#যে_গল্পের_নাম_ছিলনা পর্ব ২৭

0
434

#যে_গল্পের_নাম_ছিলনা পর্ব ২৭
-Farhina Jannat

২৭.
পরদিন সকালে নাস্তার টেবিলে রাইয়্যানকে দেখতে পেলনা সিদ্রা। ওকে এদিকওদিক তাকাতে দেখে খালাই উত্তর দিয়ে দিল, রাইয়্যান বাইরে গেছে। ধরা পড়ে গিয়ে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল সিদ্রা, চুপচাপ নাস্তা খেতে থাকল।

খালা ওকে এই পা নিয়ে কিছুই করতে দিলনা, সারাদিন শুয়ে বসে বই পড়েই কাটিয়ে দিল সিদ্রা। বিকেলে নিচে নেমে অবাক হয়ে গেল, বড় সোফাটা শপিং ব্যাগ দিয়ে ভরা।

“এগুলো কি খালা?” জিজ্ঞেস না করে পারলনা ও।

“তোর থুড়ি, আমার বউয়ের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র” ওর পেছন থেকে উত্তর দিল রাইয়্যান।

“প্লিজ আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিবেননা, ফারদার আমার সামনে বউ কথাটা উচ্চারণ করবেননা আপনি” ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল সিদ্রা, চোখেমুখে স্পষ্ট বিরক্তির চিহ্ন।

“উপস! তাই নাকি? কিন্তু কি করি বল, সবাই তো এখন জেনে গেছে তুই আমার বউ, না ডেকে কিভাবে থাকি!”

উফ! এই লোকের কথা শুনে মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে, আমি বরং উনার সামনে থেকে যাই, সিঁড়ির দিকে এগোল সিদ্রা। ওর হাত ধরে ফেলল লোকটা, “ওয়েট! আমার কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ আমার সামনে থেকে যাওয়ার সাহস পায়না, আই ডোন্ট লাইক দ্যাট”

হাতটা ছাড়িয়ে নিল সিদ্রা, “ফালতু কথা শুনতে আমার ইচ্ছে করছেনা, এখন এজন্য কি আমাকে গুলি করবেন না ফাঁসি দিবেন?”

“যাচ্চলে! আমি কোথায় তোর জন্য এতকিছু কিনে আনলাম, তুই উল্টে আমাকেই ভাব দেখাচ্ছিস!”

“আমার কিছু দরকার নেই, যেভাবে আছি, সেভাবেই থাকব, ধন্যবাদ”

“তোর দরকার নাই, কিন্তু আমার আছে। আমার একটা রেপুটেশন আছে। তুই এখন এই টি এস্টেটের মালকিনের রোল প্লে করছিস। তোর সাজপোশাক সেই অনুসারে হতে হবে তো! নাইলে কি আমার মান-সম্মান থাকবে?”

সিদ্রার ওড়নার কোনাটা তুলে ধরল রাইয়্যান, “আজ থেকে এই দুইটা ড্রেস রিজেক্টেড। নতুন আনা ড্রেসগুলো বাদ দিয়ে যদি এগুলো পরতে দেখেছি, তোর কপালে অশেষ দুঃখ আছে”

আগুন চোখে রাইয়্যানের দিকে তাকাল সিদ্রা, কিন্তু কিছু বললনা।

“আর হ্যাঁ, বুবু জিজ্ঞেস করেছিল তোর কথা, আমি বলেছি তুই দিব্যি হেঁটেচলে বেড়াচ্ছিস। আজকে রাতে বুবুর বাসায় আমাদের দাওয়াত। সেজন্যই এত সাত তাড়াতাড়ি করে এগুলো কিনতে হল। যা, রেডি হয়ে নে, আমরা সন্ধ্যার পর বের হব”

“আমি কোথাও যাবোনা। এখানে এসে আমার বোরকাটা খুঁজে পাইনি। আপনারা মনে হয় সেটা জঙ্গলেই ফেলে এসেছেন। বোরকা ছাড়া আমি কোথাও যেতে পারবোনা”

রাইয়্যান কিছু বলতে যাচ্ছিলো, সিদ্রা থামিয়ে দিল ওকে, “আর হ্যাঁ, এ বিষয়ে আমাকে মুনিরা কেন, আমার চৌদ্দ গুষ্টির মৃত্যুর ভয় দেখালেও কাজ হবেনা। আমি পর্দার সাথে কোন কম্প্রোমাইজ করতে পারবোনা”

“তুই না দিনে দিনে বড্ড বাজে বকছিস। না জেনে এত কথা বলিস কেন? নতুন বোরকাও আছে ব্যাগের মধ্যে, যা এবার রেডি হ জলদি জলদি”

শপিং ব্যাগ এতগুলো যে দুই হাতে নিয়েও শেষ করতে পারলোনা সিদ্রা, বাকিগুলো খালা নিয়ে চলল ওর পেছন পেছন। হায়রে, লোকটা মনে হচ্ছে পুরো বাজার তুলে এনেছে! সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে ভাবল সিদ্রা।

***
বিছানার উপর সবগুলো জিনিস বের করে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল সিদ্রা। ড্রেসই আছে মনে হয় কমপক্ষে দশটা। তারপর আছে হালকা, ভারী কয়েক ধরণের সোনার গয়না, ডায়মন্ড জুয়েলারি, তেল শ্যাম্পু সহ সব ধরণের কসমেটিকস, মেকআপ কিট, কয়েক সাইজের হ্যান্ডব্যাগ, বেশ কয়েক জোড়া জুতা-স্যান্ডেল, আর দুই সেট বোরকা। সবগুলোই যে অনেক দামী আর ব্র‍্যান্ডেড, বুঝতে অসুবিধা হলনা ওর। উনি কি পাগল! একটা মানুষের কি এতগুলো জিনিস লাগে! বাকিগুলোর কথা না হয় বাদই দিলাম, এতগুলা জুতা আর ব্যাগ দিয়ে মানুষ কি করে! এমন না যে, সিদ্রাদের ফ্যামিলি গরীব। আর্থিক সামর্থ্য আল্লাহ্‌ যথেষ্টই দিয়েছেন। কিন্তু অপচয় পছন্দ করেনা ওরা, সবসময় পরিমিত জিনিস ব্যবহারে অভ্যস্ত।

সিদ্রা সবথেকে অবাক হল ড্রেসগুলো দেখে। থ্রিপিস আর হাল ফ্যাশনের লং ড্রেস, কোনটা গর্জিয়াস আবার কোনটা বাসায় পরার মত সাধারণ। কিন্তু সবগুলোই বড় ওড়না আর বড় হাতা ওয়ালা। একটা ওড়না বা হাতাও শিফন কিংবা পাতলা ফিনফিনে নয়। মোটকথা একটা ড্রেসও এমন নয় যে ও পরতে আপত্তি করবে। উনি কিভাবে বুঝলেন, আমি এমন ড্রেস ছাড়া পরিনা। এমন ড্রেস খুঁজে পাওয়া যে কত কষ্টকর, ভালই জানা আছে সিদ্রার। বাজারে এমন ঢিলেঢালা আর পর্দা সম্মত পোষাক খুঁজে পেতে সবসময়ই ঝামেলা পোহাতে হয় ওদের, পুরো মার্কেট চষতে হয় অনেকসময়। সেখানে উনি এতগুলো পোষাক কিভাবে পেলেন, আল্লাহ্‌ জানে। বোরকা দুটোর দিকে নজর দিল এবার। দুইটাই একদম ও যেমন পরে। সাথে আবার দুই জোড়া করে হাত-পায়ের মোজাও আছে। এরপর আর কিছুতেই লোকটার ওপর রাগ করে থাকতে পারলোনা ও।

খালা ওকে তৈরি হতে সাহায্য করল। খালার জোরাজুরিতে গোল্ডেন কালারের অসম্ভব সুন্দর একটা গর্জিয়াস ড্রেস পরতে হল ওকে, সিদ্রাও খুব বেশি আপত্তি করলনা কারণ বোরকা তো উপরে পরবেই। তারপর সবথেকে ভারী সোনার গয়নাগুলো পরিয়ে আয়নার সামনে ওকে যখন খালা দাঁড় করাল, নিজেকে চিনতে পারছিলোনা সিদ্রা। কোন সাজগোজ ছাড়াই ওকে একদম নতুন বউ এর মত লাগছে।

খালা এবার মেকআপ কিটটা নিয়ে আসল ওর সামনে, সরে গেল সিদ্রা। “না খালা, পোশাক পরেছি, গয়না পরেছি, কিন্তু কোন সাজগোজ না, প্লিজ!”

খালা অন্তত কাজলটা দেয়ার জন্য অনুরোধ করতে লাগল, কিন্তু কিছুতেই রাজি হলনা সিদ্রা। বোরকা পরে রেডি হয়ে নিল।

***
বুবুর বাসায় যেতে পায়ে হেঁটে মাত্র পাঁচ মিনিট লাগলো। ঠিকই ধরেছিল সিদ্রা, বাংলোটা একটা বড়সড় টিলার ওপর। চওড়া একটা রাস্তা সেই টিলা ঘুরে ঘুরে নিচে নেমেছে। আবার বুবুর বাসাটাও আকারে ছোট আরেকটা বাংলো, পাশেই আরেকটা ছোট টিলার ওপর।

কাজের লোক এসে দরজা খুলে দিলে বুবু এসে সিদ্রাকে জড়িয়ে ধরে ওয়েলকাম করলো। বুবু আজকে একটা শাড়ি পরে আছে। কথায় আছে না, বড় বোন মায়ের সমান, বুবুকে দেখে কথাটার সত্যতা অনুভব করল সিদ্রা।

সোফায় বসতেই বুবু তেড়ে উঠলো, বোরকা না খুলে কিছুতেই বসা যাবেনা। অপ্রস্তুত হয়ে গেল সিদ্রা, এমনটা হতে পারে ভাবেইনি। আপত্তি করতে যাচ্ছিল ও, চোখ গরম করল শয়তান লোকটা। তবু মিনিমিন করে বলার চেষ্টা করল ওড়না আনেনি, ওমনি খালা বিশ্বাসঘাতকের মত হাসিমুখে ওড়নাটা বের করে দিল। কখন আমার চোখ এড়িয়ে ওড়নাটা ঢুকিয়েছিল আল্লাহ্‌ই জানে। বিরূপ মনে পাশের ঘরে ঢুকল সিদ্রা বোরকা খুলতে। খালা, আপনি এভাবে আমাকে ফাঁসাবেন জানলে আমি আপনার কথা কিছুতেই শুনতামনা, এখন এই পোশাকে ওই লোকটার সামনে যেতে হবে আমাকে?

ওড়নাটা ভালভাবে পরল সিদ্রা, সবসময়ের মত শুধু মুখটা খোলা। কিন্তু জানে, ওড়নাটা এত সুন্দর যে, এটুকুতে ওর চেহারার সৌন্দর্য ঢাকার পরিবর্তে আরো প্রকট হচ্ছে। আল্লাহ্‌! নিজের না, বোনের জীবন রক্ষার্থে আজ এভাবে পর্দার খেলাফ করতে হচ্ছে আমাকে। আমি কি ঠিক করছি, না ভুল? আমাকে ক্ষমা করো প্রভু, দয়া করে আমাকে পথ দেখাও, আমি যে ঠিক ভুল সব দিশা হারিয়ে ফেলছি! বুবু বাইরে থেকে ডাক দিতেই চোখে চলে আসা পানিটা মুছে বের হল সিদ্রা।
রাইয়্যান সিদ্রাকে দেখে পুরো হা হয়ে গেল, অপলক চোখে তাকিয়ে রইলো, মেয়েটা আসলেই এত সুন্দর নাকি ও স্বপ্ন দেখছে! বুবু তো খুশিতে প্রায় লাফালাফি শুরু করে দিল, “ভাইটু, তুই ড্রেসটা ওকে দিয়েছিস! পরিয়েও এনেছিস! থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু, আমি খুব খুব খুব খুশি হয়েছি”

সিদ্রা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল বুবুর কথা শুনে। বুঝিয়ে বলল বুবু, “তোর মুখ দেখেই বুঝতে পারছি, ওই মুখচোরাটা কিছু বলেনি তোকে“ ওকে ধরে রাইয়্যানের পাশে বসিয়ে দিল, জড়সড় হয়ে একটু সরে গেল সিদ্রা, বুবু খুশির চোটে বিষয়টা খেয়াল করলনা।

“আমি বলছি শুন, গত ঈদের শপিং এর সময় এ ড্রেসটা রাইয়্যানের অনেক পছন্দ হয়। আমাকে ছাড়া তো আর কোন মেয়েকে চিনেনা এই ছাগলটা, বলে কিনা আমাকে কিনে দিবে। তুই বল, এসব পরার বয়স আছে আমার? তখন আমি ওকে জোর করে এটা কিনে দিয়েছিলাম, যাতে ও এটা বিয়ের পর ওর বউকে দেয়। আর আজ ও আমার কথা রেখেছে, আই এম জাস্ট টু….. হ্যাপি! তোকে ভীষণ মানিয়েছে ড্রেসটাতে, জাস্ট অপূর্ব লাগছে! কিরে, দেখেছিস আমি যা করি, ঠিকই করি” শেষের কথাটা রাইয়্যানের দিকে তাকিয়ে বলল বুবু।

“হুম, তুমি কি আর ভুল হতে পারো! কাভি নেহি!” দুইহাতের বুড়ো আঙুল উঁচিয়ে রাইয়্যান এপ্রিসিয়েট করল বুবুকে। সিদ্রা ওড়নার নিচে দুহাত মুঠো করে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করতে লাগল। দিস ইজ জাস্ট টু মাচ, উনার বউয়ের জন্য কেনা ড্রেস উনি আমাকে দিবেন কেন? খালা এজন্যই এত জোর করে পরিয়েছে ড্রেসটা। নাহ! খালা আজ যা করল, এরপর খালাকেও আর বিশ্বাস করতে পারবনা। বুবুর হাতের ছোঁয়ায় ভাবনা থেকে বাস্তবে ফিরে এল সিদ্রা।

“কানে গলায় কি পরেছিস দেখি?” সিদ্রার হাত দুটো নিয়ে চুড়িগুলো নেড়েচেড়ে দেখার পর হাত বাড়িয়ে নিজেই ওড়নাটা খুলতে গেল বুবু। কোনমতে আটকাল সিদ্রা, নিজেই ওড়নাটা আলগা করে দুহাত দিয়ে এমন করে ধরল, যাতে বুবু দেখতে পায় কিন্তু পাশে থাকা লোকটা দেখতে না পায়।

“মা শা আল্লাহ্‌! আমার ভাইয়ের চয়েস আছে। একদম রাণীর মত লাগছে তোকে। উঁহু, ভুল বললাম, তুই তো রাণীই” থুতনিটা ধরে আঙুলে চুমু খেল বুবু। হুহ! রাণী! বন্দি দাসী আমি বুবু, আপনি আর কি জানেন, মনে মনে বলল সিদ্রা।
আবার আগের মত করে ওড়নাটা পরে নিতেই বুবু আপত্তি করে উঠলো, “ওইভাবেই রাখনা, গয়নাগুলো দেখা গেলে বেশি সুন্দর লাগছে” আরেকটু হলেই জোরে প্রতিবাদ করে ফেলছিল, সামলে নিল সিদ্রা, আস্তে করে বলল, “প্লিজ বুবু, আমি সতর ঢাকা অবস্থায় থাকতেই বেশি পছন্দ করি”

ওর কথা শুনে বুবু একটু অবাক হয়ে গেল, স্বামীর সাথে আবার কিসের সতর? কয়েক মুহূর্ত কি বলবে যেন বুঝতে পারলনা। পরক্ষণেই সামলে নিয়ে বলল, “তোদের নিশ্চয় ক্ষুধা লেগে গেছে, আয় খেতে খেতে কথা বলি”

খেতে বসে তেমন কিছুই বললনা সিদ্রা, শুধু হু হা করে গেল, আর বুবুর মুখে যেন কথার ফুলঝুরি। একটা জিনিস ভালভাবে উপলব্ধি করল সিদ্রা। বুবু অনেক একলা একজন মানুষ, কারো সাথে প্রাণখুলে কথা বলার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকেন। আজ ওকে পেয়ে উনার বাঁধ ভেঙে গেছে।

খাওয়ার মাঝখানে যখন রাইয়্যান সিদ্রার দিকে তাকিয়ে বলল, “আমাকে একটু পানি ঢেলে দাওতো”, সিদ্রার তো বিষম খাওয়ার যোগাড়। লোকটা তো ভালই পারে, বুবুর সামনে কি সুন্দর ভাল হাজবেন্ডের মত তুমি তুমি করছে! আমাকে সবসময় নাটুকে বলা, এদিকে নিজে যে অভিনয়ে সিদ্ধহস্ত তার দিকে কোন খেয়াল নাই, হুহ!

কিন্তু বিপদ বাঁধল তখন, যখন সিদ্রা রাইয়্যানকে আপনি করে বলল।
“এই তোরা নাকি ভালবেসে বিয়ে করেছিস, তাহলে এসব আপনি আজ্ঞে আসছে কোথা থেকে?” বুবু যেন আকাশ থেকে পড়েছে।

রাইয়্যানের রাগ আঁচ করতে পারলো সিদ্রা, বুঝতে পারলো, ওকেই ব্যাপারটা সামলাতে হবে। বলল,
“আসলে বুবু, আমার আম্মুকে সবসময় দেখেছি আব্বুকে আপনি আপনি করে বলে, তো আমিও সেজন্য উনাকে আপনি করে বলি” চট করে ব্যাপারটা মাথায় আসায় মনে মনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করল।

“এ্যাঁ, এই আধুনিক যুগে এমন সেকেলে চিন্তা তোর মাথায় কিভাবে আসলো, আমি তো সেটাই বুঝতে পারছিনা। না না, এসব চলবেনা, তুমি বলতে হবে”

রাইয়্যান সিদ্রার উপর রেগে ফায়ার হয়ে গেছিল, কিন্তু এত বুদ্ধি করে উত্তর দিবে সিদ্রা সেটা আশা করেনি, হতবাক হয়ে গেছিল তাই, এখন সায় দিল বুবুর কথায়।

“প্লিজ তুমিই কিছু কর বুবু, আমি তো বলতে বলতে হাল ছেড়ে দিয়েছি”

“এরপরে আপনি আজ্ঞে শুনলে না, ওকে পিট্টি দিব আমি”

“না বুবু প্লিজ প্লিজ, এমন করবেননা। আপনি অনেক ভাল, আমার এভাবে ডাকতেই ভাল লাগে, প্লি…..জ!” মুখটাকে যতটা সম্ভব করুণ করার চেষ্টা করলো সিদ্রা।

“ওরে পটানি রে, আচ্ছা মানতে পারি, কিন্তু একটা শর্ত আছে”

“কি শর্ত?”

“এখন এই মুহূর্ত থেকে আমাকে তুমি করে বলতে হবে”

বুবু কি না কি শর্ত দেয়, ভীষণ টেনশনে পড়ে গিয়েছিল সিদ্রা, কিন্তু বুবুর কথা শুনে ফিক করে হেসে দিল। উঠে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো বুবুকে, “বুবু, তুমি না অনেক সুইট”

সিদ্রার কষ্ট দেখে আনন্দ পাওয়ার কথা, আর আনন্দ দেখে কষ্ট। অথচ সিদ্রার হাসিমাখা মিষ্টি মুখটা দেখে এত ভাল কেন লাগছে, কিছুতেই বুঝতে পারলনা রাইয়্যান।

“কিন্তু জাস্ট কিছুদিনের জন্য, তার পরেও চেঞ্জ করতে না দেখলে তোর খবর আছে”

বাপরে! এরা ভাইবোন তো কথায় কথায় সবার খবর করে ছাড়ে! ভাবল সিদ্রা।

এরপর বুবু ওর হাতে মোটা মোটা একজোড়া বালা পরিয়ে দিল, এগুলো নাকি ওর শাশুড়িমায়ের স্মৃতি! বুবুকে দিয়েছিল, এখন উনি সিদ্রাকে দিচ্ছে। এত খারাপ লাগলো সিদ্রার, কার না কার হক, ওকে দিচ্ছে। লোকটার উপর আরও রাগ উঠলো ওর, এমন একজন ভালমানুষকে কিভাবে ঠকাচ্ছে লোকটা।

চলে আসার সময় সিদ্রাকে প্রমিস করতে হল বুবুর কাছে, উনার ভাইটু এখানে না থাকলে ও বুবুর কাছে এসে গল্প করবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here