#তোমার_পিছু_পিছুপর্ব- ১০
রাতে ডিনারে বসেও মিলন সাহেব ব্যবসায়ের কথাই বলে গেলেন…..পারভিন বেগম শেষমেশ টিকতে না পেরে…. চেচিয়ে উঠলেন…
-উফ,,,,থামোতো…. কি শুরু কি করলে…!!!! সারাদিন পর ছেলেটা খেতে বসল…. আর তোমার ব্যবসা ব্যবসা শুরু হয়ে গেলো…..
-আমি তো জাস্ট ওকে একটু ক্লাইন্টদের সম্পর্কে ধারনা দিচ্ছিলাম….
-থামো.… হয়েছে….
তারপর দৃষ্টি ফিরিয়ে ছেলের দিকে তাকালেন….
-তুই তোর বাপের কথা একদম কানে নিবি না…. নিজেতো ব্যবসা ব্যবসা করে পাগল হয়েছেনই… তোকেও পাগল করে ছাড়বে…..
বর্ন কোন প্রকার কথা বলল না… শুধু মাথা ঝাকিয়ে গেলো….
ডিনারের পর মিলন সাহেবের সিগারেটের অভ্যাস…. তিনি ১৫ মিনিট বারান্দায় বসে একান্তে কিছু সময় কাটান… এবং দুইটা সিগারেট শেষ করেন…. একটাও বেশি বা কম না…. কিন্তু আজ মনে হচ্ছে এই রুটিনে কিছু ব্যাঘাত ঘটবেই… পারভিন বেগম ডিনারের পর পর নিজেও স্বামীর পিছন পিছন বারান্দায় এসে বসেছেন….. এবং বসে বসে উসখুস করছেন।
-এভাবে বসে বসে খুটখাট না করে…. কি বলবে বলে ফেলো….
-শোন আমি কথা বাড়াবো না…. সরাসরি বলছি…. আমি ছেলের বিয়ে দিতে চাই….
স্ত্রীর কথা শুনে মিলন সাহেবের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো……
-তুমি এতো উঠেপড়ে কেনো লেগেছো,,, বলতো..!?…
-উঠেপড়ে লেগেছি মানে!!! ছেলেদের জন্যতো এটাই উপযুক্ত বয়স…. ছেলেকে বুড়ো ধামড়া বয়সে বিয়ে দিবো নাকি!!! শোন তুমি আমার কথা….. আমার ছেলের জন্য একটা খুব সুন্দর মেয়ে বউ করে নিয়ে আসবো…. মেয়েটা ঘোমটা মাথায় টুকটুক করে ঘরে ঘুরে বেড়াবে…. আমি নিজে হাতে বউকে বর্নর সব পছন্দের খাবার রান্না করা শিখাবো……
-ছেলেকে কি আদৌ জিজ্ঞেস করেছো….. ও বিয়ে করতে চায় কিনা!!!
-আমার ছেলেকে আমি চিনি….. ও আমাকে কখনোই মানা করবে না….
-তারপরও পারভিন…. ওর মতামত ছাড়া….
-তাহলে চলো….. ওর সাথে কথা বলে দেখি…..
-অন্য একদিন সময় করে কথা বলো… আজ এমনিতেই……………..
-আবার অন্যএকদিন কেনো….!! চলোতো চলো….. দেখি….
বর্ন একটা বই নিয়ে বসেছিলো….. রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ও কিছু ইন্টারেস্টিং বই নিয়ে বসে… যেনো ব্রেইন ক্লিয়ার থাকে….. তাহলে ওর মনে হয় রাতে সাউন্ড স্লিপ হয়…..বইয়ে খুব গভীরভাবেই মগ্ন ছিলো…. যখন কথার আওয়াজে মনোযোগ ভাংলো….পারভিন বেগম ছেলের দরজায় দাঁড়িয়ে
-কিরে বিরক্ত করলাম!?
-নাহতো মা….
-এখনো ঘুমোস নি কেনো!?….
পারভিন বেগম ছেলের রুমে প্রবেশ করলেন…. পিছন পিছন মিলন সাহেব…..
-ঘুমোবো মা….. আর কিছুক্ষন পরেই….
-কি পড়িস এটা!!!!
বর্ন হাতের বইটা মা’র দিকে তুলে ধরল….
-কিসব মোটা মোটা বই পড়িস..,,,, কিযে মজা পাস তুই সারাদিন এসব নিয়ে বসে থাকতে…..
বর্ন মা’র দিকে তাকিয়ে শুধু হাসলো…..
-শোননা বাপ…… সামনে তো তোর জন্মদিন… আমি আর তোর বাবা তোকে এবার অনেক গ্রান্ড একটা গিফট দিবো বলে ভেবেছি…..বলতো কি গিফট হতে পারে??
বর্নর জবাবের অপেক্ষা না করেই,,,, পারভিন বেগম বলতে শুরু করলেন….
-আমরা ভেবেছি…. তোর জন্য একটা লাল টুকটক বউ আনবো….. তোর এই মোটা মোটা বইগুলোর বদলে তোর সঙ্গী নিয়ে আসবো….. কিরে গিফট পছন্দ হয়েছে!?
বর্ন এরও জবাব দিলো না…. কেবল হাসলো… এই হাসির মানে কি!!! ছোটবেলার অনেকগুলো অভ্যাসের মধ্যে এটা একটা অভ্যাস…..
এবার মিলন সাহেব… শুরু করলেন…
-তোর যদি অন্য কোন চিন্তা ধারা থাকে,,,,, আমাদের বল….. অবশ্যই তোর মতামত আমাদের জন্য প্রয়োজনীয়…..
-বাবা আমি কালও অফিসে যেতে চাই…..
ছেলে এভাবে হঠাৎ প্রসঙ্গ ঘুড়িয়ে ফেলায় মিলন সাহেব কিছুটা অবাক হলেও…. নিজেকে সামলে নিলেন
-অবশ্যই যাবি…. তোর কোম্পানি,,,, তোর যখন মন চাইবে… তুই তখনোই যাবি…..
ছেলের রুম থেকে ফিরে পারভিন বেগম আবার শুরু করলেন…
-শোনো আমি কিন্তু ছেলের জন্য মেয়ে দেখা শুরু করবো…
-কিন্তু বর্নতো কিছুই বললো না….
-আরে… আমিতো আমার ছেলেকে চিনি… এভাবে হঠাৎ বিয়ের প্রসঙ্গ উঠায় লজ্জা পেয়ে গেছে,…. তুমি চিন্তা করো না…. তুমি বরং তোমার বন্ধু, ক্লাইন্টদের সাথে আলাপ করো…. দেখো কারো উপযুক্ত মেয়ে আছে কিনা…..
জবাবে মিলন সাহেব কিছুই বললেন না… শুধু হালকা মাথা ঝাকালেন…
(আসছে)