#মৃত_কাঠগোলাপ – ৩
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
পায়ের উপর পা তুলে বেশ ভাব নিয়ে বসে আছে ধ্রুব! তার সামনে মৃদুলের একটি আয়তাকার ছবি ঝোলানো। ধ্রুবর হাতে ধারালো ছুরি। সে ছুরিটা সম্পূর্ন ছবিতে বুলিয়ে নিল। হিংস্র হেসে বললো,
‘ সে আমার। আর আমার জিনিসে আমি কারো হস্তক্ষেপ সহ্য করি না। যে কুকুর আমার জিনিসে হাত দেয়, আমি তার দেহ থেকে প্রাণ আলাদা করে ফেলি। ‘
ধ্রুব কথাটা বলে হুট করে হিংস্র হয়ে পড়ল। হাতের ছুরি দিয়ে মৃদুলের সেই ছবিটিতে পরপর আঘাত করে ছবিটি ছিঁড়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ফেলল। পেছনে ওসমান ধ্রুবের এমন হিংস্রতা লক্ষ্য করে থরোথরো করে কাপতে লাগল। তার কপাল বেয়ে ঘামের ফোয়ারা বইছে। মনের মধ্যে আন্দোলিত হচ্ছে তীব্র ভয়।
‘ কি ব্যাপার, ওসমান। এভাবে স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছো কেন? স্টেচু মানুষ আমার পছন্দ নয়, জানোনা? ‘
ধ্রুব ছুরিটির ধার হাতে পরীক্ষা করে ওসমানের উদ্দেশ্যে কথাটি বললো। ওসমান হাসার ভান করল। আঙুল দিয়ে কপালের ঘামটুকু মুছে নিয়ে বললো,
‘ সরি, স্যার। ‘
ধ্রুব সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। ওসমানের কাছে ঘেঁষতেই ওসমানের আত্মা ভয়ে ছলকে উঠল। ওসমান স্থির পায়ে নিজ স্থানে দাড়িয়ে রইল। ধ্রুব ছুরিটি ওসমানের গলায় স্পর্শ করল। যার ফলে, ওসমানের গলায় হালকা আঘাত পেল। ওসমান ব্যথায় কুকড়ে গেল। তথাপি, কোনোরূপ শব্দ করল না। কারণ ধ্রুব অযথা শব্দ করা পছন্দ করে না। ওসমান চোখ খিচে দাড়িয়ে রইল। অপেক্ষা করতে লাগল ধ্রুবের পরবর্তী পদক্ষেপের। ধ্রুব ওসমানের গলা থেকে ছুরিটি সরালো। ছুরিতে ওসমানেরবহালকা রক্ত লেগে আছে। ধ্রুব আঙ্গুল দিয়ে রক্তটুকু নিয়ে নিল। রক্তের ফোঁটা ওসমানের কপাল বরাবর লেপ্টে দিয়ে বললো,
‘ ছুরির ধার আছে! এটা দিয়েই কাজ চালানো যাবে। কি বলো ওসমান? ‘
ওসমান হাসার ভান করে বললো,
‘ জ-জি স্যার। ‘
ধ্রুব আবারও সোফায় বসল। ওসমানের উদ্দেশ্যে বললো,
‘ মেয়েটির খবর পেয়েছ, ওসমান? ‘
‘ মেয়েটির নাম আয়েশী। এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে স্টুডেন্ট। মেয়েটির একটি বয়ফ্রেন্ড আছে। নাম, মৃদুল। পূর্বে ছেলেটি উনার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। বেস্ট…’
‘ বেস্ট ফ্রেন্ড থেকে লাভার? উম..বেশ ইন্টারেস্টিং! এরপর বলো। ‘
‘ স্যার, মেয়েটির সাথেও ওই ছেলেটার নিয়ে ঠিক। পড়াশোনা শেষ করে ওদের মৃদুল ছেলেটি চাকরি পেয়ে গেলে ম্যাডামের সাথে উনার বিয়ে হবে। এমনটাই পাকাপোক্ত করেছে ওদের পরিবার। ‘
ধ্রুব মাথা নত করল। দুহাতে কপাল ঘষে কিছু একটা ভেবে বললো,
‘ ছেলেটা কি চাকরি পেয়ে গেছে, ওসমান? ‘
‘ না, স্যার। তবে চেষ্টা করছে। তবে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট হওয়ায় খুব সহজেই চাকরি পেয়ে যাবে, স্যার। ‘
‘ উমমম….’
ধ্রুব মুখ দ্বারা ভাবনার শব্দ তুললো। অতঃপর তার মুখে হাসি ফুটল। ওসমানের দিকে চোখ তুলে বললো,
‘ ওসমান, এমন হলে কেমন হয়! ছেলেটা কোথায় চাকরিই পেল না। শেষ অব্দি আমার দোরগোড়ায় এসে চাকরির জন্যে ঠকঠকালো। আমি হয়ে যাবো দয়ার সাগর। একটা চাকরি না হয় তাকে ভিক্ষেই দিলাম। কি বলো? ‘
ধ্রুবর কথায় ওসমানের চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার জোগাড়! সে ঘাড় কাত করে পাশে থাকা মৃদুলের ছিঁড়ে-ফাঁটা ছবির দিকে তাকাল। ছেলেটি অতীব সুন্দর! আজকালকার জামানায় বলা এক ভদ্রপুরুষ। এই পৃথিবীর হিংস্র নাট্য সম্পর্কে সম্পূর্ন অজ্ঞ! কিন্তু তার ভাগ্য খারাপ! কারণ সে ধ্রুবর চোখে পড়েছে। যে মানুষ একবার ধ্রুবর চোখে পড়ে যায়, তার এই সুন্দর পৃথিবীতে বেঁচে থাকা মুশকিল হয়ে যায়। ওসমানের খুব মায়া লাগল মৃদুল নামক এই ছেলেটির প্রতি। মনে হলো, একটা ম্যাজিক হোক, আর পৃথিবীতে থাকা একটা ভালো মানুষ ধ্রুবর হিংস্রতা থেকে রক্ষা পেয়ে যাক। কিন্তু, তা কি সম্ভব? ধ্রুবর শকুনি চোখ থেকে আজ পর্যন্ত কেই-বা বাঁচতে পেরেছে?
_________________________________
মৃদুল ও আয়েশী একটা বেঞ্চে পাশাপাশি বসে আছে। মৃদুলের মন উদাসী হয়ে আছে। কি যেন চিন্তা করছে সে। তার চিন্তার বিষয়ে আয়েশীকে বলা উচিৎ! কিন্তু সে পারছে না। কোথাও যেন একটা সংকোচ থেকেই যাচ্ছে। আয়েশী মৃদুলের কাধে মাথা রেখে চুপটি করে মৃদুলের এই লুকোচুরি খেলা দেখছে। সে বুঝতে পারছে মৃদুল তাকে কিছু বলতে চায়, কিন্তু বলতে পারছে না। আয়েশী এবার কাধ থেকে মাথা তুলল। মৃদুলের বলিষ্ট হাতখানা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চোখ রাখল মৃদুলের সরু উদাসী চোখে। মৃদুল নজর লুকাচ্ছে! প্রিয়তমার চোখে চোখ রাখবে কি করে সে? আয়েশী মৃদ কণ্ঠে বলল,
‘ এই মৃদুল, তাকা আমার দিকে। ‘
মৃদুল তাকাল না। বরং তার নজর পাশে হেঁটে যাওয়া একদল চাকরিরত মানুষের দিকে। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। কর্মজীবী মানুষরা সারাদিন পরিশ্রমের চাকরি করে দিনশেষে বাসায় ফিরছে। মৃদুল আফসোসের দৃষ্টিতে তাই দেখে চলেছে। আয়েশী মৃদুলকে অন্যমনস্ক দেখে জোরপূর্বক মৃদুলের মুখটি নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল। মৃদুল তবুও নজর হারাচ্ছে। আয়েশী মৃদুলের গালে তার নরম হাত রাখল। মিহি সুরে বলল,
‘ চাকরি পাস নি বলে মন খারাপ? ‘
মৃদুল যেন চমকে উঠল। আয়েশী কি করে তার মনঘটিত বিষয় বুঝে ফেলল? মেয়েটি জাদু-টাদু জানে নাকি? আয়েশী চট করে মৃদুলের মনের প্রশ্ন বুঝে ফেলল। মেয়েটি হেসে বলল,
‘ গাধা, ভালোবাসি আমি তোকে। তোর মন পড়া আমার বা হাতের খেল। বুঝলি? ‘
মৃদুল আর কথা চেপে রাখতে পারল না। মুখ গোমড়া করে বললো,
‘ যেখানেই চাকরির এপ্লাই করছি, সেখান থেকেই রিজেকশন আসছে। আমি জানি, আমার প্রতিটা ইন্টারভিউ ভালো হচ্ছে। কিন্তু সবাই আমার নাম শুনেই কেমন ভয়ার্ত চোখে আমাকে রিজেক্ট করে দেয়। কিছুই বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে। ‘
আয়েশী চিন্তায় পড়ে গেল। মৃদুল আয়েশীর হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল,
‘ তুই তো কত বছর ধরে আমাদের বিয়ের অপেক্ষা করছিলি। কিন্তু আমি হলাম আস্ত এক লুজার। আমার দ্বারা কিচ্ছু হবে না। ফালতু প্রেমিক আমি। ‘
আয়েশী বুঝতে পারলো মৃদুলের আপসেট হওয়ার কারণ। আয়েশী মনে সাহস দিল মৃদুলকে। বললো,
‘ কে বলেছে, তুই ফালতু প্রেমিক। তুই হলি এই পৃথিবীর সবচেয়ে শুদ্ধতম প্রেমিক। চিন্তা করিস না। চাকরির জন্য চেষ্টা করে যা। আমি তোর জন্যে আজীবন অপেক্ষা করব। ‘
মৃদুল কৃতজ্ঞতার চোখে তাকাল আয়েশীর দিকে। হঠাৎ মৃদুলের মনে পড়ল, ধ্রুব তাকে একটা কার্ড দিয়েছিল। বলেছিল, যেকোনো দরকারে তার কাছে যেতে। এখন তো তার সামনে তার জীবনের সবচেয়ে দরকারী অধ্যায়! ধ্রুবর কাছে কি বলবে, একটা চাকরি দেওয়ার কথা! বললে যদি ফিরিয়ে দেয়? না, না! ফিরিয়ে দেবে কেন? ধ্রুব আর ও তো ভালো বন্ধু! মৃদুল মনেমনে ভেবে নিল, কাল একবার ধ্রুবর কাছে যাবে চাকরির জন্যে। সে নিজের যোগ্যতা দ্বারা চাকরি চাইবে। বন্ধুত্বের অনুগ্রহ দিয়ে নয়!
#চলবে
যারা যারা গল্পটা পড়বেন, রেসপন্স করবেন প্লিজ! আপনাদের গঠনমূলক কমেন্টের অপেক্ষায়!
লেখিকার গ্রুপ,
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri