#মৃত_কাঠগোলাপ – ৪০

0
494

#মৃত_কাঠগোলাপ – ৪০
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
__________________________
অবশেষে উদীয়মান চাঁদের কাছে পরাজয় স্বীকার করেছে উত্তপ্ত সূর্য। বাঁকা দেহে হেলে পড়েছে পশ্চিম দিশায়। চাঁদের আলোয় ঝলমল করছে ধরা। পবিত্র আলোয় মুছে যাচ্ছে সকল গ্লানি, অভিশাপ। ধ্রুব এবং ওসমান এসে থেমেছে এক বছর পুরনো মৃদুলের কবরের সম্মুখে। কবরের উপর ঘাস হয়েছে, আশপাশে দু একটা ফুলের চারা মাথা চাড়া দিয়েছে। বলা হয়, ফুল পবিত্রতার প্রতীক। মৃদুল সর্বদা পবিত্র ছিল, সেজন্যেই কি তার কবরে ফুল ফুটেছে? ধ্রুবর ঠোঁট হাসে। ওসমানের দিকে চেয়ে শুধায়,
‘ কবর খোঁড়ো, ওসমান। ‘
ওসমান চকিতে তাকায় ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে বুক টানটান করে ওসমানের দিকে চেয়ে আছে। কি সুন্দর হাসি লেপ্টে আছে ঠোঁটের কোণে। ওসমান ঢোক গলাধঃকরণ করে পুনরায় প্রশ্ন করে,
‘ কি করব, স্যার? ‘
‘ কবর খুঁড়বে। ‘
ধ্রুবর স্পষ্ট উত্তর। ওসমানের আঁখির আকার অস্বাভাবিক হয়। চোখের কোণে বিস্ময়ের আভা লেপ্টে। ঠোঁট দুখানা হালকা ফাঁক হয়ে ‘হ’ আকৃতি ধারণ করেছে।
‘ কি হয়েছে? এমন করে তাকিয়ে আছো কেন? যা করতে বলা হয়েছে, করো। ‘
ধ্রুব ধমক দেয়। ধ্রুবর কঠিনতম চিৎকারে কবরের আশপাশে গর্তে লুকিয়ে থাকা শেয়ালের কুকিয়ে উঠে। গাছে গাছে বসে থাকা শকুন চিৎকার দেয়। মুহূর্তেই কবরের পরিবেশ হয়ে উঠে ভয়ংকর, গা শিরশিরে! ওসমানের কপালথেকে ঘাম ঝড়ে। ওসমান কপালের ঘামটুকু আঙ্গুল দিয়ে মুছে শীতল কণ্ঠে বলে, ‘ আপনি যা আদেশ দিবেন, স্যার। ‘
ওসমান কবর খুঁড়তে শুরু করে। কবর খোঁড়ার শব্দ ধ্রুবর কাছে অত্যন্ত মধুর শোনায়। ধ্রুব বুকে হাত ভাঁজ করে চেয়ে রয় কবরের মাটির দিকে। কবর সম্পূর্নরূপে খোঁড়া হয়। ধ্রুব কবরের সামনে আসে। মাথা ঝুঁকে কবরের দিকে তাকায়। কবরের মধ্যে মৃদুলের অস্তিত্বের ছিটেফোঁটা নেই। সব নিঃশেষ হয়ে গেছে। পোকা মাকড় কবর ছেড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে বাইরে বেরিয়ে আসছে। সে কি বিভৎস দৃশ্য! সাধারণ মানুষের গা কেঁপে উঠে যায়। অথচ ধ্রুব নির্বিকার চিত্তে চেয়ে রয় কবরের দিকে।কবরের মধ্যে থেকে মারাত্বক দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। গন্ধে বোধহয় ওসমানের অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম। ওসমান নাকে রুমাল চেপে ধরে বলে, ‘ স্যার, এখন কি করব? ‘
ধ্রুব কথা বলে না। হাঁটু গেঁড়ে বসে মৃদুলের কবরের পাশে। অতঃপর বলে, ‘ তুই হেরে গেছিস, মৃদুল। আমি তোকে হারিয়ে দুর্দান্ত ভাবে জিতে গেছি। তুই পৃথিবীর ময়লা হয়েছিস, অথচ আমি আমার পৃথিবী জিতে নিয়েছি। তুই য’ন্ত্রণা ভুগে ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়েছিস, অথচ আমি তোর ভালোবাসার মানুষের দেহের ভাঁজে ডুবে প্রতিদিন সুখের নেশায় ক্ষয় হচ্ছি। অবশেষে তুই হেরে গেলি আর আমি, কি দূর্দান্ত ভাবেই না জিতে গেলাম। হা হা হা! ‘
ধ্রুব অত্যন্ত বিভৎসভাবে হাসছে। একে তো রাতের আঁধার, তার মধ্যে কবরের মাঝখানে বসে আছে ধ্রুব। এই মুহূর্তে ধ্রুবর হাসি ওসমানের গায়ের পশম জাগিয়ে তুলছে। ওসমান ভয়ে ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠছে। ধ্রুব এবার উঠে দাঁড়ায়। মৃদুলের কবরের আশপাশে অনেকক্ষণ ধরে একটা কুকুর ঘুরঘুর করছিল। ধ্রুব এবার কুকুরটার দিকে মনযোগ দেয়। কুকুরের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বলে,
‘ ক্ষুধা পাচ্ছে, বুঝি? ‘
কুকুর ঘেউ ঘেউ করে উঠে। অর্থাৎ, হ্যাঁ, ক্ষুধায় ম’রে যাচ্ছে সে। ধ্রুব হাসে। কুকুরটার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
‘ আমি এসে গেছি না? এবার থেকে আর ক্ষুধা লাগবে না। ‘
কুকুর কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে চায় ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব তার পকেট থেকে ব’ন্দুক বের করে। তারপর একটা গু’লির শব্দ! কবরের পরিবেশ ঝাঁজরা হয়। ওসমান চিকিতে নিচে চায়। কুকুরটা মাটিতে গড়িয়ে পড়েছে। গু’লিবিদ্ধ হওয়ায় ব্যথায় মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে, ছটফট করছে। ওসমান আঁতকে উঠে। ধ্রুব একটা নিরীহ কুকুরকে কি করে মে’রে ফেলল? কি দোষ করেছে এই কুকুরটি? ধ্রুব বন্দুক পকেটে পুড়ে। ওসমানের দিকে চেয়ে আদেশ দেয়,
‘ কুকুরটিকে মৃদুলের কবরে ফেলে দিয়ে মাটি চাপা দিয়ে দাও। ‘
ওসমান ফ্যালফ্যাল চোখে ধ্রুবর দিকে চায়। ধরু চোখ সরু করে। ধ্রুব দ্বিতীয়বার হাড় কাপানো ধমক দেওয়ার আগে ওসমান দ্রুত কুকুরটার মৃত দেহ টেনে মৃদুলের কবরে ফেলে। তারপর কবরের মাটি চাপা কুকুরটার মৃ’তদেহ ঢেকে দেয়। ধ্রুব হেঁটে চলে যাচ্ছ সেখান থেকে। ওই তো, গাড়িতে উঠছে সে। ওসমান কপালের ঘাম মুছে ধ্রুবর পিছু পিছু আসে।

‘ ওসমান, তোমার মনে হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে যে আমি আজ এসব কেন করলাম? ‘
ধ্রুব গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুজে বলল। ওসমান কপালের ঘাম মুছে বলল, ‘ আপনি যা করেন, তাতে আমার প্রশ্ন থাকতে পারে না স্যার। আমি তো সামান্য এক গোলাম, স্যার। গোলামের আবার কিসের প্রশ্ন? ‘
ধ্রুব আদো আদো চোখ খুলে। ঘাড় সামান্য কাত করে ওসমানের দিকে চায়। অতঃপর মৃদু নিঃশ্বাস ছেড়ে আবার সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুজে। ঠাণ্ডা কণ্ঠে শুধায়,
‘ জানো ওসমান? তোমার ম্যামকে আমি জিতে নিয়েছে ঠিকই। তবে এখনো সে পরিপূর্নরূপে আমার নয়। সে আমাকে লুকিয়ে মৃদুলের কবরে আসে। ঘন্টার পর ঘন্টা সে এখানে বসে তাজবিহ পড়ে। পরকালে মৃদুলের সুখ চায়। এসবের মাঝখানে আমি কোথায়? কোথায় আমি? আমি কি জিতে গিয়েও হেরে যাচ্ছি না? হ্যাঁ, যাচ্ছি। তাই আজ মৃদুলের কবর থেকে মৃদুলের সকল চিন্হ মুছে দিলাম। আয়েশী এখন থেকে একটা কুকুরের জন্যে কান্না করবে, তাজবিহ পড়বে। মৃদুলের জন্যে আর কিছুই নেই। অবশেষে আমি সফল হব। মৃদুল হেরে যাবে, আর আমি জিতে যাব। ‘

হতবাক ওসমান কথা বলতে ভুলে যায়। ধ্রুব কি আদৌ মানুষ? কোনো সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ কি করে এত হিং’স্র হয়? ধ্রুব আর কত নিচে নামাবে নিজেকে? আর কত খারাপ হবে? খারাপ হওয়ার সকল সীমা এসে পেরিয়ে গেছে! কেউ কি নেই, যে ধ্রুবকে শা’স্তি দিবে? ধ্রুব এমন করে যন্ত্রণায় ভুগবে, যেমন করে ভুগেছে ধ্রুবর হাতে খু’ন হওয়া সকল মানুষ? নাকি ধ্রুব কখনো শা’স্তিই পাবে না। জয় ছিনিয়ে নিবে, বাই হুক ওর বাই ক্রুক!

#চলবে
গল্পটা পড়ে রেসপন্স করবেন প্লিজ। গল্প লিখি আপকাদের জন্যেই, আপনারা নিজেদের রিয়েক্ট, কমেন্ট না করলে, গল্প লেখার আগ্রহ থাকে না।
পড়াশোনা নিয়ে ভীষন ব্যস্ত আপাতত। মাত্র তিনমাসের পর এক্সাম তারপর অ্যাডমিশন এক্সাম।তাই গল্পের পরবর্তী পর্ব আমি যখন সুযোগ পাব, পোস্ট করব! আপনারা সন্ধ্যার পর একবার পেইজ চেক করবেন। গল্প পেলে ভালো, না পেলে ভাববেন গল্প সেদিন দিব না।

গত পর্বের কমেন্ট বিজয়ী,
@এলোমেলো স্বপ্নকন্যা
@miftahul mun
@farhana tabassum
@maksuda ratna
@triyasha roy sreya
@reha zaman
@arisha imroj mishra
@sumaiya ekter

লেখিকার গ্রুপ,
কল্পনা-কলমে ~ ‘আভা ইসলাম রাত্রি’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here