গল্প – ইরার কথা
পর্ব – ৩
উত্তরায় এসে গাড়ি থামলো। আমরা ইন্দিরা রোড থেকে কোন জ্যাম ছাড়াই চল্লিশ মিনিটের মধ্যে সিয়াম ভাইয়ের বাসায় চলে এলাম। সিয়াম ভাই আর শেহনাজ ভাবী চমৎকার মানুষ। বন্ধুবৎসল। হাসিখুশী স্বভাবের। কারনে অকারনে সবাইকে একত্র করে। ধুমসে খাওয়া চলে। সাথে গান বাদ্য আড্ডার পাঁচমিশালি ব্যবস্থা থাকে। বেশ লাগে তখন। সিয়াম ভাই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার আর ভাবী ডাক্তার। গত চার বছরে তার সাথে বেশ আত্নিক একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। শেহনাজ ভাবী মানুষ হিসাবে ভালো মনের। আরিয়ানকে খুব আদর করে। আমিও তাকে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে কল দেই, খোঁজ খবর করি।
বেশ মিষ্টি মধুর সম্পর্ক।
“ওয়েলকাম টু গেট টুগেদার ” লেখাটা জ্বলজ্বল করছে মূল দরজার পাশে।
চমৎকার মিউজিকের সাথে অতিথিদের উষ্ণ অভ্যর্থনায় জমে গেছে পার্টি। অসংখ্য হাসিমুখ চারদিকে। আমি আরিয়ানের হাত ধরে সিয়াম ভাইয়ের বাসায় পা রাখি। কালারফুল আয়োজন।
মিষ্টি রিনরিনে কন্ঠে শেহনাজ ভাবী অতিথিকে স্বাগত জানাচ্ছেন। দুর থেকে তাকে এক নজর দেখে মুগ্ধ হলাম। অসম্ভব মার্জিত একজন মানুষ। কথা বলায় চলনেও। হালকা পিংক কালারের জামদানী শাড়িতে অসাধারন লাগছে তাকে।
আমাকে জড়িয়ে ধরল হাসিমুখে।
” হাই ইরা ওয়েলকাম মাই হোম ”
” গ্রেটফুল টু ইউ শেহনাজ “।
মিষ্টি হাসিটা ছড়িয়ে দিতে এক মিনিটও ভাবলাম না আমি।
শেহনাজের মুগ্ধতা চোখে মুখে।
: ওহ! ইউ আর লুকিং সো বিউটিফুল ইরা।
এ্যান্ড আই এ্যাম রিয়েলি সারপ্রাইজড।
ঠোঁটের কোনায় হাসিটুকু আরো বিস্তৃত হয়। কিছুটা লজ্জা কিছুটা আহ্লাদে।
আমি আহ্লাদিত হচ্ছি, কারন আমার ভালো লাগছে।
আমার ইচ্ছা করছে এই মুুহুর্তে পুরো অনুষ্ঠানটা এনজয় করি। পজিটিভ ভাবনাগুলো সবার সাথে শেয়ার করি। ভালো লাগাগুলো মেলে ধরি।
: ধন্যবাদ শেহনাজ। চলো আমরা সবার সাথে জয়েন করি।
: ওহ, শিওর।
আমরা হাঁটতে হাঁটতে হল রুমে চলে এলাম।
দোতলায় প্রোগ্রাম চলছে। পুরো ফ্লোর জুড়ে আয়োজন করা হয়েছে। এক পাশে স্টেজ করা। ডেকোরেশন অসাধারন। নজরকাড়া। মিউজিক চলছে। দারুন মূর্ছনায়।
আরিয়ান হাত টেনে আদর করে শেহনাজ্কে।
: সুইট বেবী কেমন আছো?
স্মার্টলি কথা বলছে আরিয়ান। আমার ভালো লাগল ছেলেটা বড় হয়ে যাচ্ছে এই বয়সেই।
: ভালো আন্টি।
আমার পাশে মিনু আছে। তার সরল চাহনিতে অপার বিস্ময়। এমন জগতে সে নতুন বোঝাই যায়। কারন তার তৃপ্তির চোখে অদেখার বিস্ময় তাই বলছে। তারও মন আছে। সেই মনে নতুন কিছু দেখবার, চাইবার অদম্য স্পৃহা আমায় বলতো অনেক কিছু।
: কিরে কেমন লাগছে তোর?
: আফা কত্তো সোন্দর লাগে সব।
হাজার রঙের ঝিলিক মিনুর চোখে।
শেহনাজ একে একে আগত অতিথিদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।।
এদের মধ্যে শায়লা, অহনা রাইমা, পূর্না একটা বড়সড় দল।
পুরানো ভাবীদের অনেকের সাথে কথা হলো।
তাওসিফ, সাবাব, ইফতি, নাহিদ ভাই এরাও পুরানো।আমাকে দেখে হাই হ্যালো করল। কেউ কেউ মুচকি হেসে নানা ধরনের কথাও বললো।
: ভাবী এতো সুন্দর হয়ে যাচ্ছেন কেমনে?
নাতাশা পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে কথাটা বলতেই আমার চোখ পড়ল সিয়াম ভাইয়ের উপর। সে আরিয়ানকে কি আদর করে চকোলেট খাইয়ে দিচ্ছে। মানুষটা খুব হেল্পফুল। বাচ্চাদের ভীষন আদর করে। কিন্ত তার নিজের একটা ছেলেমেয়ে নাই। গত পাঁচ বছরে কতটা যে কষ্ট চেপে আছে সেটা আমি জানি। উপরওয়ালার কত ইশারা।
: ওহ নাতাশা কেমন আছো?
রেড কালারের টিসু শাড়িতে ওকে একদম পরীর মত লাগছে। মাঝারি উচ্চতার মানুষ সে। তাই উঁচু হিল পড়েছে।
: ভালো আছি, তবে আপনাকে আজ তো চেনাই যাচ্ছে না ভাবী?
: ওহ, তাই?
: হুম, একেবারে বলিউড স্টার। রাতুল ভাই কি আসেননি ভাবী?
নাতাশার কথার উত্তর দেবার আগে চারপাশে চোখটা আরেকবার বুলিয়ে নেই। আমি এখানে আসা অবদি রাতুলকে দেখিনি। এমনকি একটা ফোন পর্যন্ত দেইনি আমাকে। ক্ষোভটা চেপে রাখলাম।
: আসবে, হয়তো জ্যামে।
নাতাশা খটখট আওয়াজ তুলে চলে যায়।
পুরো অনুষ্ঠান জমে গেছে। অতিথিরা সবাই গল্পগুজবে ব্যস্ত। ওয়েটার এসে সবাইকে ড্রিংকস সার্ভ করছে। খাবারের আয়োজন বুফেতে করা। সবাই সবার মত খাবার সংগ্রহে ব্যস্ত।
স্টেজে পারফর্ম হচ্ছে গান। শুরুটা শেহনাজ ভাবী করল। মাইক্রোফোন হাতে আগত অতিথিদের স্বাগত
জানালো। মুখরিত হল প্রাঙ্গণ। আলাপচারিতায় মশগুল এক ভাবী শেহনাজের দোষগুন নিয়ে কথা বলছে। হালকা পাতলা কানে এলো। কেমন শাড়ি পড়েছে। ওমন শরীরে মানাচ্ছে না শাড়িটা। আগের চেয়ে রোগা কেন হলো। মুখে মলিনতা কেন। তারপর সিয়াম ভাই অত দুরে দুরে কেন।
নীল কাতান পড়া সায়মা রশিদ হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে।
: আরে বুঝেন না? এতদিন বিয়ে হইছে তবুও বাচ্চা কাচ্চা হয় না এটা কি ভালো লক্ষন?
: হুম, ঠিকই বলছেন ভাবী পুরুষ মানুষ কয়দিন আর ঘরে আটকে থাকবে। দেখেন গিয়া সিয়াম ভাই এখন ভাবীর দিকে নজর নাই তাইতো রূপ লাবন্য কমতে কমতে তো তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
অতসী, লিমা সায়রা এরা মুখ টিপে হাসতে থাকল।
: শোনেন ভাবী নিজে ডাক্তার হোক আর ব্যারিস্টার হোক মেয়ে মানুষের দাম ঐ বাচ্চা সংসার পর্যন্তই। আপনার সার্টিফিকেট দিয়া কি সুখ কেনা যাবে?
: ভাবী এইজন্য বুঝছেন মেয়েদের চাকরী করা আমার পছন্দ না, নইলে এই আমি ঘরে বসে থাকি?
কবেই চাকরীতে চলে যেতাম, আগে সংসার তারপর বাইরের জগত।
ভাবী একটা সত্যি কথা বলি, যেসব মেয়েরা বাইরে কাজ করে ওসব মেয়েরা ঘরবন্দী থাকতে পারেনা, কতদিকে নজর যায়। তখন ঘরের জামাইকেও নিরামিষ লাগে।
হিহি হি হাসির রোল। একজন আরেকজনের উপর গড়িয়ে পড়ছে। মনে হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখকর রাজ্যে এরা বসবাস করে।
গোলমেলে আলোচনা। আমি চেয়ার ছেড়ে উঠলাম না। শুনছি। আরো কিছু নোংরা কথা হবে। তাও শুনবো।
কম বয়সী একটা মেয়ে মোবাইল নিয়ে ছুটে এলো এই দলটার কাছে।
মুখে অদ্ভুত ভঙ্গি মেয়েটার। পরনে জিন্স আর ফতুয়া।
: আন্টি প্লিজ জয়েন করুন। সবার একটা সেলফি নিবো
নীল কাতান, মেরুন সিল্ক, লিমা, সায়রা এরা সবাই ফ্যান্টাসি টাইপের পোজ দিচ্ছে।ক্লিক ক্লিক,
বাটনে একের পর এক পিক উঠছে।
একটা পিক তোলার পর হাসির রোল পড়ে যাচ্ছে। একজন আরেকজনকে বলছে ” যাই বলেন ভাবী আপনার পিকটা বেশী ভালো হবে আমার থেকে, আপনার ফিগার এখনও পুরাই হট। ” আর আমাকে দেখেন কত রিংকেলস পড়ে গেছে চেহারায় “।
পাশ থেকে অতসী খোঁচা মারে লিমাকে।
: কে বললো আপনার মুখে রিংকেলস আছে। মেকআপটা না হেব্বি হইছে। এ্যাই ভাবী আপনি কি কনসিলার দিয়ে স্পট কাভার করছেন নাকি ক্যারেক্টার ইউস করেন?
রিংকেলস পড়া মহিলা হেসেই কুটিকুটি।
: নাতো, আমি ঐসব ক্যারেক্টার ফ্যারেক্টার ইউজ করি না। সামান্য কনসিলার দিয়ে শেষ। তবে ভাবী আপনার ভাই আমার মেকআপ আইটেম সব বাইরে থেকে আনিয়ে দেয়। আমি ঐ রেপ্লিকা আবার পছন্দ করি না। মুখে রেশ, ব্রন ভরে যায়। সবার কি সবকিছু এডজাস্ট হয়?
ব্র্যান্ড বুঝলেন ভাবী ব্র্যান্ডের জিনিস ছাড়া আমার চলেই না।
ব্র্যান্ড পিস সবার মাঝ থেকে শাড়ির আঁচল উড়িয়ে হেঁটে যাচ্ছে। পেছন থেকে বাকীরা গুনগুন সুরে হাজার কথা বলছে।
: উফ! কি মিথ্যা বলে ঐ ভাবীটা। ছিঃ ছিঃ আমি নিজের চোখে দেখছি লোকাল জিনিস কিনতে। আর এখন কি দাপট দেখাচ্ছে।
সেলফি তোলা মেয়েটা মর্ডান সব কায়দায় নিজের অনেকগুলা পিক তুললো।
পাশ থেকে কেউ মেয়েটার সমালোচনা করছে।
: এ্যাই ভাবী এটা সায়মা ভাবীর মেয়ে না?
: হুম।
: ইশ! কি বেহায়াপনা চলাফেরায় দেখছেন?
এই মেয়ের বিয়ে দেয়া কঠিন হয়ে যাবে দেখবেন?
: আরে বাদ দেন বিয়া, এসব মেয়েদের বিয়ে লাগে নাকি, দেখেন গিয়া কত কি করে বসে আছে?
: ঠিকই বলছেন ভাবী এই যুগের মেয়েগুলি কি আজব টাইপের এরা বিয়ের ধার ধারে?
কত ছেলেদের সাথে ইটিশ পিটিশ করে বেড়ায়।
তবে আমার মেয়েকে আমি কড়া পাহারায় বড় করবো।
অস্থির মাথার সংলাপ। তবে আমার মাথা ঠিক আছে। ভাবছি এদের বোধশক্তি কোন তলানিতে গিয়ে পড়ছে আল্লাহ জানেন। এদের সর্বনাশা আলোচনা বিপথে আনছে পাশের মানুষটাকে। আলোচনাগুলো কোনই কাজে আসবে না কারোর জন্য। অথচ এগুলোতে জয়েন করার জন্য মহিলারা মুখিয়ে থাকে।অন্যের দোষ অন্যের নিন্দায় এদের কলিজায় সাময়িক সুখ আসে কারন এরা নিজেরা অসুখী বলে অন্যের ভালোটা সহ্য করতে পারে না।
কতটা সময় এরা নষ্ট করে এমন ধ্বংসাত্নক কাজে অথচ চাইলেই এই সময়টা কাজে লাগাতে পারে।
একজনের ভালোটা দেখে নিজেকে উৎসাহিত করতে পারে। অন্যকেও করতে পারে। এটাই হোক না।
আরে প্রতিযোগিতা করুক না কে কার চেয়ে কতটা ভালো হতে পারে। এতে করে সমাজে এর একটা বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।
বদলে যেতে পারতো সব। কিন্ত হচ্ছে উল্টোটা। অসুস্থ প্রতিযোগিতার পাল্লায় পড়ে নোংরা চিন্তা খেয়ে ফেললো পুরো দেশটাকে।
পরের সুখে কাতর কেন হয় এরা, এর পরিবর্তে নিজের সুখটা তৈরী করুক না। নিজেকে ইতিবাচক কাজে জড়িয়ে ফেলুক। ভাবনাটা বদলাক না।
আমি বুঝি না এত হীন কাজগুলো মহিলারা কেন করতে ভালবাসে। এদের মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাগুলো এত সংকীর্ণ কেমনে হয়। একজনের পেছনে নোংরা কথাগুলো না বললে এদের ঘুমটাই মাটি হয়। তাই তো দেখছি।
আমি চেয়ার ছেড়ে উঠলাম। আরিয়ানকে একটু দেখে আসি।
পেছন থেকে একজন চেচিয়ে ডাকলো।
: এ্যাই ভাবী?
মিষ্টি করে হাসিটা দিয়েছি। ওমনি লিমা হৈ হৈ করে ছুটে আসে। আমি একটু বিব্রত হলাম ওমন ছুটে আসায়। বিষয়টা অপ্রস্তত হবার মত।
: এ্যাই আপনি ইরা ভাবী না?
: হুম, কেন?
পাশের জন আমতা আমতা করছে।
: না, মানে হইছে কি আপনাকে কেমন জানি অন্যরকম লাগছে?
আমার জেদ চেপে গেছে। এরা এখন আমাকে খুচিয়ে কিছু বলবে মনে হয়।।
: কেমন ভাবী, মানে খুব বিশ্রী?
আমি বোকা বোকা ভাব করছি। এদের জন্য অনেককিছু করা লাগে।
দলগুলোর মাঝে একে অন্যের দিকে তাকাতাকি করল। এরা দলবদ্ধ বুঝতে পারলাম। আমিও রেডী পাল্টা জবাব দিতে।
: আরে বিশ্রী কেন হবে আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে বুঝছেন?
আমি হেসে ফেলি।
এরা পারেও। সামনে তেল দিবে আর পেছনে বাজে বলবে।
: তাই?
: হুম, মনে হয় রাতুল ভাই আপনাকে ইদানীং বেশী আদর করে।
বাড়তি কথা। নিচু টাইপের চিন্তা এদের। রাগ হচ্ছে খুব। কিন্ত এড়িয়ে গেলাম।
তবে
থ্যাংকস।
ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পা বাড়িয়েছি। কানে ভেসে এলো কতগুলো নোংরা কথা।
” এ্যাই গতবার উনাকে দেখছিলাম যখন কি একটা নরমাল ড্রেস পড়ে এসেছিল মনে আছে? আর এখন দেখছেন কি চেঞ্জ হয়ে গেছে। সাজ পোশাকে আমুল বদলে গেছে।
আরেকজন হাসতে হাসতে বলছে।
” যান খোজ নিলেই বুঝবেন কোথায় কার সাথে নতুন করে রঙ তামাশা করছে কিনা, নইলে এত রঙ কোথা থেকে আসবে “।
অসহ্য। এত বাজে কেন এরা। ইচ্ছে করছে এদের পায়ে দলে ফেলি।
রাতুল এসেছে। দুর থেকে দেখেছি। সবার মাঝে আড্ডায় মজে গেছে। আশ্চর্য লোকটা এসে অবদি একটা খোঁজ নিলো না আমার। মন খারাপ হবার মত বিষয়। কিন্ত আমি নিজেকে স্বাভাবিক রাখলাম।
সিয়াম ভাই রাফসান ভাই আর নিলয়কে সাথে নিয়ে রাতুল চেয়ার টেনে বসেছে। প্রচুর অতিথি এসেছে। স্টেজ পারফর্ম চলছে। একটা ছেলে আবৃত্তি করছে। বছর দশ হবে। কি শুদ্ধ উচ্চারন। শ্রুতিমধুর। আবৃত্তি শেষ হলো। উপস্থিত সকলে হাততালি দিচ্ছে।
আমি চট করে বাচ্চাদের কর্নার থেকে ঘুরে এলাম। কর্নারে প্রচুর খেলনা আর চকলেট।
ওখানে আরিয়ান খেলছে। সাথে অনেক বাচ্চারা আছে। আমাকে দেখে ছুটে এলো আরিয়ান। সাথে মিনু বসে আছে।
: মা বাবা কোথায়?
: আছে, যাবে তুমি বাবার কাছে?
আরিয়ান মাথা নেড়ে না করল। আমি মিনুকে কাছে থাকতে বললাম।
স্টেজে শেহনাজ ভাবী আছে। ব্যাকগ্রাউন্ডে সুন্দর মিউজিক। মন ভালো হচ্ছে আমার। আমি বসেছি স্টেজের একদম সামনের সারিতে।
মাইক্রোফোন হাতে শেহনাজ ভাবী চমৎকার একটি গান করলেন। মুগ্ধ হয়ে শুনলাম। গান শেষে সবার আনন্দিত উচ্ছাস। সিয়াম ভাইকে দেখলাম শেহনাজ ভাবীকে এক হাতে ধরে সবার সামনে উইশ করলেন। বাহ চমৎকার দৃশ্য। সমঝোতার এমন দিন যেন সবার জীবনে একটু হলেও আসে।
” ভালবাসার দিনগুলি বারবার আসুক, আসছেন আরেকজন ভালবাসার মানুষ ইরা তাবাসসুম ”
শেহনাজ ভাবীর হাতে মাইক্রোফোন। গমগমে হল রুমে মুহুর্তে হাততালি। আমি কিছুট অপ্রস্তুত হলেও সিট ছেড়ে সোজা স্টেজে উঠে যাই। অসাধারন মুহুর্ত। অনেকদিন পর। অনেক বছর পর এমন করে দাঁড়ালাম। স্টেজ, মিউজিক মাইক্রোফোন আর আমার গান। নীলাভ বাতিগুলো নিভে গেলো। পুরো পরিবেশ মনহরনকারী। নিবু নিবু আলোতে অদ্ভুত সম্মোহন। আমার চিনচিনে ব্যথার দিনগুলো একে একে সামনে দাঁড়াচ্ছে। রাতুল তার নিরব অবহেলা এ্কেকটা রাত আর আমার মিথ্যে অনুভুতি। আমি সয়েছি আমি মেনেছি। ভাবতে শিখে গেছি ফিকে রঙে প্রেম আসে না।
আমি ভুলে গেছি সেই কথা যা আমাকে একটু একটু করে পিষে ফেলছিল।
নিবু নিবু আলোতে আমি স্পষ্ট দেখলাম রাতুল অবাক চোখে আমাকে দেখছে। ওর চোখের ভাষায় প্রেম খোঁজা এই আমি নতুন করে প্রেম জাগাতে চাই আমার গানের সুরে।
মিউজিক অন হয়। আমি সুরের টানে গেয়ে উঠি।
” তুই ফেলে এসেছিস কারে, মন মন রে আমার”
পুরো হল রুমে পিনপতন নিরবতা। কেবল সুরের দোলায় আমি গেয়ে চলেছি।
ফ্লাশ লাইটের আলোতে ক্লিক ক্লিক ছবি তুলছে কেউ। শেহনাজ ভাবীর সাথে আরিয়ান হা করে আমার গান শুনছে। আমার হাসি হাসি মুখে একটা আস্থা একটা আত্নবিশ্বাস ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছে। আমি গাইবো, এখন থেকে গাইবো। নিজের জন্য গাইবো।
রাতুলের আইফোন 12 এ ভিডিও চলছে। ফ্লাশ লাইটের আলোয় কয়েক সেকেন্ড ওর মুখটা দেখলাম। কেমন বিরক্তিমাখা একটা মুখ।
আমার খারাপ লাগল না। একটুও না,,,
বি:দ্র- আমার ভালবাসার সব পাঠকরা যদি চান তবে আরো লিখবো। মন খুলে লিখবো।
কেন জানি আরো লিখতে ইচ্ছে করছে।
অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করছে।
কারন ভালবাসাটা অত সহজে হারতে জানে না, মনের অদম্য শক্তিটা বারবার নিজের কাছে হারতেও চায় না।
আমি পারি, আমি পারবো, আমায় পারতে হবে,,এটুকু আত্নবিশ্বাস চলুন না সব অর্জন করি।
” চলবে ” লিখতে ভুলে যাবো বারবার।
কারন আমার ভালবাসার পাঠকরা আমায় যেন মনে করিয়ে দেয় ” চলবে ” ❤️❤️❤️❤️❤️
….. তামান্না হাসান