হারাতে_চাই_না_তোমায় #পর্ব-৩১,৩২

0
778

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-৩১,৩২
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা

৩১
আজ তন্নি আর অনিম বিয়ে।ওরা আজ বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হবে।দু’জনের এতো দিনের ভালোবাসা আজ পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হবে।
আজকের দিন নিয়ে অনিমের অনেক অপেক্ষা ছিলো।আজ সেই অপেক্ষার অবসান ঘটবে।অনিম ঠিক করেছে ওদের নতুন জীবনের প্রথম শুরু করবে নিজের ভালোবাসার কথা তন্নিকে জানিয়ে।যা ও এতোদিনেও বলতে পারেনি।
এদিকে তন্নি মন খারাপ করে বসে আছে।আজ বাবা-মা বোনকে ছেড়ে চলে যেতে হবে অন্য একটা জায়গায়,অন্য পরিবেশে।যেখানে নিজেকে সবার মতো করে তৈরি করতে হবে।যদিও ভয়টা একটু কম করছে কারন ওই বাড়ির সবাই ওর চেনা।কিন্তু শত হোক মেয়েদের এই খারাপ লাগাটা থাকবেই।এটাই চিরন্তন সত্য।তন্নির মন আরো বেশি খারাপ যার হাত ধরে ও নতুন জীবনে পা দিবে তার মনের কথাই এখন পর্যন্ত যানতে পারলো না।সত্যি কী তন্নিকে সে ভালোবাসে কী না।
————
সকাল থেকেই দুই বাড়িতে কাজের শেষ নেই।বিয়ে বলে কথা সবাই হাতে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে।তাই সবাই এদিক ওদিক কাজ নিয়ে ছোটাছুটি করছে।

আরু ঘুম থেকে উঠলো সকাল ১০ টায়।ঘুম থেকে উঠার পর মাথাটা অনেক ভার ভার লাগছে।কালকে ঔষধ খাওয়ার পর ঘুমটা ভালো হয়েছে ঠিক কিন্তু এখন মাথা ভর হয়ে আছে।এখনই এক কাপ কড়া করে চা খেতে হবে তবেই ফ্রেশ লাগবে নিজেকে।তাই উঠে ফ্রশ হয়ে নিচে গেলো ব্রেকফাস্ট করতে।নিচে গিয়ে দেখে সবাই এটা সেটা করতে ব্যস্ত।তাই আরু নিজে গিয়ে নিজের খাবার বেরে খেতে লাগলো।আরুর খাওয়ার শেষের দিকে ওর মা বের হলো রান্নাঘর থেকে।
তিনি বললেন,
আদিরা আহমেদঃ এতোক্ষনে উঠার সময় হলো?আরো কিছুক্ষন ঘুমালেই তো পারতি।তোদের নিয়ে যে কী করবো কে যানে।বাড়িতে এতো কাজ আর মেয়ে পরে পরে ঘুমাচ্ছে লোকে শুনলে কী বলবে।তোদের আবার কিছু বলাও যাবে না।বাবার ছেলে মেয়ে বলে কথা।তোদের কিছু বললে তো তোদের বাবা আমাকে জাড়ে।কই একটু ছেলে মেয়েকে শাসন করবে তা না আরো উস্কানি দেয়।একদিন বুঝবে আমার কথা।এখন তো দামই নেই।
আরুর এমন বকবক করতে করতে আবার রান্নাঘরে চলে গেলো।আরু শুধু চুপচাপ খাচ্ছিলো।ও জানে এখন কিছু বললে বিয়ে বাড়িতে ওর মান-সলেমান সব শেষ হয়ে যাবে।তাই কিছু বলে বকা খাওয়া থেকে না বলে শুধু শুনে যাওয়া অনেক ভালো।
আরু খাওয়া শেষ করে একবার বাগান থেকে ঘুরে এলো।গিয়ে দেখে বাবা মামা সবাই টুকটাক কাজ করছে।তাই আরু সেখানে না থেকে চলে এলো নিজের রুমে।এসে মারিয়ার সাথে কথা বলে নিলো।ওদিকের কী খবর তাই জানলো।তন্নির সাথেও কিছুক্ষন কথা বললো।কালকে যা হলো এতোক্ষন কিছুই মনে পরেনি।কিন্তু হটাৎ সেই কথা আর কাজ গুলো মনে পরতেই মনটা বিষিয়ে গেলো।কে ওর সাথে এমন করছে এটা ও ভেবে পাচ্ছে।কিন্তু আরু ঠিক করলো ওর সাথে যা যা হয়েছে সব ও অনিমকে জানাবে।এই ভেবে অনিমের রুমের দিকে যেতে নিলেই আবার ভাবলো “আজকে ওর বিয়ে এটা শুনলে ভাইয়া আজই কোনো না কোনো কান্ড ঘটাবে পরে বিয়ে টা সুষ্ট ভাবে হবে না।থাক বিয়ের ভেজাল শেষ হলে সব জানাবে”।
এই ভেবে আমার নিজের জায়গায় বসে পরলো।
——————-
আয়ান নিচে নামলো ব্রেকফাস্ট করতে।ওর মন আজ একটু ভালো আবার খারাপ।খারাপের কারণ ‘নিজের প্রিয় জিনিসটায় আবার সে আঘাত করেছে।কিন্তু ও তো ইচ্ছে করে আঘাত করতে চায়নি।তারপরও আঘাত করে ফেলেছে।তাই সে নিজেকেও…………’
আর ভালো লাগার কারণ হলো ‘কতো গুলোদিন।ঠিক কতোগুলো দিন পর নিজের সেই জিনিসটা ছুয়ে দেখতে পেরেছে।এটার থেকে আনন্দের,তৃপ্তির আর কী হতে পারে’
আয়ান যখন চেয়ারে বসে এসব ভাবছে তখন ওর মা’র ডাক শুনে ভাবনা থেকে বের হলো।ওর মা বললো,
আফিয়া রাহমানঃ আয়ান তোর হাতে কী হয়েছে?
আয়ানঃ আব..কিছু না।এমনি কিসের সাথে যেনো লেগে গেছে।বাদ দাও।
আফিয়া রহমানঃ কী বাদ দিবো?কতোটা কেটেছে।ড্রেসিং করেছিলি ভালো করে।না হলে কিন্তু ইনফেকশন হয়ে যাবে।
আয়ানঃ আহা বললাম তো বাদ দাও।ঠিক হয়ে যাবে।মা হাতে ব্যাথা খাইয়ে দাও তো।
আফিয়া রাহমানঃ দিবো।কিন্তু আগে বস হাতে ব্যান্ডেজ করে নি।(তিনি চলে গেলেন৷ ফাস্টএইড আনতে)
আয়ানঃ মা লাগবে না বল্লাম তো।মা শুনো……
আয়ানের মা’র যাওয়ার পর আয়ানর ওর হাতের দিকে তাকিয়ে ভাবছে ”এর আর কী দোষ?না না এরই সবচেয়ে বড় দোষ।এই আমার……… কষ্ট দিয়েছে।ওকে তো এই ছোট শাস্তি পেতেই হতো”।
ওর ভাবনার মাঝেই ওর মা এলো।এসে আয়ানের হাতে ব্যান্ডেজ করে দিলো।তারপর আয়ানকে খাওয়াতে খাওয়াতে বললো,
আফিয়া রাহমানঃ আজকী ওইনখানে যাবি?
আয়ানঃ হুম যাবো।বলেছে তো যেতে।তোমাদেরও তো বললো।তোমরা যাবে না?
আফিয়া রাহমানঃ না আমরা কালকে যাবো।আজ না হয় তুই যা।
আয়ানঃ বেশ তোমাদের যা ইচ্ছা।….আচ্ছা মা আপু আসবে কবে?
আফিয়া রাহমানঃ বললো তো সামনের মাসে।
আয়ানঃ ওহ।…..আচ্ছা মা আমি যা করেছি তার জন্য কী আমি কোনো দিন ক্ষমা পাবো না?আমি কী অনেক খারাপ?আমি কাউকে ভালোবাসার যোগ্য না তাই না মা?
আফিয়া রাহমানঃ কী বলছিস তুই এসব?
আয়ানঃ বলো না?
আফিয়া রাহমানঃ দেখ বাবা তুই যা করেছিস তার ক্ষমা পাওয়া এতো সহজ না।এটা কেউ করবেও না।তুই ভাব তোর সাথে যদি কেউ এমন করতো তাহলে তুই তাকে কী করতি?
আয়ানঃ….(চুপ করে আছে)…..
আফিয়া রাহমানঃ তবে বলবো লেগে থাক।ভালোবাসলে ক্ষমা তুই পাবি।হয়তো এখন অভিমান,রাগ নিয়ে পুষে আছে কিন্তু আমার বিশ্বাস তুই তোর ভালোবাসা দিয়ে তা পুষিয়ে নিবি।…….কী পারবি না?
আয়ানঃ পারবো মা।অবশ্যই পারবো।তুমি শুধু দোয়া করো।
আফিয়া রাহমানঃ আমার দোয়া সবসময় তোর সাথেই আছে।
————————–
এখনই তন্নিদের বাসার উদেশ্যে সবাই বের হবে।অনিমের ত তড় সইছে না কখন যাবে,কখনর ও ওর প্রেয়সী কে দেখবে।অনিমের ছটপট দেখে সবাই মিটমিট হাসছে।এর মাঝেই আরু নিচে নামলো।সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
আরু আজ মেরুন কালার একটা গাউন পরেছে।ফুল স্লিভ ও ফুল ব্যাক।সুন্দর করে হিজাব বেধেছে।ওড়নাটা কাতানের হওয়ায় একপাশ করে রেখেছে।মুখের তেমন কোনো মেকআপ নেই।আরু হেভি মাকআপ পছন্দ করে না।
ইশিকাও আজ লেমন কালার গাউন পরেছে।মুখে টুকটাক মেকআপ।চুল গুলো ছাড়া।
দুজনকেই আজ সুন্দর লাগছে।ওদের একসাথে নিচে নামতে দেখে আরুর মা দু’জনের সামনে এসে ওদের গালে হাত দিয়ে বলে,
আদিরা আহমেদঃ বাহ!আমার দুই মেয়েকে তো আজ খুব সুন্দর লাগছে।কারো নজর যেনো না লাগে।
ওরা এটা শুনে মিষ্টি একটা হাসি দিলো।এর মাঝে অনিম এসে বললো,
অনিমঃ বিয়ে কী আমার না তোদের?
আরুঃ মানে?
অনিমঃ এতো সেজেছিা কেনো?
ইশিকাঃ কম হয়ে গেছে না ভাইয়া?সব এই আরুর দোষ।আমি বলছিলাম আরেকটু সাজি কিন্তু আমাকে জোড় করে নিয়ে এসেছে।এখন নিশ্চয়ই আমাকে পঁচা দেখতে লাগছে?
অনিমঃ এরে বল্লাম কী আর বুঝলো কী? হায়রে কপাল🤦‍♂️
অনিমের কথা শুনে আরু আর ইশিকা এক সাথে হেসে দিলো।এর মাঝেই আরুর বাবা এসে বললো ‘তাড়াতাড়ি আসতে দেরি হয়ে যাচ্ছে’।
আরুরা সবাই গাড়িতে গিয়ে বসলো।
——————–
তন্নি বউ সেজে বসে আছে।তন্নিকে বউ সাজে আজ খুব মিষ্টি লাগছে দেখতে।তন্নিকে আজ ভয়,লজ্জা,কষ্ট,নার্ভাস সব এক সাথে জেঁকে বসেছে।
তন্নিকে আজ লাল কালারের লেহেঙ্গা পরানো হয়েছে।সাথে গহনা তো আছেই।তন্নি রেডি হয়ে মাত্র একটু বসেছে এর মাঝেই বাহির থেকে শুনলে ‘বর এসেছে বর এসেছে’।এবার যেনে তন্নি ভয়ে আরো কাপতে লাগলো।

আরুরা চলে এলো সেন্টারে।তন্নিদের বাসায় অনুষ্ঠান করেনি আজ।সেন্টারটা খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে।আরুরা যেতেই তন্নিরা খুব সুন্দর করে ওদের ভিতরে নিয়ে গেলো।এর ভিতর মারিয়া আর তন্নির কয়েকটা কাজিন মিলে গেইট ধরলো।মারিয়া আরুকে বলেছে ‘ওদের পক্ষে চলে আসতে’ কিন্তু আরু বলে দিয়েছে ‘আজ ওর ভাইয়ের পক্ষে থাকবে’।অনেক বলার পরও আরু আসেনি।এভাবেই ওদের গেইটের পর্ব শেষ হলো।অনিমকে নিয়ে স্টেজে বসানো হলো।আরু আর ইশিকা চলে গেলো তন্নির সাথে দেখা করতে।
এদিকে ইশিকাকে দেখে একজনের মুখে হাসি ফুটলো।আর বিশেষ করে এই ড্রেস টায়।
(এই লোকটা আবার কে 🤔)
আরু এসে দেখে তন্নি বসে আছে।তাই ওর কাছে গিয়ে বললো,
আরুঃ আমার ভাবিকে তো আজ খুব মিষ্টি দেখতে লাগছে।
ইশিকাঃ হুম সেই ভবিকে দেখে অনিম ভাইয়া যানো হার্ট অ্যাটাক করে না বসে।
বলেই ওরা হাসতে লাগলো।ওদের হাসি দেখে তন্নি লজ্জায় মাথা নামিয়ে ফেললো,আরু তা দেখে বললো,
আরুঃ ব্বাহ!আমার ভাবি তো দেখি ভাইয়ার নাম শুনেই লজ্জা পাচ্ছে।
তন্নিঃ আরু এবার কিন্তু বেশি বেশি হচ্ছে।
আরুঃ তাই না?এই ইশু চুপ।আমার ভাবি লজ্জা পাচ্ছে।আর হাসবি না।
ইশিকাঃ ওকে চুপ করলাম 🤫
ওদের কাহিনী দেখে তন্নি হাসছে।এবার তন্নি বললো,
তন্নিঃ তোদের দুজনকে খুব সুন্দর লাগছে দেখতে।দেখিস তোদের দেখেও কেউ যেনো আজ হার্ট অ্যাটাক না করে।
ইশিকাঃ এমন হার্ট অ্যাটাক,ফ্যাটাক করার মতো কেউ নেই ভাবি😣পোড়া কপাল🤦‍♀️
মারিয়াঃ হয়তো কোথাও লুকিয়ে লুকিয়ে তোমাকে দেখে ঠিকই অ্যাটাক হয়েছে তুমি তা দেখছো না।আর আরুকে দেখে তে একজন সেই কবে থেকেই অ্যাটাক হয়েই আছে।
মারিয়ার কথা শুনে ওরা ৩ জনে দরজার দিকে তাকালো।মারিয়া কথা বলতে বলতে ওদের দিকে এগিয়ে আসছে।
আরুঃ কী বললি তুই?
মারিয়াঃ আরে কিছু না।চল।তনুকে নিয়ে যাওয়ার সময় হয়েছে।
এটা শুনে আবার তন্নি কাঁপতে লাগলো।তন্নি আরুর হাত খফ করে ধরে ফেললো।আরু তা দেখে বললো,
আরুঃ ভয় পাচ্ছিস কেনো?ভয়ের কিছু নেই।জাস্ট চিল।
————–
তন্নি আর অনিম বসে আছে পাশাপাশি।কিছুক্ষন আগেই ওদের বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।আটকে গেলো একে অপরের জীবনের সাথে।অনিম যখন তন্নিকে দেখেছে ওর হার্ট যেনো থেমে গিয়েছলো।বউ সাজে তন্নিকে দেখে অনিম তাকিয়েই ছিলো।চোখের পলকও পরছিলো না।সবাই অনিমকে দেখে হাসছিলো।
তন্নিকে আনার সময় ওর সিক্সসেন্স বলছিলো অনিম ওর দিকে তাকিয়ে আছে।যখন শুনলো মানুষ অনিমকে নিয়ে হাসছে তাও আবার ওর দিকে তাকিয়ে তাকার জন্য তখন লজ্জায় মাটির সাথে মিসে যেতে ইচ্ছে করছলো।এরপর আসলো সেই কাঙ্খিত সময়।বিয়ে পড়ানোর সময়।
অনিমকে কবুল বলতে বললে ও তাড়াতাড়ি বলে দেয়।কিন্তু তন্নিকে কবুল বলতে বললে ওর চোখের সামনে বাবা-মা,বোন ওদের সাথে বড় হওয়া,আনন্দের সময় কটানল সব ভেসে আসছিলো।এসব ভেবে চোখের কোনা দিয়ে দু ফোটা পানি পরলো।একটা সময় গিয়ে তন্নি কবুল বললো।
—————–
আরুর এইদিকটা মানুষ থাকার জন্য কেমন যেনো লাগছিলো।তাই একটু ফাঁকা জায়গায় খুজচ্ছে ফ্রেশ বাতাসের জন্য।যদিও কয়েকটা রুম আছে গেস্টদের একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য।ওইনরুম গুলোর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় পিছন থেকে আরুর মুখ চেপে একজন টেনে একটা রুমে নিয়ে গেলো।রমটা অন্ধকার ছিলো।আরুকে রুমল নিয়ে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরলো আর আরুর দুপাশে হাত দিয়ে আরুকে আটকে দিলো।রুমটা অন্ধকার ছিলো।কিন্তু ডিম লাইট জ্বলছে।আরুর হাত ধরা লোকটার চেহারা কিছুটা বুঝা যাচ্ছে।তাকে দেখেই আরুর হার্টবিট বেরে গেলো।৫ বছর পর এই মানুষটাকে দেখলো।যার থেকে এক কথায় পালিয়ে বেরিয়েছে এতোদিন।যার জন্য নিজের পরিবার,বন্ধু সবাইকল ছেড়ে এতো দূরে চলে গিয়েছিলো।যাকে নিজের মুখ দেখাবপনা বলে সামনে আসেনি।সেই মানুষটা আজ ওর এতো কাছে।এটা কী ও সত্যি দেখছে?নাকী কল্পনা?
এতোদিন পর আয়ানকে দেখে আরু নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না।পারলো না নিজেকে শক্ত রাখতে।চোখের কোন দিয়ে পানি ঝড়তে লাগলো।আরু নিজের অজান্তেই ওর হাত আয়ানের গালে রাখলো।
আয়ানও আজ এতোদিন পর আরুর স্পর্শ পেয়ে ওর চোখ চিকচিক করে উঠলো।কিন্তু নিজেকে সামলে নিলো।আয়ান এবার ওর হাত আরুর গালে রেখে দু’হাতের বৃদ্ধ আঙুল দিয়ে আরুর চোখের পানি মুছে দিয়ে স্লো ভয়েসে বললো,
আয়ানঃ কাঁদছো কেনো আরুপাখি?আমাকে দেখে?দেখো? তাকাও আমার দিকে?আমি অনেক খারাপ তাই না জান?অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমাকে?কিন্তু প্রমিস এখন থেকে আর কষ্ট পেতে দিবো না।……এই আরুপাখি তাকাও না আমার দিকে।
আরু এবার কাঁদতে কাঁদতে আয়ানের দিকে তাকালো।আয়ানের চোখে আজ অসহায় আর আরুর জন্য অসীম ভালোবাসা রয়েছে।যা আরুকে বড্ড টানছে।
আরুর চোখে আজও সেই আগের মতো ভালোবাসা।দেখছে আয়ান।সেই আগের আরু।আরু আয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে আর কাঁদছে।আয়ান আরুর চোখের পানি যত্ন সহকারে মুছে দিচ্ছে।
আয়ানের স্পর্শ পেয়েই আরু এবার বাস্তবে ফিরলো।কী করছিলো ও এতক্ষন।নিজেকে কেনো সামলাতে পারলো না।কোনো এতোটা বোকা ও।মুহূর্তেই আরু রেগে গেলো।ওর চোখ এখন শুধু ঘৃণা আর রাগ।এই চোখে ভালোবাসা নেই।আরু ওর গালে রাখা আয়ানের হাতটা সরিয়ে দিলো।রাগে ফুঁসছে ও।রাগী গালয় বললো,
আরুঃ এসব কী অসভ্যতামি?আমাকে এখানে আটকে রেখেছেন কেনো?
হটাৎ আরুর রাগী চোখে আর এমন কথা শুনে আয়ান বুঝলো আরু বাস্তবে ফিরেছে।এবার ওর হালুয়া টাইট হবে।কিন্তু আয়ান নিজেকে সামলে আরুকে মানাতে আর দুষ্টামি সহকারে বললো,
আয়ানঃ তোমাকে ভালোবাসতে আটকে রেখেছি।আর অসভ্যতামির তো কিছু করলামই না।
আরুঃ ফাজলামি হচ্ছে এখানে?আর এসব থার্ডক্লাস কথা বার্তার মানে কী?(রেগে)
আয়ানঃ ফাজলামি কোথায় পেলে তুমি?এটা তো ভালোবাসা জান?
আরুঃ হা হা ভালোবাসা(তাচ্ছিল্য হেসে)এসব নাটকীয় কথা বাদ দিন।কেনো এসেছেন এখানে?
আয়ানঃ একবার তো বললাম।শুনতে পাওনি?
আরুঃ না আমি শুনতে পাইনি।চলে যান এখান থেকে।চলে যান।আমি আপনার চেহারাও দেখতে চাই না।(আয়ানের হাত এখন আরুর কাধে চেপে ধরেছিলো তারথেকে ছুটার জন্য ছটপট করছে)
আয়ানঃ আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই আমার কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোথাও যাবো না আর না তুমি যাবে।(আরো জোরে চেপে ধরে)
আরুঃ আমি কোনো কথা শুনতে চাই না। ছারুন আমাকে।আমি করো কোনো কথা শুনতে চাই না।
আয়ানঃ শুনতে হবে তোমাকে।নাহলে ছাড়া পাবে না।
আরুঃ শুনতে চাই না আমি।ছাড়ুন।(আবারো জোড় করছে ছাড়া পাওয়ার জন্য)
আয়ানঃ আমাকে ছেড়ে কেনো চলে গিয়েছিলে?
আরুঃ ওপস!আপনার সাথে থাকার,পাশে থাকার কথা ছিলো বুঝি?
আয়ানঃ ত্যাড় ত্যাড়া কথা বলবে না।
আরুঃ আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই।তাতে আপনার কোনো সমস্যা?আর আপনি জানেন না কেনো গিয়েছি? সরুন এবার।
আয়ানঃ সরবো না
আরু কিছু না বলে আয়ানকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে চলে গেলো।
আরুর এমন হটাৎ আক্রমণে প্রস্তুত ছিলো না তাই ওর ধাক্কায় সরে গেলো।আরুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আয়ান বললো,
আয়ানঃ তোমাকে তো আমার কাছে আসতেই হবে।এমনি না হলে অন্য ভাবে।আমার ভালোবাসা দিয়ে সবটা উশুল করবোই।

চলবে…….

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-৩২
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা

আরু ওই খান থেকে দৌড়ে ওর মা’র কাছে চলে এলো।ওর মনের ভিতর কী চলছে তা শুধু ও জানে।পুরোনো সেই অনুভূতি আবার মনের কড়ায় নাড়া দেওয়া।যেই মানুষটার থেকে দূরে ছিলো সেই মানুষটা আবার তার সামনে।তার দেওয়া সেই আঘাত,কষ্ট,অবহেলা,অপমান সব এক সাথে মনের দরজায় কড়া নাড়ছে।কেনো আবার সে সামনে এলো।কী উদ্দেশ্য নিয়ে এলো।আবার কোন কষ্টের সামনে দাড় করাতে আয়ান ওর সামনে এলো।না আর কোনো ভাবেই ওর নতুন কোনো করে এই অনূভুতির সাথে পরিচিত হওয়া যাবে না।যে করেই হোক নিজেকে শক্ত রাখতেই হবে।আর তো মাত্র কয়েকটা দিন।ও চলে যাবে আবার।থাকবে না এখানে।কিছুতেই না।
আরুকে এমন করে দৌড়ে এখানে এসে বসে কী সব ভাবছে বর বিরবির করতে দেখে আরুর মা অবাক হলো।হটাৎ কী হলো।তাই তিনি মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন,
আদিরা আহমেদঃ কী হয়েছে?এমন করে কোথাথেকে এলি?আর কী বিরবির করছিস?
আরুঃ না কিছু না এমনি।ওই খানটায় ভালো লাগছিলো না তাই।
আদিরা আহমেদঃ কেনো হটাৎ খারাপ লাগছ কেনো?শরীর খারাপ করলো নাকী?(আরুর কপালে,গলায় হাত রেখে)
আরুঃ আরে না সেসব কিছু না।এতো মানুষ ভালো লাগছিলো না তাই।মা যাবো কখন আমারা?
আদিরা আহমেদঃ এইতো বিয়ে তো শেষ আর কিছুক্ষন।
আরু আর কিছু না বলে ওর মা’র কাধে মাথা রাখে চোখ বন্ধ করলো।কিছু ভালো লাগছে না ওর।কিছুক্ষন পর চোখ খুলে নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে উঠে দাঁড়ালো।এভাবে পালিয়ে কেনো বাঁচবে ও?অন্যায় তো করে নি।তাহলে কেনো নিজেকে লুকিয়ে রাখবে।এসব ভেবে সবাই যেখানে সেখানে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।কিছুটা আগাতেই আরুর সামনে কে জেনো এসে দাঁড়ালো।আরু তাকিয়ে দেখে তন্নির কাজিন শাওন।শাওন তন্নির ১ বছরের বড়।শাওন সামনে দাড়িয়ে বললো,
শাওনঃ হায় আমি শাওন।তুমি তো ভাইয়া আই মিন,তন্নির হাসবেন্ডের বোন তাই না?

আরুর এমনি মাথা ঠিক নেই তারউপর এই আপদ।আরুর ইচ্ছে করছ ছুটে চলে যেতে এখান থেকে কিন্তু তা পারবে না।সবাই খারাপ ভাববে।তাই জোর করে মুখে হাসি এনে বললো,
আরুঃ হ্যালো আমি আরিশা।জী তন্নি আমার ভাবি।
শাওনঃ নাইস নেইম।বাই দ্যা ওয়ে কোন ক্লাসে পড়ো?

আরুর ইচ্ছে করছে এর মাথা পাটিয়ে দিতে।এতো কথা জিজ্ঞেস করার কী আছে।আরু কিছু না বলে চলে যেতে নিলেও ওর চোখ যায় কিছু দূরে আয়ান ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।দেখে মনে হচ্ছে গিলে খাবে।এমন লুক দেওয়ার মানে কী?রেগে হাত গুলো মুঠো করে নিয়েছে।কিন্তু কেনো?আরুকে দেখে?…..না কী আরুকে অন্য ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে।না না তা হবে কেনো?….কিন্তু হতেও তো পারে।একটু বাজিয়ে দেখি।তাই আরু এবার হাসি আরো গাড়ো করে শাওনের সাথে কথা বললো,
আরুঃ আব….আমি ইউএস থেকে আমি পড়ালেখা শেষ করে এসেছি।আপনি কী করছেন?
শাওনঃ ছোট খাটো ডাক্তার বলতে পারো।
আরুঃ মানে
শাওনঃ মেডিকেলে পরছি।এখনো শেষ হয়নি।
আরুঃ ওহহহ….আচ্ছা আপনি তো শাকিল ভাইয়ের ছোট ভাই তাই না?
শাওনঃ হ্যা।বাট তুমি কিভাবে চেনো?
আরুঃ আপনি তন্নির বান্ধবী আরুর নাম শুনেছেন?
শাওনঃ হ্যা তন্নির বেস্টফ্রেন্ড।কিন্তু কেনো?
আরুঃ সেই মেয়েটাই আমি।আরিশা আহমেদ
ছোট করে আরু😊
শাওনঃ ওওও।আমি এতোক্ষন তোমাকে চিনতে পারি না সরি।
আরুঃ ইট’স ওকে।

না আর থাকা যায় না।এতোক্ষন এদের হাসির কাহিনী দেখলেও এখন আর সয্য করতে পারছে না আয়ান।তাই রেগে আরুদের কাছে আসতে নিলো।
আরি এবার আড়চোখে আয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে এই দিকে আসছে তাই শাওনকে বললো,
আরুঃ আমাকে ওই দিকে সবাই খুঁজছে।আমি একটু আসছি হ্যা?
শাওনঃ ইয়াহ সিউর।

আয়ান প্রায় কাছেই এসে গেছে।কিন্তু আরু এমন ভাবে সরে গেলো যেনো আয়ানকে ও দেখে নি।একপ্রকার ইগনোর করে চলে গেলো।
আরুর যাওয়া দেখে আয়ান আরো রেগে গেলো।
————-
এখনই এসেছে সেই কাঙ্খিত সময়।মেয়েদের সবচেয়ে কষ্টের সময় এটা।’বিদায়’ শব্দটা যতো সহজ তার কার্যকারিতা ততোটাই কঠিন।
তন্নির বিদায়ের সময় এখন। তন্নি প্রচুর কাঁদছে।সাথে ওর মা,ছোট্ট বোন টাও কাঁদছে।ওর বাবা একটু দূরে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে।তিনি যে কাঁদতে পারছেন না।মেয়ে চলে যাচ্ছে তারও তো কষ্ট হচ্ছে।মেয়েটা চলে গেলে ঘরটাই পুরো আধার হয়ে যাবে।
তন্নি যখন দেখলো ওর বাবা দূরে দাঁড়িয়ে আছে তখন ও ওর বাবার কাছে গিয়ে বললো,
তন্নিঃ বাবা আমি চলে যাচ্ছি।ভালো থেকো তোমরা।তুমি আমাকে এগিয়ে দিবে না?

মেয়ের এমন কথা শুনে তন্নির বাবা আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না।মেয়ে বুকে নিয়ে হুহু করে কেঁদে দিলো।মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
তন্নির বাবাঃ ভালো থাকিস মা।ওই বাড়িতে সবাইকে ভালো রাখিস।সবার সাথে মানিয়ে নিস।

তন্নি কিছু বলছে না।তন্নির বাবা এবার অনিমের সামনে গিয়ে অনিমের হাতে তন্নির হাত রেখে বললেন,
তন্নির বাবঃ আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো বাবা।মেয়েটা আমার বড্ড আদরের।ও কোনো ভুল করলে বা অন্যার করলে তা মানিয়ে নিও বর ওকে বুঝিয়ে বলো।

অনিম তন্নির বাবার হাতে হাত রেখে আশ্বস্ত করে বললো,
অনিমঃ আপনি কোনো চিন্তা করবেন না আংঙ্কেল।তন্নিকে আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে আগলে রাখবো।ওকে কোনো কষ্টের কাছেও ঘেসতে দিবো না।ওকে কষ্ট পেতে দিবো না আমি।আপনি শুধু দোয়া করবেন।

তন্নির বাবা অনিমের কথ শুনে খুবই খুশি হলেন।তিনি মেয়ে ও মেয়ে জামাইয়ের মাথায় হাত দিয়ে দোয়া দিলেন।এরপর তন্নিকে গাড়িতে উঠিয়ে দিলেন।
———-
গাড়ি চললো নতুন গন্তব্যে,নতুন ঠিকানায়,নতুন পরিবেশে।তন্নি গাড়িতে বসে এখনো কাঁদছে।তাই অনিম তন্নির মাথাটা ওর বুকে নিয়ে রাখলো।
তন্নিও এই সময় ভরসার একটা স্থান পেয়ে সেখানে গুটিয়ে নিলো নিজেকে।
অনিম এক হাতে তন্নিকে জড়িয়ে রেখেছে আরেক হাতে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।অনেকটা সময় পর অনিম বললো,
অনিমঃ অনেক হয়েছে এবার কান্না থামাও।এতো কাঁদলে শরীর খারাপ হবে।
তন্নি এবার আস্তে আস্তে নিজেকে স্বাভাবিক করলো।

কিছুক্ষনের মাঝেই ওরা পৌঁছে গেলো অনিমদের বাসায়।বাসার সামনে গাড়ি থামতেই অনিম তন্নির কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,’ওয়েলকাম মিসেস’।এটা শুনল তন্নি লজ্জায় মাথা নামিয়ে ফেললো।অনিম হেসে তন্নিকে গাড়ি থেকে নামালো।বাড়ির দরজায় এসে সব নিয়ম কানুন মেনে তন্নিকে ভিতরে নেওয়া হলো।
——————-
রাত ১১ টা
তন্নি বসে আছে ফুলে সাজানো অনিমের রুমে।ফুলের সুভাস ছড়াচ্ছে রুমের চারদিকে।তন্নি রুমটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।এই বাড়ির প্রতিটা কোনা তন্নির চেনা।সব রুমে গেলেও এই রুমে ও কখনোই আসতো না।কেনো আসতো না তা নিজেও জানে না।এই প্রথম এই রুমে।কিন্তু ভয়ও করছে আবার।যদিও লোকটাকে ও ভালোবাসে কিন্তু তাও কেমন যেনো নার্ভাস লাগছে।
তন্নির এমন ভাবনার মাঝেই অনিম রুমে ঢুকলো।যদিও অনেক লড়াই করে।নিজের বোন যে এই সময় এসে এমন পাল্টি খাবে তা আগে বুঝতে পারে নি।ঠিক ২০,০০০ আদায় করে নিলো।তাও কিনা নিজের বউয়ের কাছে আসার জন্য।
অনিমকে ভিতরে আসতে দেখে তন্নি বিছানা থেকে নেমে গেলো।অনিম সামনে এলে তন্নি ঝুঁকে অনিমের পা ধরতে নিলেই অনিম দু পা পিছিয়ে গেলো।তন্নি কিছুটা ভয় পেয়ে উঠে দাঁড়ালো।অনিম বললো,
অনিমঃ কী করতে যাচ্ছিলে ওটা?
তন্নি না বুঝে তাকিয়ে আছে অনিমের দিকে।অনিম আবার বললো,
অনিমঃ পা’য়ে হাত দিচ্ছিলে কেনো?
তন্নিঃ সবাই বললো তাই।এটা নাকী নিয়ম।(মাথা নিচে দিয়ে আস্তে বললো)
অনিমঃ সে নিয়ম অন্যের কাছে আমার কাছে না।আর কোনো দিন এমন করবে না।মনে থাকবে?
তন্নি ভদ্র মেয়ের মতো মাতা নাড়লো আর্থাৎ মনে থাকবে।অনিম এবার বললো,
অনিমঃ যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।নামাজ পরবো।
তন্নি মাথা নেড়ে একটা শাড়ি নিয়ে চলে গেলো ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে।প্রায় ৩০ মিনট পর তন্নি বের হলো।
অনিম দরজার আওয়াজে শুনে ওইদিকে তাকিয়ে ওর চোখ থেকে গেলো।লাল কাতান শাড়ি পরেছে।চুল গুলো মুছছে।অনিম এই প্রথম তন্নিকে এই লুকে দেখছে।আর দেখেই পুরো ফিদা।
তন্নহ মাতা মুছতে মুছতে অনিমের দিকে তাকিয়ে দেখে অনিম ঘোর লাগা দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছ।তা দেখে তন্নি তো লজ্জায় যায় যায় অবস্থা।অনিম আস্তে আস্তে তন্নির দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।আর তন্নি যেনো নড়ার শক্তিও পাচ্ছে।অনিম তন্নির একদম কাছে এসে বললো,
অনিমঃ এভাবে এই লুকে আমার সামনে এসে আমাকে মেরে ফেলার ইচ্ছা আছে না কী?
তন্নি কিছু না বলে মাথা আরো নামিয়ে নিলো।অনিম বললো,
অনিমঃ কথা বলছিস না কেনো?
তন্নিঃ ন..না ম..মা..মানে।…ফ্রেশ হয়ে আসুন।

তন্নির কথা শুনে অনিম দূরে সরে এলো।আর বললো,
অনিমঃ এখন আর পালিয়ে লাভ নেই।সেই ঘুরেফিরে আমার কাছে আসতেই হবে।কিছু সময়ের জন্য এখন সড়ে এলাম কিন্তু কিছুক্ষন পর…….

অনিম আর কিছু না বলে হাসতে হাসতে ওয়াশরুমে চলে গেলো।আর তন্নি অনিমের এমন কথা শুনে লজ্জায় গাল দু’টো লাল হয়ে আছ।তা অবশ্য অনিম দেখেছে।
————-
অনিম ফ্রেশ হয়ে এলে অনিম আর তন্নি একসাথে দুই রাকাত নফল নামাজ পরে নিলো।নামাজ শেষে উঠে দাড়িয়ে তন্নি ভাবছে এখন কী করা যায়।ঘুমিয়ে পরবে নাকী?কিন্তু ঘুমালে যদি অনিম রাগ করে।ওর ভাবনার মাঝেই অনিম বললো,
অনিমঃ বেলকনিতে যা।
তন্নি কিছু না বুঝে অবুঝের মতো অনিমের দুকে তাকিয়ে আছে।অনিম আবার বললে,
অনিমঃ কী হলো?কী বললাম যা।বেলকনিতে যা।তন্নি কোনো কথা না বলে মাথা নেড়ে নিঃশব্দে বেলকনিতে চলে গেলো।তন্নির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অনিম হাসলো।
তন্নি বেলকনিতে গিয়ে অনিমের কথাটা মস্তিষ্কে আটকাতেই তন্নির বুকটা ধক করে উঠলো।তাহলে কী তন্নিকে অনিম মেনে নেয়নি।শুধু জেদের বসে এই বিয়েটা করেছে।তাহলে অনিমের চোখে ওর জন্য যেই ভালোবাসা দেখলো তা কী।ওর বাবাকে অনিম যেই কথা দিলো তার কী।এসব ভাবছে বর চোখের পানি ফেলছে।
কিছুক্ষন পর তন্নির মনে হলে ওর পিছনে কেউ দাড়িয়ে আছে।পিছনে ফিরে দেখে অনিম।তাই সাথে সাথে সামনে ফিরে চোখের পানি মুছে ফেললো।তার ঠিক দ সেকেন্ডের মাথায় তন্নিকে কেউ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।সাথে সাথে তন্নি কেপে উঠলো।এটা কী হলো।তন্নির সারা শরীর এখনো কাঁপছে।তন্নি মাথা ঘুরে তাকিয়ে দেখে অনিম মিটমিট হাসছে।তন্নি তা দেখে রাগে অভিমানে নিজেকে ছাড়াতে চায়।একটু আগে ঘর থেকে বেী করে দিয়ে এখন আদিখ্যেতা দেখাতে এসেছে।তন্নি কাঁপাকাঁপা হাতে অনিমের থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য নিজেকে ছারাতে লাগলো কিন্তু অনিম আরো জোরে চেপে ধরলো নিজের বাহু দিয়ে।এবার অনিমকে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই অনিম ওর আঙুল তন্নির মুখের উপর দিয়ে ওকে চুপ করিয়ে দিলো।তারপর তন্নিকে কিছু বলতে না দিয়ে অনিম তন্নিকে কোলে নিয়ে রুমে এলো।তন্নি তো পুরো অবাক কি হচ্ছে এসব।তন্নি অনিমের দিকে তাকাতেই অনিম ইশারা করলো রুমের দিকে তাকাতে।
তন্নি রুমের দিকে তাকিয়ে দেখে পুরো রুম ক্যান্ডেল দিয়ে সাজানো।আগে তো ফুল ছিলোই কিন্তু এখন ক্যান্ডেল গুলোর জন্য রুমটা আরো সুন্দর লাগছে।আরু চারদিকে তাকিয়ে হটাৎ ওর সামনে অনিম এসে দাঁড়ালো।শুধু এতোটুকু নয়।তন্নিকে আরো অবাক করে দিয়ে ওর সামনে হাটু গেরে বসে ওর হাতে একটা আংটি তন্নির দিকে বাড়িয়ে দিলো।আর বললো,
অনিমঃ জানি না কী করে তোকে এতোটা ভলোবেসে ফেলেছি।আর তা জানতেও চাই না।শুধু এইটুকু জানি তোকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না।তোকে নিজের থেকে দূরে সরাতে পারবো না।তুই চাইলেও তোকে কোথায়ও যেতে দেবো না।তুই শুধু আমার।আর কারো না।আমি জানি তুই হয়তো আমাকে ভালোবাসিস না।আমার প্রতি তোর এখনো অনেক রাগ কিন্তু তাতে আমার কিছু যায় আসে না।আমাকে তোর ভালোবাসতে হবে না।তুই শুধু আমার সাথে,আমার পাশে থাকলেই চলবে।আমার আর কিছু চাই না।বিশ্বাস কর ৫ বছর আগে আমি তোকে ইচ্ছে করে কষ্ট দিতে চাইনি।ওইদিন তোকে শাকিল ভাইয়ের সাথে দেখে নিজেকে আটকে রাখতে পারি নি।তাই তোর সাথে এমন ব্যবহার করে ফেলিছি।তার জন্য সরি।…..আমাকে ফিরিয়ে দিস না।আমার ভালোবাসা ফিরিয়ে দিস না।আমি ভলোবাসি তোকে।অনেক ভালোবাসি।

তন্নি শুধু এক নজরে তাকিয়ে আছে অনিমের দিকে।কী বলবে সে নিজেও জানে না।এতোগুলা দিন যেই কথা গুলো শুনার অপেক্ষায় ছিলো সেই কথা গুলে আজ ও শুনছে।নিজেকে যেনে বিশ্বাস করতে পারছে না।এটা কী সত্যি?সত্যি হলেও কী বলা উচিত।তন্নি একভাবে তাকিয়ে আছে আর চোখের পানি ফেলছে।
অনিম তন্নির দিকে আছে উত্তরের আশায়।আজ কী ওর ভলোবাসা স্বীকার করবে?অনিমের ভয় হতে লাগলো।প্রায় অনেকক্ষন পর তন্নির কোনো উত্তর না পেয়ে অনিম উঠে দাঁড়ালো।দু পা পিছিয়ে চলে যেতে নিলেই তন্নি অনিমের হাত ধরে আটকায়।অনিম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তন্নির দিকে।তন্নি এবার বলতে শুরু করলো,
তন্নিঃ আমি কিছু বলতে চাই না।শুধু এইটুকু বলতে চাই আপনার থেকে আমি দূরে যেতে চাই না।আপনার সাথে সারাজীবন থাকতে চাই।আপনার হাতে হাত ধরে বুড়ো হতে চাই।শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত আপনাকে আমার পাশে চাই।ভালোবাসি আপনাকে।ভিষণ ভিষণ ভালোবাসি।
[আমি এই অনুভূতি গুলোর কথা ঠিক মতো তুলে ধরতে পারিনি।তার জন্য সরি।মাথায় যা আসছে তাই লিখছি।]
অনিম খুশি হয়ে তন্নির হাতে আংটিটা পরিয়ে দিয়ে তন্নিকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলো।তন্নিও তাই করলো।তন্নির চোখে আজ পানি দুঃখের না সুখের পানি।অনেকক্ষন পর অনিম তন্নির মাথা ওর বুক থেকে তুলে তন্নির কপালে চুমু খেয়ে বললো,
অনিমঃ আজ তোর থেকে একটা জিনিস চাইবো দিবি?
তন্নিঃ কী?
অনিমঃ আজকে আমি তোকে নিজের করে পেতে চাই।আমার সব ভালোবাসা তোকে উজার করে দিতে চাই।তোকে আমার ভালোবাসার নতুন অধ্যায়ের সাথে পরিচয় করাতে চাই।দিবি আমাকে সেই অধিকার?

তন্নি লজ্জায় মাথা নামিয়ে অনিমের বুকে মুখ লুকালো।অনিম হেসে দিলো।ওর উত্তর ও পেয়ে গেছে।তন্নি অনিমের বুকে মুখ রেখে বললো,
তন্নিঃ আমার একটা কথা আছে।
অনিমঃ বল
তন্নিঃ আজ থেকে আমাকে তুমি করে ডাকতে হবে।
অনিমঃ এর আর এমন কী।চলো।।

অনিম তন্নিকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানার দিকে আগাচ্ছে।তন্নিও লজ্জায় অনিমের বুকে মুখ লুকিয়ে আছে।আস্তে আস্তে তন্নিকে বিছানায় শুয়িয়ে দিলো।
মিশে যেতে লাগলো দু’টি ভালোবাসার মানুষ।মিশে যেতে লাগলো দু’টি শরীর যার এক আত্মা।রাতের প্রহর বারতে বারতে তাদের ভালোবাসার পাল্লাও বারছে।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here