#ফ্ল্যাট_নাম্বার_নয়_ছয়পর্বঃ ৩২
#Lamyea_Chowdhury
শায়েরী নিয়মমাফিক সকাল সকাল বাসা থেকে বের হওয়ার আগে মৌনকে ডেকে বলল, “আদুরী একটা ভয়াবহ কাজ করে ফেলেছে।”
মৌন ঘুমন্ত আদুরীর দিকে তাকিয়ে বলল, “এই গাধী আবার কি করল?”
শায়েরী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “সেটা নাহয় তার কাছ থেকেই জেনে নিস। আমার হাতে না আছে সময় আর না আছে এসব কথা বলবার ইচ্ছা।”
মৌন শায়েরীর দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বলল, “খুলে বল তো।”
শায়েরী দু’হাত নেড়ে না করবার ভঙ্গিতে বলল, “আমি পারব না। বাদুরীকেই বল।”
শায়েরী সামনের দিকে পা বাড়াতেই মৌন খপ করে শায়েরীর হাতটা ধরে ফেলল। তারপর বিভ্রান্ত হয়ে বলল “আমাকে প্লিজ সবটা বল। এই মেয়েকে বিশ্বাস নেই। ভয় হচ্ছে আমার।”
শায়েরী নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইল। মৌন এবার জোরালোভাবে জানতে চাইল, “শিগগির বল।”
শায়েরী এবার থেমে থেমে পুরো ঘটনা খুলে বলল। মাঝে বারবার আটকাল তবুও শেষ পর্যন্ত বলে গেল। সব শুনে মৌন নিশ্চুপ, স্তব্ধ আর নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। শায়েরী বলল, “আমাদের কি করা উচিত এখন?”
মৌনর পেছনে ঘরের দেয়াল।
মৌন দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে চোখ বন্ধ করে খানিক কি যেন ভাবল। তারপর আচমকা চোখ খুলে আদুরীর বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে আদুরীকে ঘুম থেকে ডেকে তুলল। আদুরী ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে উঠে বসল। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “কি হয়েছে?”
মৌন সোজাসাপ্টা প্রশ্ন করল, “ঠিকঠাক ব্যবস্হা নিয়েছিস তো?”
আদুরী আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বলল, “কিসের ব্যবস্হা?”
মৌন সরু চোখে এক দৃষ্টিতে আদুরীর দিকে তাকিয়ে রইল। আদুরীর ঘুমের রেশ অনেকটাই কেটে গেল। শায়েরীকে খানিক দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আদুরীর ঘুম পুরোপুরিভাবে উবে গেল। মৌনর এই দৃষ্টির অর্থও সে বুঝতে পারল। মাথা নীচু করে নিরুত্তর বসে রইল সে।”
মৌন স্হির, গমগমে কণ্ঠে আবারো বলল, “কনসিভ করলে তখন কি করবি?”
মৌনর কথা শুনে শায়েরী শব্দ করে বলে ফেলল, “ইন্নালিল্লাহ্ আমার মাথায় তো এই প্রশ্ন আসেইনি। ইয়া আল্লাহ রক্ষা করো।”
আদুরী মাথা নীচু করেই মিনমিনে গলায় বলল, “এমন কিছু হবে না। আমি এতটাও কেয়ারলেস না।”
শায়েরী চটে গিয়ে বলল, “বাহ্ আপনি অনেক অনেক কেয়ারফুল। কত কেয়ারফুল তা বেশ ভালো করেই জানা আছে।”
মৌন শায়েরীকে থামিয়ে বলল, “আমি কথা বলছি শায়ু। তুই আপাতত চুপ থাক।”
শায়েরী চুপ হয়ে গেল। মৌন শান্ত অথচ দৃঢ় কণ্ঠে বলল, “কবে থেকে এরকম চলছে?”
আদুরী ঢোক গিলে বলল, “গতমাসে দুজন সীতাকুণ্ড গিয়েছিলাম। তখন….”
শায়েরী রাগে গজগজ করতে করতে বলল, “তুই আমাদের মিথ্যে বলেছিলি আদুরী? তুই বলেছিলি তোদের কলেজ থেকে যাচ্ছিস। অথচ, তুই তৈমুরের সাথে একা ঘুরতে গিয়েছিলি কোন আক্কেলে?”
আদুরী অপরাধীর সুরে বলল, “বিশ্বাস কর এমনি হুট করে আমাদের যাওয়া হয়েছিল। তোদের জানালে বাধা দিবি বলে জানাইনি। তাছাড়া, সেখানে গিয়ে যে আমরা দুজন দুজনের এত কাছাকাছি চলে আসব তা কে জানত?”
মৌন এবার বাগড়া দিয়ে বলল, “ঠিক আছে। তুই এবার ঘুমা। টেনশন নিস না।”
আদুরী কাতর কণ্ঠে জানতে চাইল, “বাবাকে বলে দিবি না তো তোরা?”
মৌন আদুরীকে আশ্বস্ত করে বলল, “ধুর পাগল বলব কেন? আঙ্কেলকে আমরা চিনি না? জানতে পারলে তোকে মেরেই ফেলবে। তবে তোর সাথে আমাদের কথা আরো বাকি আছে। শায়েরীর সময় চলে যাচ্ছে তাকে এখন বের হতে হবে। তাছাড়া, আজ আমারও ক্লাস আছে। তার উপর সারাদিনের রান্না বাকি। এখন ঝটপট আমরা আমাদের কাজগুলো সেড়ে ফেলি। তোর সাথে রাতে ঠাণ্ডা মাথায় কথা বলা হবে। আমরা থাকতে তোর ভয় কিসের বোন? তোর ভালোতেও যেমন তোর পাশে আছি তেমনি তোর মন্দতেও আছি।”
আদুরী মৌনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, “থেঙ্ক ইউ সো মাচ সিস। তোরা সত্যই সিস্টারস ফর্ম এনাদার মাদার।”
মৌন ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে আদুরীর পিঠে হাত বুলিয়ে বলল, “উই লাভ ইউ।”
আদুরী মৌনকে ছেড়ে দিয়ে আহ্লাদের সুরে বলল, “আজ কি খাওয়াবি?”
মৌন বলল, “সিজলিং হবে নাকি?”
আদুরী নিজের পেটে হাত বুলিয়ে বলল, “ইয়াম। টামি পুরা খালি হয়ে গেছে। রান্নাঘরে যান মিস শেফ।”
মৌন হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “ওকে মাই বস।”
আদুরী কম্বল টেনে চোখ বুজে শুয়ে বলল, “রান্না হলে ডাক দিস।”
মৌন সায় দিয়ে বলল, “অবশ্যই।”
তারপর শায়েরীকে নিয়ে তাদের শোবার ঘর থেকে বের হয়ে গেল। কণ্ঠস্বর খাদে নামিয়ে বলল, “এই মেয়েকে কোনোপ্রকার চাপাচাপি করা যাবে না। যা করতে হবে ধীরে সুস্হে বুঝে শুনে করতে হবে।”
শায়েরী তেমন কিছু বুঝল না তবে মৌনর উপর তার বেশ আস্হা আছে। শায়েরী শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল। তারপর বেরিয়ে পড়ল প্রতিদিনকার জীবনযুদ্ধে। তবে আজ শায়েরীর প্রতিদিনকার রুটিনে খানিক নতুন তরঙ্গ যোগ হলো। সবার আগে সে গেল সায়াহ্নর চেম্বারে। সায়াহ্নর সাথে দেখা করাটা এখন তার কাছে ফরয মনে হচ্ছে। সায়াহ্নর কার্ডটা শায়েরীর ব্যাগেই ছিল। শায়েরী যখন হসপিটালে পৌঁছাল তখন সকাল আটটা বাজে। শায়েরী ভেবেছিল কার্ডে রোগী দেখার সময় আটটা হলেও সায়াহ্ন হয়তোবা আরো পরে আসবে। কিন্তু, দেখা গেল সায়াহ্ন আরো আগে এসেই বসে ছিল। শায়েরী মনে মনে বলল, “ইম্প্রেসিভ। মৌনর সাথে ভালোই তো মানাতো।”
সকাল সকাল চলে আসায় সিরিয়াল নিতে হলো না।শায়েরী’ই প্রথম চেম্বারে ঢুকল। ঢুকার আগে শায়েরীর হঠাৎ করে সেদিনের সেই নীলচোখা ছেলেটার কথা মনে পড়ল। মনের অজান্তেই সে বিড়বিড় করে বলল, “আজো যদি সে থাকত!”
চলবে….