#ফ্ল্যাট_নাম্বার_নয়_ছয়পর্বঃ১৪
#Lamyea_Chowdhury
সায়াহ্ন বাবার সামনে থেকে চুপচাপ উঠে গেল। নিজের রুমের বারান্দায় গিয়ে পায়চারি করতে শুরু করল সে। তার এখন কিছুই ভালো লাগছে না। সবকিছু কেমন অসহ্যকর লাগছে। নতুন বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা শুনে বাবা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা চলে এসেছে। মৌনকে নিয়ে বিয়ের পর কেমন বাসায় থাকবে তা পরখ করার জন্যই উনার এখানে আসা। আর এসে তাঁকে এখন শুনতে হচ্ছে মৌনকে বিয়ে করতে সায়াহ্ন নারাজ। বাবার রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে দোষ মৌনর। সায়াহ্নর মৌনের উপর বেশ রাগ হচ্ছে। বিয়ে করতে পারবে না নিজে জানিয়ে দিলেই তো পারে। তা না করে চাচা চাচীর সামনে নিজে মহান থাকবে আর সায়াহ্নকে বানাবে কুলাঙ্গার। সায়াহ্নর এখন মৌনকে ফোন করে বকতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু, নিজের ইচ্ছায় লাগাম টেনে সে দুপুরের ঝলমলে রোদের দিকে একনাগাড়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে গুনগুন শুরু করল, “আমি এক যাযাবর,
পৃথিবী আমায় আপন করেছে ভুলেছি নিজের ঘর।
আমি এক যাযাবর।”
মায়ের ফোনটা ঠিক তখনই এলো। সায়াহ্ন গান থামিয়ে ফোন ধরে বলল, “কেমন আছো মা?”
“ভালো আর থাকতে দিলি নাকি? তোর বাবা তো রেগে ফায়ার। তোর অন্য কোথাও পছন্দ থাকলে আগে বলা উচিত ছিল। মৌন শুনলে কতটা কষ্ট পাবে জানিস?”
সায়াহ্ন মায়ের কথা শুনে মনে মনে হাসল। মৌনকে বেশ শক্ত করে ফাজিল বলে বকাও দিলো। তবে মাকে স্বাভাবিক ভাবেই বলল, “মা বাবাকে পারলে একটু বুঝাও।”
“তোর বাবা বলল তোকে বুঝাতে।”
সায়াহ্ন দীর্ঘশ্বাস ফেলে কলটা কেটে দিলো।
.
দুরুক বেশ আড়ম্বর করে রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। তার সাথে সানগ্লাস চোখে ব্লেজার পরিহিত কমবয়সী এক যুবকও আছে। তন্বী নামের মেয়েটা দুরুকের সাথে সেই ছেলেটাকে দেখে বেশ বিরক্ত হলো। তন্বী চাচ্ছিল দুরুকের সাথে একা কথা বলতে কিন্তু, দুরুক এসেছে তার বডিগার্ড নিয়ে। মনের বিরক্তি বাইরে প্রকাশ না করে ম্লান হেসে তন্বী উঠে দাঁড়াল। দুরুক কাছাকাছি আসতেই জড়িয়ে ধরল। দুরুক ভ্রুকুটি করে বলল, “কি ব্যাপার আজ হঠাৎ আমায় মনে পড়ল?”
” আমি কখন তোমায় ভুলতে পেরেছিলাম?”
দুরুক ভ্রু নাচিয়ে বলল, “কিন্তু আমি ভুলে গেছি। গতমাসেই আমাদের ব্রেকআপ হয়েছিল। এই মাসে তো তোমাকে আমার মনে পড়ার কথা না।”
কথা বলতে বলতে দুরুক তন্বীর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। তারপর চেয়ার টেনে বেশ আয়েশ করে বলল, “তুমি আমার নানীর সাথে বেয়াদবি করেছিলে সুইটহার্ট।”
তন্বী কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল, “সে কথা টানছো কেন? তুমি বলো তুমি কেন নাইজার সাথে ঘুরাঘুরি করছো?”
দুরুক হামি তুলতে তুলতে বলল, “উই আর ইন আ রিলেশনশিপ সুইটহার্ট।”
তন্বী গমগমে গলায় বলল, “বাজে কথা ছাড়ো তো। তুমি যে আমায় ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসতেই পারো না তা আমার জানা আছে।”
দুরুক দুহাতে নিজের গাল চেপে ধরে বেশ অদ্ভুত ভঙ্গিতে বলল, “ওমা! তাই নাকি? জানতাম না তো।”
তন্বী মুখ বাঁকিয়ে বলল, “আলবৎ তাই।”
দুরুক হামি তুলতে তুলতে বলল, “এসব কথা বাদ দাও তো। বরং বলো কি খাবে? প্রাক্তন সুন্দরী প্রেমিকাকে ট্রিট দেওয়া ফরয, নয়তো আমার নানীর টাকায় বরকত থাকবে না।”
অপমানে তন্বীর মুখ কালো হয়ে এলো তবুও সে চুপ থাকলো। ভিতরের ঝাঁঝটুকু ভিতরে রেখেই সে দুরুককে ফিরে পাওয়ার শেষ চেষ্টাটুকু করবে।
.
শায়েরীর আজ অবাক হওয়ার দিন। একের পর এক বিস্ময়কর জিনিস আজকে সে দেখতে পাচ্ছে। প্রথমত, নক্ষত্র ভাই তাকে সরি বলেছে যেটা সে ইহকালে কোনোদিন শুনতে পাবে বলে ভাবতে পারেনি। আর দ্বিতীয় বিস্ময়কর বিষয়টি হলো খোদ নীলচোখা বিস্ময়বালক। মৌনর চাচাতো ভাই সায়াহ্ন সামান্য দূরত্বে থাকা ঠিক পাশের টেবিলটাতেই বসে আছে। সাথে বেশ আধুনিক সজ্জায় সজ্জিতা এক মেয়ে, যে কিনা খানিক আগেই সায়াহ্নকে জড়িয়ে ধরেছিল। শায়েরী হা করে সেই দৃশ্য দেখলো।, সাথে দুরুককে দেখে নিলো। মনে মনে ভাবলো, ভাগ্যিস মৌন সায়াহ্নকে বিয়ে করতে না করেছে! নতুবা এই ছেলের খপ্পরে পড়ে মৌনর জীবনটাই শেষ হয়ে যেত। এজন্যই বুঝি বখে যাওয়া ছেলেটার গতি করতেই মৌনর চাচা-চাচী যেচে পড়ে মৌনর সাথে নিজেদের ছেলের বিয়ে দিতে চাচ্ছে।
চলবে…