#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-২৯,৩০
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা
২৯
মাঝে চলে গেছে ২ সপ্তাহ।এইকয়েকদিন আরু বাসা থেকে তেমন একটা বের হয়নি।যদিও বের হয়েছে গাড়ি নিয়ে।কিন্তু আরু ওইদিনের চিরকুটটা নিয়ে অনেক ভেবেছে।কে দিতে পারে ওকে এই চিরকুট। বর এমন লেখার মানেই বা কী।প্রথম কয়েকদিন এসব ভেবে পরে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছে।
আজ থেকে অনিম আর তন্নির বিয়ের শপিং শুরু করবে।আর ২ সপ্তাহ আছে ওদের বিয়ের।সবাই এখন থেকে কাজে লেগে পরেছে।তন্নির বাবার তো হুস নেই
এক মাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা।কোনো ত্রুটি তিনি রাখতে চান না।এদিকে আরুর বাবারও একই অবস্থা।পরিবারের প্রথম আর এক মাত্র ছেলের বিয়ে।তাই তিনিও সব কিছু ঠিক ঠাক মতো করতে চান।
শপিংয়ের দায়িত্ব পরেছে ছোটদের হাতে।শুধু শাড়ি,গয়না গুলো বড়রা সহ কিনবে।আজ আরুরা বেড়িয়েছে শপিং করতে।সাথে আছে তন্নি,মারিয়া,ইশিকা,শাকিল।অনিমকে বলেছিলো যাওয়ার জন্য কিন্তু অনিম বলেছে ওর একটা কাজ আছে ও পরে আসবে।মারিয়াও রাফসানকে বলেছে।রাফসানও বলেছে পরে আসবে।তাই আপাতত ওরাই এসেছে।(রাফসান আর মারিয়ার সম্পর্কে সবাই জানে তাই ওদের কোনো সমস্যা নেই)।আরু দের শপিং করা এখনো হয়নি।এসেছে প্রায় ১ ঘন্টা।শাকিল একা একা প্রচুর বোর হচ্ছে।শাকিল ভেবেছিলো অল্প সময়ে শেষ হয়ে যাবে কিন্তু ও এটা জানতো না মেয়েরা একবার শপিংয়ে এলে দুনিয়ার খবর থাকে না😅।শপিংয়ের মাঝামাঝি সময়ে শাকিল এসে বললো,
শাকিলঃ বোনরে আর কতোক্ষন?
তন্নিঃ ভাইয়া আর অল্পেএকটু।
শাকিলঃ সেই আধঘন্টা ধরে শুনছি তোদের অল্পেএকটু।😟এই অল্পেএকটু শেষ হবে কবে?😖
তন্নিঃ বিয়ের শপিং সময় তো সময় একটু লাগবেই।
শাকিলঃ তাই বলে এতো সময়?(ওদের হাতের দিকে তাকিয়ে)আর ১ ঘন্টা ধরে ঘুরেফিরে তোদের হাতে মাত্র ৩ টা ব্যাগ🙆♂️
ইশিকাঃ শপিংয়ে যেহেতু এসেছন সেহেতু বসে থাকেন।বসে থাকতে না পারলে চলে যান।আসতে বলেছে কে আপনাকে😒
শাকিলঃ সেই তো এখন এসে বুঝছি।কী ভুলটা করেছি।
আরু অনিম কখন আসবে?
আরুঃ ভাইয়া তো বললো ১ ঘন্টর ভিতরে আসবে।
ওদের কথার মাঝেই রাফসান চলে এলো।রাফসান এসে বলতে লাগলো,
রাফসানঃ সরি সরি অনেকটা লেইট হয়ে গেছে আসতে আসতে।
মারিয়াঃ আরে ওতোটাও লেইট হয়নি।
রাফসানঃ যাক তাহলে বাঁচলাম।
শাকিলঃ ও কে?ও কে তো ঠিক চিনলাম না।
তন্নিঃ ভাইয়া ও মারিয়ার উডবি।আর রাফসান ভাইয়া (শকিল কে দেখিয়ে)এটা আমার ভাই শাকিল।
রাফসানঃ ওহ ভালো আছেন ভাইয়া?
শাকিলঃ আলহামদুলিল্লাহ।তুমি?
রাফসানঃ এইতো ভালো।তা তোমাদের শপিং কতদূর?দেরি করলাম না তো?
শাকিলঃ ভাই তুমিই ঠিক টাইমে এসেছো।দেখো না আমার মতো অবলা একটা ছেলেকে সেই ১ ঘন্টা ধরে এখানে বসিয়ে রেখেছে।😖
রাফসানঃ কী বলছেন ভাইয়া এতোক্ষন?😵
শাকিলঃ সে আর বলছি কী?কিন্তু দেখো হাতে মাত্র ৩ টা ব্যাগ।
রাফসানঃ ভাই এই মেয়েদের কথা বলে লাভ নেই।এই শপিং আজ শেষ হবে কী না আল্লাহ ভালো জানে।কেনো যে আসতে গপলাম।(শেষের কথাটা আস্তে আস্তে বললো)
মারিয়াঃ কী বললে তুমও😤
রাফসানঃ আব..না কিছু না।আরু কেমন আছো?(আরু যে এসেছে তা রাফসানকে বলা হয়েছে।কিন্তু সামনা সামনি আজ দেখা হলো।)
আরুঃ এইতো ভালো ভাইয়া আপনি।
রাফসানঃ আমিও ভলো আছি।আচ্ছা তোমরা বাকি শপিংটা শেষ করো আমরা এখানেই আছি।
আরুঃ আচ্ছা।
রাফসান আর শাকিল চলে গেলো অন্য দিকে।আর আরুরা আবার কেনাকাটায় মন দিলো।প্রায় ৩০ মিনিট পর অনিম এলো।এসে চারপাশে তাকাচ্ছে কিন্তু কাউকে দেখতে পেলো না।রাফসানের নজর এলো অনিমের দিকে।রাফসান হাত উঠিয়ে অনিমকে ডাক দিলো।অনিম নিজের নাম কারো মুখে শুনে দেখলো রাফসান আর পাশে শাকিল আছে।অনিমও হাসি মুখে ওইদিকে এগিয়ে গেলো।অনিম গিয়ে বললো,
অনিমঃ কী খবর?তোমরা এখানে লেডিস্ দের দেখছি না যে?
শাকিলঃ তাদের কথা আর বলো না ভাই।
অনিমঃ কেনো কী হয়েছ?
শাকিল একটু আগের সবটাই খুলে বললো।শাকিলের কথা শুনে অনিম হাসতে হাসতে শেষ।ওদের হাসির মাঝেই রাফসানে কল এলো।দেখলো মারিয়া কল করেছে।রাফসান রিসিভ করে ওপাশ থেকে কী যেনো বললো।রাফসান ও বললো,
রাফসানঃ হ্যা অনিম ভাইয়া এসেছ।আর তোমরা কোথায় আছো বলো?আসছি।
ওপাশ থেকে কী যেনো বললো।রাফসান ‘আচ্ছা’ বলে কল কেটে দিলো।রাফসান অনিম আর শাকিলের দিকে তাকিয়ে বললো,
রাফসানঃ চলো ভিতরে।আমাদের না-কি তাদের প্রয়োজন।
অনিমঃ এখন আবার কী কাজে প্রয়োজন?
শাকিলঃ নিশ্চয়ই ব্যাগ গুলো এখন আমাদের ঘাড়ে গছাবে।আমি যাবো না😣
রাফসানঃ আহা!আগে গিয়ে দেখি।চলো।
ওরা আরুদের কাছে যাচ্ছে।গিয়ে দেখে কেউ লেহেঙ্গা,কেউ শাড়ি,কেউ আবার গাউন দেখছে।
ইশিকা একটা লেমন কালার গাউন দেখছে।আয়নার সামনে গিয়ে গাউনটা গায়ের উপর রেখে নিজেকে দেখছে।গাউনটা তাকে মানাবে কী না তাই ভাবছে।যখন এসব ভাবছে তখন পাশ থেকে কে যেনো বললো,
“”এতো ঘুরে ফিরে দেখার কিছু নেই।সে যেই কালারই পরবে সেই কালারই পরীর মতো লাগবে””।
ইশিকা কথাটা শুনে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই।কিন্তু ২/৩ ফিট দূরে শাকিল দাড়িয়ে আছে।ইশিকা একবার ভাবছে শাকিল এই কথাটা বলেছে না-কি অন্য কেউ।আবার ভাবছ শাকিল কেন বলতে যাবে?হয়তো অন্য কেউ কারো প্রিয় জনকে বলেছে।এই ভেবে ইশিকা ড্রেসটা রেখে দিলো।এটা ওর পছন্দ হয়েছে কিন্তু পরলে কেমন মানাবে তাই ভেবে রেখে দিলো।ঘুরে ২ পা এগিয়ে গেলো।আবার কী মনে করে যেনো এসে ড্রেসটা নিয়ে নিলো।
ইশিকা ড্রেসটা নেওয়ার পর একজনের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
———-
মারিয়া কী নিবে ভাবছে।য দেখছে সবগুলোই ভালোলাগছ।কোনটা রেখে কোনটা নিবে বুঝছে না।তাই অসহায় মুখ নিয়ে রাফসানের দিকে তাকালো।মারিয়ার তাকানো দেখে রাফসান হেসে দিলো।আর বললো ‘আমি দেখছি’।রাফসান অনেক গুলো লেহেঙ্গা দেখে একটা পারপেল কালারের লেহেঙ্গা হাতে নিলো।মারিয়ার গাঁয়ের উপর রেখে দেখলো কেমন মানাচ্ছে।রাফসান মারিয়াকে বললো ট্রায়াল রুমে গিয়ে দেখে আসতে।মারিয়া ও তাই করলো।
মারিয়া লেহেঙ্গা পড়ে এসে রাফসানের সামনে দাঁড়ালো।রাফসান অন্য দিকে ফিরল ছিলো মারিয়ার আওয়াজে ফিরে দেখে।রাফসানের চোখ আটকে গেলো।রাফসান মারিয়ার সামনে গিয়ে বললো,
রাফসানঃ মাশাআল্লাহ পুরো বউ বউ লাগছে।আমার বউ।
রাফসানের কথা শুনে মারিয়া লাজুক হেসে মাথা নামিয়ে ফেললো।
———-
আরু আর তন্নি এক সাথে আছে।আরু যতো চাইছে তন্নির হাত থেকে ছুটতে ততো যেনো তন্নি ওকে ঝাপটে ধরছে।আরু চাইছে ওর ভাইকে তার বউের কাছে আসতে সুযোগ দিতে কিন্তু তন্নি তা দিচ্ছে না।তন্নির এক কথা ‘আরু যেনো ওকে ছেড়ে না যায়।যদি যায় তাহলে ও আরুর সাথে কথা বলবে না।’
আর এদিকে আরু ভাইয়ের অসহায় মুখ দেখে না পরছে তন্নিকে কিছু বলতে না পারছে করতে।মাঝখান দিয়ে আরু ফেঁসে যাচ্ছে।
অনিমও বুঝছে তন্নি এখনো ওর উপর অভিমান করে আছে।কিন্তু অনিমও এখন তন্নির অভিমন ভাঙতে চায় না।তন্নির এমন অবস্থা দেখে অনিম সাইডে চলে গেলো।
আরু এবার পিছনে ফিরে দেখে অনিম নেই।তাই তন্নিকে বললো,
আরুঃ ভাইয়া চলে গেছে।এবার অন্তত হাতটা ছাড়।
তন্নি চারদিকে তাকিয়ে দেখলো সত্যি অনিম নেই।তা দেখে আরুর হাতটা ছেড় দিলো।এবার আরু বললো,
আরুঃ আমি জানি ভাইয়া একটা ভুল করেছে।যার জন্য অনেকবার ক্ষমাও চেয়েছে।আমি এটাও বলছি না যে তুই ভইয়াকে শাস্তি দিস না।দে আমিও চাই ভাইয়া ওর ভুলের শাস্তি পাক।কিন্তু এভাবে না।আসলে কী বলতো আমরা সহজে যা পাই তার মূল্য আমরা বুঝি না।আমাকেই দেখ,তাকে আটকে রাখতে চেয়েছিলাম কিন্তু সে আমার হতে চায়নি।
আর এদিকে দেখ ভাইয়া তোর জন্য কতো কি করছে শুধু তোকে পাওয়ার জন্য কিন্তু ভাইয়া তোর মন টাই এখনো পেলো না।এখানে অবশ্য ব্যর্থতা ভাইয়ারই🙂
তন্নিঃ………………………
আরুঃ এখন বলবি আমি বোন হয়ে ভাইয়ের পক্ষ টানছি কিন্তু না এগুলাই বাস্তব।তাই বলছি হারিয়ে যাওয়ার আগে তার মূল্য বুঝ।আমার কথা গুলো খারাপ লাগলে সরি।যাই হোক,আমি ওইদিকটায় আছি তুই এইদিকটা দেখ।কিছু লাগলে ডাক দিস।
আরু চলে গেলো।আর তন্নি ভাবছে আরুর কথা গুলো।”সত্যি কী সব পেয়েও আমি হারাতে চলেছি।…যদি আরুর মতো হয়?..না না কী ভাবছি।আরুর মতো হলে তো আমি মরেই যবো।আরু শক্ত ছিলো,নিজেকে শক্ত তৈরি করতে পেরেছে কিন্তু আমি তো তা পরবো না।অনিমকে ছাড়া বাঁচা আমার পক্ষে সম্ভব না।অনেক হয়েছে এবার সবটা ঠিক করতে হবে”।
এসব ভেবে অনিমকে খুজতে লাগলো।আরু এতোক্ষন আড়াল থেকে দেখছিলো তন্নির ছটফটানি।আরু আজ ইচ্ছে করে তন্নিকে কথা গুলো শুনালো।একদিকে নিজের ভাই আর অন্য দিকে বান্ধবী।দু’জন ভালোবাসে দু দিকে কষ্ট পাচ্ছে।এটা ও হতে দিতে পারে না।তাই এসব কথা শুনিয়ে তন্নির ভিতরটা লাড়িয়ে দিয়েছে।
আরু কিছুটা সামনে এগিয়ে এসে দেখে মারিয়া আর রাফসান হেঁসে কথা বলছে আর নিজেদের শপিং করছে।ওদের দেখে আরুর সেই পুরানো কথা,পুরানো মানুষটার কথা মনে পরে গেলো।”আজ সব ঠিক থাকলে ওর আর আয়ানের সম্পর্কও একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হতো।একসাথে সুখে থাকতো ওরা”।
আরুর এমন ভাবনার জন্য নিজের উপর আবার রাগ উঠলো।কেনো বার বার ওই কথা আর মানুষটার কথা মনে পরছে।ও তো সবটা ভুলতে চায় তাহলে কেনো বার বার মনে পড়ছে।’যে আমাকে নিয়ে ভাবে না৷ তাকে নিয়ে আমি কেনো ভাববো’।আরু মাথর দু’পাশে চেপে ধরে বললো,’উফ!!কেনো ভবছি এসব আমি।আর পারছি না এসব’।
আরু অন্য দিকে চলে গেলো।আরুর এতোক্ষন প্রতিটা মুভমেন্ট ফলো করেছে একজন।আরু যেতেই সে আড়াল থেকে বেড়িয়ে আসলো।আর পাশের দেওয়ালে হাত দিয়ে জোরে একটা পাঞ্চ মারলো।হাতে ব্যাথা পেয়েছে কিন্তু এই ব্যাথ মনের ব্যাথার কাছে কিছু না।হাত মুঠো করে বলছে,
“অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমায় এতোটাই যে তার হিসাব হবে না।কিন্তু বিশ্বাস করো আমি বুঝতে পারি নি।আমার দ্বারা এতো বড় ভুল হবে।তেমাকে দেওয়া কষ্ট গুলো আমাকে এই ৩ বছর কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।না শান্তি পাচ্ছি আর শাস্তি পাচ্ছি।কিন্তু আমিতো শান্তিও চাই শাস্তিও চাই তাও তোমার থেকে।আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে সবটা আদায় করবোই।”
বলেই লোকটা আরুর পিছনে আবার ছুটলো।
আরু একটা দোকানের সামনল দিয়ে যাওয়ার সময় একটা লেহেঙ্গা চোখে পরলো।লেহেঙ্গার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।লেহেঙ্গাটা ছিলো কালো আর গোল্ডেন কালারের।পুরোটা লেহেঙ্গা কালো কাপড়ের তাতে গোল্ডেন কালার স্টোন আর সুতার কাজ করা আর ওড়না টা ছিলো গোল্ডেন কালারের তাতে চারপাশে কালো সুতার কাজ করা।সিম্পল কিন্তু আরু এক দেখাতে পছন্দ হয়েছে।এটাই কিনবে বলে ঠিক করলো।লেহেঙ্গা হাতে নিয়ে দাম দেখে আবার ব্যাগের দিকে তাকালো।এটার যা দাম তা ওর সাথে এখন নেই।আরু চারপাশে তাকালো।অনিমকেও দেখা যাচ্ছে না কোথাও। আরু দোকানের লোকের সাথে কাথা বললো,
আরুঃ ভাইয়া এই লেহেঙ্গাটা একটু রাখুন।আমি টাকা নিয়ে আসছি।এটা কেউ যেনো না নেয়।এটা একটু দেখবেন।
লোকটা হাসি মুখে ‘আচ্ছা’ বললে আরু চলে গেলো অনিমের থেকে টাকা আনতে।
অনিমকে গিয়ে পেলো তন্নির থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে।তন্নি নিজের বাসায় পরার ড্রেস কিনছে আর একটু পর পর অনিমের দিকে তাকাচ্ছে আর মুচকি হাসি দিচ্ছে।এদের এই অবস্থা দেখে আরুর ডিস্টার্ব করতে ইচ্ছে করছিলো না কিন্তু তাও করতে হবে কিছু করার নেই।আরু গিয়ে অনিমের থেকে টাকা নিয়ে দোকানে গেলো।কিন্তু দোকানে গিয়ে আরেক কান্ড।
আরুঃ ভইয়া আপনার টাকা।
দোকানিঃ আপু এটা বিক্রি হয়ে গেছে।
আরুঃ কী বলছেন।আমিতো আপনাকে বললাম এটা রাখুন আমি টাকা নিয়ে আসছি।আর এর ভিতরে আপনি বিক্রি করে দিলেন।
দোকানিঃ আপনার ভুল হচ্ছে।আমি অন্য কারো কাছে বিক্রি করিনি।এটা আপনার কাছেই বিক্রি করেছি।
আরুঃ মজা করছেন আপনি আমার সাথে?আমি টাকা নিয়ে আসলাম মাত্র।আপনি আমার কাছে বিক্রি করলেন কী করে।
দোকানিঃ কিন্তু এটা আপনার নামেই বিক্রি হয়েছে।এই দেখুন বিল আপনার নামে।(বিলের কাগজ এগিয়ে দিয়ে)
আরুঃ কিন্তু এটা কী করে সম্ভব?আমি তো মাত্র টাকা নিয়ে আসলাম।আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।
ওদের কথার মাঝেই মারিয়া এলো।এসে জিজ্ঞেস করলো কী হয়েছে।আরুও সবটা খুলে বললো।মারিয়া বললো,
মারিয়াঃ এতো কথা না বলে তোর নামে যেহেতু বিল হয়েছে নিয়ে নে না।তাহলেই তো হয়।
আরুঃ কী বলছিস তুই কে না কে নিয়েছে আবার আমার নামে বিল হয়েছে বলে আমি নিবো কেনো।ভাইয়া আপনি আমাকে সেইম আরেকটা দিন।
দোকানিঃ সরি মেম এটাই শেষ।আমাদের কাছে আর নেই।
মারিয়াঃ দেখেছিস নেই।এখন এটা যেহেতু আছে নিয়ে না।
আরুঃ কিন্তু…..
মারিয়াঃ কোনো কিন্তু না।খুব খিদে পেয়েছে।লাঞ্চ করে নেই আগে চল।আর আমার শপিং ও অলমোস্ট ডান।
আরুঃ হুম
আরু বহু দ্বিধা নিয়ে লেহেঙ্গাটা নিয়ে চলে আসলো।ও যেতেই পাশ থেকে একটা লোক বেরিয়ে এসে দোকানির সাথে হাত মিলিয়ে হেসে দিলো।
————-
রাত ৮ টা আরুরা শপিং করে এসেছে বিকালে
সবাই ভিষণ টার্য়াড ছিলো।এসেই সবাই ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গেলো।একটু আগে সবাই নাস্তার খাওয়ার জন্য এসেছে নিচে।গেস্ট মোটামুটি কিছু এসে পরেছে।আরো আসবে পরে।সবাই নাস্তা শেষ হওয়ার পর বললো শপিং গুলো দেখবে।তাই সবাই শপিং নিয়ে বসলো।একে একে সবাই সব দেখছে।সব শেষে এখন আরুর লেহেঙ্গাটা দেখবে।কিন্তু আরু তা কউকে দেখতে দেয় নি।বলেছে,
আরুঃ এখন কেউ দেখতে পারবে না।বিয়ের দিন সবাই দেখবে তখন বলবে কেমন হয়েছে।
এটা বলে আরু ব্যাগ টা নিয়ে উপরে চলে আসলো।আরুর এমন কান্ড দেখে সবাই হাসলো।আরু রুমে এসে ব্যাগ থেকে লেহেঙ্গাটা পুরো খুলে দেখতে লাগলো যতো দেখছে ততোই যেনো এটা ভালো লাগছে।একসময় লেহেঙ্গা থেকে একটা কাগজ পরলো।আরু অবাক হলো।এটা কিসের কাগজ?আবার ভাবলো হয়তো কোনো সীল হবে।তাই ভেবে ফেলে দিতে গেলো।কিন্তু মনে কৌতুহল জাগলো কোনো সীল যদি হয় তাহলে তা সাদা রঙের হবে কিন্তু এটা তো নীল রঙের।কিসের কাগজ এটা?
আরু এবার রুমে এসে কাগজ টা খুললো।সেই দিনের চিরকুটের হাতের লেখার মতো।আরু এবার পরতে লাগলো,
💕তোমার রাগের কারণ হতে চাই,
আর রাগিয়ে বলবো হ্যা এটাই প্রেম,এটাই ভালোবাসা। 💕
দিবে কী সেই সুযোগ আরো একবার?
কথা দিচ্ছি কোনো দিন আসতে দিবো না ওই কাজল কালো চোখে জল।
দিবে কী তোমায় আগলে রাখার আরেকটা সুযোগ?
চলবে…..
#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-৩০
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা
বিয়ে নিয়ে একটা মেয়ের জীবনে অনেক স্বপ্ন থাকে।সে বউ সাজবে।কারো জীবনের সাথে সারাজীবন জড়িয়ে পরবে।বাবা মা’র ছায়াতল থেকে সেই নতুন মানুষটার নিকট নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া।আরো কতো কী।(আমি বেশি কিছু লেখতে পারি না এসব বিষয়ে।😌)
কাল অনিম আর তন্নির বিয়ে।আজ গায়ে হলুদ।আগে অনিমের গায়ে হলুদ হবে তারপর সেই হলুু তন্নির কাছে যাবে।যেহেতু আগে অনিমের হলুদ তাই মারিয়া ও এখন এখানে আছে।এখন প্রায় বিকাল।একটু পর থেকেই হলুদের আয়োজন শুরু হবে।
আরু সেই দিনের চিরকুটটা পেরে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো।
এটা কে দিতে পারে ওকে?কে লিখেছে এটা?আর ওকেই বা,কেন দিলো?আর যদি দিয়েই থাকে তাহলে এমন কথার মানে কী?আর সবথেকে বড় কথা এই দুইটা চিরকুটের লেখা গুলো আরুর খুব চেনা।মনে হচ্ছে এই লেখা গুলো এর আগেও অনেক দেখেছে।কিন্তু কার মনে করতে পারছে না।আরুর এসব ভাবনার মাঝেই ইশিকা এলো।ইশিকা এসে দেখে আরুর হাতে একটা কাগজ নিয়ে দাড়িয়ে আছে।ইশিকা হেসে এগিয়ে এসে বললো,
ইশিকাঃ কী রে লাভ লেটার পেলি নাকী?
আরুঃ………
ইশিকাঃ ওই কোন দেশে পারি জমালি?(আরুকে ধাক্কা দিয়ে)
আরুঃ হু..হুম কিছু বলছিস?(হুস এলো এবার)
ইশিকাঃ বলছি কোন চিন্তায় এমন রোবট হয়ে গেলি?আর হাতে এটা কী রে?
আরুঃ সেটা তো আমিও বুঝছি না।
ইশিকাঃ মানে?হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছিস আর বলছিস তুই জানিস না।দেখি কী এটা।
কাগজটা আরু হাত থেকে নিয়ে পড়তে লাগলো।এটা পড়ে ইশিকা অবাক।অবাক নিয়েই বললো,
ইশিকাঃ এটা কী? আর কে দিলো তোকে?
আরুঃ জানি না।
ইশিকাঃ তোর হাতে ছিলো আর তুই বলছিস তুই জানিস না।মজা করছিস?
আরুঃ আরে শুন।…..(আরু এবার ২ চিরকুটের সব কাহিনী খুলে বললো)
ইশিকাঃ কী বলছিস কী?এমন সিক্রেট লাভার কোত্থেকে টপকালো।তবে যেই হোক লেখা গুলো আমার ভালো লেগেছে।
আরু চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই ইশিকা মিয়িয়ে গেলো।মিনমিন গলায় বললো,
ইশিকাঃ এভবাে তাকাস কেন দূর ভাল্লাগে না।
আরুঃ আব…
ওদের কথার মাঝেই আরুর মা নিচ থেকে ডাক দিলো।আরুও ‘আসছি’ বলে চলে গেলো।
—————
আরু এখনো চিরকুটের কথা ভাবছে।আর চিরকুটের মালিকের কথা।এমন সময় একটা মেসেজ এলো আরুর ফোনে।কে এইসময় দিলো ভাবছে।ফোন হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার থেকে একটা মেসেজ এসেছে।আরু মেসেজ ওপেন করে দেখলো,
“আমাকে মিস করছো জানপাখি?অবশ্য তোমাকে বলতে হবে না তোমাকে দেখলেই বুঝা যায়।যাই হোক,আমার চিন্তা বাদ দিয়ে ভাইয়ের বিয়েতে আনন্দ করো।আর নিজের বিয়ের ও প্রস্তুতি নাও।”
মেসেজ দেখে আরু অবাক।এটা কে লেখলো ওকে?আর বিয়ে মানে?কার বিয়ে কিসের বিয়ে?লোকটা কী পাগল নাকী?ও তো কোনো দিন বিয়ে…….।আরু এবার লোকটাকে কল করতে যেতেই আরেকটা মেসেজ এলো,
“আমাকে খোঁজার এতো তাড়া কেনো জানপাখি?তুমি শত চেষ্টা করলেও এখন আমাকে পাবে না।সময় হলে আমিই ধরা দেবো তোমার কাছে।”
এই মেসেজ দেখেও আরু অবাক।হচ্ছেটা কী ওর সাথে।আরু এবার নিজের মাথা চেপে ধরলো।এর মাঝেই মারিয়া আর ইশিকা এলো।(এই কয়েকদিনে ইশিকার সাথে মারিয়া তন্নির অনেক ভাব জমেছে)ওরে এসে দেখে আরু মাথায় হাত দিয়ে বসপ আছে।ইশিকা আরুর সামনে এসে বললো,
ইশিকাঃ কী রে এভাবে বসে আছিস কেনো?মাথা ব্যাথা করছে?
আরুঃ…………
মারিয়াঃ কী রে কথা বলছিস না কেনো?
আরুঃ ওই মে..মেসেজ….
মারিয়া আর ইশিকা একে অপরের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকালো।ইশিকা এগিয়ে গিয়ে আরুর ফোন হাতে নিলো।মেসেজ অপশনে গিয়ে দেখে লেখা গুলো।তারপর মারিয়াকে দিলো।মারিয়াও পরলো।এবার মারিয়া কী বুজলো কে জানে কিন্তু আরুকে হালকা করতে বললো,
মারিয়াঃ আরে কে না কে মেসেজ দিয়েছে তা নিয়ে পরে আছিস।বাদ দে তো এসব।আয় রেডি হয়ে নি।
ইশিকাঃ হুম ঠিক বলেছে মারিয়া।বাদ দে এসব।তবে আমার কিন্তু তোর এই সিক্রেট লাভারকে দেখার অনেক ইচ্ছা।
আরুঃ তোরা কেউ আমার ব্যাপারটা বুঝছিস না।
মারিয়াঃ ঠিক আছে ঠিক আছে।এসব বুঝাবুঝি পরে হবে।আগে চল তৈরী হয়ে নেই।লেট হয়ে যাচ্ছে।
মারিয় কথা গুরিয়ে নিলো।আর আরুকেও স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো।তারপর ওরা তৈরী হয়ে নিলো।সবাই আজকে কমলা কালারের ড্রেস পরবে।ছেলেরা কমলা কালার পাঞ্জাবি।আর মেয়েদের,ইয়াং রা সবাই লেহেঙ্গা আর সিনিয়ররা কমলা কালার শাড়ি।আর অনিম আর তন্নির বাসন্তী কালারের পাঞ্জাবি আর শাড়ি।
আরু আজ কমলা কালার লেহেঙ্গার সাথে কানে বড় বড় দুল পরেছে যা কমলা আর হোয়াইট পাথরের,গলায় চিকন একটা চেইন সাথে লকেট,কপালে টিকলি,হাতে কমলা আর সাদা কাচের চুরি পুরো হাত ভর্তি।মুখে মেকআপ একটু কম।চোখে টা আর্ট করা আর ঠোঁটে কমলা কালার লিপস্টিক।এক কথায় আরুকে আজ কমলা পরি লাগছে।অবশ্য শুধু আরুকে না সবাইকে সুন্দর লাগছে।মারিয়া মেকআপটা একটু বেশি করেছে কিন্তু ভালো লাগছে।আর ইশিকাও ফর্সা হওয়াতে ওকে ততোটা মেকআপ করা লাগে নি।
আরুরা রেডি হয়ে নিচে নামলো।
সবাই ওদের দেখে হা হয়ে আছে।নিচে নামতেই সবাই ওদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে।সবাই অনেক আনন্দ করছে।হাসি মাজার মাঝেই এখান কার হলুদ শেষ হলে।এবার এই হলুদ নিয়ে ওরা যাবে তন্নিদের বাসায়।তাই রওনা দিলো।
——
তন্নিদের বাসায় আসতেই সবাই ওদের আপ্যায়নে লেগে পরলো।তারপর শুরু হলো এখানকার হলুদের অনুষ্ঠান।
সবাই তন্নিদের বাসার ছাদে।অনেক আনন্দের সাথে সময় পার হচ্ছে।কিছুক্ষন আরুর সামনে দিয়ে কেউ কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে যাওয়ার সময় ভুলক্রমে তা আরুর ড্রেসের ওপর পরে।ড্রিংকস ফেলা ছেলেটা অসহায় মুখ করে সরি সরি বলছে।আরু তা দেখে ইট’স ওকে বলে চলে যেতে বললো।ছেলেটা যাওয়ার কথ শুনে হাসি মুখে চলে গেলো।আরু এবার ড্রেস পরিষ্কার করার জন্য ওয়াশরুমে যাবে।তন্নিদের বাসার সবটাই ও চেনে তাই কাউকে না বলে নিচে নেমে গেলো।আরু ভাবলো নিচে কেউ না কেউ অবশ্যই থকবে।
আরু তন্নিদের বাসায় ঢুকে দেখলো কেউ নেই।আবার ভাবলো সবাই হয়তো ছাদে।যাক আমি ড্রেসটা ওয়াশ করে তাড়াতাড়ি চলে যাই।এই ভেবে তন্নির রুমের ওয়াশরুমে চলে গেলো।
ওয়াশরুমে এসে একটু নিচু হয়ে ড্রেসের নিচটা ওয়াশ করছে।এর মাঝেই মনে হলো কেউ রুমের দরজা লক করেছে।প্রথমে মনে ভুল ভেবে আবার নিজের কাজ করতে লাগলো।কিন্তু কিছুক্ষন পর রুমের দিকে তাকিয়ে দেখলো পুরো রুম অন্ধকার।আরুর মনে পরলো আসার সময় তো দেখলো লাইট জ্বলছে।এখন বন্ধ করলো কে।এটা ভাবার মাঝেই মনে হলো রুমে ও ছাড়া আরো কেউ আছে।এবার ওয়াশরুমের দরজার সামনে এাে দাড়ালো।এবার আরুর ভয় হতে শুরু করলো।পুরো বাসায় ও ছাড়া কেউ নেই।যদি কোনো বিপদ হয় চিল্লালেও কেউ শব্দ পাবে না।কারণ ছাদে অনেক জোরে গান চলছে।এর মাঝেই ওয়াশরুমর লাইট ও অফ হয়ে গেছে।এবার আরু ভয়ে যেনো চিৎকার দিতে ভুলে গেছে।পুরো রুম অন্ধকার কিন্তু বাহিরের ল্যাম্পপোস্টের আলোতে আরু বুঝতে পারছে একটা ছায়া ওর দিকে এগিয়ে আসছে।আরু এবার ভক জমে এসেছে।চোখ বন্ধ করে সাহস জুগিয়ে চিৎকার করার জন্য মুখ খুলতেই একটা শক্ত হাত ওর মুখ চেপে ধরলো।এই স্পর্শ মনে হচ্ছে আরুর খুব চেনা।কিন্তু এখন এই চেনা স্পর্শ সাইডে রেখে এই বিপদ থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটপট করছে।অন্ধকারের জন্য মুখটাও ভালো করে চেনা যাচ্ছে না।আরুর এমন ছটপটানি দেখে লোকটা আরুর কানের কাছে মুখ এনে স্লো ভয়েজে বলতে লাগলো,
“এতো ছটপট করো কেনো?তোমাকে খেয়ে পেলতে আসিনি।চুপ।(কন্ঠ শুনে আরুর বুকটা ধক করে উঠলো কিছুক্ষনের জন্য চুপ হলেও আবার শুরু হলো)আবার শুরু করেছো।বুঝেছি এভাবে হবে না”।
লোকটা আরুর আরো কাছে এলো।এবার আরুর জমে গেলো।ভয় আর অন্য রকম একটা অনূভুতিতে।আরুকে একটু চুপ হতে দেখে এবার লোকটা করলো একটা সাংঘাতিক কাজ।আরুর এমন ভয় আর অনুভুতির মাঝেই টের পেলো ওর ডান সাইডের কোমর থেকে শুরু করে পেট পর্যন্ত তরল কিছু।আরু এবার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।আবার লোকটা বাম পাশের কোমর থেকে পেট পর্যন্ত একই কাজ করলো।আরু কিছু করতেও পারছে না।মুখের উপরতো লোকটা হাত দিয়ে রেখেছে।কী করবে ও।এবার আরু ভয়,রাগ,ঘৃণা থেকে চোখের পানি পরতে লাগলো।
লোকটার হাতে আরুর চোখের পানি পারতেই লোকটা ধরফরিয়ে উঠলো।বললো,
” কাদছো কেনো তুমি?কষ্ট দিয়েছি তোমাকে আবার।প্লিজ কেদো না।সরি।আরে কনের গায়ের হলুদ কুমারী মেয়েদের গায়ে লাগলে তাড়াতাড়ি বিয়ে হয় তাই তো তোমাকে দিতে আসলাম।যাতে তুমি তাড়াতাড়ি আমার হতে পারো।তুমি শুধু আমার জানপাখি।আর কেদো না।সরি জানপাখি।”
বলেই লোকটা আরুর কপালে নিজের কপাল ঠেকালো।ওদের নিশ্বাস এখন একসাথে উঠানাম করছে।লোকটার হাত এখনো আরুর মুখের ওপর।কতোক্ষন ওরা এভাবে ছিলো জানা নেই।কিন্তু বাহিরে কারো আওয়াজে শুনে লোকটা আরুকে ছেড়ে চলে যায়।
লোকটা যেতেই আরুর ধপ করে নিচে বসে পরলো।নিজেকে এখন কেমন যেনো মনে হচ্ছে।রাগ,ঘৃণা,ক্ষোভ,অনুভূতি সব মিলিয়ে ওর মনে কী হচ্ছে নিজেও জানে না।শুধু চোখের পানি ফেলছে।আরু এভাবে কতোক্ষন ছিলো জানে না।কিন্তু প্রায় অনেকক্ষন পর আরু মাথায় করো স্পর্শ পেলো।কিন্তু মাথ তুলে দেখলো না।এবার সেই ব্যাক্তি আরুর সামনে বসলো।আরু তার দিকে একপলক তাকিয়ে রইলো।মারিয়া আরুকে এভাবে দেখে বললো,
মারিয়াঃ কী হয়েছে তোর।আর তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?
আরুঃ……….
মারিয়াঃ কী রে চুপ করে আছস কেনো?বল?এভাবে বসে আছিস কেনো?
আরুঃ………….
মারিয়াঃ আরপ বলবি তো কি…..
মারিয়া আর বলতে পারলো না।আরু মারিয়াকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলো।মারিয়া যতো জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে কিন্তু আরু কিছু না বলে শুধু কেঁদেই চলেছে।মারিয়া শত চেষ্টা করেও আরুকে সামলাতে পারছে না।প্রায় অনেকক্ষন পর আরু একটু শান্ত হলো।কিন্তু এখনো ফুফাচ্ছে।মারিয়া এবার আরুকে নিয়ে বেডে বসলো আর পানি খেতে দিলো।আরুও পানি খেয়ে নিলো।এবার মারিয়া শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
মারিয়াঃ এবার বল তো কী হয়েছে?
আরুঃ..ওই..ওই..লোকটা..লোকটা..আমা….আমাকে..ছুয়ে…….
আর বলতে পারলো না আবার ফুফিয়ে উঠলো।মারিয়া ওর অবস্থা দেখে আর জানতে চাইলো না।এর মাঝেই ইশিকা এলো।ও বলতে এসেছিলো বাসায যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।আর এমনিতেও অনেকক্ষন আরুকে দেখে নি।কিন্তু ইশিকা এসে দেখে আরু কাঁদছে।কী হয়েছে মারিয়াকে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলো।মারিয়াও ইশারায় বললো পরে বলবে।আরুকে এভাবে কাদতে দেখে মারিয়া বললো,
মারিয়াঃ আচ্ছা এখন বলতে হবে না।কালকে বলিস।অনেক হয়েছে এবার কান্না বন্ধ কর।নয়তো কোকে দেখলে বলবে এতো বড় একটা মেয়ে কীভাবে কাঁদছে।পরে তোকে নিয়ে হাসাহাসি করবে।
এরপর মারিয়া আর ইশিকা মিলে আরুকে বুঝিয়ে নিচে নেমে গেলো।ইশিকা আরুকে বুঝিয়েছে না কাদতে।মারিয়া আরুর সাথে যেতো কিন্তু তন্নি ওকে ছাড়েনি।তাই ইশিকাকে বললো ওকে দেখে রাখতে।
————–
বাসায় এসে আরু করো সাথে কথা না বলে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লক করে দিলো।ওড়নাটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে দিয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে কাঁদছে আর কোমর থেকে পেটে লাগানো হলুদ গুলো ঘষে ঘষে উঠাচ্ছে।অনেকক্ষন ঘষার ফলে পেট লাল হয়ে গেছে।কিন্তু তাও থামছে না।চোখের পানি তো সাথে আছেই।
প্রায় অনেকক্ষন পর বাহিরে ওর মা’য়ের আওয়াজে পেতেই থামলো। নিজেকে ঘুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে।এসে ওর মা’কে বললো,
আরুঃ মা টার্য়াড আছি।একটু ঘুমাতে দাও।কালকে কথা বলবো।
আরুর মা বোধহয় চলে গেলো।কারন কোনো শব্দ আর এলো না।।আরু আবার চোখের পানি ঝাড়াতে লাগলো।ওই ছোয়া গুলো ওকে বড্ড পোড়াচ্ছে।কেনো এমন অনুভূতি হচ্ছে।ওর এসব ভাবনার মাঝে আবার মেসেজ এলো,
“তোমাকে আমি আবার কষ্ট দিয়েছি জানপাখি?আবার তোমাকে কাদিয়েছি?আমাকে তুমি ক্ষমা করো না।কখনো না।কিন্তু বিশ্বাস করো জানপাখি তোমাকে ওভাবে ছোঁয়াতে আমার খারাপ কোনো উদ্দেশ্য ছিলো না।বিশ্বাস করো।আর তুমি কষ্ট পেয়ো না।তোমার এই কষ্ট আমি ভালোবাসা দিয়ে ভুলিয়ে দেবো দেখো তুমি।আর কেঁদো না প্লিজ।”
আরু এই মেসেজ দেখে আরো রেগে গেলো।মোবাইলটা ছুড়ে ফেলেদিলো অন্য পাশে।মাথা ব্যাথা করছে।আর নিতে পারছে না ও এসব।উঠে গিয়ে একটা ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পরলো।
——————
সকালে
চলবে……….