হারাতে_চাই_না_তোমায় #পর্ব-২৫,২৬

0
886

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-২৫,২৬
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা

২৫
——-
৫ বছর পর
কথায় আছে সময় ও স্রোত করো জন্য অপেক্ষা করে না।সময় সময়ের নিজ গতিতে চলে।তাকে কেউ আটকাতে পারে না।সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে মানুষও নিজ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।কেউ করো জন্য বসে নেই।সময়ের সাথে কিছু মানুষ অতীত ভুলে সামনে আগায় আবার কিছু মানুষ সেই অতীত আকড়ে ধরে পরে থাকে।যা হাজার ভুলতে চেয়েও পারে না।
তেমনি সবার জীবনের পালাক্রমে ৫ বছর চলে গেছে।এই ৫ বছর করো কাছে ৫ দিন তো আবার কারো কাছে ৫ যুগ।হাসি,কান্না,রাগ,অভিমান,ঝগড়া নিয়ে সবার জীবন থেকে পার হয়ে গেছে ৫ বছর।
———
রাফসান আর আয়ানের পড়াশোনা শেষে এখন নিজেদের ব্যবসা তে যোগ দিয়েছে।
তন্নি আর মারিয়া এইবার অনার্স ফাইনাল দিবে।আর
আরিশা বিদেশে পড়াশোনা আরো এক বছর আগে শেষ হয়েছে।দেশে আসবে আসবে করেও এখনে আসছে না।
———
রাফসান পড়াশোনা শেষ হয়েছে ২ বছর।এখন নিজেদের ব্যবসা সামলায়।যেহেতু ওর আর মারিয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে ছিলো তাই রাফসান চেয়েছিলো আরো ১ বছর আগে বিয়ের কাজ সেরে ফেলতে।কিন্তু মারিয়া সাফ সাফ মানা করে দিয়েছে।কারণ হিসেবে বলেছে,
”’আরু যতো দিন না পর্যন্ত না আসছে ততো দিন আমি বিয়ে করবো না।””।মারিয়ার এই কথা শুনে আরিশা অনেক বার বুঝনোর চেষ্টা করেছে ওর জন্য যেনে অপেক্ষা না করে।ও কবে আসবে তার ঠিক নেই।কিন্তু মারিয়া তা মানতে নারাজ।সবাই মারিয়াকে অনেক বুঝিয়েছে কি ও কারো কথ মানে নি।তাই সবাই ওর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে।আরিশাও বলেছে ও চেষ্টা করবে।
তন্নিদের এবার অনার্স ফাইনাল।এই কয়েক বছরে অনিম আর তন্নির জীবনে নতুন কিছু শুরু হয়নি।ওদের দেখলে কেউ বলতেই পারবে না ওদের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।ওরা নিজেরা নিজেদের মতো চলছে।ওদের জীবনে নতুন কিছু শুরু হয়নি বললে ভুল হবে তন্নি তা করতে চায়নি।কারণ তন্নির রাগ,অভিমান এখনো কমে নি।এই ৫ বছরে অনিম অনেক চেষ্টা করেছে সব ঠিকঠাক করতে কিন্তু তন্নি কোনে সুযোগ দেয়নি।অনিম যা করেছে তার জন্য তন্নি অনিমকে ক্ষমা করবেনা।যদিও অনিম তার ভুলের জন্য অনেকবার ক্ষমা চেয়েছে।কিন্তু তন্নি মুখে কোনো রা করে নি।ওইদিনের পর থেকে কোথাও বের হতে হলে অনিমকে শুধু টেক্সট করে দেয় ও কোথায় যাচ্ছে।এছাড়া আর কোনো কথা বলে না।তন্নির রাগ,অভিমান কমতো যদি অনিম ওকে নিজের মুখে ‘ভালোবাসি’ বলতো কিন্তু অনিম তা একবারো বলেনি।যদিও অনিমের কর্মকান্ডে এই ৫ বছরে তন্নি বুজেছে যে অনিম ওকে ভালোবাসে।কিন্তু তাতে কি মুখে তো স্বীকার করেনি এখনো।তাতেই যেনো তন্নির রাগ আরো বাড়ছে।আসলে অনিমের ক্ষমা চাওয়ার কারন হলো,’ওদের এনগেজমেন্টের প্রায় ৬ মাস পর অনিম একদিন বাজারে এসেছিলো।অনিম বাজারে এসে দেখে তন্নির বাবাকে।ওনাকে দেখে অনিম এগিয়ে গিয়ে সালাম দিয়ে কেমন আছে এসব জিজ্ঞেস করছে আর আরো কিছু কথা বলছে।অনিমদের কথা বলার এক পর্যায়ে তন্নির বাবর পাশে একটা ছেলে এসে দাঁড়ালো। ছেলেটাকে দেখে অনিমের ভ্রু কুচকে এলো।ওর মন বলছে ছেলেটাকে কোথাও দেখেছে কিন্তু মনে করতে পারছে না।অনিমের ভাবনার মাঝেই তন্নির বাবা বললো এটা তন্নির ফুফাতো ভাই।নাম শাকিল।এবং জানলো তন্নিকে নাকী শাকিল নিজের বোনের মতো ভলোবাসে।অনিম আর শাকিল পরিচয় হয়ে কথা বলার পর এখন যাওয়ার সময় হয়েছে।অনিম বিদায় নিতে গেলেই তন্নির বাবা আটকায়।অনিমকে জোর করে তন্নিদের বাসায় নিয়ে যায়।অনেক বার জোর করাতে অনিমও আর বাধা দেয় নি।তন্নিদের বাসায় অনিমরা পৌঁছলে বাসায় ঢুকতেই অনিমের একটা কল আসাতে ও একটু পিছনে পরে যায়।যার ফলে বাসার ভিতরে কী হচ্ছে বুজতে পারেনি।অনিম ১ মিনিটের মাথায় কথা বলে ভিতরে ঢুকে শুনে তন্নি খুশি হয়ে ‘শাকিল ভইয়া’ বলে দৌড়ে এসে শাকিলের হাত জড়িয়ে ধরে।শাকিলও বোনকে আদরের সহিত মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।অনিম একটু পিছনে পরাতে তন্নি অনিমকে দেখতে পায়নি।অনিমও তন্নির গলার শব্দ পেয়ে হাসি মুখে সামনে তাকিয়ে দেখে তন্নি শাকিলের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।এটা দেখার পর অনিমের হাসি মুখে রাগের রক্তিম আভা ফুটে উঠলো।অনিমের ইচ্ছে করছে তন্নিকে কষে একটা থাপ্পড় মারতে।কিন্তু ও এখন কোনো ঝামেলা চায় না তাই চোখ বন্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।অনিম চোখ বন্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণে যখন এনেছে তখন ওর চোখের সামনে ভেসে উঠলো ওইদিন শপিংমলের কাহিনী।এবং সাথে সাথে চোখ মেলে শাকিলের দিকে তাকিয়ে দেখে সেই ছেলেটা।অনিম ভাবছে তাহলে এটা শাকিল ছিলো।এবং বুঝলো কী ভুল করেছিলো ওইদিন।কিন্তু তন্নিতো ওর ভুল একবারো ভাঙায় না।অনিমকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তন্নির মা ভিতরে আসতে বললো।অনিম ভিতরে এলো।তন্নিও এতোক্ষন হাসি মুখে ছিলো যখন অনিমের নাম শুনলো তখন ওইদিকে তাকিয়ে দেখে অনিম দাঁড়িয়ে আছে।অনিমকে দেখে তন্নির মুখ থেকে হাসি উবে গেলো আর সাথে সাথে শাকিলের হাত ছেড়ে দিলো।তন্নিকে এমন করতে দেখে অনিমের মাঝে অপরাধ বোধ তৈরী হলো।তন্নি একবার অনিমের দিকে তাকালো।তাকিয়ে দেখে অনিম কেমন অপরাধী চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।তন্নি আর দাঁড়িয়ে না থেকে রুমে চলে গেলো।তন্নিকে এভাবে যেতে দেখে সবাই অবাক হলো।আবার ভাবলো হয়তো অনিমকে দেখেছে তাই লজ্জায় ভিতরে চলে গেলো।এই বলপ সবাই হাসলো কতোক্ষ। কিন্তু অনিম জানে কেনো তন্নি এভাবে চলে গেলো।অনিমের এখন কষ্ট হচ্ছে।তন্নি আর একবারো এলো না অনিম যতোক্ষন ছিলো।অনিম অনেকবার চেষ্টা করেছিলো ওর সাথে দেখা করার কিন্তু পারেনি।শেষে হতাশ হয়ে চলে গেলো।’ সেই পর থেকে অনিম প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছে তন্নির রাগ ভাঙ্গীয়ে ওর মনে জায়গা করার।কিন্তু তন্নি যেনো মনে করে নিয়েছে অনিমকে কোনো সুযোগ দেবে না।কিন্তু অনিমও হাল ছাড়েনি।প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে।অনিমের পরিবার একবার বলেছিলো ওদের বিয়ের কাজ সেরে নিতে কিন্তু তন্নিও বলে দিয়েছে ‘আরু না আসা পর্যন্ত ও বিয়ে করবে না’।অনিমও এই কথা শুনে কিছু বলেনি।কারণ অনিমও চায় না বোনের অনুপস্থিতিতে ওর বিয়েটা হোক।তাই তন্নিকে কেউ জোর করেনি।পড়াশোনাও শেষ হোক আরুও আসুক তখন ভাবা যাবে।
———
আয়ান এখন অন্য এক আয়ান হয়ে উঠেছে।এই আয়ানকে এখন কেউ চিনবে না।সব কিছুতেই আয়ানের পরিবর্তন এসেছে।চলাফেরা,চেহারা,দায়িত্ব সব কিছুতেই।শুধু পরিবর্তন আসে নি আরুর প্রতি ভালেবাসার।আয়ান এখন ওর বাবার অফিসের দায়িত্ব নিয়েছে।বন্ধুদের সাথে আড্ডাও এখন বাতিলের খাতায়।আগে স্টাইল করে দাড়ি রাখতো কিন্তু এখন চাপ দাড়ি রাখে।তাতে যেনো চেহারা সৌন্দর্য দ্বিগুন বৃদ্ধি পেয়েছে।এখন যে দেখবে এক দেখায় ক্রাস খাবে।কিন্তু আয়ান আগের থেকে গম্ভীর,আরো বেশি রগচটা হয়ে গেছে।কারো সাথে দরকার ছাড়া কথা বলে না।আয়ানের রাগের জন্য অফিসের সবাই ওকে ভয় পায়।কেউ ভুল করলে তার উপর দিয়ে যানো ভূমিকম্প যায়।আয়ান দিনের বেলা যতোই শক্ত থকুক না কেন রাতে সেই শক্ত আবরণ সরে গিয়ে যেনো একটা উন্মাদ হয়ে হয়ে উঠে।মাঝে মাঝে নিজেকে আঘাত করতেও দুইবার ভাবে না।দিনের আয়ানের সাথে রাতের আয়ানের কোনো মিল নেই।
৩ বছর আগে থেকে আয়ান এমন হয়ে গেছে।[কী কারন তা সামনে জানতে পারবেন]
আরুর স্মৃতি এখন আয়ানকে বড্ড যন্ত্রণা দেয়।রাতের নিস্তব্ধতা যখন ছড়িয়ে পরে তখন আয়ানও অন্য আয়ানে পরিনত হয়।যেখানে কষ্ট।সুখের কোনো চিহ্ন নেই।আয়ানের পুরো রুমে এখন শুধু আরুর ছবি।সেই ছবির দিকে তাকিয়ে চোখর পানি ফেলে আর পুরনো স্মৃতিগুলো মনে করে।কিছু স্মৃতি খুব সুখকর ছিল আবার কিছু স্মৃতি এতোই যন্ত্রণার ছিল যে ভাবতেই বুকটা কষ্টে ভরে ওঠে।কতোটা যন্ত্রণা দিয়েছিলো ও আরুকে সে-সব ভাবে আর চোখের পানি ফেলে।আরুর সেইদিন বলা কথা গুলো আয়ানের মনে যেনো দাক কেটে রয়েছে।আরু বলেছিলো,””আমার প্রতি তোমার করা অবহেলা গুলো তোমাকে পোড়াবে।আমাকে মিস করবে তুমি।আমার কাছে ফিরতে চাইবে কিন্তু তখন আমি থাকবো না আর তোমার কাছে ফিরবো।””
আয়ান চিৎকার করে বলছে আর কাঁদছে,””আরু দেখো সত্যি আমি আজকে পুরছি।তোমার সব কথা সত্যি মিলে গেছে।আমার কাছে ফিরে এসো কথা দিচ্ছি কোনো দিন তোমাকে কষ্ট দিবো না।প্লিজ ফিরে এসো।””
আয়ানের সেই দিনের কান্নাতে ওর বাবা মা ভয় পেয়েছিলো কি কারণ তারা জানতে চেয়েছে কিন্তু আয়ান বলেনি।কিন্তু আয়ান দিন দিন কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছিলো তা দেখে আয়ানের বাবা মা আর ধৌর্য না ধরে রাফসানকে ডেকে পাঠায়।কি কারণে আয়ান এমন করছে তা বলতে।রাফসান প্রথমে বলতে চায় নি পরে আয়ানের বাবা মা’র জোড়াজুড়িতে সবটা বলে দেয়।সব শুনে আয়ানের বাবা মা স্তব্ধ হয়ে যায়।ভাবতে পারছে তাদের ছেলে এমন কাজ করছে।তাদের ছেলের প্রতি রাগ বেরে উঠছে।কিন্তু পরক্ষনে ছেলের এমন পাগলামি দেখে কষ্টে বুক ভরে উঠে।

এই ৩ বছরে আয়ান একই পাগলামি করে রাতের বেলা কিন্তু দিনের বেলা ওকে দেখলে বুঝা যায় না রাতে কী হয়েছে।আজো আয়ানের রুম থেকে সেই চিৎকার ভেসে আসছে।আয়ানের চিৎকার শুনে আয়ানের বাবা মা এসে দরজার সামনে দাঁড়ায়।কিন্তু দরজা ভিতর থেকে লক।ওনারা দরজায় কড়া নাড়লো আর বললো,
আফিয়া রহমানঃ বাবা কী করছিস তুই।দরজাটা খুল।
আতিক রহমানঃ এমন পাগলামি করলে সব ঠিক হবে না আয়ান।মাথা ঠান্ডা করো।আর এসব পাগলামি বাদ দাও।
কোনো শব্দ আসছে না রুম থেকে।কিছুক্ষন পর আয়ান বললো,
আয়ানঃ আমি ঠিক আছি।তোমারা যাও।গিয়ে ঘুমিয়ে পরো।
আফিয়া রাহমানঃ তুই আগে দরজাটা খুল বাবা।
আয়ানঃ বললাম তো যাও।আমি ঠিক আছি।

আয়ানের বাবা মা রুমে চলে আসে।কারণ তারা জানে ছেলেকে বলে কোনো লাভ হবে না।আয়ানের মা রুমে এসে ওর বাবাকে বললেন,
আফিয়া রাহমানঃ কিছু একটা করো না।এভাবে ছেলেটাকে দেখতে আর ভালো লাগছে না।
আতিক রহমানঃ কী করবো বলো।কিছু মাথায় আসছে না আমার।
আফিয়া রাহমানঃ আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয়।
আতিক রহমানঃ কী?
আফিয়া রাহমানঃ…………………….
আতিক রহমানঃ কী বলছো তুমি?তোমার মাথ ঠিক আছে?
আফিয়া রাহমানঃ ছেলেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরাতে এর চেয়ে ভালো আর কোনো উপায় নেই।…আর এই কথাটা অনেকদিন আগে থেকেই আমার মাথায় এসেছে।
আতিক রহমানঃ ওরা আমাদের কথা মানবে এটা তোমার কেন মনে হলো?সব শুনার পর উনারা যদি অন্য কোনো স্টেপ নেয় তখন?
আফিয়া রাহমানঃ আমরা চেষ্টা করে তো দেখতে পারি।
আতিক রহমানঃ বেশ কাল না হয় যাবো তৈরি থেকো।
এই বলে উনারা ঘুমিয়ে পরলো।
————————
রাত এখন ১০ টা
আরু ফোনে কথা বলছে ওর মা’য়ের সাথে।
আদিরা আহমেদঃ তুই কী ফিরে আসবি না দেশে?
আরিশাঃ আসবো তো।কেনো?
আদিরা আহমেদঃ তাহলে এখনো আসছিস না কেনো?
আরিশাঃ আমি এখানে একটু গুছিয়ে নি তারপর আসবো।
আদিরা আহমেদঃ কী গোছানো লাগবে তোর?আমাদের একবারো দেখতে ইচ্ছে করে না তোর?সেই যে গিয়েছিস একবারো আসতে মন চায় না?তোর জন্য অনিম এখনো বিয়ে করতে চায় না।
আরিশাঃ মন চায় না কে বললো?আসবো।আর ভাইয়াকে বলো বিয়ে করে নিতে।আমার জন্য কেন অপেক্ষা করছে।আমি তো বলছি বিয়ে করে নিতে।
আদিরা আহমেদঃ আমরা সবাই তোর অপেক্ষায় বসে আছি আর তুই বলছিস তোকে ছাড়া সব করতে।আমরা সার্থপর নই।……আচ্ছা বেশ তোর আসতে হবে না।মরে গেলে মরা মুখটা দেখতে আছিস।

বলেই ফোন কেটে দিলেন।আরু পরেছে বিপাকে।কী করবে এখন।ও দেশে গেলে যদি আবার ওর অতীত সামনে আসে।এতো গুলো বছর তো ভালোই ছিলো এখন আবার যদি তা সামনে এসে র মনকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়।আরুর ভাবনার মাঝেই কেউ ওর কাঁধে হাত রাখে।তাকিয়ে দেখে ইশিকা।
ইশিকাঃ অতীতের ভয়ে আর কতো দিন পালিয়ে থাকবি?
আরুঃ পালাচ্ছি না তো।শুধু ওইটাকে আর সামনে আনতে দিতে চাই না।
ইশিকাঃ তো এটাকে পালিয়ে বলা বলে না?
আরুঃ জানি না আমি।
ইশিকাঃ তুই তো শক্ত হয়েছিস তাই না?তাহলে তুই দেশে যাবি যদি তোর অতীত সামনে আসে তাহলে তাকে দেখিয়ে দিবি তুই সব ভুলে ভালো আছিস।
আরুঃ কিন্তু….
ইশিকাঃ আর কোনো কথা নয়।তুই দেশে যাবি এটাই সিউর।….ফুফা ফুপির কতা চিন্তা কর।
আরুঃ…….. বেশ যাবো।
ইশিকাঃ গুড।জানা এটা এখন সবাইকে।

ইশিকা চলে গেলো।আরুর আবার কল করলো ওর মা’কে,
আরুঃ আমি আসছি মা।এবার খুশি তো।
আদিরা আহমেদঃ খুব
আরু ফোন কেটে দিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

১ সপ্তাহ পর,
দুপুরে আয়ান অফিসে বসে কাজ করছিলো তখন ওর একটা কল আসে।রিসিভ করে যা শুনে তাতে ওর মুখের হাসি ফুটে উঠে।আয়ান শুধু বলে,’ফলো রেখো আর সব খবর ঠিকটাক মতো দিয়ো’।কল কেটে দিয়ে আয়ান বলে,
ওয়েলকাম জান।গেট রেডি নতুন করে আমার লাভ টর্চারের জন্য।

চলবে…….

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-২৬
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা

বাংলাদেশ সময় রাত ১ টা।প্রায় অনেকক্ষন আগে আরুর প্লেন ল্যান্ড করেছে।আরু বাহিরে এসে দেখে ওর বাবা আর ভাই দাড়িয়ে আছে।আরু তাদের দেখে তাড়াতাড়ি আসলো।এসে ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।আরুর বাবাও মেয়েকে এতোদিন পর কাছে পেয়ে পরম আদরে জড়িয়ে নিলো।আরুর বাবা বললো,
আশরাফ আহমেদঃ আমার মা’টা কেমন আছে?আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো?
আরুঃ আমি একদম ঠিক আছি।আর আসতেও কোনো অসুবিধা হয়নি।
আশরাফ আহমেদঃ বেশ অনেকটা জার্নি করে এসেছো।এখন বাসায় চলো।

আরু এবার ওর বাবাকে ছেড়ে ওর ভাইয়ের দিকে তাকালো।ভাইয়ের কাছে গিয়ে ভাইকেও জড়িয়ে ধরলো।অনিমও বোনকে আদরের সহিত জড়িয়ে নিলো।অনিম বললো,
অনিমঃ কীরে পেত্নী কেমন আছিস?
আরুঃ ভালো।তুই?
অনিমঃ এতোদিন তো ভালো ছিলাম।কিন্তু এখন মনে হয় ভালো থাকতে পারবো না।(দুঃখী ফেইস বানিয়ে)
আরু অনিমকে ছাড়িয়ে ভ্রু কুচকে অনিমকে বললো,
আরুঃ মানে?কী হয়েছে?
অনিমঃ এইযে এতো দিন তুই ছিলি না কী শান্তিতে ছিলাম।কিন্তু এখন তুই পেত্নী এসে গেছিস আর ভালো থাকি কীভাবে বল?
আরুঃ তাই না?দাঁড়া…
বলেই অনিমের চুল টানতে লাগলো।অনিমও ‘ছাড়’
‘ ছাড়’ বলে চেঁচাচ্ছ।আশেপাশের সব মানুষ ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।আরুর বাবা এবার বললো,
আশরাফ আহমেদঃ আহ!কী শুরু করেছিস তোরা?আসতে না আসতেই ঝগড়া।সবাই দেখছে ছাড়।

আরু আর অনিম চারদিক তাকিয়ে দেখলো সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।তা দেখে আরু অনিমকে ছেড়ে দিয়েছে।অনিম বললো,
অনিমঃ দেখলি তোর মতো পেত্নীর জন্য আজ আমার মান-সলেমাম সব গেলো😩
আরুঃ বেশ হয়েছে।
আশরাফ আহমেদঃ আবার ঝগড়া করছো
চুপ।বাসায় চলো।তোমাদের মা অপেক্ষা করছে।

ওরা আর কিছু না বলে এয়ারপোর্টে থেকে বেড়িয়ে পরে।এখন উদ্দেশ্য বাসায় যাওয়া।আরুর মন খুশিতে ভরে উঠলো।আজ কতোদিন পর ও নিজের সেই বাড়ির যাবে,নিজের রুমে নিজের প্রিয় জিনিস গুলো দেখবে।মা’য়ের হাতের রান্না খাবে কতোদিন পর।আহা! কী আনন্দ।
আরু একা দেশে এসেছে।ইশিকাদেরও আশার কথা ছিলো কিন্তু টিকিট পায়নি তাই এক সাথে আসতে পারেনি।ইশিকারা আসবে আরো ১৫ দিন পর।আগে জানলে হয়তো ওরাও আরুর সাথে আসতো কিন্তু আরু টিকিট কাটার পর ওর মা বলেছে সবাই আসতে অর্থাৎ ওর মামা মামিকেও আসতে বলেছে।কিন্তু হটাৎ ওদের কেন যেতো বললো তা আরু জানতে চেয়েছিলো কিন্তু ওর মা বলে নি।শুধু বলেছে দেশে আসলে বুঝবে।তাই আরুও আর জিজ্ঞেস করেনি।আরু যে দেশে আসবে এটা তন্নি আর মারিয়া জানে না।আরু ইচ্ছে করেই জানায়নি।কারণ ও সারপ্রাইজ দিবে ওদের তাই।আরুরা বাসায় এসো পৌঁছালো।আরু বাসায় এলে ও মা’কে জড়িয়ে ধরলো।আরুর মা বললো,
আদিরা আহমেদঃ এতোদিনে আসতে মন চাইলো বুঝি?
আরুঃ মনতো সেই কবে থেকে আসতে চেয়েছিলো কিন্তু কিছু কাজের জন্য আশা হয়ে উঠে নি।কিন্তু এসেছি তো।এবার খুশি?
আদিরা আহমেদঃ হুহ।ইমোশনাল ব্লেকমেল না করলো তো কোনোদিন আসতি না।
আরুঃ তাই বুঝি?
আদিরা আহমেদঃ বাবা মা’কে তো দেখতে ইচ্ছে করে না।তাই আসতে মন চাইলো না।
আরুঃ কী বলছো তুমি এসব?
আদিরা আহমেদঃ ঠিকি বলছি।
আশরাফ আহমেদঃ আচ্ছা অনেক হয়েছে।মেয়েটা অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছে।খেয়ে রেস্ট করতে দাও।আর আরু মা যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো।
আরুঃ আচ্ছা বাব।

আরু উপরে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।কিছু দূর গিয়ে ফিরে তাকিয়ে ওর মা’কে বললো,
আরুঃ মা আমার রুম.?
আদিরা আহমেদঃ আগের মতোই আছে সব।কিছু সরাই নি আর না কিছু নতুন কিনেছি।
আরুঃ থ্যাংক ইউ মা।

আরু খুশি মনে চলে গেলো।ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ওর মা ওর বাবাকে বললো,
আদিরা আহমেদঃ আমাদের মেয়েটা কী সত্যি ভালো আছে?
আশরাফ আহমেদঃ অবশ্যই ভালো আছে।আমাদের মেয়ে যথেষ্ট স্ট্রং।ও ভেঙে পরে না কিছুতে।
আদিরা আহমেদঃ মেয়েটা কীভাবে সবার সামনে হাসি খুশি থাকে নিজের কষ্ট লুকিয়ে?যা নিজের বাবা মা’কেও দেখতে দেয় না।
আশরাফ আহমেদঃ আমাদের মেয়ে বড় হয়ে গিয়েছে।তাই সব বাস্তব গুলো বুঝতে শিখেছে।
আদিরা আহমেদঃ হুম…।আল্লাহর কাছে দোয়া করি আমার মেয়েটা যেনো সব সময় ভালো থাকে আর ভালো একটা জীবনসাথী পায়।
আশরাফ আহমেদঃ হুম।

বলেই দুজন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চলে গেলো।আরুর মা গেলো ওর খাওয়ার ব্যবস্তা করতে।
—————–
আরুর বড় একটা ছবির সামনে দাঁড়িয়ে আছে একজন।হাতে সিগারেট।আরুর ছবিটা ছুয়ে বললো,
লোকঃ ওয়েলকাম জান।অনেক দূরে দূরে ছিলে আর না।এবার আমার খাঁচায় তোমায় বন্দী হতে হবে।কষ্ট যেমন দিয়েছি তেমন ভালোবাসা দিয়ে তা পুষিয়ে দিবো।তুমি শুধু আমার।আমার পাগলামি এতোদিন দেখো নি তুমি।এবার দেখবে।আর পালিয়ে যেতে দিবো না তোমায়।আর #হারাতে_চাই_না_তোমায়।তবে আমারও অনেক শাস্তি পাওনা আছে।ওইগুলাও আমি তোমার কাছ থেকে উশুল করে নিবো।কিন্তু সেটা আমার কছে থেকে নিবো।দূরে গিয়ে নয়।
বলেই আরুর ছবিতে একটা চুমু খেলো।
—————
আজ ৫ দিন পর।
এই ৫ দিন আরু শুধু ঘুমিয়ে,বাসার সবার সাথে হাসি খুশি আনন্দতে কাটিয়েছে।৫ বছর পর বাবা মা ভাইকে পেয়েছ আনন্দ না করলে হয়।বাবা মা ও কিছু বলে নি এই বিষয়ে।তবে ওনারা অনেকবার বলতে চেয়েছে অমিমের বিয়ে ঠিক হয়েছে।কিন্তু একবারো বলতে পারেনি।তাই ভেবেছে আজ সন্ধ্যা বেলা আরুকে নিয়ে সোজা তন্নিদের বাসায় যাবে।দুজনের দেখাটাও হবে আর সারপ্রাইজডও হবে।তাই আরু সকালে ব্রেকফাস্ট করার সময় ওর মা বললো,
আদিরা আহমেদঃ আরু আমরা বিকালে এক জায়গায় যাবো।তৈরি থেকো।
আরুঃ কোথায় যাবে?(ভ্রু কুচকে)
আদিরা আহমেদঃ সেটা এখন বলা যাবে না।গেলে দেখবে।
আরুঃ কিন্তু জানলে সমস্যা কোথায়?
আদিরা আহমেদঃ আছে অনেক সমস্যা আছে।
আরুঃ বেশ যাবো।কিন্তু আমি ভেবেছিলাম আজ তন্নি আর মারিয়ার সাথে দেখা করতে যাবো।
আদিরা আহমেদঃ সব হয়ে যাবক চিন্তা করো না।
আরুঃ কী সব হয়ে যাবে?বুঝলাম না।
আদিরা আহমেদঃ কিছু না।যেটা বললাম সেটা যেনো মাথায় থাকে।আর তোমার জন্য সেখানে সারপ্রাইজও আছে।
আরুঃ সত্যি?তাহলে কী বলো না।
আদিরা আহমেদঃ হুম সত্যি।আরে বলে দিলে সারপ্রাইজ থাকে নাকী?

আরু নাক ফুলিয়ে ফেললো।একটু বললে কী হতো কিন্তু পরে সারপ্রাইজের কথা শুনে খুশি হয়ে গেলো।তারপর খেতে লাগলো।খেতে খেতে দেখলো অনিম কেমন মিটমিট হাসছে।মনে হচ্ছে লজ্জা পাচ্ছে।আরুর অনিমের দিকে গভীর ভাবে দৃষ্টি দিয়ে সন্দেহের চোখে বলে,
আরুঃ ভইয়া তুই এমন হাসছিস কেনো?মনে লজ্জা পাচ্ছিস?🤨
অনিমঃ আব..বেশি দেখিস তুই।আমেরিকা গিয়ে কী চোখের যুতি বাড়িয়েছিস নাকী।খালি আবল-তাবল দেখিস।
আরুঃ ওই খানে অনেক কিছই বাড়িয়েছি।সেটা তোর জানতে হবে না।কিন্তু এটা বল তুই এমন করে হাসছিলি কেনো?
অনিমঃ এখন কী হাসলেও তোর থেকে পারমিশন নিয়ে হাসতে হবে?
আরুঃ তার মানে তুই এতোক্ষন সত্যি হাসছিলি?প্রথমে মিথ্যা বললি কেনো?

অনিম কিছু না বলে খাওয়া শেষ করে উঠে বললো,
অনিমঃ আমার খাওয়া শেষ।আমি গেলাম অফিসে।আর মা তোমার মেয়ের মাথা,চোখে ঠিক রাখতে বলো।কীসব উল্টো পাল্টা দেখে বলে।পেত্নী একটা।

অনিম তাড়াতাড়ি কেটে পড়লো সেখান থেকে।আর যাওয়ার আগে আরুর মাথায় একটা গাট্টা মেরে গেলো।আরু ‘আহ’ করে উঠলো।আর মাথায় ডলতে ডলতে বললো,
আরুঃ বান্দর।দেখিস তোর জীবনেও বিয়ে হবে না।
অনিমঃ সেটা আজকের পর বুঝা যাবে।

আরুর কানে কথাটা এলো না ঠিক মতো তাই শুনলো না।খেয়ে উপরে চলে গেলো।
———-
আয়ান খুশি মনে নিচে নামলো।আজ দুদিন যাবত আয়ানের রাতে কোনো চিৎকার শুনা যায় না।ওর বাবা মা ভেবেই নিয়েছে তাদের ছেলে সুস্থ জীবনে ফিরে আসছে।এতেই তারা খুশি।আয়ানকে দেখে ওর মা বললো,
আফিয়া রহমানঃ আমার বাবার মুখটা আজ অনেক হাসি খুশি দেখাচ্ছে।কারণ কী?
আয়ানঃ তোমার ছেলে হাসি খুশি থাকার ঔষধ পেয়ে গেছে তাই।
আফিয়া রাহমানঃ বাহ!দারুণ খবর তো।যাক এতোদিনে আল্লাহ মুখ তুলে চেয়েছেন
আয়ানঃ হুম মা দোয়া করো।তোমার ছেলে যেনো এবার সব কিছু আগের মতো ঠিক করতে পারে।সব যেনো আগের মতো হয়ে যায়।
আফিয়া রাহমানঃ আমার দোয়া সব সময় তোর সাথে আছে।
আয়ান খাওয়া দাওয়া করে অফিসে চলে যায়।আজ ওর মুখে হাসির ঝলক ফুটে উঠেছে।
————
আরু হা করে বসে আছে আর সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।ওর কান দিয়ে কথাটা যেতেই ওর মস্তিষ্ক বলতে লাগলো,’আরু যা শুনেছিস তা সত্যি’।আরু অবাক হয়ে ওর মা’কে বললো,
আরুঃ মা তুমি যা বলছো তা কী সত্যি?
আদিরা আহমেদঃ হুম একদম সত্যি।
আরুঃ কিন্তু কোথায়?কীভাবে?কেমনে কী?আমার মাথায় কিছু আসছে না।
আদিরা আহমেদঃ আসতেও হবে না এখন গিয়ে তৈরি হয়ে নে যা।
আরুঃ অহহ।এইজন্যেই সকালে ভাইয়া মিটিমিটি হাসছিলো।
আদিরা আহমেদঃ জানি না।

আরুর মা চলে গেলো।আরু ভাবছে একটু আগে যা শুনলো সেই ব্যাপারটা।আসলে একটু আগে হয়েছিলো কী,,,,আরু আজ সারাদিন ওর মা’র পিছ পিছ ঘুরেছে এটা জানার জন্য যে আজ ওরা কোথায় যাবে আর কী সারপ্রাইজ আছে।কিন্তু আরুর মা কিছু বলেনি সারাদিনে।শেষে বিকালে আরুর যন্ত্রণায় আর না পেরে বলেন,
আদিরা আহমেদঃ আজ তোর ভাইয়ের বিয়ের জন্য পাকা কথা বলতে যাচ্ছি।হয়েছে?
আরুঃ বিয়ে,পাকা কথা মানে কেমনে কী?
আদিরা আহমেদঃ যেমনে হয় তেমনে।এখন সর কাজ আছে।
আরুঃ আরে দাঁড়াও।ভাইয়ের বিয়ে আমাকে আগে বলোনি কেনো?আর মেয়ে কে?
আদিরা আহমেদঃ আগে বলি নি তোকে সারপ্রাইজ দিবো বলে।আর মেয়ে কে?সেটা গেলেই দেখতে পারবি।
আরুঃ তা বেশ তবে তুমি বললে পাকা কথা কিন্তু এনগেজমেন্ট না হয়ে পাকা কথা কেমনে কী?
আদিরা আহমেদঃ এনগেজমেন্ট হয়নি তোকে কে বলেছে?
আরুঃ মানে😳।এনগেজমেন্টও হেয়ে গেছে?
আদিরা আহমেদঃ হুম আরো আগে।

আরু এবার অবাক,কষ্টে,রাগে চোখে পানি এসে গেলো।ছলছল চোখে ওর মা’র দিকে তাকিয়ে বললো,
আরুঃ সব যখন হয়ে গেছে তাহলে আমাকে এখন বলছো কেনো?বিয়ে দিয়ে একবারে বলতে।যে ভাইয়ার বিয়ে হয়ে গেছে।
আদিরা আহমেদঃ আরে তুই কাঁদছিস কেনো?কান্না করারবকী আছে?
আরুঃ আমি তো তোমাদের মেয়ে না তাই আমাকে বলার কোনো প্রয়োজন মনে করোনি।বেশ আমিও বুঝেছি এবার সব।কেনো আমাকে এভাবে দেশে আসতে বলেছো?
আদিরা আহমেদঃ কী বুঝেছিস তুই?
আরুঃ এটাই যে তোমাদের ছেলের বিয়েতে তোমাদের মেয়ে থকবে না এটা লোকে দেখলে খারাপ ভাববে।লোকে যাতে কিছু না বলতে পারে তার জন্য আমাকে এনেছো তাইতো?তাহলে বেশ পাবে আমাকে অনুষ্ঠানে কিন্তু বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আমি আবার বেক করবো আমেরিকায়।
আদিরা আহমেদঃ আরু মা আমার এসব কী বলছিস তুই?
আরুঃ ঠিকি বলছি যেখানে আমার কোনো মূল্য নেই সেখানে আমি থাকতে চাই না।
বলেই নিজের রুমে চলে এলো।অনেক কষ্ট পেয়েছে।তাই ভইয়ের বিয়ে অথচ সে জানলো না।তারউপর আবার এনগেজমেন্টও হেয়ে গেছে।সেটাও জানতে পারলো না।কেউ ভালোবাসে না তাহলে থাকবে কেনো এখানে।চলে যাবে ও।
আরুর এমন কথা শুনে ওর মা’রও কষ্ট হচ্ছে।মেয়েটাকে না চাইতেও আঘাত দিয়ে পেলেছে।এমনিতেই মেয়েটার মনের উপর দিয়ে কী যাচ্ছে তা ও নিজেও জানে না তারউপর আবার নতুন করে এমন কথা শুনলো।কী করবে?কী করে মেয়েটার রাগ ভাঙাবে তাই ভবছে।পরে আরুর বাবা আর অনিমের কাছে কল দিয়ে সব বলে আর এটাও বলে তারা যেনো তাড়াতাড়ি আসে আর মেয়েটাকে বুঝায়।

সন্ধ্যা বেলা আরুর ঘর অন্ধকার করে বসে আছে।সবার উপর ওর খুব রাগ।কী করে পারলো এমন কথা লুকাতে।তাই ভেবে কান্না আসছে।এসব ভাবছে তখনই ওর কাঁধে কেউ হাত রাখে।তাকিয়ে দেখে অনিম।তাই আবার মুখ ঘুরিয়ে নিলো।অনিমও বোনের অভিমান বুঝতে পেরে এবার ওর পাশে বসলো।
অনিমঃ এমন পেত্নীর মতো মুখ করে বসে আছিস কেন?
আরুঃ তোর বিয়ের খুশিতে
অনিমঃ বাহ!বিয়ে আমার আর খুশি তোর।
আরুঃ একদম মজা করবি না যা এখান থেকে।
অনিমঃ আমার বাড়ি থেকে আমাকে যেতে বলছিস।
আরুঃ আমি তোকে বাড়ি থেকে যেতে বলি নি এই রুম থেকে যেতে বলেছি।
অনিমঃ এই বাড়ি আমার এই রুম আমার।আর তুই আমাকে যেতে বলছিস।আর যদিও যাই কোথয় যাবো?
আরুঃ ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন এই বাড়িটা আমারও আর এই রুমটাও আমার।আর গেলে তোর বউ এর কাছে যা।তবুও এখান থেকে যা।
অনিমঃ যাবোনা কী করবি তুই?
আরুঃ বেশ।থাক তুই আমি যাচ্ছি।

এই বলে আরু চলে যেতে নিলে অনিম ওর হাত ধরে আটকায়।আরুর হাত টেনে অনিমের পাশে আবার বসায়।এবার অনিম বলে,
অনিমঃ মা’য়ের সাথে রাগ করেছিস কেনো?আর মা’কে নাকী বলেছিস তুই আবার চলে যাবি?
আরুঃ হুম বলেছি।যেখানে আমার কোনো মূল্য নেই সেখানে আমি থাকবো কেনো?
অনিমঃ কে বলেছে তোর কোনো মূল্য নেই?তুই জানিস তুই যাওয়ার পর মা প্রতিদিন কাদতো তোর জন্য সারাদিন তোর জন্য চিন্তা মরতো।তুই ঠিক আছিস কী না, টিক মতো খাচ্ছিস কী না।আর মা’কে তুই আঘাত করলি।
আরুঃ………………..
অনিমঃ আজ তুই আবার চলে যাওয়ার কথা শুনে মা কতোটা কষ্ট পেয়েছিস জানিস?
আরুঃ পাক।তাও আমি চলে যাবো।
অনিমঃ আরু তুই মা’য়ের উপর রাগ করছিস?মা তো এখানে কিছু জানে না বা কিছু করেনি।রাগ করতে হলে আমার উপর কর।
আরুঃ মানে?
অনিমঃ মানে হলো,,,,
অতীত,,

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here