#ফ্ল্যাট নাম্বার নয় ছয়পর্বঃ ৪৩

0
415

#ফ্ল্যাট নাম্বার নয় ছয়পর্বঃ ৪৩
লেখকঃ লামইয়া চৌধুরী।

দুরুক ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া গলায় বলল, “তবে ভাই ডাকছেন কেন আন্টি? ক্লাস সিক্সে পড়া কেউ আমাকে মামা ডাকবে ইয়াক, ডিজগাজটিং! বড় বোন না বলে বলুন আপনি আমার আন্টির মতন। বোনপো ডাকেন আমায়।”
শায়েরী দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “হ্যা বাজান তুমি আমার বোনপো। দয়া করে তোমার খালু আর আমার সংসারে আগুন লাগিও না। বড় সুখের সংসার আমার। ছেলেটাকে পাইলট বানাব কত সাধ আমার! আর মেয়েটা হবে মাস্টারশেফ।”
দুরুক ভারি বিরক্ত গলায় বলল, “আসসালামু আলাইকুম আন্টি। ফোন রাখছি। আঙ্কেলকে সালাম দিয়েন আমার।”
শায়েরী ব্যাকুল স্বরে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, “বাজান তোমার খালু কিছুটা রাগী কিসিমের। সন্দেহবাতিক আরকি। এখন তুমি যদি আবার তোমার খালুর কাছে কিছু বলো তবে তালাকনামায় সই করা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় থাকবে না। সে তো পান থেকে চুন খসতেই সন্দেহ করে বসে।”
দুরুক আশ্বাসের সুরে বলল, “না আন্টি আমি ভালো ছেলে। ইউ ক্যান ট্রাস্ট মি।”
তারপর খট করে কলটা কেটে দিলো। রিদওয়ান তার পাশেই দাঁড়িয়েছিল। দুরুক নিজের ডীপ ব্রুনেট চুলে আঙুল গলিয়ে রিদওয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল, “ভারী মিষ্টি মেয়ে।”
রিদওয়ান তার একপাশের ভ্রু উঁচিয়ে বলল, “আপনার তো ঝাল ঝাল ঝাঁজওয়ালা মেয়ে পছন্দ।”
দুরুক বেডের পাশের সিঙ্গেল সোফায় বসেছিল। উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “ছানামিষ্টি ছাড়া অন্যকোনো মিষ্টি আমি খাই না জানো তো?”
রিদওয়ান এবার সরু চোখে তাকালো। দুরুক টেবিল থেকে হুইস্কির বোতলটা নিয়ে গ্লাসে হুইস্কি ঢালতে ঢালতে বলল, “এই মেয়েটা ছানামিষ্টি।”
তারপর হাসতে হাসতে দু’পাশে মাথা নাড়াতে নাড়াতে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল, “কি মিষ্টি বললাম বলো তো?”
রিদওয়ান মিনমিন করে বলল, “ছানামিষ্টি।”
দুরুক ছন্দ মিলিয়ে বলল, “ভারী মিষ্টি, ভারী মিষ্টি। তাড়তাড়ি আন্টির খবর নাও তো রিদ। আর আন্টির কোনো আঙ্কেল আছে কিনা সেটাও বের করো। আঙ্কেল না থাকলে আমিই ইন করব।”
রিদওয়ান মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, “ওকে।”
দুরুক মুনওয়াক করতে করতে সাউন্ডবক্স যেখানে রাখা সেই টেবিলটার দিকে গেল। ভলিয়্যুম কমিয়ে গান প্লে করল। গানের তালে তালে চমৎকারভাবে নাচতে নাচতে কণ্ঠশিল্পীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে গাইতে লাগল, “ইফ আই ওয়াজ ইউ, আই ওয়ানা বি মি টু…”
নাচার তালে একসময় বিছানায় ওঠে পড়ল, তারপর সেখান থেকে ডিভানে, ডিভান থেকে টেবিল ডেস্কে। এমন করে করে একটার পর একটা আসবাবের উপর দাঁড়িয়ে চমৎকার সব অঙ্গভঙ্গি করতে লাগল। রিদওয়ান দুরুকের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল, “এই ছেলের নাচ দেখেই মেয়েরা কাত হয়ে যাবে। আমার ঘরের বোনটা যেন অন্তত কোনোদিন স্যারের সামনে না পড়ে। তবে বোন আমার পাগলই হয়ে যাবে। আর স্যারও সেধে সেধে পাগল বানাবে। আল্লাহ্ রক্ষা করো।”
রিদওয়ানের ছোট বোনের নাম রোজা। রোজা এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী মনে মনে বলল, “রোজাকে সামলে রাখতে হবে। রোজা বাসায় থাকা অবস্হায় দুরুক স্যারকে কখনও বাসায় নেওয়া যাবে না। কখনো না, কোনোদিন না।”

অপরদিকে, শায়েরী ঝটপট করে আইডিটা ডিলিট করে দিলো। তারপর মুখ বাঁকিয়ে বলল, “আহারে আমার বাবুটা। ভালো ছেলে না কি ছেলে ভালো করেই জানা আছে আমার। কচুর ডিগি একটা। মর তুই।”
তারপর মন দিয়ে বসে মুভি দেখতে লাগলো। মুভির নাম “থ্রী ইডিয়েটস।” মুভিতে হাসির কান্ডকারখানা দেখতে দেখতেও শায়েরীর চোখ ভিজে ভিজে উঠছে। আহা তারাও তো ছিল থ্রী ইডিয়েটস! ফিসফিস করে বলল, “মিস করছি তোদের। ভীষণ ভীষণ মিস করছি! লাভ ইউ মৌন, লাভ ইউ বাদুরী।”
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here