#মৃত_কাঠগোলাপ – ৪

0
466

#মৃত_কাঠগোলাপ – ৪
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

‘ডিজাইন আর্টিস্টট্রি’ শহরের বেশ জনপ্রিয় একটি ফ্যাশন ডিজাইনিং কোম্পানি! এই কোম্পানিতে চাকরি পাওয়া আজকালের জামানায় সোনার হরিণের মত। মৃদুল এই মুহূর্তে সেই জনপ্রিয় কোম্পানির গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে যেতে তার কোথাও যেন একটা সংকোচ কাজ করছে। ধ্রুবের কাছে চাকরি চাওয়া কি ঠিক হবে? এই ঠিক-বেঠিক এর মায়াজালে মৃদুল প্রায় নাস্তানাবুদ। অবশেষে, সকল সংকোচকে পেছনে ফেলে মৃদুল গেইট দিয়ে পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল। রিসিপশনের এসে নিজের নাম বলতেই ম্যানেজার ঠোঁট প্রসন্ন করে হেসে বললেন,
‘ ও, আপনি-ই তাহলে মৃদুল সরকার। স্যার আপনার কথা বলেছেন আমায়। আসুন আমার সাথে। ‘

মৃদুলের কিছুটা লজ্জা লাগল। ধ্রুবের কাছে চাকরির কথা বলা, বিষয়টা’কি ভিক্ষা চাওয়ার মত হয়ে গেল? মনেমনে উশখুশ করতে লাগল সে। চুপচাপ ম্যানাজার পেছন পেছন পা চালালো।

ম্যানেজার একটা সুন্দর কেবিনের সামনে এসে থেমে গেল। মৃদুলকে অপেক্ষা করতে বলে সে ভেতরে চলে গেল। মৃদুল মাথা তুলে কেবিনের দরজার মধ্যে লাগানো সাইনবোর্ডের দিকে তাকাল। স্পষ্ট লেখা তাতে,
‘ ধ্রুব ইউহান শেখ ‘
মৃদুল অপেক্ষা করতে লাগলো। একটু পর ম্যানেজার এসে জানালো মৃদুলকে ধ্রুব ভেতরে যেতে বলেছে।
মৃদুল ম্যানাজারকে ধন্যবাদ জানিয়ে দরজা খুলে ধ্রুবের কেবিনে প্রবেশ করল।

‘ হাই, ইয়াং ম্যান। ‘
মৃদুলকে দেখে ধ্রুব চেয়ার ছেড়ে উঠে মৃদুলকে জড়িয়ে ধরলো। মৃদুল নার্ভাস হেসে ধ্রুবের পিঠে হাত রাখলো। ধ্রুব মৃদুলকে চেয়ার এগিয়ে দিল বসার জন্যে। মৃদুল বসল। এখন অব্দি কোনো কথা বলছে না মৃদুল। হাতে হাত শক্ত করে চেপে বসে আছে। কিছু একটা বলবে বলবে করেও কেন যেন বলা হচ্ছে না।
ধ্রুব বাঁকা চোখে পরখ করতে লাগল মৃদুলকে। ধ্রুবের বিচক্ষণ মস্তিষ্ক চট করে বুঝে গেল, মৃদুলের মনের খবর। ধ্রুব মৃদুলের দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘ পানি খাও, ভালো লাগবে। ‘

মৃদুল যেন এই কথার-ই অপেক্ষা করছিল। ধ্রুবর বলা মাত্রই মৃদুল শো করে পানির গ্লাস হাতে নিল। ঢকঢক করে দুই ঢোকে গ্লাসের সবটুকু পানি গলাধঃকরণ করে ফেলল। গ্লাসটা আবার টেবিলে রেখে মুখ মুছে মাথা নত করে রইল। ধ্রুব তীক্ষ্ম চোখে মৃদুলের একেকটা কাজ লক্ষ্য করছে। একপর্যায়ে ধ্রুব বলে,
‘ তুমি কি কিছু নিয়ে চিন্তায় আছ, মৃদুল! আমায় বলতে পারো। বন্ধুদের সব বলা যায়। ‘

মৃদুল এবার যেন খানিকটা স্বাভাবিক হলো। কপালের মুক্তো ঘাম মুছে নিয়ে গলা ঝাড়ল। আর চুপ না থেকে শেষমেশ বলেই ফেলল,
‘ আমার একটা চাকরির দরকার, ধ্রুব। ‘

ধ্রুব ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। ধ্রুব জানত মৃদুল এই জন্যেই ধ্রুবের কাছে এসেছে। আর আসবেই না কেন? চারিদিক থেকে মৃদুলের চাকরি পাওয়ার সমস্ত পথ যে সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে ধ্রুব! ধ্রুব মুখে গম্ভীর ভাব টেনে বললো,
‘ তোমার সিভি এনেছ? ‘

মৃদুল চট করে তার ব্যাগ থেকে একটা ফাইল বের করে ধ্রুবর দিকে এগিয়ে দিল। ধ্রুব ফাইল খুলে দেখল। অবশ্য এসব শুধুমাত্র দেখানোর জন্যে। মৃদুলের কোনো যোগ্যতা না থাকলেও ধ্রুব তাকে চাকরি দিত। মৃদুলকে হাতের মুঠোয় পুড়ে নেওয়ার জন্যে, এই চাকরি-ই হলো এক মুক্ষোম চাল। মৃদুলকে যত কঠিন করে হাতের শিকলে বন্দী করা যাবে, আয়েশীর কাছে ঠিক তত দ্রুতই পৌঁছানো যাবে।
ধ্রুব ফাইল বন্ধ করে টেবিলে রাখল। দুহাত টেবিলের উপর ভাঁজ করে ভাবুক সুরে বলল,
‘ তোমার সিজিপিএ দুর্দান্ত। আমাদের কোম্পানিতে চাকরি করার জন্যে পারফেক্ট। চাকরি একটা দেওয়াই যায় তোমায়। আমাদের কোম্পানিতে চাকরি করতে তোমার কোনো আপত্তি আছে? ‘

মৃদুল কিছুটা অবাক হল। সে ভাবেনি, এত দ্রুত ধ্রুব তাকে চাকরি অফার করবে। মৃদুল কৃতজ্ঞতার দৃষ্টি নিক্ষেপ করল ধ্রুবের দিকে। বললো,
‘ থ্যাংকস, ধ্রুব। তুমি না থাকলে…’
‘ উহু, এখন আমি এসে গেছি। তোমার পথের সমস্ত কাঁটা আমি ধীরে ধীরে উপড়ে দেব। ‘

ধ্রুব পথের কাঁটা বলতে কি বুঝালো, মৃদুল বুঝতে পারল না। সে তখনও মনেমনে ধ্রুবের জন্যে দোয়া করতে মগ্ন। মৃদুল চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। যেতে যেতে ধ্রুবর উদ্দেশ্যে বলে গেল,
‘ আমি খুব শীগ্রই আয়েশীকে বিয়ে করছি, ধ্রুব। আমার বিয়ের প্রথম দাওয়াতটা আমি তোমায় দিলাম। আফটার অল, বন্ধু বলে কথা। ‘

ধ্রুব হাসল। যেতে ত হবেই তাকে বিয়েতে। সে না আসলে, এই বিয়েটাই যে ফিকে হয়ে যাবে। হা, হা, হা। বোকা ছেলে!
___________________________
সন্ধ্যা হয়ে গেছে। অদূর থেকে মাগরিবের আযানের মধুর সুর কানে আসছে। গলির রাস্তা ইতিমধ্যেই অনেকটাই নীরব হয়ে গেছে। একটু আগে দু একটা মানুষের আনাগোনা, কথা বলাটাও এখন কেমন যেন মিলিয়ে যাচ্ছে। নিজেকে গলির রাস্তায় সম্পূর্ণ একা অনুভব করতে পেরে, আয়েশী যেন শিউরে উঠল। দ্রুত পা চালিয়ে ঘরে ফেরার চেষ্টা করল। টিউশনি থেকে ফিরতে আজ সত্যিই বড্ড দেরি করে ফেলেছে সে।

‘ আরে এ দেখি আয়েশীরানী। কি ব্যাপার? আজ একা আসলে যে? নাগর কই? ‘
পাশ থেকে রাকিবের বিশ্রী কথা শুনে আয়েশীর সম্পূর্ন শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল যেন। রাকিব আয়েশীদের পাড়ার ছেলে। সবসময় আয়েশীকে নানারকমভাবে উত্যক্ত করে সে। এইজন্যেই রাত হলে কখনো একা বাড়ি ফেরে না আয়েশী। হয় বাবা, নয়তো মৃদুল পৌঁছে দিয়ে যায় বাড়িতে। কিন্তু হায়! আজ যে আয়েশীর পাশে কেউ নেই। আয়েশী দ্রুত পালাতে চাইল রাকিবের থেকে। আয়েশী তর্ক না করে চুপচাপ মাথা নত করে বড়বড় পা ফেলে এগুলো।
রাকিব আয়েশীর পেছন পেছনে হাঁটছে। আয়েশী তা বুঝতে পেরে এবার দৌঁড় দিল। এক দৌঁড়ে বাড়ীর গেইটের ভেতর প্রবেশ করে গেইট লাগিয়ে দিল। আয়েশীর খুব কান্না আসছে। সে সেখানেই মাটিতে বসে পড়ল। মুখ হা করে বড়বড় কতগুলো নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে সামলে ঘরের দরজায় কলিং বেল চাপল। আল্লাহর দয়ায়, আজ রক্ষে হলো তার। নাহলে……

রাকিব চাইলে আজ আয়েশীর ক্ষতি করে ফেলতে পারতো। সে আজ বেশ আঁটসাঁট বেধেই আয়েশীর পিছু নিয়েছিল। কিন্তু সে পারেনি। মাঝরাস্তায় কেউ একজন রাকিবের মুখ চেপে তাকে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে নেয়। রাকিব ছটফট করতে করতে গাড়ীর মধ্যেই জ্ঞান হারায়। কিন্তু কেউ কি জানতো, আজকের এই রাত-ই রাকিবের জীবনের শেষ রাত। তারপরই নিভে যাবে তার জীবন প্রদীপ। খুব নির্মম ভাবে মৃত্যু দেয়া হবে তাকে।

একটা অন্ধকার ঘরে হাত পা বেঁধে রাখা হয়েছে রাকিবের। রাকিবের জ্ঞান ফিরতেই সে বাঁধন থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্যে ছটফট করতে শুরু করেছে। বিশ্রী রকমের গালি দিয়ে কক্ষের দেয়াল ঝাঁজরা করে ফেলতে লাগল। ধ্রুবের পালিত মানুষরুপী কুকুরগুলো তা সহ্য করতে না পেরে রাকিবের মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে দিল। ফোন করে ধ্রুবকে বললো,
‘ বস, এই মালরে কি করুম? খুব জ্বালাচ্ছে। ‘
‘ সামান্য রাস্তার ছেলেকে তোমরা সামলাতে পারছ না। কি বা/লে/র গুণ্ডা তোমরা? ফোন রাখ, শালা। আমি আসছি। ‘

লোকটা চুপচাপ ফোন কেটে দিল। বস রেগে আছেন, এখন তাকে না ঘাটানোই ভালো। নাহলে যেকোনো সময় তাদের মাথাটাও ঘাড় থেকে আলাদা করতে তার হাত কাঁপবে না।
রাকিব এখনো বড্ড ছটফট করছে। যেন ছাড়া পেলে এ কক্ষের সবাইকে ধারালো অস্ত্রে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলবে
বিশালদেহী লোকগুলো ঘাড় কাত করে রাকিবের দিকে তাকাল। অতঃপর লোকগুলো একে অপরের সাথে দৃষ্টি বিনিময় করল। ঠোঁটে তাদের তাচ্ছিল্যের হাস!

#চলবে
কেউ কি লক্ষ্য করছেন, আপনাদের অলস লেখিকা ইদানিং রেগুলার গল্প দিচ্ছে! আপনারা যখন বেশি বেশি রিয়েক্ট, বড় বড় কমেন্ট করেন তখন আমি ভীষন উৎসাহিত হয়ে দেরি না করে চটপট গল্প লিখে ফেলি। সো, রিয়েক্ট আর বড় বড় কমেন্ট করবেন, ঠিক আছে?

লেখিকার গ্রুপ,
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here