#ফ্ল্যাট_নাম্বার_নয়_ছয়পর্বঃ ১৮
#Lamyea_Chowdhury
রিদওয়ান দরজায় দুমদাম শব্দ করে দুরুককে ডাকতে লাগলো। দুরুক তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। রিদওয়ানের ডাকাডাকিতে সে বিরক্ত মুখে চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে এলো। দরজা খুলতেই রিদওয়ান আর্তনাদ করে বলল, “সর্বনাশ হয়ে গেছে স্যার।”
দুরুক ঘুমে কাতর হয়ে বলল, “কি সর্বনাশ?”
রিদওয়ান দুরুকের আরো কাছে এসে দাঁড়িয়ে গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলল, “তন্বী নামের মেয়েটার সাথে দেখা করবার কথা ম্যাডাম জেনে গিয়েছেন।”
দুরুকের চোখ থেকে ঘুম পুরোপুরিভাবে উধাও হয়ে গেল। দুরুক আঁতকে উঠে বলল, “তুমি আবার মুখ খুলে ফেলোনি তো?”
রিদওয়ান হাত নেড়ে বলল, “না না স্যার! কি যে বলেন না! আপনার মদ খেয়েছি, মীর জাফরগিরি কি করে করি বলুন তো?”
দুরুক কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে বলল, “আচ্ছা বাঁচা গেল।”
তারপর ঘরে ঢুকে তাড়াতাড়ি করে গায়ে পরা টেঙ্ক টপের উপর দিয়ে একটা পাঞ্জাবী চড়ালো। মাথায় সাদা টুপিও পড়লো। তারপর হন্তদন্ত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। রিদওয়ান দরজায় দাঁড়িয়েছিল। দুরুককে হন্তদন্ত হয়ে বাইরে যেতে দেখে উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করলো, “কোথায় যাচ্ছেন স্যার? বড় ম্যাডামের কাছে? আপনি ব্রাশ করেছেন?”
দুরুক থমকে দাঁড়ালো। আসলেই তো সে ব্রাশ করেনি।
যদিওবা সারা রাত জেগে মাত্র আধ ঘণ্টা হয়েছে ঘুমিয়েছিল সে। তারপরো ব্রাশ না করে যাওয়া যাবে না, সবাই মদের গন্ধ টের পেয়ে যাবে। সে তড়িৎ বাথরুমে ছুটে গেল। তারপর দ্রুত ব্রাশ করলো। মুখ হা করে পরীক্ষা করলো মদের গন্ধ পাওয়া যায় কিনা। তারপর ঘরে এসে ড্রেসিংটেবিল থেকে আতর নিয়ে গায়ে মাখলো। এরপর ছুটে গেল নিজের নানীর সাথে দেখা করবার উদ্দেশ্যে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নানীর দেখা পেল না। নানী কি এক জরুরি কাজে বেরিয়ে পড়েছে। দুরুক বিরক্ত মুখে নিজের ঘরে ফিরে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। তারপর চেঁচিয়ে রিদওয়ানকে ডাকলো। রিদওয়ান ডাক শুনে ছুটে এসে বিনম্র কণ্ঠে বলল, “স্যার, আদেশ করুন।”
দুরুক উঠে বসে টুপিটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেললো। তারপর গায়ের পাঞ্জাবীটাও খুলে ফেললো। আয়েশ করে বসে বলল, “সায়াহ্ন শাহরিয়ারকে কি উপহার দেওয়া যায় কিছু ভেবেছো রিদ?”
রিদওয়ান দাঁড়িয়ে আছে একদম সোজা হয়ে, বডিগার্ডদের মতন। সে মাথা হেট করে বলল, “আমার চাকরীটা দিয়ে দিন উনাকে। আমি আমার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছি। আপনাকে সব বিপদআপদ থেকে প্রতিরক্ষা করবার দায়িত্ব আমার ছিল কিন্তু আমার ইয়ে পেয়ে যাওয়ায় আমি চলে গেলাম। তারপর আপনাকে সেই মহৎ ব্যক্তি রক্ষা করলেন। এখন এটাই হবে একই সাথে আমার শাস্তি এবং উনার পুরস্কার।”
দুরুক তার নীলনয়ন দুটি উল্টানোর ভঙ্গি করে বলল, “কাম অন রিদ! সে নিজেই ডাক্তার। আমার মতন নালায়েক না। আর তুমি তোমার এসব ড্রামা বন্ধ করো।”
রিদওয়ান মাথা চুলকে বলল, “স্যার, উনাকে একটা কঙ্কাল কিনে দিই?”
দুরুক হাসতে হাসতে বিছানায় গড়িয়ে পড়লো। তারপর বিছানায় দুহাত ছড়িয়ে দিয়ে বলল, “তোমার দ্বারা কিচ্ছু হবে না। আমাকেই কিছু ভাবতে হবে। নতুবা পুতুল থেকে আইডিয়া নিতে হবে।”
রিদওয়ানের মুখখানা কালো হয়ে গেল হঠাৎ। সে গমগম করে বলল, “স্যার, সবসময় ঐ ধেঙি মেয়ের কাছ থেকেই কেন আপনার আইডিয়া নিতে হবে?”
দুরুক রিদওয়ানের কথার জবাব দেওয়ার কোনো প্রয়োজনবোধ করলো না। সে গলার স্বর উঁচিয়ে পুতুলকে ডাকতে লাগলো। রিদওয়ান দুরুককে মনে করিয়ে দিলো, “স্যার, পুতুল বড় ম্যাডামের সাথে গিয়েছে।”
দুরুক বলল, “ওহ্ তাহলে তুমি যাও। আমি একটু ঘুমোই।”
রিদওয়ান মলিন মুখে হেঁটে চলে গেল। দুরুক বালিশ টেনে চোখ বুজে শুয়ে রইলো। একসময় সে ঘুমে তলিয়েও গেল।
…
সায়াহ্নর সাথে মৌনদের দেখা করবার কথা ছিল বিকেলে। কিন্তু, শায়েরীকে বিকেলে টিউশনে যেতে হবে বলে তারা দুপুর বারোটার দিকে দেখা করবার সিদ্ধান্ত নিলো। সায়াহ্নকেও বলে দেওয়া হয়েছে। সায়াহ্ন সেই হিসেবে বেরিয়েছে। সায়াহ্নর পৌঁছুতে একটু দেরি হয়ে গেল। সে রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখলো মৌন একা আসেনি, সাথে আরেকজন মেয়েও রয়েছে। শান্তস্নিগ্ধ খুব সাধারণ একটা মেয়ে। সায়াহ্ন এগিয়ে গিয়ে সহাস্যে চেয়ার টেনে বসলো।
চলবে…