#ফ্ল্যাট_নাম্বার_নয়_ছয়পর্বঃ১৭

0
389

#ফ্ল্যাট_নাম্বার_নয়_ছয়পর্বঃ১৭
#Lamyea_Chowdhury

শায়েরী তখনও রাগ করে ঘরেই বসেছিল। মৌন আর আদুরী সকালের নাস্তা নিয়ে শায়েরীর অভিমান ভাঙতে এলো। ওদের দেখে শায়েরী মুখ ভার করে রইল। মৌন আদেশের সুরে বলল, “হা কর খাইয়ে দিচ্ছি। হাতের অবস্হা কেমন?”
শায়েরী মুখ বাঁকিয়ে বলল, “কাল বলেছিলি আমাকে আর কোনোদিনও খাওয়াবি না। খাওয়ালে কারাটে ছেড়ে দিবি।”
আদুরী শায়েরীর ঠোঁটে আঙ্গুল চেপে বলল, “শশ্! একদম চুপ। আমাদের সাথে কথা বলার অধিকার তোর নেই। জিহ্বা কাটছি না বলে মনে করবি না সব ভুলে গেছি।”
শায়েরী এক ঝটকায় আদুরীর হাত সরিয়ে বলল, “তোরা কি পাগল হয়েছিস? আমি! এই আমি প্রেম করব খেচর দি গ্রেট নক্ষত্র আদিব এর সাথে? ঐ দজ্জাল আর অহংকারী মহিলার ছেলেকে আমি বিয়ে করব? আর নক্ষত্র ভাই আর আমি! ভাবতেই গা গুলিয়ে যাচ্ছে।”
শায়েরী বমি করে দিবে এমন ভঙ্গি করলো। মৌন প্রশ্ন ছুঁড়ল, “তোর হাতের এই অবস্হা করে চলে গেল সে, আর তুই বসে বসে ব্যথায় কাতরাচ্ছিস তাও কিছু বলছিস না কেন? এত ভালোবাসিস?”
শায়েরী এবার চোখ মুখ কুঁচকে বলল, “আমি সত্যিই এবার বমি করে দিব।”
আদুরী ফিক করে হেসে দিয়ে বলল, “গুড নিউজ তাইনা?”
শায়েরী আদুরীকে তেড়ে মারতে এলো। আদুরী মন খারাপ করা গলায় বলল, “দুষ্টুমি করেছি। কই তুই মিষ্টি করে যাহ্ শয়তান বলে লজ্জা পাবি, তা না করে মারতে আসছিস।”
শায়েরী মৌনর দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি বলে দিলাম মৌন! খবরদার এরকম উল্টাপাল্টা কথা আমার সামনে তোরা কোনোদিনও বলবি না। ছেলেবেলায় কত একসাথে গড়াগড়ি করে ঘুমিয়েছি! পুরোদমে প্রিয় ভাই ছিল আমার। আর তোরা কিসব যা তা বলছিস।”
আদুরী কথায় ফোঁড়ন কেটে বলল, “ভাইয়ারাও সাইয়া হয়।”
মৌন হঠাৎ বলল, “এখন তোর প্রিয় ভাই নেই?”
আদুরী বলে উঠল, “এখন আর প্রিয় ভাই কেন হবে? এখন তো…”
আদুরী পুরো কথা শেষ করতে পারলো না। তার আগেই মৌন আদুরীকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “আহ্ শায়ুকে বলতে দে।”
শায়েরী এবার মুখ খুলল, “এখন যা ভয়ঙ্কর দানব আর অমানুষ, অহঙ্কারী হয়েছে! কি করে আর প্রিয় থাকবে? নক্ষত্র ভাই প্রিয়জন থেকে এখন প্রয়োজন হয়ে উঠেছে। একদম দরকার না পড়লে তো কথাও হয় না। অথচ, আজ থেকে দশ বছর আগে, ওয়ান্স আপন আ টাইম, সারাবছর উৎসুক হয়ে নক্ষত্র ভাই কবে আমাদের বাড়ি বেড়াতে আসবে সে অপেক্ষায় থাকতাম।”
মৌন কৌতূহলী হয়ে বলল, “এরপর হঠাৎ কি হলো যে তোরা এত দূরে সরে গেলি?”
শায়েরীর আচমকা মন খারাপ হয়ে গেল। মনে পড়ে গেল স্কুলে পড়ার দিনগুলোর কথা। শায়েরী পুরোনো স্মৃতিপটে হারিয়ে গেল। আদুরী শায়েরীকে ঝাঁকুনী দিয়ে বলল, “চুপ করে গেলি কেন? আজ সবটা বলতেই হবে। তৈমুর দিনে কতবার আমার হাত ধরে সেটাও গুনে তোদের বলি। আর তুই এত স্বার্থপর ছিহ্!”
শায়েরী বিরক্ত হয়ে বলল, “প্লিজ তোর ড্রামা বন্ধ কর। তোর ঐসব শুনতে আমরা মোটেও আগ্রহী না। তুই বরং আমাদের যেচে এসে বলিস।”
“ভালোবাসি বলেই তো বলি।”
শায়েরী বুঝলো আদুরী এবার ইমোশনাল হয়ে যাবে। তারপর শায়েরীকেও ইমোশনালি ব্ল্যাক মেইল করে কথা আদায় করবে। শায়েরীর সেসব কথা কাউকে বলতে ভালো লাগে না, মন খারাপ হয়ে যায় তার। তাই কথা ঘুরালো সে। মৌনর হাত চেপে ধরে বলল, “দোস্ত আমার কথা বাদ দে। তোর কথা চিন্তা কর। সায়াহ্নকে একটা মেয়ের সাথে জড়াজড়ি করা অবস্হায় দেখলাম।”
মৌনের মাথায় যেন বাজ পড়ল। আদুরী আপেলে কামড় বসাতে বসাতে বলল, “অতো সুন্দর ছেলেকে দেখলে যেকোনো মেয়েই জড়িয়ে ধরতে চাইবে। আমার তো মৌনের ভাইয়ের কোলে উঠে বসে থাকতে মন চায়।”
শায়েরী ধমকে উঠে বলল, “ছিঃ! কি বিচ্ছিরি কথা তোর।”
আদুরী সরু চোখে তাকিয়ে বলল, “কেন তোর ইচ্ছে করে না?”
শায়েরী দুপাশে মাথা নেড়ে বলল, “আমি তোর মত এত বেহায়া না। আমার কিছু এথিকস আছে জীবনে। মূল্যবোধ আছে, ভ্যালু আছে।”
আদুরী দু’হাত জোর করা ভঙ্গি করে বলল, “আম্মাজান আপনি জ্ঞান দেওয়া শুরু করবেন না প্লিজ। আপনি যে আদ্দিকাইল্যা দাদী সে আমরা অনেক আগ থেকেই জানি। তোর ভবিষৎ প্রজন্ম নিয়ে আমি চিন্তিত। এখনি এমন মুরব্বীয়ানা স্বভাব তোর, না জানি সত্যি সত্যি মুরব্বী হলে তখন তাদের কি পেইন দিস!”
মৌন আদুরী আর শায়েরীর অযথা তর্কাতর্কি থামাতে চিৎকার করে উঠলো। “প্লিজ থামবি তোরা?”
মৌনর চিৎকারে দুজনই চুপ করে গেল। মৌন বিচলিত হয়ে বলল, “কই দেখেছিস?”
শায়েরী জবাব দিল, “প্রহর আর নক্ষত্র ভাইয়ের সাথে রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলাম। মানে গতকালই দেখেছি।”
আদুরী চোর ধরে ফেলবার মতন করে গর্জে উঠে বলল, “ওরে আমার এথিকসওয়ালী। নক্ষত্র ভাই কি করে আপনার সাথে?”
শায়েরী বলল, “আমি তো গতকাল এসেই বললাম উনি কাঁটাচামচ দিয়ে আঘাত করেছেন। ঐ রেস্টুরেন্টেই তো..”
আদুরী শায়েরীর কথায় বাগড়া দিয়ে বলল, “তা তো জানিই কিন্তু কেন গিয়েছিলেন আপনি আপনার নক্ষত্র ভাইয়ের সাথে?”
শায়েরী জবাব দেওয়ার সুযোগ পেল না। তার আগেই মৌন বলে উঠলো, “কিরকম অবস্হায় দেখলি?”
শায়েরী বলল, “একটা মেয়ে বসে অপেক্ষা করছিল প্রথম। তারপর সায়াহ্ন ভাই এলেন। মেয়েটা বসা থেকে উঠে উনাকে জড়িয়ে ধরলেন। একদম আষ্ঠেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরা যাকে বলে।”
মৌন খানিক থম মেরে বসে রইল। ঘরের পরিবেশ হঠাৎ করেই সুনসান হয়ে গেল। আদুরী কিছু বলবে বলবে করেও পরিস্হিতি দেখে কিছু বলল না। মৌন ঘর ছেড়ে উঠে গেল। শায়েরী আর আদুরী দুজন দুজনার দিকে তাকালো, চোখাচোখি হলো তাদের। দুজনের চোখেই দুশ্চিন্তা। তবুও দুজনের কেউ’ই কথা বলল না। মৌন ফোন নিয়ে ঘরে ফিরে এলো। তারপর ঘর জুড়ে পায়চারি করতে করতে সায়াহ্নকে ফোন করল।
.
ফুলতরী খানম ফযরের নামাজ পড়ে আর ঘুমোন না। বাড়ির পিছনের লনে বেশ সময় ধরে হাঁটাহাঁটি করেন তিনি। সেসময় তাঁর পাশে থাকে রিদওয়ান। রিদওয়ান ফুলতরী খানমের নাতি দুরুকের বডিগার্ড কিংবা দেহরক্ষী কম ফুলতরী খানমের গুপ্তচর কিংবা স্পাই বেশী। এই সময়টায় হাঁটতে হাঁটতে তিনি রিদওয়ানের কাছ থেকে দুরুকের গতদিনের পুরো হিসেব নিয়ে থাকেন। যদিও এই হিসেবের বেশিরভাগেই থাকে মিথ্যাচার এবং গড়মিল। ফুলতরী খানমের দৈনিক রুটিনমাফিক আজও তিনি লনে হাঁটছিলেন। ধীর এবং দীর্ঘ সময় নিয়ে পা ফেলেন তিনি। কথা বলেন অনেকটা ফিঁসফিঁস করে। একদম কাছ ঘেঁষে না দাঁড়ালে সেকথা বোঝা বড় মুশকিল হয়ে পড়ে। দূর থেকে শুধু ঠোঁট নড়তেই দেখা যায় তখন। স্বভাবানুযায়ী নীচুস্বরে রিদওয়ানকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “তিতু কাল তন্বী নামের মেয়েটার সাথে দেখা করেছিল?”
রিদওয়ান ক্ষীণ স্বরে বলল, “জ্বি ম্যাডাম।”
“হঠাৎ দেখা করল যে?”
“মেয়েটা দুরুক স্যারের সাথে কথা বলতে চেয়েছিল। গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলোচনা করবে এই বলে শিডিউল নিয়েছিল।”
“আচ্ছা। তা কি কথা হলো তাদের? ”
“স্যার আমাকে পাশে দাঁড়াতে দেননি।”
ফুলতরী খানম মাথা নাড়িয়ে বললেন, “আচ্ছা। এখন তুমি যাও।”
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here