হারাতে_চাই_না_তোমায় #পর্ব-৫২

0
517

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-৫২
#উম্মে_বুশরা

গ্রীষ্মকে বিদায় জানিয়ে বর্ষার আগমন ঘটেছে।আকাশ জুড়ে মেঘের আনাগোনা।কোথাও সূর্যের দেখা নেই।মেঘ যেন পন করেছে আজ পুরো আকাশ জুড়ে নিজেরা রাজত্ব করবে সূর্যের রশ্মি তারা ফেলতে দিবে না।সব জায়গা কেমন থম থম পরিবেশ।সাথে আছে ঝোড়ো হাওয়া।যা বওয়ার সাথে সাথে শরীর,মন ছুয়ে যাচ্ছে আর এক অন্য রকম প্রশান্তি এনে দিচ্ছে।
চলে গেছে ১ মাস।এই ১ মাসে আরু নিজেকে কিছুটা গুছিয়ে নিয়েছে।সেই আগের আরু যার ভিতরে নেই কোনো ভালোবাসা,নেই কোনো আবেগ,নেই কারো জন্য অপেক্ষা।যদিও সবার সামনে ও নিজেকে যতোটাই শক্ত রাখুক না কেন রাতের নিস্তব্ধতায় আর নিজেকে সামলাতে পারে না।ঘুমও চোখে ধরা দেয় না।ঘুমও যেনো ওর সাথে বেঈমানী করে চলেছে।পরিশেষে নিজেকে সামলাতে না পেরে অন্য উপায়ে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে।এটা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।তবে ওর প্রতি রাতে মনে হয় কেউ ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।আর ও নিজেও কারো উষ্ণ ভালোবাসা পেয়ে তার বুকের ভিতরে ঢুকে পরছে।কিন্তু কে তা আরু বুঝতে পারে না।কারন ঘুমরে জন্য ও চোখ খুলতে পারে না।কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে কোনো কিছুর চিহ্ন খুজে পায় না।রাতে ঠিক যেমন করে ও শুয়ে থাকে সকালে ঠিক তেমন পায় নিজেকে।তবে প্রতিদিন চিরকুট পেতে ও ভুলে না।কে দেয় তাও জানে না।তবে তাকে দেখার অনেক ইচ্ছা।ও মাঝে মাঝে ভাবে”পুরান পাগলের ভাত নাই নতুন পাগলের আমদানি”।এই চিরকুটের মালিককে নিয়ে ও ভাবতে চায় না কিন্তু কোথাকার মনে হয় একটা টান অনুভব করে।
সেদিন অনিমের থেকে ওই কথা শুনার পর আরু একদমই চুপ হয়ে গিয়েছিলো।রুমে এসে তাছ্যিলের হেসে মনে মনে বলে,”ভালোই হয়েছে আয়ান অন্য কাউকে বিয়ে করবে।ও তো আয়ানকে বুঝতেই পারেনি।ধরে রাখতে পারেনি নিজের ভালোবাসাকে নিজের কাছে।হয়তো নিজের ভাগ্যতে আয়ান নেই নয়তো আয়ানকে ধরে রাখার যোগ্য ও নয়।ওর এতো কথা ভেবে কাজ নেই।আয়ান ওর সাথে সুখী হতে পারেনি বলেই হয়তো অন্য কাউকে জীবনসঙ্গী করার জন্য ওকে ছেরে দিয়েছে।তারপরও আয়ান সুখে থাকুক এই দোয়া ও করবে।আয়ানকে না পেলো কিন্তু আয়ানের সুখ দেখে বাকী জীবন কাটিয়ে দিবে।আর সেই সাথে আবার ফিরে যাবে ও।এই শহর ওকে কষ্ট ছাড়া আর কিছু দেয় নি।তাই থাকতে চয়না ওর আর এখানে।ডির্ভোস পেপার এলে তাতে সাইন করে চলে যাবে ও”।
সেদিনের পড়ে থেকে আরু নিজেকে বুঝিয়ে নিয়েছে।যাবে না ও আর ফিরে।আর কারো জন্য কষ্টও পাবে না।কিন্তু মন কী সেই কথা মানে?না।
————-
মারিয়াঃ বৃষ্টি আপুর সাথে আয়ান ভাইয়ার বিয়ে আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না।তুই সিউর তো?
তন্নিঃ আরে হ্যা সিউর।কার্ডে তো তাই লিখা।
মারিয়াঃ কিন্তু কিভাবে কী?আমার মাথয় আসছে না কিছু।
তন্নিঃ আমর ও।
মারিয়াঃ আচ্ছা আরু কোথায়?ওর কী অবস্থা?ও জানে এই ব্যাপারে?
তন্নিঃ হুম জানে।কিন্তু ও এখন একদম চুপচাপ থাকে।প্রয়োজনের বাহিরে কারো সাথে কোনো কথা বলে না।অনিম তো ওকে বারবার বলছে ওর সাথে অফিসে গিয়ে বসতে।
মারিয়াঃ তো আরু কি বলছে?
তন্নিঃ কিছু না।শুধু বলেছে ‘দেখি’।এরপর অনিমও আর জোর করেনি।
মারিয়াঃ ওকে তো শক্ত থাকতে হবে।ওর জন্যই তো এসব হচ্ছে এখন ও যদি এমন থাকে তাহলে কীভাবে কী বলতো?
তন্নিঃ সেটাই তো আমিও বুঝতে পারছি না।আমার মনে হয় এই ব্যাপার গুলো বেশি বারাবাড়ি হয়ে গেছে।ওকে এইভাবে কষ্ট দেওয়া মোটেও উচিত হয়নি।অন্য ভাবেও এই প্ল্যানটা করা যেতো?
মারিয়াঃ হুম সেটাতো আমরা জানি না।যে করেছে সে ভালো বলতে পারবে।কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা।
তন্নিঃঃ কী?
মারিয়া আর কতোদিন?ও কী এখনে ওর মনের কথাটা মুখে আনবে না?পরে যদি সবটা ভেস্তে যায়।
তন্নিঃ আরে এসবের মাস্টারমাইন্ড যে সে এতো সহজে সব শেষ হতে দিবে?এটা তোর মনে হয়?
মারিয়াঃ হুম তাও ঠিক।কিন্তু আমার না কেমন যানি লাগছে।
তন্নিঃ কেমন?
মারিয়াঃ পরে এগুলো আরুর সামনে আসে ও আমাদের ভুল বুঝবে না তো?
তন্নিঃ সেটা তো আমারও ভয় করছে।
মারিয়াঃ আ…..
মারিয়ার ডাক পরলো।তাই ও তন্নিকে বলে,
মারিয়াঃ আচ্ছা তোর সাথে পরে কথা বলছি।আমাকে ডাকছে।আর কাল হয়তো তোদের বাসায় আসতে পারি।
তন্নিঃ আয় ভালোই হবে।
মারিয়াঃ আচ্ছা রাখি।
তন্নিঃ হুম।

তন্নি ফোন দিয়া রেখে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে পর্দাগুলো নড়ছে।কিন্তু বাতাস তে নেই এখন পর্দা নড়ছে কেনো?তাহলে কী এখানে কেউ ছিলো?..কি কে?….আরু নয় তো?তন্নি তাড়াতাড়ি দরজার সামনে এসে দেখে কেউ নেই।আশেপাশে ভালো করে তাকালো না কেউ নেই।তারপর সত্যি নিজের মনের ভুল ভেবে ভিতরে ঢুকলো।
—————
সন্ধ্যায় সবাই লিভিং রুমে বসে আছে।চা নাস্তা খাচ্ছে আর কেউ টিভি দেখছল,কেউ ফোনে ব্যস্ত,কেউ খবরের কাগজ পরছে।হটাৎ অনিম বললো,
অনিমঃ বাবা আরু একটা কথা ছিলো।
আশরাফ আহমেদঃ হুম বলো।
অনিমঃ আসলে..আয়ান আজ ফোন করে ছিলো।
উম্মে বুশরা
আরু আয়ান নাম শুনে ফোন থেকে মাথা তুলে তাকালো।তারপর আবার মাথা নামিয়ে চোখ ফোনে দিলে কিন্তু কান,মনোযোগ সব অনিমের কথায়।আরুর বাবা বললো,
আশরাফ আহমেদঃ কী বলেছে ও ফোন করে?
অনিমঃ আব…ও বলেছে আর ২ দিন পর আরুর আর ওর ডির্ভোস পেপার আসবে।কিন্তু ও চাইছে আর ১৫ দিন পর এটার সই হোক।
আশরাফ আহমেদঃ ২ দিন পেপার আসলে ১৫ দিন পর সই করবে কেনো?(ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো)
অনিমঃ সেটা আমি জানি না।তবে এটা জানি।১৫ দিন পর ওর বিয়ে।
আশরাফ আহমেদঃ কিন্তু আমার জানা মতে আগে ডির্ভোস পেপারে সই তারপর দ্বিতীয় বিয়ে।
আরুঃ আমি জানি
ফোন থেকে মাথা তুলে ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে।এর মাঝে আরুর মা আর তন্নি কিচেন থেকে এসে পরে।আরুর বাবা বলে,
আশরাফ আহমেদঃ তুমি জানো?কী জানো আর কীভাবেই জানো?
আরুঃ কিভাবে জানি সেটা কথা না কথা হলো আমি জানি ও কেনো ১৫ দিন পর ডির্ভোস পেপারে সই করাতে চায়।
আশরাফ আহমেদঃ কেনো?
আরুঃ ও আমার কাছ থেকে গিফট চায় ওর বিয়ের।আর এটাই হলো সবচেয়ে বড় গিফট।একদিক দিয়ে ডির্ভোস হবে আর সাথে সাথে বিয়ের পিড়িতল বসবে(হেসে)
আশরাফ আহমেদঃ তোমার সাথে কী ওর কথা হয়েছে?
আরুঃ না।(উঠে দাড়িয়ে গেলো)ভাইয়া ওকে বলে দিস ওর বিয়ের গিফট আমি দিতে রাজি।ও যেদিন বলবে সেদিনই হবে।
দু’ফোটা চোখের পানি পরলো।কিন্তু তা কেউ দেখার আগেই মুছে উপরে চলে গেলো।
————
প্রতিদিনের মতোও আজ রাতেও আরুর বেতিক্রম নেই।
সকালে ঘুম থেকে উঠে সব ঠিকঠাক পেলে।তাহলে রাতল ওর এমন লাগলো কেনো?রাতে আরু বেশ বুঝতে পেরছে কেউ গভীর ভাবে ওর কপালে চুমু খাচ্ছে।সাথে সারা মুখে।আর কী যেনো বলছে যা আরু কিছু শুনতে পায়নি।একবার ভাবে কেউ হয়তো সত্যি এসেছিলো আবার ভাবে প্রতি রাতেই তো আয়ানকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমায় তাই হয়তো স্বপ্নে এমন হয়।ইশশশ!যদি সব সময় স্বপ্নের দুনিয়ায় থকা যেতো কথা ভালো হতো।যেখাই নেই কোনো পিছুটান,নেই কোনো কষ্ট।এসব ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।এসে ঠিক আজো পেয়েছ চিরকুট।তাতে লেখা,
জান,
অনেক কেঁদেছো তুমি।আর না।আট মাত্র কিছু দিনের অপেক্ষা তারপর তোমাকে আমার কাছে এনে আমার বুকের মধ্যেখানি লুকিয়ে রাখবো।কাউকে দেখতে দিবো না।কাউকে ছুঁতে দিবো না।কোনো কষ্ট তোমাকে স্পর্শ করতে পারবে না।সব সময় আগলে রাখবো।প্রমিস।আমি জানি তোমার মধ্যে ঠিক কী চলছে এখন।তোমার এই কষ্টের জন্য হয়তে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ভাবে আমি জড়িয়ে আছি।তার জন্য সরি।কিন্তু কী করবো বলো কিছু পেতে হলে যে কি ছাড়তে হয়।তাই আমিও কিছু পাওয়ার আশায় কিছু ছাড়ছি।একদম কান্নাকাটি করবে না।তোমার চোখের পানি যে আমার সয্য হয় না।তা তুমি জানো না।ওহহ অবশ্য তুমি জানবে কীভাবে কোনোদিন আমাকে বুঝার চেষ্টাই করোনি।যাক সে সব কথা।নিজেকে প্রস্তুত করো খুব তাড়াতাড়ি আমার ঘরণী হয়ে আসার জন্য আর আমার অত্যাচার সয্য করার জন্য।লাভ ইউ।

আরু চিরকুটটা পরে ঠিক কী রিয়াকশন দিবে ও জানে না।হাসবে নাকী কাদবে তাও বুঝতে পারছে না।আরু চিরকুট টা জায়গায় রেখে দরজার কাছে আসতেই পায়ের নিচে কিছু পরলো।আরু ভ্রু কুচকে নিচ থেকে তা তুললো।হাতে নিয়ে দেখে একটা বোতাম।কিন্তু এটা কিসের?আর কার এটা।এমন বোতাম সহ জামা তো আরুর নেই।তাহলে কার?আর কিসেরই বা হতে পাটে এটা।আরু ভাবতে লাগলো।না মাথায় আসছে না কিছু তাি এটা ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে নিচে নেমে এলো।এসে দেখে ওর বাবা টেবিলে বসে আছে আর ওর মা কিচেন থেকে খাবার এনে রাখছে।আর তন্নি সবার প্লেটে রেখে তা সাজাচ্ছে।অনিম এখনো নামে নি।আরু দেখে মনি কিছু জামাকাপড় ধোয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছে।আরু ওর দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে সামনক আগাতেই হটাৎ থেকে গেলো।মনিকে দাড় করিয়ে অনিমের একটা ট-শার্ট হাতে নিলো।ট-শার্টের বোতামে গুলো দেখলো।হ্যা ঠিক এমনই বোতাম ছিলো ওর রুমে।এবার ও সিউর যে এটা কোনো ছেলেদের টি-শার্টের বোতাম।আরু কিছু টা অবাক হলো।ছেলেদেরটা কেনো ওর রুমে যাবে।মনি এর মাঝে চলে গেলো।আরু দাঁড়িয়েই আছে।অনিম নিচে এসে দেখে আরু দাড়িয়ে কী যেনো ভাবছে।তাই অনিম পিছন থেকে আরু মাথায় টোক দিলো।আরুরও ধ্যান ভাঙলো।ও তাকিয়ে দেখে অনিম।তাই চোখ গরম করে বললো,
আরুঃ টোকা মারলি কেনো?
অনিমঃ তুই খাম্বার মতো সামনে দাড়িয়ে আছস কেনো?আর কী ভাবছিস?
আরুঃ হুম… কিছু না।
অনিমঃ চল।ব্রেকফাস্ট করবি।
আরুঃ হুম।
ওরা টেবিলে গিয়ে বসলো।খাওয়াও শুরু করলো।কিন্তু আরুর মন পরে আছে সেই জায়গায়।আরুকে কিছু ভাবতে দেখে ওর মা বললো,
আদিরা আহমেদঃ কী হলো খাচ্ছিস না কেনো?
আরুঃ হুম..খাচ্ছি।…. আচ্ছা ভাইয়া কাল রাতে তুই আমার রুমে গিয়েছিলি?
অনিমঃ না তো কেনো?(খেতে খেতে বলে দিলো)
আরুঃ সত্যি যাসনি?
অনিমঃ ন…
তন্নিঃ হুম গিয়েছিলো।কেনো?
অনিমঃ আমি কখ……(তন্নি কিছু ইশারা করতেই)হ..হ্যা গি…গিয়েছিলাম।
আরুঃ এই তে বললি যাসনি।এখন আবার বলছিস গিয়েছিস🤨
তন্নিঃ আরে গিয়েছিলো।ঘুমিয়ে সব ভুলে গেছে মনে হয়।তাই না?(শেষের কথাটা দাতে দাঁত চেপে বললো)
আরুঃ গিয়েছিলে ভাইয়া।ওই ঠিক মতো বলতে পারছে না।আর তুই এতো সিউর করে বলছিস🤨
তন্নিঃ আব…গিয়েছিলো ও।আর তুই কী এখন আমাকে সন্দেহ করছিস?
আরুঃ আরে সন্দেহ করতে যাবো কেনো?আসলে কালকে রাতে মনে হয়েছিলো কেউ এসেছ।তাই বললাম।বাদ দে।
তন্নিঃ ওহহ।

আরু আর কিছু বললো না।ও অনিম আর তন্নির কথা বিশ্বাস করেছে কি না বুঝা গেলো না।আর এমনিতেও আগে আরু রুমে অনিম যেতো।যখন ওদের ঝগড়া হতো আরু জেদ করে শুয়ে থাকতো আর অনিম গিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে আসতো।কিন্তু আরুর বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর অনিম যায়নি।কিন্তু কালকে গেলো কেনো?
————-
তন্নিঃ আজকে আর একটু হলে আরুর সামনে ধরা পরে যাচ্ছিলাম।
………..
তন্নিঃ না একটু সন্দেহ করেছিলো আমাদের উপর কিন্তু পরে ওকে বুঝিয়ে অন্য কথা বলেছি।
………….
তন্নিঃ না ওতো বললো,ওর মনে হয়েছে কেউ ওর রুমে ছিলো।আর বেশি কিছু বলেনি।
………….
তন্নিঃ হুম হতেই পারে।একবার যেহেতু ওর মনে প্রশ্ন যেগেছে তো ও এর উত্তর খুজেই ছারবে।
……….
তন্নিঃ কী করবেন তাহলে?
………….
তন্নিঃ আচ্ছা।আমি খেয়াল রাখবো এটা নিয়ে আজকের পর থেকে।
……….
তন্নিঃ আচ্ছা এখন রাখি।

তন্নি কল কেটে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে আরু দাড়িয়ে আছে।আরুকে দেখে তন্নির ভয়ে কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেছে।ওর ভয় লাগছে আরু কিছু শুনে ফেলে নি তো।যদি শুনে তাহলে সব শেষ।তন্নি ভয়ে ভয়ল জিজ্ঞেস করলো,
তন্নিঃ তু..তুই এখানে?
আরুঃ কেনো আসা কী নিষেধ?
তন্নিঃ আরে কী বলছিস?নিষেধ হবে কেনো?হটাৎ এলি তাই বললাম।
আরুঃ ওহ..আসলে এমনি আসলাম।রুমে ভালো লাগছিলো না।
তন্নিঃ ওহ বস তুই।
আরুঃ হুম…কার সাথে কথা বলছিলি?

তন্নি ভয়ে একট শুকনো ঢোক গিললো।তারপরও নিজেকে সামলে বললো,
তন্নিঃ আব..ও..ওই..আমার এক কাজিন।
আরুঃ কোন কাজিন?ছেলে না মেয়ে?
তন্নিঃ তুই চি..চিনবি না।একটু দূর সম্পর্কের।
আরুঃ ওহ।কোথায় থাকে?
তন্নিঃ আব…ঢ..ঢা..ঢাকাতেই।
আরুঃ ওহ।পড়ালেখা করে নাকী কোনো চাকরি করে?
তন্নিঃ তুই পুলিশের মতো এতো জেরা করছিস কেনো?
আরুঃ আরে….
মারিয়াঃ বাহ! ননদ আর ভাবি মিলে তো ভালোই আড্ডায় মতে উঠেছে।আমাকে বাদ দিয়ে।
মারিয়কে দেখে তন্নির জানে পানি এলো।আর একটু হলে হয়তো আরু ওকে আরো পেচিয়ে ধরতো পরে সবটা না চাইতেও বলে দিতো।মারিয়া আসায় তন্নির মুখে হাসিটা আরু খুব ভালো করে দেখলো।তবুও মারিয়াকে বলে,
আরুঃ তুই হটাৎ?
মারিয়াঃ হুম আসার ছিলো।কালকেই তো তনুকে বললাম।
আরুঃ কই ও তো আমাকে কিছু বলেনি।
তন্নিঃ আব..ভুলে গিয়েছিলাম।
আরুঃ তোদের যে কী হয়।একবার ভাইয়া ভুলে যায় একবার তুই ভুলে যাস।এমন হলে তো তোদের বাচ্চা ভুলো মনের হবে।
তন্নিঃ হু😒ওকে নিয়ে কিছু বলবি না।
আরুঃ বেশ বলবো নাা।(তন্নির পেটে হাত রেখে)আমার ফুফিটা রাগ করেনা কেমন।তোমার ফুফি তো এমনি বলেছে।তুমি বড় হয়ে ঠিক তোমার ফুফির মতো হবে ঠুক আছে?

ওরা মেতে উঠে আড্ডায়।
———–
রাতে খাবার সময় সবাই একসাথে খাচ্ছে।এর মাঝে আরুর বাবা বললো,
আশরাফ আহমেদঃ সবার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
অনিমঃ কি কথা বাবা?
আশরাফ আহমেদঃ খাওয়া শেষ করো তারপর বলবো।

একে একে সবার খাওয়া শেষ সবাই বসে আছে লিভিং রুমে আরুর বাবা কী বলবে তা শোনার জন্য।প্রায় কিছু সময় পর আরুর বাবা বললেন,
আশরাফ আহমেদঃ আমি তোমাদের বাবা।আর কোনো বাবা চায় না তার সন্তান ভালো না থাকুক।সবাই চায় তার সন্তান যেনো সবচেয়ে সুখী থাকে পৃথিবীতে।
(সবাই চুপ)
আশরাফ আহমেদঃ তোমরা ছোট বেলা থেকে যা চেয়েছো তা দিয়েছি।তোমরা যা সিদ্ধান্ত নিয়েছো তাতে সবসময় তোমাদের পাশে ছিলাম।এবং ভবিষ্যতে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোমাদের পাশে পাবে আমাকে।
(সবাই চুপ)
আশরাফ আহমেদঃ আমি যানি আমা ছেলে মেয়ে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেয়না।আর এটাও জানো আমু তোমাদের জন্য কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিবো না।আমিও চাই আমার ছেলে সুখে থাকুক সারাজীবন।
(এবারও সবাই চুপ)
আশরাফ আহমেদঃ তাই আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।বিশেষ করে আরুর জন্য।আশা করি আমার মা আমার কথা রাখবে।
আরু কিছুটা অবাক হলো।ওর বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত।তাও আবার হটাৎ।সবার মুখের দিকে তাকলো।সবার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে ওরা সবাই আগে থেকে জানতো।শুধু আরু বাদে।তাই ও বললো,
আরুঃ কী কথা বাবা?আমার সাধ্যের মধ্যে হলে আমি অবশ্যই রাখবো।
আশরাফ আহমেদঃ আমি আবার তোমার বিয়ে ঠিক করেছি।
আরুঃ মানে?(বসা থেকে দাড়িয়ে)
আশরাফ আহমেদঃ হুম যা শুনেছো তাই।বাবা তোমার খারাপ চায় না মা।তোমাকে এভবে প্রতিনয়ত চোখের সামনে গুমরে মরতে দেখে আমি থাকতে পারছি না।শুধু আমি কেনো? কোনো বাবা মা’ই পারবে না।
আরুঃ……….
আশরাফ আহমেদঃ কী হলো মা?কী বলছো না কেনো?
আরুঃ সব ঠিক করে ফেলেছো?
আশরাফ আহমেদঃ না তুমি হ্যা বললেই ওনাদের জানাবো।
আরুঃ আমাকে আগে একবার জানালে কী হতো বাবা?
আশরাফ আহমেদঃ বাবাকে ভুল বুঝো না।তোমার….
আরুঃ যদি রাজি হই তাহলে কবে বিয়ের ডেইট ফিক্সড করবে?
আশরাফ আহমেদঃ তুমি যেদিন বলবে।
আরুঃ আমাকে একটু সময় দাও।
আশরাফ আহমেদঃ বেশ।

আরু আর কিছু না বলে উপরে চলে আসলো।জীবনের মোড় এখন কোথায় ঘুরবে তা কেউ বুঝতে পারছে না।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here