?”
“আমার মা- বাবা নেই। আপন কোনো ভাই- বোনও নেই। মামা- খালারা সব স্বার্থপর। ফিরেও তাকায় না। ফুফুও নেই। আছে বলতে এই এক চাচা- চাচী’ই। অনেক বেশি যত্ন করে তারা আমায় মানুষ করেছেন। এখন ভালোবেসে নিজের ছেলের সাথে বিয়েও দিতে চাইছেন। একটা মজার বিষয় কি জানিস?”
“কি?”
“বিষয়টা হলো চাচার এই চিন্তা- ভাবনা কিন্তু অনেক আগে থেকেই ছিল। যদিওবা সায়াহ্ন ভাইয়া এর কিছুই কখনো টের পায়নি। তবে আমি পেতাম। মেয়েরা অনেক কিছু বুঝে, যেগুলো কখনো ছেলেরা বুঝতে পারে না।”
“কেমন করে টের পেলি?”
মৌন মাথার এলো চুলগুলো আরো এলোমেলো করতে করতে বলল, “আমার চাচা ভীষণ বুদ্ধিমান মানুষ। আমিও আমার চাচার বুদ্ধি পেয়েছি। তবে আমার চাচা মানুষটাও ভালো। আমি আমার চাচার মতন অত ভালো মানুষ নই। আমি খারাপ মানুষ। সবাই এটা টের পায় না।”
আদুরী চমকে গিয়ে বলল, “তুই খারাপ হবি কেন?”
“যারা অতীত ভুলতে পারে না তারা ভালো থাকতে চাইলেও ভালো থাকতে পারে না। ক্রমশই খারাপ বনে যায়।”
“তুই কোন অতীতকে ভুলতে পারছিস না?”
মৌন ম্লান হেসে বলল, “আমার অনেক হিসেব বাকি আদুরী, অনেক হিসেব!”
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here