#ফাগুন_প্রেমপর্বঃ ৫৯+৬০

0
337

#ফাগুন_প্রেমপর্বঃ ৫৯+৬০

লেখনীতেঃ Bornali Suhana
💛
💛
ইভান পিছু পিছু কয়েকবার ডাকে দাঁড়ানোর জন্য। কিন্তু বর্ণালীর হাত-পা কাঁপতে শুরু করেছে। এখানে আর দাঁড়ানো যাবে না। ইভান দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁত দিয়ে নীচের ঠোঁট কামড়ে মিটিমিটি হাসছে। বর্ণালী ঈশার রুমে এসে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ায়। লজ্জায় মাটিতে মিশে যাচ্ছে। উঁকি দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে ইভান আছে কি না, কিন্তু না ইভান নেই। হাতের মাঝে ইভানের টি-শার্টটা এখনও ধরে আছে সে খেয়ালই নেই ওর। টি-শার্টটা নাকের কাছে নেয়। আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে আসে। মুহুর্তেই যেনো ইভানকে নিজের একদম কাছে অনুভব করে। ইভানের শরীরের মিষ্টি গন্ধ আর পারফিউমের গন্ধ মিলে কেমন একটা লোভনীয় সুগন্ধ আসছে। এই সুগন্ধটা যেন ওর শ্বাসরুদ্ধ করে দিচ্ছে। নিশ্বাস ভেতরে নিয়ে ছাড়তে ভুলেই গেছে।
-উহু, উহু,
কারো কাশির শব্দে হচকচিয়ে চোখ খুলে তাকায় বর্ণালী। ঈশা ওর সামনে ভেজা চুলে টাওয়েল পরা অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। ও এক ঝটকায় হাত নামিয়ে টি-শার্ট সরিয়ে নেয়। ঈশা বর্ণালীর হাত তুলে টি-শার্ট ভালো করে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখে বললো,
-ভাই আমার কি যাদু করলো তোকে?
বর্ণালী চোখ নামিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। এমনভাবে ভয় পাচ্ছে যেনো কোন চুরি ধরা পড়ে গেছে।
-ইয়ে, মানে…
-কিয়ে মানে?
-আসলে….
– হ্যাঁ বুঝলাম আসলে, তারপর?
-আমি দিয়ে আসছি ওর টি-শার্ট।
বর্ণালী চোখ বন্ধ করে তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে কেটে পড়ে। পেছনে ঈশা হেসে মরে যাচ্ছে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে সজিবের ছবির দিকে তাকিয়ে কয়েক ফোটা চোখেরজল ফেলে ড্রেস বের করার জন্য লাগেজ খুলে। লাগেজ খুলতেই সজিবের শার্ট বের হয়, যেটা ও গিফট করেছিলো। শার্ট হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ ওইভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। আবারো কান্না পাচ্ছে ওর। কেন সজিব তাকে এতো কষ্ট দিলো? আর কেনোই বা সে সজিবকে এখন এতো কষ্ট দিচ্ছে? আর পারছে না এসব মেনে নিতে। কিন্তু করবেটা কি! আজ সজিবের জন্যই রুমু এখান থেকে চলে গেছে। বর্ণালী রুমুকে হারিয়েছে শুধুমাত্র সজিবের জন্যই। রুমু কি কখনোই ফিরবে না? নাহ রুমুকে ফেরাতেই হবে। খুঁজে বের করতে হবে তাকে। অন্তত বর্ণালীর জন্য হলেও ঈশা খুঁজে বের করবে। শার্ট রেখে একটা ড্রেস হাতে নিয়ে চেঞ্জ করতে চলে যায় ঈশা।
👇
ইভানের দরজা খোলা দেখে বর্ণালী রুমে ঢুকে বিছানায় টি-শার্ট রেখে আসতে চাইলেই সামনে ইভানকে দেখে। দরজা লক করে ওর দিকে ফিরে তাকায়। ইভানকে দেখেই মনে হচ্ছে এইমাত্র শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে। তার শরীরে বিন্দু বিন্দু জল জমে আছে। হাঁটুর উপর অবধি একটা টাউজার পরে আছে। চুলগুলো ভিজে একদম কপালের সাথে লেপ্টে আছে। টুপটুপ করে চুল থেকে ঘাড় বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। ইভান ওর দিকে এগিয়ে আসছে। বর্ণালী চোখ নামিয়ে পেছাতে লাগে। ইভানের দৃষ্টি এই মুহুর্তে অনেক চাওয়াই উপস্থাপন করছে। এই অবস্থায় নিজেকে সামলে কীভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে! টেবিলের সাথে পা আটকে যেতেই আর পেছনে যাওয়ার রাস্তা পায় না। ইভান ওর একদম সামনে এসে কেমনভাবে তাকিয়ে আছে। বর্ণালী বারবার নিজের ওড়না ঠিক করে বুকের উপর ছড়িয়ে দিচ্ছে। তখনই ইভান ওর হাত ধরে নেয়। ওড়না আবারো একপাশে নিজের অবস্থানে ফিরে আসে। ঘন নিশ্বাসে বর্ণালীর বুক দ্রুত উঠানামা করছে। ইভান তার ডান হাত দিয়ে ওর চিবুকে ধরে মুখটা তুলে ধরে বললো,
-আমার চোখের দিকে তাকাও বাসন্তী।
বর্ণালীর মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না, আটকে গেছে।
-তাকাও প্লিজ।
এবার আর না তাকিয়ে পারেনা। ধীরে ধীরে চোখ উঠিয়ে তাকায় তার চোখের পানে। ওর ডান হাতটা নিয়ে ইভান নিজের মুখের কাছে আনে। হাতের ঠিক কব্জির একপাশে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। তাতেই যেনো বর্ণালী নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না। চোখজোড়া বন্ধ করে নেয়। ইভান নিজের ঠোঁট বর্ণালীর বুকের উপর চেপে ধরে চুমু খায়।
সজিব সবাইকে নীচে রেখে উপরে আসে। ঈশার রুমের আগে ইভানের রুম। দরজার পাশে একটু দাঁড়িয়ে সে ইভানের রুমে ঢুকতেই যাচ্ছে তখনই ঈশা ওর হাত ধরে নেয়। সজিব হালকা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– হাত ধরলে কেন?
– আমার ইচ্ছে কিন্তু তুমি এখানে কী করো?
– ভাবলাম ইভানের সাথে কিছু আড্ডা দেয়া যাক।
– নিজের রুমে বউকে একা রেখে বউয়ের ভাইয়ের সাথে আড্ডা দিবা?
সজিব যেন আকাশ থেকে পড়লো। নিজের কানে ও কি শুনছে! ঈশার হুট করে এমন পরিবর্তন কেন!
-কী হলো? চলো রুমে।
– হ্যাঁ চলো।
ঈশা চোখ বন্ধ করে স্বস্থির নিশ্বাস নেয়। আর একটু দেরি হলেই সজিব ওদের একসাথে দেখতো।
ইভান বর্ণালীর কানের কাছে মুখ এনে বললো,
-আমাকে ঘায়েল করার জন্য এভাবে সেজেছো? তোমার চুলের গন্ধ যে আমায় পাগল করে দেয় বাসন্তী।
ইভানের কানের পাশ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। বর্ণালী পানিটুকু আলতো করে ঠোঁটের ভেতর পুরে নেয়। ইভানের বুকে হাত রেখে আলতো করে ধাক্কা দিতেই সে সরে দাঁড়ায়।
-বাইরে যাই দেরি হলে পরে সবাই খুঁজবে।
– একটু সময় থাকো না প্লিজ।
-কেউ এসে আমাদের এভাবে দেখলে কি হবে ভাবতে পারছো?
-আচ্ছা এই প্রথম তুমি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলছো না, কিন্তু কেন?
বর্ণালী যেনো আরো লজ্জাকর পরিস্থিতিতে পড়ে যায়। কি জবাব দেবে সে এখন! এই ছেলে তো এতো সহজে ছাড়ার পাত্র নয়।
-কী হলো? বলো।
-জানিনা।
-মানে? জানিনা বললেই হলো?
-হ্যাঁ হয়।
বর্ণালীর চিবুকে ধরে মুখটা তুলে ধরে বললো,
– আমার চোখের দিকে তাকাও।
বর্ণালী চোখ ছোট ছোট করে ওর চোখের দিকে তাকায়।
-ভালোবাসি বাসন্তী।
বর্ণালী চুপ করে আছে। ইভানের মুখ থেকে ওর ভালোবাসি কথাটা শুনতে ভালো লাগে কিন্তু কেন জানি ও নিজে বলতে পারে না। কথাটা ওর গলায় এসে আটকে যায়। ইভান ওর কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে বললো,
-কী হলো? তুমি বলবে কবে?
বর্ণালী তখনও চুপ।
-আচ্ছা ঠিকাছে তোমার বলতে হবে না। আমি তো জানি তুমি আমায় ভালোবাসো আর আমাদের বিয়েটাও তো হয়েই গেছে।
-ভালোবাসি বললেই ভালোবাসা হয়না ইভান। মন থেকে অনুভব করতে হয়। আর আমি তোমায় অনুভব করি মনের অতল গহ্বরে।
-বাহ! আমার বাসন্তী তো দারুণ কথা বলতে জানে।
বর্ণালী চোখ নামিয়ে হাসছে। ইভান আলতো করে ওর কপালে কপাল ঠেকিয়ে দাঁড়ায়। ওর নাকের ডগায় চুমু এঁকে দেয়। বর্ণালী ইভানের উন্মুক্ত বুকে মাথা রাখে। এই সুযোগ ও কখনোই হাত ছাড়া করতে চায় না। দু’হাত ইভানের পিঠে নিয়ে রাখে। খুব ইচ্ছে করছে ভালোবাসি কথাটা বলতে কিন্তু পারছে না। বুকের মধ্যিখানে নাক ঘেঁষে গভীরভাবে চুমু খায়। ইভান বর্ণালীর মাথার পেছনে হাত রাখে। ভালোবাসার স্পর্শে হাত বুলিয়ে দেয় মাথায়। পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়। চুপ করে মাথা রাখে তার বুকের ধুপধুপ আওয়াজ শুনতে লাগে। এই ধুপধুপ আওয়াজের ছলে ইভানের ভালোবাসার গভীরতা জানতে ব্যস্ত এখন বর্ণালী।
👇
ঈশা সজিবকে রুমে এনে বিপাকে পড়ে গেছে। এখন কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। সজিব চুপচাপ বসে আছে বিছানায় আর ও এখান থেকে ওখানে পায়চারি করছে।
-তুমি কি কোন বিষয়ে টেনশন করছো?
সজিবের কথায় ঈশা ভাবনার ঘোর কাটিয়ে বাস্তবতায় ফিরে।
-হুঁ, না তো। কোন টেনশন নেই।
-তাহলে এভাবে রুমের ভেতরের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, মাপছো নাকি?
-বেশি বুঝো কেন তুমি?
-এটাকে বেশি বুঝা বলে?
– হ্যাঁ এটা বেশিই তো।
– বেশি বুঝবে তো বুঝবে, আবার বেশি কথাও বলবে! এতো সাহস তোমার!
সজিব বসা থেকে উঠে ঈশার কাছে চলে আসে। ঈশার রাগ উঠে মাথায় চেপে বসে। এই ছেলে সব ভুলে গেলো নাকি! সাহস তো কম না! এতো কথা বলছে কেন!
-তোমার এতো বড় সাহস! তুমি আমার মুখের উপর কথা বলো?
– হ্যাঁ বলছি আর বলবো। তোমার সাহস কি করে হয় স্বামীর মুখের উপর তর্ক করার?
– কিসের স্বামী হুঁ? আসছে আমার স্বামী হইতে।
-তুমি যে এতো দজ্জাল তা বিয়ের আগে জানলে, তোমাকে বিয়েই করতাম না।
-কিহ! আমি দজ্জাল আর নিজে কি হ্যাঁ ? লম্পট, লুইচ্চা প্রকৃতির লোক।
সজিব শান্ত হয়ে যায়। ঈশা রাগে কি বলছে না বলছে তার একটুও বোধশক্তি নেই ওর। সজিবকে শান্ত হতে দেখেই ঈশাও শান্ত হয়ে যায়। এসব কি বলছিলো ও! সজিবকে গালি দিচ্ছিলো! ছিঃ কি করে ফেললো!
-আই এম সরি।
-কেন?
-আসলে আমি তোমায় ওইভাবে বলিনি।
-কী ওইভাবে বলোনি?
-ওই যে গালি দিলাম।
-ঠিকই তো দিয়েছো, এতে ভুলের কী? সরি বলতে হবে না তোমার।
কথাটা বলেই সজিব গিয়ে সোফায় বসে পড়ে। ঈশা ওখানেই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে, রুম থেকে বেরিয়ে আসে। সজিব একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে। একটা ভুলের কারণে আজ ওদের সম্পর্কটা অন্যরকম হয়ে গেছে৷ ভালোবাসা ঠিকই আছে কিন্তু ঈশা তা দেখাচ্ছে না। ওর রাগ দিয়ে ভালোবাসাটা ঢেকে রেখেছে। এই রাগের সামনে আজ সজিব কিছুই করতে পারছে না। কেননা ভুল ছিলো ওর। আর নিজের ভুলেরই প্রাপ্য শাস্তি এটা।
ঈশা রুম থেকে বের হতেই সামনে বর্ণালীকে দেখে ইভানের রুম থেকে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে যাচ্ছে। ঈশা পেছন থেকে ডাক দেয়,
-ভাবীমণি….
বর্ণালী থমকে গিয়ে পেছনে তাকায়। এই মেয়েটা ওর ১২ দিগুণ ২৪টা বাজিয়ে ছাড়বে। এভাবে ভাবী ডাকছে যেনো আসলেই ওর বিয়ে হয়ে গেছে। কেউ শুনলে কি ভাববে! ঈশার মুখে দুষ্টু হাসি খেলা করছে আর মাথায় শয়তানি বুদ্ধি। ঈশা ওর দিকেই এগিয়ে আসে।
-এসব কী ঈশা? কেউ শুনলে কী ভাববে?
-যা ভাবার ভাবুক। আমি আমার উড বি ভাবীকে ডাক দিয়েছি।
-ভাবী তো এখন তুই। আমি তোর ভাবী হইনি এখনও ননদিনীই আছি সোনা।
-আচ্ছা সেসব থাক। বাই দা মাটির রাস্তা, বলতো তোর জামার বিভিন্ন অংশ ভেজা কেন?
ঈশার এমন প্রশ্নে হচকচিয়ে যায় বর্ণালী। ইভানের ভেজা শরীরের জন্যই এই অবস্থা। এখন কি জবাব দেবে! আমতা আমতা করে বললো,
-আ…আসলে ওই….
-রোমান্স চলছিলো না?
-আমি নীচে যাচ্ছি, তুই তাড়াতাড়ি আয়।
বর্ণালী যে লজ্জা পেয়ে পালিয়েছে তা ঈশা ভালোভাবেই আঁচ করতে পারছে। ইভানটা ভার্সিটিতে ভর্তি না হয়ে এখন বাবার সাথে ব্যবসায় লেগে গেলে ভালো হতো। কিছুদিনের ভেতরই দুজনের বিয়ের ব্যবস্থা করে নিতো ও। এরা বিয়ের আগেই এতো রোমান্স করছে আর ওর কি কপাল! বিয়ের পরেও স্বামীর পাশে পর্যন্ত বসলো না। আচ্ছা আমি কি সজিবের সাথে কোন অন্যায় করছি? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে। কিন্তু কোন জবাব পায়না। রুমের দিকে তাকিয়ে দেখে সজিব ফোনের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে। হালকা হেসে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যায়।
💛
💛
#_____চলবে……..

#_ফাগুন_প্রেম
পর্বঃ ৬০
লেখনীতেঃ Bornali Suhana
💛
💛
আচ্ছা আমি কি সজিবের সাথে কোন অন্যায় করছি? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে। কিন্তু কোন জবাব পায়না। রুমের দিকে তাকিয়ে দেখে সজিব ফোনের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে। হালকা হেসে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যায়। রান্নাঘরে যেতেই মা সাহারা ইসলামকে দেখে। মায়ের মেজাজ কোন কারণে খারাপ তা বুঝতে বাকি রইলো না ঈশার। কারণটা জানতে পারবে না তাও ভালো করে জানে সে তাই এখন চুপচাপ মায়ের রাগ কমাতে হবে। মায়ের মাইন্ড অন্যদিকে নিতে হবে। তারপর মেজাজ ঠান্ডা হলে নিজে থেকেই বলবে কারণটা কি ছিলো। ঈশা মায়ের পাশে রাখা ছুরি নিয়ে পেয়াজ কাটতে লেগে যায়। সাহারা ইসলাম মেয়ের এমন কান্ড দেখে বললেন,
-আরে আরে এসব কী করছিস?
-কেন? পেয়াজ কাটি।
-তোর কাটতে হবে না বল কি খাবি আমিই করে দিচ্ছি। নাহলে রানু করে দিবে।
তখনই রানু বসা থেকে উঠে বললো,
-হো বুমনি কন কি করুম?
কথাটা বলেই জিভে কামড় দিয়ে আবার বললো,
-সারি সারি, বলো বুমনি কি করবো?
সাহারা ইসলাম আর ঈশা একে অপরের দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেসে দেয়। রানুর কথাগুলো শুনতে তাদের মজা লাগে। ও পুরাই একটা বিনোদনের প্যাকেট। ঈশা রানুর গাল টেনে বললো,
-কী খবর রাণীসাহেবা? আসার পর আমাকে জিজ্ঞেসও করলে না যে কেমন আছি?
-আমি জানি বুমনি তুমি ভালো আছো, তাই তো জিজ্ঞেস করি নাই।
-বাব্বাহ! কথা তো ভালোই শিখে গেছো।
-হিহি হুঁ, তোমার থেকেই তো শিখলাম।
-হ্যাঁ তা দেখতে পাচ্ছি।
সাহারা ইসলাম এবার কিছুটা শান্ত মেজাজে আছেন। মেয়েটা না থাকায় বাড়িটা একদম ফাঁকা ছিলো। ওর এই মিষ্টি মিষ্টি কথাগুলো অনেক বেশি মিস করছিলেন। মেয়ের জামাইকে ঘর জামাই করে নিয়ে আসলে ভালোই হতো। কথাটা ভাবতেই ঈশার দিকে একবার তাকালেন তারপর বললেন,
-ঈশু,
-হ্যাঁ মা, বলো।
-তুই কী খুশি আছিস? ওখানের সবার ব্যবহার কেমন রে?
-মা আমি আমার দ্বিতীয় পরিবার পেয়েছি এর থেকে বলার কিছুই নাই। আমি অনেক অনেক খুশি মা, অনেক বেশি।
সাহারা ইসলাম মেয়ের চিবুকে ধরে কপালে চুমু এঁকে দেন।
-জামাই কী খাবে?
-যা ইচ্ছে দাও, তাই খাবে।
-মানে কী?
ঈশা চোখ কুঁচকে বন্ধ করে নেয়। কিসব বলছিলো ও!
-না মানে সে মোটামুটি সবই খায়। তোমার জামাই তুমি তোমার পছন্দ মতো করেই রান্না করো মা।
-আচ্ছা যা, জামাইর জন্য নাস্তা নিয়ে যা তুই।
-রাণীসাহেবা যাও তো।
ঈশা নিজে না গিয়ে রানুর হাতে ট্রে ধরিয়ে দেয়। সাহারা ইসলাম রানুকে থামিয়ে বললেন,
-এসব কি করছিস? আমি তোকে যেতে বলেছি।
ঈশা ভয় পেয়ে যায়। মা কিছু বুঝলে আবার সমস্যা হয়ে যাবে তাই আর কথা না বাড়িয়ে কিছুক্ষণ ট্রের দিকে তাকিয়ে হাতে নিয়ে চলে যায় উপরে। সজিব এখনও ফোন টেপাটেপি করছে। ঈশা ট্রে টি-টেবিলের উপর রেখে হুট করে ওর ফোন কেড়ে নিয়ে সজিবের পাশে সোফায় বসে। সজিব মিষ্টি হেসে ট্রে থেকে চা নেয়। চোখের সামনেই ঈশা ও সজিবের বিয়ের দিনের ছবি। সজিব এতোক্ষণ তাহলে এসব করছিলো! ফেইসবুকের ডিপিতে দুজনের ছবি আপলোড দিয়েছে। কংগ্রাচুলেশনস জানিয়ে অনেক কমেন্ট আসছে। একে একে সব কমেন্টস পড়ছে। সজিব ততক্ষণে চা খেয়ে ঈশার পাশ ঘেঁষে বসে। ঈশার কাঁধ থেকে চুল সরিয়ে পেছনে নেয়। ও আবার চুল সামনে আনে।
আবার পেছনে নেয় আবার সামনে আনে। পুনরায় যখন চুল সরাতে চায় তখন চোখ রাঙিয়ে ওর পাশ থেকে উঠে চলে যায়।
👇
রাতের খাবারের পর বর্ণালী, নিধি আর জেনিকে এক রুমে থাকতে দেয়। বর্ণালী খাটের একপাশে শুয়েছে। মধ্যিখানে জেনি আর ওপর পাশে নিধি। রুমুর ফোনে কয়েকটা কল দেয়। কিন্তু কল ঢুকার সাথে সাথে কেটে যায়৷ ওর নাম্বার রিজেক্ট কলে ফেলে রেখেছে। চোখের কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। তখনই ফোনে মেসেজ টোন বেজে উঠে। ওপেন করেই দেখে রুমুর মেসেজ।
“কান্না করিস না, আমি খুব ভালো আছি। সময় হলে আমি কথা বলবো তোর সাথে। ততদিন আমার জানের খেয়াল রাখবি নাহলে একদম মেরে ফেলবো।”
মেসেজটা পড়ে শুয়া থেকে উঠে বসে পড়ে। সাথে সাথে ও মেসেজের রিপ্লে করে।
“আমার সাথে কথা বল প্লিজ, আমি তো কোন অপরাধ করিনি। আমাকে এভাবে কষ্ট দিস না। কোথায় আছিস প্লিজ এড্রেস দে।”
মোবাইলের বাতি নিভে আসে কিন্তু মেসেজের রিপ্লে আসেনা। অনেকক্ষণ ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে তবুও আর আলো জ্বলে না। ফোনটা হাতে রেখেই আলতো করে বালিশের উপর মাথাটা এলিয়ে দেয়। ইভানের মেসেজের অপেক্ষা এখন।
সজিব খাওয়া শেষ করে রুমে ঢুকে দেখে ঈশা মাত্র গোসল দিয়ে বের হয়েছে।
-তুমি এই অসময়ে গোসল দিলে যে?
-গরমে ঘেমে শরীরটা কেমন কেচকেচ করছিলো তাই।
-ঠান্ডা লাগতে পারে একবার ভাবতে পারতে।
ঈশা চুল মুছতে মুছতে বললো,
-আমার এতো সহজে ঠান্ডা লাগেনা।
-আচ্ছা না লাগলেই হলো।
কথাটা বলেই সজিব বিছানায় কাঁথা টেনে শুয়ে পড়ে। ঈশাও গিয়ে পাশে শুয়ে পড়ে। সজিবের মুখ ওর পানেই করে রেখেছে। চোখজোড়া বন্ধ করে আছে, কেমন মায়া মায়া ভাব তার এই মুখে। ঈশা আলতো করে সজিবের গালে হাত রাখে। সজিব চোখ খুলে তাকাতেই ঈশা ওর কাছে গিয়ে কপালে কপাল ঠেকায়। তার হাত কাঁথার নীচেই ঈশার কোমড়ের উপর রেখে কাছে টেনে নেয়৷ সজিবের কপালে নাক ঘেঁষে চুমু এঁকে বললো,
-সরি।
-কেন?
-কষ্ট দিয়েছি বলে।
-এটা আমার পাওনা ছিলো।
ঈশা আর কোন কথা না বাড়িয়ে সজিবের বুকের মাঝে মাথা লুকায়। আর দূরে রাখতে পারবে না তার ভালোবাসাকে। মুক্ত পাখি হয়ে সজিবের কাছে আজ ধরা দিবে সে। ভুল তো সবাই করে আর ভুলের ক্ষমা করতে হয়। ভালোবাসার মানুষের ভুল কখনো ধরে রাখতে নেই ছেড়ে দিতে হয়। ভুল করেই শিখে আর একসময় সে ভুল শুধরে নেয়।
সজিব ঈশার চুলের গন্ধে নিজেকে হারাচ্ছে। গলায় মুখ ডুবিয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে গভীর আবেশে। ভালোবাসার এমন স্পর্শে রক্ত যেনো শরীরে দ্রুত সঞ্চারিত হচ্ছে। দমকা হাওয়া যেভাবে শরীরে কম্পন তুলে সেভাবেই কম্পিত হচ্ছে শরীর। শিহরিত হচ্ছে দুজনার মন। হাতের ভাঁজে হাত আর ঠোঁটের ভাঁজে ঠোঁটের আনাগোনা বাড়ছে। নিশ্বাসের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হৃদস্পন্দনের ধুকপুকানি। ঝিঝি পোকার আওয়াজের সাথে বাড়ছে রাতের গভীরতা। ভালোবাসায় দুজন তলিয়ে যাচ্ছে গভীর থেকেও গভীরে।
👇
বর্ণালী ঘুম থেকে উঠে দেখে ফোন নীচে পড়ে অফ হয়ে আছে। অন না করেই ফোন চার্জে দিয়ে ব্রাশ করে ফ্রেশ হয়ে নেয়। রুম থেকে বের হয়ে দেখে সম্পূর্ণ বাড়ি এখনও অনেক শান্ত। ড্রয়িংরুমে টাঙানো বড় ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে মাত্র ৬টা বাজে। এতো ভোরে ঘুম কীভাবে ভাঙলো ও নিজেই অবাক! উপরের দিকে সিঁড়ি গেছে সেদিকে এগিয়ে যায়। সিঁড়ি একেবারে ছাঁদে আসে। ছাঁদের পরিবেশ অনেকটা শান্ত। পাখির কিচিরমিচির শব্দ এখানে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। একটা পেয়ারা গাছে পাকা পেয়ারা ঝুলছে। দেখে আর লোভ সামলাতে পারেনা। গাছ থেকে একটা পেয়ারা নিয়ে কাপড়ে মুছে কামড় বসিয়ে দেয় পেয়ারার গায়। পেছনে ফিরতেই চোখজোড়া ডিমের আকার ধারণ করে। ওর সামনে ইভান গুটিসুটি মেরে দোলনায় শুয়ে আছে। বর্ণালী দৌড়ে তার দিকে এগিয়ে যায়। ভয় পেয়ে গেছে ইভানকে এখানে দেখে। দোলনার পাশেই ফ্লোরে বসে ভাবতে লাগে,
ও এখানে কেন?
ভয়ে ভয়ে ইভানের শরীরে আলতো করে হাত দেয়। ইভান চোখ খুলে না। গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে সে। বর্ণালী ওকে ধাক্কা দিয়ে আওয়াজ দেয়,
-ইভান, এই ইভান।
কয়েকবার আওয়াজ দেয়ার পর ইভান আধবোজা চোখে ওর দিকে তাকায়। ঠোঁট বাঁকা করে হেসে বললো,
-এতোক্ষণে সময় হলো তোমার আসার?
-মানে? এসব কী বলছো ইভান?
ইভান আবারও চোখ বন্ধ করে নেয়। ঘুমে ওর চোখ আপনা আপনি বন্ধ হয়ে আসছে। বর্ণালী আবারো ওকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বললো,
-ইভান কি হলো? এখানে কেন তুমি?
ইভান চোখ কচলাতে কচলাতে শোয়া থেকে উঠে বসে বললো,
-রাতে আসো নি কেন?
-মানে?
-সারারাত জেগে অপেক্ষা করছিলাম এখানে তুমি আসবে কিন্তু এলে না।
-আমাকে বললে না আমি আসবো। একবার বললে না কেন?
-আমি তোমায় মেসেজ দিয়েছি তুমি কি দেখোনি?
বর্ণালীর এখন খেয়াল হয় ও তো রাত্রে ইভানের সাথে চ্যাট করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো। কথাটা মনে হতেই মনটা খারাপ হয়ে গেছে ওর। চোখে জল টলমল করছে। ইভান সারারাত জেগে ওর অপেক্ষা করছিলো আর সে কিনা ঘুমাচ্ছিলো।
💛
💛
#_____চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here