#মৃত_কাঠগোলাপ – ২০

0
320

#মৃত_কাঠগোলাপ – ২০
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

ধ্রুব এবং আয়েশীর বিয়ের কথাবার্তা চলছে। আয়েশী চেয়েছিল বিয়েটা সাদামাটা হবে। কিন্তু ধ্রুব তা শুনে নি। তার ভাষ্যমতে, সমাজে তার নামডাক অনেক। সাদামাটা বিয়ে করলে তার ইজ্জত থাকবে না। সবাই ভাববে, সে টাকার জন্য তার বিয়ে ধুমধাম করে করেনি। যা ধ্রুবর আত্মসম্মানে আঘাত হানবে। আয়েশী প্রথমে এ নিয়ে চেঁচামেচি করলেও, বাবার মুখের দিকে চেয়ে দাতে দাত চেপে সহ্য করেছে।
আয়েশী জানালায় মাথা ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছে। চোখ উপসে জল গড়াচ্ছে। এ আর নতুন কি। সদা হয়। মৃদুল মারা যাবার পর আয়েশী ঠিকমত একবারও হেসেছে কিনা মনে পড়েনা।
‘ আয়েশী? ‘
মায়ের কণ্ঠে পেছন ফেরে আয়েশী। মনোয়ারার এক হাতে ভাঁজ করা জামদানি শাড়ি। ওপর হাতে গয়নার বাক্স। মনোয়ারা হাতের সব বিছানার উপর রাখলেন। গয়নার বাক্স খুলে তা ঠিক আছে কিনা পরখ করে বললেন,
‘ ধ্রুব এসেছে। তোকে বিয়ে একটু বেরুবে। ‘
আয়েশী রাগে ফেটে পড়ে। বলে,
‘ আমি যাব না। তার এত শখ জাগছে কেন? সে কি জানে না, আমার পরিস্থিতি কেমন? ‘
মনোয়ারা ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে ‘শুস’ শব্দ করে বলেন,
‘ আস্তে কথা বল। ধ্রুব শুনবে। ‘
আয়েশী আগের চেয়ে দ্বিগুণ শব্দ করে চেঁচায়,
‘ শুনলে শুনুক। আমি কি তাকে ভয় পাই? সে কি শুরু করেছে? যখন যা মন চাইছে তাই করছে। কারো ফিলিংসের কি কোনো দাম নেই তার কাছে? ‘
মনোয়ারা ব্যস্ত পায়ে আয়েশীর পাশে এসে দাঁড়ালেন। আয়েশীর বাহু ধরে সাবধানী কণ্ঠে জানালেন,
‘ দেখ, কোনো অশান্তি করিস না। এমনিতেই তোর বাবার হার্ট ভালো না। তার মধ্যে এত অশান্তি সে নিতে পারবে না। ধ্রুব এসেছে, চুপচাপ তার সঙ্গে যা। একটু ঘুরে আয়। ভালো লাগবে। ‘
আয়েশী মায়ের দিকে চায়। এ কোন জন্মদাত্রীকে দেখছে সে? যে আয়েশীর মনের মধ্যে বয়ে চলা সর্বগ্রাসী তুফান সম্পর্কে অবগত হয়েও, কেমন সুন্দর করে তাকে অন্য পুরুষের সঙ্গে ঘুরে আসতে বলছে। আয়েশী বিস্ময়ে কথা বলতে ভুলে যায়। মায়ের দিকে ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে রয়। মনোয়ারা আয়েশীর হাত ধরে তাকে বাথরুমে প্রবেশ করান। ব্লাউজ ও পেটিকোট হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন,
‘ যা, পড়ে আয়। ‘

আয়েশী যেন রোবট হয়ে যায়। গা ছেড়ে বাথরুমের খিল আটকায়। বাথরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রয় ঠায়। কিছুক্ষণ নিজের দিকে তাকায়। ভাবে, মৃদুল চলে যাবার পর থেকে সব কেমন যেন বদলে যাচ্ছে। উলোট-পালোট হয়ে যাচ্ছে। আয়েশীর চারপাশ আর আগের মত সুন্দর না। বদলে গেছে, দূষিত হয়ে গেছে। কেউ আয়েশীকে বুঝে না। কেউ আর আগের মত মুগ্ধ চোখে চেয়ে বলে না,
‘ তুই আমার জীবনের আয়েশ, আয়েশী। তুই আছিস বলেই আমার জীবনে এত সুখ। ‘
সবার চোখে একটাই বাসনা, ‘ আয়েশী যেন সুখে থাকে। ‘
অথচ, মৃদুল ছাড়া আয়েশীর সুখ সে কবেই মরে গেছে। তা কেউ বুঝতে চায়না। কেউ না।
আয়েশীর দিল ছিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বের হয়।
কোথাও কেউ ভালো নেই। সবার মনে দুঃখ। কেউ বলে তো কেউ বলে না। পৃথিবী যেমন সত্য তেমন সত্য এই পৃথিবীর সবার মনের মধ্যে পুষে রাখা দুঃখসমুদ্র!
_____________________________
আয়েশীর মা খুব সুন্দর করে আয়েশীকে নীল জামদানি শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছেন। গলায় সরু সোনার চেইন, কানে সাধারণ ঝুমকো। আয়েশীকে দেখতে আজ খুব সুন্দর লাগছে। মনে হচ্ছে স্বর্গ থেকে কোনো পরী এ ধরায় নেমে এসেছে। মনোয়ারা আয়েশীর চোখে কাজল লাগানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু পারছেন না। আয়েশীর চোখের নিচে জমে থাকা জলে, কাজলের রেখা বারবার লেপ্টে যাচ্ছে। মনোয়ারা একসময় বিরক্ত হলেন। ধমকে বললেন,
‘ ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদছিস কেন এত? তোকে কি আমরা মেরে ফেলছি? কান্না থামা। ‘

আয়েশী ঠোঁট চেপে ধরে জল আটকাল। মনোয়ারা এবার খুব সুন্দর করে আয়েশীর চোখে কাজল দিয়ে দিলেন। আয়েশীকে আয়নার দিকে ঘুরিয়ে বললেন,
‘ দেখ, কি সুন্দর দেখাচ্ছে আমার মেয়েকে। ‘
আয়েশী তাকায় না আয়নায়। মাথা নত করে ঠোঁট কামড়ে ধরে। মনোয়ার বুঝেন, আয়েশীর মনের দুঃখ। তাই তিনি আর বেশি ঘাটান না মেয়েকে। মেয়ের শাড়ির আঁচল ঠিক করে দিয়ে বলেন,
‘ যা, ধ্রুব বসে আছে। ‘
আয়েশী গা ছেড়ে দিয়ে হেঁটে যায় বসার ঘরের দিকে। ধ্রুব সোফায় বাবু হয়ে বসে আছে। ধ্রুবর সামনে আয়েশীর বাবা
বসে হবু মেয়ের জামাইয়ের সাথে গল্প করছেন। আয়েশী বাবার পাশে এসে দাঁড়ায়। ধ্রুব আয়েশীর পানে চোখ তুলে তাকায়। সঙ্গেসঙ্গে তার চোখ আটকে যায়, ভষ্ম হয়ে যায়, ঝলসে যায়। আয়েশীকে আজ তার ভাবনার চেয়েও বেশী সুন্দর দেখাচ্ছে। ধ্রুবর বুক ‘ধুকপুক-ধুকপুক’ করে। ধ্রুব বা হাতে নিজের বুকে চাপ দিয়ে বিড়বিড় করে, ‘ ওল ইজ ওয়েল, ওল ইজ ওয়েল ‘

কিছুক্ষণ পর, নিজেকে সামলে নিয়ে ধ্রুব সোফা থেকে উঠে দাঁড়ায়। আয়েশীর পাশে দাঁড়িয়ে আয়েশীর হাত আকড়ে ধরে। আয়েশীর রাগ হয়। হাত ছাড়াতে চায়, পারে না। ধ্রুব কামরুল হাসানের থেকে বিদায় নেয়। সদর দরজার দিকে হেঁটে যেতে যেতে আয়েশীর কানের কাছে ফিসফিসায়,
‘ তোমায় আজ ভীষন মনমোহিনী লাগছে, রক্তজবা। তোমার থেকে আজ আমার চোখ সরানো যাচ্ছে না। এত সুন্দর কেন তুমি? ‘
আয়েশী দাত খিচে উঠে। এত বেহায়া ছেলে আয়েশী এ জন্মে দেখেনি। রাগ হচ্ছে ভীষন। মন চাচ্ছে, ধ্রুবকে এখনি এক কোপে খু’ন করে ফেলতে। ইশ, যদি করা যেত! তবে আয়েশী আজ ধ্রুবর এই বেহায়া ভালোবাসা থেকে মুক্ত হয়ে যেত।
_________________________________
ধ্রুব-আয়েশী শহরের একটি নামিদামি ক্যাফেতে আসে। ধ্রুবকে দেখে ক্যাফের মালিক ব্যস্ত পায়ে ধ্রুবর পাশে এসে দাঁড়ায়। ধ্রুবর পা ধরে সালাম করলে ধ্রুব বলে,
‘ কেমন আছ, শাহাদাত? ‘
শাহাদাত উঠে দাঁড়ায়। ধ্রুবর থেকে মাথা নিচু করে নম্র গলায় জানায়,
‘ আপনার দোয়ায় ভালো আছি, স্যার। ‘
ধ্রুব হাসে। শাহাদাতের কাধে হাত রাখতেই ভয়ে শাহাদাতের চেহারা নীল বর্ণ ধারণ করে। শাহাদাত কাধ সংকুচিত করে ফেলে। ধ্রুব শাহাদাতের কাধে চাপড় দিয়ে হেসে বলে,
‘ আরো দোয়া চাইলে, আজ আমার ও আমার মিসেসের ভালো করে খাতিরদারি করো। বুঝলে? ‘
শাহাদাত তাৎক্ষণিক মাথা নেড়ে বলে,
‘ অবশ্যই, স্যার। চলুন আমার সাথে। ‘
ধ্রুব আয়েশীকে নিয়ে আগে আগে হাঁটে। পেছন পেছনে ক্যাফের মালিক আসে। মালিকের মুখ শুকিয়ে আধখান হয়ে গেছে। আজ যেন কোনো অঘটন না ঘটে। নাহলে ধ্রুবর হাত থেকে আজ কারও নিস্তার নেই। কারো না!

#চলবে
ক্লাসে বসে বসে পর্বটা লিখলাম। তাই খাপছাড়া মনে হতে পারে। গল্প পড়ে চুপচাপ চলে যাবেন না। রিয়েক্ট এবং কমেন্ট করে আমাকে উৎসাহিত করবেন, আশা করি।

লেখিকার গ্রুপ,
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here