#__ফাগুন_প্রেম__পর্বঃ ২৩+২৪
#_লিখাঃ Bornali Suhana
💛
সজিব হাতে একটা আইসক্রিমের বক্স নিয়ে ভেতরে ঢুকে। সজিবের চোখ ইশাকে দেখে ওখানেই ওর পা থমকে যায় আর ঈশার চোখ গিয়ে থমকে যায় সজিবের উপর। থ্রী কোয়াটার টাউজার আর টি শার্ট পড়ে আছে। টি শার্টটা পিঠের দিকে ঘেমে গায়ের সাথে লেগে আছে।
-“ভাইয়া এসেছো?”
-“হ্যাঁ এই নে। কিরে রুমাল কেমন আছিস? এতো দ্রুত আগমন ঘটলো তোর?”
-“এইতো সবজিওয়ালা ভাইজান ভালো। আপনি?”
-“শয়তানিটা আর ছাড়লি না?”
-“তুমি মনে হয় খুব ছেড়েছো?”
-“একটা দিবো।”
-“আমি দুইটা দিতে জানি।”
-“মা দেখেছো এই মেয়ে বড্ড বেড়েছে।”
-“আরে আরে কচি খোকাটারে কথায় কথায় মাকে ডাকে। আসো বেগম সাহেবা এসে তোমার সবজি নিয়ে ভাজি করে দাও আমি খাই।”
-“তবে রে রুমাল।”
সজিব রুমুর দিকে এগিয়ে যেতেই রুমু কুশন বালিশ হাতে নিয়ে প্রস্তুত হয়ে আছে। ঈশা চুপ করে বসে ওদের এসব দুষ্টামি দেখছে। ভালোই লাগছে সজিবকে এমন দেখতে। রুমুর আসলেই ওদের সাথে অনেক ভালো সম্পর্ক। সবাই ওকে অনেক ভালোবাসে। সজিব রুমুকে মারতে এগিয়ে আসতেই বর্ণালী হাত দিয়ে আটকে ধরে।
-“ভাইয়া ছাড়ো না জানোই তো ও কেমন। থামো তো তোমরা। দেখো না পাশে আরেকজন আছে ওর সাথে তো কথাই বললে না।”
-“ওহ হ্যাঁ কেমন আছো ঈশা?”
-“জ্বি ভালো। আপনি?”
বাহ মেয়েটা তো দারুণ অভিনয় জানে। সবার সামনে এখন কেমন আপনি করে কথা বলছে আর আড়ালে নাম ধরে ডাকে।
-“হ্যাঁ আমিও ভালো আছি। এই নে স্বরবর্ণ তোর আইসক্রিম।”
-“এসব কেন আনতে গেলে?”
বর্ণালীকে নিতে দেয় না রুমু। নিজেই কেড়ে নেয়।
-“এদিকে দে। তোর না ঠান্ডার প্রবলেম? তোর এসব খেতে হবে না। এটা আমার।”
-“রুমাল একা খাস নে ঈশা আর বর্ণকেও অল্প দিস রাক্ষুসি।”
-“কি বললি সবজি আমি রাক্ষুসি?”
-“তা নয়তো কি? বেয়াদব মেয়ে বড় ভাইকে তুই করে বলিস!”
-“বড় ভাই আমার ঠ্যাং।”
-“আরেহ বা আমি তো জানতাম না তোর বড় ভাই ঠ্যাং হয়। হাহাহাহা।”
-“দেখ সবজি রাগাবি না ভালো হচ্ছে না বলে দিচ্ছি।”
-“খারাপের কি করবি রাক্ষুসি?”
-“আ….আমি রাক্ষুসি হলে নিজে কি হ্যাঁ? নিজে একটা রাক্ষুসের রাজা বিটকেল সবজি।”
ওদের এমন অবস্থা দেখে শারমিন বেগম রান্নাঘর থেকে দৌড়ে আসেন।
-“কিরে তোরা আর বড় হবি না? এখনো আগের মতোই দুইটা আঠার মতো লেগে থাকিস। সজিব যা ভেতরে যা এতোদিন পর এলো মেয়েটা একটু শান্তি দে।”
-“বাহ মা তুমিও এখন নিজের ছেলেকে পর করে দিলে?”
-“ওই সবজিওয়ালা আমিও বড় আম্মুর মেয়ে। তাই না আম্মু?”
-“ওই তুই কখন আমার বোন হলি?”
-“খবরদার সবজিওয়ালা আমি তোর বোন নই। একদম বোন বলবি না খুন করে গুম করে ফেলবো। আমি শুধু বড় আব্বু আর বড় আম্মুর মেয়ে।”
-“হয়েছে হয়েছে এবার থাম ভাইয়া। কেন শুধু শুধু ওর সাথে লাগছিস?”
-“আরেহ!!! আর ও যে আমার সাথে লাগছ তা কেউ দেখো না?”
রুমুর খুব মজা লাগছে সজিবকে জব্দ করতে পেরে। শারমিন বেগম আর বর্ণালী দুজনেই সজিবকে বকছে এসব দেখে রুমু ভেতরে ভেতরে হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাইরে তা প্রকাশ করছে না। কেমন অসহায় একটা ভাব নিয়ে আছে।
-“আর আসবো না আমি তোমাদের বাড়ি। তোমার ছেলে আমাকে কত কিছু বলেছে দেখেছো?”
-“সজিব ওকে সরি বল।”
-“মা আমি কেন সরি বলবো? ও নিজেও তো আমার সাথে বেয়াদবি করেছে। দেখলে না সেটা? আর এখন তোমাদের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করছে।”
-“কিইইইই আমি ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করছি? এ্যা এ্যা আর তো আসবোই না এই গেলাম আমি।”
রুমু উঠে দাঁড়াতেই বর্ণালী ধরে ফেলে।
-“আরে রুমু থাম না। ভাইয়া সরি বলে দাও না প্লিজ।”
সজিব মুখটা কালো করে একবার মায়ের দিকে একবার বোনের দিকে একবার ঈশার দিকে তাকালো। ঈশার সামনে ওকে এই মেয়ে এভাবে জব্দ করবে ভাবতেও পারেনি। ঈশা মিটমিটি হেসেই যাচ্ছে। খুব কষ্টে যেনো ওর হাসিটা আটকাচ্ছে।
-“হুম সরি।”
এক সরিতেই রুমু যেনো কোন মহাযুদ্ধ জয় করলো। ঠোঁটের এক কোণ দিয়ে জিব বের করে একটা চোখ টিপ মারলো সজিবকে। সজিব যেনো আরো তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো।
-“দেখেছো মা দেখেছো তোমার এই পোষা মেয়ের ঢং দেখেছো?”
-“বড় আম্মুউউউউ।”
-“চুপ কর আমার মা। সজিব যা ভেতরে যা। আর জ্বালাস নে ওকে।”
সজিব আর কিছু না বলে রুমুর দিকে অগ্নি দৃষ্টি বর্ষণ করে নিজের রুমে চলে গেলো।
রুমু ধপ করে সোফায় বসে পড়লো।
-“এটা কি করলি?”
-“কি করলাম?”
-“শুধু শুধু কেন ভাইয়ার সাথে ঝগড়া করলি?”
-“তোর ভাই কি করলো দেখলি না।”
-“হ্যাঁ সবই দেখেছি কে কি করেছে।”
এতোক্ষণ ঈশা সব শুনে মিটমিটিয়ে হাসছিলো এখন জোরেই হেসে দিলো। অনেক্ষণ পর মুখ খুললো,
-“তোদের কি কোন জন্মের কোন শত্রুতা আছে নাকি?”
-“আর বলিস না ঈশা ভাইয়া আর রুমু ছোটবেলা থেকেই এমন। একে অপরের সাথে কোন জন্মের যে শত্রুতা পালন করে ওরাই জানে। আমি কখনোই ওদের ভালো মতো কথা বলতে দেখি নি।”
-“হাহাহাহা সে আমি বুঝেই গেছি।”
-“হয়েছে তোদের? বড় আম্মু কি হলো কিছু তো খেতে দাও। কতক্ষণ হলো খালি মুখে বসে আছি?”
-“হ্যাঁ মা এই রাক্ষুসিকে খেতে দাও নাহলে দেখো আবার ঘরের সব জিনিসপত্র না খেয়ে শেষ করে।”
সজিব নিজের রুম থেকেই চিৎকার করে কথাটা বললো।
-“সবজিওয়ালার চিন্তাধারণা আর কতদূরই হতে পারে! তোকে যে কোন পাগলে চাকুরী দিয়েছে।”
-“তোর মতোই আরেক পাগল।”
-“তো……”
রুমু আরো কিছু বলতেই যাচ্ছিলো বর্ণালী ওর মুখ চেপে ধরে। প্রাণপণ চেষ্টা করে মুখ খুলে রাগি চোখে তাকালো বর্ণালীর দিকে। তখনি বর্ণালী রুমুর মুখে একটা পাকোড়া ঠেসে দিলো। সাথে গালের মাঝে একটা কিস্সি। রুমু আর কিছুই বলতে পারলো না। চোখ দুটো ছোট ছোট করে একগাল হেসে দিলো।
`
ঈশার চোখ শুধু সজিবকে খুঁজছে। সেই যে রুমে গেলো আর বাইরেই এলো না। সবার মাঝ থেকে উঠে যাওয়ার কোন উপায়ও দেখছেনা। হুট করেই মাথায় আইডিয়া এলো সাথে সাথে সেটাই প্রয়োগ করলো।
-“আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি।”
সাথে সাথে রুমু বলে,
-“তো আমরা আসবো নাকি?”
-“রুমু!!!”
-“যেভাবে বলে যাচ্ছিস মনে হচ্ছে তোর সাথে ওয়াশরুমে যাওয়ার ইশারা দিয়ে যাচ্ছিস। হুহুহুহু।”
-“তুই আসলেই একটা অসম্ভব।”
-“না আমি অনন্ত।”
-“মানে?”
-“অসম্ভবকে সম্ভব করা যে অনন্তের কাজ হিহিহিহি।”
বর্ণালী রুমুর কথা শুনে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। ঈশা ততক্ষণে উঠে চলে গেছে।
-“তোর স্বামী আবার কবে মারা গেলো জান?”
-“রুমুউউউ।”
-“আরে যেভাবে মাথায় হাত দিয়ে রেখেছিস দেখে তো লোকে এটাই বলবে।”
-“ছাড় আমার মা আল্লাহর ওয়াস্তে মাফ কর আমায়।”
-“খবরদার বর্ণ মা বলবি না একদম মেরে ফেলবো।”
দুজনেই একসাথে হেসে দেয়।
-“বড় আব্বু কোথায় রে?”
-“বাজারেই আছে বাবা। আজকাল বেশির ভাগই বাজারেই দোকানে বসে সময় কাটান।”
-“অনেকদিন হলো বড় আব্বুকে দেখিনা। আজকেও দেখলাম না।”
-“প্রব্লেম কই! অন্যদিন এসে দেখে যাবি।”
-“হুম তুই না বললেও আসবো জান।”
`
ঈশা সজিবের রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে৷ রুমে ঢুকবে কিনা ভেবে যাচ্ছে। ভাবতে ভাবতেই দরজায় হাত দিলো। সাথে সাথেই দরজাটা খুলে যায়। সজিব খাটের উপর আধশোয়া অবস্থায় ছিলো। ঈশাকে দেখেই উঠে বসে। আগের টি শার্টটা চেঞ্জ করে নিয়েছে।
-“তুমি এখানে?”
-“না আমি না আমার আত্মা।”
-“এখানে কেন এসেছো? কেউ দেখলে খারাপ ভাববে।”
-“ভাবাতে তো আমি চাই।”
ঈশা দরজাটা হালকা করে লাগিয়ে সজিবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
-“ঈশা দরজা বন্ধ করলে কেন?”
-“রোমান্স করবো তো তাই। কেউ দেখে ফেললে যে প্রবলেম হবে। এটাও বুঝো না?”
-“ঈশা এসব আমার একদম পছন্দ না। প্লিজ বাইরে যাও।”
ঈশা একদম সজিবের কাছে চলে এসেছে। হাত দুটো পেছনে নিয়ে পা আলগা করে উঁচু হয়ে সজিবের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
-“তোমাকে না আগে অনেক হট লাগছিলো।”
-“ঈশা!”
-“হুম বলো না শুনছি তো।”
-“একদম খারাপ তুমি।”
-“হ্যাঁ তা শুধু তোমারই জন্য।”
-“যাও এখান থেকে। কেউ চলে আসবে।”
-“আগে একবার জড়িয়ে ধরো তো খুব শক্ত করে।”
-“ঈশা পাগলামো রাখো যাও বলছি।”
সজিব কথাটা একরকম ধমক দিয়েই বলে।
-“এখন তো আরো আগে যাবো না। আমি কাউকে ভয় পাই না। যে আসার আসুক যে দেখার দেখুক। আর শুন আগে ভালোয় ভালোয় বলেছিলাম জাস্ট একবার জড়িয়ে ধরতে এখন তো আসলের সাথে সুদ হিসেবে একটা কিস করতে হবে।”
সজিব যেনো আকাশ থেকে পড়লো। এই মেয়ে কি পাগল নাকি। ওর জীবনে কখনোই এমন মেয়ে দেখেনি।
-“দেখো যত তাড়াতাড়ি করবে তত তাড়াতাড়ি আমি চলে যাবো। এখন বাকিটা তুমি বোঝো।”
কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা। ঈশা এখনো দু’হাত পেছনে রেখে আরামে হেলছে আর গুনগুন করছে। সজিব হুট করেই ঈশাকে জড়িয়ে ধরে। হার্ট দ্রুত বিট করছে। এমন কাজ করতে হবে সে জীবনেও ভাবেনি। ঈশা চুপ হয়ে সজিবের হার্টবিট শুনতে ব্যাস্ত। এই দ্বিতীয় বার সজিব ওকে জড়িয়ে ধরলো। ধীরে ধীরে ঈশা হাত নিয়ে সজিবের পিঠে রাখতে যাবে ওমনি সজিব ওকে ছেড়ে দেয়। সজিবের খুব অসস্থি আর লজ্জা লাগছে। ঈশারও ঠিক এমন অবস্থা কিন্তু তা সে সজিবকে বুঝতে দিচ্ছে না। ও আবারও ফিসফিস করে বলে,
-“সুদটা পাওনা রয়ে গেছে।”
সজিব মাথা তুলে ঈশার দিকে তাকায়। আলতো করে ঈশার একটা হাত ধরে। ঈশা কাঁপছে সাথে একটা ভালো লাগাও কাজ করছে। হাতের আঙুলের ভাঁজের উপর আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় সজিব। ঈশা চোখ বন্ধ করে নেয়। গভীর একটা নিশ্বাস নেয়। এতো সুখের অনুভূতি যে ওর কখনোই হয় নি।
-“এবার যাও প্লিজ।”
সজিবের কথায় ঈশার ঘোর কাটে। চোখ খুলে তাকায় ওর দিকে। লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। ঈশা আর এক মুহুর্ত দাঁড়িয়ে না থেকে দরজা খুলে একটা দৌড় দেয়। কিন্তু বেশি দূর যেতে পারেনা। কারো সাথে ধাক্কা খায়। মাথা তুলে দেখে রুমু।
-“তু…..তুই সবজিওয়ালার রুম থেকে এলি? আর এভাবে দৌড়ে কোথায় যাচ্ছিস?”
-“আ….আসলে ভুল করে উনার রুমে ঢুকে গিয়েছিলাম।”
-“উনার? আর ভুল করে না ইচ্ছে করে হুম?”
-“ধ্যাৎ রুমু তুইও না কি থেকে কি বলিস। আমি ওয়াশরুম খু..খুঁজে পাচ্ছিলাম না তাই ভুল করে উনার মানে সজিব ভাইয়ার রুমে ঢুকে গিয়েছিলাম।”
-“ওহ!!! আচ্ছা চল বাসায় যেতে হবে আমার।”
-“আর কিছুক্ষণ বসে যাই না।”
-“ঠিকাছে তুই থাক এমনিতেই তোর বাসা এই দিকে আমার তো অন্য দিকে। তাছাড়া আমাকে উল্টো পথে ফিরে যেতে হবে এটা আমার গন্তব্য নয়।”
-“মানে?”
-“আরে এমনিতেও দুজন একসাথে যেতে পারবো না। তো আমি যাই তুই পরে যা।”
-“কিন্তু এলাম তো একসাথে।”
-“তাতে কি? দুজনের জায়গা তো আর এক জায়গায় হবেনা।”
-“মানে?”
-“মানে ব্যাঙের ডিম।”
-“রুমু তুই না মাঝে মাঝে অনেক কঠিন কথা বলিস।”
-“হুম আমি তো অনেক কঠিন মানুষ। হাহাহা।”
-“পাগল একটা।”
-“ওই একদম লিঙ্গ পরিবর্তন করবি না আমার। পাগলী বল।”
-“হাহাহাহা ধ্যাৎ আসলেই তুই একটা পাগলী।”
রুমু ঈশাকে রেখেই বেরিয়ে আসে। আজ ওর হাঁটতে মন চাইছে। ইচ্ছে করেই রিকশা নেয় নি। আকাশটা খানিকটা মেঘলা করেছে। যেকোন সময় ঝড় নেমে আসবে। কি আজব না! এখনো বৈশাখই এলো না অথচ বৈশাখী ঝড় ঠিকই হচ্ছে। এই কালবৈশাখী ঝড় কারো মন ভেঙে দিচ্ছে, কারো জীবন তছনছ করে দিচ্ছে তো কারো ঘরবাড়ি গুড়িয়ে দিয়ে শান্ত হচ্ছে। এখানে কার বেশি ক্ষতি হচ্ছে এটা রুমু ভেবে পাচ্ছেনা।
মন ভাঙার? জীবন তছনছ করার?
নাকি ঘরবাড়ি গুড়ানোর?
আকাশের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। মেঘ গর্জে উঠে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমে আসে। প্রথম বৃষ্টি কণা এসেই ওর চোখের ভেতর পড়ে। সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেয়। বৃষ্টির পানির সাথে নোনাপানিগুলো গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে। এই পানির আজ কোন নিজস্ব পরিচয় নেই। একটা মৃদু হাসি ফুটে ওঠে রুমুর ঠোঁটে এই হাসির কারণটাও অজানা। এই মুহুর্তে একটা গান ওর ভীষণ মনে পড়ছে।
🎵
যদি মন কাঁদে
তুমি চলে এসো, চলে এসো
এক বরষায়…………….(।।)
এসো ঝর ঝর বৃষ্টিতে
জল ভরা দৃষ্টিতে
এসো কোমল শ্যামল ছায়…..
তুমি চলে এসো, চলে এসো এক বরষায়…..।
যদিও তখন আকাশ থাকবে বৈরি
কদম গুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরি ।।
উতলা আকাশ মেঘে মেঘে হবে কালো
ছলকে ছলকে নাচিবে বিজলী আরো
তুমি চলে এসো, চলে এসো
এক বরষায়…………….(।।)
নামিবে আঁধার বেলা ফুরাবার ক্ষণে
মেঘ মাল্লা বৃষ্টিরও মনে মনে ।।
কদম গুচ্ছ খোঁপায়ে জড়ায়ে দিয়ে
জল ভরা মাঠে নাচিব তোমায় নিয়ে
তুমি চলে এসো, চলে এসো
এক বরষায়…………….(।।)
যদি মন কাঁদে
তুমি চলে এসো, চলে এসো
এক বরষায়…………….
🎵
`
ইভানকে খুব করে মিস করছে। হুটহাট এসে পড়তো বাড়িতে। কি পাগল একটা ছেলে। অজান্তেই হাসি ফুটে ওঠে বর্ণালীর ঠোঁটে। আজকাল খুব বেশি মাথায় চেপে বসেছে এই ইভান নামের ভুতটা। ভালো লাগছেনা কিছুই। পরশু থেকে একটা কল পর্যন্ত দেয় নি। ভুলে গেলো নাকি আমাকে? আমিও কল দিলে রিসিভ করছে না বার বার কেটে দিচ্ছে। আমাকে কেন এভাবে এভয়েড করছে? নাহ আর কল দিবো না। কিন্তু কথা না বললে তো না করলেই পারে আমিও আর ওকে কল দিয়ে জ্বালাই না। এসব কথা ভাবতেই মনটা ভারী হয়ে আসে। কেন জানি চোখ জোরা বড় জ্বালা করছে তার। চোখে হাত দিতেই দেখলো জল!
এই জলের মানে কি? এই জলের পেছনে ইভান নাকি? কিন্তু ইভানকে ভেবে ওর মন খারাপ হচ্ছে কেন?
দম নিয়ে চুপচাপ বসে আছে বর্ণালী। কিছুই ভাবতে পারছেনা ও।
এদিকে পরীক্ষা শেষ হয়ে এলো ইভানের। এবার বাসায় ফিরে যাবার পালা। তার জন্য যে বাসন্তী অপেক্ষা করছে। আসলেই বাসন্তী তার জন্য অপেক্ষা করছে নাকি?
বিকালের দিকে এয়ার টিকেট করে নিলো ইভান। বর্ণালী বা বাসায় কাউকে কিছুই বলে নি। সারপ্রাইজ দেবে গিয়ে ভেবে নিয়েছে। ইচ্ছে করেই কারো সাথে যোগাযোগ করছে না। যখন সামনে গিয়ে দাঁড়াবে সবার মুখটা কেমন হবে তা ভেবেই ইভানের হাসি পাচ্ছে। ফোনটা পাশেই বেজে যাচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না। একবার নামটা দেখলো মালিহা কল দিয়েছে। তবুও রিসিভ করলো না।
`
সন্ধ্যার দিকে ইভান এসে ঢাকা এসে পৌছায়। গাড়ি ভাড়া করে বাসায় যাওয়ার জন্য। মাঝপথে বর্ণালীর বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামায়। কিন্তু এই সন্ধ্যায় তো ওর বাসায় যাওয়া যাবেনা। পরে না আবার ওর প্রবলেম হয়ে যায়। তাই এক বুক হতাশা নিয়ে ড্রাইভারকে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলে। খুব ইচ্ছে ছিলো ঢাকায় এসেই সবার আগে সে তার বাসন্তীকে দেখবে। কিন্তু তা আর হলো না। বাসায় এসে কলিংবেল একটানা চেপে ধরে রেখেছে ইভান। সাহারা ইসলাম এই বেলের আওয়াজে অনেক বিরক্ত হচ্ছেন।
-“রানু কিরে দেখ না দরজায় কে এলো৷ এভাবে কলিংবেল চাপে নাকি কেউ!”
-“দেখতেছি আম্মা।”
রানু গিয়ে দরজা খুলে দিতেই ভয় পেয়ে যায়। কালো মাস্ক পড়ে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। ভয়ে “আম্মাগো” বলে চিৎকার দিয়ে উঠে। সাথে সাথে সাহারা ইসলাম দরজার কাছে আসেন। ইভান হাসতে হাসতে প্রায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। সাহারা ইসলামের আর চিনতে বাকি রইলো না যে এটা উনার বদ ছেলে। ইভানকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেন। ইভান মাস্ক খুলে মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
-“আরে মা এভাবে কাঁদলে কিন্তু আমি আবারো চলে যাবো।”
-“চুপ কর ফাজিল ছেলে।”
-‘আসবি যে বললি না?”
-“বললে কি আর তোমাদের এই মুখটা দেখতে পারতাম?”
-“দিন দিন আরো বেশি ফাজিল হয়ে যাচ্ছিস। কবে বড় হবি তুই?”
-“হ্যাঁ তা ঠিক। আর কত বড় হবো মা? তোমার ছেলের বিয়ের বয়স হয়ে গেছে।”
-“চুপ বেয়াদব ছেলে। আয় ভেতরে আয়। তোর নানুবাড়ির আর দাদুবাড়ির সবাই কেমন আছে?”
-“সবাই ভালো আছে মা। এই যে দেখো কত জিনিস দিয়ে লাগেজ ভরে দিয়েছে। বুমনি কই মা?”
-“ও আর কই থাকবে? নিজের রুমেই আছে।”
-“আমি আসছি। তুমি নাস্তা লাগাও মা ক্ষিদের যন্ত্রণায় পেটে চু চু করছে।”
-“হ্যাঁ লাগাচ্ছি।”
ইভান মাস্কটা পড়ে ঈশার রুমের বাইরে এসে দাঁড়ায়। দরজায় টোকা দিয়ে একটু অন্য দিকে সরে লুকায়। ঈশা দরজা খুলে দেখে কেউ নেই। দরজা বন্ধ করতে গেলেই ইভান হাউমাউখাউ বলে উঠে। ঈশা ভয়ে চোখ হাত দিয়ে ঢেকে আম্মুউউউউ বলে চিৎকার করে ফ্লোরে পড়ে যায়। ইভান হেসেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। মাস্ক খুলে ঈশার সামনে বসে পড়ে। ঈশা চোখ খুলে ইভানকে দেখে শরীরের সব শক্তি দিয়ে হাত পা ছুড়ে মারতে লাগে ইভানকে।
-“বজ্জাত ছেলে লজ্জা নেই বড় বোনের সাথে এমন মজা করিস?”
-“বুমনি তুমি ভয় পেয়ে গেলে? এই তোমার সাহস? হাহাহা।”
-“চুপ কর এভাবে ভয় দেখালে বুঝি ভয় পাবো না?”
-“আচ্ছা শান্ত হও। সরি বুমনি।”
-“হুম কখন এলি?”
-“এই মাত্র।”
-“জানালি না যে তুই আসছিস?”
-“সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম তো।”
-“ভালোই সারপ্রাইজ দেয়া শিখেছিস। তা যাকে দেয়া বেশি প্রয়োজন তাকে দিয়েছিস?”
-“না সে হয়নি।”
ইভান কিছুটা মন খারাপ করে বলে। ঈশা তার মন ভালো করার জন্য বলে,
-“আরে এটা বড় কি? আগে তো তোর আমাদেরই সারপ্রাইজ দেয়া উচিৎ। ভালোই হলো। এবার বল আমার জন্য কি কোন কিছু এনেছিস?”
-“হ্যাঁ আমি তো ওইখানে শপিং করতে গিয়েছিলাম।”
-“যাহ বজ্জাত। ভালোয় ভালোয় আমার গিফট দিয়ে দিস নাহলে তোর ১২টা বাজিয়ে দিবো।”
-“পাবে পাবে। পেহলে পেট পূজা ফির কাম দোজা।”
-“হাহাহা আচ্ছা চল নিচে মা হয়তো তোর জন্য কত কি বানিয়েছে।”
-“হুম চলো।”
`
খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেলো বর্ণালীর। অনেকদিন হলো হাঁটতে যাওয়া হয় না। আগে যখন রুমু এসে থাকতো তখন প্রায়ই দুজনে একসাথে সকালে হাঁটতে যেতো। এখন আর রুমুও আসে না বর্ণালীরও হাঁটা হয় না। আজকেই একবার বলতে হবে রুমুকে এখানে এসে কয়েকটা দিন থাকতে। বর্ণালী রান্নাঘরে মায়ের কাছে যাচ্ছে। আজকে মাকে নিয়েই হাঁটতে যাবে।
💛
#______চলবে…………
#___ফাগুন_প্রেম___
#_লিখাঃ Bornali Suhana
#_পর্বঃ ২৪
💛
খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেলো বর্ণালীর। অনেকদিন হলো হাঁটতে যাওয়া হয় না। আগে যখন রুমু এসে থাকতো তখন প্রায়ই দুজনে একসাথে সকালে হাঁটতে যেতো। এখন আর রুমুও আসে না বর্ণালীরও হাঁটা হয় না। আজকেই একবার বলতে হবে রুমুকে এখানে এসে কয়েকটা দিন থাকতে। বর্ণালী রান্নাঘরে মায়ের কাছে যাচ্ছে। আজকে মাকে নিয়েই হাঁটতে যাবে।
-“মা চলো না একটু বাইরে থেকে হেঁটে আসি।”
-“আরে সজিব একটু পর অফিসে যাবে তুই স্কুলে যাবি তোর বাবাও উঠবেন আমাকে নাস্তা বানাতে হবে আর তুই বলছিস হাঁটতে যেতে?”
-“তো কি হয়েছে? এখন ৬টা বাজে দুজনে অন্ততপক্ষে ৩০মিনিট হেঁটে আসি চলো না। তোমার শরীরের জন্যও হাঁটা জরুরি।”
-“হয়েছে এখন আর আমাকে ডাক্তারি করতে হবে না। চল।”
মা মেয়ে দুজনে বেড়িয়ে পড়লেন হাঁটতে। বাইরে কিছু দূর হেঁটে আসতেই জয়কে সামনে দেখতে পায় বর্ণালী। ওকে দেখতেই ভেতরটা ভয়ে কেঁপে উঠল। জয় এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। বর্ণালী নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়। জয় শারমিন বেগম কে সালাম দেয়।
-“আসসালামুয়ালাইকুম আন্টি কেমন আছেন?”
-“এইতো বাবা ভালো আছি। তুমি?”
-“আমিও ভালো আন্টি। বর্ণালী কেমন আছো?”
-“জ্বি ভালো।”
-“হাঁটতে বের হয়েছেন নাকি আন্টি?”
-“হ্যাঁ বাবা আর বলো না বর্ণের জন্য বের হলাম। চলো তুমিও আমাদের সাথে কিছুদূর হেঁটে আসি।”
বর্ণালীর প্রচন্ড রকমের খারাপ লাগে বিষয়টা। কেন মা একে সাথে যাওয়ার কথা বলতে গেলেন! ধ্যাৎ মজাটাই নষ্ট করে দিলেন। কিন্তু ও এই মুহুর্তে কিছু বলতেও পারছেনা। বাড়িতে গিয়েই মাকে কিছু একটা বলতে হবে। প্রায় অনেকদূর হেঁটে চলে এসেছেন সবাই। জয় বারবার আড় চোখে বর্ণালীকে দেখছে। কয়েকবার কাছে ঘেঁষে কথা বলারও চেষ্টা করেছে কিন্তু বর্ণালী এড়িয়ে গিয়েছে। এই সুযোগ তাকে দেয় নি। এসবে খুব বেশি অস্বস্থি লাগছে ওর।
-“মা চলো ফিরে যাওয়া যাক। দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
-“হ্যাঁ চল।”
বাসায় এসেই শাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে যায় বর্ণালী। মাকে কিছু বলতে চেয়েও বললো না। নাস্তা সেরে বেরিয়ে পড়ে। স্কুলে আসতেই কাজ পড়ে ওর উপর। এইচএসসি পরীক্ষার শিক্ষার্থীদের জন্য একটা বিদায়ী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। তাই কলেজে অনেক কাজ আছে আর এইসব কাজ বরাবরের মতোই এসে পড়েছে বর্ণালীর উপর। যেকোন অনুষ্ঠানের সব রকম দায়িত্ব সবসময়ই ওর উপর এসে পড়ে। তাই তো কোমড় বেঁধে কাজে লেগে গেছে। কোথায় কিভাবে স্টেজ তৈরী করা হবে, কিভাবে সাজানো হবে, খাবারের মেনুতে কি কি থাকবে, নৃত্য, গান, কবিতা আবৃত্তি, অভিনয় সব রকমের আয়োজন কিভাবে আর কাদের দিয়ে করাবে, কোন কোন বিশেষ অতিথিকে দাওয়াত করতে হবে সব লিস্ট করতে বসে পড়েছে। হঠাৎ করেই কারো উপর চোখ থমকে যায় বর্ণালীর। সামনে ইভান দাঁড়িয়ে আছে। বর্ণালী ওর দিকে এগিয়ে যেতেই প্রিন্সিপাল স্যার ওকে ডাকিয়ে নেন।
-“স্যার আসবো?”
-“হ্যাঁ বর্ণালী এসো।”
-“জ্বি স্যার বলেন।”
-“শুন তোমার সুবিধার্থে কয়েকজন স্টুডেন্ট সিলেক্ট করে একটা গ্রুপ বানিয়ে দিয়েছি৷ যারা তোমাকে সবকিছুতে হেল্প করবে।”
-“ওকে স্যার থ্যাংক ইউ।”
প্রিন্সিপাল পিয়নকে ডেকে বলেন,
-“গ্রুপের সবাইকে নিয়ে এসো তো।”
-“জ্বি স্যার।”
পিয়ন যাদের সাথে নিয়ে আসে তাদের দেখে বর্ণালী হা হয়ে যায়। ইভান, রাহাত, আসাদ, শিমুল, মালিহা আর মিথি এসেছে।
-“বর্ণালী?”
-“জ্বি স্যার।”
-“তারা সবাই তোমাকে হেল্প করবে। তুমি কাকে কি কাজ দিবে বুঝিয়ে দিয়ে দাও। আর আজ থেকেই কাজ শুরু করো। ডেকোরেশনের মানুষদের আসতে বলেছি তাদের কিভাবে কোথায় কি করা যায় সবকিছু বলে দিও।”
-“তোমরা সবাই যাও ম্যাডামের সাথে।”
-“জ্বি স্যার।”
সবাই হুরহুর করে বেড়িয়ে যায়। বর্ণালীও বেড়িয়ে যায় তাদের পিছু। ইভানের সাথে একবার কথা বলা প্রয়োজন। তাই ইভানকে আওয়াজ দেয় কিন্তু সবাই একসাথে আসে। তাই আর কোন উপায় না দেখে যার যার কাজ বুঝিয়ে দেয় সবাইকে। ইভানের উপর পড়ে ডেকোরেশন এর দায়িত্ব। যদিও বর্ণালী সবকিছু দেখাশোনা করবে।
অনেক্ষণ পর ইভানকে একা পেলো বর্ণালী। ওকে দেখে কেমন বদলে গেছে লাগছে। বর্ণালী ইভানের দিকে এগিয়ে যায়।
-“ইভান।”
-“জ্বি ম্যাডাম।”
-“এখানে কেউ নেই সো ম্যাডাম না ডাকলেও পারো।”
-“তো কি ডাকবো ম্যাডাম?”
বর্ণালীর বুকটা যেনো কেঁপে উঠে। ইভান ওর সাথে কেন এভাবে কথা বলছে!
-“ইভান এভাবে কথা বলছো কেন? আর আমাকে বললে না কেন তুমি যে ফিরেছ? গত দু’দিন কলটাও ধরলে না?”
-“কিভাবে কথা বলবো ম্যাডাম? আর আমি যে ফিরবো তা কি আপনাকে বলার কথা ছিলো?”
বর্ণালীর চোখে পানি জমে যায়। এভাবে কেন কথা বলছে ওর সাথে? কই ভেবেছিলো রাগ দেখিয়ে ও কথা বলবে না কিন্তু এখানে তো উলটো হচ্ছে। ইভান ওকে এভয়েড করছে।
-“কিছু কি হয়েছে ইভান? এভাবে কেন কথা বলছো? আমার উপর রেগে আছো?”
-“ম্যাডাম আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা আপনি আমাকে কি বলতে চাচ্ছেন? কোন কথা থাকলে বলেন নয়তো আমি কাজ করবো। অনেক কাজ পড়ে রয়েছে শেষ করতে হবে সব।”
মালিহা এতোক্ষণ দূর থেকে দাঁড়িয়ে তাদের কথা বলা দেখছিলো। আর সহ্য করতে না পেরে এগিয়ে যায় ওদের দিকে।
-“ইভান কোন হেল্প লাগবে? ম্যাডাম কিছু কি করতে হবে নাকি? আমাকে বলেন?”
বর্ণালী খালি গলায় ঢোক গিলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখের পাতা এক করছে না। এক করলেই জলটা গড়িয়ে পড়বে আর ও এই চোখের জল ইভানকে দেখাতে চায় না।
-“কিছুনা তোমরা এদিকটা দেখো আমি আসছি একটু।”
কথাটা বলেই বর্ণালী আর এক সেকেন্ডও দাঁড়ায় না। পিছন ফিরে হাঁটা শুরু করে। চোখের পাতা এক করতেই গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখের জল মুছে ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়। ওয়াশরুমে গিয়েই চোখের জল ছেড়ে দেয়। ইভানের এমন ব্যাবহারে ও কাঁদছে? কিন্তু ও কেন কাঁদছে! কেন এতো খারাপ লাগছে ওর! কেন কেন কেন? বুকের ভেতর কেমন যেনো ব্যাথা করছে। চোখের জল অনবরত গড়িয়ে পড়ছে। ফোন বেজে উঠতেই ও ওয়াশরুমেই কল রিসিভ করে। রুমু কল করেছে। সকালেই তাকে কল দিয়েছিলো কিন্তু রিসিভ করেনি এখন ব্যাক করেছে।
-“হ….হ্যাঁ রুমু বল।”
-“তুই কাঁদছিলি?”
বর্ণালী খানিকটা অবাক হয়। রুমুকে কখনোই কোন কিছু মুখ খুলে বলতে হয় না বলার আগেই ও বুঝে নেয়। বর্ণালীর কান্নার মত্রাটা আরো বেড়ে যায়।
-“বর্ণালী তুই কোথায় বল আমি এখনি আসছি। এভাবে কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে জান বল?”
-“ন…নাহ তোকে আসতে হবে না। আমি ঠিক আছি।”
-“তাহলে এভাবে কাঁদছিস কেন?”
-“ওই ই….ভান।”
-“কি হয়েছে ইভানের?”
-“ইভান আমার সাথে কথা বলছে না।”
-“হে খোদা এই কথা? একটু কথা না বলাতেই বেগম সাহেবা কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন?”
-“আসলে….”
-“শুন কথা বল ওর সাথে জানার চেষ্টা কর কি হয়েছে? আর ও কেন এমন করছে?”
-“কিন্তু ও তো কথাই বলতে চাইছেনা।”
-“জোর করে কথা বল। এতো সোজা নাকি কথা বলবে না? যা এখনি যা।”
-“যাবো?”
-“হ্যাঁ জান এখনি যাবি। রাখছি আমি আমাকে পরে সব জানাবি।”
-“আচ্ছা ঠিকাছে যাচ্ছি।”
বর্ণালী চোখ, মুখ ধুয়ে বাইরে যায় সোজা ইভানের কাছে।
-“ই….ইভান তোমার সাথে আমার কথা আছে।”
-“হ্যাঁ বলেন।”
-“এখানে না।”
-“তো কোথায় যেতে হবে?”
-“যেখানে নিয়ে যাবে সেখানে।”
-“সরি আমার অনেক কাজ আছে।”
বর্ণালী খানিকটা রাগ দেখিয়ে সবাইকে ডেকে নিয়ে আসে।
-“শুন আজকে কাজ এখানেই সমাপ্তি দিচ্ছি। তোমরা সবাই সব ক্লাসে গিয়ে গান, নাচ, অভিনয় আর কবিতা আবৃত্তিতে যারা নাম দিতে চায় তাদের নাম নিয়ে নাও। যদিও এটা কোন প্রতিযোগিতা নয় তবুও যারা ভালো পারে তাদের নাম নিবে। তাদের দিয়ে পারফরম্যান্স করানো হবে।”
-“ঠিকাছে ম্যাম।”
-“ইভান তুমি আমার সাথে চলো কাজ আছে।”
মালিহা তো হন্তদন্ত হয়ে যায়। কিভাবে ইভানকে আটকানো যায় ম্যাডামের সাথে যাওয়া থেকে
-“ম্যাডাম ইভানের সাথে আমার একটু কাজ ছিলো আপনি যদি অন্য কাউকে নিয়ে যেতেন।”
ইভান ব্রু কুচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো মালিহার দিকে। মনে মনে ভাবতে লাগলো আমার সাথে ওর কি প্রয়োজন?
বর্ণালী টেনশনে পড়ে গেলো। এখন কি করে ইভানকে সাথে নেয়া যায়? তখনি ইভান বলে,
-“তোর সাথে পরে দেখা করবো৷ আপাতত ম্যাডামের সাথে কাজটা সেরে আসি।”
-“কিন্তু।”
-“মালিহা!”
-“আচ্ছা।”
মালিহা রাগে কটমট করতে করতে চলে গেলো। বর্ণালী একটা স্বস্থির নিশ্বাস নিলো। ইভান আর কোন কিছু না বলেই বর্ণালীর পিছু পিছু যায়। বর্ণালী রিকশাওয়ালাকে ডাকতে চাইলেই ইভান বলে,
-“আমার সাথে গাড়ি আছে চলুন।”
-“হুম চলো।”
ইভান ওর সাথে আপনি করে কথা বলছে? কি হয়েছে ওর?”
দুজনে গাড়িতে উঠে বসে।
-“কোথায় যাবেন বলেন।”
-“সোজা চলো।”
ইভানও আর কোন কথা না বলে সোজা গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। দুজনের মাঝেই গভীর নীরবতা পালন হচ্ছে। কেউ কোন কথা বলছে না। বর্ণালী টেনশনে মরে যাচ্ছে। যতক্ষণ না জানতে পারবে কি হয়েছে ততক্ষণ ওর মন শান্ত হবে না। গাড়ি অনেকদূর চলে শহরের কোলাহল থেকে বের হয়ে এসেছে। একটা খালি জায়গায় এসেই বর্ণালী বলে,
-“গাড়ি থামাও।”
-“সাথে সাথে ইভান গাড়ি থামায়।”
বর্ণালী ওর দিকে ফিরে বলে,
-“কি হয়েছে ইভান?”
-“কই? কিছু না তো।”
-“আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলো অন্যদিকে কেন তাকাচ্ছো?”
ইভান বর্ণালীর দিকে তাকিয়ে গাড়ির মাঝে জোরে হাত দিয়ে একটা ঘুষি মারে। সাথে সাথে ও কেঁপে ওঠে। ইভানের এমন ব্যাবহারকে প্রচন্ড ভয় পায়।
-“কি হয়েছে আমাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে? কি হয়েছে তো আমার জিজ্ঞেস করার কথা বর্ণালী।”
-“কি বলছো এসব ইভান? কি কারণে তুমি এতো রেগে আছো?”
-“তুমি আমার জন্য একটু অপেক্ষা করলে না? আমার ভালোবাসার কোন দাম নেই তোমার কাছে?”
-“এসব কথা কেন বলছো ইভান? কি করেছি আমি?”
বর্ণালী কাঁদো কাঁদো হয়ে গেছে। ইভানের চোখ লাল হয়ে আছে। ওর চোখের কোণেও পানি। রাগে ওর শরীর কাঁপছে আর ফুসছে। ব্রু কুচকে তাকিয়ে আছে বর্ণালীর দিকে।
-“জয়ের সাথে কি করছিলে তুমি?”
বর্ণালী যেনো বড় রকমের একটা ধাক্কা খেলো। এখন সবকিছু ওর কাছে পরিষ্কার। সকাল বেলা ইভান ওদের একসাথে দেখেছে। তাই এতো রেগে আছে। সেদিন ইভান ওকে বার বার বলেছিলো জয়কে ওর আশেপাশে যেনো না দেখে। কিন্তু মায়ের জন্যই সকালে ওই জয়টা সাথে গেলো। এই মুহুর্তে ইচ্ছে করছে জয়টাকে মেরে ফেলতে। সব সময় ওর কারণেই ইভান রেগে যায়।
💛
#______চলবে………..