#Journeyepisode 11

0
220

#Journeyepisode 11

#১১

বাড়িটাতে পা রাখার আগেই ওদের কানে আসে ফুল ভলিউমে মিউজিক। আরো কয়েকটা ছেলেমেয়ের সাথে ওরাও ওখানে ঢুকে পড়ে।জেসমিন এদিক ওদিক খুঁজতে থাকে,কোথাও রাইফ নেই।বাড়ির সামনে বিশাল ইয়ার্ড,ইয়ার্ডের এক পাশে সুমিংপুল,আরেক পাশে সবাই পার্টি করছে,ডিজে গান বাজাচ্ছে।জেসমিন খপ করে জাফারের হাত ধরে ফেলে,
“জাফার ভাই,আমার খারাপ লাগছে,মাথা ঘুরছে।আমি একটু বসি,আপনি খুঁজে দেখেন ওকে,পারবেন না?”
“আয়হায়! মাথা ঘুরলে তো সমস্যা!ঐ যে,ওখানে চেয়ার আছে,ওখানে বস।তোমার সাথে সেলিমকে একটু রাখো,আমি দেখি তোমাদের জন্য জুস এনে দেই।…এই যে,এই! এখানে আসুন,উনাকে জুস দিন”
বলতে বলতেই ওয়েইটারের ট্রে থেকে জুসের একটা গ্লাস এনে জেসমিনের সামনে রাখে।
“এটা নাও,খেতে থাক,খারাপ লাগা কমবে।আমি আসছি”

জাফার ওদের বসিয়ে খুঁজতে যায় রাইফকে।মনে মনে ভাবছে,ওকে পাওয়া যাবে তো? আবার মন এটাও বলছে যে,রাইফ এখানেই হয়ত আছে।খুঁজতে খুঁজতে জাফার দেখে,এক কোণায় রাইফ পিলারের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে একটা ড্রিঙ্ক আর সামনে এক লোক মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, দুজন কথা বলছে।জাফার অন্য রকম আনন্দ পাচ্ছে,কারণ তার মন ভুল বলেনি।ধীর পায়ে রাইফের কাছে গিয়ে গলা খাঁকারি দেয়,
“এস্কুইজ মি,আপনি রাইফ সোবহান?”

যদিও জাফার উত্তরটা জানে,এও জানে যে রাইফ বাঙালি, ওকে এই প্রশ্নটা করার জন্য নিজের ভাঙা বাংলাটাকেই ব্যবহার করা যেত, কিন্তু তবুও ইটালিয়ান ভাষায় বলে ফেলে।রাইফ কিছুটা অবাক হয়ে জাফারের দিকে তাকায়।ইটালিয়া ভাষায় প্রশ্ন করে,
“আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না?”
“আমি জাফার।আসলে আপনার বান্ধবী আপনাকে খুঁজছিল।তাই…”
“আমার বান্ধবী? আমার জানামতে আমার কোন বান্ধবী তো আমাকে খোঁজার কথা না!অন্তত সিসিলিতে আমার কোন বান্ধবী থাকে বলে তো জানি না!”
“সে সিসিলির বাইরে থেকে এসেছে।আপনি তো রাইফ,তাই না?”
“ওয়েইট,ওয়েইট,কি বললেন?রাইফ?আমার নাম তো রাইফ না!আমার নাম সাইফ।রাইফ তো আমার জমজ ভাইয়ের নাম!আপনি কি আমার ভাইকে খুঁজছেন? ”

জাফার ধাঁধার মাঝে পড়ে যায়।জমজ ভাই!রাইফের কোন জমজ ভাই আছে,তা তো জানা ছিল না!এখন কি বলবে?মাথা চুল্কে আমতা আমতা করে বলে,
“ওহ…আসলে আমি জানি না…বোধহয় ভুল হয়েই গেল।আচ্ছা,আপনার ভাই কোথায়?”
“আছে,এখানেই কোথাও আছে,খুঁজলেই পাবেন।”
“ওহ…থ্যাংকস ”

জাফারের কাছে পাজেলের মত লাগে।মনে মনে পাজেল মেলানোর চেষ্টা করতে করতে জেসমিনের কাছে আসে।জাফারের এই চেহারা দেখে জেসমিন ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
“কি হল, পান নি এখানে রাইফকে?”
জাফার কি জবাব দিবে বুঝে না।
“রাইফের কি কোন জমজ ভাই আছে?”
জাফারের প্রশ্নে জেসমিন চোখ বড় বড় করে।
“জমজ ভাই আবার কোত্থেকে আসবে!ওর তো আছেই দুই বোন,আর ও একাই।কেন?রাইফ কি আপনাকে এই কথা বলেছে?”
“তাই তো! আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনি রাইফ কিনা,সে বলল,সে নাকি রাইফ না,সাইফ!বুঝলাম না,মজা নিল নাকি?”
“হা হা হা,জাফার ভাই!এটা ওর স্বভাব,ওকে কেউ না চিনতে পারলে বা কনফিউজড থাকলে এরকম করে!কোথায় ও?”

জাফার ওদের নিয়ে যায়।সেখানে গিয়ে দেখে রাইফ নেই।আবার ঘুরতে ঘুরতে ওকে ডিজের কাছে খুঁজে পায়,সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ডিজে কে গান বদলাতে বলছে।জেসমিন ওকে দেখে একেবারে নিশ্বাস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে পড়ে,পা দুটো আর সামনে আগাচ্ছে না।জাফার ওর হাত ধরে ছিল,কিন্তু পেছন দিকে টান খেতেই ঘুরে দেখে,জেসমিন তার হাত ধরেই দাঁড়িয়ে পড়েছে।জাফার টানে,কিন্তু জেসমিন নড়ছে না,এমনকি পলকও ফেলছে না।জাফার হাসে,জেসমিনকে দেখে এখন স্ট্যাচু অফ লিবার্টির মত লাগছে! জেসমিনের হাত ছেড়ে সেলিমকে নিয়েই রাইফের দিকে এগিয়ে যায়।রাইফের কাঁধে হাত রাখতেই সে ঘুরে থাকায়।
“হাই!একটু আগে আপনার সাতে…আমার দেকা হইছে।আপনার নাম তো… রাইফ,আপনে মিত্যা কেন বলছেন?”
“রাইফ জাফারের কথা শুনে হাসে,বিশেষ করে ওর ভাঙা বাংলা শুনে হাসি পাচ্ছে।তবুও হাসিটা চাপা দিয়ে বলে,
“আমি আমার বন্ধুদের একটু পরীক্ষা করি।আমার সত্যিকারের বন্ধু হলে সে ঠিকই বুঝে যায় যে আমার জমজ ভাই নেই।তবু আমি দুঃখিত এরকম করায়!”
“ইটস ওকে।আপনার বান্ধবী আপনাকে খুঁজছে… আমি ও হেল্প করতেছি।
” তাই নাকি!”
“হ্যাঁ,অনেক অনেক কথা শুনছি আপনার, তার সাতে ট্রেনে..দেকা হইছে।এই জন্য…”
রাইফ আর হাসি আটকাতে পারে না।পেট ধরে হাসতে হাসতে জাফারকে থামিয়ে বলে,
“প্লিজ,আপনি ইংরেজী, ইটালিয় ভাষা,যেকোন একটায় কথা বলুন,আমি দুটোই পারি,বাংলা বলতে হবে না এত কষ্ট করে!”
“ওহ,বাঁচালেন!আমি বাংলা পারিই না ভাল মত,অনেক ধন্যবাদ।যা বলছিলাম,আপনার বান্ধবী আপনার অনেক কথা ট্রেনে আমাকে বলেছে,অনেক কথা শুনেছি।আমরা সহযাত্রী ছিলাম ট্রেনের।উনি এই শহরের না,ভেনিসের,সেখান থেকে এসেছেন।আপনি মনে করতে পারছেন?ঐ যে বীচে আপনার সানগ্লাস এনে দিলাম?”
“হুম,হুম,মনে পড়েছে,আরে!আপনি দেখি সেই সানগ্লাস ফেরত দেয়া পাব্লিক!”
“জ্বী,তবে তখনও বুঝনি যে আপনিই রাইফ।যখন বুঝেছি, ওখান থেকেই আপনাকে অনেক ডেকেছি।কিন্তু আপনি কিছুই শুনেন নি,এরপর এখানে চলে আসলাম আপনাকে খুঁজতে খুঁজতে!”
রাইফ মাথায় হাত বুলায়।
“ওয়াও,আমাকে খুঁজতে কেউ এত কষ্ট করবে,এতটা ভাগ্যবান আমি!এ কিভাবে সম্ভব!আচ্ছা,আপনি যে আমার বান্ধবীর কথা বলছেন,কোথায় সে?”
জাফার পেছনে ফিরে জেসমিনকে ডাকতে গিয়ে দেখে ও নেই।আরে!মেয়েটা না এখানেই ছিল?

ওদিকে জেসমিনের পৃথিবী রাইফকে দেখেই থেমে গেছে।পৃথিবীর বাতাসের প্রবাহ থেমে গেছে, সূর্য পশ্চিমে আর ঢলছে না,মানুষ গুলো নড়ছে না,কোথাও কোন শব্দ নেই,কেউ দেখছে না ওকে।ও শুধু এক দৃষ্টিতে দেখছে রাইফকে।কিন্তু রাইফের সাথে কিভাবে কথা বলবে?জাফার ঠিক ওর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে,কিন্তু জেসমিন কিভাবে কথা বলবে?কি বলবে?কি দিয়ে শুরু করবে? উহ,হাত পা অসাড় লাগছে।জেসমিন কোনোমতে পা নাড়িয়ে ঘুরে দাঁড়ায়, পুলের কাছে এসে বসে পড়ে।পানিটা কি সুন্দর আকাশী রঙের!এটা কি শুধুই টাইলস এর জন্যে?নাকি নীল রঙ দেখে প্রশান্তি লাগে,তাই?জেসমিন ধীরগতিতে পুলের পানিতে পা ভিজায়।কি ঠান্ডা পানি!সুখে চোখবুঁজে আসে জেসমিনের।

পেছন থেকে জাফারের হাতের স্পর্শে জেসমিনের ধ্যান ভাঙে।ঘাড় ঘুরিয়ে জাফারের সাথে রাইফকে দেখে কেমন কৌতুক কৌতুক লাগে।পুল থেকে পা না উঠিয়েই ঘাড় ঘুরিয়ে রেখে মুখে একটা হাসি ঝুলিয়ে চোখ পিটপিট করে,আর মাথা নাড়ছে।ওর দেখাদেখি রাইফও হাসছে আর মাথা নাড়ছে।জাফারের কোন কথাই এখন জেসমিনের কানে আসছে না,ও শুধু রাইফকে দেখছে।জাফার দুজনের অদ্ভুত রেস্পন্স দেখে হেসে একপাশে সরে গেছে,থাকুক এখন ওরা ওদের মত।

জাফার সরে যেতেই রাইফ প্যান্ট গোটায়,আর জেসমিনের পাশে পুলে পা ডুবিয়ে বসে।
“কিরে,কেমন আছিস?”
রাইফের মুখে ওর জন্যে উচ্চারিত শব্দগুলো শুনে হাসি পাচ্ছে,ইশ,এই গাধাটা এই সাধারণ কথাগুলো এত সুন্দর করে কিভাবে বলে?মুখে হাসির রেখা ধরে রেখে মাথা হেলায় দুপাশে,এর মানে হ্যাঁ হতে পারে,নাও হতে পারে।রাইফ আবার জিজ্ঞেস করে,
“দিনকাল কেমন যাচ্ছে?”
জেসমিন জবাবে শুধুই হাসে।রাইফ কি বলবে বুঝে না।
“কি রে,কথা বলবি না?নাকি কথা ভুলে গেছিস?জাফারের কাছে তো আমার কথা নাকি অনেক বলছিস,এখন কথা বলিস না কেন?”
এই প্রথম জেসমিন মুখ খুলে,
“জাফার ভাইকে তো এটাই বলেছি যে,তোকে খুঁজতে এখানে এসেছি,এর বেশি কিছু না।কেমন আছিস তুই?”
এবার রাইফ শুধু মাথা নাড়ে।জেসমিন হাসে।

দুজন পুলে বসেই সেরকম গল্প করতে শুরু করে দেয়,ঠিক আগের মত! মেতে উঠেছে গল্পে,আড্ডায়,হাসাহাসিতে,দুষ্টুমিতে।

ওদিকে জাফার সেলিমকে অনেক কষ্টে আটকে রেখেছে।ছেলেটা তখন থেকে কাঁদছে,এই হৈচৈ ওর ভালো লাগছে না।কিন্তু জাফার জেসমিনকে না বলে যেতেও পারছে না।ওদের নিজ গন্তব্যে যাবার সময় হয়েছে…

চলবে…

লেখনীতে, #AbiarMaria

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here