#মৃত_কাঠগোলাপ – ২৭

0
290

#মৃত_কাঠগোলাপ – ২৭
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
_____________________________
আয়েশীর বাগানের পূর্ব দিকে যাওয়ার দৃশ্য যখন ধ্রুব ল্যাপটপে দেখল, তার র’ক্ত ছলকে উঠল। আয়েশীর গা আগুনে পু’ড়িয়ে দিতে ইচ্ছে হল। তার বাঁ’ধা দেওয়া সত্ত্বেও আয়েশী কেন পূর্ব দিকে গেল? কেন বাগানের রেড সিগন্যাল দেওয়া অঞ্চল পেরিয়ে যাবার সাহস করল? তার কি রহস্য আবিষ্কার করার খুব শখ? আজ তার সকল শখ মেটানো হবে। ধ্রুব ওসমানকে ডেকে রে’গেমেগে অস্থির হয়ে বলল,
‘ গাড়ি বের কর। আমি বাড়ি যাব। ‘
ধ্রুবর রাগ দেখে ওসমান থরথর করে কাঁপছে। সহসা ল্যাপটপের দিকে চোখ গেল সে ভ’য়ে আঁ’তকে উঠল। আয়েশী ম্যাম বাগানের পূর্ব দিকে কি করছেন? আজ তো ধ্রুব স্যারের হিং’স্রতা থেকে তাকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। ইশ, অবুঝ মেয়ে! সে জানেই না, কোথায় পা রেখেছে? এখন ধ্রুব তাকে ভয়া’নকভাবে নি’র্যাতন করবে। ওসমান আয়েশীকে বাঁচাতে শেষ চেষ্টা করে বলল,
‘ স্যার, ম্যাম অবুঝ। তিনি বুঝে…..’
ওসমানের কথা শেষ হওয়ার আগে ধ্রুব আ’গুন চোখে ওসমানের দিকে চায়। দাত খি’চে বলে,
‘ ম’রতে না চাইলে বেশি কথা না বলে গাড়ি বের কর, ডাফার। ‘
ওসমান ভয়ে ভয়ে গাড়ি বের করার জন্যে ধ্রুবর কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। ধ্রুব লেদারের চেয়ারে হেলান দিয়ে ভ্রু কুচকে চেয়ে রইল ল্যাপটপের দিকে। সেখানে স্পষ্ট দেখাচ্ছে, আয়েশী ধ্রুবর ঘর উত্তাল-পাত্তাল করছে চাবির জন্যে। ধ্রুব তার প্যান্টের পকেট থেকে চাবি বের করে টেবিলে রাখল। খোঁচা দাড়িতে আঙ্গুল বুলিয়ে বিড়বিড় করল,
‘ পিপীলিকার পাখা গজে মরিবার তরে। তেমন দশা তোমারও হয়েছে রক্তজবা। আমার বাধ্য করো না, তোমার প্রাণ কেড়ে নিতে। আমি নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টায় আছি। ‘
______________________
আয়েশী ধ্রুবর ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজেও চাবি পেল না। হাল ছেড়ে মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় ধাম করে বসে পড়ল। ধ্রুব কোথায় রেখেছে চাবি? বাগানের সেই কক্ষে কে আছে? কেন ধ্রুব সেই কক্ষের সামনে রেড সিগন্যাল এঁকে রেখেছে? কি আছে সেখানে?
এত এত প্রশ্ন? অথচ একটার উত্তর মিলছে না। আলমারি, আলমারি খুঁজে দেখা হয়নি। আয়েশী চট করে আলমারি খুঁজতে লেগে গেল। ধ্রুবর কাপড় চোপড় সব উল্টে পাল্টে ফেলছে। অথচ চাবি মিলছে না?
হঠাৎ আয়েশীর পেটে কেউ নখ দিয়ে খামচে ধরল। নখ যেন আয়েশী জামা ভেদ করে ত্বকে ফুটল। আয়েশী ব্যথায় চিৎকার করে উঠল। সঙ্গেসঙ্গে কেউ আয়েশীর ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে হুইস্কি কণ্ঠে বলল, ‘ হুশশশ….’
আয়েশী চুপ করে চোখ বড়বড় করে তাকায়। কণ্ঠ শুনে বুঝতে একটুও বিলম্ব হলো না, তাকে জড়িয়ে ধরে থাকা মানুষটা কে? চোরের চুরি ধরা পড়ে যাওয়ায়, আয়েশী বিড়াল ছানার ন্যায় গুটিয়ে গেল। সমস্ত সাহস ধাম করে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এল। আয়েশী বুক ধড়াস ধড়াস করছে। ধ্রুবের আঙ্গুল আয়েশীর ঠোঁট ছেড়ে কানের কাছে স্পর্শ দিতে শুরু করেছে। ধ্রুব কানের লতিতে ঝুঁলে থাকা ঝুমকো টোকা দিয়ে নেড়ে দিল। আয়েশী ভয়ে ঠোঁট কেপে উঠল। ধ্রুব আবার হুইষ্কি কণ্ঠে বলল, ‘ কি খুঁজছিলে? ‘
আয়েশী তাৎক্ষণিক মাথা নাড়ায়। জিহ্বা দিয়ে শুষ্ক ঠোঁট ভিজিয়ে বলে, ‘ কি-ছু ন-না। ‘
‘ তাই? তাহলে আলমারির কাপড় এলোমেলো করলে কেন?’
একটা মিথ্যা কথা লুকানোর জন্যে হাজারটা মিথ্যা বলতে হচ্ছে। আল্লাহ কখনো মাফ করবেন না। আয়েশী ভাবে, এত মিথ্যা বলে কি লাভ? আয়েশী তো চুরি করছে না। শুধু একটা রহস্য আবিষ্কার করতে চেয়েছিল। তবে পারেনি। এই রহস্য ধ্রুব সৃষ্টি করেছে, তাই ধ্রুব’ই আয়েশীকে রহস্য ভেদ করতে সাহায্য করতে পারবে।
‘ কি ভাবছ? ‘ ধ্রুব আয়েশীর কানের ঝুমকো পুনরায় নেড়ে বলে উঠল। ধ্রুবর স্পর্শে আয়েশীর গা রি-রি করতে লাগল। আয়েশী ধ্রুবকে ধাক্কা দিয়ে সরে গেল খানিক দূর। ধ্রুব পেছনে পড়ে যেতে যেতে সামলালো। ভ্রুরু কুচকে চাইল আয়েশীর দিকে। আয়েশী চেঁচিয়ে বলল, ‘ সবসময় এমন গায়ের উপর পড়ে যান কেন? বুঝেন না, আমার এসব অসহ্য লাগে? ‘
ধ্রুব কিছুক্ষণ ভ্রুর কুচকে রইল। দু ভ্রুয়ের মধ্যখানে সূক্ষ্ম একটা ভাঁজ লক্ষ্য করা গেল। ক্রমশ সে ভাঁজ গভীর হচ্ছে। আয়েশী তখনো রেগে। ধ্রুব ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছাড়ল। হাতের ঘড়ি খুলে বিছানার দিকে যেতে যেতে বলল,
‘ অসহ্য লাগলেও কিছু করার নেই। কারণ তুমি আমার স্ত্রী। তোমাকে স্পর্শ করার অধিকার আছে আমার। আর এমনিতেও,বিয়ের পরও তুমি যে এখনো ভার্জিন ঘুরে বেড়াচ্ছ, তার জন্যে আমায় তোমার ধন্যবাদ বলা উচিৎ। ‘

ধ্রুবর কথা শুনে আয়েশীর মুখ একদম হা হয়ে গেল। কান ধপধপ করতে লাগল। ছিঃ, কি অ’শ্লীল কথা! এমন কথা ধ্রুবর বলতে মুখে বাঁধলো না? আয়েশী লজ্জা, রাগ সবমিলিয়ে করুন অবস্থা! রাগে আয়েশীর গা জ্ব’লছে। এত খা’রাপ লোক এসে জন্মেও দেখেনি। ছিঃ!
ধ্রুব হাত ঘড়ি খুলে টেবিলে রাখল। আলমারির সামনে থেকে হতবম্ব আয়েশীকে সরিয়ে আলমারি থেকে সাদা টিশার্ট আর হাঁটু অব্দি এক হাফ প্যান্ট নিল।
বাথরুমে চলে যেতে উদ্যত হলে, পেছন থেকে আয়েশী দ্রুত ধ্রুবর কলার টেনে ধরল। ধ্রুব আয়েশীর আচমকা আক্রমণ সামলাতে না পেরে খানিক পিছিয়ে আয়েশীর গায়ের উপর পড়ে গেল। আয়েশী বোকা বনে গেল। ধ্রুবর গা আয়েশীর গায়ের সাথে লেপ্টে। আয়েশী দেরি না করে ধ্রুবকে সরিয়ে দিল। ধ্রুব ঠিকঠাক দাড়াতে দাড়াতে বলল, ‘ সুন্দর করে কথা বলতে পারো না? টানাটানি করো কেন? ‘
‘ আমার এত শখ জাগে নি আপনাকে নিয়ে টানাটানি করার। একটা কথা জিজ্ঞেস করার জন্যে টেনেছি। ‘
‘ কি কথা? ‘
আয়েশী নিজে মনকে শক্ত করল। অতঃপর স্পষ্ট কণ্ঠে প্রশ্ন করল, ‘ বাগানের পূর্ব দিকের কালো কক্ষের চাবি কোথায়? ‘
ধ্রুব মনেমনে হাসল। সে জানত, আয়েশী এমনই একটা প্রশ্ন করবে তাকে। অবশ্য সে আগে থেকেই প্রস্তুত হয়ে ছিল। ধ্রুব কোনোরূপ ভনিতা না করে উত্তর দিল, ‘ আমার কাছে। ‘
‘ চাবিটা আমাকে দিন। আমি ওই কালো কক্ষ এর ভেতরে ঢুকবো। ‘
ধ্রুব সুন্দর করে তার প্যান্টের পকেট থেকে চাবি বের করে আয়েশীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, ‘ এই নাও। ‘
আয়েশী প্রচন্ড বিস্মিত হল। এতটা সহজ উপায়ে চাবি পেয়ে যাবে তা আয়েশী কল্পনাও করেনি। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে, ধ্রুব এত সহজ আছে কেমন করে? তার কি একটুও ভয় হচ্ছে না। নাকি আয়েশী অযথাই চিন্তা করছে। কালো কক্ষে রহস্য বলতে কিছুই নেই।
আয়েশী সন্দেহ নিয়ে ধ্রুবর হাত থেকে চাবি নিল। চাবিটার দিকে কিছুক্ষণ শকুনি দৃষ্টিতে চেয়ে তারপর বলল,
‘ আমি কালো কক্ষে যাচ্ছি। ‘
‘ আচ্ছা, যাও। ‘
আয়েশী বোধহয় আজ শুধু অবাক হওয়ার দিন। একটার পর একটা অবাক হয়েই যাচ্ছে। ধ্রুবর এমন ভাবলেশহীন প্রতিক্রিয়া আয়েশীর হজম হচ্ছে না। আয়েশী ভেবেছিল, ধ্রুব একটু উশখুশ করবে। দু একটা মিথ্যা কথা বলে সত্য ঢাকার চেষ্টা করবে। অথচ সে এমন কিছুই করছে না। অদ্ভুত!
আয়েশী কিছুক্ষণ ধ্রুবর দিকে চেয়ে বেরিয়ে গেল।
আয়েশী সেই কালো কক্ষে দরজা খুলল। ভেতর থেকে ভ্যাপসা দুর্গন্ধময় ধোঁয়া নাকে মুখে ঝড়ের ন্যায় প্রবেশ করল। আয়েশী খুকখুক করে কেশে উঠল। তারপর হাত দিয়ে ধোঁয়া কাটানোর চেষ্টা করে সামনে এগিয়ে গেল।
আশ্চর্য্য, কেউ এই কক্ষে নেই। তাহলে কাদছিল কে? আয়েশী তন্নতন্ন করে কক্ষ খুঁজল। না, কেউ নেই। কেউ ছিল, কিন্তু পালিয়েছে? নাকি কেউ ছিলোই না এখানে?
‘ তৃপ্তি মিটেছে? ‘
পেছন থেকে ধ্রুবর কণ্ঠ শুনে আয়েশী তাকাল। তার চোখে এখনো সন্দেহ। আয়েশী স্পষ্ট শুনেছে, কেউ এই কক্ষের ভেতর থেকে শব্দ করে কাদছে। কিন্তু এখন কেউ নেই। ধ্রুব বুকে আড়াআড়ি হাত ভাঁজ করে আয়েশীর দিকে চেয়ে আছে। আয়েশীর দৃষ্টিতে সন্দেহের পসরা!

#চলবে ( শব্দসংখ্যা- ১০০০)
যারা গল্পটা পড়বেন কষ্ট করে রেস্পপন্স করবেন প্লিজ। পেইজের রিচ কমে গেছে।
সেরা কমেন্টকারীদের নাম তাদের কমেন্টসহ লেখিকার গ্রুপে পোস্ট করা হবে।
লেখিকার গ্রুপ,
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here