#Journey Episode 1
A walkway to destiny
ইতালির ভেনিস থেকে জেসমিন আয়াজ ট্রেনে উঠলেন,উদ্দেশ্য তার সিসিলি শহর।সেখানে তার বহু বছরের পুরোনো বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাবে।এই বিদেশ বিভুঁইয়ে স্বদেশী ঘ্রাণও যদি পাওয়া যায়,বুভুক্ষের মত মানুষ সেখানেই ছুটে যায়।বন্ধুর সাথে দেখা হয় না আজ বছর চার পেরিয়ে যাবে,কারণ সে স্নাতক পরীক্ষার পরই এই দেশে চলে এসেছে পড়ালেখার উদ্দেশ্যে,সংবর্ধনাও নেয়নি।হুট করেই পরীক্ষার শেষ হতেই ওর ইতালিয়ান ভিসার খবর ওরা জানতে পারে।যোগাযোগ কিছুটা ছিল,কিংবা ভাসা ভাসা খবর ভেসে আসত ওর কানে,তবে আজ এরকম সময়ে ও যে সেই বন্ধুর উদ্দেশ্যে দৌড় দেবে,তা বুঝতে পারেনি।সবচেয়ে বড় কথা এতটা উত্তেজিত হয়ে যাবে জেসমিন,সেটাও বুঝেনি!ব্যাগেজ টানতে টানতে আসছিল আর মনে মনে নিজেকে বার বার একই প্রশ্ন করছিল, “আমার বুকের ভেতর এতটা ধুকপুকানি কিসের?” আবার নিজেই তার উত্তর দিচ্ছিল,”হয়ত এত বছর পর একজন পরিচিত মানুষ পাব বলে,বা ও কেমন দেখতে হয়েছে,সেটা জানা যাবে বলে!” জেসমিন খুশিতে দ্রুত পায়ে স্টেশনের দিকে দৌড় দেয়,আজকের এই ট্রেন কিছুতেই মিস করা যাবে না।
জেসমিন হান্নান,আজ দুবছর যাবৎ ইতালির বাসিন্দা।অবশ্যই স্থায়ী নয়,অস্থায়ী বাসিন্দা,কারণ এখানে সে এসেছে পিএইচডির উদ্দেশ্যে ইউনিভার্সিটা কা ফোস্কারি তে।এটি মর্ডান আর্ট,ভাষা ও ইতিহাসের জন্য বিখ্যাত।রেংকিং এ মডার্ণ ল্যাংগুয়েজ এর দিকে থেকে সেরা ২০০ আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় এর মাঝে আর ইতিহাসের দিক থেকে ২৫০ এর মাঝে আছে। যদিও পড়ালেখা করছে,তবে ইচ্ছা আছে এখানেই চির বাসিন্দা হয়ে থেকে যাওয়ার,কেন জানে না,এই বাতাসটা ওকে খুব টানে।প্রথম প্রথম যখন চেষ্টা করছিল ইতালিতে আসার জন্য,তখন তেমন কোন নিশ্চয়তা ছিল না ওর মাঝে,ইতালিতে আসবে,এসব নিয়ে তেমন ভাবতও না।খামখেয়ালির বশেই অনলাইনে ইউনিভার্সিটিগুলোতে এপ্লাই করে বসে থাকে।ঢাকা ইউনিভার্সিটির ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী হিসেবে ভেনিস নগরীর প্রতি আলাদা একটা টান ছিল,তাই ঘুরে ফিরে বেশিরভাগ এপ্লাই এ শহরের ইউনিভার্সিটিগুলোতেই করা হয়ে যায়।একদিন ঘুম থেকে বিকেল বেলায় উঠে খেয়াল করে,তার একটি আনরীড মেইল পড়ে আছে।ঘুম ঘুম চোখে মেইল খুলে জেসমিনের ঘুম বাতাসে মিলিয়ে যায়,ও স্কলারশীপ পেয়েছে!ইউনিভার্সিটা কা ফোস্কারির ইতিহাস বিভাগের অধ্যক্ষ সিওরা দামেস্কা তাকে মেইল করেছে।এরপরের সময়গুলো ছিল বেশ সংক্ষিপ্ত।ভিসা,পেপারস,পাসপোর্ট,শপিং সব কিছু নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে একদিন চলে আসে ইতালি পাড়ি দেয়ার দিন।এয়ারপোর্টে এগিয়ে দিতে আসে এক মাত্র ভাই আলআমিন।কঠিন মনে বোনকে বিদায় দেয়,বুঝিয়ে বলে যেন পিএইচডি শেষ করে দেশে চলে আসে।জেসমিন হাসে,ও তো চায় নি দেশে ফিরতে,ঐ দেশের পরিষ্কার নগরীর ছোঁয়া পেলে, বিদেশী খাবার পেলে দেশের নোংরা মাটি শরীরে কেন মাখাবে?
জেসমিনের সেদিনের যাত্রায় ভীষণরকম উত্তেজনা ছিল,প্রতিটি মুহুর্তে সে রোমাঞ্চিত হচ্ছিল ইতালিকে দুচোখ ভরে দেখবার জন্যে।প্লেনে জানালার পাশের সিটটি তাই এয়ার হোস্টেসকে বলে অনেকটা জোরপূর্বকই নিয়ে নিয়েছিল।ভূমধ্যসাগরীয় এই দেশ নিয়ে প্রায় গবেষণা করে ফেলেছিল ও,চাইলেই যেটা দিয়ে একটা পুরো উপন্যাস দাঁড় করিয়ে ফেলা যায়! দেশের ইট আর গ্রিলে বানানো আধুনিক খাঁচায় থেকে থেকে হাঁপিয়ে ওঠে জেসমিন অধীর আগ্রহে মুহূর্ত গুনছিল, কখন নতুন ঘরের গ্রিল বিহীন বারান্দা আর জানালায় গিয়ে বসবে।৮০% স্কলারশিপ পেয়ে যাওয়ায় ইউনিভার্সিটির পাশেই খুব সুন্দর একটা বাসা ভাড়া করে নিয়েছে,সেখানকার ফোর্থ ফ্লোরে একটা ছোট্ট ফ্ল্যাট ওর জন্যে বুক করা হয়েছে।ইউনিভার্সিটিটা ভেনিসের গ্র্যান্ড ক্যানেলের পাশেই অবস্থিত।এর সব ছবি দেখে দেখে জেসমিনের দিশেহারা হওয়ার মত অবস্থা প্রায়।বলা চলে স্বপ্নের গালিচায় ভেসে ভেসেই সে এতদূর চলে এসেছে।ক্লাস,চাকরি, ঘরের কাজ,টুকটাক বন্ধুদের সাথে আড্ডা,সব মিলিয়ে দুটো বছর কিভাবে কেটে গেল,জেসমিন বুঝতেই পারেনি।মাঝে মাঝে অবশ্য একা লাগত,কারণ এখানকার মানুষ গুলো নিজেদের নিয়ে বড্ড ব্যস্ত,কারো জন্যে কারও সময় খুব বেশি হয় না।সেই অনার্স জীবনের দিনগুলো ওকে খুব টানে,ইশ!কি দিন গুলোই না ছিল!ক্লাস,আড্ডা,টিএসসিতে ঘোরা,পলাশীর মোড়,গলা ছেড়ে গান,হইহুল্লোড়,কারো জন্মদিনে জোর করে খাওয়া,সবকিছু স্বপ্ন মনে হয় এখন! এখানে চায়ের কাপে ঝড় ওঠে না,ঝুম বৃষ্টিতে বন্ধুরা মিলে ভিজতে যায় না,ক্লাসের ফাঁকে পিঠ চাপড়ে মজা করা হয় না,গলা ফাটিয়ে ফাঁটা বাঁশের মত গান করা হয় না,কিংবা কেউ গীটার নিয়ে বসেও ডাকে না,শীতের সকাল চাদর গায়ে জড়িয়ে উপভোগ করা যায় না,বসন্তে কোকিল ডাকে না।এখানকার জীবন যাত্রা সম্পূর্ণ আলাদা।প্রথম কয়েক মাস মোহে কাটালেও জেসমিনের হৃদয় কাঁদে ঐ বৃষ্টিভেজা ময়লা মাটির জন্যে,পায়ে মাখা কালো কালো কাদা দেখতে ইচ্ছে হয়,মনে হয়,ঐ অসংগতিগুলোতেই অনেক ভালোবাসা মিশে ছিল।তবুও এখানেই থাকতে চায়,হাজার হোক,দেশের অবস্থা আর আগের মত ভালো নেই।তবু একটা টান যে আছে,জেসমিনের আজকের এই ছুটে চলা দেখেই বোঝা যায়।দেশের টানে জেসমিন ছুটছে,যেন সে দেশ বন্ধুর মাঝেই লুকানো!
জেসমিন ট্রেনে ব্যাগ টেনে নিয়ে ওঠে,হাতে টিকিট।ভেনিস থেকে একেবারে এক টিকিটেই সিসিলিতে নামবে।প্রায় ১৫ ঘন্টার যাত্রা যদিও,ওর তেমন সমস্যা নেই।মাঝপথে ফ্লোরেন্স,রোম,নেপলস পড়বে।নেপলস থেকে আবার চাইলে নৌকায় বা ট্রেনে সিসিলিতে চলে যাওয়া যায়,তবে জেসমিনের সেরকম ইচ্ছা নেই।ও আবার পেলারমো হয়ে যাবে।পেলারমো হয়ে গেলে বোলোনিয়া,আমাল্ফি কোট,পোম্পেই হয়ে ঘুরে যাওয়া যায়।এমনিতেই ওর তেমন ঘুরা হয় নি ভেনিসের বাইরে,এই সুযোগে একটু ঘুরে যেতে ইচ্ছা করছ। ভেবেছিল,প্রফেসরের কাছ থেকে ছুটি পেতে বেগ পেতে হবে,কিন্তু হয়নি।সেনোর সিওরা খুব ভালো মানুষ।ও ছুটি চায় এবং সিসিলি যাবে শুনে খুব পুলকিত হয়েছিলেন।হাসি মুখে বলেছেন,
-জেসমিন,তুমি এতদিনে ওখানে যেতে চাচ্ছ?দুবছর হয়ে গেল,আমার দেশ তো ঘুরেই দেখলে না!এই সুযোগে দেখে এসো,তবে দুঃখিত, আমি তোমাকে এক সপ্তাহের বেশি ছুটি দিতে পারছি না।এর মাঝেই চলে এসো।
এক সপ্তাহের ছুটি পেয়ে নাচতে নাচতে জেসমিন সব গুছিয়ে সেদিনই দৌড় দেয় বন্ধুর গন্তব্যে।যদিও পুরো যাত্রাটা একা,একজন সঙ্গী হলে মন্দ হত না, তবে জেসমিনের আজকাল একা একা ঘুরে বেড়ানোটাই ভালো লাগে।বিদেশে এই একটা সুবিধা,মেয়েরা এখানে একা একা ঘুরতে পারে,দেশের মত বাঁধা দেয় না,কিংবা কারো বাঁকা নজরের শিকার হতে হয়না।মাথার স্কার্ফটা ভালোভাবে পেঁচিয়ে নেয় জেসমিন,আর যাই হোক,নিজের মুসলিম স্বত্বা সে ধরে রেখেছে,যদিও এসব দেশে অনেকের মাঝেই ইসলামোফোবিয়া আছে,তবে বেশিরভাগ মানুষই খুব অন্তরিক ও ভালো।জেসমিন ট্রেনে ওঠে খুঁজে বের করে নিজের সিট,৫০-৫১-৫২,এইত পাওয়া গেছে,৫৩ সি।ভাগ্যিস জানালার পাশের সিটটা পাওয়া গেছে।লাগেজটা উপরে রেখে হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে সিটে বসে।ওর আবার আরেকটা অভ্যাস আছে,সবসময় দুটো সিট বুকিং করে পাশের উটকো পুরুষ যাত্রীর বিড়ম্বনা এড়াতে।তাছাড়া টাকা যেহেতু আছেই,কি দরকার অন্যের সাথে যাত্রা করার?যদিও পাশের রোতে সিঙ্গেল সিট আছে,ওখানে বসা যেত,তবে ও চিন্তা করল,দুটী সিট থাকলে ব্যাগ,জিনিসপত্র রেখে শান্তিমত যাওয়া যাবে।জেসমিন রিলাক্সভাবে বসে আশেপাশে দেখতে থাকে,এখনও অনেক যাত্রীই আসেনি,ওর মুখোমুখি সিটের যাত্রীও নেই।জেসমিন ভাবে,কেউ না আসলেই ভালো হবে,একটা নির্ঝঞ্ঝাট যাত্রা করা যাবে।এত বড় একটা জার্নি,রিলাক্স থাকাটা মুখ্য ব্যাপার।হাত ঘড়ির দিকে তাকায়,সকাল ৭টা বাজে।বাসা থেকে যদিও নাস্তা করে এসেছে,তবু ক্ষুধা লেগে যাচ্ছে।ব্যাগে হাল্কা খাবার আছে,তবে এখনই খাওয়া দাওয়া শুরুর ইচ্ছা নেই।জেসমিন চুপচাপ একটা বই বের করে বসে, Sylvia Day এর Bared to you, এই বইটা একটি রোমান্টিক বই,২০১২ সালের বেস্টসেলার বইগুলোর মাঝে অন্যতম। জেসমিন রোমান্সের স্বাদ নিতে ব্যস্ত হয়ে যায়।বেশকিছু সময় পর বুঝতে পারে নড়াচড়া খেয়াল করে বুঝতে পারে ট্রেন চলতে শুরু করেছে।সামনের সিট এখনও খালি।কেউ কি তবে আসবে না?আনমনে নিজেকে প্রশ্নটা করেই জেসমিন আবার বইয়ের মাঝে ডুবে যায়।নায়ক নায়িকা এখন খুব সমস্যার মাঝে আছে,জেসমিনের মুখ দেখে মনে হচ্ছে,ও নিজেও ওদের সাথে সাথে সমস্যায় পড়ে গেছে,ভ্রুর উপরে ভাঁজ পড়েছে।মিনিট দুয়েক পরে সামনে আওয়াজ শুনতে পারে।যদিও চোখ তুলে দেখার কোন ইচ্ছা ছিল না,তবু জেসমিন আড়চোখে তাকায়।একজন পুরুষ এসেছে,সে উপরে তার লাগেজ রাখছে।জেসমিন বিরক্ত হয়,কে জানে কেমন মানুষের যাত্রা করতে হয়!ও আবার বইয়ের মাঝে ডুবে যায়,পরক্ষণেই আবার চোখ তুলতে বাধ্য হয়,এবার সরাসরিই সামনের দিকে তাকায়।লোকটার জ্যাকেটের ওপাশ থেকে একটা ছোট্ট বাচ্চার হাত উঁকি দিচ্ছে,বাচ্চাটাও মুখ বাড়িয়ে জেসমিনকে দেখছে,জেসমিন বাচ্চাটার শুধু মায়াবী বড় বড় দুটি চোখ দেখতে পাচ্ছে।বইয়ের বাইরে চলে আসে জেসমিনের সম্পূর্ণ মনোযোগ,বাচ্চাটা সত্যিই খুব মায়াবী,ওর ইচ্ছে হচ্ছে একটু ছুঁয়ে দিতে।তবে জেসমিন সেরকম কিছুই করে না,বাচ্চাটার দিকে চেয়ে স্মিত হাসি দেয়।বাচ্চাটা এখনও ওর দিকেই তাকিয়ে আছে,লোকটি,সম্ভবত যিনি এই বাচ্চার বাবা বলে জেসমিনের মনে হচ্ছে,তিনি এখনো লাগেজ রাখছেন।কাজ শেষ হতেই ওকে নিয়ে বসলেন সিটে,বাচ্চাটা বসল জানালার পাশে।মাথাভর্তি কোকড়া গাঢ় বাদামী চুল,চোখের মণি পিঙ্গল রঙের,গায়ের রং ধবধবে সাদা,সব মিলিয়ে মায়া লাগার মত একটা ছেলে বাচ্চা।ছেলের বাবার চুলও কোকড়া,চেহারা ফর্সা না,ব্রাউন স্কিন, মুখটা ছেলের সাথে মেলে না বেশি,তবে নাক দুজনের একই রকম,চোখে মুখে ধীরস্থিরতা স্পষ্ট,পরণে গাঢ় বাদামী লেদার জ্যাকেট,পায়ে বাদামী রঙের সু।যদিও জেসমিন এতক্ষণ চাচ্ছিল যেন কেউ না থাকে সামনের সিটে,তবে এখন ওর শান্তি লাগছে,ওমন বাচ্চা সাথে থাকলে যাত্রা সুন্দর হতে বাধ্য।অবশ্য ছেলেটা বেশ লাজুক মনে হয়, বাবার সাথে তেমন কথা বলছে না,চুপচাপ একটা ললিপপ মুখে পুড়ে ট্রেনের বিশাল জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।ওর বাবা একটু পর পর ওর কানের মুখ নিয়ে কি যেন প্রশ্ন করছে,বাচ্চাটাও মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ না তে জবাব দিচ্ছে।
এভাবেই পনের মিনিটের মত কেটে গেছে,এখনও কেউ কারো সাথে কথা বলেনি।জেসমিন বেশ কয়েকবার কথা বলার উদ্যোগ নিবে ভেবেছিল,কিন্তু সেটা ভাবনা পর্যন্তই আটকে আছে।লোকটাও এরমাঝে বেশ কয়েকবার জেসমিনের দিকে তাকিয়ে ছিল,কিন্তু সে নিজেও সুবিধে করতে পারেনি।জেসমিন বইয়ের মাঝে ডুব দেয়।পড়তে পড়তে ব্যাগ খুলে চিপস এর প্যাকেট বের করে খেতে শুরু করল।দুটো খেয়েই দেখল বাচ্চাটা ড্যাব ড্যাব করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।বাচ্চাটিকে খাবে কিনা ইশারায় জিজ্ঞাসা করতেই মাথা নেড়ে না বলল,এরপর বাবার মুখের দিয়ে চেয়ে রইল।বাবা পেপার পড়ায় ব্যস্ত। জেসমিন ভাবছে, “ওদের সাথে কথা বলব?উচিৎ হবে?কিন্তু এত সুন্দর একটা বাচ্চা ছেলে দেখে আদর করার লোভটাও যে সামলানো যাচ্ছে না!”
আগপিছু ভেবে জেসমিন হাল্কা কেশে মুখ খুলে,
“এক্সকুইজ মি সিনর,আপনার সাথে কথা বলা যেতে পারে?আমি জেসমিন”
লোকটি পেপার থেকে মুখ তুলে চেয়ে হাসি দেয়,ইতালীয়ান ভাষায় জবাব দেয়,
“আমি জাফার,এটা আমার ছেলে,সেলিম”
“কোন দেশী আপনি?”
“আমরা পাকিস্তান থেকে এসেছি,লাহোর”
“ওহ আচ্ছা!”
এভাবেই টুকটাক কথা এগুতে থাকে ওদের।জাফারকে দেখে পাকিস্তানি মনেই হয় না, জেসমিন ভাবতে থাকে,আসলেই কি সে পাকিস্তানি? টুকটাক কথার পর বলেই ফেলে জেসমিন,
“আপনাকে কিন্তু পাকিস্তানি মনেই হয় না!”
“সবাই তাই বলে।আসলে আমার বাবা পাকিস্তানি, মা বাঙালি ছিলেন”
“তাই ওমন লাগছে!বাংলা পারেন কি?”
“হ্যাঁ,কিন্তু আমার বাংলা বেশি ভালো না,এট্টু এট্টু পারি,বলার কেউ নাই তো ”
জেসমিন হাসে।শেষ পর্যন্ত বাংলায় কথা বলার মত আরেকজনকে পাওয়া গেল!
“আপনার স্ত্রী কোথায়?সেও কি পাকিস্তানি?”
“না,ও ইটালীয় ছিল,আমার ছেলের জন্মের সময়ই মারা যায় নিউমোনিয়ায়”
“ওহ!আমি সরি, আমার এটা তোলা উচিৎ হয়নি”
“ঠিক আছে,আপনি জানতেন না।ওর যাবার ছিল তাই চলে গেছে।”
চলবে….
লেখনীতে, #AbiarMaria