#Journey episode 45

0
201

#Journey episode 45

#৪৫

আজ দুদিন পেরি্য়েছে,সেলিম ওর মায়ের দেয়া সূত্রের আগা মাথা কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না।ওর মা বলল যা বলা আছে তার বিপরীত করতে,কিন্তু ওর মা কি জানত না যে ও বাংলায় অতটাও পারদর্শী না? আচ্ছা,অন্য কোন ভাষায় কি তা করা যেত না?? দুই দিন,দুই রাত ধরে শুধু ভেবেই যাচ্ছে,কিন্তু কূল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না।ঘুম,খাওয়া উলট পালট হয়েছে,কিন্তু লাভ হয়নি কিছুই।মাথা ব্যথা করছে,ঘাড়ের রগ টনটন করে টানছে।ঘাড়ে হাত বুলাতে বুলাতে তাই বিছানা ছেড়ে ওঠে আসে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে চলে যায়,পকেট থেকে সিগারেট বের করে তাতে আগুন ধরিয়ে টান দেয়।

পেছনে কোন একটা আওয়াজ শুনে ঘুরে তাকায়।ওর মামাত ভাই এসেছে।
“তোমার ঘুম আসছে না ব্রো?”
“নাহ,তোমার আসছে না?”
“আসলে কি আর এখানে থাকি?”
“হুম!”
“ব্রো,এটা কি বিদেশী ব্রান্ড?”
সেলিম খেয়াল করে প্রান্তর ওর হাতের সিগারেটের দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।সেলিম মাথা নাড়িয়ে ওর দিকে সেটা এগিয়ে দেয়।প্রান্তর বুক ভরে এক টানে এতগুলো ধোঁয়া বুকের ভেতর টেনে নেয়।নাক মুখ দিয়ে রিঙের মত ধোঁয়া ছেড়ে বলে,
“আহ,বিদেশী জিনিসের স্বাদই অন্যরকম বুঝলা! থ্যাংক্স ব্রো,তোমার জন্য বিদেশি স্বাদ পাচ্ছি! তুমি জানো,বিদেশি জিনিসের উলটোদিকটাও চেটে খাওয়া যায় যেরকম টেস্ট!”
এই কথা বলে প্রান্তর জোরে জোরে হো হো করে হাসতে থাকে।সেলিম হাসে ওর বাচ্চামি দেখে।তবে ওর উচ্চারিত ‘উল্টো’ শব্দটা শুনে মনের মাঝে কোন একটা চিন্তা এসে আঘাত করে।

“আচ্ছা,তোমাকে একটা বাক্য বললে তার উল্টোটা আমাকে বের করে দিতে পারবে?”
“অবশ্যই পারব!আলবৎ পারব!বলো শুধু আমাকে”
সেলিম দ্বিতীয় ক্লু প্রান্তরকে পড়ে শোনায়।
“বিনোদপুরে আছে এক মন্দির,তার ডান পাশে থাকা পুরোহিতের ঘর থেকে ত্রিশ হাত পশ্চিমে এক পুকুর,তার তলায় আছে পরের সূত্র আর গ্রাম”

প্রান্তর কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,
“এই জিনিস তুমি কোথায় পেয়েছ ব্রো?এরকম আজিব কথা আবার উল্টায় কি করে?”
সেলিম নতুন সিগারেটে আগুন ধরাতে ধরাতে বলে,
“এটাই তো পাজেল,এটাকেই তো সল্ভ করতে হবে।উল্টো করো পারলে”

প্রান্তর ঠোঁট কামড়ে এটা নিয়ে ভাবতে থাকে।
“ব্রো!এটা কি কোন গুপ্তধনের ক্লু? না মানে,বইয়ে পড়েছি গুপ্তধনের জন্য এরকম ক্লু দেয় মানুষ”
“তুমি এত না ভেবে এটা উলটো করে দাও।আর হ্যাঁ,এরজন্য ভাল পরিমাণ টাকা পাবা!”
টাকার লোভে হোক আর অন্য কোন কারণেই হোক,প্রান্তরের চোখ চকচক করতে শুরু করে,এক মিনিটের মাঝেই প্রবল উৎসাহে বলে,
“ব্রো! পেয়ে গেছি! এই যে দেখ বিনোদপুরের পর লেখা যে মন্দির আছে,মন্দিরের ডান পাশে থাকা পুরোহিতের ঘর,মানে ডানের উলটো বাম,তোমাকে বামে যেতে হবে।বাম দিকে থাকবে পুরোহিতের ঘর,সেই ঘর থেকে তোমাকে যেতে হবে ত্রিশ হাত পশ্চিমে না গিয়ে পূর্বে!পূর্ব দিকে গেলে একটা পুকুর পাবা,তার নিচেই হয়ত…মানে পুকুরের উপরে তো আর সম্ভব না,তাই নিচেই পরের সুত্র পাবা”
“আর পুরোহিতের ব্যাপারটা?মন্দির তো ওখানে অনেকগুলো থাকতে পারে,আমি কোনটায় খুঁজব?”
“আমাদের দেশে মসজিদ বেশি,মন্দির কম,তুমি সহজেই পাবা। তুমি পরিত্যাক্ত মন্দিরগুলায় যাবা না,ওগুলার আশেপাশে তো পুরোহিত থাকবে না,থাকবে যেগুলোতে নিয়মিত সবাই পূজা দিতে আসে”

সেলিম ব্যাংক থেকে আনা সদ্য এক হাজার টাকার চকচকে নোট প্রান্তরের হাতে ধরিয়ে দেয়।
“শোনো,অনেক হেল্প করেছ তুমি আমাকে!আরো হেল্প করতে হবে আমাকে,যত করবা,তত টাকা পাবা!”
প্রান্তর টাকা পেয়ে খুব খুশি,আজকালের যুগে কেউ কাউকে এত টাকা একবারে দেয়?অবশ্য এর মাঝে ও রহস্যের ঘ্রাণও পায়,সেটা চেপেও যায়।
“ব্রো,তুমি একদম ভেবো না,তোমার কি লাগবে খালি বলবা!আমি তোমার পায়ের কাছে আইনা হাজির করব!টাকা পয়সা লাগবে না,তুমি আমার বড় ভাই না?আমি এমনেই করে দিব!”
“যা করেছ,অনেক করেছ।পরে লাগলে তোমাকে আমি জানাব”

পরদিন সেলিম শিমুলকে নিয়ে আবার বের হয়,এবারের গন্তব্য বেশি দূর না,বিনোদপুরে চলে যায়।সেখানে যাওয়ার সময় জানতে পারে সেখানে বড় মন্দির বলতে একটা আছে,এতিমখানা রোডে,শিবা মন্দির।সেলিম সেখানে চলে যায়।সত্যি সত্যি এর বামে পুরোহিতের ঘর আছে,তার পাশ দিয়েই চলে গেছে একটা মেঠো পথ।শিমুলকে নিয়ে হিসেব করে ত্রিশ হাত হেঁটে যায় সেলিম।এখানে এখন একটা পুকুর থাকার কথা।কিন্তু কোথায় পুকুর?এখানে তো বিরাট একটা গাছ! সেলিম বেশ বিরক্ত হয়,ভুল করল না তো আবার?প্রান্তর কি ঠিক বলেছে?

গ্রামের এক মুরুব্বী তখন ওদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল,সেলিমকে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগতে দেখে এগিয়ে আসে।
“বাজান,রাস্তা হারাইছুইন?”
সেলিম ঠিক বুঝতে পারে না তার কথা,শিমুল এগিয়ে এসে বলে,
“চাচা,এইহানে কটা পুষ্কুনি আছিল না?ঐডা কই?”
বয়স্ক লোকটা কি যেন ভাবে,তারপর মনে পড়ে গেছে এরকম ভাব করে বলে,
“ছিল তো,মাডি দি ভরি ফালাইছে কোন জমানায়ই!”
“কবে ভরছে চাচা?”
“মেলা বছর হইছে,কিন্তু কেন বাজান?তোমরা কই যাইবা?”
“যামু না কোথাও চাচা,আফনে যান চাচা”

সেলিম কিছুটা বুঝতে পেরেছে মুরুব্বীর কথা।আচ্ছা,যদি এখানে পুকুরটা ভরেই ফেলে,তারমানে কি তৃতীয় ক্লুও এর সাথে চাপা পড়ে গেছে?এখন অচনা অজানা যায়গায় কিভাবে মাটি খুড়বে?পকেট থেকে কাঠের ফলাটা বের করে,বারবার লেখা গুলো পড়ে।অন্য কোন অর্থ নেই তো এখানে?বুঝতে কি ভুল হলো কোন? ভাবতে ভাবতে গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।কি যেন ভেবে গাছের দিকে একটু মনোযোগ দিয়ে তাকায়।আচ্ছা,ঐ লোক বলল অনেক আগে এটা ভরে ফেলা হয়েছে,তার মানে কি মা এখানে আসার আগেই এটা ভরাট করা ছিল?আবার এখানে লেখা পুকুরের নিচে,অথচ পুকুর ভরাট করা! আচ্ছা,এটা কি পুকুরের উপরে হতে পারে?কিন্তু পুকুরের উপরে কিভাবে…?

ভাবতে ভাবতে হঠাৎ খেয়াল হয়,আরে!পুকুরের উপরে না থাকুক,গাছের উপরে তো থাকতেও পারে!কিন্তু গাছে উঠবে কি করে? শিমুলকে অনুরোধ করে গাছে ওঠার।শিমুল যখন গাছে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে,তখন কোত্থেকে এক ছোট ছেলে এসে হাজির!
“আপ্নেরা কি করেন এইখানে!”
“আসলে,এই গাছের উপরে একটু…মানে দেখা দরকার ছিল?”
“কেন?কি দেখবেন আপনেরা?”
ওরা দুজন মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।কি জবাব দিবে?সেলিম তখন বুদ্ধি করে ছেলেটার কাছে এগিয়ে যায়,কিছু টাকার লোভ দেখিয়ে বলে গাছের উপরটা একটু দেখে দিতে,কিছু পাওয়া যায় কিনা।ছেলেটা একটু ভেবেই রাজী হয়ে যায়।গাছে উঠে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তেমন কিছু যখন খুঁজে পায় না ছেলেটা,সেলিম হতাশ হয়ে ওকে নেমে আসার নির্দেশ দেয়। গাছ থেকে নামার সময় একটা যায়গায় ছেলের পা ফসকে যায়,আর সেখানের ছাল কিছুটা খুলে আসে।শিমুল আর সেলিম ছেলেটাকে ব্যথা পাওয়া থেকে রক্ষা করে।উপর দিকে তাকিয়ে গাছে শরীর থেকে খুলে মাসা ছাল ধরে টান দেয়।উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে দেখে সেখানে আরেকটা ছোট বাক্স খুব কায়দা করে লুকানো!!!

চলবে…

লেখনীতে, #AbiarMaria

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here