শ্রাবন আধারে তুমিপার্ট:১৪

0
494

শ্রাবন আধারে তুমিপার্ট:১৪
লেখিকা:আফরিন ইসলাম

রাই ডাক্তারের সাথে কথা বলে উঠে দাড়ালো ৷হঠাৎ ডাক্তারের চেম্বারের মধ্যে একজন প্রবেশ করলো ৷রাই সে দিকে তাকাতেই চমকে গেল ৷ মানুষটাও রাইকে দেখে চমকে গেল ৷ রাই ভয় মাখা কন্ঠে বলে উঠলো

সাদি ভাই আপনি এখানে কেন ৷

সাদি অবাক দৃষ্টিতে রাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল তুমি এখানে কেন ৷আমি আমার বান্ধবির সাথে দেখা করতে এসেছি ৷কিন্তু তুমি এখানে কেন ৷তোমার তো এখন কলেজে থাকার কথা তাই না ৷

রাই এবার ভয়ে কাপঁছে ৷তার খুব ভয় করছে ৷সাদি যদি আবরারকে বলে দেয় ৷রাই এবার ভয়ে কেদেঁই দিল ৷ সাদি রাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল রাই কাদঁছো কেন বনু ৷কি হয়েছে ৷ এই প্রিয়ন্তী রাই কাদঁছে কেন ৷সাদি কথাটা ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বলল ৷ ডাক্তার সাদির দিকে তাকিয়ে বলল

উনি আমার পেশেন্ট ৷গত সাড়ে তিনমাস ধরে আমি ওনার চিকিৎসা করছি ৷তুই ওনাকে কিভাবে চিনিস ৷

আমার বন্ধুর বউও ৷কি এমন হয়েছে যে সাড়ে তিনমাস ধরে ওর চিকিৎসা চলছে ৷ বল আমাকে সব ৷

রাই এবার হু হু করে কেদেঁ দিল ৷তারপর বলল প্লিজ ভাইয়া তুমি চলে যাও ৷ তোমার কিছু জানতে হবে না ৷প্লিজ ভাইয়া ৷

রাই আমি প্রিয়ন্তীর সাথে কথা বলছি ৷তুমি কোনো কথা বলবে না ৷ প্রিয়ন্তী বল আমাকে কি হয়েছে ৷

আসলে ওনার ব্রেন টিউমার হয়েছে ৷আর এটা অনেক পুরনো ৷টিউমার গুলো অনেক আগেই ছড়িয়ে পড়েছে ৷উনি এখন শেষ স্টেইজে আছেন ৷ওনার হাতে আর বেশি সময় নেই সাদি ৷ অলরেডি ওনার নাক,কান, মুখ থেকে রক্ত আসা শুরু হয়ে গেছে ৷আর বেশি দিন বাচঁবে না উনি ৷আর এক সপ্তাহ সময় আছে ৷

সাদির চোখ বেয়ে পানি পড়ছে ৷ সাদি রাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে ৷মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছে না ৷ বুক ফেটে কান্না আসছে ৷নিজের বোনের মতো করে দেখা মেয়েটা নাকি আর বাচঁবে না ৷সাদি খুব কষ্টে রাইকে বলল

প্রিয়ন্তী যা বলছে তা কি সত্যি রাই ৷ মজা করছে তাই না আমার সাথে ৷

রাই কোনো কথা বলছে না শুধু কাদঁছে ৷

কি হলো আমি কিছু বলছি ৷প্রিয়ন্তী যা বলছে তা কি সত্যি ৷রাই কান্নারত অবস্থায় মাথা নাড়ালো ৷যার অর্থ সত্যি ৷

কেউ এই ব্যাপারে কিছু জানে ৷

রাই কান্না করতে করতে বলল না কেউ জানে না ৷

এত বড় একটা রোগ এর কথা কাউকে জানালে না কেন রাই ৷অন্তত্য আমাকে তো জানাতে পারতে ৷আবরার জানে এই ব্যাপারে ৷

না উনি কিছু জানে না ৷

ওকে কেন বলো নি তুমি ৷

ওনাকে বলে আর কি বা করতাম ৷বিয়ের দুইটা বছর তো আমাকে রেখে দূরেই থাকলেন ৷এতদিন পর উনি ঠিকই এলেন ৷সব কিছু হয়তো এত দিনে ঠিকও হয়ে যেত ৷কিন্তু এই রোগটা সব শেষ করে দিল ভাইয়া ৷বিশ্বাস করো যদি একটা রাস্তা খোলা থাকতো ৷তাহলে আমি বেচেঁ থাকার জন্য সব করতাম ৷আমি একে বারে শেষ প্রান্তে এসে পৌছে গেছি ৷আমি শুধু তার সাথে একটু ভালো থাকতে চেয়েছি কয়েকটা দিন ৷এটাই আমার কাছে অনেক ৷আমি আর কিছু চাই না ভাইয়া ৷আর আমি মরে গেলেই বা কার কি ৷কারো কিছু যায় আসবে না ভাইয়া ৷আর কার জন্য বেচেঁ থাকবো বলতো ৷

সাদি চোখের পানি মুছে নিল ৷তারপর রাইয়ের হাত ধরে বল

বাড়ী চল ৷আমি নিয়ে যাচ্ছি ৷আর প্রিয়ন্তী আমি অন্য একদিন আসবো ৷

সাদি গাড়ী চালাচ্ছে নিজের মতো ৷আর একটু পর পর চোখ মুছছে ৷আজ বড্ড কান্না পাচ্ছে সাদির ৷আচ্ছা মায়া কি এমনই হয় ৷ মেয়েটার ওপর বড্ড মায়া জমে গেছে এত গুলো দিনে ৷মায়া বললে ভুল হবে ৷নিজের ছোট বোনের মতো ভালোবাসে সাদি ৷রাই বাইরে তাকিয়ে আছে ৷জীবনটা বড্ড হাহাকারে ভরা তার ৷ প্রকৃতির এই স্নিগ্ধ বাতাস আজ বিষাদের গান গাইছে ৷কোথাও বসন্ত নেই ৷গাড়ী চলতে চলতে থেমে গেল ৷রাই সামনে তাকাতেই দেখলো বাড়ী চলে এসেছে ৷রাই সাদির দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলল

আমি আসি ভাইয়া ৷আর দেখা হবে কি না জানি না ৷তবে আমার জানাযায় তোমার দাওয়াত রইল ৷আর খাটিয়ার একটা পায়া তুমি কাধেঁ তুলে নিও ৷সাদি এবার কেদেঁ দিল ৷ রাইয়ের হাত জরিয়ে ধরে বলল

এই সব কথা আমি শুনতে পারছি না ৷একটা ভাইয়ের কাছে যে এই কথা গুলো কতটা যন্ত্রনাদায়ক তা বুঝলে এভাবে বলতে না ৷ আমাকে এই ব্যাপারে কি আগে বলা যেত না ৷আমি দরকার পড়লে বিদেশ নিয়ে যেতাম ৷কাজটা ঠিক করলি না একদম রাই ৷ রাইয়ের ও বড্ড কান্না পাচ্ছে ৷তাকেও এই ভাবে একজন বোনের চোখে দেখে এটা তার জানাই ছিল না ৷রাই চোখের পানি মুছে বলল আমি বাড়ীর ভেতরে যাই ভাইয়া ৷তুমিও চলে যাও ৷আর প্লিজ কাউকে কিছু বলো না ৷আমার শরীরটা অনেক খারাপ লাগছে ৷আমি কোনো প্রেশার নিতে চাই না আর ৷

সাদি চোখের পানি মুছে নিল ৷তারপর বলল আমি রাতে এসে দেখে যাব কেমন ৷এবার যাও ৷

সাদি রাইকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল ৷আর রাই বাড়ীর ভেতরে ঢুকলো ৷ রাই বাড়ীর ভেতরে যেয়ে দেখল সবাই ড্রইং রুমেই বসে আছে ৷ আনিলা বেগম ধীর পায়ে রাইয়ের দিকে এগিয়ে এলেন ৷ রাই আনিলা বেগমকে দেখে মুচকি হাসল ৷কিন্তু আজ আর তিনি প্রতিদিনের মতো রাইকে দুই হাতে আগলে নিলেন না ৷হঠাৎ করে রাইয়ের ডান গালে সজোরে একটা থাপ্পর দিলেন আনিলা বেগম ৷ দুর্বল শরীরে রাই এই চড়টা নিতে পারলো না ৷ছিটকে পড়ল ফ্লোরে ৷আনিলা বেগম চিৎকার করে বলল

কিভাবে পারলি আমাদের ঠকাতে ৷ আমরা সবাই কি তোকে কম ভালোবাসতাম হ্যা ৷আমরা কি চাই নি আবরার সাথে তুই ভালো থাক ৷আমার আজ কি মনে হচ্ছে জানিস হ্যা ৷আমার ছেলে এত দিন যা করেছে একদম ঠিক করেছে ৷ আবরার ফুপু ঠিকই বলে তুই একটা অলক্ষী মেয়ে ৷যেই দিন থেকে আমার ছেলের জীবনে এসেছিস ৷ঠিক ঐ দিন থেকে ওর জীবনটা শেষ হয়ে গেছে ৷

রাইয়ের গাল বেয়ে পানি পড়ছে ৷রাই কাপাঁ কন্ঠে বলল আমি কি করেছি মা একবার তো বলো ৷

একে তো পাপ করেছিস আবার কথাও বলছিস ৷কেন রে সাদিকে যখন এতই ভালো লাগে ৷তখন আমাদের বললেই তো হতো ৷লুকিয়ে লুকিয়ে পরকিয়া কেন করছিস ৷

মা এসব কি বলছো তুমি ৷রাই আবরার কাছে দৌড়ে গেল ৷তারপর বলল

আবরার দেখুন না মা কি বলছে ৷আপনি তো কিছু বলুন ৷

আজকে কলেজে কেন যাও নি ৷আমি অসুস্থ হওয়ার পরেও অনেক দিন কলেজের নাম করে তুমি বাসা থেকে বের হয়েছো ৷ কিন্তু কলেজে যাও নি ৷কোথায় গিয়ে ছিলে এত দিন ৷

রাই চুপ করে আছে আর কাদঁছে ৷

রাইকে চুপ করে থাকতে দেখে আবরার চিৎকার করে উঠলো ৷তারপর বলল কি হলো কথা বলছিস না কেন ৷আর কত বেইমানি করবি আমার সাথে ৷আজ সাদির সাথে কোথায় গিয়েছিলি তুই বল আমাকে ৷আজ যদি তোর কলেজে না যেতাম তাহলে তো জানতেই পারতাম না ৷কোন হোটেলে গিয়েছিলি ওর সাথে বল আমাকে ৷

রাই চিৎকার করে কাদঁতে কাদঁতে বলল না ৷আমি আর শুনতে চাই না ৷প্লিজ আপনি আর একটা কথাও বলবেন না আমাকে ৷আমাকে মেরে ফেলুন কিন্তু এগুলো বলবেন না ৷ আমি কিছু করি নি ৷

তাহলে বলো সাদির সাথে কোথায় গিয়েছিলে আবরার বলল ৷

আমি বলতে পারবো না কিছু আপনাকে রাই বলল ৷

বেড়িয়ে যাও আমার বাড়ী থেকে ৷

কি সব বলছেন আপনি ৷আমি কোথাও যাব না আপনাকে ছেড়ে ৷রাই কথাটা বলেই আবরারকে ধরতে গেলেই সে সরে গেল ৷

ঐ পাপী হাত দিয়ে আমায় একদম ছোয়ার চেষ্টা করবি না তুই ৷বেড়িয়ে যা ৷

আমি যাব না ৷

আবরার এবার রাইয়ের হাত খুব শক্ত করে চেপেঁ ধরলো ৷তারপর টানতে টানতে নিয়ে গেল বাড়ির বাইরে ৷আর রাই চিৎকার করে কাদঁতে লাগলো ৷রাইকে বাড়ীর বাইরে ছুড়ে ফেলল আবরার ৷ তারপর বলল

এই বাড়ীতে কোনো পতিতার জায়গা হবে না

(আপনাদের সবাইকে আমি বলছি যে আমি অনেক ব্যস্ত ৷গল্ প লেখার মতো খুব একটা টাইম পাই না ৷আর আমি পুরনো গল্প আগে শেষ করতে চেয়ে ছিলাম ৷তোমার নিষ্ঠুর হৃদয়ে গল্পটা শেষ হওয়ার পর সবাই ইনবক্সে পাগল বানিয়ে ফেলে ছিলেন আমাকে ৷আবরার আর রাইকে নিয়ে সবার গল্প লাগবে ৷আমি তখন বারবার করে না করে ছিলাম ৷কিন্তু আপনারা শুনেন নাই ৷সকালে ভার্সিটির জন্য বাসা থেকে 7 টায় যাই ৷আর আসি 3 টায় ৷আর জ্যাম থাকলে তো কথাই নাই ৷কালকে দুপুরে ভাতটাও বাসায় এসে খাওয়ার সময় পাই নাই ৷সকাল 7 টায় বাসা থেকে বের হয়েছি আর রাত 8 টায় আসছি ৷তারপর ফ্রেশ হয়ে খাবার খাইছি ৷সারাদিন এত কষ্ট করার পর কার ভালো লাগে গল্প লিখতে ৷আপনারা যেইটা পাচঁ মিনিকে পড়েন ৷আমি ঐ লেখাটা দেড় ঘন্টা বসে লিখি ৷তার মধ্যে আপনাদের মধ্যে অনেকেই খোচাঁ মেরে কথা বলেন ৷স্কুল কলেজ শেষ করে ভার্সিটি গেলেই বুঝবেন কতটা কষ্ট ৷ যাই হোক আমি আপনাদের সবার মন জয় করে চলতে পারবো না ৷আর আমাকে কেউ অকারনে কল দিবেন না ৷তবে দরকার হলে ইনবক্স করবেন ৷আমি সাহায্য করবো ৷আর আপনাদের দোয়ায় বড় আপু অনেকটাই সুস্থ ৷খারাপ একটা সময় পার করতেছি ৷তবে খারাপ সময় খুব একটা দীর্ঘ হবে না আর আল্লাহর রহমতে ৷লাভ ইউ অল ৷)

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here