#ফ্ল্যাট_নাম্বার_নয়_ছয়পর্বঃ ৩৩
#Lamyea_Chowdhury
শায়েরীকে দেখে সায়াহ্ন ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। সাবলীলভাবে প্রশ্ন করল, “আপনি হঠাৎ এখানে?”
শায়েরী খানিক ইতঃস্তত করে বলল, “আমাকে একটু সময় দেওয়া যাবে? বিশেষ দরকার ছিল।”
সায়াহ্ন ভিতরে ভিতরে ভীষণ বিরক্ত হলো। কিন্তু সেটা প্রকাশ না করে বলল, “জ্বি বসুন।”
শায়েরী এগিয়ে এসে চেয়ার টেনে বসল। সায়াহ্নও নিজের চেয়ারে বসল। শায়েরী আমতা আমতা করে বলল, “আসলে কোথা থেকে শুরু করব ঠাহর করে উঠতে পারছি না।”
সায়াহ্ন শায়েরীকে নির্ভার করে বলল, “ইটস ওকে ঘাবড়ে যাওয়ার মতন কিছু হয়নি। যা হওয়ার ছিল তাই হয়েছে।”
শায়েরী ব্যাকুল হয়ে বলল, “মৌনকে প্লিজ ভুল বুঝবেন না। মৌনর এখানে কোনো দোষ নেই। আমি আর আমাদের আরেকজন বান্ধবী মিলে আরো একদিন আপনার সাথে দেখা করতে এসেছিলাম। এসে আপনার বদলে অন্য আরেকজনকে আপনার চেম্বারে আপনার’ই চেয়ারে বসে থাকতে দেখে আমরা ভেবেছিলাম তিনিই বুঝি আপনি। যেহেতু আমরা কখনো এর আগে আপনাকে দেখিনি তাই এই ভুলটা হয়ে গিয়েছিল। আর উনাকে রেস্টুরেন্টে দেখে পানি এতদূর পর্যন্ত গড়াল। আপনি হয়তোবা ভাবছেন মৌন আমার কথায় আপনার উপর কেমন করে সন্দেহ করে ফেলল। আসলে আমাদের বন্ডিংটাই এমন। তাছাড়া, সে কিন্তু পুরোপুরিভাবে বিশ্বাস করেছে এমনও নয়। আমি যখন বলেছিলাম আপনাকে একটা মেয়ের সাথে আপত্তিকর অবস্হায় দেখেছি তখন সে আমার কথা একদম’ই বিশ্বাস করেনি। বরং জোর দিয়ে বলেছে এমন হতেই পারে না। তারপরেও শিওর হওয়ার জন্যে আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছে।”
শায়েরী থামল, সায়াহ্ন তার মোবাইলটা হাতে নিয়ে দুরুকের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে দুরুকের ছবি বের করে মোবাইলটা শায়েরীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “দেখুন তো এই ছেলেটাকেই দেখেছিলেন কিনা?”
শায়েরী খেয়াল করল মোবাইলটা নেওয়ার সময় তার হাত অনবরত কাঁপছিল। আর যখন মোবাইল স্ক্রিনে দুরুকের হাসি হাসি ছবিটা দেখল শায়েরীর হাত ফসকে মোবাইলটা’ই পড়ে গেল। তার সাথে শায়েরীর হৃদয়খানাও মাটিতে আছড়ে পড়ল যেন। শায়েরী নিজেকে মনে মনে কড়া ধমক দিয়ে বলল, “প্রেমে আছাড় খেয়ে পড়বার সময় তোর নেই শায়েরী। হৃদয়টাকে একদম এদিকওদিক যেতি দিবি না। হৃদয় আর জল বেশিদূর গড়াগড়ি খাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কেননা শেষ পর্যন্ত তোকে তোর আম্মার পছন্দ করা পাত্রেই পাত্রস্থ হতে হবে। আর সেই পাত্র নিশ্চয় এত রূপবান আর সুদর্শন হবে না। হবে আধ বুড়া কেউ। আম্মা এই সুদর্শনকে দেখে বলবে এই ছেলে তো চ্যাঙ্গা পোলা। বিয়ে করতে হয় বেশি বয়সের কাউকে। কম বয়সী বর বউ চালাতে জানে না।”
শায়েরী হতাশ ভঙ্গিতে মোবাইলটা তুলে টেবিলে রেখে বলল, “স্যরি আচমকা হাত থেকে পড়ে গেছে।”
“ইটস ওকে। এখন বলুন দুরুককেই দেখেছিলেন?”
দুরুক শব্দটা এ ঘরের প্রতিটা দেয়ালে ধ্বনি প্রতিধ্বনি হয়ে শায়েরীর হৃদয়ে এসে ধাক্কা দিলো। শায়েরী দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, “হ্যাঁ দুরুককেই দেখেছিলাম।”
সায়াহ্ন টেবিলের উপর রাখা পেপারওয়েটটা হাত দিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে বলল, “সেদিন আমার সাথে কেন দেখা করতে এসেছিলেন?”
শায়েরী সসংকোচে বলল, “মৌন আসলে বিয়েটা করতে চাচ্ছিল না। কিন্তু, মুখ ফুটে আপনাদের বলতেও পারছিল না তাই বিষয়টা আপনাকে বুঝিয়ে বলতে এসেছিলাম।”
সায়াহ্নর ঠোঁটের কোণায় মৃদু হাসি ফুটে উঠল। সে দৃঢ় গলায় বলল, “আপনি আপনার বান্ধবীকে ভালোভাবে বুঝে উঠতে পারেননি। সে শিয়ালের চেয়েও ধূর্ত।”
শায়েরীর ভ্রুজোড়া কিঞ্চিৎ বাঁকা হলো। সে জানতে চাইল, “কি বলতে চাচ্ছেন?”
“আমি বলতে চাচ্ছি সে যে আমাকে সন্দেহ করেনি তা আমি বেশ ভালো করেই জানি। কিন্তু, সে বিয়ে ভাঙার শক্ত একটা কারণ খুঁজছিল আর আমাকে প্রবলভাবে রাগিয়ে দিতে চেয়েছিল। তা আমি রেগেছিও বেশ। এখনও রাগ কাটেনি। আমার কথা হলো আমি তো আর তার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে বিয়ে করব না। তার যেহেতু মত নেই তার মানে আমি যে করেই হোক বিয়েটা ভাঙতাম। তা সে জানতোও। এখন কথা হলো সে চাচ্ছিল ইনস্ট্যান্ট বিয়েটা ভাঙতে। এতেই আমার রাগ। কেননা, আমি বাবাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বিয়েটা ক্যানসেল করতাম। কিন্তু, এখন তার উপর চটে গিয়ে বাবাকে আমি সোজাসাপ্টা জানিয়ে দিয়েছি আমি মৌনকে বিয়ে করব না। এটাই আমার চূড়ান্ত এবং শেষ সিদ্ধান্ত। বাবা অত সহজে মানতেও চায়নি। শেষে না পেরে আমি বলেছি মৌনকে আরেকবার বিয়ের কথা বললে আমি আর কখনো বাড়িমুখোই হবো না।”
সায়াহ্ন ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর আক্রোশে বলল, “বাবা কতটা হার্ট হয়েছে এতে আপনি বুঝতে পারছেন? মৌন কাজটা মোটেও ঠিক করেনি। সে নিজে মহীয়সী সেজে রইল আর আমাকে করল অবাধ্য সন্তান।”
চলবে…