#ফ্ল্যাট_নাম্বার_নয়_ছয়পর্বঃ ২৮

0
337

#ফ্ল্যাট_নাম্বার_নয়_ছয়পর্বঃ ২৮

#Lamyea_Chowdhury
শায়েরী যেন নিঃশ্বাস নিতেই ভুলে গেল। বুকের মাঝে বড় ধরনের একটা পাথর চাপা পড়ল তার। কিঞ্চিৎ হা হয়ে গেল মুখখানা। নক্ষত্র চোখ মেলে শায়েরীর দিকে নিষকম্প, স্হির চোখে তাকিয়ে বলল, “কি হলো আঁকো তোমার নগ্ন চিত্রখানা।”
শায়েরী এতক্ষণ প্রবল বিস্ময়ে নক্ষত্রের দিকেই তাকিয়ে ছিল। সে এবার লজ্জায়, আড়ষ্টতায় চোখজোড়া নামিয়ে নিলো। নক্ষত্র নিজের চেয়ারটা শায়েরীর চেয়ারের আরো বেশি কাছে টেনে নিয়ে শায়েরীর চেয়ার ঘেঁষে বসল। তারপর কণ্ঠে রাজ্যের উৎসাহ ঢেলে বলল, “শিগগির শুরু করো আজু। শুনেছি আর্ট শিখিয়েই নাকি অনেক টাকা রোজগার করো। তুমি যদি আমার মনের মতন করে আঁকতে পারো তবে তোমাকে আমি আরো কটা স্টুডেন্ট যোগাড় করে দিব। নাও নাও তাড়াতাড়ি শুরু করো।”
লজ্জায় শায়েরীর নাক, মুখ লাল হয়ে গেল। কানের কাছে শোঁ শোঁ আওয়াজ হচ্ছে। নক্ষত্র তার বাম হাতখানা শায়েরীর চেয়ারে রেখে টেবিলের দিকে ঝুঁকে বলল, “এই পেন্সিলে হবে না? আমি তো এটা দিয়েই আঁকাআঁকি করি। ম্যাকানিক্যালেও ফ্রি হ্যান্ড ড্রয়িং আছে।”
শায়েরীর শিরদাঁড়া দিয়ে ঠাণ্ডা স্রোত বেয়ে গেল। উত্তেজনায় হাতের পশমও দাঁড়িয়ে গেল। সে বিড়বিড় করে বলল, “দূরে সরে বসো।”
শায়েরীর নীচুস্বরের কথাটা নক্ষত্রের কান অবধি পৌঁছাল না। শায়েরী নিজ থেকেই চেয়ার সরিয়ে দূরে বসল। নক্ষত্র হঠাৎ চমকে গেল। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিলো। মুখে হাত দিয়ে হামি তুলে বলল, “এক কাজ করি চলো। আমি একবার ট্রাই করি। মহান চিত্রশিল্পী দেখুন তো আমি একটু আধটু আঁকতে পারি কিনা।”
শায়েরীর হাঁটু জোড়াও এবার কাঁপতে লাগল। মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে তার। মুখ ফুটে কোনো কথাও বেরুচ্ছে না। পুরোপুরিভাবে বাকশক্তি এবং একই সাথে চিন্তাশক্তিও লোপ পেয়ে গেছে তার। খেচরটা কি বলছে এসব? মাথা ঠিক আছে তো তার নাকি শায়েরীর মাথাতেই কোনো গণ্ডগোল দেখা দিলো? সে কি ভুলভাল কিছু শুনছে? বাবার টেনশন, ভাইয়ের টেনশন, মায়ের টেনশন, আদুরীর টেনশন, মৌনর টেনশন! এত এত টেনশন করতে করতে অবশেষে সে বুঝি পাগল হয়ে গেল? কি শুনছে সে! মনে মনে নিজের কানজোড়াকে বারকয়েক ধিক্কার জানাল। এর মাঝে নক্ষত্র শায়েরীর হাতের পেন্সিলটা টান দিয়ে নিয়ে নিলো। শায়েরী সম্বিৎ ফিরে পেল। সে হঠাৎ আবিষ্কার করল তার চারিপাশ কেমন টলছে। সে সামনে বসা নক্ষত্রকে ঝাপসা দেখছে। দু’হাতে নিজের মাথা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে কয়েক মিনিট চুপচাপ বসে রইল। তারপর কিছুটা ধাতস্থ হয়ে আচমকা উঠে দাঁড়াল। নক্ষত্র অবশ্য সেদিকে তাকাল না। সে হাতের পেন্সিলটা নাড়াতে নাড়াতে চোখ মুদে বলল, “আমাকে একটু ভাবতে হবে। নাহয় আঁকব কি করে?”
শায়েরী ক্ষুধার্ত বাঘিনীর মতন পেন্সিলটা ছিনিয়ে নিলো। নক্ষত্র কোনো পাত্তায় দিলো না। বরং নিজের হাত জোড়া ঘাড়ের কাছে ঠেকিয়ে রাজকীয় মেজাজে বলল, “পেন্সিল কোনো ব্যাপার না। আমার কাছে তিন প্যাকেট পেন্সিল আছে। মূল বিষয় হলো বিষয়টাকে ফুটিয়ে নিপুণভাবে আঁকতে হলে আমাকে প্রথমে ভাবতে হবে।”
শায়েরী হঠাৎ ফোঁপাতে শুরু করল। নক্ষত্র বিরক্তভাবে বলল, “উফ্ পাশে দাঁড়িয়ে ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করলে আমার কনসান্ট্রেশন ব্রেক হয়ে যায়। আমাকে শান্তিতে ভাবতে দাও তো।”
শায়েরী ভেজা কণ্ঠে ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, “একদম ভাববে না।”
নক্ষত্র আশ্চর্যান্বিত হয়ে চোখ মেলার ভঙ্গি করে বলল, “না ভাবলে আঁকব কি করে? ভাবছি আঁকাআঁকিটা আবার শুরু করি। আর শুরুটা তোমাকে দিয়েই হোক। কি বলো আজু?”
তারপর আবার চোখ বুজে ধ্যান করার ভঙ্গি করে আবছাভাবে মাথা নাড়াতে লাগল। এই দৃশ্য দেখে শায়েরী টেবিলে অগোছালো হয়ে পড়ে থাকা মোটা বইগুলোর একটা হাতে তুলে নিয়ে নক্ষত্রকে এলোপাথাড়ি মারতে লাগল। আর বলল, “এসব বাজে কথা একদম ভাববে না, একদম না।আমি কিন্তু তোমাকে খুন করে ফেলব ভাই। খুন করে ফেলব!”
শেষের দিকের কথাগুলো শায়েরী একপ্রকার চিৎকার করেই বলল। কিন্তু এতে করে নক্ষত্রর টিকিটাও নড়ল না। সে আগের মতই বসে রইল।
শায়েরী হতাশ হয়ে বই দিয়ে আঘাত করা বন্ধ করে দিলো। শায়েরীর বুকটা হাঁপড়ের মতন উঠানামা করছে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে ক্রমশ। শায়েরী ক্ষোভে ফেটে পড়ে হাতের বইটা ছুঁড়ে ফেলল। বইখানা পাশের ওয়ারড্রবে লেগে উল্টে পড়ে গেল। এসবের কিছুই নক্ষত্র গায়ে লাগাল না। সে চোখ মুদে ধ্যানী ঋষির মতন আপন ভাবনায় মগ্ন, বিভোর, বিগলিত। শায়েরী তেড়ে গিয়ে দু’হাতে নক্ষত্রের কলার চেপে ধরে বলল, “চোখ খুলো বলছি, চোখ খুলো। এত অশ্লীল কেন তুমি? ছিঃ! অমানুষ একটা! চোখ খুলো অন্যথায় তোমাকে এখনই খুন করে ফেলব। বেয়াদব তোমার আসল রূপ কি তোমার ফুফু জানে? তার আব্বাজান যে এত নীচ সেই খবর কি তাঁর আছে?”
নক্ষত্র চোখ বুজা অবস্হাতেই নিঃশব্দে নিজের কলার থেকে শায়েরীর হাত সরিয়ে বলল, “চাবি আমার কাবার্ডের লকারে আছে।”
শায়েরী আর এক মুহূর্তও দাঁড়াল না। ঝড়ের গতিতে কাবার্ড থেকে চাবি নিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে সোজা প্রহরের ঘরে চলে গেল। প্রহর তখন ঘুমানোর প্রস্তুতি সরূপ মুখে নাইট ক্রিম মাখছিল। শায়েরীকে রণমূর্তি হয়ে তার ঘরে ঢুকতে দেখে সে হঠাৎ হতবুদ্ধি হয়ে গেল। তার হাত জোড়া গালেই থমকে রইল। শায়েরী ক্রোধান্বিত হয়ে আচমকা প্রহরের হাত চেপে ধরে রাখা গালখানায় সজোরে চড় বসাল। তারপর বিদ্যুৎ গতিতে বের হয়ে চলে গেল।
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here