#যে_গল্পের_নাম_ছিলনা পর্ব ৪০

0
405

#যে_গল্পের_নাম_ছিলনা পর্ব ৪০
-Farhina Jannat

৪০.
ঝর্ণার সামনে দাঁড়িয়ে স্মৃতিচারণ করছে সিদ্রা। এখানে আসার পর থেকে ঘটে যাওয়া একেকটা ঘটনা একের পর এক ভেসে উঠছে চোখের সামনে। এখনও ওর বিশ্বাস হচ্ছেনা, এতদিনের সকল কষ্টের অবসান হয়েছে, ও এখন সম্পূর্ণ মুক্ত। রাত পার হলেই ফিরে যাবে আম্মু আব্বুর কাছে, যাদেরকে আরেকবার দেখতে পাওয়ার আশাও ছেড়ে দিয়েছিল ও। আল্লাহ্‌ চাইলে কি না করতে পারেন, কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে সব কেমন বদলে গেল। তবে মুক্তির আনন্দ পুরোপুরি উপভোগ করতে পারছেনা সিদ্রা, বুবুর জীবনে যা ঘটেছে সেটা মনে পড়ে অজানা আশঙ্কায় বুকটা কেঁপে উঠছে বারবার।

চলে যাওয়ার আগে পাহাড়ের উপরে ঝর্ণাপাড়ে শেষবারের মত খালার সাথে বেড়াতে এসেছে ও। এই ঝর্ণাপাড়ে কাটানো একেকটা মুহূর্ত, খালার থেকে সাঁতার শেখা, ভোরবেলা সূর্যোদয় দেখা কিছুই ভুলতে পারবেনা ও। বুঝতে পারছে, কি প্রচণ্ড মিস করবে এই ঝর্ণাটাকে। কাপড়চোপড়ও নিয়ে এসেছে, খালার শেখানো সাঁতার কতটা মনে আছে পরীক্ষা করতে চায়। অনেকক্ষণ ধরে সাঁতার কেটে উপরে উঠল দুজনে। কাপড় বদলে ঘাসের উপরে যোহরের নামাজ আদায় করে নিল। এরপর পরিপূর্ণ পর্দা করে আস্তে আস্তে ফারহানের কবরের কাছে এসে দাঁড়াল সিদ্রা।

কবরের দিকে তাকিয়ে অশ্রুসজল নয়নে বলল, “আমি জানিনা ভাই, কতটা ভয়াবহ আযাব তুমি ভোগ করছো। আমার দোয়াতে তোমার কতটুকু কষ্ট লাঘব হবে, আমি তাও জানিনা। কিন্তু আমি প্রতিটা মোনাজাতে আল্লাহর কাছে তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব। চিন্তা করোনা তুমি, মুনিরাও দোয়া করবে তোমার জন্য, আর ইন শা আল্লাহ্‌ তোমার ভাইও। এতজনের দোয়ায় ইন শা আল্লাহ্‌, আল্লাহ্‌ তোমার আযাব কমিয়ে দিবেন, চাই কি মাফও করে দিতে পারেন। আমি আর কোনদিন হয়ত এখানে ফিরবনা, কিন্তু যেখানেই থাকিনা কেন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোমার জন্য দোয়া করব, আমার বোনের পক্ষ থেকে কথা দিলাম”

এরপর বসে পড়ল ও কবরের কাছে, দুহাত তুলল আল্লাহ্‌র দরবারে। প্রায় একঘণ্টা ধরে কেঁদেকেঁদে ফারহানের জন্য মোনাজাত করল ও। পাশে খালাও হাত তুলে মোনাজাতে শামিল হল ওর সাথে।

বনের মাঝ দিয়ে ফিরতি পথে হাঁটছে সিদ্রা আর খালা। খালার মুখটা আষাঢ়ে মেঘের মত থমথমে, যেন এক্ষুনি বর্ষণ শুরু হবে। কালকে যখন রাইয়্যান এসে খালাকে সব কথা খুলে বলল, সিদ্রা নির্দোষ শুনে যারপরনাই খুশি হয়েছিল খালা। রাইয়্যানকে ইশারায় বলেছে, “আমি যে মানুষ চিনতে ভুল করিনা, প্রমাণ হল তো?” ঠিক তারপরেই যখন জানতে পারলো, সিদ্রা চলে যাবে এখান থেকে, সেই যে কান্না শুরু করল, আর থামছেইনা। খালা ওকে ভালবাসে জানত সিদ্রা, সেটা যে এতো বেশি, ভাবেনি ও! কাল রাতে কয়বার যে বলেছে, ওই লোককে যেন ও বিয়ে করে নেয়, সিদ্রা না বোঝার ভান করে এড়িয়ে গেছে।

এতদিন তাও একটা পরিস্থিতিতে পড়ে ছিল, এখন এ কথার কোন মানে হয়না। যদিও আন্দাজ করতে পারছে, বাড়িতে ফেরার পর বুবুর মতই ভয়ানক পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে ওকে, কলংক লাগাতে এক মুহূর্ত দেরী করবেনা কেউ, কিন্তু সেই কলংকের ভয়ে তো ও বিয়ে করতে পারেনা। আচ্ছা, সেই বখাটে ছেলেটার মতো উনিও যদি আমাকে ভালোবাসতেন, তাহলেও কি আমি বুবুর মতো না করতাম! না না, ছি ছি, নিজেকে বাঁচানোর জন্য আমি কি ভাবছি এসব! আল্লাহ্‌ যা লিখে রেখেছেন, তাই হয়েছে এতদিন আর ভবিষ্যতেও হবে, আমি কেন এতো চিন্তা করছি!

***
ড্রাইভ করতে করতে একটু পরপর সিদ্রার দিকে তাকাচ্ছে রাইয়্যান। কিন্তু সিদ্রার সেদিকে খেয়াল নেই, ও তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে।

শেষ একটা রিকোয়েস্ট করেছিল রাইয়্যান, যেভাবে এনেছিল সেভাবে ফিরিয়ে দিয়ে আসতে চায়, ওকে ড্রাইভ করে ঢাকা নিয়ে যেতে চায়। যদিও বাসায় ফেরার জন্য তর সইছেনা, কিন্তু লোকটার লাস্ট রিকোয়েস্ট বলে রাজি হয়েছে সিদ্রা।

জানেনা কেন, বাসায় ফেরার এক্সাইটমেন্টের পাশাপাশি একটা চিনিচিনে কষ্ট হচ্ছে ওর। ও তো মুক্তি পেতেই চেয়েছিল, তাহলে আসার সময় এতো কাঁদল কেন? যদিও বুবু অসুস্থ বলে সত্যিটা জানানো হয়নি, হানিমুনে যাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে এসেছে ওরা, লোকটা পরে সবটা জানাবে বলেছে। মাত্র তিনমাসে এতটা মায়া পড়ে যাবে মানুষগুলোর উপরে, কল্পনাও করেনি ও। এমনকি এই লোকটার জন্যেও কষ্ট হচ্ছে, কেন হচ্ছে ঠিক বুঝতে পারছেনা। তাকাল ও রাইয়্যানের দিকে,
“আচ্ছা, আমাকে যেদিন নিয়ে এসেছিলেন, আমি তো অজ্ঞান ছিলাম, কোথায় রেখেছিলেন আমাকে?”

“ইয়ে মানে, ওইসব জেনে আর কি হবে” ইতস্তত করছে রাইয়্যান।

“এত ইতস্তত করছেন তার মানে খুব খারাপভাবে এনেছিলেন, বনেটের ভেতরে করে?” ভ্রু নাচিয়ে বলল সিদ্রা।

“আরে না না, তাহলে তো চেক করলে ইজিলি ধরা খেয়ে যেতাম। পেছনের সিটের নিচে রেখে উপরে শিট দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলাম।” অনেক কষ্টে উচ্চারণ করল রাইয়্যান, ভাবতে এখন কত খারাপ লাগছে ব্যাপারটা।

উত্তরে আর কিছু বললনা সিদ্রা, মুখ ফেরাল রাস্তার দিকে। কিছুক্ষণ পর একটা মসজিদ চোখে পড়তেই আবার ঘুরল রাইয়্যানের দিকে,
“আমি অনেকদিন থেকে একটা কথা ভাবছিলাম, কিন্তু প্রশ্ন করার সাহস পাইনি। আর তো কোনদিন সুযোগ হবেনা, এখন করতে পারি কি?”

“শিওর!”

“আপনি নামাজ পড়েননা কেন? আমি জানি আমি অনধিকারচর্চা করছি, কিন্তু এটা আমার একটা কৌতূহল বলতে পারেন” অনেক হেজিটেশান নিয়ে জিজ্ঞেস করল সিদ্রা।

“উম্ম, আমি ঠিক জানিনা”

“মানে?” হতভম্ব দেখাল সিদ্রাকে।

“মানে, সত্যি বলতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার তাগিদ কেউ কখনও দেয়নি আর আব্বু আম্মুকেও কখনও বাসায় নামাজ পড়তে দেখিনি। আব্বু মাঝেমাঝে জুমার নামাজ পড়ত আর দুই ঈদের নামাজে যেত, আমিও সেটাই করি”

“কিন্তু, নামাজ বেহেশতের চাবি! দুনিয়াতে যাই করেন না কেন, নামাজ না পড়লে বেহেশতে ঢুকতে পারবেন না আপনি”

“আমি যতদূর জানি, আত্মহত্যা করলে মানুষ দোজখে যায়! আমার ভাই যদি বেহেশতে যেতে না পারে, আমি সেখানে গিয়ে কি করব?”

“নাউজুবিল্লাহ! আস্তাগফিরুল্লাহ! আল্লাহ্‌ আপনাকে ক্ষমা করুন, সহী বুঝ দান করুন” বিড়বিড় করে বলল সিদ্রা, “সেজন্যই তো আপনার আরো বেশি নামাজ পড়া উচিত”

“ঠিক বুঝলামনা”

“দেখেন, কেউ আত্মহত্যা করলে সরাসরি দোজখে যাবে, এটা বলা আছে, কিন্তু তাকে যে আল্লাহ্‌ কোনদিন ক্ষমা করবেননা, এমনটা কিন্তু বলা নেই। এখন আপনার কি উচিত না, আপনার ভাইয়ের গোনাহ মাফের জন্য, তার আজাব কমিয়ে দেয়ার জন্য, তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা? আপনি ওর একমাত্র ভাই, আপনার দোয়া এখন ওর সবথেকে বেশি প্রয়োজন। আপনি ও বেঁচে থাকতে ওর জন্য কি কি করতে পারেননি সেটা ভেবে আফসোস করছেন, কিন্তু ওই কবরের ভেতরে কতইনা আজাব ভোগ করছে ছেলেটা, আপনার দোয়া হয়ত একটু হলেও লাঘব করবে ওর কষ্ট। কিন্তু আপনি সেটা না করে নিজেও জাহান্নামে যেতে চাইছেন! কেমন ভাই আপনি!?”

সিদ্রার কথায় অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো রাইয়্যানের। “আমি নামাজ পড়ে দোয়া করলে ওর কষ্ট কমবে?”

“কমবে ইন শা আল্লাহ্‌। মানছি ফারহান অনেক বড় গুনাহ করেছে, কিন্তু কাফের তো আর হয়ে যায়নি। ওর মধ্যেও তো ইলমে দ্বীনের ঘাটতি ছিল, ও তো বুঝেনি, যে কষ্ট থেকে ও বাঁচতে চাইছে, তার থেকে কত কতগুণ বেশি কষ্ট অপেক্ষা করছে ওর জন্য। আত্মহত্যার পরিণাম কতটা ভয়াবহ ওর হয়ত আন্দাজই ছিলনা। আত্মহত্যা অনেক বড় পাপ, আর সেই পাপের সাজা ওকে ভোগ করতে হচ্ছে। কিন্তু আল্লাহ্‌ তো অসীম দয়ালু, পরম করুণাময়। আল্লাহ্‌ চাইলে কি সেই শাস্তি মওকুফ করে দিতে পারেননা, নিশ্চয় পারেন। আপনি যে ওর জন্মদিনে মোমবাতি জ্বালিয়ে ঘর সাজিয়ে কেক সাজিয়ে বসে ছিলেন, তাতে কি ওর কোন ফায়দা হবে? হবেনা। বরং আপনি যদি ওর নামে রোজা রাখেন, দানসদকা করেন, আরো যে ভাল ভাল কাজ আছে সেগুলো করেন, আর তার বিনিময়ে আল্লাহ্‌ ওর কবরের আযাব কমিয়ে দেন, তাহলেই তো ওর আসল ফায়দা হবে, তাইনা?”

মনের ভেতর যেন দপ করে আলো জ্বলে উঠল রাইয়্যানের। একটু আগেও ওর মনে হচ্ছিল, ফারহান চলে গেছে আর এখন সিদ্রাও চলে যাচ্ছে, জীবনের আর কোন মানে নেই, কিন্তু এখন যেন বেঁচে থাকার নতুন উদ্দেশ্য খুঁজে পাচ্ছে ও।

“আর ওই যে পরশুদিন আপনি বললেন, আপনার অবসরের কোন প্রয়োজন নেই, সেটা সম্পূর্ণ ভুল। এতো কাজ করে কি করবেন আপনি? আরও বড় বিজনেসম্যান হবেন, আরো বেশি সম্পত্তির মালিক হবেন, এইতো! কিন্তু দুনিয়ার জীবন কয়দিনের? মৃত্যুর পর এসব কি কাজে আসবে আপনার? এসব সম্পত্তির উত্তরাধিকারী তো ফারহানও ছিল, ও কি কিছু সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পেরেছে? কয়েক টুকরো সাদা কাপড় ছাড়া কিছুই কি গেছে ওর সঙ্গে? তেমনি আপনার সাথেও যাবেনা। তাই, শুধু দুনিয়ার জন্য না, দয়া করে আখিরাতের জন্যেও কিছু উপার্জন করার চেষ্টা করুন। প্রায়শ্চিত্তের কথা বলছিলেন না, ধরে নিন না, নতুন করে জীবনটাকে সাজানোই হবে আপনার প্রায়শ্চিত্ত!”

অবাক হয়ে সিদ্রার কথাগুলো যেন গিলছিল রাইয়্যান। কিভাবে পারে ও, এতো সুন্দর করে বোঝাতে! সিদ্রা নিজেও জানতে পারলোনা, ওর সামান্য ক’টা কথায় মৃতপ্রায় একটা গাছে নতুন করে প্রাণসঞ্চার হল।

“ঠিক বলেছো তুমি, জীবনটাকে নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসে গেছে। আমি চেষ্টা করব, সর্বোচ্চ চেষ্টা করব”

“ইন শা আল্লাহ্‌!” খুশি হয়ে বলল সিদ্রা।

কিন্তু সেই কাজটা কতইনা সহজ হত, যদি তুমি পাশে থাকতে! কিন্তু আমি যা করেছি তোমার সাথে, তারপর আর সেটা চাওয়ার মতো মুখ নেই আমার। বুকে পাথর চেপে তাই তোমাকে আমি নিয়ে যাচ্ছি নিজের থেকে অনেক দূরে, মনে মনে বলল রাইয়্যান।

আস্তে আস্তে ফুরিয়ে এলো পথ, ঢাকায় ঢুকার পর থেকেই বুকের ভেতরটা ভারী হয়ে আসছে রাইয়্যানের। আর কিছুক্ষণ পরেই আলাদা হতে হবে ওদের, চিরজীবনের জন্য, ভাবলেই ভেতর থেকে কান্না ঠেলে বেরিয়ে আসছে রাইয়্যানের, কিভাবে যে আটকে রাখছে, একমাত্র ওই জানে। একদম বাড়ির সামনে গাড়ি নিলনা সিদ্রা। একেতো এতদিন পর ফিরেছে, তার উপর দামী গাড়ি থেকে নামতে দেখলে মানুষের কথা বানাতে সময় লাগবেনা। তাই গলির মুখেই ওকে নামিয়ে দিতে বলল সিদ্রা। গাড়ি থামাতেই দরজায় হাত দিল সিদ্রা।

“একটু দাঁড়াও সিদ্রা!” তাড়াতাড়ি করে বলে উঠল রাইয়্যান।

“কিছু বলবেন?” বলল সিদ্রা।

“হুম! এই নাও, সেদিন গাছে ওঠার সময় তোমার বোরকার বোতামটা খুলে পড়ে গিয়েছিল, আমি রেখে দিয়েছিলাম, লাগিয়ে নিও”

“জাযাকাল্লাহ!” বোতামটা হাত পেতে নিল সিদ্রা।

“বোতাম লাগালে বোরকা তো আগের মতো হয়ে যাবে, কিন্তু তোমার জীবন তো আগের মতো হবেনা! আমি জানি তোমার কতবড় সর্বনাশ আমি করেছি। একটা মেয়ে তিনমাস ধরে নিখোঁজ থাকার পর বাড়ি ফিরছে, তাকে কি পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে, বুবুর জীবন থেকে আমি খুব ভাল করে জানি সেটা। তোমার আব্বু আম্মু হয়তো তোমাকে বিশ্বাস করবে, কিন্তু অন্যরা তোমার জীবনটা নরক করে দিবে। তুমি এখানে টিকতে পারবেনা। তাই, তুমি যদি রাজি থাকো, এতোদিন ধরে আমরা যে নাটকটা করছিলাম, আমি সেটাকে সত্যি করে দিব। তুমি সবার সাথে দেখা করে সসম্মানে ফিরে যেতে পারো আমার সাথে, তোমার নিজের বাড়িতে”

“না” মুহূর্ত মাত্র অপেক্ষা না করে শক্ত কণ্ঠে উত্তর দিল সিদ্রা, “শুধুমাত্র মানুষের কথার হাত থেকে পালিয়ে বাঁচতে আমি আপনাকে বিয়ে করে নিতে পারব না। আমাকে একটা ছেলে তুলে নিয়ে গেছিল আর তিনমাস পর ফিরিয়ে দিয়ে গেছে, সর্বনাশ হয়েছে আমার, এটাই বলবে তো মানুষ! নিজের গায়ে লাগা এতটুকু কলঙ্ক আমি মেনে নিতে পারব। কিন্তু বাবা মায়ের মুখে চুনকালি মাখিয়ে আমি একটা ছেলের হাত ধরে পালিয়ে গিয়ে তাকে বিয়ে করে ফেলেছি, এটা প্রচার হলে কি হবে জানেন? আমার সাথে সাথে আমার বাবা মায়ের শিক্ষা, আমার মাদ্রাসার শিক্ষা, কুরআনের শিক্ষা, এসবের প্রতি আঙুল তুলবে সবাই। যেমনটা আপনি নিজেই একসময় তুলেছিলেন। নিজে মানুষের কটুক্তি থেকে বাঁচতে এতগুলো সম্মানিত জিনিসকে আমি অসম্মানিত করতে পারব না। তার জন্য আমাকে যত কষ্টই সহ্য করতে হোক না কেন। আর আপনি কেন শুধু নিজেকে দোষ দিচ্ছেন? এগুলো আমার ভাগ্যে লেখা ছিল, আপনি প্লিজ নিজেকে দোষ দিবেননা। আমি আপনাকে আপনার সকল অপরাধবোধ থেকে মুক্তি দিচ্ছি”

গাড়ির দরজা খুলল সিদ্রা, নেমে গিয়ে ঘুরে দাঁড়াল আবার, “ও, একটা কথা স্বীকার করা হয়নি, নিজেই শর্ত দিয়েছিলাম অথচ লজ্জাবশত নিজেই নিজের কথা রাখিনি। আপনার কফি মেকারের কফি আমার বানানো কফির থেকে বেশি টেস্টি, অনেস্টলি বলছি”

“উঁহু! তোমারটাই বেশি টেস্টি, নাহলে আমাকে আর কখনও কফি মেকারের কফি খেতে দেখেছো?”

“আপনার কাছে হয়ত হয়ে থাকবে, আমি আমারটা বললাম। অনেস্টলি বললেন বলে জাযাকাল্লাহ। এবার তাহলে যাই? ভাল থাকবেন, আল্লাহ্‌ হাফেজ” দরজাটা ধাক্কা দিয়ে আটকে দিলো সিদ্রা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here