শ্রাবন আধারে তুমি পার্ট:১৩
লেখিকা :আফরিন ইসলাম
রাই আবরার পাশেই ঘুমিয়ে আছে ৷আবরার রাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ৷ রাইয়ের মাথা ব্যাথা তাই আবরার আজ রাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ৷সব সময় তো রাই আবরারকে ঘুম পাড়ায় ৷আজ না হয় আবরার কাজটা করলো ৷আবরার খেয়াল করলো রাই এখন আর আগের মতো নেই ৷ সাড়ে তিনমাস আগের রাই আর এখনের রাইয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য ৷ রাইয়ের চোখের নিচে কালো হয়ে গেছে ৷আগের থেকে অনেকটা শুকিয়ে গেছে ৷মুখের লাবন্যতা হারিয়ে যাচ্ছে ৷হঠাৎ করেই আবরার রাইয়ের খুব কাছে চলে যায় ৷রাইকে এখন আর আগের মতো মনে হয় না আবরার ৷রাইয়ের হাসিটাও আজকাল প্রানহীন মনে হয় ৷মেয়েটা কি যেন লুকিয়ে যাচ্ছে তার থেকে ৷আবরার রাইয়ের কাছ থেকে চলে আসে ৷আজকাল রাইয়ের সাথে থাকতে বড্ড ইচ্ছে করে ৷কেন যেন মনে হয় রাই তাকে ছেড়ে চলে যাবে ৷আবরার নিজের বুকের বাম পাশটা চেঁপে ধরে ৷কিভাবে থাকবে সে রাইকে ছাড়া ৷ কাউকে মনের কষ্ট গুলো দেখাতে পারে না আবরার ৷রাইয়ের মনে যদি অন্য কারো বসবাস না থাকতো ৷তাহলে হয়তো আজ তাদের একটা ভালবাসার সংসার হতো ৷আবরার অন্যদিকে ফিরে শুয়ে পড়ে ৷ চোখের পানি মুছে নিল ৷
একের পর এক দরজার আঘাতে আবরার ঘুম হালকা হয়ে যায় ৷ পাশে তাকাতেই দেখে রাই ঘুমাচ্ছে ৷আবরার উঠে দরজা খুলে দেয় ৷দরজা খুলতেই দেখতে পায় মিশকা দাড়িয়ে আছে ৷আবরার মিশকাকে দেখে বলে
কিরে দরজা এভাবে ধাক্কা দিচ্ছিস কেন ৷এভাবে কেউ ধাক্কা দেয় নাকি ৷
মিশকা কয়েকটা শ্বাস নিয়ে বলে
ভাইয়া নিচে রাইয়ের বাবার বাড়ীর লোকেরা এসেছে ৷রাইয়ের মামা মামী আর মা বাবা এসেছে ৷ তারা রাইয়ের সাথে দেখা করতে চায় ৷তুমি ওকে নিয়ে এসো ৷আমি নিচে গেলাম ৷
মিশকা যেতেই আবরার দরজা আটকে দিল ৷তারপর ধীর পায়ে রাইয়ের কাছে বসল ৷রাইয়ের মাথায় আস্তে আস্তে হাত বুলাতে বুলাতে বলল
রাই শুনছো ৷সকাল হয়ে গেছে ৷উঠে পড়ো ৷রাই এই রাই উঠো ৷
রাইয়ের কানে আবরার আদুরে কথা গুলো যেতেই আস্তে করে চোখ মেলে তাকালো ৷রাই চোখ খুলে সব কিছু ঝাপসা দেখছে ৷রাই চোখ ঢলতে ঢলতে বলল
কি হয়েছে ডাকছেন কেন ৷
নিচে চলো কাজ আছে ৷আগে ফ্রেশ হয়ে নাও ৷
আবরার আর রাই ফ্রেশ হয়ে নিল ৷আবরার রাইকে নিয়ে নিচে গেল ৷নিচে যেতেই রাই সামনে থাকা মানুষ গুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো ৷এরা নাকি তার আপনজন ৷ এদের সাথেই এক মিনিট কথা বলার জন্য কোনো একদিন কত চেষ্টা করেছে ৷কিন্তু কেউ কথা বলে নি ৷কিন্তু যেই দিন থেকে জেনেছে সে আর বাচঁবে না ৷ঐ দিন থেকে যোগাযোগ করার সাহস করে নি ৷ রাইকে দেখে রাইয়ের মামা দৌড়ে ওর কাছে এসে জড়িয়ে ধরে ৷তারপর বলে
আমাকে ক্ষমা করে দে মা ৷আমি বুঝিনি ৷আমি মানুষের কথা বিশ্বাস করে তোকে কষ্ট দিয়েছি ৷ ৷আমাকে ক্ষমা করে দে ৷
তোমার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই মামা ৷তোমাকে আমার বাবার জায়গাটা আমি দিয়েছি ৷তাই নিজের মেয়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে আমাকে জাহান্নামী করো না ৷
রাইয়ের মামী এসে বলে আমাকেও ক্ষমা করে দে ৷তুই থাকতে আমি বুঝি নি মা ৷তুই চলে আসার পর আমি আমার ভুল বুঝেছি ৷আমাকে একবার ক্ষমা করে দে মা ৷গ্রামের সবাই এখন জানে তোর কোনো দোষ নেই ৷জয়নাল সব শিকার করেছে ৷
আমার ঘটনার সাথে জয়নালের কি সম্পর্ক মামী ৷
তুই তো জানিস জয়নাল তোকে বিয়ে করতে চেয়ে ছিল ৷কিন্তু তোর মামা রাজী ছিল না ৷তোকে বিয়ে করতে না পেরে জয়নাল রেগে যায় ৷ তুই যেই দিন ঐ কুড়ে ঘরে গিয়ে ছিলি ৷ঐ রাতে জয়নালও গিয়েছিল ৷তোর সাথে আবরারকে দেখে ও শয়তানি চাল চালে ৷সকাল হতেই ও লোক নিয়ে আসে ৷আর পুরো গ্রামে রটিয়ে দেয় তুই ব্যভিচার করেছিস ৷
তা জয়নাল কেন শিকার করলো যে আমি কিছু করি নি ৷
তিনদিন আগে ওর ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়েছে ৷ও মরার আগে সব শিকার করেছে ৷তোর কাছে ক্ষমা চেয়েছে ৷
রাই হাসলো ৷ চোখের পানি গুলো আজ আর ঝড়াতে চায় না ও ৷নিজের মনকে শক্ত করলো রাই ৷তারপর নিজের মা বাবার দিকে ইশারা করে বলল
ওনারা কেন এসেছেন এখানে ৷
রাইয়ের মামা বলল তোর বাবা তোকে নিতে এসেছে ৷
বাবার দিকে তাকিয়ে বলল তা এত বছর পর কেন নিতে এসেছে ৷আমি তো অলক্ষী ৷নাকি আমাকে আরো আঘাত করা বাকি আছে ৷লাঠি ,বেল্ট ,খুন্তি কোনো কিছুই তো বাদ দেন নি ৷নাকি আরো মারা বাকি আছে ৷রাইয়ের বাবা রাইয়ের কাছে এসে বললেন
আমাকে ক্ষমা করে দে মা ৷আমি বুঝিনি ৷আমি কোনো দিন সত্য মিথ্যা যাচাই করি নি ৷তোকে বিনা কারনে শাস্তি দিয়েছি ৷ আমি জেনে গেছি তুই কোনো দোষ করিস নি ৷
রাইয়ের সৎ মা এসে বলল আমাকে ক্ষমা করে দে রাই ৷আমি বুঝি নি ৷তুই ক্ষমা না করলে আমার কোথাও জায়গা হবে না রে মা ৷
আপনার কখনো কোনো দোষ আমি দেই নি ৷আসলে সব দোষ আমার কপালের ৷তা না হলে আমার মা কেন মরে যাবে ৷মা মরার পর বাবা কেন পাল্টে যাবে ৷আমি কেন দিনের পর দিন অনাহারে কাটাবো ৷আমি কেন দোষ না করেও শাস্তি পাবো ৷কেন দোষ না করেও চরিত্রহীনার অপবাদ পেয়েছি ৷দিনের পর দিন আশেপাশের মানুষের খারাপ কথা শুনেছি ৷নিজের স্বামী দুই বছর কথাই বলে নি ৷কিন্তু এত কিছুর মাঝে আমার দোষ কি ৷আপনার কোনো দোষ নেই ৷আপনি ভালো থাকুন এটাই আমি চাই ৷ আপনি আমার সৎ মা নন ৷আপনি আমার মা ৷মায়ের প্রতি সন্তানের কখনো অভিযোগ থাকতে পারে না ৷তাই আমারো নেই ৷
দুই দিন পার হয়ে গেছে ৷রাইয়ের মা বাবা আর মামা মামী গতকাল চলে গেছে ৷রাইকে নিয়ে যেতে চেয়ে ছিল ৷কিন্তু সে যায় নি ৷ আজ একবার ডাক্তারের কাছেও রাই গিয়ে ছিল লুকিয়ে ৷কিন্তু এখন আর একা একা যায় নি ৷সাথে করে নিজের এক বান্ধবীকেও নিয়ে গিয়ে ছিল ৷কারন এখন আর একা একা চলাফেরা করা তা পক্ষে সম্ভব না ৷
আকাশে রাতের ছায়া নেমেছে ৷রাইয়ের মনটা বড্ড ভালো ৷মরার আগে কাছের মানুষদের দেখে যেতে পেরেছে ৷ তারা ভালো থাকুক ৷তাদের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই তার ৷অতিত জীবন ফেলে এসেছে রাই ৷ এখন শুধুই একটু ভালো থাকার চেষ্টা ৷আবরারকে নিয়ে তার আরো কিছু সময় কাটানোর চেষ্টা ৷রাই আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিল ৷
আজ রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের কাছে রাই এসেছে ৷ কলেজের নাম করে এসেছে ৷বন্ধুটাও সাথে আছে ৷ আজ বড্ড কষ্ট হয়েছে আসতে ৷কিছুক্ষন পর রাইয়ের ডাক আসে ৷রাই চেম্বারে যেয়ে রিপোর্ট গেলো দেখাতেই ডাক্তার বলল
সরি মিসেস খান ৷আপনার অবস্থা একে বারে শেষের দিকে ৷আপনার হাতে আর এক সপ্তাহ সময় আছে ৷আপনার যে কোনো সময় অঘটন ঘটে যেতে পারে ৷ টিউমার ছড়িয়ে গেছে ৷এই একসপ্তাহ আপনার সাথে ভয়াবহ ঘটনা ঘটবে ৷আপনি দয়া করে হাসপাতালে ভর্তি হন ৷
রাই ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বলল এখন আমি আর মৃত্যুকে ভয় পাই না ম্যাম ৷আমার জন্য দোয়া করবেন ৷যেন ঐ পাড়ে ভালো থাকি খুব ৷
(কাল দুইটা পার্ট পাবেন ৷আমার গল্পটা একজন আপু কপি করে পোস্ট করেছে ৷কিন্তু আমার নাম না দিয়ে সেখানে লিখেছে তিষা মাহমুদ ৷আমি জানি না সে কেন কাজটা করেছে ৷আর কিছু ভাইয়ারা ইদানিং আমাকে থ্রেট দিচ্ছেন ৷কিন্তু কেন এমন করছেন আমি জানি না ৷ব্যক্তিগত ভাবে আমি কখনো কাউকে কখনো একটা গালিও দেই না ৷আর সেখানে আমার সাথে কেন এমন হচ্ছে আমি জানি না ৷আমি কখনো ছোট ,বড়,হিন্দু, মুসলিম ,সাদা ,কালো এইসব দেখে কারো সাথে কথা বলি না ৷যারা একবার হলেও কথা বলেছে তারা জানে ৷কিন্তু তবুও কেন আমার সোসাল মিডিয়াতে এত শত্রু আমি জানি না ৷আর আমি সত্যি অনেক বিজি তাই গল্প দিতে দেরি হয় )
চলবে…..