গল্প – ইরার কথা
পর্ব – ৪
গান শেষ হতেই স্টেজের আলো জ্বলে উঠল। ক্যামেরার শাটার পড়ছে একের পর এক। অসংখ্য হাসিমুখ আমার সামনে। শেহনাজ ভাবী স্টেজে এসে জড়িয়ে ধরলেন আমায়। আমার পৃথিবীতে তখন শূন্যতার আকাশ নয় রঙধনুর আকাশটা ভেসে বেড়াচ্ছে। লাল নীল সবুজ অসংখ্য রঙ সেই আকাশে। এরা প্রজাপতির মত উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে।
: ইরা মোস্ট ওয়েলকাম, অনেক ভালো গেয়েছো আজ।
অকুণ্ঠ প্রশংসা।
এদিকে আত্নপ্রত্যয়ী আমি এই অনুভুতির আনন্দে ভেসে যাচ্ছি। ফিরে পাওয়ার বিশাল জগতে প্রাপ্তিটা আমার আমিকে নতুন করে চিনিয়ে দিলো।
: থ্যাংকস শেহনাজ।
এটুকু বলে চোখ পড়ল রাতুলের দিকে। ও এগিয়ে আসছে আমার দিকে। আমি স্টেজ থেকে নেমে আসি। ওর বিরক্তিকর মুখে এখন হালকা হাসির চিকন রেখা। মনে মনে বললাম বাহ, গ্রেট পার্সন। কিন্ত মুখে সেটা প্রকাশ করলাম না। কাছে এসে আমার হাতটা ছুঁয়ে ওয়েলকাম করল। কমার্শিয়াল আচরন আর কি মনে হলো আমি ওর অফিসের কলিগ। আমার উন্নতিতে উইশ করছে। মাপা কথায় । অনুভুতিটাও দাঁড়ি কমায় নির্ধারন করা। আমার হাসি পেলো। কিন্ত নিজেকে সংবরন করি।
: তোমায় ভালো লাগছে দেখতে। শাড়ি তো একদমই পড়ো না।
প্রশংসার সাথে খোঁচার কাঁটাও। এটা।কি ঈর্ষা। নাকি অন্যকিছু।
সুক্ষভাবে খোঁচাটা আমি হালকা হাসিতে সেটা উড়িয়ে দিলাম।
: এখন থেকে পড়বো, সব সময় পড়বো।
কঠিন খোঁচা । ও বুঝেছে এবং হজমও করে ফেলেছে। সামাজিকতায় কঠিন কথাও সহজ করে নিতে হয়। ভালো না লাগলেও হাসতে হয়। সবার মাঝে অসহ্যকে সহ্য করতে হয়।
মিউজিক আবার অন হলো। স্টেজ পারফর্মিং দিয়ে । টুংটাং বাজছে গিটার।
তারপর চমৎকার একটা গানের লিরিকস কানে বাজল। কি মিষ্টি গলা। চোখ ফিরিয়ে দেখি শেহনাজ ভাবী। ভাবী এর মধ্যে শাড়িও বদলে ফেলেছে। বাহ! দারুন তো। পিংক কালারের জায়গায় পার্পল জর্জেটের শাড়ি। পাড় আচঁলে গর্জিয়াস কাজ করা।
মুহুর্তে পার্টি জমে গেলো আরেক ধাপ। গানের সুরে একদল নাচ করছে তালে তালে। স্টেজের আলোর রঙে রঙিন হয়ে গেছে চারপাশ। সুরের মুর্ছনায় আনন্দ দুলে দুলে উঠে।
দেখলাম আরিয়ান ছুটে আসছে। ওর চেহারা খুব উৎফুল্ল। রাতুলের হাতটা ছাড়িয়ে আমাকে টেনে ধরল। আমিও আদর করে ছেলেকে জড়িয়ে ধরলাম।
আরিয়ান উত্তেজনায় ছটফট করছে।
: মা, তুমি তো অনেক সুন্দর গান করেছো।
ওর চোখের ভাষায় থরো থরো ভালবাসা। সবই আমার জন্য।
: তাই, আমি তো জানি না।
: হুম, খুব ভালো গেয়েছো।
চোখ ভিজে আসে এমন মুহুর্তে।
নাতাশা খটখট হিলের আওয়াজ তুলে আমাকে উইশ করে গেলো।
: ইরা তুমি কিন্ত দারুন গেয়েছো, চর্চা করবা বুঝছো?
: হুম করবো।
হাসতে হাসতে বললাম।
নাতাশার হাতে ফোন। ক্যামেরা অন করা।
: ইরা চলো একটা পিক নিই। রাতুল ভাই আপনিও আসুন।
রাতুল আমি আরিয়ান নাতাশার সাথে পিক তুলি। হাসি হাসি মুখে। সুখী সুখী চেহারা নিয়ে। এই সুখী চেহারা দেখে মানুষজন বলবে ” বিউটিফুল ফ্যামিলি “। কেউ কেউ বলবে পারফেক্ট জুটি। সোশ্যাল মিডিয়ায় যখন এটা আপলোড হবে লাইক কমেন্টে ভরে যাবে।
মানুষের সুন্দর সুন্দর কমেন্টে মন ভালো হয়ে যাবে। কেউবা আবার ঈর্ষান্বিত হবে।
কারো দীর্ঘশ্বাস পড়বে অজান্তে।
মুখ ফুটে কেউ বলবে ” ইশ কি সুন্দর সংসার”।
কিন্ত বাস্তবটা কত ভিন্ন। কতটা ফারাক এই পিক আর বাস্তবে। সংসার জীবনে শত দুঃখগুলো লুকিয়ে আমরা কত সুন্দর অভিনয় করে যাই।
কাউকে বুঝতেই দেই না চরম সত্যটা কি। কতটা মিথ্যে এই সংসার জীবনের ভালবাসার অভিনয়। কেউ জানেই না কতটা দূরত্বকে আড়াল করে আমরা মেয়েরা মিথ্যে কাছে আসার, মিথ্যে ভালবাসার অভিনয় করি।
: এ্যাই শোনো না নেক্সট আমার বাসায় প্রোগ্রাম হবে। তুমি কিন্ত গান করবা, সেভাবেই প্রিপারেশান নিও।
কথাটা শুনে ঠোঁটের কোনে হাসিটা জ্বলজ্বল করে। আড়চোখে রাতুলকে দেখি। কেমন বিবর্ন ম্লান দেখাচ্ছে। চোখে চোখ পড়তেই মুখ ঘুরিয়ে ফেলে। ভয়ংকর বিব্রত হবার অবস্থা।
: ঠিক আছে নাতাশা, একদিন বাসায় আসো না তুমি?
: ওহ! ইরা তুমি যদি জানতে কতটা বিজি থাকতে হয় পুরো সাতদিন তাহলে বলতে নাতাশা একটু ঘুমিয়ে নাও।
এটা শুনে আমরা দুজন একসাথে হেসে উঠি।
: আহা এটা খুব দুঃখজনক।
রাতুল হাই করল নাতাশাকে।
ঝকঝকে চেহারায় কেমন সপ্রতিভ ভাব রাতুলের।
নাতাশা হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে।
: রাতুল ভাই একদিন অফিসে আসুন না , এক কাপ কফি খাবেন।
রাতুল অতি ভদ্রতায় রাজী হল। নাতাশার অফিস পান্থপথে। একটা এডফার্মে আছে ও। গ্রাফিক্স ডিজাইনার।
: আসবো নাতাশা। আপনি এত গুনী মানুষ। যাবো একদিন অফিসটা দেখতে।
নাতাশা চোখ নাচিয়ে আমার হাতটা ধরে।
: ইরা কিন্ত ভীষন গুনী মানুষ রাতুল ভাই। গুন সবার থাকে না। আমরা যে কাজ করি সেটা পড়াশনার গুনে সম্ভব হয়েছে। এটা সবাই পারবে। এটা হলো ধার করা গুন। কিন্ত ইরার মাঝে আছে গড গিফটেড গুন। এটা সবাই পায় না। ধার করা গুন আর গড গিফটেড গুন এক নয়।
রাতুলের অতি খুশী হওয়া মুখে হাসি মিলিয়ে গেছে।
: ওকে ডিয়ার ইরা, আবার দেখা হবে।
নাতাশা বিদায় নিয়ে চলে গেলো।।
পাশ ফিরতেই দেখি সিয়াম ভাই। খুব চৌকস লাগছে দেখতে। দারুন একজন মানুষ। অসম্ভব হাসিখুশী। চঞ্চল ধরনের। এক জায়গায় বেশীক্ষন থাকতে পারে না। ছোটাছুটি করে।
: হ্যালো ভাবী এত সুন্দর গান করতেন আর আমরা জানলাম এত বছর পর?
আমি মুচকি হেসে কথা ঘুরিয়ে দিই। কিন্ত সিয়াম ভাই নাছোড় লোক। সে চেপে ধরেছে রাতুলকে। বকাঝকা করল। ননস্টপ।
: রাতুল তুই ব্যাটা খুব খারাপ লোক, এমন প্রতিভাকে লুকিয়ে রাখছিস?
রাতুল পুরাই অপ্রস্তত। উত্তর দেবার সুযোগ নাই।
সিয়াম ভাইয়ের কথার মাঝে পরে চিড়েচ্যাপটা হচ্ছে।
: আরে ইরা তো এভাবে কখনও বলেনি, তাছাড়া ওর গলা যে এমন সেটা আমিও অতটা বুঝিনি।
সিয়াম চটে গেছে। ওনার ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছে। যতটুকু বুঝলাম ভয়ানক মেজাজি মানুষ।
: তুই শালা আসলেই অপদার্থ। চিনিস তো খালি টাকা। ঐ টাকা টাকা করে আসল জিনিস হারাইয়া ফেলছিস। শালা,
রাতুল হজম করে যাচ্ছে সিয়াম ভাইয়ের ঝাড়ি। ওর বিব্রত মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। একবারে ভেজা বেড়াল হয়ে গেছে। আমার প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে। কানে বাজছে ” অপদার্থ ” শব্দটা।
খুব অপমানজনক শব্দ। আমিও শুনেছি আজ সবার অগোচরে। তখন আমার খারাপ লেগেছিল। এক টুকরো কষ্ট এসে আঘাত করেছিল। আমার সেই কষ্ট কাউকে বলা যায়নি। নিশ্চুপ থেকে আমাকে কাঁদিয়েছে। বাট এটা অন্যায়।
কাউকে মন থেকে আঘাত করা অন্যায়। গুরুতর অন্যায়।
: রাতুল তোর ভাবীর একটা গ্রুপ আছে ওখানে ইরা ভাবীকে বলবি এড হতে। গানের চর্চাটা এতে ভালো করে হবে। শেহনাজকে দেখলি না কি সুন্দর গায়।
রাতুল ঝিমঝামে সায় দিলো সিয়াম ভাইয়ের কথায়।
: ওকে দোস্ত।
কথাটা বলার সময় রাতুলের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো।
; এ্যাই তোরা খেয়েছিস?
আমি হেসে না করলাম
সিয়াম ভাই তাড়া দিচ্ছে খেয়ে ফেলতে। সে চলে যেতেই আমিও বললাম চলো খেয়ে আসি।
এর মধ্যে আরিয়ান রাতুলের দুষ্টমি শুরু হয়ে।যায়। আরিয়ানের নাক টেনে ধরে রাতুল।
: বাবা ছাড়ো তো?
রাতুল হেসে ফেলে। ছেলের সাথে মজা করতে থাকে।ওদের এই মজাটুকু বেশ লাগে দেখতে।
এর ফাঁকে রাতুলকে এক নজর দেখে নিই। ওর স্মার্ট লুক ওর পোশাক সবটাই আলাদা। সবার থেকে। এতটা সচেতন নিজের পোশাক এর বেলায়। কখনও এটা অতিরঞ্জিত লাগে।
আমরা মানুষরা বেশীর ভাগ ভুল চিন্তা করি,
ভুল জিনিস নিয়ে ভাবি। ওতে সময় দেই। কিন্ত এটাই ফাঁপা জিনিস। অহেতুক কিছু।
অথচ সবচেয়ে জরুরী সম্পর্ক ঠিক রাখা।।সময় ও সুযোগে তার যত্ন করা।
সারি সারি সাজানো সব পদ। চিকেন তান্দুরি, ফ্রায়েড রাইস, কাচ্চি, নাগেট, ফ্রেন্স ফ্রাই, বিফ ভুনা। পাশেই রয়েছে ডেজার্ট। জর্দা, পায়েস, সন্দেশ।
বুফের খাওয়ার সুবিধা গুলো আমার পছন্দ। এখানে যাই হোক খাবার নষ্ট হবার কোন সুযোগ নাই।
প্লেট হাতে রাতুল একটা করে আইটেম পাতে নিচ্ছে। ফ্রায়েড রাইস তান্দুরি চিকেন আর ফ্রেন্স ফ্রাই তুলে আরিয়ানকে বসিয়ে দিয়েছে। মিনুও বসেছে তার পাশে। ওর প্লেটে তান্দুরি দেয়া হয়েছে।
: আফা এমুন কালা কেন মুরগী?
আমি আস্তে করে বলি ওটা ওমনই হয়। এখন চুপ করে খা।
: আফা ভাত নাই?
আমি হেসে ফেলি।
: নারে। ভাত টাত এসব জায়গায় হয় না। তোর ভাগ্য খারাপ, এইটাই আজ খেতে হবে।
আমি মজা করে কথাটা বললাম। কিন্ত মিনুর মন খারাপ হল।
এবং মিনু সেই মন খারাপ নিয়ে খাবার খাচ্ছে।
মেরুন সিল্কের শাড়ি, সায়মা ভাবী ব্র্যান্ডের ভাবী, নীল কাতান পড়া ভাবীর দল লাইন ধরেছে। খাবার তুলছে পাতে।
: হায় আল্লাহ রান কই? এ্যাই ওয়েটার এদিকে আসো।
সাদা শার্ট পরা ওয়েটার ছুটে আসে।
: ইয়েস ম্যাম।
নীল শাড়ি পড়া ভাবী চেচিয়ে কথা বলছে।
:এ্যাই চিকেনের রান কই? সব ভালো ভালো পিস শেষ। দাওয়াতে এসে খাবার নাই, এটা কেমন ভদ্রতা,আমার ছেলে রান না হলে খাবে না।
ওয়েটার ছেলেটা রোবটের মত ঘাড় নেড়ে বলছে জ্বি ম্যাম, আমি দেখছি।
এদিকে সায়মা ভাবী ধাক্কা মেরে একজনের প্লেট ফেলে দিয়েছে।
খাবার মেঝেতে পড়ে বিশ্রী অবস্থা হয়েছে।প্লেট ভেঙেছে। একবারে টুকরো টুকরো। আধ খাওয়া খাবার, তেল মশলা ছড়িয়ে পড়ল। সেগুলো পরিস্কার করতে আরো দুজন ছুটে এসেছে।
: মানুষকে ডেকে আনলে তো হবে না, ঠিকমত খাওয়াতে হবে।
ভালো ঝামেলা বাধল। ছোটখাট গন্ডগোল। ওয়েটার ছোটাছুটি করছে। কারন নতুন করে খাবার না আনা হলে এরা খাবে না। সবার মাথা চুড়ান্ত গরম। একজন একটা বললে আরো পাঁচজন এতে বাগাড় দেয়া শুরু করেছে।
এদের মুখরোচক আলাপের মাঝে
আমি নিশ্চিন্তে খাবার নিলাম প্লেটে। চিকেন শেষ প্রায়। ছোট কয়েকটা পিস রয়ে গেছে। ওটাই তুলে নিলাম। পাশ থেকে নীল কাতান পড়া ভাবী ফিসফস করছে।
: আপনি খাবার নিলেন কেন?
: মানে?
: আরে ভালো ভালো পিসগুলো আগে আনুক। ওখান থেকে বেছে নেবেন। খেতে এসে ঠকবেন কেন?
আমার মাথায় এসব ঢুকছে না। ভালো পিস, বড় টুকরা এসবের মানে কি। এরা কি ভদ্রতা সভ্যতাও জানে না। অন্যের বাড়িতে খেতে এসে এমন নোংরামির কোন অর্থ হয়?
এরা কি শিখে এসেছে আর নিজের সন্তানদের কি শেখাবে।
আমাকে চুপ দেখে সে বকবক করেই চলেছে।
: এসব হলো চালাকি বুঝলেন ভাবী?
আমি হুম বলে খাওয়া শুরু করি।
পাশ থেকে আরেকজন ছুটে এল।
: এ্যাই আপনি কি বোকা?
আমি অপ্রস্তত হচ্ছি।
: মানে কি?
: বুঝেননি? ওরা খাবার নিয়ে সব জায়গায় ঝামেলা করে। সিয়াম ভাইয়ের তো খবর নাই। সব দায়িত্ব এদের হাতে দিয়ে রাখছে। আর এরা খাবার লুকিয়ে রাখে। পাচার করে দেয়।
আমি খেতে খেতে কথা বলছি।
:যা খুশী করুক। এসব আমায় জানতে হবে কেন?
আপনারা অপেক্ষা করুন, বাট আমার এতেই চলবে।
নীল শাড়ি পড়া মহিলা মুখ ভেঙচি দিয়ে চলে গেলো।
চিকেনের পিস আনা হয়েছে। বড় বড় এবং ভালো। রানের অভাব নাই। প্রচুর পিস আছে। ওদের দলের মহিলারা প্লেট হাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। বাচ্চাগুলোর পাতে রান দেবার জন্য।
ওদের খুশী খুশী মুখে প্রচুর আত্নতৃপ্তি। অন্যের বাড়ি এসে ষোলআনা উশুল করার সুখ উথলে পড়ছে।
আরিয়ান মিনু খাওয়া শেষে আমার সাথে ফিরে এল। রাতুল চলে গেছে সিয়াম ভাইয়ের সাথে। ওদের দলটা এখন সিগারেট টানবে। আয়েশ করে আড্ডা দেবে। কর্নারে একটা রুম লক করে ওদের ধোঁয়া খাওয়া শুরু হয়েছে।
রাত দশটা বাজে। অনুষ্ঠানের আমেজ ঝিমাতে শুরু করেছে। অতিথিরা অনেকেই চলে গেছে। হৈ হুল্লোড় কম। সমবেত গান দু একটা থেকে থেকে হচ্ছে। গোল গোল হয়ে আড্ডার মাঝে নাতাশার আওয়াজ পেলাম। আরিয়ান কয়েকবার এসে ঘুরে গেছে। রাতুলও সিয়াম ভাইয়ের সাথে চেয়ার পেতে আলাপচারীতায় ব্যস্ত। খুব গম্ভীর ধরনের আলোচনা চলছে। শেহনাজ ভাবীর সাথে খুচরো আলাপের মাঝে এক ছেলে এসে হাজির।
: হ্যালো শেহনাজ আপু।
আমি চোখ ফিরিয়ে দেখে একটু অবাক হলাম। এই ভদ্রলোককে এতক্ষন দেখিনি।
লম্বায় যথেষ্ট শ্যামলা চেহারা এবং খুব মার্জিত ভাব ভঙি।
শেহনাজ তাকিয়ে প্রায় চেচিয়ে উঠে।
: এ্যাই তাশরিফ কেমন আছো তুমি?
তাশরিফ নামের ছেলেটি চমৎকার করে কথা বলছে। শুদ্ধ উচ্চারন পরিস্কার স্পষ্ট কথা।
: জ্বি আপু ভালো।
শেহনাজ খুব আনন্দ নিয়ে কথা বলছে। মনে হল এই ভদ্রলোক তার অনেক কাছের এবং প্রিয় একজন।
: আমি অনেকক্ষন হয় এসেছি এবং আপনাদের গানও শুনলাম।
: ওহ, তাই?
: হুম।
আমি মাঝখান থেকে নিরব দর্শক হয়ে ওদের কথা শুনছি।
এটা শেহনাজের খেয়াল হল। সে চট করে আমাকে সরি বলে বসে। তাশরিফ ছেলেটিও আমাকে সরি বললো।
আমি অবাক হয়ে কিছু বলার আগে শেহনাজ আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয়।
: ইরা ও হচ্ছে তাশরিফ রায়হান গান করে বুঝছো এবং ওর একটা দলও আছে।
আমি হেসে পরিচিত হই।
সৌজন্যমূলক কথাবার্তা বলি। এর মাঝে তাশরিফ চট করে আমাকে অফার দিয়ে বসে।
: আপনার গান শুনলাম। বেশ গলা আপনার
তবে চর্চা লাগবে অনেক। গান করবেন আমার সাথে?
আমার ভিমড়ি খাওয়ার অবস্থা। কিছুটা তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। এদিকে তাশরিফ বলেই যাচ্ছে।
: একটা ডুয়েট করব অনেকদিন ধরে ভাবছিলাম।
আপনার গান শুনে খুব ভালো লাগল, করবেন?
শেহনাজ হৈ চৈ বাঁধিয়ে দেয় এই কথা শুনে। সে নিজে গিয়ে সিয়াম ভাইকে ডেকে আনল।
সিয়াম এর সাথে রাতুলও হাজির।
ওদের দুজনার সাথে তাশরিফ রায়হান পরিচিত হয়।
আমি পুরো বিষয়টায় কেমন হতভম্ব হয়ে গেলাম।
এটা কি হলো। আর গান নিয়ে হুট করে আমার কোন কিছু করার প্ল্যানও নাই। আগে বুঝি তারপর দেখি কি করা যায়।
রাতুলকে শেহনাজ ভাবীই কথাটা বলে ফেলেছে।
আমি দেখলাম রাতুলের মুখ কালো হয়ে গেছে এটা শুনে। ওর সুন্দর চেহারাটা কালো মেঘে ঢেকে যাচ্ছে। এরপর কি হবে।
আমি তাশরিফ এর সাথে কথা বলছিলাম। ছেলেটা চমৎকার প্রাণবন্ত।
কিন্ত আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে রাতুলের তীক্ষ নজর আমার দিকে।
: ঠিক আছে ইরা তাবাসসুম, আপনার সাথে আমি কনট্যাক্ট করব।
: ওকে।
এই কথা শুনে রাতুলের মুখ বিবর্ন হতে লাগল। রঙহীন জৌলুসহীন ভিন্ন এক রাতুল। আমি এক নজর দেখে স্বাভাবিক হয়ে গেলাম। খুব স্বাভাবিক।
বি:দ্র- প্রিয় পাঠক অফুরান ভালবাসার প্রতিদানে নির্ঘুম রাত জেগে লেখাটাই দিতে পারি,,এর বেশী পারি না,,তবে ইরার জন্য লিখতে গিয়ে অবিবেচক সমাজকে কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাইছি,,এবং এই কারনে লেখাটা আজও শেষ করতে পারিনি,
জানি না কতটুকু পারব আজকে আপনাদের ভালবাসা কেড়ে নিতে তবে এটুকু বলতে পারি অনেক শ্রম অনেক কষ্ট একটা গল্প লেখার পেছনে জড়িয়ে থাকে,
আমি জানি আপনারা আমার সাথে আছেন,, চলুন আবারও ডুবে যাই ভালবাসার সমুদ্রে ❤️❤️❤️❤️
…… তামান্না হাসান