#ফ্ল্যাট_নাম্বার_নয়_ছয়পর্বঃ ৩০

0
466

#ফ্ল্যাট_নাম্বার_নয়_ছয়পর্বঃ ৩০
#Lamyea_Chowdhury

মৌন যখন ফোনে কথা বলছিল শায়েরী তখন বাসায় ফিরল। মৌন কথা বলছে সায়াহ্নর সাথে। সায়াহ্ন বেশ স্বাভাবিক ভাবেই ফোন করে বলল, “বাবার ফোন ধরছ না কেন?”
মৌন পাল্টা প্রশ্ন করে বলল, “আমাকে তুমি করে বলছ কেন?”
সায়াহ্ন সে’কথার জবাব দিলো না। সে বলল, “বাবার ফোন ধরো মৌন। বাবা দুশ্চিন্তা করছে।”
“আমার আসলে ভুল হয়ে গেছে। ঐদিন তোমার চেম্বারে গিয়ে আমার বান্ধবীরা অন্য আরেকজনকে দেখে ভেবেছে সেই বুঝি তুমি। আর সেই ছেলেটাকেই অন্য আরেকটা মেয়ের সাথে দেখে শায়েরী ভুল বুঝেছিল।”
সায়াহ্ন তাচ্ছিল্যের সুরে বলল, “শায়েরী কি ভেবেছে সেটা ফ্যাক্ট না মৌন। তুমি কি ভেবেছ আর কি বলেছ সেটা ফ্যাক্ট। যাজ্ঞে সেকথা বাদ। বাবা দুশ্চিন্তা করছে, তুমি ফোন ধরো।”
সায়াহ্ন ফোন রেখে দিলো। মৌনর বাকি কথা আর শুনল না। মৌন দীর্ঘশ্বাস ফেলে শায়েরীর দিকে ঘুরে তাকাল। শায়েরীকে অবসাদগ্রস্ত এবং ক্লান্ত মনে হচ্ছে। মৌন প্রশ্ন করল, “কি ব্যাপার? এত দেরি কেন? তুই কি আবার সায়াহ্ন ভাইয়ার কাছে ছুটে গিয়েছিলি নাকি?”
শায়েরী ক্ষীণ স্বরে জবাব দিলো, “না।”
আদুরী পাশ থেকে বলল, “মৌন, তোর চাচ্চু বারবার ফোন দিচ্ছে।”
মৌন এগিয়ে গিয়ে ফোনটা ধরল। মৌনর চাচা মাহফুজ সাহেব কোমল গলায় বললেন, “আমার পুতুলটা ফোন ধরছিল না কেন?”
মৌন কণ্ঠে হাসি মিশিয়ে বলল, “তোমার পুতুল ঘুমিয়ে ছিল চাচ্চু।”
মাহফুজ সাহেব যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। তারপর বললেন, “মারে কতদিন তোর চাচী তোকে দেখে না। মেয়েকে দেখার জন্য কি ছটফটটাই না করছে! একবার চিটাগাং আয় না। কতদিন তোর হাতের মোরগ পোলাও খাওয়া হয়না!”
মৌন ম্লান হেসে বলল, “আমাকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাও? কিংবা ভয়াবহ কোনো সংবাদ দিতে চাও কি চাচ্চু?”
মাহফুজ সাহেব বেশ শক্ত মনের মানুষ। কিন্তু হঠাৎ করে তার মন ভেঙে গেল। তিনি ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন। তারপর কাঁদতে কাঁদতেই বললেন, “আমার খুব শখ ছিল তোর কাছ থেকে বাবা ডাক শুনব। তুই তো খুব বেশিদিন বাবা ডাকতে পারিসনি তাই আমি খুব করে চেয়েছিলাম আমাকেই বাবা ডেকে তোর মনের পিপাসা মিটুক। কিন্তু আমার সায়াহ্ন তার সায়াহ্নকৃত্য দেখাল।”
মৌন শব্দ করে হেসে বলল, “আমার কাছে যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে আমার প্রিয় মানুষ কে? তবে আমি নির্দ্বিধায় বলব আমার চাচা আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। আর ২য় প্রিয় মানুষ আমার চাচী। সত্যি বলতে আমি কখনো আমার মা-বাবাকে ফিল করি না চাচ্চু। আমার কাছে আমার চাচ্চু আর চাচী’ই সব। বাবা ডাকতে আমার তেমন একটা শখ জাগে না। তাছাড়া, অন্য যেখানেই বিয়ে করব সেখানে শ্বশুর আছে কিনা তা দেখে বিয়ে করব। তখন নাহয় বাবা ডাকব। তুমি বরং এই টপিকটা বাদ দাও চাচ্চু।”
মাহফুজ সাহেব রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললেন, “ছেলেটা আমার মানুষ হলো না। এত অবাধ্য ছেলেকে ত্যাজ্যপুত্র করা দরকার।”
মাহফুজ সাহেবের স্ত্রী শাহেদা মোবাইল নিজের হাতে নিয়ে বললেন, “মৌন, মা আমার মাফ করে দে আমাদের। তোকে এভাবে অপমানিত হতে হলো। একটা মেয়ের বিয়ের সব ঠিকঠাক হওয়ার পর ভেঙে গেল কত যে কষ্ট!”
মৌন শ্রাগ করে বলল, “আহা চাচী আমার একটুও মন খারাপ হয়নি। বরং এটাই ভালো। তুমি তো চাচাী হিসেবে কত ভালো মানুষ। কিন্তু শাশুড়ি হিসেবে যদি দজ্জাল টাইপের হও তখন আমি কি করব বলো দেখি? আমার তো বাবার বাড়ি নেই যে গিয়ে কান্নাকাটি করতে পারব। তারচেয়ে বরং তুমি আমার চাচী’ই থাকো। আমার শাশুড়ি আমাকে কিছু বললে মান দেখিয়ে তোমার কাছে এসে পড়ব। তখন আমার বর দিনের পর দিন আমাদের বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকবে। আমি যাব না। সে মশার কামড় খাবে, আকুতিমিনতি করবে। আর আমি এখানে সায়াহ্ন ভাইয়ার বউকে জ্বালাব। ননদের সেবা করবে ভাবি আর মুখখানা কালো করে রাখবে। চাচ্চু আমার শ্বশুরকে ফোন করে ঝাঁড়ি দিয়ে বলবে, “আমার পুতুলটাকে কষ্ট দেওয়ার অধিকার কে দিলো আপনাদের। সবকটাকে একদম ক্রসফায়ার করব। কত মজা হবে তাইনা? আর তোমার ছেলেকে বিয়ে করলে আমি আমার বাপের বাড়ি হারিয়ে ফেলব। তখন আমার কি হবে বলোতো?”
শাহেদা শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছে বললেন, “আমাদের ছেলেটা কেমন অজাত,কুজাত হয়েছে। আর তুই কত সুন্দর আমাদের কথায় রাজি হয়েছিলি। আবার এখন আমাদের’ই এটাসেটা বলে সান্ত্বনা দিচ্ছিস তাইনা?”
মৌন মোবাইলে চাচীকে চুমু খেয়ে বলল, “লাভ ইউ চাচী। সত্যি বলছি মন খারাপ হয়নি।”
মাহফুজ সাহেব উচ্চস্বরে সায়াহ্নকে এটাসেটা বলে বকাঝকা করে যাচ্ছেন। ফোন ভেদ করে মৌনর কানে সেসব ঢুকল। মৌন চাচীকে বলল, “চাচী চাচ্চুকে শান্ত হয়ে ঘুমাতে বলো। এক কাজ করো এক কাপ চা বানিয়ে খাওয়াও। চায়ে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দাও।”
শাহেদা আঁতকে উঠে বললেন, “কি বলিস? টের পেলে বাসায় তুলকালাম হয়ে যাবে।”
মৌন ফিসফিস করে বলল, “আস্তে। কথা না বলে খাইয়ে দাও।”
শাহেদা খানিক ভেবে বললেন, “আচ্ছা।”
তারপর ফোন রেখে দিলেন। মৌন হাসি হাসি মুখ করে শায়েরী আর আদুরীকে ডেকে এনে একসাথে বিছানায় বসালো। তারপর ঠোঁট জুড়ে বিস্তৃত হাসি মেখে বলল, “গার্লস ফাইনালি বিয়েটা ক্যানসেল হয়ে গেছে। চল পার্টি করি। আজ কি কি রাঁধব বল।”
শায়েরী নিজের কাঁধ থেকে মৌনর হাত সরিয়ে বলল, “এত রাতে রাঁধবি কখন আর খাব কখন? আমি ভয়াবহ ধরনের টায়ার্ড। ঘুমে ঢুলছি শুধু, ঘুমাব আমি। তোরা গিয়ে পার্টি কর।”
শায়েরী বালিশে মুখ গুঁজে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল। মৌন শায়েরীর দিকে বেশ অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, “এত দেরি হলো যে? নতুন কোনো টিউশনি পেয়েছিস নাকি?”
শায়েরী বালিশে মুখ গুঁজে থেকেই বলল, “বুয়ার কাজ পেয়েছি। ভাবছি বুয়াগিরি করব। আমি যে এত ভালো কাপড় কাঁচতে পারি আমি নিজেও জানতাম না। আল্লাহ আমার চক্ষু খুলে দিয়েছেন। শুকর আলহামদুলিল্লাহ্‌!”
আদুরীর ঠোঁটের আগায় বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরঘুর করছে। কিন্তু সে প্রবল চেষ্টায় নিজের কথা বলা বন্ধ করে রেখেছে। শায়েরীর সাথে উল্টাপাল্টা কিছু বললেই এখন সর্বনাশ। মৌন বলল, “মানে?”
শায়েরী উঠে বসে বলল, “শোন আমি গায়ে মাখার সাবান দিয়ে এত ভালো কাপড় ধুতে পারি ইয়ার। ভাবছি ধোপানী হয়ে যাই। বেশ টাকা পয়সা ইনকাম করতে পারব কি বলিস?”
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here