#__ফাগুন_প্রেম__পর্বঃ ২৫+২৬

0
234

#__ফাগুন_প্রেম__পর্বঃ ২৫+২৬
#_লিখাঃ Bornali Suhana
💛
বর্ণালী যেনো বড় রকমের একটা ধাক্কা খেলো। এখন সবকিছু ওর কাছে পরিষ্কার। সকাল বেলা ইভান ওদের একসাথে দেখেছে। তাই এতো রেগে আছে। সেদিন ইভান ওকে বার বার বলেছিলো জয়কে ওর আশেপাশে যেনো না দেখে। কিন্তু মায়ের জন্যই সকালে ওই জয়টা সাথে গেলো। এই মুহুর্তে ইচ্ছে করছে জয়টাকে মেরে ফেলতে। সব সময় ওর কারণেই ইভান রেগে যায়।
-“আমাকে কি বলার সুযোগটাও দিবেনা ইভান?”
ইভান চোখ বন্ধ করে গভীর নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে কিছুটা শান্ত করে পূর্বের ভুল সে আর করতে চায় না।
-“হুম বলো।”
-“আসলে সকালে আমি আর মা হাটতে বের হয়েছিয়াম হাঁটতে। ও আচমকাই এসে পড়ে। মা ওকে সাথে নিয়ে নেয়। আমি নাও করতে পারিনি। ও আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু আই সোয়ের ইভান আমি কোন কথাই বলিনি। ট্রাস্ট….”
ইভান আর বর্ণালীকে কোন কথা বলতে দেয় না। হুট করেই ওকে জড়িয়ে ধরে।
-“আই এম সরি বর্ণালী। আই এম রিয়েলি সরি।”
বর্ণালী এমন কিছুর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। এই প্রথম ইভান ওকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছে। বর্ণালীর বুকের ধুকপুকানি আওয়াজটা বেড়ে গেছে। ইভানের হাত ওর পিঠের উপর। বর্ণালীর হাত দুটো দিয়ে নিজের ড্রেস খমচে ধরেছে। চোখ বন্ধ হয়ে এসেছে ওর৷ ইভানের চোখ, মন শান্ত হয়ে এসেছে। ইভানের চোখ থেকে কয়েকফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। বর্ণালীর চোখেও জল। ইভান খেয়াল করে বুঝতে পারলো বর্ণালী ওকে জড়িয়ে ধরেনি। ইভান দ্রুত ওকে ছেড়ে দিয়ে সরে আসলো।
-“সরি আই এম রিয়েলি সরি বর্ণালী। প্লিজ প্লিজ প্লিজ মাফ করে দাও। ভুলেও আর কোন দিন এমন করবো না। প্লিজ আমাকে খারাপ ভেবো না। ভুল বুঝো না প্লিজ।”
বর্ণালী ইভানকে আড়াল করে লুকিয়ে হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখের জল মুছে নেয়। কিন্তু এদিকে ইভান কেঁদেই যাচ্ছে।
-“ইভান শান্ত হও প্লিজ। ঠিক আছে তো ইট’স ওকে। শান্ত হও আগে।”
-“না আমি না বুঝে বারবার ভুল করে ফেলি, আমার প্রমিজটাও রক্ষা করতে পারিনা। তুমি কেন আমাকে মাফ করবে বারবার? হ্যাঁ তুমি আমায় শাস্তি দাও প্লিজ।”
-“ইভান…”
-“প্লিজ আমাকে শাস্তি দাও যাতে এমন ভুল আর কোনদিন করতে না পারি।”
-“হুস। চুপ একদম চুপ আর একটা কথা বলবে না।”
বর্ণালী ইভানের চোখ মুছে দিয়ে দু’হাত ধরে বলে,
-“সরি।”
-“তুমি কেন সরি বলছো?”
-“এমনি।”
-“এমনি কেউ সরি বলে?”
-“হুম আমি বলি তো।”
-“মাথা খারাপ তোমার।”
-“হাহাহা হুম তা-ই হবে হয়তো।”
কিছু সময়ের জন্য দুজনেই চুপ করে রইলো। ইভান নীরবতা ভেঙে বললো,
-“একটা জায়গায় যাবে আমার সাথে?”
-“কোথায়?”
-“বিশ্বাস নেই?”
-“না আসলে দেরি হয়ে যায় যদি?”
-“হবে না। সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসবো।”
-“কিন্তু বাড়িতে টেনশন করবে ইভান।”
-“আচ্ছা ঠিকাছে। চলো ফিরে যাওয়া যাক।”
ইভান মুখটা একটু কালো করে গাড়ি স্টার্ট দিতে নিলো।”
-“আচ্ছা চলো বাড়িতে আমি সামলে নেবো।”
চোখে মুখে হাসির ঝলক ফুটে ওঠে ইভানের।
-“সত্যি?”
-“হ্যাঁ তিন সত্যি।”
-“থ্যাংক….”
-“নেক্সট টাইম নো থ্যাংকস নো সরি।”
-“মনে থাকবে।”
ইভানের গাড়ি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। হালকা শীতল বাতাসে বর্ণালীর চুল বারবার এলোমেলো করে দিচ্ছে। আলতো করে মাথায় ওড়নাটা দিয়ে দেয়। স্লো মিউজিকে একটি গান বাজছে,
🎵🎵
ধীরে ধীরে যাও না সময়
আরও ধীর বও
আরেকটুক্ষণ রও না সময়
একটু পরে যাও ।।

জানি জীবন গল্পে অনেক ধাঁধা
একটু হাসি অনেক কাঁদা

তবু হিসাব নিকাশ চুলোয় দিয়ে
দুঃখের সঙ্গে আড়ি নিয়ে ,
করবো একটু বাড়াবাড়ি ,
ভালো পাওয়ার কাড়াকাড়ি
যাক সব থেমে যাক……

ধীরে ধীরে যাও না সময়
আরও ধীর বও
আর একটুক্ষণ রও না সময়
একটু পরে যাও
🎵🎵
`
পুরো রাস্তা দুজনের মাঝে কোন কথা হয়নি।
-“আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
-“আশুলিয়া।”
-“ওহ! শুনেছি জায়গাটা অনেক সুন্দর।”
-“হ্যাঁ আশুলিয়া এমন একটি সুন্দর জায়গা যেটিকে অনেকেই ঢাকার সমুদ্র সৈকত বলে থাকেন।”
-“আচ্ছা ইভান তুমি তো ঢাকার নও তাহলে কীভাবে এতো কিছু চেনো আর জানো?”
-“জ্বি না ম্যাম আমি ঢাকাইয়া পোলা।”
-“মানে?”
-“মানে হলো আমার দাদার বাবার বাড়ি ঢাকা। দাদা চাকুরীর সুবাদে এখান থেকে চলে যান আর পরে সেখানেই বিয়ে করে স্যাটেল হয়ে যান। দেখো না আমাদের এখানে বাসা আছে।”
-“ওহ তাহলে তো ঢাকায় তোমাদের অনেক আত্নীয় আছেন?”
-“হ্যাঁ আছেন অনেকেই। কিন্তু তেমন কারো সাথে এতো ভালো সম্পর্ক নেই।”
-“আচ্ছা!!!”
ইভান গাড়ি কিছু দূর পার্ক করে বর্ণালীকে পাশে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। নদীর পড়ে এসেই দুজনে জুতো খুলে জুতোর উপর বসে পড়ে।
ঠিক যেনো সমুদ্র সৈকতের আবহাওয়া পাওয়া যাচ্ছে এখানে। দিগন্ত বিস্তৃত পানি আর পানির ঢেউয়ের দোলা মনের সকল কষ্টগুলো মুছে দিচ্ছে। শীতল হাওয়া শরীরের ভেতর ছুঁয়ে দিচ্ছে। মনটাকে সতেজ, নির্মল ও প্রানবন্ত করে তুলেছে। আকাশের উপরে মেঘের খেলা আর নিচে ছলছলে পানি বর্ণালীর মনকে এক অজানা আনন্দে মাতিয়ে দিচ্ছে। মন ভরে উপলব্ধি করছে সৌন্দর্যের মোহনীয়তা।
চোখ বন্ধ করে হাত মেলে গভীর নিশ্বাস নিতে লাগে বর্ণালী। ইভান হা হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। দেখতে কেমন স্নিগ্ধ লাগছে ওকে। নিশ্বাস ছেড়ে ইভানের দিকে তাকিয়ে দেখে ইভান ওর দিকেই অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
বর্ণালী ব্রু নাচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে কী? ইভানও মাথা নাড়িয়ে হালকা হেসে না বলে। বর্ণালীও হেসে দেয়।
-“আসলেই জায়গাটা অনেক সুন্দর। আগে কেন আসতে পারলাম না এখানে! কেমন শান্ত লাগছে।”
-“নৌকায় চড়বে?”
-“সত্যিই? নৌকায় চড়া যাবে?”
-“তুমি চাইলে সব সম্ভব। নৌকা কেন রকেটে চড়াবো।”
এটা শুনে বাচ্চাদের মতো খিলখিল করে হেসে দেয়।
-“রকেটে চড়াতে হবে না আপাতত নৌকায় চড়ালেই হবে। জানো আমার না খুব শখ……”
বর্ণালী কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। ইভান ওর কথা শুনতেই মনযোগী ছিলো।
-“কি শখ ছিলো?”
-“কিছুনা।”
-“ওহ আমাকে বলা যাবে না? আচ্ছা লাগবে না।”
-“আরে না ঠিক তা না। আচ্ছা রাগ করো না বলছি। আসলে আমার খুব শখ কোন এক চাঁদনী রাতে ভালোবাসার মানুষের সাথে নৌকায় চড়ে জোৎস্না স্নান করবো আর কফি খাবো।”
ইভান মাথাটা কিছু কাত করে কৌতূহলী হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
-“এভাবে কেন দেখছো?”
-“কিছুনা হবে তোমার আশা পূরণ। অপেক্ষায় থাকো।”
বর্ণালী এক গাল হেসে দেয়।
-“হুম হবে হয়তো।”
আচ্ছা এখন চলো নৌকায় চড়া যাক।”
বর্ণালী দ্রুত উঠে দাঁড়ায়। ও যেনো জীবনের সব থেকে বেশি খুশি হয়েছে আজ। ইভান হেসে কিছুদূর গিয়ে একটা নৌকা ঠিক করে আসে। তারপর দুজনে একসাথে নৌকার দিকে যায়। বর্ণালী এই প্রথম নৌকায় চড়ছে। ভয়ে ওর শরীর থরথর কাঁপছে। ইভান আগে নৌকায় উঠে তারপর হাত বাড়িয়ে দেয় ওর দিকে। বর্ণালী একবার ওর দিকে তাকিয়ে হাত এগিয়ে দেয় ওর হাতের উপর। নৌকায় উঠতে গিয়ে ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পেরে ইভানের বুকের উপর গিয়ে পড়ে। সাথে সাথে ওর বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যায়। চোখ ছোট ছোট করে ইভানের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। নিশ্বাস যেনো থেমে যেতে চাইছে। এদিকে নৌকা চালাতে শুরু করে মাঝি। দুজনেই নৌকার ঝাটকায় ঘোর থেকে বেড়িয়ে আসে। বসে পড়ে পাশাপাশি। নদীর শীতল পানি হাত দিয়ে ছুঁয়ে ছু্ঁয়ে দিচ্ছে বর্ণালী। প্রচন্ড রকমের ভালো লাগা কাজ করছে ওর ভেতরে। ভাবতেও পারেনি আজকে এমন কোন অভিজ্ঞতা হবে ওর। হুট করেই ইভানের মাথায় দুষ্টুমি ভর করে। পানি ছিটিয়ে দেয় বর্ণালীর উপর। হঠাৎ পানি এসে শরীরে কেঁপে উঠল। হা হয়ে ওর হাত ওখানেই থমকে আছে।
-“কি করলে এটা ইভান?”
-“কেন কি করলাম?”
-“পানি দিলে কেন?”
-“তুমি চাইলে তুমিও আমার উপর পানি ছিটিয়ে দিতে পারো আই ডোন্ট মাইন্ড।”
-“আচ্ছা তাহলে দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।”
কথাটা বলেই বর্ণালী দু’হাতে পানি নিয়ে ইভানের দিকে ছুড়ে মারে। বারবার মারতেই থাকে। পানি মারছে আর হাসছে। এদিকে ইভান পুরো ভিজে গেছে। পানি মারা ছেড় বর্ণালী তার এমন অবস্থা দেখে হাসতে ব্যাস্ত আর ইভান ওর হাসি দেখতে ব্যাস্ত। কত সুন্দর করেই না হাসে ও। চোখ বন্ধ করে মুখের উপর এক হাত আর বুকের উপর এক হাত রেখে খিলখিলিয়ে হাসছে। এই হাসিটা যেনো ইভানের বুকের মাঝে তীরের মতো গিয়ে বিধছে। ইভান পকেট থেকে একটা কিটক্যাট বের করে বর্ণালীর দিকে এগিয়ে দেয়। ও হাসি থামিয়ে বলে,
-“এটা?”
-“হ্যাঁ আসলে এখানে এই মুহুর্তে কফি পাবো না তো তাই এই চকলেটই খেতে পারো। সময় করে একদিন দুজনে আসবো জোৎস্না স্নান করবো আর কফিও খাবো।”
বর্ণালী কিছুক্ষণ ব্রু কুচকে তাকিয়ে বলে,
-“হ্যাঁ স্বপ্নে হবে বসে থাকো হাহাহা।”
ইভান আর কিছু বলে না। মনে মনে ভাবে, সবই হবে বাসন্তী সব হবে শুধু অপেক্ষা করো একটু।
`
সজিব অফিসে বসে কাজ করছে এদিকে ঈশা অনবরত কল দিয়ে যাচ্ছে। ফোন সাইলেন্ট থাকায় কল দেখতে পায় নি সজিব। ঈশা রেগে আগুন হয়ে গেছে। একা একাই কথা বলে যাচ্ছে,
কি ভেবেছে কি এই ছেলে?
এতো কল দিলেও রিসিভ করে না।
এতো কিসের ভাব ওর?
কথাগুলো বিরবির করে বলছে আর রুমের ভেতর পায়চারি করছে। নাহ আর থাকা যাবে না আজ ওর একদিন কি আমার একদিন। ব্যাগ হাতে নিয়েই রুম থেকে বের হয়ে যায় ঈশা। কিন্তু বাইরে এসেই ড্রয়িংরুমে বাবার সামনে পড়তে হয় ওকে।
-“আমার মামনিটা কি কোথাও যাচ্ছে?”
-“হু।”
-“কিন্তু যেভাবে যার উপর রেগে যাচ্ছো তার তো কপালে আজকে খুব খারাপ আছে।”
-“আসলে বাবাই।”
-“এদিকে এসো বাবাইর পাশে বসো।”
ঈশা গিয়ে বাবার পাশে বসে।
-“হুম বলো।”
-“ঈশার মা আমাদের দুজনকে দু’কাপ কফি দাও তো।”
-“বাবাই আমি একটু বাইরে যেতে চাচ্ছিলাম।”
-“এখন না গেলে হবে না?”
-“প্রয়োজন ছিলো।”
-“কাল করো। আজকে না হয় বাবাইর সাথে বসে একটু গল্প করলে।”
-“আচ্ছা বাবাই ঠিকাছে।”
মা তিনকাপ কফি নিয়ে আসেন। সবাই মিলে কফি খাচ্ছেন আর নানা জিনিস নিয়ে আলোচনা করছেন। ঈশা হঠাৎ খেয়াল করে সজিব ওকে কল দিচ্ছে। কিন্তু এখন কিভাবে রিসিভ করবে! মা-বাবাইর সামনে তো কথা বলা যাবে না। এখন কল দেয়া হচ্ছে আর আমি যখন দিলাম তখন রিসিভ করলো না! দিক আজকে আমিও কল রিসিভ করবো না।
`
ফোনের রিং টোনটা বেজে উঠতেই নিতু একরকম দৌড়েই ফোনের কাছে যায়। মাঝে মাঝে ভুলেই যায় যে ও প্রেগন্যান্ট। ফোন হাতে নিতেই ঠোঁটের কোণে হাসি চলে আসে। কিন্তু পরক্ষনেই সে হাসিটা হাওয়ায় মিলিয়ে মাথায় চিন্তার রেখা ফুটে ওঠে। জয় কল করেছে কেন?
সকালেও তো আজেবাজে কথা বলে গেলো। এখন কেন কল করছে! সরি বলতে? নাহ তা বলবে না।
আজকাল তো জয় অফিসে গেলে কল করেই না। ও আর সেই আগের জয়টা নেই। আগে ঘন্টায় ঘন্টায় কল করে, মেসেজ দিয়ে কথা বলতো আর এখন মাসেও তা হয় না। এসব ভাবতে ভাবতেই নিতু কল রিসিভ করে।
-“হ্যা…..”
নিতুকে কথা বলতে না দিয়েই জয় বলতে শুরু করে,
-“তোমাকে যে কথা বলেছিলাম সেটা নিয়ে কি কিছু ভেবেছো?”
-“এসব কেন করছো জয়? আমি কি কোন ভুল করেছি? একবার বলো আমি নিজেকে শুধরে নিবো তবুও ওই কথা আর মুখে এনো না প্লিজ।”
-“দেখো নিতু আমার সোজা কথা আমি আর তোমার সাথে থাকতে চাইছিনা। আর বাকি রইলো তোমার বাচ্চার কথা? ওর সম্পূর্ণ খরচ আমি চালাবো।”
-“আচ্ছা? আমার বাচ্চা? আমি কি ওকে বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছি? ও কি তোমার কিছুই হয় না জয়? ও তো তোমার অংশ, তোমার রক্ত। ছোট্ট প্রাণটা পৃথিবীতে আসার আগেই এক নিমিষেই পর করে দিলে?”
-“এতো কথা জানিনা। আজকেই তুমি মায়ের সাথে কথা বলবে। রাখছি।”
-“ডিভোর্স তুমি দিতে চাইছো তো তোমার মায়ের সাথে তুমি কথা বইলো আমি বলতে যাচ্ছি না।”
জয় রেগে কল কেটে দেয়। আর এদিকে নিতু মোবাইলটা বিছানার উপর ছুড়ে মারে। ঠোঁট চেপে কান্নায় ভেঙে পড়ে। কতই না ভালোবেসেছিলো জয়কে আর আজ কিনা ওর ভালোবাসা মিথ্যে হতে চলেছে। তাহলে কি জয়ের ভালোবাসা শুধুই লোকদেখানো ছিলো নাকি শরীরের ক্ষুধা মেটানো?
`
অনেক্ষণ নৌকায় ঘুরে দুজনে পাড়ে ফিরে আসে। নৌকার ভাড়া মিটিয়ে গাড়ির দিকে রওয়ানা দেয়। গাড়িতে বসতেই বর্ণালী খেয়াল করে ইভানের টি-শার্ট পুরো ভিজে গায়ের সাথে চিপকে আছে। ইভানকে এভাবে দেখে যেনো বুকের ভেতর একটা কাঁপন বয়ে গেলো। চোখ ওর দিকেই থমকে আছে। কেন এমন হচ্ছে! ইচ্ছে করছে এভাবেই তাকিয়ে দেখতে। ইভানকে এতোটা এট্রাক্টিভ ওর কখনোই লাগেনি। হয়তো সে রকম খেয়ালই করেনি। গাড়ি ড্রাইভ করার সময় ওর হাতের মাসেল’স কত সুন্দর উঠানামা করছে।
-“কি হলো এভাবে দেখছো কেন?”
খালি গলায় ঢোক গিলে বর্ণালী। তৎক্ষনাৎ অন্যদিকে নজর ফিরিয়ে নিয়ে বলে,
-“তো….তুমি পুরো ভিজে গেছো।”
-“তুমিই তো ভেজালে।”
-“আ…আমাকেও তো তুমি ভিজিয়েছো। সমান সমান না ব্যাপারটা?”
-“হ্যাঁ হ্যাঁ সব সমান।”
-“আচ্ছা ইভান তোমাদের অনেক আত্মীয় স্বজন এখানে আছেন সবার সাথে গিয়ে তো একবার দেখা করে আসতে পারো।”
-“তুমি বলছো?”
-“আমি বললেই যাবে নাকি?”
-“হুম অবশ্যই যাবো।”
-“ঠিকাছে তাহলে যাও।”
-“যাবো আগে বিয়েটা হোক তারপর একসাথে যাবো।”
-“বিয়ে?”
ইভান বর্ণালীর দিকে খানিকটা ঝুকে একটু ফিসফিস করে বলে,
-“হ্যাঁ তোমার আমার বিয়ে।”
ইভানের মুখে এমন কথা শুনেই বর্ণালীর বুকটা ধুকপুক করতে শুরু করে। হার্ট বিট যেনো খোলা রাস্তা পেয়ে দ্রুত দৌড়াচ্ছে। কিছুটা অস্বস্তিবোধ করে বর্ণালীর।
নিজে নিজেকেই প্রশ্ন করতে লাগলো।
ও কীভাবে পারে এসব নিয়ে ভাবতে? যেখানে আমি কোন সম্ভাবনাই দেখছি না সেখানে ও বিয়ের পরের প্ল্যান করছে! কেন এতো স্বপ্ন দেখছে ইভান আমায় নিয়ে? এসব স্বপ্ন যে ওর কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। কেন বুজতে পারছে না ও?
💛
#_____চলবে………

#___ফাগুন_প্রেম___
#_লিখাঃ Bornali Suhana
#_পর্বঃ ২৬
💛
ও কীভাবে পারে এসব নিয়ে ভাবতে? যেখানে আমি কোন সম্ভাবনাই দেখছি না সেখানে ও বিয়ের পরের প্ল্যান করছে! কেন এতো স্বপ্ন দেখছে ইভান আমায় নিয়ে? এসব স্বপ্ন যে ওর কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। কেন বুজতে পারছে না ও?
`
-“ইভান আমাকে রুমুর বাসায় নামিয়ে দিও।”
-“কেন?”
-“রুমুকে সাথে নিয়ে যাবো বাড়িতে।”
-“তাহলে ওকে কল দাও। বলো বের হতে আমি তোমাদের নামিয়ে দিবো।”
-“আরে বাদ দাও না তোমাকে এতো কষ্ট করতে হবে না।”
-“আমি কি বলেছি আমার কষ্ট হচ্ছে?”
-“না তবুও তুমি সারাদিন আমাকে নিয়ে এতো ব্যাস্ত ছিলে। ইভান তুমি কি দুপুরে খেয়েছিলে?”
ইভান বর্ণালীর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো,
-“সকালে নাস্তা করে বেরিয়েছি।”
-“ইভান চলো আগে কোথাও গিয়ে ভাত খেয়ে নেবে।”
-“তুমি খেয়েছো দুপুরে?”
-“হ্যাঁ মা আমাকে টিফিন দিয়ে দেন।”
-“কি এনেছিলে টিফিনে?”
-“বিরিয়ানি। মা প্রায়ই আমায় বিরিয়ানি করে টিফিনে ভরে দেয়। কিন্তু আমার একদম পছন্দ না।”
বর্ণালীর হুট করেই খেয়াল হয় ওর তো বিরিয়ানি পুরোটা খায়নি। এখনো অর্ধেকটা রয়ে গেছে। কিন্তু ইভান কি খাবে? এটা যে আমার খাওয়া খাবারের অংশ। কিন্তু জিজ্ঞেস করতে দোষ কোথায়!
-“বিরিয়ানি খাবে ইভান?”
-“আছে?”
-“হ্যাঁ আমি অল্পটা খেয়ে রেখে দিয়েছিলাম। আমি এতোবেশি বিরিয়ানি খাই না তো তাই।”
-“তাহলে তাড়াতাড়ি বের করো না প্লিজ।”
-“কিন্তু এটা যে আমার…..”
-“পেটে ইঁদুর দৌড়ে বেড়াচ্ছে তো বের করো না।”
বর্ণালী টিফিনটা বের করে।
-“গাড়ি থামাও কোথাও ইভান। আগে খেয়ে নাও।”
ইভান এক সাইড করে গাড়ি থামায়।
-“বর্ণালী,”
-“হ্যাঁ”
-“আমাকে খাইয়ে দেবে প্লিজ?”
বর্ণালীর হাত টিফিনেই থমকে যায়। এসব কেন চাইছে ইভান! কেন বুঝতে চায় না ও! কিভাবে আমি ওকে খাইয়ে দেই!
-“আমি কেন তোমাকে খাইয়ে দিবো?”
-“সেদিনও তো খাইয়ে দিয়েছিলে।”
-“সেদিন আর আজকে তফাৎ আছে। সেদিন তোমার হাত কাটা ছিলো কিন্তু আজকে ভালো।”
-“তাহলে আবার হাত কেটে নেই? কি বলো?”
-“একদম বাজে কথা বলবে না বলে দিলাম।”
-“তাহলে খাইয়ে দাও।”
-“কিন্তু ইভান…”
-“ভয় পাচ্ছো প্রেমে পড়ে যাবে?”
-“ওকে হা করো।”
ইভান মুচকি হেসে সিট বেল্ট খুলে বর্ণালীর দিকে চেয়ে বসে। তার হালকা ঠোঁটে হাসি ঝুলে আছে।
বর্ণালীও সিট বেল্ট খুলে ইভানের দিকে তাকিয়ে বসে। চামচ দিয়ে খাবার তুলে এগিয়ে দেয় তার মুখের দিকে। ইভানের সেদিকে কোন খেয়ালই নেই। ও এক দৃষ্টিতে বর্ণালীর দিকেই তাকিয়ে আছে।
-“এভাবে তাকিয়ে থাকলে কি পেট ভরবে? খাবার খাবে কখন?”
ইভানের ঘোর কাটে ওর কথায়। হা করে খাবারটা নিয়ে নেয় বর্ণালীর হাত থেকে। এমন ভাবে হা করে যেনো সাত জনমে খাবার খায় নি। এটা দেখেই হেসে দেয় বর্ণালী। পুরো বিরিয়ানিটা একেবারে চেটেপুটে খায়।
-“বিশ্বাস করো আমার জীবনে আমি এতো মজার বিরিয়ানি খাই নি। প্লিজ একটা কাজ করবে?”
-“কি?”
-“তুমি তো বিরিয়ানি খাও না তাই না?”
-“হ্যাঁ। তো?”
-“তো মা তোমাকে যতদিন বিরিয়ানি করে দিবেন প্লিজ আমার জন্য রেখে একটা কল দিয়ে দিও আমি এসে খেয়ে যাবো।”
-“সে না হয় খেও কিন্তু, আমার মা তোমার মা হলো কিভাবে?”
-“আরে বিয়ের পর তো মা ডাকতেই হবে তারচেয়ে ভালো না আগে থেকে ডেকে অভ্যাস করি।”
-“ঢং!!!!! দিনের বেলা জেগে জেগে চোখ বন্ধ করে স্বপ্ন দেখো না ইভান। হোচট খেয়ে পড়বে।”
-“পড়ে গেলে তুমি আছো তো টেনে তুলার জন্য।”
বর্ণালী নিশ্চুপ হয়ে যায়। ইভান হেসে কিছু একটা গুনগুন করতে করতে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
`
রুমুর বাসার নিচে এসে বর্ণালী ওকে কল দেয়। কিন্তু রুমু কল ধরছে না। কোন উপায় না দেখে উপরে উঠে যায়।
রুমুর ভাবী এসে দরজা খুলে দেন।
-“আরে বর্ণ তুমি?”
-“হ্যাঁ ভাবী রুমু কোথায়?”
-“ও আর কই! নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।”
-“ওর ঘুম বের করছি।”
কথাটা বলেই বর্ণালী রুমুর রুমে যায়। কয়েকবার ডাকার পরও কোন সারাশব্দ নেই দেখে ওকে টেনেটুনে বিছানা থেকে তুলে। রুমুর চোখে যেনো রাজ্যের ঘুম। আলমিরা থেকে ব্যাগের মাঝে রুমুর কয়েকটা ড্রেস ভরে নেয়। রুমু কিছুই বুঝতে পারছেন বারবার হাই তুলে ঘুমঘুম আওয়াজে বলছে,
-“আমাকে কি তুই কিডনাপ করছিস?”
-“কেন কিডনাপ করছিস?”
-“শেষ পর্যন্ত বান্ধবী হয়ে তুই এটা করতে পারলি?”
থেমে থেমে চোখ বন্ধ অবস্থাতেই এইরকম নানা কথা বলেই যাচ্ছে। বর্ণালী ওর কোন কথায় ভ্রুক্ষেপহীন হয়ে যেভাবে আছে ওইভাবেই রুমুকে নিয়ে বাইরে আসে। রুমু ভালো করে হাটতেও পারছেনা। বর্ণালীর কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করেই আছে। ঘুমে পুরোটাই হেলে পড়ে যাচ্ছে।
-“ভাবী আমি রুমুকে সাথে করে নিয়ে যাচ্ছি। কয়েকদিন থাকবে আমার বাসায়। ভাইয়া আর আংকেল আন্টিকে বলে দিও।”
-“কিন্তু ওর ভাইয়া যদি কিছু বলে?”
-“ভাইয়া এমন কোন কথা কখনোই বলবেন না সেই ভরসা আছে ভাবী। তারপরও ভাইয়াকে বলো ফ্রি হয়ে আমার সাথে একবার কথা বলতে।”
-“ঠিকাছে যাও।”
রুমুর ভাবী একগাল হেসে কথাটা বলেন। এদিকে রুমু আবারো বলে উঠে,
-“ভাবী তুমিও ঘুষ খেয়েছো মনে হচ্ছে? আমাকে কিডনাপ করতে সাহায্য করছো? কেউ আমার আপন না।”
বর্ণালী আর রুমুর ভাবী দুজনেই হেসে দেন। কোনরকম কষ্ট করে বর্ণালী রুমুকে নিয়ে নীচে আসে। ইভান হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
-“রুমুর কি হয়েছে?”
-“আরে দেখছো না জনাবা ঘুমে ঢলে পড়ে যাচ্ছেন। ঘুম থেকে তুলে এনেছি। গাড়ির দরজা খুলো আগে।”
ইভান আর কিছু না বলেই গাড়ির পিছনের সিটের দরজা খুলে দেয়। বর্ণালী রুমুকে নিয়ে পেছনে উঠে বসে।
কিছুক্ষণ পর রুমু ঘুমঘুম চোখে চেয়ে বলে,
-“আরে ইভান এখানে কি করছে? বর্ণ তোরা কি পালিয়ে যাচ্ছিস? কোর্ট ম্যারেজ করবি? আমাকে কি সাক্ষী হিসেবে নিয়ে যাচ্ছিস? কিন্তু আরেকজন তো লাগবে আমি বরং ঈশাকে কল দেই হ্যাঁ?”
বর্ণালী চুপ হয়ে বসে আছে। ইভান গাড়ির গ্লাস দিয়ে বর্ণালীর দিকে তাকিয়ে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে দুষ্টুমি ভরা হাসি দিচ্ছে।
-“কিরে আমার মোবাইল দে ঈশাকে বলি সাক্ষী হিসেবে আসতে।”
-“চুপ কর রুমু। এমন কিছুই হতে যাচ্ছেনা।”
-“আচ্ছাহ??? তাহলে নিশ্চয়ই তোরা আমাকে নিয়ে বেচে দিতে যাচ্ছিস? কত টাকা পাবি? আমি তোদের দিয়ে দিবো তবুও আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করিস না জান। আমি তোর বান্ধবী হই। তুই এটা করতে পারিস না। ইভান তুমি এতো বড়লোক বাবার ছেলে হয়ে কেন এমন করছো? আমাকে বেচে কত টাকাই আর পাবে? আমার এমনিতেই হার্ট দূর্বল, রাতে চোখে দেখিনা। এই যে এখন দেখো চোখে দেখছিনা।”
বর্ণালী রুমুর এসব কথায় হাসবে না কাঁদবে কিছুই ভেবে পাচ্ছেনা। এই মেয়েটা এতো পাগল কেন!!!! ইভান হো হো করেই হেসে দিলো। বর্ণালী রুমুকে বলে,
-“চোখ না খুললে কেউই দেখে না রুমু। তুই চোখ বন্ধ করে কীভাবে দেখবি?”
রুমু নিজের চোখে হাত দিয়ে দেখে আসলেই ওর চোখ বন্ধ।
-“আসলেই তো আমার চোখ বন্ধ। ওহ মাই আল্লাহ!!! এই জন্যই তো আমি রাত্রে দেখিনা। থ্যাংক ইউ জানটা। তুই না বললে তো আমি জানতামই না যে আমার চোখ বন্ধ থাকায় আমি দেখিনা।”
বর্ণালী আর কোন কথাই বাড়ালো না। পুরো রাস্তা রুমু এভাবেই বকবক করে এলো। ইভান ওদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।
`
-“আরে রুমুর এই অবস্থা কেন?”
-“আর বলো না মা ঘুম থেকে তুলে এনেছি ওকে।”
-“আচ্ছা যা আগে ওকে শুইয়ে দে।”
-“হুম দিচ্ছি।”
রুমু একবার চোখ খুলে দেখে ওর সামনে শারমিন বেগম দাঁড়িয়ে আছেন। আবারো বকবক শুরু করে দেয়।
-“আরে শারমিন বেগম আপনিও শেষমেশ ওদের সাথে যুক্ত হলেন? বাহ বাহ! তাহলে ওই সবজিওয়ালাটাও জড়িত আছে তাই না? আমি সবাইকে জেলের ভাত খাওয়াবো। তোমার কাছ থেকে আমি এটা আশা করি নি শারমিন বেগম।”
-“পাজি মেয়েটা বড় মায়ের নাম ধরে ডাকছে।”
-“মা ও তো ঘুমের মাঝে তাই এমন করছে। জানোই তো এটা ওর ছোট বেলার অভ্যাস। ঘুমের ঘোরে এমন পাগলামো করে আর মনের মাঝে লুকিয়ে রাখা সব সত্যি কথা বলে দেয়।”
শারমিন বেগম একগাল হেসে আলতো করে রুমুর মাথায় চুমু একে দেন।
-“আমি জানি রে। এই পাগলী মেয়েটাকে যে নিজের কোলে-পিঠে করেই বড় করেছি।”
বর্ণালী রুমুর দিকে একবার তাকায় ও এখন আবারো ঘুমাচ্ছে। কি ঘুম পাগলী মেয়েটা।
-“আচ্ছা মা রুমুকে ভাইয়ার সাথে বিয়ে দিয়ে দিলে কেমন হয়?”
মেয়ের এমন কথায় শারমিন বেগমের কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ পড়ে। কিন্তু পরক্ষণেই চোখে মুখে হাসির ঝলক দেখতে পায় বর্ণালী।
-“কিন্তু সজিব কি রাজী হবে আর রুমুও কি রাজী হবে? ওদের তো কখনোই কোন কিছু মিলেনা। যখনি দেখা হয় ঝগড়াই করে।”
-“মা সব ঠিক হয়ে যাবে বিয়ের পর। আর ওদের মাঝে অন্যরকম একটা মায়ার টান দেখতে পাই আমি। তুমি কি তা দেখতে পারো না?”
-“তোমরা কি আমাকে ওই সবজিওয়ালার সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছ? দিয়ে দাও হ্যাঁ? আমি ওকে রান্না করে খেতে চাই। না না আস্ত কাঁচা খাবো ওকে। আমার সাথে ভালো মতো কথাটাও বলে না আর ওই ঈ….”
আর কিছু বলতে পারলো না আবারো ঘুমে ওর মাথা বর্ণালীর কাঁধে ঢলে পড়ে গেলো। শারমিন বেগম আর বর্ণালী হো হো করে একসাথে হেসে দেন।
-“যা তুই ওকে শুইয়ে দে।”
-“আচ্ছা মা যাই।”
বর্ণালী গিয়ে রুমুকে নিজের রুমে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। কাঁথাটা টেনে ওর গায় জড়িয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
-“তোকে আমার ভাবী করে পেলে যে এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহারটা পাবো। ভাইয়া যেনো আমাকে এই উপহারটা দিয়ে দেয়। এটাই উনার কাছে আমার প্রথম ও শেষ চাওয়া।”
একা একাই কথাগুলো বলে বর্ণালী রুমুর চুলের উপর চুমু একে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়।
`
সজিব সেই কখন থেকে ঈশার পাশে বসে আছে। ঈশা আসার পর থেকে একটা কথাও বলেনি। একনাগাড়ে চিপস খেয়ে যাচ্ছে। এইজন্যই কি ওকে এখানে ডেকে এনেছে? কি নাটকটাই না করলো কল দিয়ে।
২ঘন্টা আগে,
ঈশা সজিবকে কল দেয়। সজিবের কাজের চাপ না থাকায় কল রিসিভ করে।
-“আসসালামু আলাইকুম।”
-“ওয়ালাইকুম আস সালাম। কোথায় তুমি?”
-“আমি আর কোথায় থাকবো? অফিসেই আছি।”
-“এখনি অফিস থেকে বের হবে। ২০মিনিটের ভেতর পার্কে চলে এসো।”
-“কিন্তু আমার কাজ আছে ঈশা আমি পারবো না।”
-“তুমি পার্কে না আসলে আমি এখনি তোমার বাসায় যাবো আর সবাইকে বলে দিবো তোমার সাথে আমার গভীর সম্পর্ক। এখন এটা তোমার উপর। তুমি আসবে কি না। তবে বলে রাখি ঈশা যা বলে তাই করে।”
-“ঈশা প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।”
-“ইউ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড মাই সিচুয়েশন মি. সজিব। ডোন্ট ওয়েস্ট ইউর টাইম। কাম ফাস্ট আদার ওয়াইজ ইউ নো দ্যাট ভেরি ওয়েল হুয়াট আই উইল ডু। জাস্ট 20মিনিটস ইউ হেভ।বাই।”
কথাটা বলেই ঈশা কল কেটে দেয়। আর এজন্যই সজিব অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সোজা এখানে চলে আসে। কিন্তু ও এসে দেখে ঈশা ওর আগেই এসে বসে আছে।
বর্তমান সময়,
চিপসটা শেষ করে এখন আঙুলে লেগে থাকা চিপ্সের গুড়ো চেটে খাচ্ছে। সজিব ওর এমন খাওয়া দেখতে বেশ মজা পাচ্ছে। কি সুন্দর ঠোঁট দুটো পাউট করে প্রত্যেকটা আঙুল মুখের ভেতর ঢুকিয়ে চেটে চেটে খাচ্ছে। ঠোঁটের আশেপাশে চিপ্সের গুড়ো লেগে আছে। কেমন যেনো ঘোর লেগে যাচ্ছে ওর। এক ঝটকায় ভেতরটা শিউরে ওঠে। ও কেন যেকোন পুরুষের ভেতর নাড়া দিয়ে বসবে এমন দৃশ্য দেখলে। নিজেকে সামলে রাখা দায় পড়ে। কিন্তু সজিব নিজেকে এমন সিচুয়েশনে সামলে রাখতেই হবে। ঈশার দিক থেকে চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকায় সে।
কিন্তু ঈশার মাথায় অন্যরকম দুষ্টুমি ভর করেছে। ও ইচ্ছেকরেই এমন করছে। আজকে যে ও সজিবকে নিয়ে ভালোবাসার সাগরে পা ভেজাতে চায়।
💛
#_____চলবে………
[ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। 😍]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here