#ভুলবশত_প্রেম পর্বঃ ২৮

0
392

#ভুলবশত_প্রেম পর্বঃ ২৮
#লেখনীতে:সারা মেহেক

২৮

আমার কথা শোনার পরমুহূর্তে আদ্রিশ প্রতিক্রিয়া স্বরূপ কিঞ্চিৎ বিস্মিত হয়ে ভ্রুজোড়া উঁচু করলেন। নিস্তরঙ্গ গলায় জিজ্ঞেস করলেন,
” তাহলে সবটা বুঝেও অবুঝ হবার ভান করছিলে তুমি?”

আদ্রিশের এরূপ কণ্ঠস্বরে আমি খানিকটা নড়েচড়ে বসলাম। কারণ এখন হতে যা যা বলার প্রয়োজন, সবটাই দৃঢ়চিত্তে বলতে হবে। আমি খানিক গলা পরিষ্কার করে বললাম,
” আমি বুঝতে চাইছিলাম না। ”

আদ্রিশ কিছুক্ষণ আমার পানে নিশ্চুপ দৃষ্টিপাত করলেন। অতঃপর তাচ্ছিল্যের সুরে বললেন,
” সোজা কথায় বলো, ভান করছিলে তুমি। ”

আমি দৃঢ়চিত্তে বললাম,
” ভান করা বা না বুঝার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আমার উপর নির্ভর করে। আমার ফিলিংস, আমার লাইফ। আপনি তো বলার কেউ না এখানে। ”

আদ্রিশ পুনরায় নিভৃতে আমার পানে চেয়ে রইলেন। আহত স্বরে বললেন,
” কত সহজেই বলে দিলে তুমি! আসলেই কি এসব এতো সহজ?”

” অবশ্যই সহজ। সহজ হিসেবে মেনে নিলেই সহজ। বরং আপনি ব্যাপারটা জটিল করছেন।”

আদ্রিশ আমার কথার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ মুখ ফিরিয়ে হাসলেন। অতঃপর আমার দৃষ্টি বরাবর চেয়ে বিষাদমাখা কণ্ঠে বললেন,
” অনুভূতি নামক শব্দের সাথে সম্পৃক্ত সকল বিষয়বস্তুই জটিল হয়। একে কখনো সরল নামক দাঁড়িপাল্লায় মাপা সম্ভব নয়।
কিন্তু তুমি কত সহজেই একে সরলসোজা বলে দিলে! অদ্ভুত! ”

আদ্রিশে এরূপ কথাবার্তায় আমি নিজেকে সংযত রাখতে ক্রমেই ব্যর্থ হয়ে পড়ছি। তা সত্ত্বেও আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার সম্পূর্ণ চেষ্টা করে দৃঢ়তার সহিত বললাম,
” আপনার জন্য এটা অদ্ভুত হলে অদ্ভুতই। কিন্তু আমি যা বলছি একদম সঠিক বলছি। ”

আমার কথা শোনামাত্র উনার দৃষ্টি আচমকা শক্ত হয়ে এলো। উনি টেবিলের উপর পূর্বের তুলনায় কিঞ্চিৎ এগিয়ে এসে ধারালোভাবে বললেন,
” তুমি এতোটাও কঠোর না যতোটা দেখাতে চেষ্টা করছো। এ কঠোরতার কারণ কি? বয়ফ্রেন্ড আছে?”

কি মনে করে আমিও আদ্রিশের ন্যায় টেবিলের উপর এগিয়ে এসে পূর্বের দৃঢ়তা বজায় রেখে বললাম,
” আমি এতোটাই কঠোর যতোটা দেখাচ্ছি। আর রইলো বয়ফ্রেন্ড নামক মানুষটার কথা। সে আছে কি নেই তা নিয়ে আপনাকে মাথা ঘামাতে হবে না।”

আদ্রিশ এ পর্যায়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলেন।
মুঠো শক্ত করে দৃঢ়তার সহিত বললেন,
” বাহ! কি সহজেই বলে দিলে এ নিয়ে আমাকে মাথা ঘামাতে হবে না! কিন্তু তুমি মানো আর নাই বা মানো, তোমার প্রতিটি ব্যাপারে আমি হস্তক্ষেপ করবোই। এতে তুমি কখনোই আমাকে বাঁধা দিতে পারবে না। মাইন্ড ইট, কখনোই না৷ ”

আদ্রিশের এরূপ বাচনে আমি হতভম্ব হয়ে এলাম। নিজের চোখকে এ দৃশ্য কিছুতেই বিশ্বাস করাতে পারলাম না আমি। অনুভব করলাম, আমার হৃদপিণ্ডের স্পন্দনগতি স্বাভাবিকের তুলনায় ক্রমেই বেড়ে চলছে। আমি নিমিষের জন্য আদ্রিশের শক্ত দৃষ্টি বরাবর চাইলাম৷ অতঃপর শুকনো একটা ঢোক গিলে বললাম,
” আপনি আমাকে এসব বলার জন্য ডেকেছিলেন?”

” অবভিয়েসলি এগুলো বলার জন্যই ডেকেছিলাম তোমাকে। কিন্তু তোমার ব্যবহারে আমি বাকরূদ্ধ হয়ে পড়েছি। ”

” আপনি আজ এমনটা করবেন, এটা জানলে কখনোই আপনার সাথে আসতাম না। ”

আদ্রিশ প্রতিক্রিয়াহীন শান্ত চাহনিতে চেয়ে বললেন,
” না আসলে তুলে নিয়ে আসতাম। সিম্পল। ”

আদ্রিশের এরূপ কথায় আমি বিস্ময়ে হা হয়ে এলাম। আশ্চর্যান্বিত কণ্ঠে বললাম,
” আপনি আমায় কিডন্যাপের হুমকি দিচ্ছেন!”

আদ্রিশ পূর্বের ন্যায় বললেন,
” হ্যাঁ দিচ্ছি। এনি প্রবলেম?”

” আপনার কাছ থেকে এমনটা আশা করেছিলাম না আদ্রিশ।”

” তোমার কাছ থেকেও এমনটা আশা করেছিলাম না আমি মিশমিশ। ”

” তো কি আপনি চাইছেন আমি আপনার প্রস্তাব রাজি হয়ে যাই?”

” অবশ্যই। ”

কি মনে আমি চট করে বলে ফেললাম,
” আমি কখনোই রিলেশনে যেতে চাইনি। ”

আদ্রিশ আচমকা উদগ্রীব হয়ে বললেন,
” আমিও চাই না রিলেশনশিপে যেতে। আর আমি তোমাকে আমার সাথে রিলেশনেও যেতে বলছি না।”

” তাহলে কি বলতে চাইছেন আপনি?”

” আমি সোজা তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তোমার পরিবারের মতেই বিয়ে করতে চাই তোমাকে।”

আমি উনার এ কথার প্রত্যুত্তর দিলাম না৷ বরং সাহস করে কিছুক্ষণ উনার দৃষ্টি বরাবর চেয়ে রইলাম। অতঃপর দৃষ্টি নত করে বললাম,
” বাস্তবতা মানতে শিখুন আদ্রিশ। বিয়ে করতে চাই বললেই হয়ে যায় না। সবকিছু দেখেশুনে বিয়ে করতে হয়।”

আদ্রিশ উতলা কণ্ঠে বললেন,
” আমার মধ্যে কোনো কমতি আছে মিশমিশ? বলো, আমি নিজেকে শুধরে নিচ্ছি। ”

আমি এ পর্যায়ে হতাশার নিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম,
” আপনার মধ্যে কোনো কমতি নেই আদ্রিশ। বরং আমার মধ্যে কমতি আছে। এসব ছাড়ুন। আজ বরং আমি উঠি। আমার মাথা ধরছে। ”
এই বলে আমি চেয়ার ছেড়ে উঠতে নিলাম। কিন্তু এর পূর্বেই আদ্রিশ আমার হাত ধরে আমাকে উঠতে বাঁধা দিলেন। পুনরায় ঈষৎ দৃঢ় কণ্ঠে বললেন,
” আমার জীবনটাকে মধ্য সাগরে ডুবিয়ে দিয়ে তুমি কি করে ভাবলে যে আমার প্রশ্নের জবাব না শোনা অব্দি তোমাকে যেতে দিব?”

আমি এ পর্যায়ে গরম চোখে চেয়ে বললাম,
” এটা পাবলিক প্লেস আদ্রিশ। আর আপনার সাহস কি করে হয় আমার হাত ধরার?”

” সাহস, দুঃসাহসের কিছুই দেখোনি তুমি। সো ভদ্র মেয়ের মতো বসে আমার প্রশ্নের জবাব দাও। ”

উনার এরূপ আচরণে আমি অকারণে এবং অঘোষিতভাবে গোঁ ধরে বসলাম। হাতের মুঠো শক্ত করে বললাম,
” আপনার প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য আমি বাধ্য নই। ”

আদ্রিশ হয়তো আমার কথায় চটে গেলেন। বললেন,
” আমাকে বাধ্য করো না মিশমিশ। পাবলিক প্লেসে আমি কোনো সিন ক্রিয়েট করতে চাই না। ”

” আমিও এমনটা চাই না। এজন্য ভালোয় ভালোয় বলছি আমাকে যেতে দিন। ”

” আচ্ছা তাই? আমিও নাছোড়বান্দা। আমার জবাব আজকে না পাওয়া পর্যন্ত ছাড়ছি না তোমায়। যত দ্রুত এন্সার দিবে, তত দ্রুত ফ্রি হয়ে যাবে।”

অতঃপর আদ্রিশের জিদমূলক কথাবার্তার কাছে আমি হার মানতে বাধ্য হলাম। প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছেড়ে নতমস্তকে দু চোখ বন্ধ করে বললাম,
” আপনাদের ক্লাসের সাথে আমাদের ক্লাস কখনোই মিলবে না। আপনাদের এই হাই ক্লাসের সোসাইটিতে আব্বু কখনোই আমাকে বিয়ে দিবে না। ”

আদ্রিশ আমার কথা শুনে নিমিষের জন্য নিশ্চুপ রইলেন। অতঃপর হাসতে হাসতে বললেন,
” এমন সিলি রিজন দিও না আমাকে।”

উনার কথায় আমি চোখ মেলে তাকিয়ে বললাম,
” আপনার জন্য এটা সিলি রিজন হলেও আমার জন্য এ রিজনটাই যথেষ্ট। আপুর বিয়ের সময় আব্বু আম্মুকে দেখেছি আমি৷ আপনার হলুদে করা কাণ্ডের জন্য আপুকে মিথ্যে অপবাদ দিতে শুনেছি। আত্মীয়দের তীক্ষ্ণ কথা শুনেছি। আপনাকে বিয়ে না করার আর কি কারণ চাই?”

আদ্রিশ পুনরায় আমার দিকে নিরবতার সহিত চেয়ে রইলেন। কিয়ৎক্ষণ বাদে বললেন,
” মানুষের কথায় এতো কান দাও তুমি! সোসাইটিতে এমন লোকের অভাব নেই। তাই বলে তাদের কথায় আমাদের জীবন থেমে থাকবে?”

” আমি তাদের কথায় কান দিতে চাই না। কিন্তু এমনটা না করেও থাকতে পারি না৷ কারণ এ সমাজেই আমাদের বাস করতে হবে। আর আপুর এমন ফ্যামিলিতে বিয়ে হওয়ার পর আমার এমন ফ্যামিলিতে বিয়ে মানে আব্বু আম্মুকে মেন্টাল প্রেশারের মধ্যে রাখা। ”

” আচ্ছা, এই কথা? আমি আংকেল আন্টীর সাথে কথা বলবো। তাদেরকে এ বিয়ের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকতে বলবো। ”

” কথা বলে লাভ নেই। তারা রাজি হবে না। সবচেয়ে বড় কথা। আমি রাজি না। কারণ সমাজের কটু কথা শোনার মতো ধৈর্য শক্তি আমার নেই। আমি খুবই দূর্বল। কেউ কিছু বললে আমি মোটেও তা সইতে পারি না। ”
এই বলে আমি নিমিষের মাঝে ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম,
” আপনার প্রশ্নের জবাব দেওয়া শেষ। এবার আমি উঠি। প্লিজ আমাকে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। ”
এই বলেই আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে গেলাম। আশপাশে না চেয়ে চুপচাপ সিঁড়ি বেয়ে নিচে চলে এলাম। পিছে আদ্রিশ আমাকে একটিবারের জন্যও ডাকলেন না। হ্যাঁ, এটাই চাইছিলাম আমি। আমি চাইছিলাম আদ্রিশের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে। অবশেষে আমি হয়তো সে সিদ্ধান্তে সফল হতে চলেছি। তবে এ সফলতা আমার জন্য আনন্দ বয়ে আনলো না। বরং কোথাও একটা সুক্ষ্ম তবে ভোঁতা যন্ত্রণা কাজ করলো। কিন্তু আমি চাইলেই এ যন্ত্রণাকে দূর করতে পারবো না। বরং এ যন্ত্রণাকে তিলে তিলে ভোগ করতে হবে আমাকে। এর কারণও আছে অবশ্য, যা আদ্রিশের অজানা।
®সারা মেহেক(নব্য দিনের সূচনা আগামীকাল দিব)
গ্রুপ: সারা’র গল্পকুঞ্জ
#চলবে
‘নব্য দিনের সূচনা ‘ ২য় খণ্ড
১ম পর্ব:https://www.facebook.com/100600702547432/posts/115401877733981/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here