জানালার ওপারে পর্ব-১০

0
209

#জানালার_ওপারে
||১০ম পর্ব||
– ঈপ্সিতা শিকদার
“কী হলো আসো মেয়ে!” ধমক দিয়ে উঠলেন তিনি।

কেঁপে উঠলাম আমি। এগিয়ে গেলাম তাঁর টেবিলের দিকে। তবে এই বেশভূষায় আমাকে চেনার কথা নয়। কেউই চিনতে পারেনি।

আমি স্থির হয়ে দাঁড়াতেই তিনি এক ঝটকায় উঠে দাঁড়ালেন। আমার গালে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন,
“তুমি এতো অবুঝ কেন মেয়ে? একটা বার বললে কী গায়ে ফোস্কা পড়ে যেতো? আর তোমার সাহস কীভাবে হয় এ অসুস্থতা নিয়ে বাসা থেকে পালানোর! You deserve a real big punishment Mayabalika! Do you know?”

আমি চোখ-মুখ খিঁচে ফেললাম ভয়ে এই পরিস্থিতিতে পড়ে। ভয়টা আবেগ ভাইয়ের শাস্তি বা তিনি জড়িত নয়, যে আমার নয় তাঁর প্রতি বিন্দুমাত্রও অনুভূতি আমার কাজ করছে না, করে না। ভয় তো নয়ই। তবে বাবা-মা যদি জানতে পেরে আমাকে নিয়ে যেতে জোর করে এই ভয় কাজ করছে।

“আবেগ তোকে রশিদ স্যার ডাকছেন, ইমারজেন্সি। তাড়াতাড়ি যা।” একজন সিনিয়র এসে ডাক দেন তাঁকে।

“Stand right here. Don’t you dare to move.”

তিনি চলে গেলেন। আমি স্বস্তির শ্বাস ফেললাম। কফি সমেত ওয়ান টাইম কফির কাপটা হাতে নিয়ে বড় বড় পা ফেলে বের হয়ে গেলাম ক্যান্টিন থেকে।

রাসেল সাহেবও ততক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছেন ক্যান্টিনের সামনে। রাহা আপুর কড়া আদেশ কোনো ক্রমেই আমাকে একা ছাড়া যাবে না। তাই তাঁর আমাকে পিক করার কথা ছিল ক্যান্টিনের সামনে থেকে।

“সামু চলো।”

আমি সায় জানালাম। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ কী মনে করে যেন পিছনে ঘুরি। আবেগ ভাই ভবনের দ্বিতীয় তলা হতে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আরও দ্রুত পা চালাই এ দৃশ্য দেখে।


রাস্তা আজ বেশ ফাঁকাই ছিল, আধা ঘণ্টাতেই বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। রাহা আপু এখন হাসপাতালে। আসতে আসতে তাঁর রাত হবে আজ। আমি চুলায় ভাত বসিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। এসে দেখি এখনও ভাত হয়নি। তবে কয়েক মিনিটের হয়ে যাবে। চাল হয়তো ভালো পড়েনি, কারণ নাজিরশাইল চাল সিদ্ধ হতে এতো সময় লাগার কথা নয়।

ভাবতে ভাবতেই কলিংবেল বেজে উঠে। দ্রুতো দরজা খুলে কে আসছে না দেখেই ছুটে আসি রান্নাঘরে। কারণ চুলোয় ভাতের মাড় পড়লে, তা মুছা বেশ কষ্টকর। আর আজ রাহা আপু বা কাজের লোকও নেই। তাড়াতাড়ি পাতিল নামিয়ে ভাতের মাড় ঝরাতে বসাই।

“সামু ডিয়ার, কে এসেছে?” রাসেল সাহেব প্রশ্ন করতে করতে নিজের রুম থেকে বের হন।

আমিও রান্নাঘর থেকে বের হয়ে বসার ঘরে যাই। সর্বপ্রথম যাকে চোখে পড়ে তিনি হলেন হাসিব ভাইয়া এবং নিশা। আর আমার পাশের সোফায় কপালে হাত দিয়ে শক্ত মুখে বসে আছেন আবেগ ভাই।

চমকে যাই। এতোটাই যে কয়েক মুহূর্ত থমকে যাই আমি। নিশার জড়িয়ে ধরায় ধ্যান ভাঙে আমার।

“কেমন আছিস রে সামু? আমাকে তো ভুলেই গিয়েছিস।”

আমি জোরপূর্বক হাসলাম। রাসেল সাহেবও অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে বেমানান ভাবে কাশি শুরু হয় আমার। গতরাতে এক বসায় ৫০০ ml আইসক্রিম শেষ করার ফলাফল হয়তো।

আবেগ ভাই অবিলম্বে উঠে দাঁড়ান পানি আনতে। কিন্তু তাঁর আগেই রাসেল সাহেব এক গ্লাস পানি এনে দেন। এতে অন্যরকম এক আক্রোশ দেখা দিল যেন এই অসভ্য লোকটার চোখে-মুখে। কিন্তু তাঁর কী?

তিনি এসে আমার হাত শক্ত করে আঁকড়ে ধরেন।
“অনেক দেখেছি তোমার কাহিনী মেয়ে। এখনই বাসায় চলো আমার সাথে।”

রাগের সাথে সাথে বিরক্তিও মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। ঝাড়া দিয়ে হাত ফেলে দেই। রাসেল সাহেব প্রথম বারের মতো মুখ খুলেন সবার সামনে।

“আসলে ও যখন যেতে চাচ্ছে না। জোর করছেন ক্যানো? ঠাণ্ডা মাথায় বসে কথা হলে ভালো হয়।”

“দেখুন, মিস্টার। আমি আমার ওয়াইফের সাথে কথা বলছি। দয়া করে আপনি এতে ইন্টারফেয়ার করবেন না।”

আমার বিস্ময়ে চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসছে। আমি কি হ্যালুসিনেশন করছি বা ভুল শুনছি? কী বললেন তিনি?

“ওয়েট এ মিনিট, আপনার বিয়ে তো সামুর ছোটো বোনের সাথে… সামু আপনার ওয়াইফ মানে?”

“Who the hell are you? আপনাকে কেন এক্সপ্লেইনেশন দিব আমি? কী হন আপনি আমার বা মায়াবালিকার? আর মেয়ে তুমি কি যাবা আমার সাথে না কি যাবা না? সোজাসুজি বলো।”

কিছুটা ধমকের ছাপ। আমি চোখ অন্যদিকে রেখে মাথা নাড়াই, যার অর্থ না।

“এখানে কি মধু পেয়েছো যে নিজের বাসায় ফিরবা না? ফিরো না আমার সাথে। সবাই তো আমাকে পেয়েছো পাগল বানাতে। একজন আমার ভালো করতে যেয়ে দশ হাত পানির নিচে ঢুকায় দেয়, আরেকজন অনর্থক শাস্তি দেয়। রাখো বানিয়ে পাগল। আমার তো কাজ নেই, সারা দিন তোমার পিছনে টুকটুক করে ঘুরবো।”

একঝাঁক অভিযোগ, তাড়না ও অভিমান প্রকাশ পেল তাঁর কথায়৷ যা বোধ করতে পারলেও প্রতিক্রিয়া দেখানোতে নিষেধ।

পরিস্থিতি বিপরীতে যেতে দেখে নিশা শুধায়,
“ভাইয়া, আপনি একটু সামনের লেক থেকে ঘুরে মাথা ঠাণ্ডা করে আসেন। হাসিব আপনিও যান ভাইয়ার সাথে। অনেকদিন পর দুই বান্ধবীর দেখা হয়েছে, আমরা কথা বলি।”

আবেগ ভাই হনহন করে বের হয়ে গেলেন। পিছন পিছন হাসিব ভাইয়াও চলে গেলেন। আমিও আমার জন্য নির্ধারিত ঘরের এসে পড়লাম। নিশা কাঁধে হাত রাখতেই তাকে জড়িয়ে ধরি শক্ত করে নিজেকে সামলাতে। তবুও এক ফোঁটা জল বেরিয়েই আসে বাধ ভেঙে।

নিশা আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে প্রথম যে কথাটা উচ্চারণ করে, তা হলো –
“সামু, আবেগ ভাইয়ের কোনো দোষ নেই। তিনি তো জানতোও ন…”
||১১তম পর্ব||
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=411369487657810&id=100063542867943
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here