#Journey episode 33
#৩৩
রাইফ জেসমিনের কথা শুনে শিষ দেয়।
“চার বিলিয়ন ডলার! চারশ কোটি টাকার ডায়মন্ড! Are you serious? মানে মিলিয়ন বলতে গিয়ে বিলিয়ন বলো নি তো?”
জেসমিন দুপাশে জোরে জোড়ে মাথা নাড়ায়।
“উহু,কক্ষণো না! এর বর্তমান মূল্য এরকমই হবে!”
“তুমি তো অনেক বড়লোক!আমাদের তো আজীবন আর কোন কাজ করতে হবে না,তোমার এই হীরে দিয়েই কয়েক জেনারেশন পার হয়ে যাবে,হা হা হা!! আচ্ছা,এটা কি একটু বেশি বেশি হয়ে গেল না?আমার না ব্যপারটা ঠিক হজম হচ্ছে না!”
“প্রথম শুনে আমিও অবাক হয়েছিলাম,হজম হচ্ছিল না।মা আমাকে হাসপাতালের বেডে শুয়ে যখন এটা জানাল,তখনই আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।আমার জন্যে সবচেয়ে শকিং ব্যাপার ছিল এটাই যে মা এত দামী জিনিস আমার জন্য রেখেছে! সবসময় আমরা দুই ভাই বোন,বিশেষত আমি ভাবতাম,মা টাকা ছাড়া আর কিছু বোঝে না।কিন্তু শেষ সময়ে আমাদের ভুল ভেঙে দিয়ে মা চলে গেলেন।মা অবশ্য এত কিছু বলে যেতে পারেন নি।আমাদের কোম্পানির সবচেয়ে পুরাতন একজন স্টাফ আছে,আলম আংকেল ডাকি আমি।উনি আমাকে এত কিছু জানিয়েছেন।মা নাকি আমাকে এই হীরেগুলো দিয়ে একটা হার বানিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেসবের আগেই ঝামেলা লেগে গেল।আমার মা যে শুধু আমাদের সাথে বেঈমানী করেছিল,তা না,আমার মাও বেঈমানীর স্বীকার হয়েছেন”
“কে করল?”
“আমাদের অফিসের ম্যানেজার।সে এখন রুবায়েতের কোম্পানির সিনিওর এডভাইজর আর শেয়ার হোল্ডার!হবে নাই বা কেন?এত বড় বেঈমানীর বিনিময়ে মীর জাফার যদি ব্রিটীশদের মন জয় করতে পারে,ঐ নিমকহারাম কেন কিছু পাবে না?!”
“কিন্তু তোমার মায়ের কাছে এত ডায়মন্ড কোথা থেকে আসল?”
“মা কিন্তু শুরু থেকে খারাপ ছিল,তা না।আগে বাবার ফরেন বিভাগ মা সামলাত।বিদেশী ক্লায়েন্টদের সাথে উঠাবসা,তাদের ম্যানেজ করার সব কাজ মা করত।একবার এক ক্লায়েন্টের ছেলে গাড়ির নিচে পড়তে পড়তে বেঁচে যায় শুধু মায়ের কারণে।বাচ্চাটা যে চলন্ত গাড়ির সামনে চলে গেছে,সেটা মা একাই খেয়াল করে দৌড় দেয়।বাচ্চাটাকে বাঁচাতে গিয়ে মায়ের হাত ভেঙে যায়। ঐ বিদেশি মায়ের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ ছিল,তার স্ত্রী মায়ের কাছে এসে অনেক কেঁদে কেঁদে ধন্যবাদ জানায়। তবে টুইস্ট আসে কিছুদিন পর!
বিদেশী লোকটা মাকে বলে,তার কাছে খুব ভাল একটা ডিল আছে।সে চাইলে মাকে এমন এক রাস্তা দেখাতে পারে, যা তার কয়েক জেনারেশনের ভবিষ্যত নিশ্চিত করবে।মা প্রথমে বিশ্বাস করেনি, পরে করেছে।
একটা কথা তুমি জানো,আমরা ডায়মন্ডের যে রূপ দেখি,তা পালিশ করা রূপ।আসল ডায়মন্ড ততটা ঝকমকে হয় না।আর এদের মূলত সাধারণ শ্রমিকদের দিয়ে বিভিন্ন খনি থেকে তোলা হয় সাধারণ পাথরের মতই।সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার,ডায়মন্ডকে যতটা দামী আর দুর্লভ পদার্থ বলে,আসলে এটা তা না।এটা একটা বিজনেস পলিসি।ডায়মন্ড হাজার হাজার কোটি কোটি আছে,শুধু এদের উত্তোলন করতে হবে,পলিশ করতে হবে।সবচেয়ে বেশি কোন দেশে আছে জানো?আফ্রিকায়!
আফ্রিকার কথা যখন মাকে বলা হয়,মা পাত্তা দেয়নি।ভেবেছে,এতদূরে যাবে,তাও আবার অনিশ্চয়তার হাত ধরে?কি দরকার? কিন্তু ঐ লোক মাকে ফ্রি টিকিট অফার করে,দুসপ্তাহের ট্রিপ।তবে তার আগে মাকে কিছু পাথর দেখায়।প্রথমে বোঝা না গেলেও পরে বোঝা যায় এগুলো যে সাধারণ পাথর না।মা রাজী না হলেও বাবাকে বলার পর বাবা ফোর্স করে।বাবার কথা হল,কাজ হোক বা না হোক,দেশে ঘোরাফেরা তো হবেই!
মা যখন আফ্রিকায় যায়,প্রথমে কিছুই বুঝতে পারছিল না।ঐ লোক…উফ,কি যে লোক লোক বলছি!উনার নাম পিটার। পিটার আর মা আফ্রিকার এক গ্রামে যায়।সেখানকার মানুষগুলো ওদের ঠেলে দেয় বনের দিকে,কিন্তু নিজেরা সেখানে যেতে রাজী না।মা আর পিটার পুরো দশদিন ঘুরে ঘুরে যখন হতাশ প্রায়,সেইদিন ভীষণ ঝড় ওঠে।আফ্রিকানরা বলেছিল,বনে নাকি দেবতার অভিশাপ আছে,যখন তখন ঝামেলা শুরু হয়,মানুষদের মারে,তাই তারা কেউ ওদের সংগ দেয়নি।
সেদিন আশ্রয় নিতে এক গুহায় ঢুকে উনারা।ঝড়ের কবলে পড়ে গুহার ভেতর এত অন্ধকার হয় যে দুজনেই দিশা হারাবার যোগাড়।তারা কিভাবে কিভাবে যেন অনেক ভেতরে চলে যায়।সেখানের কিছু পাথর একত্র করে উনারা আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করেন,কিন্তু ব্যর্থ হয়।পাথরগুলো দিয়ে অনেক চেহটা করে যখন আগুন জ্বলে,দুজনেই চমকে যায়!”
“এগুলো কি হীরে ছিল?”
“হ্যাঁা,হীরে! ছোট বড় অনেক হীরে! মা আর পিটার মনে হচ্ছিল পাগল হয়ে যাবে,এত হীরে!ওরা যা পেরেছিল,তা নিয়ে নিয়েছিল।মা আবার একটা বড় হীরে পায় যেটা পিটার দাবী করে,কিন্তু তাদের মাঝে কথা হয়েছিল,যে যা কুড়াবে,সেটাই তার।তাই মা সেটা দেয়নি।কিন্তু কথায় আছে,লোভে পাপ,পাপে মৃত্যু! মা সেরাতে যখন ঘুমাচ্ছিল,পিটার সেটা হাতানোরে চেষ্টা করে।টের পেয়ে মা আর তার মাঝে তুমুল ধস্তাধস্তি হয়।এক পর্যায়ে মা ছুরি দিয়ে পিটারকে জবাই করে ফেলে!”
“ও মাই আল্লাহ! মেরেই দিল!!!”
“লোভ বলে কথা! মা না মারলে মাকে সে মারত।যদিও সেই মাকে এনেছে,কিন্তু লোভে পড়ে……। পিটারকে মারার পর মা অনেক কষ্টে কয়েকদিন পর সেখান থেকে বেঁচে ফেরে।সেই গুহা থেকে বের হতেই প্রায় দুদিন লেগে যায়।মাকে কিছু স্থানীয় আফ্রিকান পেয়ে সুস্থ করে তোলে। মা সুস্থ হয়েই দেশে চলে আসে।
সেদিন পিটারকে মারার পর ওর ভাগের হীরে টুকুও মা পায়।দেশে এসে সব চেপে যায়,কেউ জানতে পারেনি মা এতকিছু নিয়ে দেশে এসেছে!এসে লুকিয়ে লুকিয়ে বের করে কতটা দামী এগুলো।এর মাঝে বড় হীরেটা ছিল ১৭.৩৯ ক্যারেটের,তাও আবার ধারণা করা হচ্ছে এটা পৃথিবী খ্যাত আলনাট ডায়মডের শ্রেণীর!যদি মা আন্তর্জাতিক বাজারে যেত,এটার যে,দাম আরো বেশি সেটা হয়ত নিশ্চিত হতে পারত আমার ধারণা ।একবার শুধু দেখেছিলাম জানো,চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য!তুমি চোখ ফেরাতে পারবে না এর থেকে।মা যখন দাম হিসেব করে,তার মাথা খারাপ হয়ে যায়।”
“কিন্তু এসব সম্পর্কে আইনত কোন দলীল নেই? মানে এসব ছাড়া তো ব্যাংকের ভল্টে বললেই রাখতে দিবে না তাই না!”
“যেহেতু এটা এয়ারপোর্ট কাস্টম কিংবা ইনকাম টেক্স এ দেখানো নেই,এগুলো এক প্রকার ব্ল্যাক মানি!আর ব্ল্যাক মানিকে ব্ল্যাক মানি দিয়েই হোয়াইট করা হয়।কয়েকটা হীরের বিনিময়ে মায়ের সব কাজ হাসিল হয়েছে।যাই হোক,এই হচ্ছে এই হীরের অভিশপ্ত ইতিহাস!”
রাইফ একটু নড়েচড়ে বসে।
“তারমানে কিন্তু এগুলো সৌভাগ্যের প্রতীক না তোমাদের জন্য,এটা একটা অভিশাপ!”
“শোনো,আমি এসব অভিশাপ বিশ্বাস করি না! মা কাউকে খুন করেছে নিজের জীবন বাঁচাতে,এতে কোন পাপ নেই! এই পৃথিবীর নিয়ম কি জানো?উপকারীর অপকার করা! মা পিটারের ছেলেকে বাঁচিয়েছে,পিটার সেই ঋণ শোধ করতে মাকে আফ্রিকা নিয়ে যায়।কিন্তু লোভের দাশ হয়ে নিজেই মায়ের জীবন নিতে উদ্যত হয়।আমার মা খারাপ হতে পারে রাইফ,কিন্তু আমার মায়ের এই কাজ আমি সম্পূর্ণ সমর্থন করি”
“বুঝলাম।কিন্তু এখন যে আমাদের জীবনের উপর হুমকি এসেছে,এখন কি করবে? এক কাজ কর,কিছু দিয়ে দাও ওদের,ওরাও ভাল থাকুক,আমরাও ভাল থাকব”
জেসমিন জোরে জোরে মাথা নাড়ায়।
“কক্ষণো না! আমার মায়ের দেয়া জিনিস যা নিজের জীবন বাজী রেখে সে সামলেছে,তা কতগুলো লোভী হায়েনার হাতে দিতে পারি না!অসম্ভব !! না না!”
রাইফ কিছুটা রেগে যায়।
“কিন্তু কেন!তোমার মরার এত শখ কেন! এগুলো দিলেই হয়! হীরে নিয়ে কি কবরে যাবা নাকি?!আশ্চর্য!”
“যা বুঝো না তা বলবা না রাইফ!তোমার কি ধারণা?যারা চার বিলিয়ন হীরের জন্য আমাদের পিছে লেগেছে,তারা শুধু হীরে নিয়েই ছেড়ে দিবে?তারা হীরে নিয়ে তারপর তোমাকে মারবে না?তুমি ওদের কাছে হীরে আছে সেটা জানো আর দিব্যি ঘুরে বেড়াবে,সেটাও সম্ভব! আল্লাহর দোহাই লাগে,বোকার রাজ্য থেকে বের হও! ওদের হীরে দিলেও আমরা মরব,না দিলেও মরব! তাই আমি দিব না,ওরা আমাকে মেরে ফেলুক! হ্যাঁ,আমি এগুলো কবরে নিব,তবুও দিব না!!”
রাইফ হতাশ হয়ে হাত আর ঠোঁট উল্টায়।
“তা কে আমাদের পিছে লেগেছে,সেটা জানো?”
জেসমিন এবার চুপ মেরে যায়।টেবিলে রাখা পানিটুকু এক টানে খেয়ে নেয়।রাইফ ওকে ধাক্কা দেয়,
“ঠিক আছ?”
“হুম!”
“তাহলে কে লেগেছে বলো?”
“তার আগে আমাকে কথা দাও তুমি শান্ত থাকবে?আজেবাজে কিছু করবে না?”
“আমি আবার কি করব!এখানে আমি…”
“আছে!এখানে তোমারও সম্পৃক্ততা আছে!”
“কিন্তু কিভাবে!”
“আসলে…আমাদের খোঁজ রুবায়েত পেত না,ওরা পেয়েছে…আসলে… তোমার মা সাহায্য করেছে,and that’s how they traced us!”
“কি!!!আমার মা!!!”
চলবে…
লেখনীতে, #AbiarMaria