#ফ্ল্যাট_নাম্বার_নয়_ছয় পর্বঃ ১৬

0
369

#ফ্ল্যাট_নাম্বার_নয়_ছয় পর্বঃ ১৬
#Lamyea_Chowdhury

রাতে ঘুমোতে যাবার আগে শায়েরী মৌনকে ডেকে বলল, “তোর সাথে কিছু কথা আছে আমার।”
মৌন চুলে বেণী করতে করতে জবাব দিলো, “কি কথা?”
আদুরী পড়ার বই রেখে উৎসুক হয়ে শায়েরীর কথা শুনতে লাগলো। শায়েরী আমতা আমতা করে বলল, “ঐ যে তোর চাচাতো ভাই শাহরিয়ার সায়াহ্নকে আজ আবার দেখেছি।”
আদুরী চেয়ার থেকে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে দুহাত নেড়ে বলল, “ও মাই গশ!”
মৌন আদুরীর দিকে অবাক চোখে তাকালো। শায়েরী দ্বিধান্বিত গলায় বলল, “ছেলেটা ভালো না দোস্ত।”
মৌন বিচলিত হয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লো, “মানে কি?”
আদুরী গলা উঁচিয়ে বলল, “মানে হলো শালী এখন তোর উড বির প্রেমে পড়ে গেছে। তাই বলছে ছেলে ভালো না।”
মৌন বিরক্ত বোধ করল। শায়েরী দু’দিকে মাথা নেড়ে আদুরীর কিচ্ছু হবে না টাইপ নিঃশ্বাস ফেলল। আদুরী বিভিন্ন ভঙ্গিমায় দু’হাত নেড়ে মৌনকে বলছে, “শোন এত হ্যান্ডসাম ছেলে দেখে আমার বুকও ধুঁকপুঁক ধুঁকপুঁক করছিল। কিন্তু, তৈমুরটার জন্য কপাল পুড়লো আমার। শায়েরীর তো আর কেউ নেই তাই শায়েরী নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না।”
মৌন আদুরীকে প্রচন্ড ধমকে বলল, “থাম তুই। শায়েরীরও তো খেচর ভাই আছে।”
মৌন কথাটা বলেই জিহ্ব কাটলো। মৌনর কথা শুনে শায়েরীর মুখটা হয়েছে ঠিক দেখার মতন। চারশো চল্লিশ বোল্টের শক খাওয়া চেহারা নিয়ে সে হা করে তাকিয়ে রইল। মৌন গমগম করে বলল, “হা বন্ধ কর! মশা ঢুকে যাবে।”
আদুরী অশ্লীল ভঙ্গিতে ঠোঁট পাউট করে বলল, “এত বড় হা করে থাকলে মশা কেন? মশারী রাজ্যের রাজপুত্রও অনায়েসে ঢুকে পড়তে পারবে।”
দুই বান্ধবীর মশকারায় শায়েরীর কান ঝাঁ ঝাঁ করতে লাগলো। চোখ মুখ কুঁচকে সে বলল, “কি বলছিস তোরা? কার কথা বলছিস?”
শায়েরী আসন করে পা তুলে বিছানার মধ্যখানে বসে ছিল। আদুরী শায়েরীর পাশে পা ঝুলিয়ে বসে পা নাড়াতে নাড়াতে বলল, “ন্যাকা!”
শায়েরী আদুরীর হাঁটু স্পর্শ করে বলল, “পা নাড়ানো বন্ধ কর, বাজে অভ্যাস এটা। তাছাড়া আমার সামনে গালাগাল করবি না।”
শায়েরীর কোমরের নীচ পর্যন্ত পিঠময় বিছিয়ে থাকা বেণুণীটা আদুরী টেনে ধরে মুখ বাঁকিয়ে বলল, “হ্যাঁ আপনি তো ভালো মানুষ। আমি জনসম্মুখে মাথা উঁচিয়ে প্রেম করি বলে আমি খারাপ। আর আপনি যে রাতবিরেতে নিজের কাজিনের সাথে ফোনে প্রেমালাপ করেন সেটার কি হবে?”
শায়েরী ব্যথা পেয়ে আহ্ করে উঠলো। আদুরীর হাত থেকে চুল সরিয়ে নিয়ে বলল, “কি যা তা বকছিস?”
মৌন এবার শায়েরীকে মন খারাপ করা কণ্ঠে বলল, “তোর ঠিক কদিন আগ থেকে প্রেম বলতো শায়ু? আমাদের থেকে কি করে লুকোতে পারলি? তোর একটুও বুক কাঁপলো না?”
শায়েরীর ধৈর্য্যের বাধ ভাঙলো। গর্জে উঠা গলায় সে বলল, “আশ্চর্য! কার সাথে প্রেম আমার?”
মৌন উচ্ছ্বোসিত গলায় জবাব দিলো, “নক্ষত্র ভাই তোর প্রেমিক না?”
শায়েরী আর্তনাদ করে উঠলো, “আস্তাগফিরুল্লাহ্! উনি আমার ভাই।”
আদুরী ভেঙচি কেটে বলল, “তাই নাকি শায়ু?”
শায়েরী কান্না কান্না মুখ করে বলল, “ছিঃ! আমি তোদের সাথে আর কোনোদিনও কথা বলব না, কোনোদিনও না।”
আদুরী মাথা ঝাঁকিয়ে শায়েরীকে সমর্থন করে বলল, “হ্যাঁ অবশ্যই তুই আমাদের সাথে আর কখনও কথা বলবি না। বান্ধবীদের আড়ালে আবডালে যারা প্রেম করে তাদের জিহ্বা কেটে ফেলা অত্যাবশ্যকীয়। আমরা উদারমনা বলেই তোর জিহ্বা কাটলাম না।”
শায়েরী ঘেন্নায় বালিশ নিয়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেল। আদুরীও ঠাশ করে দরজা বন্ধ করে পড়তে বসলো। শায়েরী পাশের ঘরে গিয়ে চুপচাপ বসে রইল। চরম পর্যায়ের আশ্চর্যান্বিত সে। তার মামী সন্দেহ করে বলে তার বান্ধবীরাও এমন অপবাদ দিতে পারলো? রাগে তার কান্না চলে এলো। হাতের ব্যথা নিয়ে সারারাত বসে কাঁদলো। নক্ষত্র ভাই তো তার ভাই। কখনো উল্টাপাল্টা কিছু কল্পনায়ও ভাবেনি সে।

আদুরী মধ্যরাত পর্যন্ত পড়ার পর ওর সিঙ্গেল খাটে শুয়ে তৈমুরের সাথে ফোনে কথা বলতে লাগলো। মৌন পাশের বড় বিছানাটায় শুয়ে নির্ঘুম রাত কাটালো। সবসময় শায়েরী তার পাশেই ঘুমোয়। আজ সে রাগ করে পাশের ঘরে চলে গেছে আর মাথায় দিয়ে গেছে হাজারটা চিন্তা। সায়াহ্নকে কেন খারাপ ছেলে বলল সে? এই চিন্তায় মৌন সারারাত বিছানায় এপাশ ওপাশ করেছে। আদুরী ফোনে কথা বলতে বলতে একসময় ঘুমিয়েও গেছে। আর পাশের ঘরে শায়েরী সারারাত বসে কেঁদেছে। সারারাত জেগেছিল শায়েরীর প্রেমে মত্য নক্ষত্রও। সে রাতে পড়তে বসে নক্ষত্রর বই কুঁচি কুঁচি করে ফেলে দিতে ইচ্ছে হলো। ইচ্ছে হলো কাঁচি দিয়ে শায়েরীর বেণুণী কেটে দিতে। রাগে তার কপালের শিরাগুলো দপদপ করছিল। নক্ষত্রের মনে হলো মাথাটা যদি কেটে ফেলে দিতে পারতো তাহলে শায়েরীর চিন্তা আর মাথায় আসতো না। হাজার চেষ্টা করেও সে পড়ায় মন বসাতে পারলো না। অবশেষে, ল্যাপটপ খুলে বসলো। পাসওয়ার্ড দেওয়া ফাইলটা খুলে লিখতে আরম্ভ করল,
“আজু,
চাঁদের আলোয় ঝলসে দেব, খোঁপায় দিব শূল।
এই জীবনে আমার করা, কন্যা তুমি ভুল।”
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here