হারাতে_চাই_না_তোমায় #পর্ব-৩৩,৩৪

0
718

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-৩৩,৩৪
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা

৩৩
রাত ১১ টা আরু ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরলো।শুয়ে শুয়ে আজকে হওয়া সব ঘটনা গুলো ভাবছে।”কী হচ্ছে ওর সাথে?কেনো হচ্ছে?ও তো ভুলে ভালোই ছিলো আর ভবিষ্যতে ও ভালো থাকার চেষ্টা করতো।তাহলে কেনো আবার আয়ান ওর জীবনে ফিরে এলো।নতুন করে কী নাটক করতে আবার ফিরে এলো।ওর তো আর এসব সয্য করার মন নেই।এবার এমন কিছু হলে তো মরেই যাবে।শত চেষ্টা করেও কেনো আয়ানের সামনে নিজেকে আজ শক্ত রাখতে পারলো না?কেনো?…..আচ্ছা আয়ান আজ কিছু বলতে চেয়েছিলো।কিন্তু কী?শুনা টা কি উচিত ছিলো?….না কেনো শুনবো আবার নতুন করে কথা সাজিয়ে ওর মায়ায় আটকাবে।তা তো আর হয় না।যেখান থেকে একবার সরে এসেছে সেখানে আর ফিরে যাবে না।”
এসব ভাবনা সাইডে রেখে ঘুমানোর জন্য ছটপট করছে। কিন্তু ঘুম যেনো চোখের পাতায় ধরা দিতে রাজি না।এমন সময় মারিয়া আর ইশিকা এলো আরুর রুমে।আরুকে এমন করতে দেখে মারিয়া এসে বললো,
মারিয়াঃ যতোই চেষ্টা করিস আজ তোর ঘুম আসবে না।
আরুঃ মানে কী বলতে চাইছিস তুই?(উঠে বসলো)
মারিয়াঃ আমি কী বলতে চাইছি তা তুই খুব ভালো করে বুঝেছিস।
আরুঃ………..(চুপ করে রইলো)…….
মারিয়াঃ আজ আয়ান ভাইয়ার সাথে তোর কথা হয়েছে?
আরুঃ হুম।জানি না কেনো আবার আমার কাছে এসেছে।কী চায় আমার কাছে এখন?
মারিয়াঃ শোন তোকে একটা কতা বলি।আয়ান ভাইয়া অনেক ভুল করেছে আমি জানি।এই ৫ বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে।তুই চলে যাওয়াতে আয়ান ভাইয়া যেমন শাস্তি পেয়েছে ঠিক তেমনি নিজেকে শাস্তি দিয়েছে।এই কয়েকটা বছর কীভাবে কাটিয়েছে..……
আরুঃ মানে কী বলতে চাইছিস তুই?
মারিয়াঃ দেখ তোরা দুজন দুজনকে ভালোবাসিস।তাহলে কেনো এই দূরত্ব বড়িয়ে চলেছিস।তুইও কষ্ট পাচ্ছিস সেও কষ্ট পাচ্ছে।আমি চাই তুই তাকে আরেকটা সুযোগ দে।
আরুঃ সম্ভব না আর।
ইশিকাঃ দেখ আয়ান ভাই কেমন তা জানি না।কিন্তু আজ যে দেখলাম তাতে আমার মনে হয় সে সত্যি তোকে অনেকটা ভালোবাসে।
আরুঃ এটা তোদের মনে হওয়া কিন্তু সত্যি না।আর কোনোদিন সত্যি হতে পারেও না।
ইশিকাঃ দেখ সে খুবই অনুতপ্ত।নিজের অপরাধ বুঝতে পেরে মাফ চায়।নিজের ভুল গুলো শুধরাতে চায়।তাকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিত।এভ্রি পার্সন ডিজার্ভস আ সেকেন্ড চান্স।
আরুঃ…………..
মারিয়াঃ দেখ আমি জানি তুই আয়ান ভাইকে আর আগের মতো ভালোবাসলেও বিশ্বাস করিস না।তুই আমাদের বিশ্বাস করিস তাই না?তহলে আমি বলছি, এবার তুই ঠকবি না।আয়ান ভাইয়া নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে।এখন সেটা শুধরাতে চায়।তাই বলছি প্লিজ তাকে আরেকটা সুযোগ দে।যে মানুষ নিজের ভুল বুজতে পেরে নিজেকে সঠিক পথে নিয়ে আসে তাকে তো আল্লাহও সুযোগ দেয়।
আরুঃ তোরা আয়ানের কষ্ট,ভুল এগুলো দেখলি কিন্তু আমার কষ্ট,আমার প্রতি হওয়া অন্যায়,অবহেলা,অপমান সে সব কিছু দেখলি না তোরা?ওই সময় টা তো তোরা সব দেখেছিস।তাহলে কী করে বলছিস সবটা ভুলে নতুন ভাবে শুরু করতে।
ইশিকা,মারিয়াঃ…….চুপ………..
আরুঃ কথা বলেছিস না কেনো?আজ আয়ান নিজের ভুল বুঝেছে বলে ওকে মাফ করবো।আমার সাথে যা হয়েছে তা যদি তোদের সাথে হতো পারতি তোরা ক্ষমা করতে?কী রে মারিয়া বল রাফসান ভাইয়া এমন করলপ পারতি তুই তাকে মাফ করতে?
মারিয়াঃ………………
আরুঃ পারতি না।তাহলে আমাকে কেনো বলছিস সবটা ভুলে তাকে আরেকটা সুযোগ দিতে?আর ইশু তুই?এই ৫ বছর আমি কীভাবে ছিলাম,কেমন করে এই ৫ বছর কেটেছে তা তো তুই নিজের চোখে দেখেছিস।তাহলে তুই কীভাবে বলছিস সবটা ভুলতে?
ইশিকাঃ…………..
আরুঃ আমার এই প্রশ্ন গুলোর কোনো উত্তর নেই তোদের কাছে আমি জানি।তাই বলছি এসব কথা বলিস না।আমার বিশ্বাস একবার ভেঙেছে তা আর জোরা লাগবে না।

আরু উঠে চলে বেলকনিতে চলে গেলো।মারিয়া আরু যাওয়ার পর এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোন তুলে দেখে মাত্র লাইন কাটলো।ফোনের ওইপাশের ব্যাক্তি এতোক্ষন আরুর সব কথা শুনছিলো।আর লোকটা হলো আয়ান নিজে।ইশিকা আর মারিয়া ভবলো আরুকে একটু একা থকতে দেওয়া উচিত।তাই তারা ঘুমিয়ে পরলো।বেশ কিছুক্ষন পর আরু তাকিয়ে দেখলো মারিয়া আর ইশিকা ঘুমিয়ে গিয়েছে।ইশিকা আর মারিয়ার কথা গুলো বেশ ভাবাচ্ছে আরুকে।কিন্তু যতোই হোক আরুর বিশ্বাস আর ভরসা আর কোনো দিন হয়তো ফিরে আসবে না।হয়তো আর কোনোদিন রঙিন হয়ে উঠবে না তার মন।
——————-
আয়ান আরুর সব কথা শুনে বুকের ভিতর চিন চিন ব্যাথা করছে।আরুর আজকে তোলা একটা ছবির দিকে (যদিও লুকিয়ে তুলেছে)তাকিয়ে আছে আর ভাবছে,কতো কষ্ট দিয়েছে ও।কতোটা কষ্ট পেলে এই কথা বলছে।আরুর বিশ্বাসটা নিজে হাতে ভেঙে দিয়েছে।কিন্তু না ওকে শক্ত থাকতে হবে।যেই বিশ্বাস ও ভেঙেছে তা নিজে হাতে আবার গড়ে তুলবে।আবার নতুন করে আরুর মনে ওর জন্য ভালোবাসা তৈরি করবে।ওকে নিজের করে পাবেই।যেভাবেই হোক।অনেক কষ্ট দিয়েছে আর এবার ভালোবাসা দিয়ে সবটা পুষিয়ে নেবে।
—————–
পরদিন সকাল ৭ টা।
সূর্যের একফালি রোদ এসে ঘরে ঢুকছে।রোদ পুরোপুরি ঢুকতে চায় কিন্তু ঘরের জানালা দরজা সব আটকানো ফলে রোদ ঘরে আসছে না।
তন্নি পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো।কোথায় আছে তা ভবছে।লড়তে চাইলে মনে হলো ওকে কেউ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে অনিম কাত হয়ে ওকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়েছে।অনিমকে দেখে এখন অনেকটা কিউট লাগছে।কিছুক্ষন অনিমের দিকে তাকিয়ে থেকে মনে পরলো কাল রাতের কথা আর বাকী সব।ভাবতেই লজ্জায় গাল গুলো লাল হয়ে আছে।আবার মনের মাঝে আনন্দের ঢেউ।এতোগুলা বছর পর সেই মানুষটাকে পেলো যাকে সে ভালোবাসে এবং সেও ওকে ভালোবাসে।এটা ভেবেই খুশি খুশি লাগছে।আজ নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে।
তন্নি এবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৭ টা বাজে। এতো বেলা অবধি নতুন বউ ঘুমিয়ে আছে সবাই কী বলবে।তাই তাড়াতাড়ি উঠতে নিলে তন্নির লড়াছড়ায় অনিমের ঘুম একটু হালকা হলো।কিন্তু পরে তন্নিকে আরো জোরে নিজেরা সাথে জড়িত ধরলো।তন্নি পরেছে এবার মহা বিপদে।কী করে এর হাত থেকে ছাড়া পাবে।বেশ অনেকক্ষন পর তন্নি আস্তে আস্তে অনিমের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে হাফ ছেড়ে বাচলো।সময় নষ্ট না করে একটা শাড়ি নিয়ে তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গেলো।
প্রায় ৩০ মিনিট পর তন্নি বের হলো।এসে দেখে অনিম একনো ঘুমাচ্ছে।তন্নি র ডাকলো না।তন্নি একটা নীল জামদানী শাড়ি পরেছে।চুল গুলো মুছে ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর কাজল দিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।যাওয়ার আগে অবশ্য অনিমের কপালে নিজের ঠোঁট ছুইয়ে গেলো।
————
সকাল ৮ টা তন্নি আস্তে আস্তে নিচে নেমে গেলো।কেউ কেউ উঠেছে আবার কেউ কেউ এখনো উঠেনি।কিচেনের সামনে গিয়ে দেখে অনিমের মা আর ওদের বাসার কাজের মেয়ে মিনু কাজ করছে।হয়তো সবার নাস্তার জোগাড় করছে।তন্নি ধীরে হেঁটে অনিমের মা’র কাছে গেলো।অনিমের মা কারো উপস্থিত টের পেয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখলো তন্নি।ওকে দেখে অনেকটা অবাক হলে।অবাক নিয়েই অনিমের মা বললেন,
আদিরা আহমেদঃ তুই এতো সকালে এখানে কেনো?কিছু লাগবে?
তন্নিঃ না আন্টি আসলে….
আদিরা আহমেদঃ একটা মারবো..আন্টি কী?মা হই না তোর?মা ডাকবি এখন থেকে।মনে থাকবে।
তন্নিঃ জী আন…না মানে মা।(মিষ্টি হেসে)
আদিরা আহমেদঃ এইতো আমার লক্ষী মেয়ে।তা এতো সকালে এখনল এসেছিস কেনো?কয়েকটা দিন তোর উপর দিয়ে কতো ধকল গেলো এখন তো একটু রেস্ট নিতে পারতি।সন্ধ্যাায় আবার রিসিপশন।
তন্নিঃ সমস্যা নেই।কতো রেস্ট নিবো।শুয়ে বসে থাকতে ভালো লাগে না।
আদিরা আহমেদঃ তাহলে আরুদের উঠিয়ে ওদের সাথে আড্ডা দে।
তন্নিঃ না থাক ওরা ঘুমাচ্ছে আরেকটু ঘুমাক।আমি বরং তোমাকে একটু হেল্প করি।
আদিরা আহমেদঃ না না তার কোনো দরকার নেই।হেল্প করার জন্য সারাজীবন পরে আছে।এখানে আমার সাথে থাকতে হবে না।যা তুই।
তন্নিঃ আমার কিছু হবে না মা।প্লিজ করি…
আদিরা আহমেদঃ আচ্ছা বেশ।এতো করে যখন বলছিস তোর কর।

তন্নি আর আরুর মা মিলে সব কাজ করে ফেললেন।তন্নিকে অনেক বার মানা করেছেন কাজ না করার জন্য কিন্তু ও শুনে নি কারো কথা।
————-
সকাল ১০ টা।
অনিমের ঘুমটা আজ অনেক ভালো হয়েছ।ঘুম থেকে উঠে পুরো রুম তন্নিকে খুজলো কিন্তু পেলো না।পরে ঘড়ির দিকে তাকালো।তারপর বুঝলে যে ও উঠে গেছে।অনিমের কিছুটা অভিমান হলো ওকে একবারো ডাকলো না।এই অভিমান নিয়েই।ও ওয়াশরুমে চলে গেলো।ওয়াশরুমের আয়নায় নিজের মুখটা দেখতেই অবাক হলো কারন ওর কপালে লিপস্টিক।অনিম হাত দিয়ে বুঝার চেষ্টা করলে কীভাবে কী।এবং পরে রহস্যের সমাধান হলে।তা ভেবেই হেসে দিলো।
আরুরা এখনো ঘুমাচ্ছে।তাই তন্নি এলো ওদের জাগাতে তন্নি এসে দেখে আরু,মারিয়া,ইশিকা একজন আরেকজনের উপর হাত পা উঠিয়ে ঘুমাচ্ছে।ওদের ঘুমানোর স্টাইল দেখে তন্নি হেসে দিলো।এরপর আস্তে আস্তে ওদের জাগাতে লাগলো।আস্তে আস্তে ওরা ৩ জন উঠে বসলো।মারিয়া তন্নিকে দেখে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।তন্নি মারিয়াকে এভাবে তাকাতেদ দেখে বললো,
তন্নিঃ এভাবে আবুলের মতো তাকিয়ে আছিস কেনো?
মারিয়াঃ গাইস আমি যাকে দেখছি তোরা কী তাকেই দেখছিস?
ইশিকাঃ হুম।
তন্নিঃ তোরা এমন করছিস কেনো?
আরু এবার উঠে গেলো তারপর মারিয়া।ওরা দুজন তন্নির দুপাশ থেকে ধরে দুষ্টামি করে বললো,
আরুঃ তা তোমার চেহারা এমন সুন্দর হওয়ার মানে কী?
মারিয়াঃ তোমার চুল ভেজা থাকার রহস্য কী?
ওদের কথা শুনে তন্নির আরেক দফা লজ্জায় পরলো।কাদের কাছে ও এসেছে।এখনো তো ওকে পচিয়ে মারবে।আরু আবার বললো,
আরুঃ ওরে আমার ভাবি লজ্জা পেয়েছ।এই মারু দেখ গাল দুটো লাল হয়ে আছে।ভাইয়া দেখলো তো মনে হয় এখনই একখান চুমু খেতো।
ইশিকাঃ গাইস তোরা বুজছিস না ভাবির লজ্জা পাওয়া,চুল ভেজার রহস্য হলো কাল রাতে ভাইয়ার স্পেশাল আদর।
আরু আর মারিয়াঃ ওওওওও……….
তন্নিঃ ভালো হচ্ছে না কিন্তু।আমি তোদের ভাবি হই।
আরুঃ এই ইশু মারু ওকে কউ লজ্জায় ফেলবি না জানিস না ও আমাদের ভাবি।
মারিয়া আর ইশিকাঃ ওকে….
তন্নিঃ তোরা তাড়াতাড়ি আয় মা উঠতে বললো তোদের।আমি যাই।

তন্নি তাড়াতাড়ি করে চলে গেলো আর ওরা হাসতে লাগলো।
—————–
সন্ধ্যায় রিসেশনের অনুষ্টান।বিকাল থেকে সবাই সাজতে ব্যস্ত।তন্নিকে আরুর রুমে সাজানে হচ্ছে।সাজানো এখন প্রায় শেষ।
আরু আজ ওইদিনের কালো লেহেঙ্গাটা পরেছে সাথে গোল্ডেন কালার হিজাব।আর মুখে হালকা সাজ।
তন্নিকে আজ রয়েল ব্লু কালার লেহেঙ্গা পরানো হয়েছে।
অনিমেরও রয়েল ব্লু কালার কোর্ট প্যান্ট নিচে সাদা শার্ট আর কালো সু।
মারিয়া আজ পারপেল কালারের লেহেঙ্গা পরেছে।সাথে মুখে হালকা মেকআপ।
ইশিকা আজ বেবি পিংক কালার লেহেঙ্গা পরেছে।সাথে মুখে হালকা মেকআপ।
ওরা সবাই নিচে নামলেই সবাই ওদের খুব প্রশংসা করলো।সবাই চলে গেলো সেন্টারে।
————-
আরু মারিয়া ইশিকা অনেকক্ষন ধরে অনেক দুষ্টামি করলে।তন্নিকে ইচ্ছা মতো জ্বালালো।আরুর এখন এতো মানুষ ভালো লাগছিলো না তাই একটু সাইডে গেলো।তখনই একজন মহিলা এসে পিছন থেকে আরুকে ডাকলো।
আরুর নাম কারো মুখে শুনে পিছন তাকালো।দেখলো একজন মহিলা।দেখতে ওর মায়ের বয়সই।কিন্তু চিনলো না।মহিলা বললো,
মাহিলাঃ তুমিই তো আরিশা তাই না?
আরুঃ জ্বী কিন্তু আপনাকে তো চিনলাম না।
মহিলাঃ আমাকে তুমি চিনবে না মা।কিন্তু আমি তোমাকে চিনি।
আরুঃ সেটা কীভাবে?
মহিলাঃ সেটা না হয় সময় এলে বলবো।তোমাকে দেখতে খুব মিষ্টি লাগছে।(আরুর গালে হাত দিয়ে)
আরুঃ জ্বী ধন্যবাদ আন্টি।(মিষ্টি হেসে)
মহিলাঃ আমার ছেলের পছন্দ আছে বলতে হবে।না হলে এমন হীরার টুকরা মেয়ে আমার ছেলের বউ হয়।
আরুঃ মানে আন্টি আমি ঠিক বুজলাম না।
মহিলাঃ বুঝবে বুঝবে।সময় হোক।আমার ঘরে বউ হয়ে আসার জন্য তৈরি হও মা।
পুরুষঃ আরে তুমি বউ বলছো কেনো ও তো আমার মেয়ে হয়ে যাবে আমার বাড়িতে।

পুরুষের কথা আওয়াজে শুনে আরু তাকিয়ে দেখলো একজন পুরুষ।ওর বাবার বয়ষই।কিন্তু এরা কারা।পুরুষ ওদের সামনে এসে আরুর মাথায় হাত দিয়ে বললো,
পুরুষঃ কেমন আছো মা?
আরুঃ জ্বী আঙ্কেল ভালো।আপনি?
পুরুষঃ আমিও ভালো।কিন্তু এখন আমার এই মা’কে দেখে আরো ভালো হয়ে গেছি।(আরুকে উদেশ্য করে)
আরুঃ………
পুরুষঃ আমার বাড়িতে তাড়াতাড়ি চলে এসো।এই বুড়ো মা,বাবা,আর আমার পাগল ছেলেটাকে সামলাতে।
আরুঃ আঙ্কেল আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
মহিলাঃ ও তোমার এখন বুঝতে হবে না সময় এলে বুঝবো।

এই বলে মহিলা আর পুরুষ হাসতে হাসতে চলে গেলো।
আরু আহাম্মকের মতো ওদের কথা শুনলো আর ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।

চলবে…….

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-৩৪
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা

১ সপ্তাহ পর,
তন্নি আর অনিমের বিয়ের ১ সপ্তাহ হয়ে গেলো।বিয়ের সব নিয়ম,আচার-অনুষ্ঠান সব শেষ।সবাই সবার নিজের মতো নিজের মতো নিজের জায়গায় চলে গেছে।এর মাঝে আরুর সাথে আয়ানার কোনো দেখা বা কথা হয় নি।আর আয়ানও ইচ্ছে করে আসে নি।কারণ ও চায় আরু পরিবারের সাথে সময় কাটাক।আর তাছাড়া অফিসের কিছু দরকারি কাজ পরপ আছে।সেগুলে এখন সে সেরে নিচ্ছে।

সকাল ৯ টা
আরু ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো।নিচে গিয়ে দেখে তন্নি রান্নাঘর থেকে নাস্তা টেবিলে এনে রাখছে আর ওর মা সবার প্লেটে খাবার বারছে।আরুর বাবা সোফায় বসে খবরের কাগজ পড়ছে।আরু গিয়ে সোজা টেবিলে বসে পরলো।আরু বসার পর অনিম এলো।অনিম আরুর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আরুর মাথায় টোকা দিলো।আরু ভ্রু কুঁচকে অনিমের দিকে কটমট করে তাকালো।কিন্তু কিছু বললো না।সবাইকে আসতে দেখে আরুর মা ওর বাবাকেও আসতে বললো।আরুর বাবা এসে বসলো।সবাই মিলে চুপচাপ খেতে লাগলো।খাওয়ার মাঝে আরুর বাবা আরুকে বললো,
আশরাফ আহমেদঃ আরু মা তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
আরুঃ সত্যি?
আশরাফ আহমেদঃ হুম সত্যি।
আরুঃ কিন্তু কী বাবা?
আশরাফ আহমেদঃ বলবো।আগে খওয়া শেষ করো।তারপর আমার রুমে এসো।

আরু এক্সাইটেডের কারণে ঠিক মতো খেতে পারলো না।সবাই ওর আচরণ দেখে হাসছে।খওয়া শেষে অনিম চলে গেলো অফিসে।কারণ ও জানে কী নিয়ে কথা হবে।আর এই কথা হওয়ার ওর বাসায় কী কী হবে তা নাহয় পরে তন্নির থেকে জেনে নেবে।
খাওয়া শেষে আরু গেলে ওর বাবার রুমে।আরুর বাবা আরুকে দেখে বললো,
আশরাফ আহমেদঃ কী লাগবে মামনি?
আরুঃ 🤨😒
আশরাফ আহমেদঃ ওহ আচ্ছা বুঝেছি সারপ্রাইজ টা কী তা জানার জন্য বুঝি আমার মামুনির তর সইছে না?
আরুঃ হুম বাবা তাড়াতাড়ি বলো না সারপ্রাইজ টা কী?
আশরাফ আহমেদঃতাড়াতাড়ি বললে তোর সারপ্রাইজের মজা থাকবে না।
আরুঃ না আমি এক্ষুনি জানতে চাই।
আশরাফ আহমেদঃ আচ্ছা বলবো।কিন্তু তার আগে আমাকে এটা প্রমিস করো আমি যা জিজ্ঞেস করবো তার সত্যি টা বলবে?
আরুঃ মানে কী বাবা?সারপ্রাইজের সাথে সত্যির সম্পর্ক কী?
আশরাফ আহমেদঃ কিছু সত্যি তো অবশ্যই আছে।তুমি আগে প্রমিস করো।
আরুঃ আচ্ছা ঠিক আছে প্রমিস করলাম তুমি যা বলবে সত্যিটাই বলবো
আশরাফ আহমেদঃ আচ্ছা মামনি? তুমি পাঁচ বছর আগে হঠাৎ করে কেন আমেরিকা চলে গিয়েছিলে?

আরু ওর বাবার হঠাৎ এমন কথা শুনে চমকে উঠলো।পাঁচ বছর আগের কথা হঠাৎ কেন জিজ্ঞেস করল?কিন্তু আরু এখন কি করবে?ও তোর বাবাকে কথা দিয়েছে সব সত্যি তা বলবে তাহলে এখন মিথ্যে বলবে কি করে?আরু বুঝতে পারছেনা কী বলবে?আরুকে চুপ থাকতে দেখে ওর বাবা আবার বললো,
আশরাফ আহমেদঃ কি হল মামনি বলো?
আরুঃ আ….আস…আআআসলে বাবা….।
আশরাফ আহমেদঃআসলে কি মামনি পুরো সত্যিটা বলো?
আরুঃ আসসস..আসলে আমি…….
আশরাফ আহমেদঃ তোমার বলতে হবে না।আমি বলছি।(আরু অবাক হলো)তুমি আয়ানের উপর রাগ করে চলে গিয়েছিলে তাই তো?

আরু কথা একটু ঘুরানোর জন্য বললো,
আরুঃ আব…বাবা তুমি বললে না কী সারপ্রাইজ?
আশরাফ যদি বলি ‘আয়ানই’ তোমার সারপ্রাইজ।
আরুঃ মানে?
আরু আহাম্মকের মতো ওর বাবার দিকে তাকিয়ে আছে।ওর বাবা আয়ানের কথা কিভাবে জেনে গেল এটাই ভাবছে আরু?তবে কি মারিয়া আর তন্নি বলে দিয়েছে?????আরু নিজের ভাবনা সাইডে রেখে ওর বাবাকে বললো,
আরুঃ বাবা এসব তোমাকে মারিয়া আর তন্নি বলেছে তাই না?
আশরাফ আহমেদঃ একদমই না।…তো বলো আমি যা বললাম সত্যি কিনা?

আরু কিছু না বুঝেই প্রমিস করেছিল তাই এখন মিথ্যে বলার কোনও উপায় নেই।আরু নিজেকে শক্ত করে উত্তর দিলো,
আরুঃ হ্যা।
আশরাফ আহমেদঃ মামনি তুমি আয়ানকে ভালোবাসাতে?
আরুঃ মানে?(অতিরিক্ত শকড)
আশরাফ আহমেদঃ মামনি আমি জানি তুমি এখনো আয়ানকে ভালোবাসো।তুমি ভেবেছিলে নিজেকে আয়ানের থেকে দূরে রাখলে ওর প্রতি তোমার ভালোবাসা কমে যাবে।..কিন্তু আরু এটা সম্পূর্ণ ভুল।তুমি নিজেকে আয়ানের থেকে দূরে ঠিক কিন্তু তুমি এখনো আয়ানকে ভালোবাসো।আর ভালোবাসা কমাতে পারো নি।তাই আমি ঠিক করেছি……
আরুঃ কী বাবা?
আশরাফ আহমেদঃ আয়ানের সাথে তোমার বিয়ে দেবো।

আরু এমন কিছু শুনবে তা কখনো আশা করেনি।আরু বুঝতে পারছে না সে এখন কী করবে?তার বাবার কথা গুলোও সব সত্যি।সে যতোই আয়ানকে ভালোবাসুক কিন্তু কখনোই আয়ানকে বিয়ে করতে পারবে না।তাই ওর বাবাকে বললে,
আরুঃ না বাবা আমি ওকে বিয়ে করতে পারবো না।আমি ওকে আগে ভালোবাসাতাম কিন্তু এখন না।

এর মাঝে আরুর মা ও এসে পরেন।তিনি সবটা শুনছিলো।তাই ওর মা বললো,
আদিরা আহমেদঃ তাহলে তোর চোখে পানি কেনো?
আরুঃ ককককই না তো(তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে)
আদিরা আহমেদঃ আমি তোর মা।আমার চোখকে তুই ফাঁকি দিতে পারবি না।
আশরাফ আহমেদঃ আয়ান একটা ভুলের জন্য ৩ বছর ধরে শাস্তি পাচ্ছে।
আরুঃ ৩ বছর মানে?(অবাক হয়ে)
অতীত,
৩ বছর আগে আয়ান যখন নিজের ভুল বুঝেছে (যদিও নিজে নিজে বুঝে নি।কিছু প্রমান পেয়েছিলো।তা সামনে জানবেন)তখন পুরো পাগল হয়ে গিয়েছিলো।নিজেকে বন্ধ রুমের ভিতরে বারবার আঘাত করতো।সারাদিন শুধু আরুর নাম ধরে চিৎকার করতো।কিন্তু আয়ানের বাব মা ছেলের এমন কষ্ট সয্য করতে না পেরে রাফসানের থেকে সবটা শুনলো তখন ওর বাবা মা ঠিক করলো ওনার ছেলের হয়ে আরু এবং আরুর বাবা মা’র কাছে ক্ষমা চাইবে।তাই ওনারা পরদিন ছুটে এসেছেন আরুর বাবা মা’র কাছে।ওনাদের সবটা জানালেন।সবটা শুনার পর আরুর বাবা মা আর অনিম আয়ানের উপর অনেকটা রেগে গিয়েছিলো।অনিম তো আয়ানকে মেরেছিলো।কিন্তু আয়ান টু শব্দ করলো না।কারণ ও জানে ভুল,অন্যায় ওর তাই কিছু বলে নি।শুধু সবার একপ্রকার পায়ে পরে আকুতি করে বলেছিলো আরুকে ফিরিয়ে আনতে।সবটা ও আগের মতো করে দিবে।কোনো কষ্ট পেতে দিবে না।সব সময় আগলে রাখবে।কতা দিচ্ছে সবাইকে।কিন্তু সেই দিন আরুর পরিবার কোনো কথা বলে নি।করো মন গলে নি।আয়ান ও হাল ছাড়ে নি।প্রায় ১ মাস অনেক কাটখোট্টা পুড়িয়ে আরুর পরিবারকে রাজী করিয়েছে।কিন্তু শর্ত একটা আরু রাজী না হলে তারা কিছু করবেন না।আরুকে জোড়ও করবেন না তারা।আয়ান তাতে রাজী।সেই দিনের পর থেকে আয়ান অপেক্ষায় ছিলো কবে আরু দেশে ফিরবে।
সবটা শুনার পর আরু পুরো অবাক।ও ভাবতেই পারছে না ওর অজান্তে এতোকিছু হয়ে গেলো।নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।আরুকে চুপ থাকতে দেখে ওর মা বললে,
আদিরা আহমেদঃ যা হয়েছে সব ভুলে যা মা।নিজেও কষ্ট পাচ্ছিস আয়ানকেও কষ্ট দিচ্ছিস।সবটা ভুলে যা আর কষ্ট পাস না আয়ানকেও কষ্ট দিস না।আমি জানি তুই উপরে যতোই হাসিস তুই ভিতরে ঠিক নেই।

আরু আর কিছু না বলে চুপচাপ ছাঁদে চলে গেলো।ছাদের রেলিং ধরে কান্না করতে লাগলো।এই ৫ বছরে নিজের সব সপ্ন কবর দিয়েছে।আয়ানকে বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে।কারণ এই ৫ বছরে নিজে যে একা কষ্ট পেয়েছে তা না আয়ানকেও কষ্ট দিয়েছে।

আরুর এভাবে চলে যাওয়ার পর ওর বাবা মা কিছু বলেনি।কারণ ওকে একা থাকতে দেওয়া উচিত।কোনো ডিসিশন ওর বাবা মা জোর করে ওর উপর চাপাবে না।আরুর ইচ্ছাতেই সব হবে।
————-
তন্নি এলো ছাঁদে হাতে কফি নিয়ে।তন্নিকে দেখেও চুপ করে রিলো।তন্নি কফির মগ এগিয়ে দিলো আরুর দিকে।আরু কিছু না বলে তন্নির থেকে কফি নিয়ে নিলো।কাপে চুমুক দিচ্ছে আর বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।মন একটুও ভালো নেই।আয়ানের অনুতপ্ত হচ্ছে যেনেও নিজের মনকে শান্তনা দিলো।কিন্তু ইগো নামক জিনিসটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না।আয়ান ওকে ৫ বছর ধরে কষ্ট দিয়েছে এর জন্য কী ক্ষমা করবে না কী না ও বুঝতে পারছে না।
কিছুক্ষন পর তন্নি বললো,
তন্নিঃ তোর কী মন খারাপ?
আরুঃ না তে।
তন্নিঃ মিথ্যে বলছিস কেনো?

তন্নির কথা শুনে আরু চুপ হয়ে যায়।কারণ তন্নি বুঝে গেছে ওর মন খারাপ।তন্নি আবার বললো,
তন্নিঃ মেনে নিয়েছিস আয়ান ভাইয়াকে?
আরুঃ মানে?
তন্নিঃ মানে মানে করবি না।আমরা সবাই সবটা জানি।
আরুঃ তাহলে আমাকে জানাস নি কেনো?
তন্নিঃ বাবাই মামনি(আরুর বাবা মা)তোর ভাইয়া তখন বলতে নিষেধ করেছিলো।আর আমরা তখন জানালেও কোনো লাভ হতো না।কারন তখন তুই রেগে ছিলিস।আমি যদি বলতাম তাহলে হিতে বিপরীত হতো।আর বাবাই বলেছিলো আয়ান ভাইয়া যদি সত্যি নিজের ভুল বুঝে অনুতপ্ত হয় তাহলে তোর জন্য অপেক্ষা করতে।
আরুঃ……… (চুপ)……
তন্নিঃ তুই বল আরু একজন ভালোবাসার মানুষের থেকে দূরে সরে থাকা এটা কী কম শাস্তি।
আরুঃ তুই ও আয়ানের পক্ষে কথা বলছিস?
তন্নিঃ আমাকে ভুল বুঝিস না তুই।একটু ভেবে দেখ এই কথা গুলো তুই নিজেই বুঝতে পারবি।
আরুঃ এগুলো বলার জন্য এখানে এসেছিস?
তন্নিঃ তুই আমাকে ভুল বুজিস না।আচ্ছা যা সরি।আর বলবো না।সব দোষ আয়ান ভাইয়ার।খুশি?
আরুঃ হুম।

আরু আর কিছু বললো না।কিছুক্ষন পর আরু বললো,
আরুঃ তনু একটা সত্যি কথা বলবি?
তন্নিঃ হুম বল?

আরু এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
আরুঃ ৩ বছর আগে কী হয়েছিলো?
তন্নিঃ হটাৎ এই কথা জানতে চাইছিস?
আরুঃ বল না?
তন্নিঃ….অতীত,,,,,

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here