#মৃত_কাঠগোলাপ- ২১

0
314

#মৃত_কাঠগোলাপ- ২১
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

ধ্রুব চেয়ার টেনে বসল। আয়েশীর জন্য নিজের পাশের চেয়ার টেনে বলল,
‘ বসো। ‘
আয়েশী সেখানে বসল না। একটু দূরের চেয়ার টেনে সেখানে বসল। ধ্রুব দেখল, রাগ হল, খু’ন করতে ইচ্ছে হল। কিন্তু এই দুঃসাহসিক কাজ করা মেয়েটা আয়েশী বলে রাগ গিলে ফেলতে হল। মুখে জোরপূর্বক মুচকি হাসি টেনে মেনু কার্ড এগিয়ে দিল আয়েশীর দিকে। বলল,
‘ ইচ্ছেমত অর্ডার করো। ‘
আয়েশী ম্যানু কার্ড হাতে নিল না। বলল,
‘ আপনি করুন। আমার ভালো লাগছে না। ‘
আয়েশীর খারাপ লাগছে শুনে ধ্রুব তৎপর হয়ে উঠল। চেয়ার ছেড়ে উঠে আয়েশীর পাশে দাঁড়িয়ে কপালে হাত রেখে ব্যস্ত গলায় বলল,
‘ জ্বর নেই তো? না, জ্বর নেই। তাহলে খারাপ লাগছে কেন?’
আয়েশী ধ্রুবর থেকে কপাল সরিয়ে নিয়ে বলল,
‘ আমি অসুস্থ না। খামোকা ব্যস্ত হবেন না। আমার এমনিই ভালো লাগছে না। দ্রুত বাসায় যেতে চাইছি। ‘
ধ্রুব আসলে বুঝতে পেরেছিল আয়েশী ধ্রুবর সংস্পর্শ ভালো লাগছে না। কিন্তু আয়েশীকে একটুখানি ভালোবাসা দেখাতে এই ব্যস্ত হওয়ার ভান করল। তবে এবার বুঝতে পারছে, আয়েশীর ধ্রুবর এই অতিরিক্ত ভালোবাসার কোনো প্রয়োজন নেই। বরং সে ধ্রুবর থেকে দূরে থাকলে ভালো থাকবে। কিন্তু ধ্রুবর থেকে দূরে থাকা যে অসম্ভব। ধ্রুবর যাকে মনে ধরে, সে তাৎক্ষণিক ধ্রুবর খাচায় আটকে যায়। ধ্রুব যত ইচ্ছে তাকে ভালোভাসে, যখন ইচ্ছে হয় দূরে সরিয়ে দেয়, যখন ইচ্ছে হয় খু’ন কর ফেলে। সর্বপরি সে মানুষটা তখন সম্পূর্ন ধ্রুবর আয়ত্বে চলে আসে। কিন্তু আয়েশীর বেলায় এই ঘটনার ঠিক উল্টোটা ঘটেছে। ধ্রুবর এত কসরতের পরও আয়েশীর মনে ধ্রুব নিজের জন্য একটুও ভালোবাসার উদ্রেক ঘটাতে পারেনি। এই না পারাকে কি বলে আখ্যায়িত করা যায়? ধ্রুবর ব্যর্থতা নাকি মৃদুলের ভালোবাসা জোর? শালা, এই মৃদুলের মধ্যে কি আছে যা ধ্রুবর মধ্যে নেই? মৃদুল মরে যাওয়ার পরও আয়েশীকে নিজের নামে দলিল করে রেখে গেছে। আয়েশীর মনে মৃদুল নিজে একা সমস্ত জায়গা নিয়ে রাজার মত বসে আছে।অন্য কাউকে সে জায়গা দখল করার বিন্দুমাত্র সুযোগ দিচ্ছে না। শালা মরে গিয়েও জিতে গেছে।

ধ্রুব নিজে দেখে খাবার অর্ডার করেছে। ধ্রুব সবসময় হেলদি খাবার খায়। সবজি, সালাদ খেয়েও ধ্রুব অভ্যস্ত। তবে আজ আয়েশী পাশে আছে বলে ধ্রুব সব আয়েশীর পছন্দমত খাবার অর্ডার দিয়েছে। ধ্রুবর মুখে নিজের সব পছন্দের খাবারের নাম শুনে আয়েশী বিস্মিত। মৃদুল,বাবা, মা,ভাই ছাড়া আয়েশীর পছন্দের খাবারের নাম কেউ জানে না। তাহলে দুদিনের পরিচয়ে এই ধ্রুব কি করে জেনে ফেলল? আয়েশী কৌতূহল দিমিয়ে না রাখতে পেরে প্রশ্ন করে বসল,
‘ আপনি কি করা আমার পছন্দের খাবার জানলেন? ‘
ধ্রুব হাসে। টেবিলের উপর আড়াআড়ি হাত ভাঁজ করে আয়েশীর মুখের দিকে ঝুঁকে আসে। চোখে চোখ রেখে গভীর কণ্ঠে বলে,
‘ কারণ আমি তোমায় ভালোবাসি। ‘
আয়েশীর দিল কাপে। মৃদুলের পর কেউ আয়েশীকে এই প্রথম এত নিঃসংকোচে ভালোবাসি বলেছে। কিন্তু তবুও সে মৃদুলের মত আয়েশীর হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি করতে পারেনি। তার মনের সমুদ্রে ঢেউ খেলাতে পারেনি। কারণ সে আয়েশীর মৃদুল না। বরং সে অন্য কেউ, যাকে আয়েশী কখনো ভালোবাসতে পারবে না।
ধ্রুব খাচ্ছে। আয়েশী শুধু চামচ নাড়ছে। ধ্রুব তা লক্ষ করতে পেরে, নিজের ভাগের খাবার চামচে তুলে আয়েশীর মুখের দিকে এগিয়ে আনল। বলল,
‘ খাও। ‘
আয়েশী মানা করল। ধ্রুব শুনল না। জোরপূর্বক আয়েশীর মুখে খাবার গুঁজে দিয়ে বলল,
‘ না ছাড়া তোমার ডিকশনারিতে আর কোনো শব্দ আছে? যা জিজ্ঞেস করি তাতেই না, না, না। এত না, না বলো কেন? বিয়ে হয়নি, বাচ্চাও হয়নি। তার আগেই নানা বানিয়ে দিচ্ছ। এটা ভালো না। ‘
আয়েশী রাগ হয়। দাতে দাত খিচে বলে,
‘ আজগুবি কথা কেন বলছেন? আমার এসব কথা পছন্দ না । ‘
‘ সে তো আমাকেও তোমার পছন্দ না। এখন আমি কি তোমায় ছেড়ে দেব? উহু, নিঃশ্বাসে আটকে গেছ তুমি। তাই তো এত অপমান সহ্য করে এখনো তোমার কাছে পড়ে আছি। নাহলে এই ধ্রুবর পেছনে হাজার মেয়ে ঘুরে। ‘
আয়েশী ভেঙায়। বলে,
‘ তাহলে সেই মেয়েগুলোকে ধরে ধরে বিয়ে করে ফেলুন না। আমাকে পেছনে পড়ে আছেন কেন? ‘
ধ্রুব হাসে। পুনরায় আরো এক চামচ খাবার আয়েশীর মুখে জোরপূর্বক গুঁজে দিয়ে বলে,
‘ কারণ সেই একই। সে মেয়েগুলোকে আমি ভালোবাসি না, তোমায় ভালোবাসি। ‘
আয়েশী কথা বলে না। রাগ নিয়ে চুপ করে খাবার গিলে। ধ্রুবর মুখে ভালোবাসি শব্দ শুনলে আয়েশীর কানে জ্বালা ধরে, পোকা কিলবিল করে, ম’রে যেতে ইচ্ছে হয়। যে কান মৃদুল ব্যতীত অন্য কারো মুখে ভালোবাসি শুনে, সে কানকে ছু’রি দিয়ে কে’টে ঝাঁ’জরা করে ফেলতে ইচ্ছে হয়।
________________________
ধ্রুব-আয়েশী একটা পার্কে এসে বসে। ধ্রুব এক টোঙা বাতাম কিনে আয়েশীর হাতে দেয়। আয়েশী সেটা হাতে নিয়েই বসে থাকে। খায় না। ধ্রুব তা দেখে নিজেই বাতাম ভেঙে আয়েশীকে খাইয়ে দেয়।
অনেকক্ষণ ধরে তারা বসে আছে। অথচ আয়েশী কোনো কথা বলছে না। ধ্রুব ভ্রু বাকায়। আয়েশীকে কি করে পটানো যায় তা ভাবে। হঠাৎ তার মনে পড়ে বাবার বলা কথা, মেয়ে মানুষের মন হল মোমের তৈরি। তারা কষ্টের আগুন দেখলেই গলে যায়। ধ্রুব হাসে। সামনে দিয়ে এক ফুলের মালা হাতে এক পথশিশু হেঁটে গেলে ধ্রুব তাকে ডাকে। পথশিশু হাসিমুখে এগিয়ে আসে ধ্রুবর দিকে। পথশিশুর গা থেকে দুর্গন্ধ-এ ধ্রুবর গা গুলিয়ে আসে। কিন্তু আয়েশীকে পটাতে গেলে এটুকু কষ্ট তো করতেই হয়। ধ্রুব ঠোঁট চেপে সহ্য করে গন্ধ। পথশিশুর ময়লা চুলে হাত বুলাতেই হাত আঠা আঠা হয়ে যায়। তবুও ধ্রুব হাসিমুখে বলে,
‘ নাম কি তোমার? ‘
পথশিশু মিষ্টি হেসে বলে,
‘ সারা। ‘
‘ সুন্দর নাম। মালা কত করে? ‘
‘ দশ টাহা। ‘
‘ আমি সবগুলো মালা নিব? ১০০০ দিব। চলবে? ‘
ধ্রুবর কথা শুনে আয়েশী এবং পথশিশু উভয়েই অবাক হয়। পথশিশু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে,
‘ এ্যা…এত্ত টাহা আপনি আমার ক্যান দিবেন? ‘
ধ্রুব মুচকি হেসে বলে,
‘ আমার জীবনে ভালোবাসার খুব অভাব। তাই অন্যকে ভালোবাসতে আমার ভালো লাগে। তাই দিচ্ছি। চলবে না? ‘
ধ্রুবর কথা শুনে আয়েশী আড়চোখে চায়। নিষ্পাপ পথশিশু ধ্রুবর চালাকি ধরতে পারে না। খুশি হয়ে বলে,
‘ খুব চলব। ‘
পথশিশুর কণ্ঠে খুশি, মুখে উজ্জ্বলতা খেলে বেড়ায়। ধ্রুব পকেট থেকে এক হাজার টাকার নোট বের করে পথশিশুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
‘ নাও। এটা আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য ভালোবাসা। ‘
পথশিশু টাকা নিয়ে, হাতের মালগুলো ধ্রুবকে দেয়। ধ্রুব নেয়না। বলে,
‘ আমার পাশে যে বসে আছে তাকে দাও। আর বল, প্রেয়সীর কোলে মাথা রেখে ধ্রুব ইউহান শেখের সুখের মৃ’ত্যু হোক! ‘
আয়েশী অবাক হয় তাকায় ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব ভ্রু বেকে চেয়ে রয় আয়েশীর পানে। পথশিশু মুচকি হেসে মালার ঢালা আয়েশীর কোলে উপুড় করে দিয়ে হেসে বলে,
‘ এই বালা মানুষ ধ্রুব সাহেবের আপনার কোলে মাথা রাইখা সুখের ম’রণ হোক। ‘
আয়েশী নিশ্চুপ হয়ে পথশিশুর পানে চেয়ে রয়। শিশুটা কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে। অথচ এই নিষ্পাপ শিশুটা জানেই না, সে আয়েশীকে না জেনে কত বড় অভিশাপ দিয়ে গেল। হায়, কি নিষ্পাপ তার মন!

#চলবে ( শব্দসংখ্যা- ১০০০)
গল্প পড়ে চুপচাপ চলে যাবেন না। রিয়েক্ট এবং কমেন্ট করে আমাকে উৎসাহিত করবেন, আশা করি।

লেখিকার গ্রুপ,
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here