#ফ্ল্যাট নাম্বার নয় ছয়পর্বঃ ৪২

0
386

ফ্ল্যাট নাম্বার নয় ছয়পর্বঃ ৪২
লেখকঃ লামইয়া চৌধুরী।

বিপাশা টেবিল গোছাতে গোছাতে বলল, “আজ তো বেশ রাত হয়ে গেছে আগামীকাল তোমার সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিব। তোমার ফ্রেন্ডদের গল্প শুনতে চাই আমি।”
শায়েরী মন খারাপ করা গলায় বলল, “নক্ষত্র ভাই আপনাকে সবকিছু বলেছে তাইনা?”
“আরে ধুর ওই বলদের কথা বাদ দাও দেখি। তোমার বন্ধুদের ও কি করে চিনবে? তোমার বন্ধুরা কেমন জানতে হলে তোমার কাছ থেকে জানতে হবে। তাছাড়া, টেনশন নিও না। নক্ষত্র বলদ হলেও জাতে মাতাল তালে ঠিক। ওই ছেলের খোঁজ খবর বের করেই ছাড়বে।”
শায়েরী করুণ গলায় বলল, “আই হোউপ সো।”
শায়েরী উঠে বিপাশাকে কাজে সাহায্য করতে চাইল। কিন্তু বিপাশা বাধা দিয়ে বলল, “কি ক্লান্তটাই না দেখাচ্ছে তোমায়। ঘুমোতে যাও, আমার অভ্যাস আছে কাজ করে। নিজের কাজ নিজে করতেই ভালো লাগে।”
“আমার ঘুম হাওয়া হয়ে গেছে আপু। এখন আর ঘুম আসবে না।”
“তারপরেও গিয়ে রেস্ট নাও। শুয়ে থাকলে ভালো লাগবে।”
শায়েরীর শরীর এমনিতেও ম্যাজম্যাজ করছিল। কথা না বাড়িয়ে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল। বিছানায় এপাশ ওপাশ করেও ঘুম এলো না তার। শুয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেল সে। ঠিক করল মুভি দেখবে একটা। খানিক কাত হয়ে সাইড টেবিল থেকে মোবাইল হাতড়ে নিলো। ডাটা অন করে ইউটিউবে ঢুকল। মাত্রই একটা মুভি দেখতে শুরু করেছিল তখনই একনাগাড়ে মেসেঞ্জারে একের পর এক মেসেজ এসে টুংটাং করতে লাগল। শায়েরী বিরক্ত হয়ে কিছুক্ষণের জন্য মেসেজ মিউট করে রাখতে মেসেঞ্জারে ঢুকে বড়সড় একটা ঝাটকা খেল। দুরুক একের পর এক মেসেজ পাঠাচ্ছে। শায়েরী ভারি বিরক্তবোধ করে বলল, “ছ্যাঁচড়া একটা। খালি চেহারাই আছে ছ্যামড়ার আর কিছু নেই। এক্স গফের বিয়ে হয়ে গেছে তারপরেও জ্বালাচ্ছে।”
শায়েরী দুরুককে ব্লক দিতে গেল। কিন্তু ভুলে মেসেজ সিন হয়ে গেল। শায়েরী ভাবল সিন যখন হয়েছেই দেখি বেচারা এক্স গফকে কি বলে। দুরুকের মেসেজে নমুনা হলো এই যে, “মিতা, সুইটহার্ট তুমি কি নতুন কোনো চাল চালছো? নীনাকে সব বলে দেওয়ার ফন্দি তাইনা? শুনো নীনা আমাকে অনেক ভালোবাসে। তোমার কথায় সে আমাকে অবিশ্বাস করে বসবে না। আর যদিওবা ভুল করে এমন কিছু হয়ে বসে তবে তোমার সংসারখানা আমিও ভাঙব। আ’ল ডেসট্রয় ইউ।”
শায়েরী মাথায় হাত দিয়ে বলল, “আয় খোদা নীনা নামেও একজন আছে! রেস্টুরেন্টের জনকে তো তন্বী বলে ডাকছিল। এ তো পুরা টাল্টু।”
দুরুক আরও লিখেছে, “তুমি দেশে এসেছ তাইনা? এসেই আমার পিছনে লেগে গেছো। আই ক্যান ট্রেস ইউ ডিয়ার! তুমি ঢাকাতেই আছো। আগামীকাল দেখবে আমি চট করে তোমায় সারপ্রাইজ দিতে তোমার বাসায় এসে হাজির হবো।”
শায়েরী এই মেসেজ দেখে আঁতকে উঠল। ইয়া আল্লাহ তার মানে দুরুক তাকে ট্রেস করে বের করে ফেলতে পারবে? তাহলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে। নাকি ট্রেস অলরেডি করেই ফেলেছে! যদি আগামীকাল এই বাসায় এসে ওঠে! তখন কি করবে শায়েরী? বিপাশা আপু তো নক্ষত্র ভাইকে জানিয়ে দিবে। তারপর কি হবে শায়েরী সেটা ভাবতেও পারছে না। ভয়ে জমে গেছে পুরোপুরিভাবে। পরক্ষণেই তার মনে হলো বললেই হলো! সে কি কোনো সাইবার ক্রাইম করেছে যে দুরুক তাকে খুঁজে বের করে ফেলতে পারবে! তাই সাহস করে লিখেও ফেলল, “কীভাবে ট্রেস করবেন আমাকে?”
দুরুক একটা অট্টহাসির স্টিকার পাঠাল তারপর বলল, “ডার্লিং তুমি ভুলে গেছ যে আমার বডিগার্ড রিদওয়ান দারুণ হ্যাকার। এই দেখো তোমার আইডি হ্যাক করে তুমি যেই নাম্বার দিয়ে আইডি খুলেছ সেই নাম্বারটাও বের করে ফেলেছি। ০১*********। এমনকি সিম যে তোমার নামে রেজিস্ট্রেশন করা না তাও দেখলাম। নক্ষত্র আদিব হোসেন নামের কারও নামে রেজিস্ট্রেশন করা। তোমার বর নাকি? ওর কাছে তোমার সব কান্ডকীর্তি খুলে বলতে সহজ হয়ে গেল আমার জন্য। তাছাড়া হঠাৎ আপনি করে বলছ যে? এত রেসপেক্ট বাব্বাহ!”
শায়েরীর মনে হলো তার মাথায় কেউ বন্দুকের নল ঠেকিয়ে রেখেছে। দুরুক যদি এখন নক্ষত্র ভাইয়ের কাছে যায় তবে শায়েরীকে গলা টিপে মেরে ফেলবে নক্ষত্র। বলবে বন্ধুদের সাথে থেকে থেকে গোল্লায় গেছো তুমি। তোমাকে এখনই ক্রসফায়ারে মারা হবে। ঢোক গিলে লিখল, “স্যরি ভাইয়া আসলে এখানে ছোট একটা মিসআন্ডার্স্টেন্ডিং হয়ে গেছে।”
দুরুক আহত হয়ে পড়ে আছে এমন একটা স্টিকার পাঠিয়ে লিখল, “ভাইয়া? সিরিয়াসলি গার্ল! তুমি আমাকে ভাইয়া ডাকছো? আই ওয়াজ ইউর বয়ফ্রেন্ড।”
শায়েরী তাড়াতাড়ি করে লিখল, “আপনি আমাকে যেই মিতা ভাবছেন আমি সেই মিতা না।”
দুরুক অবাক হয়ে জানতে চাইল, “কোন মিতা তাহলে?”
শায়েরী লিখল, “কোন মিতা আপনি চিনবেন না। আমিও আপনাকে চিনি না। হঠাৎ করে পিপল ইউ মে নোউতে আপনার আইডি এসে যায় তারপর ভুলে এড ফ্রেন্ডে টাচ হয়ে যায়।”
দুরুক লিখল, “হা হা হা। মিতু তুমি যে ধুরন্ধর আমি ভালো করেই জানি। আগামীকাল তোমার সাথে দেখা হচ্ছে তাহলে।”
ভয়ে শায়েরীর হাত পা কাঁপতে লাগল। সে লিখল, “বিশ্বাস করুন ভাইয়া। আমি আপনার এক্স গার্লফ্রেন্ড মিতা না। এমনকি আমি কোনো মিতাই না।”
দুরুকের হঠাৎ মনে হলো আসলেই মেয়েটা তার এক্স মিতু না। কারণ মিতা চ্যাট করত বাংলিশ ভাষায়। বাংলা, ইংরেজী মিলিয়ে লিখতো।।কিন্তু এই মিতা লিখছে সম্পূর্ণ বাংলায়। তারপরেও এটা মিতার কোনো চাল হতে পারে। তাই সন্দেহ দূর করার জন্য লিখল, “আমি মেসেঞ্জারে কল দিচ্ছি আপনাকে। কল ধরুন। আপনার কণ্ঠস্বর শুনলেই আমি বুঝে যাব আপনি কোন মিতা।”
এবং প্রায় সাথে সাথেই দুরুক মেসেঞ্জারে কল করল। শায়েরীর হাত প্রচন্ডরকমের কাঁপছিল। কাঁপতে কাঁপতে একসময় মোবাইলটা হাত থেকে পড়েই গেল। শায়েরী ভেবে পেল না কি করবে। মোবাইল ধরবে? ধরলে কি ঝামেলা আরও বাড়বে নাকি মিটমাট হয়ে যাবে? এসব ভাবতে ভাবতেই রিংটা কেটে গেল। দুরুক মেসেজ পাঠাল এত মিথ্যে কি করে বলতে পারো মিতা? কলা দিয়ে ছেলে ভুলানো নাকি! আগামীকালই রিদওয়ান তোমার হাবি মিস্টার নক্ষত্র আদিব হোসেনের ডিটেইলস বের করে ফেলবে। তারপর ওম শান্তি, ওম শান্তি! ”
শায়েরী কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে নিজেই আবার মেসেঞ্জারে কল করল দুরুককে। দুরুক কথা বলল না। শায়েরীই প্রথম বলল,
“হ্যালো আমি মিতা নই।”
দুরুক বুঝতে পারল সে মিতা নয় তবে ভুলক্রমে ফ্রেন্ডরিকুয়েস্ট চলে এসেছে এটা বিশ্বাস করল না। তাই বলল, “তাহলে কে আপনি?”
শায়েরী গলায় জোর দিয়ে বলল, “অপরিচিত কেউ। আমাকে চিনবেন না আপনি।”
দুরুক বলল, “কাম অন আমি এসবে অভ্যস্ত। কত মেয়েই রিকু দিয়ে, ফোন দিয়ে তারপর বলে ভুলে দিয়ে ফেলেছে। এখন বলুন আমাকে কোথায় দেখেছেন আপনি?”
শায়েরী দৃঢ় কণ্ঠে বলল, “আমি কোথাও দেখিনি আপনাকে, চিনিও না। শুধু প্রোফাইল পিকচার দেখেছি।”
দুরুক হাসি হাসি কণ্ঠে বলল, “এটা আপনার ফেইক আইডি?”
শায়েরী চুপ করে রইল। তারপর চট করে বলে বসল, “দেখুন আমাকে দয়া করে ট্রেস করবেন না। আমি আপনার চেয়ে বয়সে অনেক বড়। আমি বিবাহিতা এবং দুই বাচ্চার মা। আমার বড় ছেলে ক্লাস সিক্সে পড়ে। নতুন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেছি তো তাই ভুলভাল হয়ে যাচ্ছে। এখন আপনি যদি আমার বাসায় এসে ওঠেন তবে আমার স্বামী সন্তান কি ভাববে বলুন তো। আমার সুখের সংসারে আগুন লেগে যাবে ভাই। আমি আপনাকে ভাই ডাকলাম। বড় বোনের সংসারে এমন আগুন লাগাবেন না।”
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here