গল্প – ইরার কথা
: ইরা আমার ব্লু শার্টটা কই?
রাতুল গলা উচিয়ে আমায় ডাকছে।
আরিয়ানের টিফিন রেডী করছিলাম আমি। ওটা ফেলে ছুটে আসি।
: তোমার সামনেই তো?
মুখ কালো করে শার্টটা তুলে রাতুল আমার দিকে বিরক্ত নিয়ে প্রশ্ন করল।
: এটা?
: হুম। কেন?
: আরে ডীপ ব্লু শার্টটা কই? কাল তোমায় বলেছিলাম আজ প্রেজেন্টশান আছে অফিসে । সব যেন ঠিক থাকে। এই তোমার দায়িত্ব?
সংসারের কোন কাজটা করো তুমি?
ঠিকমত একটা জিনিস হাতের কাছে পাই না, কি করো সারাদিন?
অপদার্থ একটা।
শক্ত কথা। একেবারে তীরের মত বিধল। তবুও গায়ে মাখলাম না। আস্তে করে সরে গেলাম ওর সামনে থেকে। স্লাইডিং গ্লাস সরিয়ে পর্দাটা টেনে দিলাম। রোদের উত্তাপ কম। শীত যাই যাই করছে। টবের গাছটায় সবুজ পাতাগুলো সবে মেলে ধরছে নিজেকে।
আমি এই মুহুর্তে স্বস্তি চাইছি। রুম ছেড়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম। রকিং চেয়ারে রাতুল টাওয়াল ফেলে এসেছে। পাশে কাপ পিরিচ রাখা। চা অর্ধেক খাওয়া। চায়ের কাপ হাতে রুমে ঢুকে রাতুলকে কিছু বলতে ইচ্ছে করল। রাগটা পুষে রেখে সামনে গেলাম।
: ভুলিনি তো? সব গোছানো আছে। কেবল তোমার লন্ড্রিওয়ালার ভুলের কারনে শার্টখানা এখনও দোকানে। কিন্ত ব্লু শার্ট তোমার একটা তো নয়?
রাতুল চটে গেছে।
: আমার ওটাই চাই। কারন ওটা স্পেশাল আমার কাছে। তুমি এসবের মূল্য বুঝবে না ইরা। বাইরের জগত সম্পর্কে কোন ধারনা আছে তোমার? নাই। থাকলে বুঝতে।
: ওহ, তাই তো আমি বুঝবো কি করে।
আমি ইরা সব বুঝি। তবুও সকাল সকাল বাজে কথাগুলো শোনার ইচ্ছেটা নেই বলে এড়িয়ে গেলাম।
ঠান্ডা মাথায় এভাবেই কথাগুলো বলে রাতুল। প্রায় বলে। আমি শুনি কিন্ত রাগি না। কখনও উত্তর দিই কখনও চুপ থাকি। আলমারী খোলার শব্দ হলো। আবার বেশ জোরেই ধাক্কা মেরে আলমারীটা বন্ধও করল। এটা ও ইচ্ছে করে করছে। আমার চোখে পড়ল দামী ঘড়িটা হাতে দিয়ে ঘুরে ফিরে নিজেকে দেখছে রাতুল। এখন বাজে আটটা বিশ। ওর অফিস টাইম দশটায়। রোজ সে বের হয় নয়টায়। তার আগে পুরোপুরি নিজেকে চৌকস করতে কমপক্ষে বিশ পচিশ মিনিট সময় নেয়। আমিও খেয়াল করি একটু একটু করে রাতুলের পরিবর্তনটা। আয়নার সামনে দাঁড়ালে ওর মুখের ভাষা বদলে যায়। রোজ অফিস টাইমে ও ঝকঝকা চেহারাটা কুৎসিত করে ফেলে এমন ধরনের কথা বলে।
তার চেহারা ছবি সুন্দর। দশটা লোক তাকায় ওর দিকে। পাঁচ ফিট নয় উচ্চতার একজন পুরুষ সে। তার পাশে পাঁচ ফিটের তিন শ্যামলা আমি। কেমন লাগে জানি না। তবে মানানসই তো অবশ্যই। নইলে কি শাশুড়ি দেখে শুনে এনেছেন। শ্যামলা বলে আমার কোন আক্ষেপ নাই কিন্ত রাতুলের আছে। প্রথম প্রথম এসব নিয়ে কোন কথা হত না। কিন্ত ইদানীং হয়। অনেক কথা হয়। রাতুল নিজের রূপ সৌন্দর্য নিয়ে গর্ব করে। গর্ব তার মাকে নিয়েও করে । তার মা ও রূপসী ছিল এক কালে। গড়ন গঠনে উনাকে নায়িকা নায়িকা লাগত কম বয়সে আপাতত আমি এটাই বুঝেছি উনাকে দেখে। কিন্ত তাতে কি। এটাই কি মানুষের পরিচয়? রূপের গুনে মানুষের বিচার করা খুব অনুচিত ।ওর মা আমাকে পছন্দ করেছিল। কেন করেছিল এখন বুঝি। আব্বার যশ খ্যাতিতে।
আমার আব্বা নামকরা ডাক্তার ছিল। শহরে তার নাম ডাক অনেক। উনার চেম্বার ক্লিনিকে রোগী গিজগিজ করত। ঢাকা শহরে আমাদের বাড়ি গাড়ি সবই আছে। তাই আমার রূপ সৌন্দর্য তেমন না থাকলেও আমি রাতুলের বউ হয়েছি। খুব বড় করে অনুষ্ঠান হয় আমার বিয়েতে। শ্বশুরবাড়িতে পা রেখে সন্মান আদর সবই পেয়েছি। এতে আমি আহ্লাদে গদগদ হতাম না। পৃথিবীর আর দশটা স্বাভাবিক নিয়মের মত আমিও ভাবতাম ঘর সংসার স্বামী জীবনের স্বাভাবিক নিয়ম।
বিয়ের পর রাতুলের সাথে প্রেম ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠে। আমি সুদর্শন স্বামীর প্রেমে পড়েযাই। দিনরাত্রি এক করে আমার জগতটা ভালবাসাময় হয়ে উঠত। তখন আমার এমএস করা হয়নি। এসব কারনে পড়াশুনা মাথায় উঠে আস্তে আস্তে। আমি মুখিয়ে থাকতাম কখন রাতুল ঘরে ফিরবে।
ওর কাছে নিজেকে সপে দেবার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকতাম। এসব পাগলামির মাঝেই আরিয়ান পেটে চলে আসে এবং খুব জলদি জলদি।
প্রথম প্রথম মন খারাপ হত। প্রেগন্যান্সির সময় বড্ড একা লাগত। চারপাশে সবাই থাকার পর তবুও মনে হত কেউ নেই কাছে।
কারনটা হলো তখন রাতুলের অফিস ট্যুর হঠাৎ বেড়ে যায়। আমার পাশে ওকে একদম পেতাম না। একা একা কাঁদতাম। আমার এসব পাগলামি দেখে রাতুল জোর করে আমাকে আম্মার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিল। যাবার আগের দিন রাতে আমি খুব কেঁদেছি। ওর বুকে মুখ লুকিয়ে অঝোরে পানি ফেলেছি।
: আমি তোমায় ছেড়ে থাকতে পারবো না।
রাতুলের নিঃশ্বাসের শব্দগুলো বুকের মাঝে টালমাটাল হত।
ও আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে।
: আহা তুমি এসময় একা থাকতে পারবা না ইরা, তোমার যত্নআত্তি লাগবে। আমাদের বাবুটা তো অপেক্ষা করছে তাই না? ওর জন্য তোমায় ভালো থাকতে হবে।
আমি চলে এলাম মায়ের কাছে। কিন্ত মন আমার পড়ে থাকত ওর কাছে। ওর ভালবাসার জন্য পাগল হয়ে উঠতাম।
দিনগুলি আমার দুঃখের কাঁটায় কেবল বড় হয়।
আলোছায়ার ব্যাসার্ধে বাড়ে চাওয়ার পরিধি।
গুনীতক সময় কঠিন পরীক্ষায় ফেলে দেয়।
তারপর একদিন সব মিটে যায়। আরিয়ান কোলে আসে। ওকে নিয়ে আবার নিজের সংসারে ফিরে আসি।
তারপর ছেলে সংসারের ফাঁকে এমএস শেষ করলাম কোনরকমে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। যাক সব মিটলো তাহলে। কারন তখন আমার ভাবনা আনন্দ সব এই সংসার। কোন বেডশিটের সাথে পর্দার ম্যাচিং করবো, কুশনের কাভারগুলো বদলাবো কিনা, টবের গাছগুলোতে পাতার রঙ ফিকে কেন আজকের মেনুতে রাতুলের ফেবারিট ডিশ আছে কিনা এসব চব্বিশ ঘন্টা মাথায় ঘুরত।
এর মাঝে আরিয়ান হাঁটা ধরেছে। ওর গুটি গুটি পায়ের দুষ্টুমি আমার সুখ স্বপ্নের থৈ থৈ আনন্দ। নিজের খেয়াল খাওয়া বিশ্রাম লাগামছাড়া হতে থাকে। সংসার তো অথৈ সমুদ্র। যেখানে ডুবে যেতে মায়ার বেড়াজালে জড়ালেই হয়। আর কিছু লাগে না।
রাতুল নিজে একজন। আর্কিটেক্ট। বুয়েট থেকে বেরিয়ে ভালো জব করছে। স্যালারি অনেক।
আমাদের ছিমছাম সংসার ভালো চলে এতে।
ইন্দিরা রোডে দারুন একটা ফ্ল্যাটে আমাদের তিনজনের সংসার। পরিপাটি সাজানো ফ্ল্যাটে চকচক ঝকঝক আয়োজন আছে। যে কেউ ঢুকলে বলবে ” বাহ সুন্দর তো”।
কেবল সুন্দরের ছিটেফোঁটা নাই আমার চেহারায়।
অবহেলার ছাপে নিজের জৌলুসের প্রায় সবটা শ্রীহীন হবার পথে।
প্রতিদিন ঘর দুয়ার সাফ করার জন্য যেটুকু সময় দিই তার বিপরীতে সামান্য সময় হয় না প্রকাণ্ড আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখার।
আমার কোমর পর্যন্ত চুলের রুক্ষতা যতটা না চোখে পড়ে তার চেয়ে বেশী চোখে পড়ে ছেলে আরিয়ানের যত্নআত্তি কম হলো কিনা।
রোজ রাতুলের ব্রেকফাস্টে বাটারের সাথে পাউরুটির মিক্সটা পারফেক্ট হলো কিনা, আধ সেদ্ধ ডিমের তুলতুলে ভাবটা থাকলো কিনা এটাতে একদমই এদিক সেদিক হয় না কিন্ত
অথচ ত্রিশের ঘরে পড়েই নিজের স্কিন চুলের যে বারোটা বাজছে সেদিকে কোন খবরই নাই।
: সরো তো সামনে থেকে।
রাতুলের ধমকটা বেশ কড়া লাগল আজ। পাশ থেকে সরে গিয়ে আয়নাটায় নিজের চেহারাটা দেখি। কি ম্লান দেখাচ্ছে। এলোমেলো চুল। কোনরকমে একটা খোপা করা। অথচ পাশেই রাতুলকে কি অসাধারন দেখাচ্ছে।
সেকেন্ডে আমার মন খারাপ হয়ে গেলো। এতটা বদলে গেলাম আমি? নিজের অসতর্কতা নিজেকে শেষ করে দিচ্ছে আর সেদিকে আমার খেয়াল নাই।
এক সংসার সংসার করে নিজেকে ভুলে যাচ্ছি আমি।
পারফিউম স্প্রে করে রাতুল গটগট করে রুম ছেড়ে বেরিয়ে যায়। যাবার বেলায় একবারও আমাকে কিছু বলে গেলো না।
ধপ করে বিছানায় বসে পড়লাম। একটু অবহেলা কতটা তিক্ততা যে আনে এটা রাতুলের বিহেভে আজ নাড়া দিয়ে গেলো।
কিসের জন্য এই সংসার মায়া কিসের ভালবাসা।
কতটা সময় এভাবে ছিলাম জানি না।
দশটা বাজার এলার্ম পেয়ে চমকে যাই। আরিয়ানের স্কুলে যেতে হবে।
ডাইনিং এ গিয়ে ঝটপট ছেলের টিফিন গুছাতে গিয়ে কথাগুলো কানের ভেতর ঝা ঝা করে উঠল।
ভেতরটা গুড়িয়ে যাচ্ছে। ছয়টি বছরের আবেগ ভালবাসার ছায়া কত সহজে অচেনা হয়ে যায়।
মিনু কিচেন থেকে বের হয়ে একটা ব্যাগে টিফিন বক্স, পানির বোতল, টিসু এগুলো ভরে দেয়। আমি পার্সটা খুলে টাকাগুলো চেক করলাম। কিছু জিনিস কেনা লাগবে। ওর স্কুল থেকে ফেরার পথে সুপার শপে ঢু দিলেই হবে। প্রায় এটা সেটা কিনতে এই সময়টুকু বেছে নিই। কিন্ত আজ মন প্রচন্ড বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। যেতে ইচ্ছে করছে না কোথাও। না স্কুলে না শপে। কিন্ত ছেলেটা আমার জন্য অপেক্ষায় থাকবে। বড্ড মা পাগল। টিফিন আওয়ারে আমাকে দেখে বেপরোয়া হয়ে ছুটে আসে। গলা জড়িয়ে ধরে। আমিও ওর ছোট্ট শরীরে নিজের অস্তিত্বকে প্রানভরে অনুভব করি। এটা যে বেঁচে থাকার সুখ। মাতৃত্বের সুখ।
আরিয়ানের স্কুল একটা গলির পরেই। পায়ে হাঁটার পথ। এটুকু পথ আমি হেঁটেই যাই।
সাড়ে দশটায় টিফিন আওয়ার। ওর জন্য প্রায় দিন এমন করেই টিফিন আওয়ারের আগে আগে খাবারটা নিয়ে স্কুলে যাই। কোনদিন মিনু যায়।
মিনু আমার সহকারী। হেল্পিং হ্যান্ড। ভালো মেয়ে। গত দুবছরে আমার সাথে আছে। আরিয়ানও ওকে পছন্দ করে। চমৎকার বোঝাপড়া আমাদের সাথে।
: আফা, আফনের কি শরীর বালা নাই?
মিনুর ডাকে চমকে উঠি। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে
হাসি মুখে কথা বলতে চেষ্টা করি। কিন্ত আমি পারছি না। কোথাও আটকে যাচ্ছি।
: কে বললো ভালো নেই। আমি ঠিক আছি।
মিনু কাছে এসে আমার কপালে হাত দিয়ে দেখে।
: আফা আইজ আমি গিয়া ভাইয়ার টিফিন দিয়া আসি।
মিনুর আকুতিতে আমার মন নরম হল। প্রায় সে এমন আকুতি করে।
কিন্ত আজ শরীর মনে জোর পাচ্ছি না। তাই মুখের উপর হা বলে দিলাম। মিনু খুব আনন্দিত। সে ছুটে গিয়ে রেডী হলো। ওড়নাটা মাথায় ভালোভাবে টেনে টিপটপ হয়ে ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে বের হয়ে যায়। দরজা পর্যন্ত এসে আমি সতর্ক করি।
: শোন সাবধানে যাবি। কারোর সাথে কথা বলতে যেন না দেখি।
মিনু দাঁত কেলিয়ে হাসল। মেয়েটার প্রান চঞ্চলতা ভালো লাগে। আমার প্রতি তার টান ভালবাসা একটু বেশী। আমি আড়ালে এগুলো লক্ষ্য করেছি।
সে লিফটের বাটনে হাত না দিয়ে তরতর করে সি্ঁড়ি বেয়ে নামছে।
: কিরে সিঁড়ি কেন?
: আমার ডর করে আফা।
আরো পাঁচ মিনিট অপেক্ষার পর আমি দরজা লাগিয়ে সোজা বেডরুমে ঢুকে শুয়ে পড়লাম। অসম্ভব কান্না পাচ্ছে। আজ এতদিন পর নিজের এই সংসারে নিজেকেই অপরিচিত মনে হচ্ছে।
এই রুমের প্রতিটি কোনায় আমার স্পর্শ আছে। প্রতিটি ফার্নিচারে আমার সুখময় স্মৃতি জড়িয়ে। অথচ মুহুর্তে মনে হচ্ছে এসবে আমার কোন অধিকার নেই। সাজানো একটা জীবনের অতিথি আমি। যার অনুভুতির সাথে মমতার বন্ধনগুলো উপহাস করছে। হেরে যাওয়া মানুষের মত কাঁদছি আমি। অঝোরে সব জমাকৃত কষ্টের পাহাড় ভেঙে ভেঙে পড়ছে।
রাতুল বদলে যাচ্ছে। খুব ধীরে ধীরে।
ওর জগত ওর চাওয়ার জগতে আমি মুছে যাচ্ছি। আমি এটা টের পেয়ে গেছি।
আধঘন্টা পর বিছানা ছেড়ে উঠি। ছেলেটা চলে আসবে। আমাকে এভাবে দেখলে নানা কথা জিজ্ঞাস করে ফেলবে হয়তো।
ফ্রিজ থেকে নামানো মুরগী মাছগুলো কেটে ধুয়ে রেডী করলাম। সবজিগুলো মিনু কেটে পানিতে ধুয়ে রেখেছে। পেঁয়াজ মশলা সব গোছানো পেলাম।
যাক রান্নাটা সেরে ফেলতে হবে। ঝটপট চুলোতে মুরগীটা চড়িয়ে দিই। মশলাটা তেলে কষিয়ে আলুতে সামান্য পানি দিয়ে ঢেকে দিলাম। আরেক চুলায় মাছটা ভুনা করে ফেললাম দ্রুত। টমেটো ধনেপাতা দিয়ে মাখা মাখা করে নামিয়ে ফেলে মুরগীর ঝোলটা চেখে নিই।
চায়ের তেষ্টা পেয়েছে অনেক। চুলাটা খালি হতে হতে কাপ পিরিচ ধুয়ে ডাইনিং এ রেখে আসি। বারবার ঘড়ি দেখছি। আরিয়ান কখন আসবে।
ছেলেটার চিন্তায় অস্থির লাগে যতক্ষন না বাসায় ফিরে।
রান্নাটা শেষ করে এক কাপ চা নিয়ে ব্যালকনিতে হাঁটাহাঁটি করছি। মন মানছে না। কেন যে মিনু কে।পাঠালাম। ধুর নিজের সামান্য ইমোশনের কারনে আজ ছেলেটার চিন্তাটা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।
ব্যালকনি থেকে দেখি রিকশা থেকে আরিয়ান নামছে। মিনু ওর হাত ধরে আছে। উফ এতক্ষনে স্বস্তি পাচ্ছি। ব্যালকনি ছেড়ে ড্রইং রুমে আসতে আসতে কলিং বেলের আওয়াজ।
দরজাটা খুলতেই আরিয়ান জাপটে ধরে আমাকে।
: মা তুমি কেন যাওনি আজ?
ওর ছোট ছোট কথাগুলো আমার বেঁচে থাকার প্রেরনা।
: কাল যাবো বাবা। এখন তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো যাও।
মিনু আরিয়ানকে নিয়ে ওর রুমে ঢুকল। ছেলেটার সমস্ত কাজ খুব মন দিয়ে করে। এটা খুব স্বস্তিদায়ক। আমিও বারবার রুমে গিয়ে খোঁজ করি।
দুপুর একটার মধ্যে সব কাজ সেরে শাওয়ার নিলাম। আরিয়ানকে খাইয়ে দিয়েছি আগে। এখন ও বিশ্রাম নিচ্ছে। মিনু সাথে আছে। যতক্ষন ও না ঘুমায় ততক্ষণ আরিয়ান ওকে ছাড়ে না।
ভেজা চুল বেয়ে টপটপ পানি ঝরছে। টাওয়ালটা ব্যালকনিতে রেখে রুমে এলাম। আয়নার সামনে এসে চোখ পড়ল রাতুলের ঘড়ি পড়ে আছে। আশর্য ওতো সব আলাদা গুছিয়ে রাখে। এভাবে বাইরে কোন কিছু ফেলে যায় না।
ঘড়িটা হাতে নিলাম। বেশ দামী ঘড়িটা। এবং একবারেই নতুন। ওর ঘড়ির বাতিক আছে। একটার পর একটা কেনে। বলা যায় ঘোর নেশার মত। এটা ওর ভালো লাগা নিঃসন্দেহে।
ভালো লাগার কিছু মানুষকে ভালো রাখে। এটাই স্বাভাবিক। আচ্ছা আমি কবে নিজের ভালো কিছুর জন্য এভাবে ভেবেছি। কই মনে পড়ে নাতো।
একটা ভালো শাড়ি বা গহনা খুব পছন্দ করে কবে কিনেছি মনেই পড়ে না। যা কিনি সব তো রাতুলের পছন্দে কেনা হয়।
দোকানে গেলে আমার চোখ পড়ে শোপিস কিংবা বেডশিট নয়তো ফার্নিচারের দিকে।
নিজেকে সাজাতে নিজের পছন্দে কিছু কেনাটা কেন ভুলে গেছি।
টুং টাং মেসেজ এলো।
ওপেন করে দেখি রাতুলের মেসেজ।
” আজ সিয়ামের বাসায় পার্টিতে যাওয়া লাগবে। তুমি যাবে কিনা?
” যদি যাও সন্ধ্যায় রেডী থেকো “।
মেসেজটা পড়ে কতক্ষন চুপ করে থাকি। এখানেও রাতুলের অনাগ্রহ। “যদি যাও ” এটা লেখার মানে কি আমাকে নিয়ে যেতে ওর আগ্রহ নেই?
মন খারাপ হচ্ছে ক্রমশ এবং অনেক খারাপ লাগছে। দ্বিধায় আছি কি করব। যাবো কি যাবো না।
বি:দ্র- নতুন গল্প লিখলাম। যদি ভালো লাগে সবার তবে আগ্রহ নিয়ে পরবর্তী পর্ব লিখব।
…….. তামান্না হাসান