#মৃত_কাঠগোলাপ – ২৮

0
307

#মৃত_কাঠগোলাপ – ২৮
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

দেখা গেল ধ্রুব ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে আয়েশীর দিকে। পা মেপে মেপে মাটিতে ফেলছে। বরাবরের মত দুহাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে রাখা। সদ্য গোসল করে আসায় চুল ভেজা, কপালের উপর লেপ্টে আছে। শরীর থেকে তীব্র ম্যান পারফিউমের গন্ধ! পরিবেশটা কেমন যেন ঘোর ঘোর, মাতাল মাতাল!
আয়েশী স্থির পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। ধ্রুবর এমন আগানো দেখে আয়েশীর বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে। আয়েশী বহু কসরত করে তর্জনী উঁচু করে বলল, ‘ এগুবেন না বলছি। ‘
ধ্রুব কেমন করে যেন হাসল। সে এগুচ্ছে। আয়েশীর বারণ শুনে নি। ধ্রুব আয়েশীর খুব কাছে এসে দাঁড়াল। প্রেয়সীর কাছে খানিক ঘনিষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে বলল মাদক কণ্ঠে আবদার করল, ‘ এখন আমি তোমায় একটু ছুঁতে চাই। ছুঁই? ‘
আয়েশী হতভম্ব হয়ে পড়ল। কেউ তাকে ছুঁতে চাওয়ার জন্যে অনুমতি চাইছে। অথচ সে মানুষটা সারাক্ষণ আয়েশীর সাথে লেপ্টে থাকে। আয়েশী রাগ দেখাতে চাইল। পারল না। তার পূর্বেই ধ্রুব আয়েশীর কোমড় খামচে ধরে আয়েশীকে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলল। আয়েশীর টাল সামলাতে না পেরে ধ্রুবর বুকের উপর। আয়েশীর অবাধ্য হাত ধ্রুবর বুকের দু পাশে ঠেসে। ধ্রুব কিছুটা রা’গান্বিত কণ্ঠে বলল, ‘ ভালোবাসতে পারো না, মেনে নিয়েছি। ঘৃনা করতে চাও, হজম করেছি। কিন্তু সন্দেহ করতে চাইছ, প্রাণে মে’রে ফেলব। ভালোবাসা, ঘৃনা সবকিছু অ্যালাউড। কিন্তু সন্দেহ, নেভার। বুঝেছ? ‘
আয়েশী অপরাধবোধে ভুগতে লাগল। সে কি সত্যিই অযথা সন্দেহ করছিল ধ্রুবকে। এতদিন অব্দি যে বিষয়ের জন্যে আয়েশী ধ্রুবকে সন্দেহ করেছে, সবই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তবুও আয়েশী বারবার সুযোগ খুঁজে, ধ্রুবর খুঁত ধরার। প্রথমে কাপড় বদলানো, এখন আবার চাবি নিয়ে। আয়েশী কেন এসব করছে? ধ্রুবকে ঘৃনা করে বলেই কি আয়েশী অযথা তাকে হেনস্থা করতে চাইছে? ছিঃ, এটা ঠিক না। কিন্তু আয়েশী নিজের দোষ স্বীকার করল না। ধ্রুবর থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্যে দুহাত দিয়ে ধ্রুবর বুকে ধাক্কা দিয়ে বলল, ‘ ছাড়ুন। ‘
ধ্রুব ছেড়ে দিল না। বরং আয়েশীর দুই ভ্রুয়ের মধ্যিখানে গভীর এক চুমু খেয়ে বলল, ‘ কখনো আমাকে সন্দেহ করবে না, আমার বুকে কষ্ট হয়। সুখ পাওয়ার জন্যে আমি তোমায় ভালোবেসেছি, কষ্ট পাওয়ার জন্যে নয়। তুমি কি আমার সকল সুখের কারণ হবে, রক্তজবা? ‘
আয়েশী কিছুই বলল না। বরং ধ্রুবকে আবার ধাক্কা দিয়ে বলল, ‘ ছাড়ুন, আমার অস্বস্থি লাগছে। ‘
ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মেয়েটা কেন ধ্রুবকে ভালোবাসে না? মানছে, সে খারাপ। খারাপ লোককে কি ভালো বাসা যায়না? সে তো আয়েশীর জন্যে খারাপ হয়েছে। আয়েশীর ভালোবাসা পাওয়ার জন্যে ধ্রুব আরো খা’রাপ হতে রাজি। অথচ যার জন্যে করি চুরি, সেই বলে চোর। আয়েশীর একটুখানি ভালোবাসা পাওয়ার জন্যে খারাপ হল, অথচ সে ব্যর্থ আয়েশী তাকে ভালোবাসে না!
ধ্রুব আয়েশীকে ছেড়ে দিল। আয়েশী গটগট পায়ে কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
ধ্রুব হাত দিয়ে কপালের চুল উপরে ঠেলে দিল। বাঁকানো হাসি দিয়ে কক্ষের পশ্চিম দিয়ে এসে দাঁড়াল। একটু পর ওসমান কক্ষে এল। হন্তদন্ত হয়ে বলল, ‘ স্যার, আয়েশী ম্যাম এঘরে এসেছেন? সেই পাগলকে কি দেখে ফেলেছেন? ‘
ধ্রুব হেসে তার পকেট থেকে একটা ইলেকট্রিক ডিভাইস বের করল। ডিভাইসে একটা সুইচ ছিল। ধ্রুব পেছন ফেরে ওসমানের উদ্দেশ্যে বলল, ‘ জাদু দেখবে, ওসমান? ‘
ওসমান বোকার মত চেয়ে রইল। ধ্রুব কি করতে চাইছে বুঝতে পারছে না। ধ্রুব ওসমানকে শুনিয়ে সামনে চেয়ে বলল, ‘ খুল যা ছিমছিম ‘
ধ্রুব সুইচে চাপ দিল। সঙ্গেসঙ্গে কক্ষের মধ্যে একটা সাইরেন বাজল। কক্ষের পশ্চিম দিক থেকে একটা কালো দরজা খুলে গেল। বিস্ময়ে ওসমানের মুখ হা হয়ে গেল। চোয়াল যেন এবার ঝুলে পড়বে। একটু আগে এখানে কোনো দরজা ছিল না। মূলত সম্পূর্ন কক্ষ কালো রঙের বলেই এই কালো দরজা চোখে পড়েনি। পশ্চিমের দেয়াল সম্পূর্ন সমতল ছিল। কিন্তু ধ্রুব সুইচে চাপ দেয়ার পরপরই পশ্চিমে একটা কালো দরজা উদয় হয়। তারপর খ্যাকখ্যাক শব্দ করে দরজা খুলে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে একটা লুকানো কক্ষ। যার পুরোটা কক্ষ সাদা রঙের। দেয়াল সাদা, আসবাব পত্র সাদা, সেখানে বসে থাকা সেই পাগলের গায়ে সাদা কাফনের কাপড়। ওসমান চোখ বড়বড় হয়ে গেল। এই কক্ষ সম্বন্ধে ওসমান একটুও অবগত ছিল না। ধ্রুবও কখনো এই কক্ষের ব্যাপারে জিকির করে নি। এতবার ধ্রুবর সঙ্গে এই কালো কক্ষে এলে,অথচ এই দরজা তার চোখেই পড়ল না। অদ্ভুত! ওসমান ধ্রুবকে প্রশ্ন করে বসল, ‘ স্যার, এই কক্ষ লুকানো ছিল? ‘
ধ্রুব হাসল। সাদা কক্ষের ভেতর প্রবেশ করতে করতে বলল,
‘ এ বাড়িতে এমন অনেক কিছুই লুকানো, ওসমান। এটা তো সামান্য একটা কক্ষ। ‘
ওসমান ধ্রুবর পেছন পেছন সাদা কক্ষে প্রবেশ করল। সেই পাগল তখন ঘুমাচ্ছে। ধ্রুব পাগলটার শিয়রে বসে তার ময়লা চুলে হাত বুলিয়ে দিল। পাগলটা ধ্রুবর আদর পেয়ে তার পায়ে মাথা ঘষলো। ধ্রুব তৃপ্তি হেসে বিড়বিড় করল,
‘আমার কুকুরটা! ‘
___________________________
আজকাল অনেকদিন ধরে আয়েশী একটা বিষয় লক্ষ্য করছে। আয়েশী যেখানে যায়, কেউ যেন তাকে অনুসরণ করে। তার প্রতিটা পায়ের ছাপে ছাপ ফেলে। আয়েশী যা করে, সব নিজের নখদর্পণে রাখে। আয়েশী ভয় পায়। কে তাকে অনুসরন করছে? ধ্রুবকে সন্দেহ হচ্ছে। কিন্তু আবারও অকারণে আয়েশী ধ্রুবকে সন্দেহ করতে চায়না। আয়েশী ভাবছে, এবার একটা উপায় বের করতে হবে। অনুসরণকারীকে এবার হাতেনাতে ধরতে হবে।
আয়েশী তখন বাগান ঘুরছিল। সাথে সার্ভেন্ট। হঠাৎ বাগানের বাউন্ডারির বাইরে কেউ একজন উকি দিল। একটা মেয়ে! ধ্রুব না। তবে আয়েশী মেয়েটাকে দেখে চিনতে পারল না। তবে তাকে ধরতে পারলে আয়েশী সব সমস্যার উদঘাটন কিরির পারবে। আয়েশী তার পাশে থাকা সার্ভেন্টযে ফিসফিসিয়ে বলে, ‘ হিয়া, ঐদিকে তাকাও। একটা মেয়ে দেখতে পারছ? ‘
সার্ভেন্ট সেদিকে তাকাল। হ্যাঁ, দেখতে পারছে সে। সার্ভেন্ট মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। আয়েশী বলল,
‘ তুমি বাইরের গার্ডকে খবর দাও, মেয়েটাকে আটক করতে। আমি মেয়েটার সাথে কথা বলতে চাই। ‘
সার্ভেন্ট কিছুক্ষণ আয়েশীর দিকে তাকাল। তারপর হাতে থাকা ফোন নিয়ে গার্ডকে খবর দিল। একটু পর গার্ড সেই মেয়েকে ধরে আয়েশীর কাছে পায়ের কাছে এনে ফেলল। আয়েশী গার্ডকে রাগ দেখাল। বলল, ‘ এমন করে কেউ একটা মেয়ের সাথে ব্যবহার করে? ওকে হাত ধরে উঠাও। ‘
গার্ড ক্ষমা চাইল। মেয়েটাকে হাত ধরে উপরে উঠাল। মেয়েটা মাথা নত করে আছে। দেখতে সহজ সরল মেয়ে লাগছে। গায়ে সাধারণ ত্রিপিস। চেহারা ভারি মিষ্টি। আয়েশী মেয়েটার কাছে এল। সুন্দর করে জিজ্ঞেস করল,’ কে তুমি? আমাকে ফলো করছিলে কেন? ‘
মেয়েটা থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বলল, ‘ আমি মৃদুলের বিবাহিত স্ত্রী। ‘

#চলবে
মামার বাড়ি বেড়াতে এসেছি। প্রচন্ড ব্যস্ত। তাই পর্ব দেরি এবং ছোট করে দেওয়া হচ্ছে। যারা গল্পটা পড়বেন কষ্ট করে রেস্পপন্স করবেন প্লিজ। পেইজের রিচ কমে গেছে।
সেরা কমেন্টকারীদের নাম তাদের কমেন্টসহ লেখিকার গ্রুপে পোস্ট করা হবে। ( গত দুই পর্বের কমেন্ট বিজয়ী আজ সন্ধ্যায় গ্রুপে পোস্ট করা হবে )
লেখিকার গ্রুপ,
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here