হারাতে_চাই_না_তোমায় #পর্ব-৫১

0
638

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-৫১
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা

রাতের নিস্তব্ধতা ছেয়ে সব জায়গায়।বর্ষা আসে নি এখনো পুরোপুরি ভাবে তবুও আকাশ কেমন যেন দম মেরে আছে।সাথে ঠান্ডা বাতাস।আকশের চাঁদটাও আজ মেঘে ঢেকে আছে।মনে হচ্ছে আকাশের মন খারাপ।যেকোনো সময় সে কান্না করে দিবে।
আকাশের অবস্থাও ঠিক আরুর মতো।যে কোনো সময় ওর চোখ দিয়ে বৃষ্টি নামতে পারে।আরুর মনটাও যে আজ ভালো নেই।বারবার শপিংমলের কাহিনী গুলো মনে পরছে।ও আর এগুলো মনে করতে চায় না কিন্তু ওর মন মস্তিষ্ক যেনো এগুলো মানতে নারাজ।ওকে কষ্ট দেওয়ার জন্য সবাই উঠে পরে লেগেছে।
আরু আজ বিকালের কথা গুলো ভাবছে।ওরা যখন শপিংয়ে ছিলো তখন প্রায় অনেকক্ষন পর আরুর মনে হলো ওদের কেউ ফলো করছে।এটা মনে করে ও যখন আশেপাশে তাকায় তখন কাউকে দেখে না।পরে মনের ভুলে চালিয়ে দেয়।এমন প্রায় ২/৩ বার হয়েছে।এমনিতেই আরুর মন খারাপ তারউপর এসব হচ্ছে সেজন্য ওর শপিং করার কোনো ইচ্ছে নেই।শুধু তন্নির সাথে সাথে হাঁটছে।তন্নি কী করছে না করছে সেদিকে ওর হুস নেই।হটাৎ দেখলো তন্নি একটা লাল বেনারসি দেখছে।আরু ভ্রু কুচকালো।বললো,
আরুঃ এটা কার জন্য নিচ্ছিস?🤨
তন্নিঃ কোথায় নিলাম? এমনি দেখছি।

আরু আর কিছু বললো না।প্রায় অনেকক্ষন পর তন্নি কয়েকটা ড্রেস দিয়ে আরুকে বললো,
তন্নিঃ এগুলো দেখে আয়।হয় কী না।
আরুঃ আমি কিছু নিবো না।লাগবে না আমার।
তন্নিঃ তোকে বলতে বলেছি?লাগবে নাকী না?আমি বলেছি তুই যাবি ব্যাস।
আরুঃ কিন্তু…
তন্নিঃ কোনো কিন্তু না।যা।

আরু আর কথা বাড়ায় নি।ট্রায়াল রুমেে দিকে চলে গেলো।এদিকে আরু যেতেই তন্নি প্রয়োজনীয় সব কেনাকাটা শুরু করলো।ও জানে আরুর ফিরতে দেরী হবে।
এদিকে আরু ট্রয়াল রুমের দরজা লক করে ভিতরে ঢুকে যেই না ওর জামায় হাত দিবে তখনই বাহির থেকে কেউ দরজা নক করছে।আরু দরজা খুলে দেখলো কেউ নেই।হয়তো কেউ ভুলে নক করেছে এটা ভেবে দরজা লক করে আবার ওর কেউ নক করেছে।ও এবার বিরক্ত হয়ে দরজা খুললো কিন্তু কাউকে পেলো না।বিরক্ত নিয়ে আবার দরজা লক করে দিলো।কিন্তু এবারও সেই একই কাজ।এবার ও প্রচন্ড ক্ষেপে গেলো কিন্তু ও এবার যেই না দরজায় হাত লাগাতে যাবে ওমনি পুরো ফ্লোরে কারেন্ট চলে গেলো।হটাৎ এমন হওয়াতে আরু অনেকটা ভয় পেয়েছে।ব্যাগে থেকে ফোন বের করতে যাবে আর দেখে ব্যাগ নেই ওর সাথে।ওর মনে পরলো আসার সময় ব্যাগ মতন নির কাছে রেখে এসেছে।আরুণাংশু এবার নিজের উপর জেদ উঠছে সাথে ভয়ও করছে অনেক।ভয় নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খুলে একটু মাথা বের করলো।কোনো মানুষের শব্দ আসছ না।এবার যেনো ভয়টা আরো বেরে গেলো।কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
আরুঃ কে..কেউ আ..আচ্…আছে এখানে?……প্লিজ একটু হেল্প করুন।…..কেউ আছে?….একটু লাইটের ব্যবস্থা করুন।…শুনতে পাচ্ছেন?

না কারো কোনো সাড়াশব্দ নেই।আরু ভয়ে ভয়ে দুপা এগালো।এখন মনেহলো কারো পায়ের আওয়াজ আসছে।আরু একটা শুকনো ঢোক গিলে সাসস সঞ্চার করে বললো,
আরুঃ ক…কে ওখানে?প্লিজ একটু হে..হেল্প করুন🥺।আমি এখ………..

আরু বলতে পারলো না কেউ ওর মুখ চেপে ধরে সেই রুমে আবার নিয়ে গেলো। এদিকে আরু ভয় বিস্ময়ে রুয়েক্ট করা ভুলে গেছে।যখন বুঝলো কী হচ্ছে তখন ছারা পাওয়ার জন্য ছটপট করছে আর মুখ দিয়ে উমমমমমমমমমম করে যাচ্ছে।আরু বেশ বুঝতে পারছে এটা কোনো পুরুষ।কিছুক্ষন মনে হয়েছিলো ওর এই স্পর্শ,পারফিউমের ঘ্রাণ সবাটাই ওর খুব পরিচিত।কিন্তু এখন তা না ভেবে এই মানুষটার থেকে নিজেকে ছাড়াতে হবে।না হলে এই ফাঁকা ফ্লোরে ওর সাথে কোনো খারাপ কিছু….না না।এটা হতে পারে না।আরু আবার ছটপট করছে।লোকটা এবার বিরক্ত হয়ে ওর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,
লোকঃ উপপ!এতো ছটপট করছো কেনো?তোমাকে তুলে নিয়ে যেতে আসি নি।মনের পিঞ্জরে বেধে রাখবো বলে এসেছি।তবে সেটা এখন না সময় হোক।উপপ!আবার নড়ে।চুপ করে থাকো না হলে কিন্তু খারাপ কিছু হয়ে যাবে।(আরু চুপ)তেমাকে ছাড়া থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে জান।কবে তুমি আমার কাছে আসবে?আমার ভালোবাসা বুঝবে।আমাকে ভালোবাসি বলবে?কবে জান? তোমার মুখ থেকে ভালোবাসি শুনার জন্য মনটা অস্থির হয়ে আছে তা বুঝো না তুমি?
আরুর কপালে কপাল ঠেকিয়ে রাখলো।আর আরু এখনো চুপ।ওর কানের কছে কথদ গুলো বলায় সারা শরীর কাঁপছে।লোকটা এবার ওর গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো।আর এবার ও জেনো দাড়িয়ে থাকার ক্ষমতা হারিয়ে ফেললো।পা ভেঙে পরে যেতে নিলে লোকটা ওকে আগলে নেয়।লোকটা বললো,
লোকঃ নিজেকে শক্ত করো।এভাবে ভেঙে পরলে তো চলবে না।সামনে আরো অনেক কিছু আছে তোমার জন্য জান।তাই নিজেকে তৈরী করো।আর হ্যা খাওয়া দাওয়া টিক মতো করবে কোনো অনিয়ম যেনো না হয়।ঘুম নিয়েও যেনো কোনো অনিয়ম না হয়।যদি হয় তাহলে কিন্তু তোমার জন্য খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে মনে রেখো।আর নিজেকে একদম কষ্ট দিবে না।ভালো মেয়ের মতো থাকবে।ওকে?

আরু কিছু বলতে পারছে না।শুধু শুনে যাচ্ছে।ও কী বলবে কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না।লোকটা ওকে ছেড়ে ঠিক করে দাড় করিয়ে কপালে একটা গভীর চুমু দিয়ে চলে গেলো।
আরু আরু এখনো হ্যাভলার মতো তাকিয়ে আছে।ওর কানের কাছে শুধু লোকটার বলা কথা গুলো বাজছে।কি বলে গেলো লোকটা?কেনো করছে এমন?আর সবচেয়ে বড় কথা লোকটা কে?আরু এসব ধ্যানে মগ্ন।কখন কারেন্ট এলো ও জানে না।ওর হুস আসলো বাহির থেকে তন্নির ডাকে।তাড়াতাড়ি আসপাশে তাকালো কিন্তু কেউ নেই।তাহলে ওটা কী সত্যি ছিলো নাকি?কল্পনা? এসবের মাঝেই তন্নি আবার ডাকলো আরু আসছি বলে নিজেকে ঠিক করে বের হলে।ওকে বের হতে দেখে তন্নি বললো,
তন্নিঃ কী রে এতক্ষন লাগে?কী করছিলি এতোক্ষন?আর জামাগুলো ঠিক হয়েছে সব?
আরুঃ বাসায় যাবে।চল।

তন্নি তাকিয়ে আছে।ওকে কী বললো আর ও কি বললো।তন্নি ব্যাপার না ঘাঠিয়ে চলে গেলো।নিচে এসে গাড়ির কাছে আসতেই আরুর মনে হলো ও ওর সেই চেনা,সেই পরিচিত,সেই কাঙ্খিত মানুষটাকে দেখেছে।আরু সব ভুলে তার পিছনে ছুটলো।পিছন থেকে তন্নি ডাকছে ওকে কিন্তু শোনার সময় নেই।আরু ওই লোকটার কাছে আসতেই দেখলো একটা মেয়ে ওই লোকটার জন্য গাড়ির কাছে অপেক্ষা করছে।লোকটা যেতেই মেয়েটদ হাসি দিয়ে গাড়িতে বসলো আর লোকটাও গাড়িতে বসে চলে গেলো।গাড়ি যাওয়ার পর আরু শুধু জোরে একবার ‘আয়য়য়য়য়য়য়ান’ করে উঠলো।কিন্তু শুনলো না।চলে গেলো ও।
———–
আরু হকচকিয়ে উঠলো।এতোক্ষন বিকালের কথা গুলে ভাবতে ভাবতে কখন চোখ লেগে গিয়েছিলে ও বুঝতে পারে নি।আরু অনুভব করছে ওর চোখের কোল দিয়ে পানি পরছে কিন্তু তা মুছার কোনো ইচ্ছে নেই।কিন্তু এবার উঠতে হবে অনেকক্ষন হয়েছে।সেই সন্ধ্যায় রুমে এসেছে এখন পর্যন্ত বের হয়নি।মাথাটা কেমন ঝিম ধরে আছে।আস্তে উঠে দাঁড়ালো।ও দাড়ানোর সাথে সাথে মনে হলো একটা ছায়া সরে গেছে রাস্তা থেকে।আরু ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকলো।কিন্তু কিছুই দেখলো না শুধু একটা কুকুর ছাড়া।আরু আর না ভেবে রুমে চলে এলো।ফ্রেশ হয়ে একটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে শুয়ে পরলো।
আয়ানের না ধরে চিৎকার করার পর তন্নি গিয়ে বলে কী হয়েছে?কিন্তু আরু কিছু বললো না।চুপচাপ গাড়িতে এসে বসে।সারা রাস্তা চুপ ছিলো।তন্নির সামনে চোখের পানি দেখাতে চায়নি।যদিও তন্নি অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু ও কিছু বলেনি।বাসায় রুমের দরজা লক করে সেই যে বসেছিলো আর খুলেনি।খাওয়ার সময় সবাি ডেকেছিলো খিদে নেই বলে সবাইকে পাঠিয়ে দিয়েছে।
আরুর আস্তে আস্তে ঘুমে তলিয়ে পরলো।
————
আরু ঘুমিয়ে যেতেই একজন এসে ওর দিকে এক ধ্যানল তাকিয়ে আছে।সেই মানুষের টার চোখেও চিকচিক করছে।মানুষটা আরু কপালে চুমু দিয়ে ওকে উঠিয়ে নিজের বুকের সাথে ওর পিঠ ঠেকিয়ে বসালো এবার প্লেট থেকে খাবার তুলে আরুর মুখে দিলো।আরুও খিদের চোটে খেয়ে নিলো।কিন্তু সে গুমে মগ্ন।অল্প কিছু খেয়ে আরুকে আট খাওয়াতে পারলো না।তাই ওকে ঠিক করে দিয়ে হাত ধুয়ে আরুর পাশে এসে শুয়ে পরলো।ওকে জড়িয়ে ধরে নিজেও ঘুমিয়ে পরলো।
————
সকাল ১০ টা আরুর ঘুম ভেঙলো।কেমন ফ্রেশ লাগছে।মাথা ব্যাথা নেই।হয়তো রাতে ভালো ঘুম হওয়ার ফলে।বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে আসতেই দেখলো আয়নায় একটূ চিরকুট।তাতে লিখা,
আমার ঘুম পরী।বলেছিলাম খাওয়া নিয়ে অনিয়ম না করতে সেই তুমি করলে।এবার তোমার কী শাস্তি দেওয়া যায় বলো?…..বেশ ভেবে তুমি নিজেই বলো।কিন্তু একটা জিনিস জানো তোমাকে ঘুমের মাঝে খাওয়াতে সেই লাগে।একদম বাচ্চাদের মতো মুখের সামনে দিলাম আর তুমি খেয়ে নিলে।হাও সুইট।মনে হচ্ছিলো একদম খেয়ে ফেলি।কিন্তু না আমি নিজেকে কন্ট্রোল করে নিয়েছি।কারন সব সুদে আসলে হিসাব মিটাবো বলে।যাই হোক অনেক বেলা হয়েছে ব্রেকফাস্ট করে নাও।আর হ্যা আমি কে তা নিয়ে মাথা ঘামিও না।সময় হলে আমি নিজেই সামনে আসবো।লাভ ইউ❤️

আরু থ হয়ে আছে এটা পরে।এটা কে দিলো?আর ওকে খাইয়েছে মানে?আরু পুরো রুম চোখ বুলালো কিছুই তো নেই।উফ! পাগল হয়ে যাবে ও।কী হচ্ছে ওর সাথে।সকালে উঠে যাই একটু ফ্রেশ লাগছিলো কিন্তু তাও সয্য হলো না।আরু কাগজটা ড্রয়ারে রেখে নিচে চলে গেলো।
সারাদিন ওই লোকটার আর কোনো খবর নেই।আর ওর দিনটাও মোটামুটি ভালোই গিয়েছে।
—————-
চলে গেলো ১৫ দিন।
কেউ কারো সাথে কোনো যোগাযোগ নেই।ভালো খারাপ নিয়ে সবাই চলে যাচ্ছে।কিন্তু আরু একটা একটা জিনিস বুঝতে পারছে না।এতোকিছু হলো কিন্তু ওর পরিবার এই ব্যাপারে কিছু বলেও নি জিজ্ঞেসও করেনি।সেটা আরুকে এখন আবার ভাবচ্ছে।সারাদিন কোনো রকমে গেলেও রাতে আরু ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমায় যাতে রাতে আর আয়ানের কথা মনে না পরে আর এতোগুলো দিনে আয়ানের বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে ওর যেই অভ্যাস হয়েছিলো তা যেনো ওর মনে না পরে।
উম্মে বুশরা
এদিকে আরুর ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমানোতে একজনের সুবিধাই হয় কারণ ও ঘুমালেই লোকটা আরুর কাছে এসে ওকে নিজের বুকে নিয়ে ঘুমায়।
আর আরু প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে দেখবে ওর জন্য চিরকুট রাখা।আরু ভেবে পায় না কে দেয় ওকে এগুলো।ঘুম থেকে উঠে না।ফ্রেশ হয়ে আসার পরই দেখবে এটা।কিন্তু এই ব্যাপারে বসায় কাউকে কিছু বলেনি ও।এটা শুনলে সবাই কীভাবে নেবে সেই ভেবে ভয় করছে।
————-
সকালে সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে আছে।অনিম তাড়াতাড়ি নিচে নেমে এলো।ওকে দেখে কেমন যেনো লাগছে।অনিম খাচ্ছে আর কাচুমাচু করছে কিছু বলার জন্য।ওর বাবা ব্যাপারটা দেখে বললো,
আশরাফ আহমেদঃ কী ব্যাপার অনিম এমন করছিস কেনো?
অনিমঃ আসলে বাবা কিছু বলার ছিলো তোমাদের।বিশেষ করে আরুকে।

আরুর ভ্রু কুচকে গেলে।কী বলবে ওকে।আরুর বাবা আবার বললেন,
আশরাফ আহমেদঃ হ্যা বলো কী বলতে চাও?
অনিমঃ আব…আসলে…বাবা…..
আশরাফ আহমেদঃ আসলে নকলে না বলে সরাসরি বল।
অনিমঃ আসলে ভালো খবর না খারাপ খবর তা জানি না।
আদিরা আহমেদঃ এতো হেয়ালি না করে বল।
অনিমঃ আর একমাস পর আরুর আর আয়ানের ডির্ভোস পেপার আসবে আর কয়েকদিন পর অথবা সেইদিন আয়ান আবার বিয়ে করবে।

অনিম কথাটা বলে চোখ বন্ধ করে নিলো।সবাই আরু দিকে তাকিয়ে আছে।আরুর হাতে যেই খাবার ছিলে তা পারে গেলো আর গলার খাবারটা গলায় আটকে রইলো।চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।কাউকে কিছু না বলে চলে গেলো সেখান থেকে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here