ইরার কথা পর্ব – ১৪ শেষ পর্ব

0
362

গল্প – ইরার কথা

শেষপর্ব

” ইউ আর লুকিং সো প্রিটি ডিয়ার”
রাতুল কানের কাছে এসে ফিসফস কথাগুলো বললেও আমি চুপই থাকলাম। কারন স্বপ্ন ভেঙে যাবার আর্তি আমি শুনছি রাতুল নয়।
গাড়িতে লাগেজ তোলা শেষ। রাতুল ডোর লক করে আমার পাশে এসে বসেছে। আরিয়ান পেছন ফিরে খিলখিল করে হেসে উঠে। ও কি শুনে ফেলল। আমি হাসির ভান করে বসে রইলাম। নিরুপায় হয়ে। পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছি। মিনুও বেশ খুশী খুশী। এতদিন পর বাসায় যাচ্ছে বলে। আমার দিকে তাকিয়ে সেও হাসে।
কেবল আমার মনে শান্তি উধাও। সেটা বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও ভেতরে আগুনের তাপ কমার নাম নাই। সব নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে।
তবুও এক ফাঁকে বলে ফেললাম।
: রাতুল আজ আমাকে একটু কলাবাগানে নামিয়ে দেবে?
আমার চোখের ভাষা আজ রাতুল পড়ে ফেলেছে। ও ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় আঙুলে। আমি কেমন হকচকিয়ে গেলাম। ও সাধারনত এত প্রেমিক মুডে থাকে না বিশেষ করে বাইরে।
নাকি আমার অনুপস্থিতিতে ট্যুর আর ফ্রেন্ডদের সাথে ভালোই সময় কাটিয়েছে যার রেশ এখনও যায়নি।
: প্লিজ আজ নয় ইরা। কাল যেও। আজ তোমায় নিয়ে সেলিব্রেট করব। খুব খুব মিস করেছি এ কদিন।
রাতুল কেমন মাতাল সুরে কথা বলছে। বিষয়টা ঠিক স্বাভাবিক নয়। আমিও আন্দাজ করতে পারছি না। তার হঠাৎ এত প্রেম উথলে উঠছে কেন। নাকি এটাই কৌশল। আমার মনে হচ্ছে শেহনাজ সব জানে এবং রাতুলের সাথে সে একত্র হয়েছে এই ব্যাপারে। তারপর আমাকে ফাঁদে ফেলতে এই নাটক।
সবই বুঝতে পারছি কিন্ত কি করবো এখন। কোন সমাধান পাচ্ছি না তো। তবে যাই ঘটুক গাড়িতে বসে এই নিয়ে আলোচনা সম্ভব না। হিতে বিপরীত হবে। তার চেয়ে চুপচাপে বাসায় যাওয়া ভালো । তাশরিফের টেক্সট আসা শুরু হয়ে গেছে। একটু পর ফোনও আসা শুরু হবে। তখন রাতুল বিরক্তিতে অনুযোগ শুরু করবে। মোটকথা কিছুই বলা যাবে না
ও ইয়ারফোন গুঁজে চোখ বন্ধ করে আছে।
গাড়ি ছুটছে হাওয়ার তালে। দুলুনির মাত্রা কম। রাতুল ভেসে বেড়ালেও আমার ভেতরে দহন শুরু হয়ে গেছে। তিলতিল করা সঞ্চয় এক নিমিষে শেষ হয়ে যেতে পারে না। মিরপুর থেকে ইন্দিরা রোডে গিয়ে পৌছানোর পর রাতুলকে বোঝানোর প্রস্ততি নিলাম। ভেবে নিলাম যা থাকে কপালে।
শেষ চেষ্টা করেই দেখি।
কিন্ত ওখানেও যদি সমস্যা হয় তার আগেই তাশরিফকে বলে দেই রেকর্ডিং এর তারিখ পরিবর্তন করে দিক। আমাকে যে করে হোক তাশরিফকে হাতে আনতে হবে। নাহ এতটা নরম হলে চলবে না। একটু শক্ত হতে হবে। এলোমেলো মন নিয়ে আমি নতুন করে চিন্তা শুরু করলাম। ভেঙে যাচ্ছি বলে বুঝতে দেয়া যাবে না কাউকে।
প্রচন্ড মন খারাপ হল। কান্না এসে যাচ্ছে। আটকে রাখছি প্রানপনে। প্রথম কাজের শুরুটাই যদি বাধার মুখে পড়ে তবে কি করে ভালো কিছু আসবে।
এসি বাড়ানো হয়েছে। গরমের জন্য। পাশ ফিরে দেখি রাতুল ইয়ারফোনে কথা বলছে। কার সাথে বুঝতে পারছি না।

তাশরিফের ফোন এল। স্ক্রিনে নামটা দেখেও ধরছি না। লাইন কেটে দিলাম। রাগে দুঃখে যন্ত্রনায়। কারন পরিস্থিতি আমার হাতে নাই।
একটু পর মেসেজ এলো।
” ইরা কোথায় আপনি”
এটা দেখে মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সব না পাওয়া এখন ভিড় করবে দুঃখ হয়ে। দুঃখরা এমনই দল বেঁধে আসে।
রাগ করে উত্তর দিলাম না।
কিছুক্ষন পর রিপ্লাই দিলাম।
” আজ কি রেকর্ডিং এর তারিখটা বদলানো যাবে?
কয়েকটা রাগের ইমোজি চলে এলো। নানা রকমের।
রাগের কথায় রাগ করবে এটাই স্বাভাবিক।

” মাই গড, আর ইউ ম্যাড?”
“কিছু সমস্যা আছে তাশরিফ”
” এসবের মানে কি ইরা, আপনি ঠিক আছেন তো?
মেসেজ লেনদেন হচ্ছে। রাতুল খেয়াল করতে পারছে না। করলেই কি।

“আসলে আপনাকে বলা হয়নি, রাতুলকে সব বলেছিলাম কিন্ত ও কিছুতেই গান করতে দিতে চায়নি। তারপর ওকে না জানিয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে একা একা এতদুর এসেছি। কিন্ত আজ পুরোপুরি আটকে গেছি, কি করে আসবো বলুন তো?

” সরি ইরা আমি বোধহয় আপনাকে নিয়ে কাজটা করতে পারব না, ঠিক আছে ভালো থাকুন “।

মেসেজ আসা বন্ধ হয়ে গেলো। শেষ মেসেজের পর কতক্ষন আমি ঠায় বসে রইলাম।
এখানে সবটাই আমার জন্য ঘটেছে। আমি কাজের জায়গায় ব্যক্তিগত সমস্যা দাঁড় করিয়েছি। এটা ভুল। তাশরিফ রায়হান প্রফেশনাল আর আমি তা নই।
মোবাইল হাতে আকাশ পাতাল চিন্তা করছি। একরাশ মেঘ কালো কষ্ট বুকের ভেতর। না পারছি সইতে না পারছি ফেলতে।
কিছু ভুল কাজ আমিও করেছি। শুরুতেই আমার শক্ত হওয়ার দরকার ছিল।
সংসার করি বলে রাতুলকে এতটা গুরুত্ব দিয়ে চলা খুব অনুচিত হয়েছে। ওকে সব বলে ম্যানেজ করাটা জরুরী ছিল। সেটা না করে লুকিয়ে মারাত্নক ভুল করেছি।
এখন রাতুল আমাকে পেয়ে বসেছে। এর জের আরো টানতে হবে বোধহয়।

আরিয়ান চিৎকার করছে মিনু নাকি ওকে হাত টেনে ধরেছে বলে। আরিয়ান ছটফট করে গাড়িতে বসলে। এটা সেটা ধরে। আনিসকে ডিস্টার্ব করে। সবসময় করে। আগে সব নেনে নিতাম। ভালো লাগত ওর দুষ্টমি। কিন্ত আজ সব ভালো লাগা শেষ। একদম।

ওর চিৎকারে কড়া করে দিলাম এক ধমক।
: একটা থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেবো।

আরিয়ান থমকে গেছে। আমার ধমকে। আমি সাধারনত এতটা জোরে চেঁচাই না। আজ সব আমার বিপক্ষে চলে যাচ্ছে। সব। রাতুল আধবোজা হয়ে শুয়ে আছে। গান শুনছে। সে বুঝল না কি হচ্ছে।
আরিয়ান স্তব্ধ হয়ে গেছে।
আমি লাল চোখে ছেলেটার দিকে তাকাতে পারিনি।

মাথাটা সিটে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়েছি। মনের ভেতর কত কথা। সব গুমড়ে কেঁদে ফিরছে।
সব।
গাড়ির দুলুনিতে ঘুম আসে না। উল্টো এক ধরনের অদ্ভুত বিষয় ঘটে। অতীতের চিত্রপট একে একে চোখের সামনে ভেসে উঠে। স্বচ্ছ পরিস্কার চিত্রপট।

” ইরা এ্যাই ইরা?
আমি ঘুম ঘুম চোখে ভারী বিরক্ত হলাম। এত শান্তির ঘুমের মাঝ কেউ ডাকলে ইচ্ছে হয় কষে একটা চড় দেই।
আরিয়ান এমনটা প্রায় করে। যখন খুব ক্লান্ত হয়ে বিছানায় যাই। তার কিছুক্ষন পরেই আরিয়ানের ডাকাডাকি শুরু হয়।
এটা ভীষন পেইনফুল।

: ইরা উঠো?
রাতুল হাত দিয়ে ধাক্কা দিতেই আমি জেগে গেলাম। ওমা গাড়িতে কেউ নেই। সবাই নেমে গেছে আমি ছাড়া।
আধো ঘুমে রাতুলের কথা শুনে চোখ মেলে তাকাই। নিজের উপর রাগ হল বড্ড। এটুকু পথে কেন ঘুমিয়ে পড়েছি।
: কি এত ঘুম কিসের নামো।
রাতুল হেচকা টানে গাড়ি থেকে নামতেই পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরল। তাকিয়ে দেখি শেহনাজ। খুব চমকে গেলাম ওর মুখটা দেখে। তবে ঘোরের মাঝেই আছি। এটা কোথায় এলাম।
ওমনি আচমকা একসাথে অনেকগুলো মানুষের চিৎকার শুনলাম।
: মোস্ট ওয়েলকাম ইরা।
আর সাথে সাথে গানের মিউজিক বাজল। সুরের লহর মন ভালো করে দেয়। আমি হতভম্ব হয়ে তাকাচ্ছি। রাতুল মিটমিট করে হাসছে। ও তখনও আমার হাতটা ধরে আছে। একে একে তাশরিফ, আবিদ, রিশাদ আর অচেনা একটি মেয়ে সামনে আসে। এদের হাসি হাসি মুখ ঝলমলে চেহারা দেখে অবাক হয়ে গেছি।
সিয়াম ভাই ছুটে এল। তার হাতে বিশাল সাইজের একটা কেক।
এতো আয়োজন।
আমি বিস্ময়ের রাজ্যে বোধহয় দাঁড়িয়ে আছি।
নইলে এতকিছু কি করে হয়।

অচেনা মেয়েটি ধবধবে ফর্সা। পরনে জামদানী শাড়ি। মেয়েটি হেঁটে আসছে তাশরিফের হাত ধরে।
মুখে স্মিত হাসি । কাছে এসে আমার দিকে হাত বাড়াল।

: হ্যালো ইরা।
ওয়েলকাম
আমি হা হয়ে গেছি।
পাশে তাশরিফও হাসছে। আমি বুঝতে পারছি না এসব কি হচ্ছে।
: তাশরিফ এসব কি হচ্ছে বলুন তো?
তাশরিফ মেয়েটিকে পরিচয় করিয়ে দেয়।
: ইরা ও হচ্ছে মাইশা। আমার ফ্রেন্ড। তবে বিশেষ ফ্রেন্ড।
আমি মেয়েটিকে চিনলাম। এর সাথেই রাতুল শপিংমলে ছিল। চোখ কচলে আরেকবার দেখি।

: সরি ইরা, তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছি বলে।
আমি শেহনাজের দিকে তাকিয়ে দেখি চোখে পানি টলটল করছে।
: কিন্ত কেন সরি বলছো শেহনাজ?
: তোমাকে হেল্প না করে সরে যাবার জন্য।
আমি বোকার মত উল্টো প্রশ্ন করে বসি।
: কি বলছো এসব, আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না শেহনাজ।
শেহনাজ রাতুলের দিকে কড়া নজরে তাকাতেই রাতুল ভড়কে যায়।
: ওহ, শেহনাজ খুব সরি আমি।
শেহনাজ রাগ দেখিয়ে আমাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরল।
: শুধু রাতুল ভাইয়ের কথা রাখতে তোমার সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলাম ।
কারন রাতুল ভাই তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল এবং দিয়েছেও।
আমি শেহনাজের হাতটা ছেড়ে রাতুলের মুখোমুখি হই।
রাতুলের চোখে বিশ্বাসের ছায়া।
: ইরা তুমি গান করবে না? আমি আছি তোমার পাশে।
আমার স্বপ্নের দোর, স্বপ্নের বসতি রাতুলই খুলে দিলো। এতটা প্রাপ্তি আমার জন্যে ছিল আর আমি ওকে নিয়ে কত কি ভেবে ফেলেছি।

ওর গলা কি ধরে এসেছে এটুকু বলতে গিয়ে।
আমি নির্বাক চোখে দেখছি মুঠোয় ধরা স্বপ্নটা আমায় ছুঁয়ে যাচ্ছে। শিহরিত রিনরিনে স্পর্শে।

: রাতুল তুমি এতকিছু করলে আমার জন্য?
আমার কথা জড়িয়ে আসছে আবেগী তৃষ্ণায়। মনে হল কত যুগ অপেক্ষার পর এমন একটা ক্ষন আসে।
: করলাম কারন তোমার আগ্রহ, তোমার ইচ্ছেটাকে সন্মান করলাম।
তুমি অনেক ভালো গাও। যেদিন তাশরিফ তোমার সাথে কন্ট্রাক্ট করল সেদিনই শেহনাজের সাথে পুরো প্ল্যান নিয়ে বসেছি। তোমার থেকে শেহনাজকে সরিয়েছি। তারপর পুরো বিষয়টা সামাল দিতে গিয়ে মাইশার সাথে কয়েকবার মিট করেছি। সেদিন তুমি শপিংমলে আমাকে মাইশার সাথে দেখেছো।
খুব রাগ করে চলে গিয়েছিলে তুমি। আচ্ছা তোমার মাথায় কি করে এলো যে তোমায় ফেলে আমি ভালো থাকব?
রাতুলের চোখ ছলছল করছে।
মাইশা হাসতে লাগল।
: ইরা রাতুল তোমায় ভীষন ভালবাসে তবে ফ্রেন্ড হিসাবে রাতুল কিন্ত দারুন। অবশ্য তাশরিফ আমায় যদি কখনো এমন ধোকা দেয় তো ওকে কিন্ত আমি ছাড়ব না। তুমি তো সব দেখেও রাতুলকে ছেড়ে দিয়েছিলে সেদিন।
এই কথা শুনে শেহনাজ, তাশরিফ, সিয়াম ভাই, রিশাদ, আবিরের সামনে আমি লজ্জায় শেষ।
আমি চোখ ভর্তি পানি নিয়ে হাসছি। আমার পাশে রাতুল। ও আমার পাশে আছে। আমার জন্য থাকবে এটা অনেক বড় পাওয়া।
কিন্ত এটাও সত্য রাতুলকে ছাড়াও আমি এগিয়ে যেতাম একা এবং একাকী।
কারন নিজেকে চিনে গেছি এই পথচলাতে। হারার প্রশ্নই উঠে না।
এক চিলতে আত্নবিশ্বাসের ছায়া এখন গোটা আমিত্ব জুড়ে।

স্টুডিও পুরোটাই সাজানো হয়েছে অসম্ভব সুন্দর করে। থরে থরে স্বপ্নটাও সেজে গেছে বর্নিল প্রত্যাশার মোড়কে।
মিউজিকের সুরেলা আয়োজনে জমে গেছে উৎসবের দিন। আবেগ ঘন দৃশ্য।
আরিয়ান মিনুর হাত ধরে ঘুরে ঘুরে দেখছে।
কিন্ত আমি বুঝতে পারছি না। মিরপুর থেকে রওনা করে আগার গা পর্যন্ত আমি মন খারাপ করে ছিলাম। তারপর কখন গাড়ি ধানমন্ডির কলাবাগানে এলো।
রাতুলকে জিজ্ঞাস করলাম এই কথা। এটা শুনে সে হাসতে হাসতে শেষ।
: ইরা তুমি ঘুমিয়ে পড়েছিলে তারপর আবার গাড়ি ঘুরিয়ে টান দিয়েছি।
তাশরিফ হৈ হৈ করে উঠল।
: রাতুল ভাই আপনি তো সেই দেখালেন। ও গড, আমি তো ভয়ই পেয়ে গেছিলাম। ভাবছিলাম আপনাদের মাঝে না আবার কাটাকাটি হয়ে যায়।
রাতুল তাশরিফের সাথে হ্যান্ডশেক করল।
: উহু, কাটাকাটি যদি হতো তবে আপনাকে আসামী করে ফাসিয়ে দিতাম তাশরিফ।

আমি লজ্জা পাচ্ছি এই মুহুর্তে। রাতুলেরে দিকে চোখ পড়ল। মানুষটার এত সহযোগিতা সত্যি আজ ভীষন দরকার ছিল।
ডীপ ব্লু রঙের শার্টে রাতুলকে নজরকাড়া লাগছে। সবসময় লাগে তবে আজ মনে হয় বেশী সুন্দর লাগছে। চোখ ফেরানো দায়।
ভালবাসাগুলো কি এমনই কেবল ভাসিয়ে নেয়।
বিশাল রুমের এককোনায় আমি বসে আছি। সবাই মুল স্টেজের কাছে। পুরো অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়ে। একটু পর রেকর্ডিং এর কাজ শুরু হবে।
আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
অপেক্ষা করছি স্বপ্নটা ছুঁয়ে দেবো বলে।

চেনা পারফিউমের ঘ্রানে শরীর কেঁপে উঠল। রাতুল আমার পাশে বসা।
: এটাই তোমার সেলিব্রেশান?
রাতুল মুচকি হাসল। পাগল করা হাসি। কতদিন পর দেখলাম এই হাসিটা।
: আরো বাকী আছে।
আমি বিস্মিত হয়ে যাচ্ছি।
: মানে?
: আজ রাতের জন্য সব তোলা আছে।
রাতুলের চোখে তীব্র আকুতি। আমি তা পড়ে ফেলেছি। আজ সব দ্বিধার দেয়াল ভেঙে আমি রাতুলকে কাছে টানব। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে আমার কপালে। লাল আবির রঙে ভালবাসা ফুটবে বলে।
আমি হাতের মুঠোয় স্পর্শ পাচ্ছি ওর আকুতির।
না বলা কথার।
এটাই সত্য! তবে এতটা অপেক্ষার পর যে বৃষ্টি নামবে কখনো তা।ভাবিনি।

বিঃদ্র- ইরার কথা গল্পটি আজকে শেষ করে দিলাম। গল্পটার কাহিনী নতুন নয়। একজন ইরা হাজারো ইরার প্রতিচ্ছবি। এটা আমাদের চারপাশের অনেকের জীবনের সাথে ঘটে যাওয়া,, ঘটতে থাকা গল্পের অনেক খানি। আমরা মেয়েরা মূলত কঠিন বাস্তবের সাথে মানিয়ে চলি। এটার আরেক নাম যুদ্ধই বলা যায়।
আমরা কৌশল পরিবর্তন করি বুদ্ধি খাটাই আর কখনও মনের ঝাল মেটাতে মুখের ভাষাও ব্যবহার করি। কারন যুদ্ধের মাঠে সব সময় পরাজয় মেনে নিতে ভালো লাগে না।
তবে হেরে যাবার ট্র্যাডিশন মেয়েদের জীবনে নতুন নয়। মেয়েরা সয়ে যায় বিধায় মানিয়ে নেবার নিয়ম কেবল তার উপরেই এসে পড়ে।
কিন্ত আমরা মানুষ। এটাই সবচেয়ে বড় পরিচয়,,তাই আত্নসন্মান বলি আর নিজের ইগো বলি মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাইবার ইচ্ছা বা জেদ অথবা অভিপ্রায় মেয়েদের মাঝে জায়গা করে নিয়েছে।
আমি সত্যিই অনেক সন্মানিত বোধ করি যখন দেখি একজন মেয়ে, একজন নারী ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে তার যোগ্যতা দিয়ে। আর এটা একটা মেসেজ। আমাদের এই পচে যাওয়া সমাজের জন্য।
কারন যুগ যুগ ধরে এই সমাজ মেয়েদের জন্য অনিয়মের সিঁড়ি বানিয়েছে যাতে এরা মাথা হেট করে বাঁচে, , কিন্ত সময় তো বদলায়। তাই মনের ঘরে বসত করা শক্তির পাহাড়ও একসময় বাধা ভেঙে ফেলে।
পুরুষরা আমাদের অধিশ্বর। আমরাই তাদের মাথা তুলে নিয়েছি। তাদের স্থান দিয়েছি সবার উপরে। এটা ভুল নাকি শুদ্ধ সুপ্রিয় পাঠক আপনারাই যাচাই করবেন।
আমি মনে করি পুরুষ নারীদের পাশে থাকবে।
ভালবাসার মানুষ হয়ে,,পরাক্রম শক্তিশালী হয়ে দমিয়ে রাখার জন্য নয়,
আমরা মেয়েরা সব পারি। সবচেয়ে বড় বিষয় আমরা মেয়েরাই এই সভ্যতা, এই পৃথিবীটা টিকিয়ে রেখেছি বংশ রক্ষা করে। এত বড় ক্ষমতা যাদের সেই নারীকে সন্মান দিতে পুরুষরা বাধ্য,
পুরুষরা স্বীকার করবে যে মেয়েদের ছাড়া তারা অসহায়,
ভালবাসুক নিঃস্বার্থ ভাবে,,পাশে থাকুক সর্বোচ্চ সহযোগিতায়,,তবেই না বাঁচবে সংসার,,সমাজ আর পৃথিবী,
অনেক গুলো কথা বলতে ইচ্ছে হল, বললামও, কারন আমার ভালবাসার পাঠকদের জন্য আমার ছোট ছোট কথাগুলো রইল আমার স্মরণীয় লেখাটির জন্য,,
সব লেখাই স্মরণীয় কারন প্রতিটা লেখার পেছনে আপনাদের অকুণ্ঠ সাপোর্ট না থাকলে হয়তো কিছুই লেখা হত না,
আপনারা আছেন তাই আমি লিখতে পেরেছি,,
তবে প্রতিটা পর্বের পর আমি দু তিনদিন সময় নিয়েছি, কারন একটা পর্বের জন্য অনেক প্ল্যান থাকে,,সেটাকে সাজিয়ে এনে মনের মত করে উপস্থাপন করা অনেক কঠিন কাজ,
আপনারা হয়তো জানেন,,তবুও বলি প্রচুর সময় নিয়ে লেখা টাইপিং এবং শেষে এডিট করে তারপর পোস্ট করি।
এতগুলো ধাপ পেরুনো সহজ নয়,,
অনেকটা সময় ব্যয় হয়,
আমি ব্যক্তি একজন মানুষও,,আমারও নিয়মমাফিক জীবন আছে,,অন্যান্য কার্যক্রম আছে,, সব সামাল দিয়ে চলতে হয়,,এটাই বাস্তবতা,
আশা করি প্রিয় পাঠক আপনারা আমাকে বুঝবেন,,
আমার ঐকান্তিক চাওয়া আপনাদের জন্য সুন্দর পজিটিভ লেখা।তুলে ধরা।
আমি সেই কাজটাই করব,,কেবল আপনারা পাশে থাকবেন এমন ভালবাসা নিয়ে,
খুব খুব মিস করবো আপনাদের অসাধারন কমেন্টস,,যারা কঠোর ভাবে সমালোচনা করেছেন তাদেরও অনেক শুভ কামনা কারন আপনারা আমার ভুল ধরিয়ে না দিলে আমিই বা বুঝবো কি করে কি চাওয়া আপনাদের ভেতরে আছে,,

আবারও অপেক্ষা আগামীতে আরো সুন্দর কোন গল্প নিয়ে হাজির হবো,,
আপনারা পাশে থাকবেন,,,,এটুকুই চাওয়া,,

…… তামান্না হাসান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here